হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস সিজন ২ গল্পের লিংক || মোহনা হক

হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস সিজন ২ পর্ব ১
মোহনা হক

পর পর তিনটা থা’প্প’ড় খেয়ে হতভম্ব রুয়াত। লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলেছে। মাত্রই জনসভা থেকে উঠে এসেছে আয়াজ। গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিলো সেটা রেখে চলে এসেছে। রুয়াতের থেকে নিমিকে বেশি দিয়েছে। গা’ল জ্বলছে। ইশশ এমপির হাতের থাপ্পড়! এতো মানুষের থা’প্প’ড় খেয়ে এখন অস্বস্থি লাগছে রুয়াতের। রাগে টগবগ করছে আয়াজের শরীর।

চৌধুরী বাড়ির মেয়েদের নিয়ে এখন মানুষ সমলোচনা করবে। ভাবতেই রাগ উঠছে৷ যেখানে চৌধুরী বাড়িতে তার সম্মান, ফজলুল চৌধুরীর মান-সম্মান সে বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষের সম্মান জড়িয়ে আছে সেখানে বাড়ির মেয়ের এমন কান্ড নিতান্তই দৃষ্টিকটু লাগছে। ভয়ে আরহাম দাঁড়িয়ে আছে এককোনায়। বাহিরের এমন পরিস্থিতি বাড়িতে কেউই জানে না৷ নিজের বোনের এমন কান্ডে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে আরহাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নিমির গাল দু আঙুল দিয়ে চেপে ধরে আয়াজ তার কর্কশ শব্দ ছাড়ে।
-‘এই মেয়ে এতো সাহস কে দিয়েছে তোমায়? বাসা থেকে কাউকে বলে এসেছো যে এখানে আসবে তাও একটা ছেলের সাথে দেখা করতে? মেজো মা জানে তোমার এসব কীর্তি? তুমি কোন বাড়ির মেয়ে নিশ্চয়ই ভুলে যাওনি।
মাথা নিচু করে নিমি দাঁড়িয়ে আছে। আরহাম তার বোনকে মনে মনে ইচ্ছেমতো বকে যাচ্ছে। বারবার ভয়ে ঢোক গিলছে রুয়াত। নিমির পর তাকেই কৈফিয়ত দিতে হবে আয়াজের কাছে। মানুষটাকে সবাই ভীষণ ভয় পায়। এমনকি মায়া চৌধুরীও। ছেলের কথার উপর কোনো কথা বলতে পারেনি আজ পর্যন্ত।

-‘উত্তর দিচ্ছো না কেনো? চৌধুরী বাড়ির মেয়েদের নিয়ে এখন মানুষ সমলোচনা করবে। বাজে কথা বলবে। তুমি এখনো বাচ্চা নও যে এসব করে বেড়াবে। যথেষ্ট বিবেক বুদ্ধি থাকা দরকার ছিলো তোমার। বাসায় গিয়ে তোমার মা বাবা কে কি উত্তর দিবে? তোমার জন্য আজ এখানে আমাকে সবার সামনে অপমানিত হতে হচ্ছে এখন।’

শাফি মাথা নিচুস্তর করে দাঁড়িয়ে। প্রে’মি’কার ভাই যে এমপি এটা তার জানা ছিলো। কিন্তু এভাবে যে দেখা করতে এসে ধরা খাবে সেটা জানা ছিলো না। আজ তার বারোটা বাজবে। রুয়াত একপ্রকার তার নিজের মুখ চেপে আছে হাত দিয়ে। নিমির অবস্থা শেষ করে দিবে আয়াজ। বাড়িতে কেউ একবার জানলে আর ঢুকতে দিবে না। নিজের প্রতি ভীষণ আফসোস হচ্ছে এখন কেনো যে নিমির কথা শুনতে গেলো।
নিমির চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। অনেক সাহস যোগাড় করে আয়াজের প্রশ্নের উত্তর দেয়।

-‘ভাইয়া আমি শাফি কে ভালোবাসি।’
চোখ বন্ধ করলো আয়াজ। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টায় আছে। এইদিকে রুয়াত তার কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আরহাম রাগে নিজের হাত মুঠো করেছে শক্ত করে। আশেপাশে মানুষের নজর কিন্তু তাদের দিকেই। আয়াজের ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। চোখ খুলে শাফির দিকে একবার চায় আয়াজ। তার বয়স আর নিমির বয়স একইরকম। সমবয়সী তারা। এই বয়সে আবার ভালোবাসা? ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নেয় আয়াজ।

-‘তোমাকে আমি এরূপ প্রশ্ন করিনি। সে থেকে বলতে গেলে এরূপ উত্তর ও প্রযোজ্য নয়। তোমার জন্য যে চৌধুরী বাড়ির মান সম্মান গেলো সেটার জন্য তোমাকে আসলে কি করা উচিৎ বলো? তুমি আমার বোন হও। এখন তোমার জন্য আমারও সম্মান নষ্ট হয়েছে। আর ভালোবাসা বুঝো তুমি? এতো বড় হয়ে গিয়েছো? তোমাকে তো পড়াশোনা করতে বাহিরে যেতে দেওয়া হয়। এসব কাজের জন্য বাহিরে যাওয়ার পারমিশন দেওয়া হয়নি তোমায়! এবার তোমার বাবা মা সিদ্ধান্ত নিবে তোমাকে কি করবে।’

আরহাম এগিয়ে আসে। বোনের প্রতি এখন অনেক রাগ হচ্ছে৷ নিমির কে কিছু করার আগেই আয়াজ আরহামের হাত ধরে শান্ত গলায় বলে-
-‘আমি মেরেছি তো। নিমি কে গাড়িতে উঠাও। যা হবে বাড়িতে গিয়ে তোমার মা বাবার সামনে হবে। এখানে সিনক্রিয়েট করার কোনো দরকার নেই।’

আরহাম গাড়ির দিকে এগোয়। নিমির হাত ধরে রেখেছে। পিছন ফিরে একবার শাফির মুখ দেখে নেয় নিমি। আয়াজ রুয়াতের দিকে তাকায়। ইশারা করলো তার সামনে আসার জন্য। সাতপাঁচ না ভেবেই রুয়াত আয়াজের সামনে এসে দাঁড়ায়। একটু দূরত্ব বজায় রেখে সরে আসে আয়াজ।

-‘তুমি এখানে কেনো এসেছো? তোমার প্রেমিকের সাথে দেখা করতে?’
রুয়াত শুকনো কাঁশি দেয় আয়াজের কথা শুনে। এভাবে যে সবার সামনে তাকে ঠিক এইকথাটি বলবে আগে ভাবেনি রুয়াত।

-‘আসলে ভাইয়া আমি নিমির সাথে এসেছিলাম। ও জোর করে নিয়ে এসেছিলো৷ আমার এখানে আসার কোনো ইচ্ছে ছিলো না ভাইয়া। একটাও মিথ্যে বলছি না। বিশ্বাস করুন। আর আমার সেরকম কেউ নেই।’

আয়াজ একবার রুয়াতের গালের দিকে নজর দেয়। তার হাতের পাঁচটি আঙুলের ছাপ এখনো বিদ্যমান। নিমির মধ্যে গন্ডগোল থাকলেও রুয়াত এসবের মধ্যে জড়িত নয়। একই বাড়িতে থাকে তারা। রক্তের সম্পর্ক তাদের। কিছুটা হলেও চিনে রুয়াত কে। টেবিলে ঠেসে দাঁড়ায় আয়াজ। বুকে দু’হাতে গুঁজে। চক্ষু ছোট করে দৃষ্টি রাখে রুয়াতের মুখখানার উপর। হাত কচলাতে শুরু করে রুয়াত। তার মনেহচ্ছে আয়াজ এখনো সন্দেহ করছে তাকে।

-‘আমি কি বাসায় যাবো না ভাইয়া? ওরা তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’
-‘যাও।’
আয়াজের কথাটি শোনামাত্রই সোজা হাঁটা শুরু করে রুয়াত। একবারের জন্যও পিছন ফিরে দেখলো না। যেনো কেউ তাড়া করেছে। এমন ভাবে হাঁটছে। তড়িঘড়ি করে গাড়িতে বসে পড়লো। রুয়াত আসার সাথে সাথেই গাড়ি ছেড়ে দেয়।
উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে এক গম্ভীর স্বরে আয়াজ বলে-

-‘এ ঘটনা যেনো বাহির পর্যন্ত না যায়। চৌধুরী বাড়ির মেয়েদের নিয়ে কোনো সমলোচনা নয়। আর কেউ যদি করেও তাহলে তার পরিনতি খুব একটা ভালো হবেনা।’
কঠোর রূপ আয়াজের। এমন ঘটনা বাহিরে রটানোর মতো সাধ্য কারও নেই। লোকটা যেমন জনগণের কাছে ভালো মানুষ তেমনই তার ভিতর এমন একটা রূপ আছে এটাও কারো অজানা নয়। এমন অনেক ঘটনা মানুষ তাদের চোখের সামনে দেখেছে।

আয়াজ শাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-‘কাল আমার অফিসে এসো। আর যদি না আসো তাহলে তোমাকে ধরে নিয়ে আসতে আমার বেশি সময় লাগবে না। কথাটি মনে রেখো।’
মাথা নাড়ায় শাফি। আয়াজ বের হয়ে আসে সে স্থান থেকে। তার পেছন পেছন দু’জন লোক ও আসে। যে জায়গা থেকে এসেছিলো এখন সেখানেই যাবে। অনেক কাজ ফেলে রেখে ছুটে এসেছে এখানে। খবর পাওয়া মাত্রই চলে আসে।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাসায় আসে আয়াজ। সচরাচর এতো তাড়াহুড়ো করে আসে না। খুব কমই তাড়াতাড়ি করে বাড়িতে আসে। বাসায় ঢুকতেই নজর পড়লো রূহানের দিকে। সে হচ্ছে রুয়াতের ছোট ভাই। বসে বসে টিভি দেখছে। দরজা খোলার শব্দ শুনে সেদিকটায় তাকায়। আয়াজ কে দেখামাত্রই দাঁড়িয়ে যায়। ভয় পেয়েছে হঠাৎ আয়াজ কে দেখে। চোখগুলো বড় বড় হয়ে এসেছে। আয়াজ তার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে-

-‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তুমি টিভি দেখো।’
বলেই উপরে উঠে যায় আয়াজ। চশমা ঠেলে ঠিক করে নেয় রূহান। এখন তার পড়ার সময়। সেটা বাদ দিয়ে টিভি দেখছে। ক্লাস নাইনে অধ্যয়নরত রূহান। একটু চুপচাপ শান্তস্বভাবের সে। আয়াজ চলে যাওয়া মাত্রই আবারও সোফায় বসে টিভি দেখা শুরু করলো রূহান।

মাহের চৌধুরী রাগে ফুসছেন রীতিমতো। আয়াজ আজকের সব ঘটনা খুলে বলে। এই ঘটনা লুকিয়ে গেলে নিমি প্রশ্রয় পেয়ে যাবে। এমন কাজ করতে পরেরবার কোনো দ্বিধাবোধ করবে না। ফজলুল চৌধুরী নির্বাক দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছে। এখানে কোনোরূপ কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। বারবার হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলছে নিমি। তার একপাশে রুয়াত দাঁড়িয়ে।

ভেবেছিলো আয়াজ কিছুই বলবে না কিন্তু এখন দেখে আয়াজ সব বলে দিয়েছে। এমনকি রুয়াতের নাম বলেছে। আজ যে রুয়াত ও নিমির সাথে দেখা করতে গিয়েছে এসব বলে দিয়েছে আয়াজ। রুয়াত ভয়ে ভয়ে মেহরুবার দিকে তাকাচ্ছে। আজ তার মা ইচ্ছেমতো বকবে। জেবা তেড়ে যায় নিমির দিকে। মেয়ের এমন কান্ডে সত্যিই লজ্জিত তিনি। নিমির গালে অনবরত কয়েকটা থা’প্প’ড় দেয়। সোফায় নিশ্চিন্তে আয়াজ বসে আছে। চাইলেই আটকাতে পারতো সে। মা সন্তান কে শাসন করবে। এখানে নিমিকে বাঁচিয়ে দিলে সেটা ঠিক হবে না। ভুল করেছে এখন অবশ্যই শাস্তি পাওয়ার দরকার। আরহাম ও এগিয়ে আসেনি। চুপিসারে এককোনায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। মায়া চৌধুরী দৌড়ে গিয়ে ধরে নিমিকে। আড়াল করে তাকে।
মায়া চৌধুরী বলে উঠে

-‘আর কতোগুলো থা’প্প’ড় দিবি জেবা? মানছি ভুল করেছে তাই বলে কি এতো বড় মেয়ের গা’য়ে হাত তুলবি? ভুল করেছে বুঝিয়ে বলবি। কিছু না বলেই মারতে এসেছিস?’
জেবার রাগে মাথা ঠিক নেই। তবুও মায়া চৌধুরীর সামনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে বলে-

-‘তার কি বোধবুদ্ধি বলতে কিছু নেই? আমার বলতে লজ্জা লাগছে এটা আমার মেয়ে৷ কতো বড় সাহস দেখেছো! কোন ছেলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে। ওর জন্য যে আজ আমাদের পরিবারের মান সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়েছে? সেটার বেলায় কিছু বলবে না বড় আপা? আজ যা হয়েছে সব এই মেয়ের জন্য হয়েছে। এই মেয়েকে সেখানেই রেখে আসা উচিৎ ছিলো। বাড়িতে না নিয়ে আসলেই ভালো হতো। এমন মেয়ে আমার অন্তত চাই না। যে কিনা বাবা মায়ের সম্মানের কথা ভাবে না।’

-‘হয়েছে কখনো যেনো এমনটা না হতে দেখি। গা’য়ে হাত তুলে কিছু বলার দরকার পড়ে না। আমরা সবাই বোঝাবো ওকে। আর এমন করবে না ও। সবাই বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই বুঝবে।’
মায়ার কথায় জেবা মুখ সরিয়ে নেয়। মাহের কাঠকাঠ গলায় বললো-
-‘এইচএসসি তো দিয়েছে। আর পড়াশোনা করার দরকার নেই নিমির। ভালোয় ভালোয় অন্যের ঘরে পাঠাতে পারলেই হলো।’

ফজলুল চৌধুরী আর চুপ থাকতে পারলেন না। অবশেষে মুখ খুললেন তিনি।
-‘এগুলো কোনো সমাধান নয়। ভুল করেছে তাই বলে কি বিয়ে দিয়ে দিবে নাকি? অন্তত আমাদের পরিবারে এমনটা হয় না। ঠান্ডা মাথায় ভাবো কি করবে। এমন উদ্ভট কথা বলো না।’
-‘তুমিই বলো ভাই আজ ছেলের সঙ্গে সবার অগোচরে দেখা করেছে৷ কাল তো দেখা যাবে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছে।’
মাহের চৌধুরীর কথায় বিরক্ত হলেন ফজলুল চৌধুরী।

-‘এখানে তোমাদের দুজনের দোষ বেশি। তোমরা কেউ কোনো খেয়াল রাখোনি কেনো? তাহলে তো আর তোমাদের মেয়ে এমন কাজ করার সাহস পেতো না। আগে নিজেদের ঠিক করো তারপর তোমার মেয়ে কে কিছু বলবে।’
ফজলুল চৌধুরীর কথায় পুরো বাড়ি ঠান্ডা থমথমে হয়ে যায়। তার উপরে আর কেউ কথা বলার সাহস পায় না। মাহের চৌধুরী মাত্র কারখানা থেকে বাড়ি ফিরেছে। বাসায় আসা মাত্রই এসব শুনে মাথা গরম হয়ে যায়। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে বরাবরের মতো অক্ষম তিনি। ফজলুল চৌধুরী আর কিছু না বলে উপরে চলে যায়। মায়া উচ্চস্বরে বলে-

-‘মেয়ের গা’য়ে হাত দিয়েছো। এমন দুঃসাহস যেনো আর কখনো না দেখি। বিশেষ করে জেবা কথাটি মনে রাখবি।’
একে একে যে যার মতো চলে যায়। মায়া নিমি কে তার সাথে নিয়ে যায়। কারণ এখন যদি জেবার রুমে যায় তাহলে নিশ্চয়ই আরও অনেক কথা শোনাবে নিমি কে। মেহরুবার ও নিজের মেয়ের প্রতি রাগ হচ্ছে। কেনো অন্যের কথায় কোঁথাও যাবে? রুয়াতের গালেও থা’প্প’ড় দিতে ভুলেননি মেহরুবা। রূহান তাড়াতাড়ি করে তার বোনের হাত জড়িয়ে ধরে। সোফায় মাথা নিচু করে মোবাইল দেখছে আয়াজ। হঠাৎ এহেন শব্দে মাথা তুলে তাকায়। মেহরুবার মুখশ্রী দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি মেরেছেন রুয়াত কে। ধমক দিয়ে ওঠে মেহরুবা।

-‘তোকে এসব বুদ্ধি দেয় কে? কেনো গিয়েছিস নিমির সাথে? এখন সবাই বলবে না যে নিমির সাথে তুই ও সেখানে গিয়েছিস? ওকে এমন কাজে সাহায্য করেছিস। তোকে তো আমি এরকম শিক্ষা দেইনি। না তোর বাবা দিয়েছে। তিনি থাকাকালীন তো কখনো তার মেয়ে কে এমন শিক্ষা দেননি। মানলাম এখন বাবা নেই তোর। তাই বলে কি তার মান সম্মানের কথা একবার ভেবে দেখবি না?’

মেহরুবার কথাটি বলতে গিয়ে চোখ দিয়ে পানি পড়েছে। রুয়াত ও কাঁদছে। তার একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখে রূহান। যখন হান্নান চৌধুরী মারা যায় তখন রূহান অনেক ছোট। এখনও অনেক কিছুই বোঝে না বয়স অনুযায়ী। বারবার নিজের চোখে থাকা চশমা ঠেলে ঠিক করছে। দ্রুত গতিতে আয়াজ এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। মেহরুবা কে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। দৃষ্টি তার সামনে থাকা মেয়েটির উপর। শান্তস্বরে বলে-

-‘কেঁদো না ছোট মা। তোমার প্রেশার বেড়ে যাবে। তুমি রুমে যাও। রুয়াত আর কখনো এমন করবে না।’
আয়াজ ছেড়ে দেয় মেহরুবা কে। তিনি সোজা রুমে চলে যান। একবারও মেয়ের দিকে তাকায়নি। ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়াজ। রূহান তার বোনের চোখের পানি মুছে দেয়। যেখানে সকালে আয়াজ থা’প্প’ড় দিয়েছে ঠিক সেখানেই আবার মেহরুবা থা’প্প’ড় দিয়েছে। ফর্সা মুখে রক্তিম আভা দেখা যাচ্ছে। খুব জোরেই পড়েছে। যেকারণে এমন হয়ে আছে।

-‘আপু তোমার গা’ল লাল হয়ে গিয়েছে। বেশি ব্যাথা পেয়েছো?’
রূহানের শব্দ শুনে আয়াজ রুয়াত দু’জনেই তার দিকে তাকায়। রুয়াত একবার তার সামনে থাকা পুরুষের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে। শক্তপোক্ত স্বরে আয়াজ বলে-

-‘থা’প্প’ড় তোমার প্রাপ্য ছিলো। পরেরবার যেনো এমন ভুল নাহয়। তোমার মিনিমাম এটুকু জ্ঞান-বুদ্ধি থাকা উচিৎ ছিলো। যাই হোক এখন যেটা হয়েছে সেটা নিয়ে এখন না ভাবাই ভালো। আর কিছু করার আগে দশবার ভেবে নিবে।’
মাথা নাড়ায় রুয়াত। আর কখনো ভুলেও কারো কথা শুনতে যাবে না। যে পরিমাণে আজ লজ্জিত হয়েছে। হঠাৎ আয়াজের মোবাইলে কল আসে। সে কল রিসিভ করার আগে রুয়াতের উদ্দেশ্য ফের বলে-
-‘বরফ লাগিয়ে নিও। আসছি আমি।’

হৃদয়জুড়ে প্রেয়সীর আভাস সিজন ২ পর্ব ২