হৃদয়হরণী পর্ব ৩৯

হৃদয়হরণী পর্ব ৩৯
তানিশা সুলতানা

ছোঁয়ার অপেক্ষায় বসে রইলো সাদি। ইডিয়েটটা আর আসলো না সাদির কাছে৷ এই মেয়েটার মনোভাব বোঝে না সাদি। কি চায়? কি করে? কিছুই মাথায় ঢোকে না। আসলেই একটা ইডিয়েট। এই যে সারাক্ষণ পিছু পিছু ঘুরবে। জ্বালাবে। আর যখন সাদি ডাকবে পাত্তাই পাওয়া যাবে না।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদি। দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে না? একটা বাচ্চা মেয়ে। তার প্রতি এখনই এতোটা দুর্বলতা প্রকাশ করা ঠিক নয়। আরও একটু সময় নেওয়া প্রয়োজন বা ছোঁয়াকে দেওয়া প্রয়োজন। গম্ভীর হয়ে যাবে না কি আগের মতো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হুমম সেটাই বোধহয় ঠিক হবে।
খাটে টানটান হয়ে শুতে গিয়েও শয় না সাদি৷ শরীর ম্যাচম্যাচ করছে শুলেই ঘুমতে ইচ্ছে করবে। আর তখনই ডাক পড়বে জানা কথা সাদির।
পকেট থেকে ছোঁয়ার জন্য আনা গিফটখানা বের করে এক পলক দেখে তারপর সেটা রেখে দেয় পড়ার টেবিলের ওপর।

এখন অবশ্যই সাদির পড়ালেখা নেই। তবুও টেবিল এবং বই গুলো রয়ে গেছে৷ সাবিনা বেগম রোজ পরম যত্নে গুছিয়ে রাখে। মাঝেমধ্যে সাদিও পুরনো বই গুলো পড়ে দেখে। এটা তার স্বভাব।
রুমটা বড্ড অগোছালো সাদির। বিছানা চাদরের ভাজ পড়ে গেছে। কোলবালিশ খাটের এক কোণায় পড়ে। কম্বলটার ভাজ খোলা। বালিশ ঠিক জায়গায় নেই। চতুর সাদির বুঝতে সময় লাগে না তার ইডিয়েট বউ এসেছিলো এই রুমে। তার খাটে শুয়ে ছিলো তারই কম্বল গায়ে দিয়ে।
পাগল কি না?

সকলেই খাবার টেবিলে বসেছে। ছোঁয়া ফ্লোরে গোল হয়ে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। আসলে তারপর টেনশন হচ্ছে। সাদি যে যেতে বলেছিলো। এমনিতে তার নিরামিষ বর কাছাকাছি ঘেসলেই খ্যাঁক খ্যাঁক করে ওঠে বুড়োদের মতো। আর আজকে একটু ভালোবেসে ডাকলো। নিশ্চয় একটা চুমু টুমু দিতো। কিন্তু কি হলো? ছোঁয়া যেতেই পারলো না?
আসলে যাবে কি করে? বাবাকে তো প্রমিজ করেছিলো এইচএসসির আগে দূরে দূরে থাকবে। তবুও সে কথা ছোঁয়া রাখতো না। লুকিয়ে চুকিয়ে দেখা করতোই। যেমনটা সকালেও করেছিলো। কিন্তু বাবা চোখের সামনেই বসে আছে৷ এভাবে বাবার সামনে দিয়ে যাবে কিভাবে?

যদিও ছোঁয়ার লজ্জা একটু কম। তবুও বেশ লজ্জা লাগছে৷ তাই তো ফ্লোরে বসে পড়েছে৷
সেলিম বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে “তুমি ফ্লোরে কেনো বসেছো? ঠান্ডা লাগবে?”
জবাব দেয় নি ছোঁয়া।
এখন সাজ্জাদ চৌধুরীরও একই প্রশ্ন।সে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

“এখানে কেনো তুমি? উঠে এসো।
ছোঁয়া মন খারাপ করে জবাব দেয়
“গরম লাগছে বড় বাবা। ঠান্ডা লাগলে উঠে যাবো।
আর কিছু বলে না সাজ্জাদ। তিনি খেতে বসে যায়।
সবাইকে খাবার বেরে দিতে গিয়ে সাবিনা বলে ওঠে
” ছোঁয়া সাদুকে ডেকে নিয়ে আয়।

ছোঁয়া যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। এক লাফে উঠে এক দৌড় দেয়।
সাদির রুমে ঢুকে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে
“আব্দুল কুদ্দুসের নানা বড়বড় চোখ করে বসেছিলো। কথা দিয়েছিলাম না তাকে এইচএসসির আগে কাছাকাছি আসবো না? তাই আসতে পারি নি।
সরি জামাই।

সাদি খাটে আধশোয়া হয়ে একটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছিলো। ছোঁয়াকে দেখে সোজা হয়ে বসে৷ কথা বলার ধরণ দেখে হাসি পায়। তবু লুকিয়ে রাখে।
” ইটস ওকে
রাতে আমার সাথে ঘুমাবে।

ছোঁয়ার চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়।কিভাবে ঘুমাবে তার সাথে? ছিহহ ছিহহহ বাড়ির সবাই কি ভাববে?
সাদি বই রেখে দেয় টেবিলে। টিশার্ট টেনে টুনে ঠিক করে। বা হাতে চুল গুলো পেছনে ঠেলে স্যান্ডেল পায়ে চাপিয়ে বেরুনোর প্রস্তুতি নেয়।

ছোঁয়া এখনো ভাবনায় বিভোর।
সাদি মাথা নিচু করে মুখটা ছোঁয়ার কান বরাবর নিয়ে নেয়। ফু দেয় ছোঁয়ার কানে। শুকনো ঢোক গিলে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া।

“আব্দুল কুদ্দুসে মা না আসলে। আব্দুল কুদ্দুসের বাবা চলে যাবে মিহির কাছে৷ বুঝেছো ডার্লিং?
পরপর বড়বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় সাদি। রেখে যায় কাঁপতে থাকা ছোট্ট সত্তার ছোঁয়াকে। দিয়ে যায় টেনশন বাড়িয়ে।
কিভাবে কি করবে এবার?
মুখটা গোমড়া করে মাথা ছোঁয়াও সাদির পিছু ছুঁটে।

নাজমা বেগম এখন অনেকটাই সুস্থ। ঔষধ খাওয়ার পরে বমি করেছে। হালকা পাতলা কিছু খাবার খাইয়ে দিয়ে গিয়েছে সাহেলা বেগম। আপাতত তিনি চোখ বন্ধ করে রেস্ট নিচ্ছে। ছোঁয়া একবার এসে দেখে যায় মাকে। আজকে নাজমা বেগমের কাছে ঘুমবে পরি। মাঝেমধ্যেই সে দাদি বা নানির মাঝখানে থাকে। আজকে অবশ্য ছোঁয়া চেয়েছিলো পরিকে সাদির কাছে পাঠাতে। পরি থাকলে একটু স্বস্তি পেতো।

নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হয় ছোঁয়া। এই তো সারাক্ষণ মৌমাছির মতো ছুঁটে বেড়ায় সাদির পিছু পিছু। আর আজকে এমন গলা শুকিয়ে আসছে কেনো? নার্ভাস লাগছে কেনো? আশ্চর্য ব্যাপার স্যাপার।

সেলিম চৌধুরী প্রচন্ড রেগে আছে সাদির ওপর। বেয়াদব ছেলে। মনের মধ্যে আবোলতাবোল চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। তাই তো সে তার সুন্দরী বউকে ডাক্তারের কাছে নিলো না। ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ালো। এখন সে বউয়ের কাছে যাবে কি করে? ঝাঁটার বাড়ি মেরে তাকে তাড়িয়ে দেবেন নাজমা বেগম। অসহায় সেলিম চৌধুরীর আজকে গেস্ট রুমে ঘুমতে হবে। এসবের জন্য কি সাদি দায়ী নয়? আলবাত সাদি দায়ী।
বিরবির করতে করতে তিনি গেস্ট রুমের দিকে চলে যায়।

ছোঁয়া এটারই অপেক্ষায় ছিলো। বাবা সরতেই সে এক দৌড়ে সাদির রুমের সামনে আসে। দুরুদুরু বুক কাঁপছে। দরজা আধখোলা। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে প্রথমে মাথাটা ঢুকিয়ে দেয়। লাইট জ্বলছে। সাদিও বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন দেখছে। টিশার্ট খুলে ফেলেছে। প্রথমবার বোধহয় সাদিকে খালি গায়ে দেখলো ছোঁয়া। লোকটা এতো আকর্ষণীয় কেনো? উফফফ

এই যে ফর্সা বুকে কালো লোমশ জড়িয়ে আছে। কি আদুরে লাগছে।
“তোমার পেছনে আব্দুল কুদ্দুসে নানা
সাদির বলতে দেরি ছোঁয়ার ঠাসস করে পড়ে যেতে দেরি নেই। দরজার সামনে ঝোলানো পর্দায় ছিঁড়ে পড়েছে সে। সমস্ত ভর পর্দায় দিয়েছিলো কি না।
সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এগিয়ে যায় ওঠাবে বলে। কিন্তু তার আগেই ছোঁয়া উঠে পড়ে। দরজা বন্ধ করে দেয়।

বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানছে সে।
সাদি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
” মানুষ হবে কবে তুমি?
ছোঁয়া গাল ফুলিয়ে জবাব দেয়
“মানুষই তো

” বাঁদর তুমি। শুধু একটা লেজ থাকলে গাছে ঝুলতে।
ছোঁয়া মুখ বাঁকায়। জবাব দেয় না।
“ঘুমবে আমি। সারাদিন যেভাবে দৌড় করিয়েছো।
সাদি লাইট অফ করে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে। ড্রিম লাইট জ্বালানো আছে অবশ্যই।
ছোঁয়া বিরবির করে সাদিকে বকতে থাকে। কতো রিক্স নিয়ে আসলো? আবার পড়েও গেলো। একবার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো না? ” ছোঁয়া ঠিক আছো তুমি?

“ব্যাথা পেয়েছো?”
তা না ধমকে শেষ করলো।
বজ্জাত লোক। নিরামিষ একটা।
“সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকার প্ল্যানিং করেছো না কি? ওকে আমি যাচ্ছি
সাদি উঠতে নিলেই ছোঁয়া ঠাসস করে শুয়ে পড়ে
সাদির দাঁড়ি দুই আঙুলে টান দিয়ে ফিসফিস করে বলে

” এতো যাই যাই করেন কেনো? একটু ভয় পাই বলে ভয় দেখাতে হবে?
সাদি আলতো হাসে। জড়িয়ে নেয় ছোঁয়াকে। বুকের মাঝখানে ছোঁয়ার ছোট্ট মাথাটা চেপে ধরে।
ছোঁয়া আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। টুপ করে চুমু খেয়ে নেয় সাদির বুকে।
পরপর নিজেই লজ্জায় হাসফাস করতে থাকে। অস্বস্তি হচ্ছে। এভাবেি ঘুমবে না কি?
সাদি নিজের দাঁড়ি যুক্ত গালখানা ছোঁয়ার গলায় রাখে। ভুমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। ছটফট করতে থাকে।
বিরক্ত সাদি।

“ডিস্টার্ব করলে যা করতে মন যাচ্ছে সব করে ফেলবো।
ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। রিনরিনিয়ে জবাব দেয়
” কাতুকুতু লাগছে।
“লাগুক।
” দম বন্ধ হয়ে আসছে
“মরে যাও
” বুক কাঁপছে
“কাঁপতে দাও

হৃদয়হরণী পর্ব ৩৮

“সয্য হচ্ছে না।
” এইটুকু সয্য করতে না পারলে আমাকে সামলাবে কিভাবে?
ছোঁয়ার মুখে কথা নেই। সাদি মুখ তুলে চুমু খায় ছোঁয়ার ললাটে।
তারপর আবারও কাঁধে মুখখানা লুকিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।
“ঘুমাও জান। গুড নাইট

হৃদয়হরণী পর্ব ৪০