হৃদয়হরণী পর্ব ৬০

হৃদয়হরণী পর্ব ৬০
তানিশা সুলতানা

একটা মেয়ে যতই পাগল হোক সে তার বাচ্চার কাছে পারফেক্ট মা। এই যে আধপাগল ছোঁয়া যে সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করতে থাকে। বকবক করতে থাকে। দুষ্টুমি যার শিরায় শিরায় রয়েছে সে ছোঁয়া এখন বাচ্চার কথা চিন্তা করে ধীরে ধীরে পা ফেলে। যখন তখন লাফিয়ে ওঠে না। প্রচন্ড খুশিতেও গড়াগড়ি খেয়ে হাসে না।
ঠিক সময়ে খাবার খেয়ে নেয়। একদম অনিয়ম করে না। ডাক্তার বলেছে প্রতিদিন সকাল সকাল গোছল করতে ছোঁয়া তাই করে। একদম গোছলে অনিয়ম করবে না সে।

আজকে বাড়িতে সিমি এবং ছোঁয়া ছাড়া আর কেউ নেই। সাদি অফিসে গিয়েছে। নাজমা এবং সাহেলা মার্কেটে গিয়েছে। বাকি সবাই তাদের কাজে।
সিমি পরিকে ঘুম পাড়াচ্ছে। ছোঁয়াকে বসিয়ে রেখে গিয়েছে সাদির রুমে। ছোঁয়াকেও একটু ঘুমতে বলেছে। ছোঁয়া ঘুমতেই চাচ্ছিলো তখনই তার মনে হলো ফোনে দুটো ভিডিও দেখে নেওয়া যাক। বেবি বাম্পের সময় মায়েদের কেমন করে চলাফেরা করা উচিত, কি কি খাওয়া উচিত। যদিও ডাক্তার বলে দিয়েছে। তারপরও ডিজিটাল যুগ। ইউটিউব এ সার্চ দিলে সকল বিষয়ের তথ্যই জানা যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

যেই ভাবা সেই কাজ। ছোঁয়া ইউটিউব এ সার্চ দেয় “বেবি বাম্প” লিখে। সেখানে বিভিন্ন ধরণেরই ভিডিও শো করে। ছোঁয়া নজর পড়ে টুইন বেবিদের ভিডিওর দিকে। কি সুন্দর দুটো বাচ্চা। একদম একই রকম দেখতে হয়েছে। ছোঁয়ারও সাধ জাগে তারও যদি টুইন বেবি হতো।
চট করে মাথায় ধরে যায় ছোঁয়ার “টুইন জিনিস খেলে টুইন বেবি হয়”

ফোনটা রেখে চট জলদি রান্না ঘরে ছোটে ছোঁয়া। কারণ একটু আগেই তার চোখের সামনে সিমি টুইন দুটো বিস্কুট রাখছিলো তাকের ওপর। টুইন বলতে দুটো বিস্কুট জোড়া লেগে গিয়েছে। ছোঁয়া সেটাই খাবে এখন।
একটু দৌড়াতে যেতেই ছোঁয়ার মাথায় আসে “পেটে বাচ্চা”
এবার হাঁটার গতি থামিয়ে দেয় ছোঁয়া। আস্তে ধীরে হেঁটে রান্না ঘরে প্রবেশ করে। তাক থেকে বিস্কুটের ডিব্বা নিয়ে মোড়া টেনে বসে খেতে শুরু করে টুইন বিস্কুট খানা। খেতে খেতেই চিন্তা করে “একটা বিস্কুট খেলে টুইন হওয়ার চান্স থাকবে না”

এখন থেকে সব কিছুই টুইন খেতে হবে। কিন্তু বাড়িতে তো আর টুইন কিছু নেই। সাদিকে কল করতে হবে। এবং বলতে হবে বাজারে যত টুইন ফলমূল আছে সবই জেনো নিয়ে আসে।
ভাবতে ভাবতেই খাওয়া শেষ করে ফেলে। এক গ্লাস পানি পান করে খানিকক্ষণ বসে রেস্ট নেয়। ডাক্তার পই পই করে বলে দিয়েছে “খাবার খাওয়ার পরে একটুখানি রেস্ট নিতে। ভরা পেটে লাফালাফি করলে পেট ব্যাথা করতে পারে”

অফিস বাদ দিয়ে সাদি সামিরের পেছনে ঘুরছে। তার অবশ্যই কারণ আছে। ঐশির বাবা বিয়ে তো দিতে চেয়েছে কিন্তু ডেট তো বললো না। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। বিয়ে দিবে দিবে করে এক বছর ঘুরাবে ঢেড় বুঝতে পারছে সামির। তাই সে সাদির অফিসে গিয়ে বসের হাত পা ধরে কেঁদেকেটে বলেছে “আমার বউ আরেক বেডার লগে ভাগছে। এবার সাদি ছাড়া কেউ তাকে ফেরাতে পারবে না। আজকের মতো ছুটি দিয়ে দেন সাদিকে। আপনার পা দুটো মাথায় তুলি আমি”

বস হকচকিয়ে গিয়ে সাদিকে ছুটি দিয়েছে। সাদি অফিস থেকে বেরিয়ে অবশ্য সামিরকে দুটো থাপ্পড় মেরে দিয়েছে। এবং আবারও অভিশাপ দিয়েছে “তোর বউ সত্যিই একদিন আরেক বেডার সাথে যাবে দেখিস”
সামির বুক ফুলিয়ে শার্টের কলার ঠিকঠাক করে জবাব দিয়েছে “যেতে পারবে না রে ভাই। সামির বোকা হতে পারে কিন্তু চালাক না। বিয়ের প্রথম বছরেই বেবি নিয়ে ফেলবো। পরের বছরে আবারও।

এমন করতে করতে বাচ্চার ভুবন বানিয়ে ফেলবো। তখন বউ যাবে কি করে? তাকে নিবেই বা কে?
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এর সাথে কথা বলাই অপরাধ।
মার্কেটে নিয়ে গিয়েছে সামির সাদিকে। উদ্দেশ্য শপিং করবে। শশুড় বাড়ির সকলের জন্য নানান জিনিস কিনবে। জিনিস দেখেই শশুড় মশাই পটে যাবে। আর বিয়ে দিয়ে দেবে তাড়াতাড়ি। এমনটাই ধারণা সামিরের।
সাদি বিরক্ত হয়ে সামিরের পেছন পেছন ঘুরছে। একেতো এই ভর দুপুর বেলা মার্কেটে ঘুরতে ভাল্লাগছে না। তারওপর আবার সামিরের আজাইরা চিন্তা ভাবনা।

” সাদি শশুড় মশাইয়ের জন্য জাঙ্গিয়া কিনে নিয়ে যাই কতো গুলো। বেডা খুশি হবে।
সাদি চোখ পাকিয়ে তাকায় সামিরের দিকে।
“এভাবে তাকানোর কি হলো? দেখ শশুড় মশাই আমার কিপ্টা। টাকা দিয়ে কিনে জীবনেও পড়ে না আমি শিওর।
আমি দিলে ভালোই হবে বল।
সাদি দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“তোর শাশুড়ীর জন্যও কতো গুলো বা
থেমে যায় সাদি।

সামির বুদ্ধিমান। সে চট করে ধরে ফেলে
” মন্দ বলিস নি। তুই দাঁড়া আমি কিনে আনি।
সামির যেতে নিয়ে থেমে যায়। মুখটা গোমড়া করে ফেলে সে।
“কিন্তু ভাই। জানবো কি করে? ক
সাদি জুতো খোলার জন্য নিচু হতে যায় সামির এক দৌড়ে পালায়। সাদি কোমরে হাত দিয়ে হাসফাস করতে থাকে। পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না। ঠিক আছে। তাই বলে সব পাগল?

ভাবতে ভাবতেই সাদির ফোন বেজে ওঠে। পকেট থেকে ফোন বের করতেই স্কিনে ভেসে ওঠে “কুদ্দুসের মা” নাম খানা। সাদি এই নামে সেভ করে নি৷ করেছে ছোঁয়া। সাদি জানতোও না। জেনেছে গতকাল।
কল রিসিভ করে সাদি কানে তুলে

“হ্যাঁ জান বলো।
” জান আই লাভ ইউ
সাদি ঠিক বুঝে ফেলে কোনো আবদার আছে।
“লাভ ইউ টু। কিছু লাগবে?
“হুমম
বাজারে যত জমজ শাক সবজি ফল আছে নিয়ে আসেন আমার জন্য।
কপালে ভাজ পড়ে সাদি।

” কিন্তু কেনো?
“আমি খাবো। টুইন ফল খেলে টুইন বেবি হবে।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদি।
” আচ্ছা আনবো।
“শুনেন

” বলেন
“বেশি বেশি করে আইনেন। আপনাকেও খেতে হবে। দুজন মিলে খেলেই কাজে দিবে।
সাদি নিজের কপালে নিজেই কয়েকটা থাপ্পড় দেয়।
” আনবো রাখো তুমি।

হৃদয়হরণী পর্ব ৫৯

শালার কপাল
ঘরে বাইরে সব জায়গায় পাগল।
“কিছু বললেন?

হৃদয়হরণী পর্ব ৬১