হৃদয়হরণী পর্ব ৫০

হৃদয়হরণী পর্ব ৫০
তানিশা সুলতানা

সূর্য মামা মুখ লুকিয়ে আছে। ডিসেম্বরের শুরু। কনকনে শীত নেই তবে হালকা শীত পড়েছে। সূর্যের আলো নেই বিধায় শীতটা অনুভব করা যাচ্ছে।
বেলা বারোটা ছুঁই ছুঁই। তবুও যেনো মনে হচ্ছে ভোর সাড়ে পাঁচটা।
ছোঁয়ার ঘুম ভেঙে গিয়েছে অনেক আগেই। সাদি ঘুমিয়ে আছে ছোঁয়ার ছোট্ট বুকে। দুই হাতে গভীর আলিঙ্গনে আটকে রেখেছে তাকে। স্বামী রূপী প্রেমিকের ঘুম ভেঙে যাবে বিধায় ছোঁয়া একটু নরছে না। তবে তার অস্বস্তি হচ্ছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি এবং সাদির ঘন নিঃশ্বাস তার বুক কাঁপিয়ে তুলছে।

গতকাল রাতের কথা চিন্তা করতেই ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। নতুন এক সাদিকে আবিষ্কার করেছে সে। পুরুষ মানুষের দুটো রূপ থাকে? বস্রহীন সাদিকে কল্পনা করতেই বুক কেঁপে ওঠে। সাদির ঘনঘন নিশ্বাস যেনো এখনো ছোঁয়ার কানে বাজছে। আকুলতার সেই কন্ঠস্বর ফিসফিস করে বলা কিছু কথা এবং উম্মাদনা। সব মিলিয়ে পাগল সাদিকে দেখেছে ছোঁয়া।
জিভ দ্বারা ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে নেয় ছোঁয়া। ছোট্ট হাত জোড়া চলে যায় সাদির মাথায়। ঘন চুলের ভাজে হাত চালাতে থাকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“পঁচা পুরুষ। আপনি অশ্লীল হয়ে যাচ্ছেন। সেটা কি জানেন?
ফিসফিস করে বলে ছোঁয়া।
সাদি শুনতে পায় না। কারণ সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
” আপনার দেওয়া সব ব্যাথা সয্য করে নিবো। যতই অশ্লীল হন মেনে নিবো। শুধু আমার হয়ে থাকেন। আপনার পাগলামির সঙ্গী শুধু আমাকেই করিয়েন।
তাতেই খুশি আমি।

কুদ্দুসকে দ্রুত আনতে হবে। কুদ্দুস চলে আসলে আপনাকে হারানোর ভয় পাবো না আর। আমার টিম স্ট্রং থাকবে।
ছোঁয়ার এসব ভাবনার মাঝে সাদি নরেচরে ওঠে। ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে নেয়। খুব জানা আছে এখন চোখ খোলা দেখলে আবারও দুষ্টুমি শুরু করবে। লোকটার হুটহাট এ্যাটার্ক সয্য করতে ছোঁয়া বেশ হিমশিম খেয়ে যায়।
সাদি চোখ খুলে দেখে তার প্রেয়সী চোখ পিটপিট করছে। ঘুমের ভান ধরছে বেশ বুঝতে পারে সাদি। মুচকি হাসে সাদি।

একট জ্বালানোর ইচ্ছে জাগে মনে। আর তখনই মুঠো ফোনটা কর্কশ শব্দে বেজে ওঠে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে সাদি।
ছোঁয়ার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে উঠে পড়ে।
বালিশের তলায় থেকে ফোনটা বের করে। স্কিনে মিহি নামটা ভেসে ওঠে।
সাদি বিরবির করে বলে “মিহি কেনো কল করছে”

নামটা ছোঁয়ার কানে পৌঁছায়। ছোঁয়া এক লাফে উঠে বসে। ছো মেরে সাদির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানে দেয়। সাদি গোলগোল চোখে তাকিয়ে থাকে।
ওপাশের মানুষের কথা না শুনেই ছোঁয়া বলে ওঠে
“সরি ফোনের মালিক এখন বউয়ের সাথে রোমাঞ্চ করতে ব্যস্ত।
এতো সকালে কেউ কাউকে কল করে? মেনার্স জানেন না? ছেলেদের নাম্বার দেখলেই কল করতে ইচ্ছে করে? চাপকে একদম গাল ফাঁটিয়ে দিবো আমার বরকে কল করলে।

ওপাশের মানুষটা কিছু বলতে যায় ছোঁয়া তাকে থামিয়ে বলে
” কথা বললে একদম জিভ টেনে ছিঁড়ে দিবো। আমার বরের সাথে চান্স দিতে এসে লাভ নাই। বাবা হতে চলেছে সে। আপনি ফুপি হতে চলেছেন। ভাগিনার বাবার দিকে নজর দিলে আমার কুদ্দুস আপনার চোখ তুলে নিবে। ওয়ার্নিং দিয়ে দিলাম আপনাকে।
এক থালা কথা বলে ছোঁয়া কল কেটে দেয়। এবং জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে। হুমকি দিতে দিতে হাঁপিয়ে গিয়েছে সে।

সাদি গালে হাত দিয়ে ছোঁয়াকেই দেখছিলো।
“পাঁচ ঘন্টাও তো হলো না এর মধ্যেই প্রেগন্যান্ট? তোমার কুদ্দুস তো দেখি রকেটের গতিতে আসছে।
খানিকটা মজা করেই বলে সাদি।
ছোঁয়া ভেংচি কাটে।

” ঢপ মারলাম। যাতে আপনার মিহি ভয় পায়।
হাসি পেলেও সাদি হাসে না। সিরিয়াস ভঙিতে মাথা নারায়।
হুট করে ছোঁয়ার মনে পড়ে।
“সাদু বলেন তো। আমাদের কুদ্দুস কেমন হবে?
সাদি হাই তুলে বলে

“আধপাগল মায়ের কুদ্দুস ফুল পাগল হবে। আর কেমন হবে?
ছোঁয়া সাদির চুল টেনে দেয়।
” একদম পাগল হবে না। আমাদের কুদ্দুস হবে কমলা লেবুর রসগোল্লা।
কি করে বলবো?
সাদি নিজের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে মাথা নারায়।

“আমি ধলা আপনিও ধলা। আপনি করলা আমি প্রচুর মিষ্টি। তো তেঁতো আর মিষ্টি মিলে, ধলা আর ধলা মিলে মোটমাট হয়ে যাবে কমলা কালার হালকা মিষ্টি। আর কমলা লেবুর রসগোল্লা তো অতিরিক্ত মিষ্টি থাকে না। তো আমাদের কুদ্দুস কমলা লেবুর রসগোল্লা হবে।
সাদি পরপর কয়েকবার ঢোক গিলে। ফোঁস করে শ্বাসও টেনে ফেলে এবং হতাশার নিঃশ্বাসও ফেলে। মনে মনে আফসোসও করে নিজের জন্য।
নেহাৎ আল্লাহ তাকে অসীম ধৈর্যশীল বানিয়েছিলো। নাহলে পাগল হয়ে এতোদিনে পাগলা গারদে চলে যেতে হতো।

সেলিম মনে মনে বেশ চটে ছিলো এতখন। কিন্তু এখন সে ভয় পেয়ে আছে। ছোঁয়ার জন্মদিন উপলক্ষে বাড়িতে হালকা আয়োজন চলছে। গরুর মাংসর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতি বছর সেলিম সবার আগে Wish করে মেয়েকে। কিন্তু এই বছর বেয়াদব ছেলে তার মেয়েটাকে নিয়ে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে। এবং এই যে দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে এখনো ফেরার নাম নেই। চটবে না?

মেয়েটা তো তারই।
সাদির নামে এক চোট নালিশ দিয়ে ফেলেছে সাজ্জাদের কাছে।
আরেক চোট নালিশ দিতে যাবে তখনই হাসি হাসি মুখ নিয়ে রাজিয়া বাড়িতে ঢুকে পড়ে।
সেলিম পরপর কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে। এই মহিলা এখানে কি করছে?
এখন সাদি চলে আসলে তাকে সিল পাঁটায় তুলে পিষে ফেলবে।
বুরো বয়সে বোধয় তাকে বউ ছাড়া হতেই হবে। তার ডিভোর্সটা কেউ আটকাতে পারবে না।
“ভালো আছো সেলিম?

হৃদয়হরণী পর্ব ৪৯

নাজমা তখনই খুনতি হাতে বেরিয়ে আসে। হাতা কাটা ব্লাউজ এবং ফিনফিনে পাতলা শাড়ি পড়ুয়া এক মহিলাকে দেখে কপালে ভাজ পড়ে নাজমার। কে এই মহিলা?
তখনই পেছন থেকে সাদি বলে ওঠে
” শশুড় মশাই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছেন? লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেন নি তো?

হৃদয়হরণী পর্ব ৫১