হৃদয়হরণী পর্ব ৫৩

হৃদয়হরণী পর্ব ৫৩
তানিশা সুলতানা

বয়সের সাথে কখনোই ম্যাচুউরিটি আসে না। ম্যাচুউরিটি আসে পরিস্থিতির সাথে। তুমি জীবনে যত খারাপ পরিস্থিতিতে পড়বে তোমার জীবনে ততদ্রুত ম্যাচুউরিটি আসবে।
সামির কোথায় যাচ্ছে এটা জানার জন্য সাদি বেরিয়েছিলো বাসা থেকে। অসাবধানতায় রাস্তা পার হতে গিয়ে একটা ট্রাক এসে ধাক্কা মারে সাদিকে। ছিঁটকে পড়ে যায় পিচঢালা রাস্তায়। মুহুর্তেই রক্তে মাখামাখি হয়ে ওঠে সারা দেহ।
মানুষ জন জড়ো হয়ে যায়। হইচই পড়ে যায়।

বাড়ির সামনে থেকে হইচই এর শব্দ আসছে শুনে সেলিম এবং ছোঁয়া বেরিয়ে আসে দেখার জন্য।
মুহুর্তেই এম্বুলেন্স চলে এসেছে।
ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে ছোঁয়া। তার মন কু ডাকছিলো।
সাদিকে পড়ে থাকতে দেখে জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে ছোঁয়া। এগোনোর শক্তি পায় না। হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ছোঁয়া। রিয়েক্ট করতে পারছে না। মেয়ের চিৎকারে সেলিমও ভিড় ঠেলে ঢুকে। সাদিকে দেখে তারও বুকটা কেঁপে ওঠে। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাদির জ্ঞান রয়েছে। সে কথা বলতেও পারছে। কিন্তু এতো লোকজনের মাঝে তার কথা শোনা যাচ্ছে না। কয়েকজন ধরে রেখেছে তাকে
সাদি রক্ত মাখা হাতখানা উঁচু করে ছোঁয়াকে শান্ত হতে বলে। বোঝায় সে ঠিক আছে।
কিন্তু সত্যিই তো সাদি ঠিক নেই৷ মাথা ফেঁটে গলগল করে রক্ত ঝড়ছে। বা হাতটা বাঁকা হয়ে গিয়েছে। ডান পায়ের প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে।

এম্বুলেন্স আসতেই সকলেই ধরাধরি করে সাদিক গাড়িতে তুলে। ছোঁয়া বসেই আছে সাদির দিকে তাকিয়ে। কাঁপছে সে। কথা বলার শক্তি হারিয়েছে। চিৎকার করে বলতে চাচ্ছে সাদিকে না নিতে। কিন্তু সে বলতে পারছে না। সেলিমও মেয়ের কথা ভুলে যায়। সে সাদির সাথে চলে যায়। একা পড়ে রয় ছোঁয়া। আস্তে আস্তে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। ঘাড়ে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। বুকেও অসয্য ব্যাথা হতে থাকে।
অতঃপর ছোঁয়া তার আঁখি পল্লব বন্ধ করে পড়ে যায় রাস্তায়।

হাসপাতালের করিডোরে বাড়ির সকলেই বসে আছে। সাবিনা বেগমের অবস্থা খারাপ। কাঁদতে কাঁদতে দু বার জ্ঞান হারিয়েছে সে। সাদির ট্রিটমেন্ট চলছে। ডাক্তার বলেছে মরণ বাঁচন কোনো ব্যাপার নেই। তবুও সকলেই ভেঙে পড়েছে।

ছোঁয়ার অবস্থা দেখে সকলে আরও বেশি ঘাবড়ে গিয়েছে। মেয়েটাকে তারা রাস্তায় পেয়েছে। পাড়ার একজন গিয়ে বাকিদের খবর দিয়েছে। যে যেমনভাবে ছিলো তেমন ভাবেই বেরিয়ে পড়ে।
ছোঁয়ার আর বার্থডে কেক কাটা হয় না। এতো এতো রান্না করা হয়েছে বার্থডে উপলক্ষে। সে সব সেভাবেই পড়ে থাকে।

চোখ খুলতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে ছোঁয়া। মস্তিষ্কে একটুখানি চাপ দিতেই মনে পড়ে যায় সাদির কথা।
চিৎকার দিয়ে বসে পড়ে ছোঁয়া। হাতে ক্যানেলো লাগানো ছিলো। রক্ত উঠে যায় নলে।
ছুঁটে আসে সিমি এবং নাজমা বেগম। নার্সও আসে।
দুজন ধরে ফেল ছোঁয়াকে। ছোঁয়া ছুটোছুটি করতে থাকে৷ তাকে ধরে রাখা দায় হয়ে পড়েছে।
ছোঁয়া চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে

“আম্মু আমাকে ছাড়ো। আমার সাদি। আমাকে সাদির কাছে যেতে হবে। আমার সাদি ব্যাথা পেয়েছে।
নাজমা বেগমের চোখেও পানি।
তিনি মেয়ের মাথা খানা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে
” শান্ত হ মা। সাদি ঠিক আছে।
হাইপার হস না।

মায়ের বুকে ছোঁয়া ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। ডাক্তার কৌশলে ক্যানেলো খুলে দেয়। সেখান থেকে রক্ত ঝড়তে থাকে। কিন্তু সেদিকে ছোঁয়ার খেয়াল নেই।
“আমার জন্য আমার সাদুর এই অবস্থা। আমি এতো পাগলামি কেনো করি আম্মু?
সিমিও ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
পেশার ফলস করেছিলো ছোঁয়ার।

” চুপ কর সোনা। সাদিকে দেখবি চল। সেও তোকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে।
ছোঁয়া মায়ের বুক থেকে মাথা তুলে মুখের দিকে তাকায়।
এক সেকেন্ডও দেরি করে না ছোঁয়া। এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়ে নিজের কেবিন থেকে।
করিডোরেই দেখতে পায় সেলিম এবং সামিরকে। সাদির সাথে কথা বলিয়ে সাবিনা বেগম এবং পরিকে বাড়িতে ছাড়তে গিয়েছে সিফাত। আর সাজ্জাত গিয়েছে সাদির জন্য ঔষধ আনতে।
ছোঁয়াকে দেখেই সেলিম দাঁড়িয়ে যায়।

“মা তুমি উঠে পড়েছো কেনো?
ছোঁয়া বাবাকে দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে
” আমার সাদি কোথায়?
আমি দেখবো ওকে।

সেলিম মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পারে। হাতের ইশারায় কেবিন দেখিয়ে দেয়। ছোঁয়া এক দৌড়ে ঢুকে পড়ে।
কপালে সাদা ব্যান্ডেজ। পায়ে ব্যান্ডেজ হাতেও ব্যান্ডেজ করা। চোখ বন্ধ করে আছে সাদি। ফর্সা গোলগাল মুখখানা একদম অন্যরকম লাগছে। কুচকুচে কালো দাঁড়িতে এখনো রক্তের ছোঁয়া লেগে আছে। নাকের পাশ দিয়েও রক্তের স্রেত বয়ে গিয়েছে।
ছোঁয়া সাদির পাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁট কামড়ে কাঁদতে থাকে। দুই হাতে মুখ চেপে ধরে। যাতে তার কান্নার শব্দে সাদির ঘুম না ভাঙে।

কিন্তু বোকা ছোঁয়া জানেই না তার সাদি ঘুমিয়ে নেই।
সে ছোঁয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে গিয়েছে।
চোখ খুলে সাদি। তাকায় প্রেয়সীর মুখ পানে। মলিন হাসে
“কাঁদছো কেনো?
আমি ঠিক আছি।

সাদির কন্ঠ শুনেই ছোঁয়া শব্দ করে কেঁদে ওঠে। বসে পড়ে সাদির পাশে। বুকে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে।
সাদি হাত বাড়িয়ে প্রেয়সীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারে না। কারণ তার হাতে আপাতত সেই শক্তি নেই।
শুধু বলতে থাকে

” কেঁদো না জান আমি ঠিক আছি।
“আমি আর কখনোই আপনার কথার বাইরে যাবো না। যা বলবেন তাই হবে। একদম বাচ্চামি করবো না। আপনি খ্যশুধু সুস্থ হয়ে যান।
হাসে সাদি।

হৃদয়হরণী পর্ব ৫২

” তুমি কান্না না থামালে সুস্থ হবো না।
ছোঁয়া কান্না থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারছে না।

হৃদয়হরণী পর্ব ৫৪