হৃদয়হরণী পর্ব ৫৭

হৃদয়হরণী পর্ব ৫৭
তানিশা সুলতানা

অসুস্থতায় একটা মানুষ এতোটা খুশি হতে পারে?
ছোঁয়া পারে। এই যে মাথা ব্যাথায় চোখ খুলতে পারছে না। বমি করতে করতে গলা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। তবুও সে দাঁত কেলিয়ে হাসছে। নাচার জন্য বারবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সাদি চোখ রাঙিয়ে বসিয়ে রেখেছে।

সাবিনা বেগম চিন্তিত। সে ভাতের থালা নিয়ে ছোঁয়ার সামনে বসে আছে। আপাতত বাড়িতে কেউ নেই। সকলেই গিয়েছে পাশের বাড়িতে দাওয়াত খেতে। সাদিকে কল করে বাড়িতে এনেছে ছোঁয়া। সাবিনা বেগমও গিয়েছিলো দাওয়াতে। সাদি কল করে বাড়ি আসতে বলেছে।
“বড় মা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো। সুখবর নিয়ে আসি। আর কুদ্দুসের বাপ জলদি দোকানে যান মিষ্টি আনতে৷ পুরো পাড়াতে আমি নিজে হাতে মিষ্টি দিবো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথা বলার শক্তি নেই। তবুও টেনে বলছে ছোঁয়া। সাদির বিরক্ত আকাশ ছুঁই ছুঁই। ইচ্ছে করছে একে একটা লাথি মেরে ফুটিয়ে ফেলতে। কিন্তু পারছে না। কি আর করার আধপাগল হোক বউ তো।
সাবিনা বেগম ছেলের পানে এক পলক তাকায়। তারপর ছোঁয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” ভাত খেয়ে নে। তারপর নিয়ে যাবো।
ছোঁয়া তাকায় ভাতের থালার দিকে। ইলিশ মাছের পিচ দেখে আবারও গা গুলিয়ে আসে। মনে হচ্ছে নাড়িভুড়ি সব বেরিয়ে আসবে।

“বড় মা খেতে পারবো না গো। কুদ্দুস খেতে বারণ করছে।
সাদি দাঁড়িয়ে যায়। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে দুই গালে হাত দেয়। যাতে থাপ্পড় টাপ্পড় দিতে না পারে। সাদি ছোঁয়ার কাছে এসে পাজা করে কোলে তুলে নেয়। ছোঁয়া ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে ফেলেছে। সাবিনা বেগম মাথা নিচু করে ফেলে।
সাদি গটগট পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
ছোঁয়া শক্ত করে সাদির গলা জড়িয়ে ধরেছে। বেশ ভালো লাগছে তার। বরের কোলে থাকার মজাই আলাদা। ছোঁয়ার তো ইচ্ছে করে সারাক্ষণ লোকটার কোলে চরে থাকতে। এমন দিন কবে আসবে? যে দিনে সাদমান চৌধুরী তার বউকে কোল থেকে নামাবে না?

গাড়ির মধ্যে এক প্রকার ছুঁড়ে ফেলে ছোঁয়াকে। ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে সেভাবেই পড়ে থাকে। বজ্জাত লোক। সন্তান আসছে কোথায় বউকে ধরে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিবে তা না রাগ দেখাচ্ছে।
এমন বরকে ঘেন্না করা উচিত। কিন্তু ছোঁয়ার মনটা বড় কি না? তাই সে ঘেন্না করতে পারে না।

হাসপাতালের করিডোরে বসে থাকার ধৈর্য ছোঁয়ার নেই। লম্বা লাইন পড়েছে। সাদি ছোঁয়াকে নিয়ে বসেছে এক পাশে। সাদি নিরবে বসে ফোন দেখতে থাকলেও ছোঁয়া স্থির থাকতে পারছে না। ছটফট করেই যাচ্ছে। কখনো সাদির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ছে তো কখনো কাঁধে মাথা রাখছে। কখনো চুল ধরে টানছে আবার কখনো দাঁড়ি ধরে টানছে। শার্টের কলার ধরে টানছে। সাদিকে বেশ ধৈর্যশীল দেখাচ্ছে।

“আজকেই সবাইকে অসুস্থ হতে হলো?
ছোঁয়া বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে। সাদি ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এক পলক তাকায় ছোঁয়ার মুখ পানে।
” অসুখেরও আক্কেল নাই। আব্দুল কুদ্দুসের একমাত্র মাকে চেপে ধরেছে ভালো কথা। থাক আমার কাছেই। কাল নাহয় বাকি সবার কাছে যাইস। তা না ভাগ ভাগ করে সকলের কাছেই গিয়েছে।

ভালো কথা আচ্ছা সাদু অসুখের বংশ কতো বড়? না মানে দেখুন এক সাথে কতো জনকে চেপে ধরে। ডেঞ্জারাস
হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে সাদি। এই মেয়ে কি জীবনেও মানুষ হবে না? আল্লাহ কি তাকে কখনোই এতটুকু বুদ্ধি দেবে না? সারাজীবন এমন গাঁধাই থেকে যাবে?

সাদির মুখের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়া। একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
” হে হে মজা করছিলাম। রাগিয়েন না প্লিজ। হবু বাচ্চার মাকে বকলে আল্লাহ পাপ দেবে।
সাদি পকেট থেকে হেডফোন বের করে কানে গুঁজে নেয়। ছোঁয়া কয়েকবার মুখ বাঁকিয়ে ভেংচি কাটে সাদিকে। বেডার ভাব দেখলে ইদানীং ছোঁয়ার ইচ্ছে করে চিৎকার করে বলতে “বিবাহিত বেডাদের ভাব ধরা মানায় না। কারণ তাদের দাম নাই”

খালি লোক লজ্জার ভয়ে বলতে পারে না ছোঁয়া।
অবশেষে ছোঁয়ার সিরিয়াল আসে। সাদির আগেই ছোঁয়া ঢুকে পড়ে৷ কপালে তিনটে ভাজ পড়ে সাদির। এই তো কথাই বলতে পারছিলো না। এখুনি এতো শক্তি কই পেলো?
মধ্য বয়স্ক একজন মহিলা বসে বসে কিছু একটা দেখছে। ছোঁয়া প্রায় দৌড়ে মহিলা ডাক্তারের সামনে বসে পড়ে এবং বলে ওঠে

“আমি কিট পরিক্ষা করে নিয়েছি। পজিটিভ দেখেছি। মানে হচ্ছে আমার সন্তান আসছে। আপনি আমার বরকে এটা বলে দিন।
ডাক্তার ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার মুখপানে। সাদিও চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে। বসার জন্য চেয়ার ধরেছিলো সে। কিন্তু ছোঁয়ার কথা শুনে বসতে ভুলে গিয়েছে। প্রেগন্যান্ট কিটও পরিক্ষা করাও শেষ?
ডাক্তার ছোঁয়ার কথা শুনে মুচকি হাসে। সাদির দিকেও এক পলক তাকায়।

” বাহহ তুমি তো খুবই ফাস্ট
“আমি কুদ্দুসের মা কি না।
কালকেই পরিক্ষা করেছি। বমি হচ্ছিলো না বলে কাউকে জানায় নি। আজকেই বমি হয়েছে।
ছোঁয়ার কথায় এবার শব্দ করে হেসে ওঠে ডাক্তার। সাদি চোখ পাকিয়ে ছোঁয়াকে শ্বাশায়।
” সরি ডাক্তার

হৃদয়হরণী পর্ব ৫৬

আমার বউয়ের মাথায়,একটু প্রবলেম আছে।
ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে
“আমার মাথায় কোনো প্রবলেম নাই। আমি ঠিকঠাক।
ডাক্তার আন্টি আপনি বলুন কিভাবে চলতে হবে? কি করতে হবে? আমি শুনছি।

হৃদয়হরণী পর্ব ৫৮