হৃদয়হরণী বোনাস পর্ব 

হৃদয়হরণী বোনাস পর্ব 
তানিশা সুলতানা

বিয়ে ভেঙে যাওয়া একটা মেয়ের জন্য খুবই কষ্টের একটা বিষয়। মেয়ে তো। পাড়া প্রতিবেশী আত্নীয় স্বজন সবাই গাল ভরে বলতে বাকি রাখে না। কেনো বিয়ে ভেঙে গেলো এটা কেউ একবারও জিজ্ঞেস করবে না। বা ছেলের দোষ কি না এটাও জানতে চাইবে না। সকলে একবাক্যে বলে উঠবে “মেয়েটারই কোনো সমস্যা আছে। বদনাম রটিয়ে দিবে”
কিছু কিছু মেয়ের তে আবার মা এমন যে নিজেই তার মেয়েকে উঠতে বসতে কথা শোনায়। গালাগালি করে। মরে যেতেও বলে।

মায়ার মাও তেমন প্রকৃতির। যখন থেকে জেনেছে সাদি আসবে না বিয়ে করতে তখন থেকেই সে মায়াকে গালমন্দ করে যাচ্ছে। মরে যেতেও বলেছে কয়েকবার। এমনকি হাতে রশিও তুলে দিয়েছে ফাঁ*সি দেওয়ার জন্য। এতে অবশ্য মায়ার মন খারাপ হচ্ছে না। বরং বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসছে। এটা তো ভাগ্যের লিখন। এতে মা বা পাড়াপ্রতিবেশিদের ওপর রাগ করে লাভ আছে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভাগ্যে এমনটা লিখা না থাকলে তো এমন হতো না। আল্লাহ যেখানে নিজে মায়ার ভাগ্য লিখেছে সেখানে মায়া আফসোস করার কে? তাকে মেনে নিতে হবে। তাছাড়া উপায় নেই। দুনিয়াটা আল্লাহর ইশারায় চলে।
সাদিকে বিয়ে করার ইচ্ছে তার কখনোই ছিলো না। বাবা মায়ের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়েছে। অনেকবার সাদিকে কল করেছে কথা বলার জন্য। নিজের সিচুয়েশনে জানানোর জন্য। কিন্তু সাদি রেসপন্স করে নি৷
এমনকি সেই দিন শপিং করার নাম করেও সাদির সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো সেটাও হয় নি। মায়া ভেবেছিলো সাদি তাকে একটু হলেও সাহায্য করবে।

মায়া ভীষণ সুন্দরী একটা মেয়ে৷ একটা সময় তার দাপট চলতো কলেজে। প্রায় ছেলের ক্রাশ ছিলো সে। ভাবটাই ছিলো অন্য রকম। হাসিখুশি চঞ্চল জীবনটা কতো সুন্দর ছিলো।
তারপর একটা পুরুষের মায়ায় জড়িয়ে গেলো পুরুষটা নিজেই এসেছিলো মায়ার জীবনে। দীর্ঘ দিন পেছন পেছন ঘুরেছে। মায়াকে মানাতে চেয়েছে৷ মায়া পটে নি। পাত্তাও দেয় নি। কিন্তু কথায় আছে নারী জাতির মন দুর্বল।

তাদের কেউ একটু বেশি ভালোবাসা দেখালেই তারা গলে যায়। মায়ারও তাই হয়েছে৷ ছেলেটার অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখে গলে গিয়েছিলো। জীবন দিয়ে ভালোবেসে ফেলে তাকে। ব্যাস সুখের দিন গুলো ফুরিয়ে গেলো। এতো অল্প বয়সেই কি মানুষের সুখ ফুরিয়ে যায়?

দুই দিনের জন্য তো পৃথিবীতে আসা। অনেকটা ঘুরতে আসার। তাহলে এই দুই দিনের জীবনে এতো কষ্ট কেনো? আল্লাহ কি মানুষকে কষ্টের সাথে পরিচিত করতেই দুনিয়াতে পাঠিয়েছে?
সেইদিন ইচ্ছে করেই মায়া হাতের পিকের সাথে তার আর তার বয়ফ্রেন্ডের একখানা ছবি দিয়েছিলো। মায়া জানতো এটা দেখলে সাদি পিছিয়ে যাবে তাকে বিয়ে করতে আসবে না।
আর হলোও তাই।
তবে মায়া এটা আশা করেছিলো সাদি একবার হলেও তাকে কল করবে। জানতে চাইবে কিছু।

সাদি এগিয়ে এসে ওপরে ঝুলানো ফুল গুলে ছিঁড়ে ফেলে। বিছানায় লাভ সেভ এঁকে তাতে লেখা (সাদি❤️ছোঁয়া) সেটাও ভেঙে ফেলে। সব গুলো ফুলের জায়গা হয় ডাস্টবিনে। ছোট্ট ডাস্টবিনটা ফুলে ফুলে ভরে ওঠে।
ছোঁয়া গোল গোল চোখে দেখতে থাকে। লোকটার মতিগতি আসলে কি? তিনি চাইছে টা কি?
সব ফুল পরিষ্কার করে সাদি বিছানায় বসে পড়ে।

“ফুল কেনো ফেলে দিলেন? আমি তো ভেবেছিলাম এক মাস রাখবে এই ফুলগুলো। যখনই রুমে আসবো তখনই ফুলগুলো দেখবো আর বিয়ের কথা মনে করবো। কিন্তু আপনি এটা কি করলেন? ফুল তে আর আপনার মাথায় বসে ছিলো না তাই না? তাহলে ফেললেন কেনো?

আমাদের তো আগেই ডিল হয়ে গিয়েছিলো। আপনার পাশের রুমে জায়গা হবে আমার। তাহলে আমার রুমে এসে মাতব্বরি কেনে করছেন? আপনি কি
সাদি চোখ তুলে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ব্যাস ছোঁয়া চুপসে যায়। মুখে আঙুল দিয়ে ফেলে।

” বই নিয়ে এসো।
ছোঁয়া মুখ থেকে আঙুল নামিয়ে ফেলে। চোখ দুটো তার বড়বড় হয়ে যায়। মুখটা গোল করে ফেলে।
বই মানে কি? এখন কি পড়তে হবে?
ছোঁয়াকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাদি উঠে পড়ে। দরজার আড়াল থেকে ছোট্ট একটা লাঠি বের করে আনে।
ছোঁয়া এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পড়ে। নিজের লাগেজটা খুলে ঝটপট বই বের করে আবার গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।
সাদিও এসে ছোঁয়ার সামনে গেল হয়ে বসে।

আইসিটি বই বের করে ছোঁয়াকে বোঝাতে থাকে।
সাদি কলম নেরে নেরে ছোঁয়াকে বোঝাচ্ছে আর ছোঁয়া গালে হাত দিয়ে সাদিকে দেখছে।
তার বরটা এতো সুন্দর যে ইচ্ছে করে টুপ করে গিলে ফেলতে। এই লোকটার সব চেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসটা হচ্ছে ওষ্ঠদ্বয়। একদম গোলাপের পাপড়ির মতো গোলাপি। সাদা চামড়ার ওপর কুচকুচে কালো দাঁড়ি আর তার মধ্যে গোলাপি ওষ্ঠখানা৷
খাড়া নাক, ছোট ছোট বিলাই চোখ, চোখের পাশে খানিকটা বড় লাল তিল, জোরভ্রু, ঘন সিল্ক মিডিয়াম বড় চুল।

উফফফফফ যেনো আস্ত একটা চকলেট কেক। আরও একটা আকর্ষণীয় জিনিস আছে লোকটার। যা ছোঁয়াকে মাতাল হতে বাধ্য করে। লোকটার গলায় থাকা আরও একটা লাল তিল। কন্ঠনালির ঠিক একটুখানি নিচে।
এই মানুষটা অন্য কারো হয়ে গেলে ছোঁয়া ম*রেই যেতো। এই রূপে পাগল হওয়ার অধিকার শুধুমাত্র ছোঁয়ার।

“আপনি এতো হ*ট কেনো? পুরো চকলেট কেকের মতো। ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলতে।
ছোঁয়া সাদির কন্ঠনালির দিকে তাকিয়ে কথাগুলে বলছিলো।
সাদির হাত থেমে গেছে। সে একটা ইমপটেন্ট বিষয় লিখে লিখে বোঝাচ্ছিলো ছোঁয়াকে। ছোঁয়ার কথায় তার শরীর জারিয়ে ওঠে।

এই মুহুর্তে এই মেয়েকে ইঁচড়ে পাকা ছাড়া আর কোনো নাম দিতে পারছে না সাদি। একটা মেয়ে ঠিক কতেটা দুষ্টু হলে তার থেকে গুণে গুণে চোদ্দ বছরের বড় একটা ছেলেকে এভাবে বলতে পারে?
ছোঁয়া এবার হাত বাড়িয়ে সাদির দাঁড়ি ছুঁড়ে দেয়।
” আমায় ভালেবাসবেন কবে সাদু?
সাদি বেতটা হাতে নিয়ে বলে
“এখুনি

তারপর ছোঁয়ার তুলতুলে নরম হাতটা ধরে ঠাসস করে বারি মেরে দেয়।চিৎকার দিয়ে ওঠে ছোঁয়া। সে তো এতোখন ঘোরের মধ্যে ছিলো। আহহা সবেই ভাবছিলো টুপ করে একখানা চুমু খেয়ে নেবে। কিন্তু চুমুর বদলে মাইর খেলো?
পরপর দুটো বারি দেয়ে সাদি বলে
” আরও ভালোবাসা লাগবে?

হৃদয়হরণী পর্ব ১৫

ছোঁয়া এক লাফে উঠে যায়। হাত ধরে কেঁদে ফেলে। বেশ ব্যাথা পেয়েছে। লাল হয়ে গেছে হাতটা। খানিকটা ছিঁলেও গেছে।
কাঁদতে কাঁদতে বলে
“ভালেবাসা লাগবে না। আমার ভুল হয়ে গেছে।

হৃদয়হরণী পর্ব ১৬