হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ৭

হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ৭
written Nurzahan akter Allo

জুবিনঃ নুরকে মারতে চান কেন আপনি??ওর পেছনে লেগেছেনই বা কেন??এবার আমার সামনে অত্যন্ত গিরগিটির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসুন…আর সত্যিটা বলুন
লোকটিঃ এসব কি ফালতু কথা বলছেন?নুর কে আমি কেন মারতে যাবো।
জুবিনঃ ওহহহ হো!তাই নাকি…আপনি ওকে মারতে চাইতেই পারেন কারন আপনি তো ওর………. না।
লোকটিঃ ক ক কি যাতা তা বলছেন?
জুবিনঃ যাতা যদি বলতাম তাহলে আপনার গলার সুরটা এভাবে কাপতো না??আল্লাহ প্রতিটা মানুষের মাঝে আলাদা একটা গুন দিয়ে থাকে,কেউ সেটা কাছে লাগায় আর কেউ কাছে লাগায় না।সেইরকম একটা গুন আমারোও আছে….ডাক্তারি পাশাপাশি আমার রহস্য কিছুতে ঝোক টা আমার বরাবরই বেশি এজন্য এসব আমি জেনেছি।আপাতত এসব বাদ দিয়ে কাজের কথা বলি!আপনি বার বার নুরের মেডিসিন বদলে দিচ্ছেন কেন??
লোকটিঃ আ আ আম ক কবে (আমতা আমতা করে)
জুবিনঃ হা হা হা! এবার থেকে আপনি যদি নুরের কোন রকম কোন ক্ষতি করতে চান তো এই ডাক্তারের আরেক রুপ দেখবেন।এর শাস্তি তোলা রইলো…সময় মত পাবেন।আমাকে কাঁচা খেলেয়াড় ভেবে ভুল করবেন না। আজ আসি খুব শ্রীঘ্রই দেখা হবে (উঠে দাড়িয়ে)
লোকটিঃ আমার সাথে লাগতে এসেছিস!তোকে দেখ কেমন করে পরপারে পাঠাতে হয়।আমার কাছে বাঁধা দেওয়া আমি মোটেও পছন্দ করি না (মনে মনে)

জুবিন আর নুর পাশাপাশি হাটছে! হুট করে একটা গাড়ি এসে জুবিনকে মেরে দেওয়ার আগেই,নুর জুবিনকে জড়িয়ে ধরে ধাক্কা দিয়ে সরে যায়।হুট করে এমন করাতে জুবিন নিজেকে সামলাতে না পেরে নুরকে নিয়েই জুবিন ফুটপাতে রাস্তার উপর পড়ে যায়।নুর ভয়ে পেয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে! জুবিন নুরকে তুলে শান্ত করাচ্ছে বাট নুর জুবিনকে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে যাচ্ছে। জুবিন নুরকে তুলে পাশের একটা পার্কে নিয়ে যায়….তারপর একটা দোকান থেকে পানি কিনে নুর খাইয়ে দেয়।নুর এখনো কেঁদে যাচ্ছে…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নুরঃ আমি আমার উৎস আর আমার পরীকে হারিয়েছি। আমি তোমাকে হারাতে পারবো না জুবিন…(কেঁদে কেঁদে)
জুবিনঃ নুর ভালবাসো আমাকে!বিয়ে করবে আমায়..
নুরঃ….. (অবাক হয়ে তাকিয়ে)
জুবিনঃ কি হলো বলো?ভালবাসো আমাকে (নুরের দুই গালে হাত রেখে)
নুরঃ…..
জুবিনঃ ওকে থাক বলতে হবে না!আমি মরে গেলেও তোমার যায় আসে না।ওকে

জুবিন এই কথা বলে আবার মাঝ রাস্তায় চলে যায়!আর চোখ বন্ধ করে হাটা শুরু করে। নুর জুবিনের কান্ড দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।রাস্তায় খুব দ্রুত গাড়ি চলছে,একটু আগে যা হলো তাতেই নুরের অবস্থা খারাপ, তার উপরে আবার জুবিনের এসব পাগলামি!নুর খেয়াল করছে একটা ট্রাক খুব দ্রুত জুবিনের দিকে আসছে!নুরের উৎস আর পরীর সেই রক্তমাখা মুখটার কথা মনে করতেই দৌড়ে জুবিনের কাছে আসে আর জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে…..

নুরঃ ভালবাসি…ভালবাসি..ভালবাসি (কাঁপতে কাঁপতে)

জুবিনের মুখে হাসি ফুটে ওঠে! জুবিন খেয়াল করে দেখে নুর সেন্সলেস হয়ে গেছে।জুবিন নুরকে নিয়ে ওর বাসায় আসে আর সেন্স ফিরানোর জন্য নুরের মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।নুর হুড়মুড়িয়ে উঠে আশ-পাশ তাকায় তারপর সামনে জুবিনকে দেখে!শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে….

নুরঃ প্লিজ জুবিন আমাকে ছেড়ে যেও না!উৎস আর পরী আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেছে।তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না আমি আর বাচবো না।এমন পাগলামি করো না জুবিন!আমি উৎস আর পরীর মত তোমাকে হারাতে পারবো না। (কেঁদে কেঁদে)
জুবিনঃ আমি কোথাও যাবো না! আমি আছি তোমার সাথে,আমি আমার এই প্রাণোবতীকে যে অনেক বেশি ভালবাসি।আল্লাহর রহমত আর তোমার ভালবাসা থাকলে আমার কিছু হবে না নুর…..

নুর জুবিনের জড়িয়ে ধরেই কেঁদে যাচ্ছে, কথায় আছে না ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়।নুরেরও এখন সেই অবস্থা…. জুবিন ওর বুকে থেকে নুর সরিয়ে চোখ মুছে দেয় আর নুরের কপালে আদর দিয়ে দুই গালে হাত রেখে বলে।

জুবিনঃ তোমাকে এখন অনেক শক্ত থাকতে হবে নুর!এত সহজে ভেঙে পড়লে চলবে না।আর আমি তোমাকে এখন এই মুহূর্তেই বিয়ে করতে চায়! প্লিজ তুমি না করো না। আর না করলেও আমি শুনবো না।
নুরঃ হুমমম!
জুবিনঃ বিয়ে কেন দ্রুত করতে চাচ্ছি তোমাকে এখন বলা যাবে না।কারন ওই বাড়িতে থাকাটা তোমার এখন অনেক রিস্ক, আমি ইচ্ছে করে এমন পাগলামি করছি যাতে তুমি রাজি হও। (মনে মনে)

জুবিন আর নুর ওরা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নেয়, যদিও ওখানে সহ নুরের বাবা মা ও ছিলো। জুবিন নুরকে ওর বাসায় নিয়ে আসে তারপর ওর রুমে গিয়ে নুরকে বেডে বসায় আর বলে…

জুবিনঃ সরি মিষ্টি বউ! এমন পাগলামি করার জন্য,,, আমি তোমাকে কোনদিনও বলবো না উৎসের জায়গাতে আমাকে বসাতে! বাট তোমার মনে আমাকে একটু জায়গা দাও! কথা দিচ্ছি ভালবাসার চাদরে তোমারে জড়িয়ে রাখবো।তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না…
নুরঃ জুবিন এভাবে বিয়ে করার পেছনে কোন রহস্য তো লুকিয়ে আছেই!এতদিন তোমার সাথে মিশে বুঝছি বেহুদা কাজ তুমি করবে না!যা বলো বা যা করো তার পেছনে কোন না কোন কারণ থাকে।
জুবিনঃ সব বলবো! তার আগে বলো তুমি ভেঙে পড়বে না।বরং নিজেকে শক্ত রাখবে…আমাকে ছুঁয়ে কথা দাও!আর কাউকে ছুঁয়ে কথা দিয়ে না রাখলে কিন্তু মারা যায়।
নুরঃ জ জ জু জুবিন প্লিজ এসব বলো না।
জুবিনঃ ওকে আর বলবো না!অনেক কষ্ট পেয়েছো আর কখনো কষ্ট দিবো না।অনেক অনেক ভালবাসবো এবার থেকে!নুর তোমার যদি সময় লাগে তো নিতে পারো তোমার অনুমতি তোমাকে আমি কখন টাচও করবো না।কারন হাজবেন্ড -ওয়াইফ এর মত পবিএ সম্পর্কে আমি জোর করে কিছু আদায় করতে চাই না! (কথাটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য)

নুরঃ হুমমম সবই বুঝলাম!তবে এই যে পাগলের ডাক্তার আপনি এত কিপ্টামি করলেন কেন শুনি??
জুবিনঃ কিপ্টামি তাও আমি কখন করলাম!(অবাক তাকিয়ে)
নুরঃ এবার বুঝেছি আপনার এত টাকা পয়সা কেন?কিপ্টামি করে চলেন এজন্য এত টাকা পয়সা করছেন তাই তো.. (মুখ টিপে হেসে)
জুবিনঃ যা বাবা!সদ্য বিয়ে করা বউয়ের থেকে এমন উপাধি নিতে কষ্ট হচ্ছে তো। তা ম্যম বলেন তো আমি কখন কিপ্টামি করলাম আর কিভাবে?(নুরের কোলে মাথা রেখে)
নুরঃ আপনি আমাকে সালোয়ার কামিজ পড়ে বিয়ে করালেন! তাও আবার আপনি একজন সাইকোলজিস্ট হয়ে…(মুখ টিপে হেসে)
জুবিনঃযে বিয়েতে যত খরচ যত কম সেই বিয়ে বরকত বেশি।আর কিপ্টামি করি নি সোনা বউ… এই দিকে এসে (হাত ধরে টেনে)

হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ৬

জুবিন নুরের হাত ধরে টেনে আলমারির সামনে যায় আর নুরকে বলে আলমারি টা খুলতে।নুর আলমারি খুলে হা হয়ে যায় এত এত শাড়ি আর গয়না দেখে….নুর অবাক হয়ে জুবিনের দিকে তাকায়।
জুবিনঃ মুচকি হেসে বলে এগুলো তোমার সব,আমার পছন্দে কিনে এনেছি।

তারপর জুবিন নুরকে বলে এখন থেকে নুর যাতে শাড়ি পড়ে।দু’জন মিলে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে তারপর ডিনার করে নেয়!জুবিনের পেটের উপর মাথা দিয়ে নুর শুয়ে আছে আর সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে!জুবিন শুয়ে শুয়ে নুরের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। নুরের কেন জানি মনে হচ্ছে জুবিনের হাতে কোন জাদুর কাঠি আছে!জুবিনে এমনভাবে মাথায় বিলি কাটছে যে, নুরের মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব শান্তি গুলো ওর কাছে ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। নুর সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে বলে উঠলো….
নুরঃ জুবিন জানো এখন যাকে আমি আমার বাবা ডাকি সেই আমার আপন বাবা না।আমার নিজের বাবা অনেক আগেই মারা গেছে,আমার বাবার হাতেই ছিলো তোমার হাতেই মত এমন প্রশান্তির ছোঁয়া,বাবা আমার মাথায় হাত রাখতেই আমার সব কষ্ট দুর হয়ে যেতো….
জুবিনঃ আর উনিই তোমার মেডিসিন বার বার বদলে দেয়!যাতে তুমি পাগলই থাকো…

হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ৮