হৃদস্পন্দনের টানে শেষ পর্ব 

হৃদস্পন্দনের টানে শেষ পর্ব 
written Nurzahan akter Allo

নুরঃ আম্মু আমার উপর তোমার খুব রাগ হচ্ছে তাই না!আমার জন্য বাবাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল।আমার জন্য তুমি এখন খুব কষ্ট পাচ্ছো??(কেঁদে কেঁদে)
আম্মুঃনা রে বোকা মেয়ে!তোরাই আমার কলিজা রে!তোদের বাবা অভাব যাতে না ফিল করিস তাই তোর মামা আমাকে বাধ্য করছিলো বিয়ে করতে!ওই জানোয়ারটা আমাদের ঠকাবে আমি ভাবতে পারি নি!ওর জন্য আমার কোন আফসোস নেই।আমি পরীকে হারিয়ে তোকে হারাতে পারবো না মা!

জুবিন নুর আর ওর আম্মুকে কথা বলার সুযোগ করে দিতেই বাইরে চলে গিয়েছিলো জুবিন!আজকে বাইরে থেকে খাবার এনে ডিনার করবে!জুবিন বাসায় এসে তো বকবক শুরু করছে! জুবিন রান্না ঘরে খাবার সার্ভ করছে আর বকবক করছে!নুর আর ওর আম্মু জুবিনের কথা শুনে হাসছে!জুবিন চাচ্ছে নুরদের নরমাল করতে!আর এত সহজে যে এসব ওরা ভুলবে না তাও জুবিন ওদের মন ভাল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে….।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তারপর রাতে খেয়ে নিলো সবাই মিলে!নুর রুমে বসে আছে সেই কখন থেকে বাট জুবিনের দেখা নেই!নুর রুমে থেকে বের হয়ে জুবিনকে খুঁজছে বাট মহারাজের খোজ নেই!ওদিকে জুবিন নুরের আম্মুর কোলে মাথা দিয়ে কথা বলছে আর নুরের আম্মু জুবিনের চুল টেনে দিচ্ছে। জুবিন নুরের আম্মুর একটা হাত ধরে বলছে…

জুবিনঃ আম্মু আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে!তারপরেও সেলফিসের মত বলবো আম্মু নুরের মুখের দিকে তাকিয়ে তোমার ভাল থাকতে হবে!নুরের বার বার এত শক পাচ্ছে ব্রেণে এটা নুরের জন্য এটা খুবই ক্ষতিকারক!আম্মু নুর যদি এবার কোন বড় ধরনের শক পায় তো নুর আর কোন দিন সুস্থ হবে না।এজন্য তোমার আর আমার চেষ্টা করতে হবে ভাল থাকার! কারন আমরা ভাল থাকলে নুর ভালো থাকবে ।আম্মু এত বছরের সংসার করছো ওই লোকটার সাথে জানি কষ্ট হচ্ছে! তারপরেও বলবো দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল।
আম্মুঃআমার নুরের ভাগ্য কত ভালো!তোর মত মত একটা ছেলেকে জীবন সাথী হিসেবে পেয়েছে।বাবা বিশ্বাস কর আমার কষ্ট হচ্ছে না! কেন হবে বল?সত্যি একটা নিকৃষ্ট মানুষের জন্য কষ্ট পাচ্ছি না আমি।জুবিন একটা কথা বলবো..
জুবিনঃ হুমম বলো আম্মু।
আম্মুঃ এবার তোরা দুইজন থেকে তিন হলে ভালো হয়!বাসায় একটা বাচ্চা থাকলে বাসায় প্রান থাকে..

জুবিনঃ আম্মু গো তোমাকে একটা নোবেল দেওয়া উচিত!এই প্রথম কোন শাশুড়ি তার জামাইকে বলছে….হা হা হা
আম্মুঃতুই আমার জামাই না!তুই আমার ছেলে। আর প্রতিটা ছেলে মেয়ের সব থেকে কাছের বন্ধু হওয়ার উচিত তার মা।তোদের ভালো জন্য আমার যা করার লাগে করবো! যা বলার লাগে বলবো বুঝলি।এভাবে বোকা মত হাসিস না… (গাল টেনে)
নুরঃ তোমরা এখানে কি করছো? (ভ্রু কুচকে কোমরে দুই হাত দিয়ে দরজার কাছে দাড়িয়ে)
জুবিনঃ তোমাকে বলবো কেন?যাও তুমি এখন এখান থেকে! একদম আমার আদরে ভাগ বসাবে না।আমি আদর খাচ্ছি…
নুরঃআমিও আদর খাবো সরো.. (জুবিন কে ধাক্কা দিয়ে)

নুর আর জুবিন ওর আম্মু কোলে শুয়েই খুনশুটি করছে আর ওর আম্মু হাসছে!এরকম করতে করতে নুর একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে।জুবিন নুরকে কোলে তুলে নেয় আর আম্মুর দিকে তাকিয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলে।আর জুবিন নুরকে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়।

এক সপ্তাহ পর…
নুর আর ওর আম্মু এখন আগের তুলনায় অনেক নরমাল হয়ে উঠেছে!নুর আর ওর আম্মু জমিয়ে আড্ডা দেয়,শপিং করে,ঘুরতে বের হয়,জুবিন সুযোগ পেলে জুবিনও ওদের সাথে যোগ হয়।জুবিন নুরের কাছে যতবার যেতে চেয়েছে নুর ততবার সরিয়ে দিয়েছে তাই জুবিনও নুরকে জোর করে নি। একটু সময় দিতে চাই।সবকিছু জোর করে হয় না…আর জোর করাও উচিত না।

ওদিকে ডাঃ শ্রাবণ আর ডাঃ নিশি বিয়ে হয়ে চুটিয়ে সংসার করছে!নুরের মামা নিখোঁজ!উনার কোন খোঁজ পাইনি কেউ তাই হাল ছেড়ে দিসে।নুরের বাবা জেলেই আছে অনেক চেষ্টা করেও বের হতে পারে নি!তবে তার সাথে তার কাজে সাহায্য যারা করছিলো তারাও জেলে…

তারপর আর বেশকিছু পর…
জুবিন খেয়াল করে নুর এখন আগের মত ওকে দুরে সরাই না।আজকে জুবিন হসপিটাল থেকে এসে খেয়ে তারপর প্রতিদিনের মত আড্ডা দিয়ে ঘুমাতে চলে যায়!দুজনেই পাশাপাশি শুয়ে আছে! জুবিন দুষ্টু হেসে হুট করে নুরের দুইহাত হাত বিছানায় চেপে ধরে!আর জুবিন ওর ভর ছেড়ে দেয় নুরের উপর,আর নুরের গলায় মুখ ডুবিয়ে লিক করতে থাকে। নুর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।জুবিন নুরের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে অনেক কষ্টে হাসি কনট্রোল করে নেয়!আর নুরের দিকে তাকিয়ে বলে….

জুবিনঃ আজকে তুমি আমার ফুল হবে..(দুষ্টু হেসে)
নুরঃফুল হবো মানে???তার আগে তুমি নামো আমি তোমার ভর নিতে পারছি না। (ছটফট করে)
জুবিনঃভর সহ্য করার অভ্যাস করে নাও!কারন….. (দুষ্টু হেসে)
নুরঃউফফ ছাড়ো না!আর ফুল হবো না কি??
জুবিনঃ আজকে তুমি আমার ফুল হবে! আর আমি হবো তোমার ভোমর। (দুষ্টু হেসে)
নুরঃ…….
জুবিনঃ ফুল আর ভোমরের সম্পর্ক কেমন তুমি জানো??ভোমর ফুলের থেকে….তবে আমি শুধু তোমার ভোমর হতে চাই আরো কারো না।আজকে সেই অধিকার আমি চাই নুর।তুমি বললে তাই,, না বললে নাই….তবে আজকে না শুনতে মন চাচ্ছে না।(নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে )
নুরঃ……
জুবিনঃ নু…নুর!আমি কি সেই অধিকার এখনো পাবো না। এতটা খারাপ আমি…..(মন খারাপ করে)
এই কথা শোনার পর নুর কিছু বলে নি! বাট জুবিনকে জড়িয়ে ধরেছে খুব খুব শক্ত করে!জুবিনের মুখেও হাসি ফুটেছে কারন জুবিনও ওর উওর খুজে পেয়েছে।সব কথা মুখে বলতে নেই!কিছু কথা চোখের ভাষা থেকে বুঝে নিতে হয়….

এতদিন কাছে থেকেও দুরে ছিলো বাট আজকে একদম নিজের করে পাবে দুজন দু জনকে যে ভালবাসার শেষ নেই।আজকে পরিপূর্ণ হোক ওদের ভালবাসা….মিশে যাক দুজন একে অপরের সাথে।আপন করে নিক পবিএ বন্ধনে!ভালবাসার সাগরে ডুক দিকে একে অপরকে ভালবেসে….

(এই দুষ্টুরা চোখ বন্ধ করো…..?)
২ মাস পর জানতে পারে নুর কনসিভ করছে!এতে ওদের আনন্দের সীমা নেই।ভাল থাকুন ওরা ওদের ভালবাসা নিয়ে,এত কষ্ট, ত্যাগের পর!অনেক অনেক সুখ এসে ভরিয়ে দিক ওদের জীবন।জুবিনের প্রাণ নুর!কেউ কাউকে ছাড়া কিছু বোঝে না।যার সাথে যার জুটি বাঁধা থাকে সেই জীবন সঙ্গী!যেমন উৎসের ভালবাসাতেও কোন খাত ছিলো না! বাট ভাগ্য ওদের সাথে ছিলো না।তবে জুবিনও নুরের জন্য ভালবাসার কোন কমতি রাখে নি…এতদিন নুরের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে অনেক কিছু করেছে শুধু মাএ #হৃদস্পন্দনের_টানে___❤❤

আমাদের জীবনটা বড়ই অদ্ভুত আর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোও।জীবনে প্রথম ভালবাসা কখন ভোলা যায় না!বাট জীবনে নতুন করে ভালবাসা আসে! আর ভালবাসার মধ্যে দিয়েই বদলে যায় একটা মানুষের জীবন।প্রথম ভালবাসা পূন্যতা পায় খুব কম মানুষের! আর যাদের ভালবাসা গুলো পূন্যতা পায় তারা তো লাকি কাপল। বাট যাদের টা পূন্যতা পায় না তারাও লাকি! কারন ভালবাসা তো ভালবাসাই সেটা প্রথম বা শেষ এটা ম্যাটার না!রিয়েল লাভ টাই বড় কথা!……
তার উদাহরণ যেমন জুবিন আর নুর…….

হৃদস্পন্দনের_টান থাকলে সব কিছুই সম্ভব! যেটা জুবিন আর নুরকে দেখেই বোঝা যায়।সবাই সবার ভালবাসার মানুষটাকে নিয়ে সুখে থাকুন, ভাল থাকুন,আর ভালবাসার মানুষটার উপর বিশ্বাস রাখুন। কারন বিশ্বাসটাই ভালবাসা টিকিয়ে রাখার মজবুত একটা খুঁটি।আর রিলেশন নষ্ট হওয়ার কারনঃ-
১.ইগো…
২. অবিশ্বাস…
৩.সন্দেহ….
এই তিনটা জিনিস বেস্ট কাপল গুলোকেও ভেঙে তছনছ করে দেয়।তাই এই তিনটা জিনিস রিলেশনে আসতে না দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমাদের মাঝে অনেকে আছে! এত এত ভুল করার পরেও সরি বলতে চাইনা!আর সেটা ইগোর কারনেই বলতে পারে না। আরে বোকা সরি বললেই কেউ ছোট হয় না…বরং সম্পর্ক মজবুত হয়……

হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ১২

আপনারাও আপনাদের ভালবাসার মানুষকে নিজের মত করে ভালবেসে আগলে রাখুন…..কারো কথায় বা কারো দেখে নই।আর যাদের ভালবাসার মানুষ নাই তাদের জন্য আমাদের তরফ থেকে এক বালতি না কয়েক ড্রাম সমবেদনা….?

সমাপ্ত…..
(কষ্ট করে এতদিন গল্প টা পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের!শেষ করে দিলাম গল্পটা কারন এক গল্প বেশিদিন ঝুলিয়ে রাখতে ইচ্ছা করে না আমার!যার শুরু আছে তার শেষও আছে।পুরনোকে বিদায় দিয়েই নতুনের আগমন তাই না।তবে আমার লিখা প্রথম রহস্যজনক গল্প এটা!রহস্য করে কিছু লিখার ইচ্ছে ছিলো অনেক দিনের।তাই এটা লিখছি….!তবে কেউ মন খারাপ করবেন না গল্পটা শেষ করে দিলাম তাই! আপনাদের জন্য এর পরের গল্প…… ❤প্যারাময় লাভ❤। তবে নতুন গল্প টা পোষ্ট করতে কয়েকদিন দেরী হতেও পারে কারন আমি নিজেকে একটু সময় দিতে চাই।কয়েকদিন অনলাইন থেকে দুরে থাকতে চাই!প্রতিটা গল্পের মত
এবারও আশা করি সবাই পাশে থাকবেন।ভাল থাকবেন সবাই..ভুল কিছু বলে থাকলে মাফ করবে আল্লাহ হাফেজ……)

( লেখাঃনূরজাহান আক্তার (আলো)) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন

1 COMMENT

  1. আমি আপনার অনেক বড় ভক্ত। আপনার লেখা গল্প আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। বুঁকের বা পাশে গল্পটা পড়ি, সেই থেকে আপনার গল্পের প্রতি একটা ভাললাগা অনুভব করি। জানিনা যে আপনি আমার এই কথা জানবেন কিনা। আর আপনার সাথে যোগাযোগ এর কোন ব্যবস্থা নাই। আপনার লেখা ৪ টি গল্প আমি পড়ছি। আরো পড়বো।

Comments are closed.