হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ১০

হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ১০
written Nurzahan akter Allo

নুরঃআমি ভেবেছিলাম আমার বাবা বাট ! উনি তো আমার আপন মামা!এটা কি করে সম্ভব?? না না আমার মামা এমন কাজ করতেই পারে না!জুবিন তোমার কোথাও বুঝতে ভুল হয়েছে???
জুবিনঃ তা মামা শশুড় আপনি কি বলবেন?? নাকি আপনার নতুন করে আপ্যায়নের ব্যবসথা করবো…
মামাঃ নুর মা আমার ভুল হয়ে গেছে এবারের মত মাফ করে দে!এমন ভুল আর হবে না…
নুরঃ তার মানে তুমি এসব করছো মামা?? (অবাক হয়ে)
জুবিনঃ মাফ তো পরের কথা আগের আসল কাহিনী টা তো বলুন…আপনার মহৎ গুনের কাজ গুলো নুরের তো জানা দরকার তাই না। আপনি যে ভাল মানুষের মুখোশ পরা অমানুষ সেটা আগে জানান…বলুন নয়তো জান নিয়ে ফিরতে পারবে না।
মামাঃ জুবিন বাবা তুমি আমাকে মাফ করে দাও। আমাকে মেরে ফেলো না। তুমি তো ডাক্তার তুমি তো মানুষ কে বাঁচাও,,,
জুবিনঃ হুমমম আপনি ঠিক বলছে আমি ডাক্তার আর আমি মানুষের সেবা করি তবে জানে যেমন বাঁচাতে পারি জান নিতেও পারি… এবার বেহুদা না বকে আসল কথা বলুন। (দাঁতে দাঁত চেপে)

মামাঃআসলে আমিই পরী আর উৎসকে মেরে ফেলছি!আমি পরীকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন উৎস কিভাবে যেন জেনে যায়। আর আমাকে বাধা দেয় পরীকে নিয়ে যেতে,আমি উৎস বলছিলাম যে ওকেও ভাগ দিবো যদি ওর মুখ বন্ধ রাখে তো!বাট উৎস আমাকে থ্রেট দেয় যে আর বলে ফিরতে পারলে আমার অবস্থা নাকি খারাপ করে ফেলবে!এত করে বোঝালাম তাও আমার কথা শুনলো না উৎস এভাবে ওদের অনেক মারধর করতাম তাও উৎস বলতো সে নাকি নুরকে ঠকাতে পারবে না বলে চিৎকার করতো!তাই ওদের চিরতরে রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলছি!আর এটা আমি করি নি এখানে তোর বাবাও জড়িত কারন উনিই আমাকে পরীকে কিডন্যাপ করতে সাহায্য করছে।আমি আর তোর বাবা মনে করতাম তোর বিয়ের পর উৎস তোর সব প্রোপাটি নিয়ে নিবে! এজন্য আমরা চেয়েছিলাম পরীকে কিডন্যাপ করে তোর থেকে সব কেড়ে নিতে বাট উৎস তো কথায় শুনলো না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নুরঃ তাই বলে ওদের এত কষ্ট দিয়ে মারবে….তুমি কি সত্যি কোন মানুষ মামা!আমাকে আগে বলতে আমি তোমাদের সব দিয়ে দিতাম এত অভিনয় কেন মামা?কেন তোমরা আমার থেকে ওদের কেড়ে নিলে মামা।তোমার একটু হাত কাঁপলো না মামা। (কেঁদে কেঁদে)
মামাঃআমি সেদিন ড্রিংক করে এসেছিলাম।এতবার করে বললাম বাট ওদের বোঝাতে পারলাম না।আর পরীটাও কানের কাছে ক্যাও ক্যাও করতো বিরক্ত লাগতো তাই ওদের চিরতরে শেষ করে দিসি।ওদের খাবারের হাই ডোজের ঘুমের মেডিসিন দিয়ে খাইয়েছি আর ওরা মারা গিয়েছিলো তাও আমার রাগ কমছিলো না! তারপর পাথর দিয়ে ওদের মুখ থেতলে দিয়েছি।
জুবিনঃ ওই বাচ্চাটাকে মারতে আপনার একবারো বুক কাপলো না।আপনি আসলেই অমানুষ… মামা হন আপনি পরীর। মা শব্দের মানে জানেন,, দুই বার পরপর মা মা শব্দটা দিয়ে মামা ডাকটা তৈরী।আজকে মামা ডাকটাকে কলুষিত করে দিয়েছেন আপনি।জানেন মামা ডাকটা কে আমরা সব সময় নিরাপদ একটা জায়গা ভাবি ঠিক মায়ের মত,,,এজন্য মা শব্দ দিয়েই মামা ডাকটা তৈরী।বাট আপনি…. ছিঃ!আপনার সাথে কথা বলতে আমার বিবেকে বাঁধছে (কলার চেপে ধরে)

নুরঃ মামা এতটা লোভী তুমি!এত লোভ তোমার ওই নিষ্পাপ বাচ্চার আকুতি-মিনুতি তোমার কানে পৌছালো না! তুমি কি আসলেই মানুষ মামা।এত কষ্ট কেন দিলে ওদের মামা কেন দিলে?? (মাটিতে বসে কাঁদতে কাঁদতে)
মামার হাত পা খোলা ছিলো উনি চুপ করে বসে কিছুসময় মনে মনে পালানো বুদ্ধি আটলো!নুরের কান্না দেখে জুবিন নুরের কাছে যেতেই মামা উঠে দৌড় দিলো! মামার দৌড় দেখে জুবিনের গার্ড রা মামার পেছনে দৌড়াতে থাকে আর থামতে বলে। একটা সময় মামা পেছনে ঘুরে দৌড়াতে গিয়ে একটা পুকুরের মত জায়গায় পড়ে যায়।জুবিন আর নুর দৌড়ে আসে!মামা লাফ দেওয়া দেখে সাথে সবাই ছিটকে দুরে সরে যায় কারন এখানে এসিড তৈরী হয়।আর উনি এসিডের ভেতরে পড়ছে…

গরম তেলে কোন টিপস্ দিলে যেমন সাথে সাথে ফুলে উঠে!তেমনি মামা এসিডে পড়ার সাথে সাথে ঝলসে উনার কঙ্কাল ভাসতে থাকে!নুর এটা দেখে সাথে সাথে সেন্স হারায়।জুবিন নুরকে ধরে আর গার্ডদের বলে কঙ্কালটা তুলে জঙ্গলে ফেলে দিতে কারন পাপ বাপকেও ছাড়ে না!এটাই তার প্রমাণ।মামা যেমন পরীর আর উৎসের মুখ থেতলে দিসে!তেমনি আজকে মামাকে এসিডে ঝলসে দিসে…

এখানে বিভিন্ন ধরনের ক্যামিক্যাল আর এসিডে বানানো হয়।জুবিন চেয়েছিলো সত্যিটা জেনে পুলিশকে দিতে বাট মামার বোকামির কারনে এমনটা হয়েছে।সত্যি বলতে যে যেমন কর্ম করবে তাকে তেমন ফল ভোগ করতে হবে!জুবিন নুরকে নিয়ে বাসায় চলে যায় আর সেন্স ফেরায়!নুর জুবিনকে দেখে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে জুবিন নুরকে বলে….

জুবিনঃ অপরাধী শাস্তি পেয়েছে বলে কষ্ট পাচ্ছো নাকি মামাকে হারিয়েছো বলে কষ্ট পাচ্ছো??
নুরঃ আমি শাস্তি দিতাম মামাকে বাট এটা কি হয়ে গেলো???
জুবিনঃ উনার বোকামির জন্য উনার এমন মৃত্যু…. এবার পালা তোমার বাবার। উনার সাথে দেখা হবে কালকে…একসাথে সব ভাইরাস দুর করবো।

পরেরদিন সকালে…
নুর ভয় পেয়েছে ওই ভাবে ওর মামাকে ঝলসে যাওয়া দেখে!জুবিন ব্রেক ফাস্ট রেডি করে নুরকে খাইয়ে দিচ্ছে আর দুষ্টু হেসে বলে…
জুবিনঃ বাসায় একা একা থাকতে কি তোমার কষ্ট হচ্ছে..??
নুরঃহুমম! সময় কাটছে না আমার।ভালো লাগে না একা বাড়িতে
জুবিনঃএকটা জুনিয়র নুর আসলে কেমন হয়!(দুষ্টু হেসে)
নুরঃ এই ছিলো তোমার মনে! ফাজিল..
জুবিনঃ গাছ থাকলে ফল হবেই তাই না!
নুরঃ আচ্ছা জুবিন তোমার বাবা কই??তাদের কথা বলো না কেন?
জুবিনঃ আমার বাবা -মা কেউ নেই! আমি রাস্তায় নাকি পড়ে ছিলাম।কোন এক দয়াবান আমাকে নাকি রাস্তা থেকে তুলে অনাথ আশ্রমে রেখে গিয়েছিলো।তার কিছু দিন পর একজন আমাকে এ্যাড্রপ নেয়!উনার বউ বাচ্চা কেউ ছিলো না!যে আমি এ্যাড্রপ নিয়েছিলো তাকে আমি ভাল বাবা বলে ডাকতাম! উনি বিয়ে করছিলো বাট বিয়ের চারদিনের মাথায় ভাল মা নাকি মারা যায়।তারপর আর বিয়ে করে নি ভাল বাবা! কারন উনি ভাল মাকে খুব ভালবাসতো! আর আমাকে বলতো ভালবাসার মানুষটাকে সব সময় আগলে রাখবে দেখবে তারাও তোমাকে মন উজার করে ভালবাসবে।আর বলতো ভালবাসা এমন একটি জিনিস যেটা ভালবাসতেও শিখায়।ভাল বাবা আমাকে উনি নিজে হাতে মানুষ করছে!আমাকে ডাক্তার বানিয়েছে।আমাকে খুব ভালবাসতো আর আমিও খুব ভালবাসতাম ভাল বাবাকে…. তারপর উনি হঠাৎ করে চিরতরে আমাকে ছেড়ে চলে যায়।তারপর থেকে আমি একা…(চোখের পানি মুছে)
নুরঃকই একা আমি আছি তো…আর খুব তারপর জুবিন জুনিয়র আসবে….
জুবিনঃ না না নুর আসবে…
নুরঃ না জুবিন আসবে
জুবিনঃ নুর আসবে ঠিক আমার এই প্রাণোবতির মত আরেকটা নুর আসবে।এটাই ফাইনাল..

হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ৯

ওরা খেয়ে নুরের বাসায় গেল!নুরের বাবা খুব ভাল অভিনয় করলো আর ওদের আদর যত্নের কোন টুটি রাখে নি..তারপর সবাই একসাথে আড্ডা দিতে বসলো…হঠাৎ নুর জুবিনের দিকে তাকিয়ে বললো।
নুরঃ সৎ বাবা আমার সব প্রোপাটি এবার থেকে আমি দেখবো আজকে থেকে আপনার ছুটি…এবার এই পেপারে সাইন করে আপনি অবসর নিন এসব থেকে।আর হ্যা আজকে থেকে আপনার চুরি করার দিন শেষ….
নুরের এই কথা বলতেই কেউ একজন ঠাস করে নুরের গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো…..নুর ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে চড়টা আর কেউ না চড় টা মেরেছে জুবিন…

হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ১১