হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ৯

হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ৯
written Nurzahan akter Allo

জুবিনঃ উৎস আর পরীর খুনীকে ধরতে পারলে কি করবে তুমি??যদি সেটা তোমার কাছে কেউ হয় তো তাকে শাস্তি দিতে পারবে তো…তখন হাত কাঁপবে না তো তো পিছিয়ে যাবে না তো…।
নুরঃসে আমার যতই আপন জন হোক না কেন?আমি তাকে ছাড়বো না জুবিন।ওরা আমার কলিজাদের আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে! আমি কিছুতেই ওদের ছেড়ে কথা বলবো না…
জুবিনঃগুড এই জেদটাই আমি তোমার মাঝে দেখতে চেয়েছিলাম আমি নুর!এবার যুদ্ধ নামবো… আর সেটা খুব তারাতারি। (নুরের চোখের পানি মুছে দিয়ে)

জুবিনও নুরকে খাইয়ে দিলো তারপর রেডি হয়ে হসপিটালে চলে গেল।নুর একা একা বাসায় বসে কি করবে?তা বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখছে!নুর বাসাটা ঘুরে বুঝলো জুবিন খুব গোছালো একটা ছেলে। নুর রান্না ঘরে গিয়ে বেশ কয়েক পদের রান্না করে ফেললো! পরীর জন্য রান্না শিখেছিলো নুর।নুর সব রান্না শেষ করে সাওয়ার নিলো তারপর নামাজ সেরে নিলো…।তারপর জুবিনকে কল দিতেই রুমের পাশে ফোনটা বেজে উঠলো!নুর পেছনে তাকিয়ে দেখে জুবিন ওর পেছনে দাড়িয়ে আছে…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তারপর দুইজন এক সাথে খেয়ে নিলো!নুর জুবিনের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো জুবিন কিছু একটা ভাবছে।নুর জুবিনের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করলো যে…
নুরঃ এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন তোমাকে???কোন সমস্যা??
জুবিনঃ হসপিটালে এর আগে একটা মানসিক রুগী গর্ভবতী হয়েছিলো!ওটা প্রমান জোগাড় করে ছিলাম বাট ফোনটা চুরি হয়ে গেছে।শ্রাবণের কাছে একটা কপি ছিলো ওটা হসপিটাল কমিটিকে দেখিয়েছি বাট ওটা ব্যাপারটা চেপে যাচ্ছে….
নুরঃ কেন???চেপে যাচ্ছে কেন???
জুবিনঃ আসলেই এটা করছে হসপিটালের মালিক ইব্রাহিম শেখ এর একমাএ বখাটে ছেলে রকি শেখ…।আমাকেও বলছে ব্যাপারটা চেপে যেতে এটাতে নাকি হসপিটালের বদনাম হবে।
নুরঃ হুমম সব শাস্তি সবার সামনে দিতে হবে এই কথা কোথায় লিখা আছে শুনি??
জুবিনঃ মানে??
নুরঃতুমি দাও শাস্তি তবে তোমার মত করে!যাতে এমন ভুল আর না করতে পারে।আর তুমি যে এটা করছো এটাও যেন কেউ না জানে…
জুবিনঃ রাইট। তাই হবে…… (দুষ্টু হেসে)

জুবিন আর নুর অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা করলো!তারপর জুবিন হসপিটালের চলে গেল আর নুর ঘুমিয়ে গেল।বিকালে নুর ঘুম থেকে উঠে জুবিনকে তিনবার ফোন দিলো বাট জুবিন কল কেটে দিলো!নুর বেড থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলো তারপর এক মগ কফি করে ছাদে চলে গেল।নুর কফি খাচ্ছে আর বিকেলের মৃদু বাতাসটা উপভোগ করছে!নুর খেয়াল করলো কেউ ওকে ডাকছে…নুর নিচে তাকিয়ে দেখলো এক বাচ্চা মেয়ে ওকে ডাকছে…নুর ওকে ইশারায় দাঁড়াতে বলে নিচে চলে গেল…তারপর নিচে গিয়ে বাচ্চাটাকে বললো…

নুরঃ কিছু বলবে আমাকে..
মেয়েটিঃ হ! কেবল পুশকুনি থেইকা এই শাপলা গুলা তুইলা আনছি!নিবেন এই শাপলা গুলান এক্কেবারে টাটকা…লণ না আফা শুধু দশ ট্যাহা দেন তাইলেই হইবো…
নুরঃ হুমম নিবো তো!আগে বলো তোমার নাম কি ??
পুষ্পঃআমার নাম পুষ্প!তাইলে লণ এই শাপলা ফুল গুলান..আপনার কি কি ফুল ভাল লাগে আমারে কন!আমি আপনারে আইনা দিবো..
নুরঃতুমি কি ফুল বিক্রয় করো??
পুষ্পঃহ! আমি ফুল বেইচাই খায়…আফা ট্যাহা টা দেন আমি যায়গা..
নুরঃ পুষ্প তুমি প্রতিদিন বিকেলে আমাকে ফুলে এনে দিবা আর আমার সাথে গল্প করবা তাহলে আমি তোমাকে টাকা দিবো …আসবে আমার সাথে গল্প করতে..
পুষ্পঃহ আইবো নি!আর আপনার লাইগা কি ফুল আনতে হইবো আমারে কন?
নুরঃ তোমার ইচ্ছে মত ফুল আনবে আর আমার আপু ডাকবে কেমন।আমারও না তোমার মত একটা বোন ছিলো সে আর নেই ওই দুর আকাশের তারা হয়ে গেছে।
পুষ্পঃ আচ্ছা আপু ডাকুম নি! তইলে এহন আমি যায়গা…
নুরঃ দাড়াও টাকাটা নিও যাও।

নুর পুষ্পকে ৫০০ টাকার একটা নোট দিলো!পুষ্প নিলে চাচ্ছিল না জোর করে নুর দিলো।পুষ্প খুশিতে নুরকে জড়িয়ে ধরে নুরের গালে আদর দিলো!নুর পুষ্প কে দুই হাতে দুইটা আপেল দিলো পুষ্প আপেল খেতে খেতে তিরিং বিরিং করে লাফাতে লাফাতে চলে গেল।

নুর শাপলা ফুল গুলো নিয়ে রুমে চলে গেল!তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে নিয়ে রাতের রান্না সেরে ফেললো!একটু পরেই কলিংবেল বেজে উঠতেই নুর গিয়ে দরজা খুলে দিলো!নুর জুবিনকে দেখে বললো..

নুরঃ এত দেরি কেন??আমি তো খুব খুধা লাগছে…
জুবিনঃ আগে বলবে না! ওকে আমি একদৌড়ে যাবো আর দুই দৌড়ে ফ্রেশ হয়ে আসবে।
নুরঃ হা হা হা ওকে!

জুবিন ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেল! জুবিন ওর জিন্স প্যান্টের পা উপরে একটু তুলে হাত, পায়ে, মুখে পানি দিয়ে ধুয়ে নিলো!আর একটা হালকা আকাশি কালার গেন্জী পড়ে নিল!তারপর টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে নিচে আসলো!নুর ভ্রু কুচকে জুবিনের দিকে তাকিয়ে বললো…

নুরঃ আবার কোথায় বের হবে নাকি…??
জুবিনঃহুমম! আর আমার সাথে তুমিও বের হবে খেয়ে এখন নাও..একটু কাজ আছে ওইটাই করতে যাবো।
নুরঃ এত রাতে আবার কোথায় বের হবো?না গেলে কি হবে শুনি??
জুবিনঃ আগে খেয়ে নিই তারপর বলি..
নুরঃহুমম

তারপর দুইজন খেয়ে নিলো।তারপর জুবিন নুরকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়লো।নুর বুঝতে পারছে না ওরা কোথায় যাচ্ছে? তবে যেখানেই যাচ্ছে নুরের এখন ভালোই লাগছে কারন রাতে জার্নি নুরের খুব পছন্দ!নুর বাইরে তাকিয়ে আছে! আজকে আকাশে অনেক তারা ঝিমমিক করছে!নুর গাড়িতে বসে জানালার বাইরে তাকিয়ে সাইডের গাছপালা গুলো দেখছে! খুব দ্রুত জুবিন গাড়ি ড্রাইভ করছে এজন্য বাতাসটাও বেশি লাগছে যার কারনে নুরের চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে…নুর খেয়াল করলো একটা নিরিবিলি রাস্তা দিয়ে ওদের গাড়িটা যাচ্ছে। চারদিকে অন্ধকার…কিছু দেখা যাচ্ছে না।

হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ৮

নুরের শরীর শিউরে উঠলো কারন নুর অন্ধকার খুব ভয় পায়!নুর জুবিনের পাশে গিয়ে শরীরে ঘেষে বসলো!জুবিন মুচকি হেসে এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে আর আরেক হাত দিয়ে নুরকে জড়িয়ে ধরে থাকে।নুর জুবিনের সাথে টুকটাক কথা বলছে আর জুবিন সেটার উওর দিচ্ছে। তারপর নুর খেয়াল করলো জুবিন গাড়ি থামালো একটা কারখানার সামনে আর নুরকে নামতে বলে জুবিনও গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।

ওরা ভেতরে গেল!আর ভেতরে গিয়ে নুর দেখলো একটা লোককে চেয়ারে সাথে রশি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে!আর তার মুখটা কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা আছে! নুর জুবিনের দিকে তাকালো তখন জুবিন বললো…
জুবিনঃএটাই পরী আর উৎসের খুনি!তোমার অদৃশ্য আরেকটা শএু… যাকে দেখলে আমার মত তুমিও অবাক হবে… (নুরে দিকে তাকিয়ে)
জুবিন একজন লোককে ইশারা করতেই সেই লোকটি অপরাধীর মুখ থেকে কালো কাপড় টা সরিয়ে ফেললো।নুর অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে দেখলো! কারন লোকটি নুরের বাবা না! নুর আর জুবিন ভেবেছিলে এমন কাজটা নুরের বাবাই করছে বাট এখন দেখছে এই খেলাতে আরেক জন ঘোড়ার চাল দিয়ে বসে আছে …..
নুরঃআমি ভেবেছিলাম আমার বাবা বাট ! উনি তো আমার আপন …..

হৃদস্পন্দনের টানে পর্ব ১০