হ্যালো 2441139 পর্ব ৪০

হ্যালো 2441139 পর্ব ৪০
রাজিয়া রহমান

পুরো অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নার্গিস ছিলো সবচেয়ে শান্ত। হুট করেই নার্গিস একেবারে বদলে গেলো। না নির্জনকে কিছু জিজ্ঞেস করলো আর না তো শিরিনের সাথে ঝগড়া করলো।শিরিন মনে মনে অবশ্য প্রস্তুতি নিয়েই ছিলো। কিন্তু নার্গিস শান্ত দিঘির জলের মতো কোনো শব্দ করলো না।
বুকের ভেতর যার আঘাতের পাহাড় তার আর নতুন আঘাতে যন্ত্রণা কোথায়?
নার্গিস জানে সেদিন যখন মিরাজুল ইসলাম তাকে বলেছিলো তিনি আর নার্গিসকে নিতে আসবেন না। নার্গিস যখন ইচ্ছে যেতে পারে সেদিনই নার্গিস বুঝে গিয়েছিলো সে আসলে এতো দিন বোকার স্বর্গে বাস করতো। তার আসলে নিজের বলতে নিজে ছাড়া আর কেউ নেই।

একটা ছেলে মেয়ে ও একটা বার খোঁজ নেয় নি।মা নেই এই সুযোগে উল্টো বিয়ে সেরে ফেলেছে মা’কে একটা বার জানানো ছাড়াই।
নার্গিস ভাবে তার আসলে জায়গা কোথায়?
কার কাছে?
নিজের মা বোনের ব্যবহারে নার্গিস অনেক না বলা কথা জেনে গেছে। এসব কথা কেউ কাউকে মুখ খুলে বলা লাগে না।চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝা যায়।
না কেউ-ই নেই তার জন্য।
নার্গিসের চাইতে বড় অভাগা কে আছে এই দুনিয়ায়!
সকালে ঘুম থেকে উঠে নার্গিস রান্নাঘরে ঢুকলো। এই কয়দিনে এটুকু বুঝতে পেরেছে এই বাড়িতে হাতাখুন্তি নেড়ে যে শান্তি তা বোনের বাড়িতে আজাইরা বসে থেকে ও পায় নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তার তো ঠাঁই আর কোথাও নেই।
মিরাজুল ইসলাম ও এটা জানতেন।জানতেন বলেই তিনি জানেন নার্গিস ফিরতে বাধ্য।
নার্গিস চোখ মুছে নেয়।
সোফায় বসে শিরিন তারস্বরে চেঁচিয়ে ঝুনিকে বললো, “এক কাপ চা দে।”
মিনি একটা নীল শাড়ি পরে ঘুরঘুর করছে। নার্গিসকে এসে বললো, “মা,কিছু করতে হবে?”
শিরিন কান পেতে রইলো নার্গিস কি বলে তা শোনার আশায়।আজকে যদি তার মেয়েকে দিয়ে কাজ করায় তাহলে কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিবে সে।
নার্গিস মিনির দিকে এক পলক তাকায়।মিনি ঢোক গিলে।
কোমল গলায় নার্গিস বললো, “আমাকে মা ডাকিস না,আমি তোর মামী হই এটা বললেই হবে।”
মিনির মুখটা এতটুকু হয়ে গেলো লজ্জায়।
মিনি বের হয়ে এসে শিরিনের পাশে বসে। শিরিন কেমন আরাম করে বসে আছে। মিনি মায়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

মা কি জানে মিনি কি পরিমাণ মানসিক যাতনার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে!
মিনি বুঝতে পারছে না সে আসলে নির্জনকে পাওয়ার জন্য যে ছলনার আশ্রয় নিয়েছে তাতে নির্জনকে কতটা পাওয়া হয়েছে?
সত্যি কি পেয়েছে সে নির্জনকে?
আগে তো মিনি চাইলেই নির্জনের সাথে কথা বলতে পারতো, একসাথে বসে খাবার খেতে পারতো।
নির্জন বিরক্ত হলেও কথা বলতো। অথচ এখন একই রুমে থেকেও একটা টুঁশব্দ করে না নির্জন।
তিন বেলা রুমে খাবার খায় আর ডেস্কটপ নিয়ে বসে থাকে।
এই যে এখন আজীবনের জন্য নিজের করে নিলো,মিনির মনে হচ্ছে এটাই সবচেয়ে বড় ধোঁকা তার জীবনে।
নিজের করতে গিয়ে বোধহয় একেবারে দূরে চলে গেছে সে।
নানীর জন্য নাশতা নিয়ে চলে গেলো মিনি।
রজনীরা দুই দিন আগে ফিরে এসেছে বাড়িতে।এসেই একে একে সব আপডেট পেতে লাগলো। আষাঢ়ের এক্সিডেন্টের খবরে রজনী যতটা কষ্ট পেয়েছে ততটাই কষ্ট পেয়েছে নির্জনের এভাবে বিয়ের কথা শুনে।
নির্জনকে তো কখনো এরকম মনে হয় নি!
এই কয়দিন বাড়িতে ছিলো না। রজনীর মনে হচ্ছে বাড়ির সবকিছুই কেমন বদলে গেছে। বিশেষ করে নার্গিসের পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো।

সারাক্ষণ নাক উচু করে থাকা মানুষটা কেমন নেতিয়ে গেছে।
রজনী সকালে রান্নাঘরে ঢুকে দেখে নার্গিস সব শুরু করে দিয়েছে।
রজনী নার্গিসের হাত ধরে বললো, “আমি এসে গেছি,এবার তুই বিশ্রাম কর।”
নার্গিস হেসে বললো, “একটা জীবন তো রেস্ট নিতে নিতেই কাটিয়ে দিলাম ভাবী।নিজেকে সবকিছু থেকে দূরে রাখতে রাখতে কবে যে নিজের স্বামী আর সন্তানের থেকে ও দূরে চলে গেলাম জানি না।
এবার একটু কাছে আসতে দাও। তুমি তো অনেক খাটলে এই সংসারে এসে,এবার আমাকে বলল খাটতে দাও।”
রজনীর কেমন বুক কেঁপে উঠে।
এমন লাগছে কেনো তার!
এই সংসারটা কেনো এমন ছন্নছাড়া মনে হচ্ছে তার!
কোথাও কিছু ঠিক নেই।

সকাল বেলায় আষাঢ় তৈরি হলো কোচিং এর জন্য।নিজের হৃদয়কে ইস্পাত-দৃঢ় করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আষাঢ়। কোনো এক পাষাণীর জন্য সে কলিজা পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছে।
বুকের ভেতর পাহাড় সমান যন্ত্রণা নিয়েই নিজেকে নিজে সামলে নিলো আষাঢ়।
যে কখনো নিজের হবে না তাকে আর বিরক্ত করতে চায় না আষাঢ়।
ওই দুই চোখে ঘৃণার আগুন দেখেছে আষাঢ়। সেই চোখে যে কখনো তার জন্য মুগ্ধতা দেখবে না এটা তো জানা কথা-ই।
রুম থেকে বের হওয়ার আগেই শুনতে পেলো কান্নাকাটির রোল পড়ে গেছে। মহুয়া বেগমের না-কি শরীর খারাপ হয়ে গেছে হুট করেই।
শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।

তড়িঘড়ি করে সবাই ছুটলো মহুয়া বেগমের রুমে।
মহুয়া বেগম বড় করে নিশ্বাস নিতে লাগলো। শরীর তার বাস্তবিকই খারাপ হয়েছে।
মিনি থরথর করে কাঁপছে। কি করে ফেললো সে এটা!
সকালে নানীর নাশতা দিতে আসতেই মহুয়া বেগম তাকে ডেকে বিছানায় বসতে বলে। তারপর জিজ্ঞেস করে নির্জনের সাথে সব ঠিক আছে কি-না!
নিজেকে সামলাতে না পেরে মিনি নানীকে সব সত্যি কথা বলে দিয়েছে।
কিভাবে কি হলো সবটাই বলে দিয়েছে মিনি।তারপর থেকেই মহুয়া বেগম কেমন ঝিম মেরে আছেন।
তাৎক্ষণিক মহুয়া বেগমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।অক্সিজেন দিয়ে ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন মহুয়া বেগমের।
হাসপাতালে সবাই এসেছে নির্জন আর পিয়াসা ছাড়া।

পিয়াসা কোচিং এ গেছে।
নির্জন নিজের রুমে।এই দুনিয়ার কোনো কিছুর প্রতি তার কোনো আগ্রহ জন্মাচ্ছে না।নিজেকে একেবারে গুড ফর নাথিং বলে মনে হয়।
এই যে মা ফিরে এলো,একটা বার ও তো কথা বললো না তার সাথে।
তাকে মেরুদণ্ডহীন করে গড়ে তুলে এখন আবার রাগ করছে!
নির্জন আর কারো রাগ,অভিমান দেখতে চায় না।
না মা,না বাবা।
শ্বশুর বাড়ি থেকে বৈশাখী আর বর্ষা ও এসেছে। মহুয়া বেগম যেমনই হোক,বাড়ির মুরুব্বি।
কেউ-ই না এসে পারে নি।

বেডে শুয়ে মহুয়া বেগম ভাবতে লাগলেন পিয়াসার কথা। দুই আঙুলের এই মেয়ে সেদিন তাকে কিভাবে অপদস্ত করেছে মহুয়া বেগম ভোলেন নি।আষাঢ়কে দেখতে যায় নি সে।
ভীষণ অপমানিত হয়েছেন তিনি সেদিন।
জমিদার বাড়ির মেয়ে,জমিদার বাড়ির বউ তিনি।
সবসময় তিনি যা চেয়েছেন তাই হয়েছে। আর সেখানে কি-না এই মেয়ে তার সাথে টক্কর নেয়।
আষাঢ়ের সাথে বিয়ে দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিবেন এই মেয়েকে আর মেয়ের মা’কে মহুয়া বেগমের সাথে বড়াই করার মজা কি!

হ্যালো 2441139 পর্ব ৩৯

একেবারে রজনীর মতো ডানা ভেঙে দিবেন তিনি।
বাঘ বুড়ো হলেও শিকার করতে ভুলে যায় না আবারও বুঝিয়ে দিবেন সবাইকে।

হ্যালো 2441139 পর্ব ৪১