কাশফুলের মেলা পর্ব ৬ || রোমান্টিক গল্পের লিংক

কাশফুলের মেলা পর্ব ৬
Nusrat jahan Sara

—-লজ্জা করেনা এতোরাতে একজন পরপুরুষের সাথে যে দেখা করেতে যাও?নাকি এটা তোমার ব্যবসাই?নিজে বিবাহিত হয়েও আরেকজন বিবাহিত নারীর স্বামী নিয়ে টানাটানি করতে রুচিতে বাঁধে না তোমার?
আরশির কাছে এখন পরিষ্কার, আসার সময় যে মেয়েটাকে সে দেখেছিলো তুর্বর সাথে সে তুর্বর স্ত্রী। আরশি একবার ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
—-আপনি তুর্বর স্ত্রী?
—-হ্যাঁ আমি তুর্বর স্ত্রী। আড়াই বছর হয়েছে আমাদের বিয়ের। আর আপনি কেমন স্বামী যে নিজের স্ত্রীকে পর্যন্ত সামলে রাখতে পারেননা। নাকি আপনিও আপনার স্ত্রীর মতোই চরিত্রহীন?
কথাটি বলে তুর্বর স্ত্রী সেখান থেকে চলে গেলো। ইশানের চোখে পানি চিকচিক করছে।যেন এখনি এক ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পরবে।ইশান নিজের চোখের জল লুকানোর জন্য রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।

সমুদ্রের উতালপাতাল ঢেউয়ের শব্দ এসে ভারি খাচ্ছে ইশানের কানে।পুর্নিমার চাঁদ থালার ন্যায় আকাশে উদিত হয়েছে।চাঁদের আলো সমুদ্রে পরার কারনে যেন সমুদ্র আরেকরুপ ধারন করছে। মুক্তোর ন্যায় লাগছে প্রতিটা সমুদ্রের পানির কণা।মাঝেমধ্যে একেকটা ছোটখাটো ঢেউ এসে ইশানের পায়ে ঝাপটা দিয়ে চলে যাচ্ছে।ইশান নিজের চোখের জলটা অনামিকা আঙুল দিয়ে মুছে নারকেল গাছে হেলান দিয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলল।আজ আবারো আরশির কারনে মানুষ তাকে চরিত্রহীন বলল। ইশান নিজের মনকে শক্ত করে খুব বড় একটা ডিসিশন নিলো।যেটা করা উচিৎ নয় সেটাই করবে সে।
এতোক্ষন হয়ে গেছে ইশানকে রুমে না আসতে দেখে আরশি এবার বেশ চিন্তায় পরে গেলো।
করিডোরে দাঁড়িয়ে চারিপাশে বারবার চোখ বুলাচ্ছে কোথায়ও ইশানকে দেখা যায় কী না।কিন্তু কোথাও ইশান নেই।একদিকে তুর্বর দেওয়া বিশ্বাসঘাতকতা আরেক দিকে ইশানে উধাও হয়ে যাওয়া দুটি একসাথে মেনে নিতে পারছেনা আরশি।চোখের জল বারবার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছছে।আর দোয়া করছে ইশান যেখানেই থাকে যেন সুস্থ সবল অবস্থায় ফিরে আসে। এবার সে আর ঝগড়া করবেনা ইশানের সাথে আর দূরেও সরিয়ে দিবেনা।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

দুজন মানুষ দুই রকম ভাবনা চিন্তা করছে।কেউ দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে তো কেউ কাছে টানতে চাইছে।
সকালে পাখির কলরবে ঘুম ভেঙে গেলো ইশানের। ভালো করে একবার চোখ ঢলে চারিদিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো সে কোথায় আছে? পাথরের উপরে বসে থাকা আর গাছে হেলান দেওয়ার ফলে তার কোমড় আর ঘাড় ব্যাথা করছে। ইশান টলমলে পায়ে রিসোর্টে ফিরে গেলো।রুমে দরজা খুলা দেখে ইশান তারাতাড়ি রুমে ঢুকে দেখলো আরশি ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে।চোখ মুখ ফুলে গেছে।বেশি কান্নার করার জন্য মুখে পানির দাগও লেগে আছে। তাতে ইশানের কী?সে বাথরুমে ঢুকে দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। বিদ্ঘুটে আওয়াজ শুনে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো আরশি।বাথরুমের দরজা বন্ধ দেখে সে বুঝতে পারল ইশান এসেছে। বেশকিছুক্ষন পর ইশান বেড় হলো বাথরুম থেকে একটা তোয়ালে পেছিয়ে। ইশানের চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে।ফর্সা পিঠ বেয়ে কয়েকফোটা পানিও নিচে ঘরিয়ে পরছে।ইশানকে এমন স্নিগ্ধ অবস্থায় আগে কখনো দেখেনি আরশি।সে মুগ্ধ হয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে।ইশান আরশির দিকে না তাকিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে হাত দিয়ে চুল নাড়াতে লাগল। আয়নার দিকে তাকিয়ে আরশিকে এমন স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশান রাগী সুরে বলল,,,,,

—-স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? আগে কখনো কী দেখনি আমায়?।নাকি আমার কাছ থেকে এটেনশন পাওয়ার জন্য এমন করছো?
ইশানের কথা শুনে আরশি মুখ ঘুরিয়ে নিলো।নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,
—-কাল সারারাত কোথায় ছিলেন আপনি?
—-আমি যেখানেই যাই না কেনো তাতে তোমার কী হুম? আমি বেঁচে আছি কী না মরে গেছি সেটা জেনে তুমি কী করবে?তোমার তো খুশি হওয়ার কথা যে তুমি মানুষের সামনে আমাকে চরিত্রহীন হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছো।
—-এসব আপনি কী বলছেন?
—-আমি যা বলছি সব ভেবে চিন্তেই বলছি।
সকালের নাস্তাটা ইশান ম্যানেজারের সাথে করলো।আর আরশির খাবার সে স্টাফকে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।আপতত আরশির কথা শুনা আর ওর মুখ দেখার কোনোটারই আগ্রই নেই তার কাছে।
রাত দুটো বাজে।ইশান সোফায় কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।শীতে তার শরীর থরথর করে কাঁপছে।সারারাত বাইরে কাটিয়ে দেওয়ার কারনেই হয়তো জ্বর এসেছে।আরশির চোখে ঘুম নেই সে ইশানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইশানের কপালে জলপট্টি দেওয়ার জন্য দুইবার গেছিলো কিন্তু ইশান ওকে কপালে স্পর্শ পর্যন্ত করতে দেয়নি। আরশির চোখে সবেমাত্র ঘুম এসে ধরা দিয়েছিলে হঠাৎ তার শরীরে উষ্ণ তাপ পেয়ে সে চোখ মেলে তাকালো। দেখল ইশান ওকে জড়িয়ে ধরেছে। আরশিও তার এক হাত ইশানের পিঠে রাখলো।ইশান আরশির কাছে এসে ওর ঘাড়ে মুখ গুঁজে নিঃশ্বাস ফেলছে। ইশানের নিঃশ্বাসে আরশির মনে উতালপাতাল ঢেউ শুরু হয়ে গেছে।ইশানের লক্ষন দেখে বুঝা যাচ্ছে সে আরশিকে কাছে পেতে চাইছে।আরশিও মনে মনে স্থীর করে নিলো সে আর ইশানকে দূরে টেলে দিবেনা শপে দিবে নিজেকে ইশানের কাছে।

সকালে ইশান নিজেকে খাটে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে গেলো।খাটে কী করে আসলো সেটা বুঝতে পারছেনা।সে তো সোফায় শুয়েছিলো।আর আরশি ওতো আনতে পারবেনা তাহলে কী করে এলো। ইশানের ভাবনার মাঝেই আরশি এক কাপ গরম চা ওর সামনে ধরলো।ইশান বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে আরশির দিকে তাকালো।ইশানের তাকানো দেখে আরশি মুচকি হেঁসে বলল,,,
—-কী হলো চা নিন?
—-তোমাকে এতো ভালোবাসা দেখাতে কে বলেছে? সরো আমার সামন থেকে।
ইশানের এমন ব্যবহারে আরশি ভয় পেয়ে গেলো।কালই তো ইশান ওকে কাছে টানলো আর এখন দূরে সরিয়ে দিচ্ছে মানেটা কী।তাহলে কী কাল রাতের বিষয় ইশান সব ভুলে গেছে।
—-কী হলো বললাম না আমার সামন থেকে যাও।আমি এখনি বাড়ি ফিরতে চাই।
—–সে কী আপনার তো জ্বর এই জ্বর নিয়ে গাড়ি করে গেলেতো বাতাসে আপনার আরও বেশি ঠান্ডা লাগবে আর ঠান্ডা লাগলে তো আপনার জ্বর আরও বেশি বাড়বে।
—-আমাকে নিয়ে এতো না ভাবলেও চলবে।আমি নিজের যতন নিজেই নিতে পারি।কারোর সাহায্যের দরকার নেই।
ইশানের কথা শুনে আরশির চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরছে।এই প্রথম ইশান ওর সাথে এভাবে কথা বলছে।ইশানের দিক থেকে ইশান রাইট কিন্তু আমিই ভুল। আরশি চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে শাড়ি নিয়ে চলে গেলো বাথরুমে।অঝোড় ধারায় পানি ঘরিয়ে পরছে আরশির চোখ থেকে।আগের রাগী আর জেদি আরশিটাও এখন কেমন হয়ে গেছে।মানুষ ঠিকি বলে অহংকার পতনের মূল।সেই জন্যেই আজ তার এমন করুন দশা।
আরশি এতো লেইট করছে দেখে ইশানের ভীষণ রাগ লাগছে।সে রেগে দরজায় একটা বারি দিয়ে বলল,,,,

কাশফুলের মেলা পর্ব ৫

—-তুমি যদি এই মুহুর্তে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে না আসো তাহলে আই সোয়ার আমি তোমাকে ফেলে রেখেই চলে যাবো।
আরশি তখন সবেমাত্র শাওয়ারটা অন করতে যাচ্ছিলো ইশানের কথা শুনে সে তারাতাড়ি চোখে মুখে পানির ছিটে দিয়ে বেড়িয়ে এলো।
ইশান নিজের কাপড়চোপড় সব লাগেজে ভরে ফেলেছে।আরশি চটজলদি নিজের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাপড়গুলো লাগেজে ভরে নিলো।
ইশান বিছানায় পরে থাকা ঘড়িটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।খিদের জ্বালায় আরশি আকুপাকু করছে।ইশান ব্যাপারটা বুঝেও কিচ্ছু বলল না।
ম্যানেজার সাহেব আরশি আর ইশানকে এতো তারাতাড়ি ফিরে যেতে দেখে বিস্ময়ের চোখে তাকালেন ওদের দিকে
—-তোমরা এতো তারাতাড়ি ফিরে যাচ্ছো যে?
—-আংকেল আমরা তিনদিনের জন্য এসেই ছিলাম তিনদিন তো হয়ে গেছে তাই ভাবলাম আর থেকে কী হবে তাই চলে যাচ্ছি। তবে আবার আসব আমি হানিমুনে।এন্ড থ্যাংক ইউ আমাদের টেক কেয়ার করার জন্য।
—-ইট’স মাই প্লেজার।
আবার আসব হানিমুনে কথাটা শুনে আরশির অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।। আবার হানিমুনে আসব কথাটা দ্বারা ইশান কী বুঝাতে চাইছে তাহলে কী ও,,,,

—-একি আরশি মা তুমি কী ভাবছো ইশান বাবা তো চলে যাচ্ছে।আরশি সামনে তাকিয়ে দেখলো ইশান সত্যি লাগেজ হাতে নিয়ে চলে যাচ্ছে।আরশিও বড় বড় কদম ফেলে ইশানের কাছে চলে গেলো।
গাড়িতে বসে আরশি ইশানের সাথে অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু ইশান কানে ইয়ারফোন গুঁজে রেখেছে যাতে আরশির কন্ঠস্বরর ওকে শুনতে না হয়।ইশানের এমন আচরনে আরশি কেঁদে দিলো। জীবনে কতকিছুই ঘটে গেছে আরশি কখনো চোখের জল ফেলেনি।কিন্তু এখন প্রতি ক্ষনে ক্ষনে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই তার কাছে।

কাশফুলের মেলা পর্ব ৭