মায়াবতী পর্ব ৬

মায়াবতী পর্ব ৬
ইসরাত জাহান ইকরা

মেহমিদ কোলে করে মেঘা কে বাসায় নিয়ে এলো। সকলের সামনে দিয়ে সিরি বেয়ে মেঘা কে উপরে তুলে নিয়ে গেল। মেহমিদ এর মা বাবা উঠানে চেয়ারে বসে চা খাচ্ছিলো ওদের ওই অবস্থায় দেখে বলে উঠলো, মেঘার কি হলো, আর ওরা দুজনে কাক ভেজা হয়ে আছে কেন। পেছন পেছন, মেহমিদ এর এক বন্ধু আর পাড়ার ছেলে মেয়েরা এসে মেঘাদের বাড়ি এসে জড়ো হলো। মেহমিদ এর বন্ধু রাখিল বলে উঠলো, ফুফু মেঘা পানিতে পড়ে গিয়েছিল, মেহমিদ সেখান থেকে ওকে তুলে নিয়ে এসেছে। এখন আমরা আসি ফুফু, এই চল এখন এখান থেকে, এই বলে রাখিল দলবল নিয়ে চলে গেল।

মেহমিদ এর মা বাবা দৌড়ে উপরে চলে গেল।
রাহিমা বেগম এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনলো। আর মনে মনে বলতে লাগলো, এদের ন্যাকামি দেখলে আর সহ্য হয় না। পানিতে পড়লি তো পড়লি, বেঁচে ফিরলি কেন, ভেসে কোথাও চলে যেতে পারলি না। যত জ্বালা আমার, ভেসে ভেসে আমার ঘাড়ে এসেই পড়লি।
এই বলে রাহিমা বেগম রান্না ঘরে চলে গেল মেঘার জন্য গরম গরম আদা দিয়ে চা বানিয়ে আনতে। একটু দেখবাল না করলে ওরা আবার সন্দেহ করবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঘরে বসে গল্পের বই পড়ছিলো মাটি, তখনি ভেজা অবস্থায় মেঘা কে মেহমিদ এর কোলে দেখে, মাটি চমকে উঠলো। তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো _ এই আপু তুই কি নদীতে পড়ে গিয়েছিলি। হায় সর্বনাশ, তুই তো সাতার জানিস না, কীভাবে পড়লি।
মেহমিদ বলে উঠলো _ পড়ে প্রশ্ন করো, এখন ওর শরীরের ড্রেস চেঞ্জ করে দাও। চুল গুলো মুছে দাও। আমি ততক্ষনে চেঞ্জ করে আসছি।

মেহমিদ চলে যেতেই মাটি দরজা লাগিয়ে, মেঘার ড্রেস চেঞ্জ করে দিল। ড্রেস চেঞ্জ করে মেঘার চুল মুছতে মুছতে মাটি সন্দেহের দৃষ্টিতে বলে উঠলো _ কি করে পড়লি?
মেঘা একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে মাটি কে সব খুলে বললো। সাথে সাথে মাটি রেগে ফায়ার। মাটি ওড়োনা কমড়ে গুঁজে বলে উঠলো _ ওই হারামজাদার ব‌উয়ের এতো বড় সাহস, আমার বোন কে পানিতে ফেলে দেয়, ওকে তো আজ আমি ওর চুল ছিঁড়েই ফেলবো। এই বলে মাটি যেতে নিলে মেঘা তাড়াতাড়ি করে মাটির হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বলে উঠলো _ উফ্ মাটি, এমনিতেই আমার এখন শরীর টা ভালো লাগছে না। এভাবে এতো কিছু করলে লোক জানাজানি হবে। তাতে আমাদের ই সম্মানহানি হবে। না,না মান ইজ্জতের ব্যাপার বাদ দে এসব।
মাটি__ এখন বললি তাই চুপ করে গেলাম। কিন্তু আমি যদি এই ব্যাপারটার প্রতিশোধ না নিছি আমার নাম মাটি না।

তখনি কেউ দরোজায় কড়া নাড়লো। মাটি আসছি বলে, দরজা খুলে দিল। মেহমিদ এর মা বাবা হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে, মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলো _ কীভাবে পানিতে পড়লি মা।
মেঘা _ ওই পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম।
শায়লা বেগম _ একটু সাবধানে চলাফেরা করবি তো। যদি আজ তোর কিছু হয়ে যেত, শুনেছি তুই নাকি সাঁতার জানিস না। এগুলো ভাবলেই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।আর এরকম করবি না, সাথে কাউকে নিয়ে বাসা থেকে বের হবি বুঝলি।

মেঘা_ ধুর, তুমি আর ওইসব নিয়ে চিন্তা করো না তো জেঠিমনি। আমার কিছু হয়নি, তোমাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ঠিক আছি। আর অযথা চিন্তা করে শরীর খারাপ করো না। তাহলে আমাদের দেখবে কে?
শায়লা বেগম _ ঠিক আছে, তবে আমার ওয়াদা র‌ইলো,পরের বার কাউকে সাথে নিয়ে বের হবি, । নিজের খেয়াল রাখবি। এখন আমরা চলি তুই রেস্ট নে।
এই বলে শায়লা বেগম মোশারফ হোসেন কে নিয়ে চলে গেলেন। ওরা চলে যেতেই, মেঘা কপাল কুঁচকে মাটির দিকে তাকালো।

মাটি মুখ বাঁকা করে বলে উঠলো _ কি ওভাবে পুলিশের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন‌ এমন ভাবে তাকিয়ে আছো জেনো আমি চোর। মনে হচ্ছে আমি এক রাজার ধন দৌলত চুরি করে এনেছি।আর এখন ধরা পড়েছি।
মেঘা _ চোর বললে ভুল হবে, তোকে ডাকাত বলা উচিত। শুধু পড়া চুরি করার ধান্দা তাই না। এখন তো প্রাইভেটে থাকার কথা তোর।

মাটি কাপল চাপড়ে বলে উঠলো _ সব‌ই কপাল আমার, ওই বেটা ইবলিশ, বজ্জাত, অভদ্র টা আমাকে যেতে দেয় নি। ওনি নাকি আমাকে আজ থেকে প্রাইভেট পড়াবে। সুন্দর করে তার কোন ফ্রেন্ডের কাছে কল দিল, সে বললো ওই মাস্টার নাকি চরিত্রহীন, ব্যাস সেই মাস্টারের জব টা গায়ে পড়ে ওনি নিয়ে নিলেন। বাদরের মতো আমার পিছনে লাগছে ক্যান একমাত্র ওই অসভ্য টা জানে। আমি বলে দিলাম আপু, আমি মেট্রিক এ ফেইল করবো, তবুও ওই মাহিদ্দার কাছে পড়বো না। কি তার ধমক, একেবারে কথায় কথায় ধমক, উঠতে বসতে ধমক। মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছে হয় এরে ধমকের ড্রামের মাঝে চুবাই। এক নিঃশ্বাসে কথা বলে থামলো মাটি।

পেছন থেকে মাহিদ জলের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো এই নিন রাজকুমারী, আপনি হাঁপিয়ে গেছেন, একটু পানি খেয়ে আবার শুরু করুন। আপনার মনের সব জ্বাল আমার উপর মিটিয়ে ফেলুন।
এদিকে মেঘা মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো। মাটি মাহিদের কথায় জেনো আকাশ থেকে , সাথে সাথে পিছন ঘুরে দুকদম সরে গেল।

মাহিদ বলে উঠলো _ কি পিছুচ্ছেন কেন, আসুন আমাকে ধমক দিন। পাশ থেকে মেঘা বলে উঠলো _ ছাড়ুন তো মাহিদ ভাই,বসুন ওও একটু এরকম ই।
মাহিদ মাটির দিক থেকে নজর সরিয়ে,মেঘার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো_ এবার বলো তো , তুমি কি করে পানিতে পড়ে গেলে। আমি এই মাত্র বাসায় ফিরলাম, ফিরে শুনতে পেলাম তুমি নাকি পানিতে আজ ডুবতে বসেছিলে।
মেঘা _ আসলে মাহিদ ভাই, তেমন কিছুই না, শুধু একটা দুর্ঘটনা।
মাহিদ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো _ হ্যা ছোট্ট একটা দুর্ঘটনাই কিন্তু সারা জীবনের কান্না। পরের বার থেকে একটু সাবধানে চলাফেরা করবে।

মেঘা মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
মাহিদ বলে উঠলো _ আচ্ছা তুমি বিশ্রাম নাও, আমি ফ্রেস হয়ে আসছি। আর হ্যাঁ, ওই পুচকি টাকে সন্ধ্যার মাগরিব এর পর আমার রুমে পাঠিয়ে দিও।
মাটি পাশ থেকে বলে উঠলো _ এই জীবনে ও আমি যাবো না। পরবো না আমি আপনার কাছে।

মাহিদ _ সোজা কথায় না গেলে পিটিয়ে নিয়ে যাবো, বড় হয়েছো, ছোট বাচ্চা নোও তোমাকে বুঝিয়ে আদর করে কথা শুনাতে হবে। কথা না শুনলে সেই ব্যাবস্থা আমার জানা আছে। এই বলে মাহিদ চলে গেল।
মাটি রেগে মেঘা কে বলে উঠলো _ দেখলি তো আপু, কি রকম করে, আমি ওই মাহিদ্দার কাছে পড়বো না। আর তুই ভাই ডাকিস কেন,তোর চেয়ে বড় নাকি, দেখে তো same age মনে হয়।
মেঘা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো _ কি বেয়াদবি করছিস মাটি, মাহিদ ভাই অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আর আমি ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার, আর তুই এভাবে বলবি না, যা বলে শুনবি।
মাটি রেগে বলে উঠলো _ তুমি শুনো, তোমার কলিজার ভাই হতে পারে, কিন্তু আমি চিনি না, আর কথা শুনা তো দূরে থাক। ধ্যাত………

বলেই মাটি রেগে সেখান থেকে চলে গেল ‌।
মাটি চলে যেতেই রাহিমা বেগম চা নিয়ে মেঘার রুমে প্রবেশ করলো। চাচী কে চা হাতে আসতে দেখে মেঘা উঠে দাঁড়ালো, মেঘা বলে উঠলো _ চাচী আপনি শুধু শুধু কষ্ট করতে গেলেন কেন।
রাহিমা বেগম কপাল কুঁচকে বলে উঠলো _ বয়েই গেছে আমার, চা খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর, নয়তো আবার ঠান্ডা লাগবে, তারপর সেইই ঠান্ডার অজুহাত দিয়ে এক সপ্তাহ বিছানায় বসে খাবি, তা আর হবে না। কালকেই আমার বড় মেয়ে আসছে।

দরজার ওপাশ থেকে মেহমিদ বলে উঠলো _ তাই কাকিয়া, ভালো তো আসুক।
রাহিমা বেগম থতমত খেয়ে গেলেন _ কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। কোন রকম তুতলিয়ে বলে উঠলো। আমার বড় মেয়ে তো আজকে মেঘার পানিতে পড়ে যাওয়া নিয়ে ভিশন চিন্তায় পড়ে গেছে। সেটা স‌ইতে না পেরে কাল ই চলে আসছে মেঘা কে দেখতে। ভিশন ভালোবাসে তো।নে মেঘা, আদা দিয়ে চা করে এনেছি এক চুমুকে সবটা শেষ করে ফেলবি তাহলে আর ঠান্ডা লাগবে না। আমি এবার যাই, হাতে অনেক কাজ।
এই বলে রাহিমা বেগম চলে গেলেন। রাহিমা বেগম চলে যেতেই, মেহমিদ এসে মেঘার কপালে হাত দিয়ে চেক করলো, শরীরে জ্বর টর এলো কি না। মেহমিদ এর হাতের স্পর্শ পেতেই মেঘা কেঁপে উঠলো।

সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়লো,লাল আভা ছড়াচ্ছে আকাশে, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। মাগরিব আজান দিলো, মেঘা মাটি কে কানে ধরে অজু করিয়ে এনে দুই বোন মাগরিব এর নামাজ আদায় করে নিলো।
নামাজ শেষে, মেঘা মাটি কে জোর করে পাঠিয়ে দিল মেহিদ এর রুমে।
মাটি ভয়ে ভয়ে মাহিদ এর রুমে প্রবেশ করতেই জোরে চিৎকার করে উঠলো।
সাথে সাথে, মাহিদ ধমক মারলো, মাহিদের ধমকে মাটি চুপসে গেল।
মাহিদ বলে উঠলো _ এভাবে গরুর মতো চিৎকার করে উঠলে কেন।
মাটি তুতলিয়ে বলে উঠলো, আপনার গায়ের জামা ক‌ই।

মাহিদ আফসোসের সুরে বলে উঠলো _ পিচ্চি যে পিচ্চি। দেখছো না শার্ট ইন্ত্রি করে রাখছি।
বলেই একটা টিশার্ট গায়ে দিয়ে, মাটি কে বসতে বলে বাইরে চলে গেল।
একটু পর একটা বেত নিয়ে এসে মাহিদ বলে উঠলো _ ব‌ই বের করো।
মাটি তুতলিয়ে বলে উঠলো _ এটা কিসের জন্য।

মায়াবতী পর্ব ৫

মাহিদ _ এটা মহামারির ঔষধ। কথা না বলে ব‌ই খুলো।
মাটি মনে মনে একশো একটা গালি দিয়ে ব‌ই বের করলো।
তখনি আয়েশা এসে বলে উঠলো _ মাহিদ ভাই আমি ও পড়বো।
মাহিদ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো _ যা ব‌ই নিয়ে আয়।

মায়াবতী পর্ব ৭