রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৯ (২)

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৯ (২)
সিমরান মিমি

দিনের শেষ প্রহর।ঘড়ির কাঁটায় প্রায় পাঁচটা বাজতে চললো।সূর্য তার তপ্ত রশ্মি নিয়ে উবে গেছে আরো আগেই।বিশাল আকাশে এখন রয়ে গেছে শুধুমাত্র তার আলোক রশ্মি গুলো।এগুলো মৃদু উত্তপ্ততা ছড়ালেও প্রকৃতির নির্মল ঠান্ডা বাতাসের প্রকোপের সাথে পাল্লা দিয়ে হেরে যাচ্ছে।পরশ ক্রমশ নিজস্বতায় পরিপূর্ণ হচ্ছে।নিজের রাগ’কে কন্ট্রোল করার শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে।একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আয়ত্ত্ব করা এতোদিনের সেই স্নিগ্ধতা,গম্ভীরতা প্রস্থান নিয়ে অবস্থান নিচ্ছে ব্যক্তিসত্তার জেদে।সামনে’ই অন্যদিকে তাকিয়ে বিরক্তকর অভিমুর্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শী।পরশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“মুখ সামলে কথা বলো।কাকে চরিত্রহীন বলছো তুমি?অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে নিজের এবং বোনের চরিত্রের উপর ফোকাস করো।গায়েপড়া, অভদ্র মেয়ে কোথাকার!
হা হয়ে গেল স্পর্শী।তাকে অভদ্র বলেছে এই এমপি।রাগে,জেদে নাকের উপরাংশ লাল হয়ে গেল। চেঁচিয়ে উঠে বললো,
” আপনি কি ইনডিরেক্টলি আমাকে চরিত্রহীন বললেন?”
নিচের ঠোঁট টাকে বাঁকা করে হাসলো পরশ।তারপর বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ডিরেক্টলি’ই বলছি।তোমার আর তোমার বোনের চরিত্রে সমস্যা রয়েছে।শুধু চরিত্রে না, তোমার তো মাথাতেও সমস্যা আছে।নইলে এভাবে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে না। আর না তো নিজের বোনের কথা শুনে অন্য আরেকটা ছেলেকে বখাটের মতো মারতে।এই মেয়ে তোমার বোন’কে নিয়ে আসোনি কেন?আমি দেখতাম ওই প্রতারক কে।যে আমার ভাইয়ের সাথে প্রথমে বছরের পর বছর সম্পর্ক করে লাস্ট মোমেন্টে ইভটিজার বানিয়ে দিয়েছে।”

ঢোক গিললো পিয়াস।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দুপা পিছিয়ে গেল পেছনে।উফফ!এগুলো বলার কি খুব প্রয়োজন ছিলো পরশ ভাইয়ের।পাশে থাকা রতন চিমটি কেটে পিয়াসের উদ্দেশ্যে বললো,
“কিরে তোর ভাইকি এখানে তোকে নিয়ে কথা বলতে এসেছে?উনি তো নিজেই নিজের ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া করছে।বাই দ্যা ওয়ে,তোর ভাইয়ের এক্স ছিলো নাকি স্পর্শী?”
নাক ছেটকালো পিয়াস। নিচু স্বরে বললো,”আরে ধুর!আমার ভাই প্রেম করবে ওর মতো অসভ্য মেয়ের সাথে।আর তাছাড়াও ভাইয়ার বিয়ে ঠিকঠাক।আংটি পড়ানো হয়ে গেছে।এই সামনের মাসেই বিয়ে।আমার ভাবি ভীষণ শান্ত।দুনিয়া নড়বে তবুও আমার ভাবি নড়ে না।”

মাথা ফাঁকা হয়ে গেল স্পর্শীর।কি বললো এই এমপি?ওই লোফার টার সাথে আর্শির সম্পর্ক ছিলো তাও বছরের পর বছর ধরে।হাহ!এক পলক পিয়াসের দিকে তাকালো স্পর্শী।তারপর পরশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই কথাগুলো আপনার ভাই আপনাকে বলেছে?”
হঠাৎ স্পর্শীর এমন শান্ত রুপ দেখে পরশ খানিক’টা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।পিয়াসের চোরা চোখের দিকে একবার তাকিয়ে স্পর্শীকে বললো,

“তোমার বোনকে জিজ্ঞেস করো কত বছরের সম্পর্ক ছিলো?এতোদিন পর নতুন কোনো ছেলে পেয়ে তার সাথে জড়িয়েছে অসভ্য মেয়েটা।পেলে তো থাপড়ে গাল লাল করে দিতাম।”
মুহুর্তেই পায়ের জুতো খুলে হাতে নিলো স্পর্শী।পিয়াসের দিকে তেড়ে যেতে যেতে বললো,
“আপনার এই লোফার ভাইটার চরিত্র তোর ভাদ্র মাসের কুকুরের মতো।যখন যার কাছে যায়, তাকেই বউ মনে হয়।ভার্সিটির সব কটা মেয়ের সাথে তো ওর সম্পর্ক ছিলো।সব গুলোই তো ওর দু-তিন বছরের গার্লফ্রেন্ড। কি রে আমার বোনের সাথে ক বছরের সম্পর্ক ছিলো তোর?”

বাকরুদ্ধ হয়ে গেল পরশ।এহেন কান্ডে বডিগার্ড গুলো ছুটে এলো স্পর্শীর দিকে।কোনো না কোনো ঝামেলা বাঁধবে বুঝে উঠতেই পাভেল হাত দিয়ে ইশারা করে থামতে বললো বডিগার্ড দের।স্পর্শীর দিকে রেগে গিয়ে বললো,
“এই সাবধান!আপনার সাথে আমরা ভদ্রভাবে কথা বলছি দেখে ভাববেন না আমরা দুর্বল।এমন অভদ্রতা আরেকবার করলে দু-চার টা থাপ্পড় লাগিয়ে দেব গালে।তখন বুঝবেন আমরা কতটা ভদ্র।”
মুহুর্তেই ঠা’স করে থাপ্পড় লাগালো পাভেলের গালে।মাথায় বজ্রপাত পড়লো পাভেলের।যেন সে স্বপ্নে আছে।এমন রিয়াকশন মোটেও আশা করে নি সে। ছলছল চোখে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে তাকিয়ে রইলো স্পর্শীর দিকে।দুহাত দিয়ে মুখ চেপে হেসে দিলো পিয়াস।এখানে অন্যকেউ হলে কথা ছিলো,কিন্ত থাপ্পড় পাভেল ভাই খেয়েছে এতে সে ভীষণ সন্তুষ্ট। এইতো কিছুক্ষণ আগেই তাকে ব্যঙ্গ করে বলেছিলো, মেয়েদের হাতে মার খেয়েছিস,এটা বড় লজ্জার বিষয়।এবারে নিজেই সেই লজ্জার সম্মুখীন হলো।

পিয়াসের উপর থাকা সমস্ত রাগ পাভেলের উপর ঝেড়ে স্পর্শী বললো,
“এই,আপনাকে কে ডেকেছে?আপনি মাঝখান থেকে উঠেছেন কেন?আমি কথা বলছি এই দুই ভাইয়ের সাথে।আপনি নাক গলালেন কেন?সেক্রেটারি, সেক্রেটারির মতো থাকবেন।”
“ও আমার নিজের ভাই।”-রাগের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে নিজেকে কন্ট্রোল করে পরশ বললো।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল স্পর্শী।তিন ভাইয়ের দিকে চোখ বুলিয়ে তিনটে আঙুল দেখিয়ে বললো,

” অ্যাঁ!তিনটা”””।এত্তোগুলো কেন?মুহুর্তেই নিজেকে সামলে আবারো বললো,”না মানে?আমার মিস্টেইক হয়ে গেছে।”
এরপর পাভেলের দিকে তাকিয়ে বললো,”হ্যাঁ, আপনার ও কথা বলার অধিকার আছে।বলুন, কি বলবেন?”
এ যেন এক কড়াই গরম তেলের মধ্যে এক ফোটা পানির ছিটে পড়লো।আশেপাশের কিছু উৎসুক ছাত্রীর দিকে তাকালো পাভেল।কেউ কেউ হাসছে।নিশ্চয়ই তার থাপ্পড়ের বিষয় নিয়ে।পরশের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।তাকে থাপ্পড় মেরেছে;কোথায় সবাই এই বিষয়ে লড়বে ;তা না, সবাই ঘোরের মধ্যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রাগে হনহন করতে করতে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।তেজ নিয়ে দরজা মেলে ভেতরে ঢুকে ঠা’স করে লাগিয়ে দিলো।

সেদিকে একবার তাকিয়ে আফসোস করলো স্পর্শী।আহারে!বেচারা শুধু শুধু’ই থাপ্পড় টা খেলো।কিন্তু এতে স্পর্শীর ও সব দোষ নেই।কেন ওই ছেলে রাগের সময়েই তার সামনে এলো।তার উপর তাকে দু-চারটা থাপ্পড় মারার ও হুমকি দিয়েছে।কম সা্হস!নাহ,মেরে ঠিক’ই করেছে সে।একটা থাপ্পড় অবশ্যই প্রাপ্য।তারপর হাতের ঘড়ির দিকে তাকালো।সন্ধ্যে হয়ে এলো প্রায়।তাড়া দেখিয়ে পরশের দিকে তাকিয়ে বললো,
“শুনুন এমপি সাহেব।যা হয়ে গেছে এই পর্যন্ত’ই।আপনার ভাইকে সাবধান করে দেবেন। এই সব ছুকছুকানি স্ব ভাব পাল্টাতে বলবেন।না হলে এবার তো আমি,এর পরের বার পুরো ভার্সিটির সব মেয়েরা মিলে পেটাবে ওকে।যাই হোক,

এরপর আর কোনো ঝামেলা করার চেষ্টা করবেন না।আমার এইসব ঝামেলায় জড়াতে ভালো লাগে না।এমনিতেও আমি ভীষণ শান্ত এবং শান্তিপ্রিয় মেয়ে।এইসব ঝুট ঝামেলা থেকে একশোহাত দূরে থাকি।মনে রাখবেন।”
কথাগুলো বলেই হাটতে শুরু করলো গেটের দিকে।দু-পা হেটেই আবারো পেছনে চলে এলো।হাতের তালু চুলকাতে চুলকাতে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বললো,
“এই শুনুন,আপনি তো এখনো চুল কাটেননি।তার মানে আমি আপনার কাছে এখনো একশো টাকা পাই।দ্রুত দিয়ে দিন।এখান থেকে রিকশায় উঠবো।”
চোয়াল শক্ত করে ফেললো পরশ।ত্রস্ত পায়ে স্পর্শীকে অবজ্ঞা করে চলে গেল গাড়ির দিকে।হা হয়ে গেল স্পর্শী।চেঁচিয়ে উঠে বললো,

“আরে,আরে,আরে;আপনি তো অনেক কৃপণ।আমি সেদিন আপনাকে হেল্প করলাম।আর এখন আপনি আমার টাকা মেরে খাচ্ছেন।আমার পাওনা আমাকে ফিরিয়ে দিন।দ্রুত!”
গাড়ির ভেতরে ঢুকতেও আবার বেরিয়ে এলো বাইরে।দুপা সামনে এগিয়ে স্পর্শীর কাছে গেল।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৯

“কিসের টাকা?উলটো আমি আরো সাড়ে চারশো টাকা পাই তোমার কাছে।আসার দিন মনে আছে;মাথা ফাটিয়েছিলে?ওর চিকিৎসা কে করেছিলো?পুরো সাড়ে ছয়শো খরচ হয়েছে।দুশো মাইনাস গেলে আরো সাড়ে চারশো পাই আমি।এক্ষুণি দাও। দ্রুত!”
এ যেন মাইনকার চিপায় পড়লো স্পর্শী।আশেপাশে তাকিয়ে হুট করে চিৎকার মেরে বললো,
“কানে কানে বলছেন কেন?জোরে বলুন না। সবাই জানুক আপনি কেমন এমপি।একটু ডাক্তার দেখিয়েছেন এতেই এতো খোটা দিচ্ছেন।আসছে নেতা আমার।এ নাকি আবার জনসেবা করবে?হুহ।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৯ (৩)