রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৬০
সিমরান মিমি
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার মতো থমকে দাঁড়িয়ে রইলেন শামসুল।তার দৃষ্টি এখন স্পর্শীর হাতের দিকে।আর এই আশ্চর্যের চাহনি শুধু তার নয়;পুরো ড্রয়িংরুম জুড়ে সবাই হতবাক।পিপাসা দ্রুত ছুটে এলেন মেয়ের কাছে।হাত দুটো ধরে বারংবার চুড়ি এবং স্বামীর মুখশ্রীর দিকে তাকাচ্ছেন।এই ঘটনা পুরোটাই কল্পনাতীত ছিলো।তিনি ভেবেছিলেন ছোটমেয়েকে দেখতেই হয়তো সবাই এসেছেন।কিন্তু তাদের মনোবাসনা যে অন্যকিছু ছিলো এটা ক্ষুনাক্ষরেও টের পাওয়া যায় নি।
সোভাম রাগে থর থর করে কাঁপছে।এটা যদি অন্যকোথাও হতো তাহলে নিজের সমস্ত রাগ উগড়ে দিয়ে আসতো।কিন্তু আফসোস!নিজ বাড়িতে বাইরের মানুষকে অপমান করা কাপুরুষতার শামিল।তার উপর বাবা উপস্থিত।এছাড়া এ বাড়ির একটা মেয়ে ইতোমধ্যেই তাদের বাড়ির বউ।এমনকি সন্তানসম্ভবা।কি করে এই অপমানের জবাব দেওয়া যায়?ভেবে পেল না কিছু।সকল রাগ প্রকাশের আগে মস্তিষ্ক ভর্তি প্রশ্ন গুলো জড়ো হয়ে দাঁড়াচ্ছে।এই প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে কিছুতেই পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।কিন্তু বেশিক্ষণ এই প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হলো না।এর আগেই শামসুল সরদার ক্ষিপ্ত পায়ে এগিয়ে গেলেন বড় মেয়ের দিকে।ক্রোধান্বিত হয়ে আক্রোশ নিয়ে খুলে ফেললেন চুড়ি।ছুঁড়ে মারলেন ফ্লোরে।স্পর্শী এখনো নিরব।তার থেকে কোনোরুপ হ্যাঁ বা না ইশারা পাওয়া গেল না।বড়জোর পুরো ঘটনাটাতে তাকে এক মামুলি দর্শক মনে হচ্ছে।পুতুলের মতো তাকিয়ে বাকি সবার রিয়াকশন হজম করছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
চুড়ি জোড়া ফ্লোরে পড়ার সাথে সাথেই শব্দ হলো।ভেঙে যাওয়ার নয়;স্বর্ণের সাথে টাইলসের সংঘর্ষের শব্দ।হতবাক হয়ে গেলে আলতাফ শিকদার সহ বাকিরা।ক্রুদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন আমজাদ।দৃষ্টি তার রক্তবর্ণ, চোয়াল তার শক্ত।হাঁক ছেড়ে বললেন,
_”আপনার সাহস হয় কি করে,আমার স্ত্রী’র দেওয়া চুড়ি মাটিতে ছুঁড়ে মারার?নিজের মেয়ের জন্য কোন মহাপুরুষ আনবেন?আমার ছেলের জন্য প্রস্তাব নিয়ে এসেছি এটা তো সরদার বাড়ির সাত পুরুষের ভাগ্য।মেয়েদেরকে ইচ্ছে করে আমার ছেলেদের পিছনে লেলিয়ে দিয়ে এখন সাধু সাজা হচ্ছে।নেহাত ছেলের অনুরোধ;না হলে সরদার বাড়ির দুয়ারে আমজাদ শিকদারের জুতোও পা ফেলতো না।”
ঘটনা বেগতিক। শামসুল সরদার নিজেও ক্ষেপে গিয়েছেন।দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা একপর্যায়ে রনক্ষেত্রে রুপ নিয়েছে।তবে এখানে তলোয়ারের যুদ্ধ নয়,বিষবানের যুদ্ধ।একেক জন্য তার মুখ থেকে বিষাক্ত তীরের মতো তীর ছুঁড়ছেন অন্যকে।আর মুহুর্ত ও ব্যয় করলো না পাভেল।দ্রুত মাকে ধরে ওঠালো।চাচ্চুকে বলে বাবাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বললেন।যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালেন আমজাদ। ক্রুদ্ধ কন্ঠে আর্শির উদ্দেশ্যে বললো,
_”এই মেয়ে, তুমিও এক্ষুণি আমাদের সাথে যাবে।আমার বাড়ির বউ,আমার বংশধর কখনো সরদার বাড়িতে থাকবে না।”
আর্শি ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকালো।এরপর মাথা নিচু করে দু-কদম সামনে এগিয়ে গেল।এরমধ্যেই হাত ধরে বসলেন শামসুল।হাঁক ছেঁড়ে বললেন,
_”আর্শি আমার মেয়ে।আমার মেয়ে আমার বাড়িতে থাকবে।আমার অনুমতি ছাড়া ও এক পা ও নড়বে না এখান থেকে, সেখানে শিকদার বাড়িতে যাওয়া তো কল্পনামাত্র।”
কেঁপে উঠলো আর্শি।চোখ নামিয়ে স্নিগ্ধ চাহনিতে তাকালো বাবার হাতের দিকে।ওই হাতটা, ওই আঙুলগুলো তার হাত টাকে বাচ্চাদের মতো মুঠোভর্তি করে রেখেছে।এ যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি। পাভেলের ডাক শুনতেই সেদিকে তাকালো আর্শি।এই মুহুর্তে কান্না পাচ্ছে ভীষণ।কি করা উচিত তার?করুণ দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকালো।স্পর্শী শান্ত চোখে না স্বরুপ ইশারা দিলো।উত্তর পেয়ে গেছে আর্শি।ঢোক গিলে পাভেলের উদ্দেশ্য বললো,
_”আমি কিছুদিন আব্বুর কাছে থাকবো।”
বলে নিজেও বাবার হাতটাকে ধরে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।গর্বে বুক ফুলে উঠেছে শামসুল সরদারের।এক অজানা জয় তাকে অদ্ভুত এক প্রশান্তি দিচ্ছে।এ যেন অমূল্য রত্ন পাওয়ার আনন্দ।আমজাদ শিকদারের বিপরীতে জিতেছে সে।হ্যাঁ,আমজাদ শিকদার পরাজিত হয়েছে।তার কাছে।এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে?”
দাঁত কটমট করে পাভেলের দিকে তাকালেন আমজাদ।এরপর ক্রুদ্ধ চোখে হনহন করে বেরিয়ে গেল ড্রয়িংরুম থেকে।তার পিছু পিছু বাকিরাও চলে গেলেন।ড্রাইভার ফল-মিষ্টির প্যাকেট দিয়েই আবার গাড়ির কাছে চলে গেছিলেন।পরশ এই মুহুর্তে বিশাল ভাবনার মধ্যে নিমজ্জিত।একবার মনে হচ্ছে বাবা-মায়ের সাথে ভেতরে না গিয়ে বোকামি করছে।আবার মনে হচ্ছে নাহ,কাজটা সঠিক ছিলো।শামসুল সরদার তাকে দেখলেই রেগে যেতেন।ভাবনার মধ্যেই ঠাস করে দরজা খোলার আওয়াজ হলো। কোনো টু শব্দটিও করলো না কেউ।গাড়িতে উঠেই বাড়িতে যাওয়ার জন্য আদেশ করলেন আলতাফ।পরশ বাবাকে কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়াস করতেই তাকে ইশারায় চুপ থাকতে বললেন চাচা।
সোভাম একদৃষ্টিতে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে আছে।হুট করেই এমন মৌনতা ভীষণ ই সন্দেহ জনক ঠেকছে।কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো,
_”যখন তোমাকে চুড়ি পড়াচ্ছিলো তখন তাকে বারন করো নি কেন?”
চমকে তাকালো সবাই।স্পর্শী গা ছাড়া ভাবে জবাব দিলো,
_”আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি নি কোন উদ্দেশ্যে আনটি চুড়ি টা পড়াচ্ছেন।”
বিরক্ত হয়ে আরেকদিকে তাকালো সোভাম।স্পর্শীর এই উত্তর মোটেই তার পছন্দ হয়নি।সেখানে বিশ্বাস হওয়াটা তো বিলাসিতা।কিছু জিজ্ঞেস করেও কাজ হবে না।কারন ইতোমধ্যে সে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেছে।পুরো বাড়িটা কেমন পানসে লাগছে।হুট করেই কেমন পরিস্থিতি পালটে গেল।বিরক্ত হয়ে কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলো সোভাম।আর্শি এখনো বাবার হাত ধরে আছে।শামসুল সরদার মেয়ের দিকে তাকালেন।এরপর কিছু না বলেই হাত ছেড়ে রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেল।পিপাসা হতাশ হলেন মেয়ের দিকে তাকিয়ে।কাছে গিয়ে শাসিয়ে বললেন,
_”এই তোর কি আদৌ কোন বোধ-বুদ্ধি আছে?কেন গেলি না?তোর বাবা তো এমনিতেই রাগ করে ছিলো তাহলে কি দরকার ছিলো ওদেরকে আবার রাগানোর?এরপর জামাই তোর খোঁজ না নিলে কি করবি?তোর শশুর ও তো আর মেনে নিবে না।এমন বোকামি কেন করিস তুই?”
আর্শি এ পর্যায়ে চিন্তিত হলো।হাঁসফাঁস করতে করতে বললো,
_”আম্মু আমি বুঝতে পারি নি।আপু বারন করলো যেতে, তাই আর….”
ফুঁসে উঠলেন পিপাসা।দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
_”তোর আপুই তো যত্ত নষ্টের গোড়া।আমি যাচ্ছি ওর কাছে।”
সিঁড়ির দিকে এগোতেই ফ্লোরে পড়ে থাকা চুড়ি জোড়ার দিকে নজর গেল।সেটাকে সযত্নে হাতের মুঠোতে নিয়ে ত্রস্ত পায়ে উপরের দিকে চললো।চাপানো দরজাটাকে ধাক্কা দিয়ে খুললো।হুট করেই এমন শব্দে চোখ খুললো স্পর্শী।আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো এতোক্ষণ।মাকে দেখতেই উঠে বসলো। ক্লান্ত কন্ঠে বললো,
_”এতো জোড়ে আওয়াজ করছো কেন?আশ্চর্য!”
_”এই একদম ঘুমের ভান ধরবি না।সোজা হয়ে বস।আমার কথার উত্তর দে।নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
_”যা বলার পরে বলো।আমার এখন ভালো লাগছে না।”
_নাহ!তা ভালো লাগবে কেন?পুরো পরিবার দুটোর মাঝখানে ঝামেলা পাঁকিয়ে এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাবি।এই তুই চাস টা কি?মেয়েটার বাচ্চা হবে দুদিন পর।এখনো তোর জন্য দুদিন পর পর ওর শশুরবাড়িতে ঝামেলা বাঁধছে।তুই কি ছোট বোন টাকে একটু সুখে-শান্তিতে থাকতে দিবি না নাকি?”
_”আশ্চর্য! আমি কি করেছি?তুমি আমার সাথে এমন রাগ দেখাচ্ছো কেন মা?
শান্ত হলো পিপাসা।মেয়ের পাশে বসে বেশ কিছুক্ষণ চুপ রইলো।এরপর বললো,
_”তুই কি চাস?আমাকে কি একটু সত্যি করে বলবি?”
রিয়াক্ট করলো না স্পর্শী।উদাস কন্ঠে বললো,
_”কোন বিষয়ে?”
_”দেখ,তোর ভাইকে যে অজুহাত দেখিয়েছিস সেটা আমাকে ভুলেও দেখাতে আসবি না।আচ্ছা,তুই কি পরশ কে পছন্দ করিস?যদি ওদের দেওয়া প্রস্তাবে তুই রাজি না’ই হোস তাহলে চুড়ি পড়লি কেন?আর যদি রাজি থাকিস’ই তাহলে এতোকিছু হতে দিলি কেন?তুই জানিস শশুড়বাড়ি থেকে নতুন কোনো গয়না পড়িয়ে দিলে সেটা খুলতে হয় না।এতে মেয়ের গায়ে কলঙ্ক লাগে।বিয়েতে বাঁধা পড়ে।স্বামীর অমঙ্গল…..”
কথা শেষ করতে দিলো না স্পর্শী।এর আগেই লজ্জায় নুয়ে পড়ে হেসে দিলো।বললো,
_”মা প্লিজ!তুমি কি একটু থামবা।কেউ শুনলে কি ভাববে।আর বিয়েরই ঠিক নাই তুমি স্বামীর অমঙ্গল পর্যন্ত চলে গেছো।”
পিপাসা পরবর্তী ধাপ এগিয়ে গেল।গাঢ় সন্দেহকে পিছু হটিয়ে এ পর্যায়ে তিনি নিশ্চিত হলেন।শান্ত কন্ঠে বললেন,
_”যদি পছন্দ’ই করিস তাহলে সেটা এখনো বলছিস না কেন?তুই তো ছেলেটাকে ঝুলিয়ে রাখছিস।না তুই নিজে বিয়ে করছিস,আর নাতো ওকে বিয়ে করতে দিচ্ছিস।এমনটা করছিস কেন মা?তোর বোনটা তো ওই সংসারেই আছে।তুই কি বুঝতে পারছিস এই প্রভাব গুলো সব ওর উপর পড়বে?
সিরিয়াস হলো স্পর্শী।গম্ভীর কন্ঠে বললো,
_”তুমি কি মনে করছো আমি বললেই সব সমাধান হয়ে যাবে?আর মা শোনো,ওরা বোকা নয় যে আমার জন্য আমার বোনকে অবহেলা করবে।”
_”হ্যাঁ, তুই বললেই সব সমাধান হবে।তুই একটা মাথা ঠান্ডা করে নিজের পছন্দের কথা তোর বাবাকে জানা।বলে তো দেখ,অন্তত তোর বাবা যাতে বুঝতে পারে এই সম্পর্কে তোর সায় আছে।”
ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো স্পর্শী। মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
_”এই একমিনিট মা।তুমি এতো ঘটকালি করছো কেন ওদের হয়ে?যেন আমার আগে তোমার তাড়া।”
_”ছেলেটাকে আমার পছন্দ।খুবই ভালো ছেলে।আর আর্শিটাও ওই বাড়িতে আছে।তোরা দুবোনে এক বাড়িতে থাকলে আমি একদম নিশ্চিন্ত থাকবো। ”
পড়ন্ত বিকেল। দীপ্তিময় সূর্যের সোনালী আভা ছড়িয়ে পড়েছে প্রকৃতির মায়াবি মুখে। এই স্নিগ্ধ বিকেল তার কাছে পরম প্রিয় মুহূর্ত। বসে আছে জানালার পাশে। বসে থেকে থেকে এক সময় ছাদে চলে গেলো। চেয়ার টেনে বসে পড়ল। ছাদের গা ঘেঁষে কয়েকটা সুপারি গাছ, বাতাসে দোল খায় তার বাড়ন্ত পাতা। মাথার উপর একঝাঁক অচেনা পাখি মিষ্টি মধুর কলরবে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে কোথাও।অন্যমনস্ক হয়ে দুরের ওই আকাশ দেখতে ব্যস্ত স্পর্শী।এদিকে প্রায় তিনবার রিং পড়ে গেছে।চতুর্থ বারের মতো বাজতেই হুশ ফিরলো তার।দ্রুত ফোন হাতে নিলো।স্ক্রিনের উপর জ্বলজ্বল করছে পরশ শিকদারের নাম্বার। স্পর্শী কিছুটা বুঝতে পারলো।এই কল আসার পেছনের উদ্দেশ্যে তার জানা।বরং সকাল শেষ হয়ে এই বিকালে কেন আসলো এটা নিয়েই চিন্তিত ছিলো।রিসিভড করে কানে তুলে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ঝাঝালো স্বর ভেসে এলো।
_”ফোন ধরছিলে না কেন হ্যাঁ?কানা তুমি?শব্দ শোনো না?একশোবার দেওয়া লাগবে?নাকি ইগ্নোর করে মজা উড়াচ্ছো?শোনো স্পর্শীয়া,তুমি যদি ভেবে থাকো আমি তোমার উপর খুব বেশীই দুর্বল তাহলে এটা তোমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল।কি ভেবেছো?আমি ছ্যাঁচড়া!তুমি যেভাবে ঘোরাবে, সেভাবে ঘুরবো? শোনো,ভালো লেগেছে বিয়ে করতে চাইছি।রাজী থাকলে করবো, না হয় না।মেয়ের অভাব পড়েনি। তুমি তো সকালে সামনেই ছিলে।তাহলে কিভাবে তোমার বাবা আমার মাকে অপমান করলো?তখন কিছু বলতে পারলে না।এমনিতে তো মুখ জিরোয় না।তখন কি করছিলে?নাকি নিজের পরিবার দেখে চুপ করে মজা নিচ্ছিলে?”
_”আপনি শুধু শুধু আমার উপর রাগ ঝাড়ছেন।পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিলো না বলেই চুপ করে ছিলাম।তাই বলে যে এখনো চুপ থাকবো এমনটাতো আর না।”
শান্ত হলো পরশ।এরপর গম্ভীর কন্ঠে বললো,
_”আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি তোমার পরিবার কে মানিয়ে সামাজিক ভাবে সম্মানের সাথে বিয়েটা করতে।বার বার বেহায়া হয়ে নিজে ছুটে গেছি,পরিবারকে পাঠিয়েছে।শুধুমাত্র এটুকু চেয়েছি যে কষ্টটা তোমার বাবা তার ছোট মেয়ের থেকে পেয়েছে, সেটা যেন তোমার থেকেও না পায়।কিন্তু বিশ্বাস করো,আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।আর পারবো না ছোট হতে।এবার সিদ্ধান্ত তোমার হাতে।আমি কখনো তোমায় জোর করবো না।যদি মনে হয় এই মানুষ টাকে তোমার লাগবে তাহলে নির্দিধায় চলে আসবে।আর যদি তা না পারো তাহলে জানিয়ে দেবে।আমি আর তোমার অপেক্ষায় থাকবো না।
থেমে,
তবে হ্যাঁ, মাত্র দুদিন। এরমধ্যেই সিদ্ধান্ত নাও।হয় কোর্ট ম্যারেজ করবে, আর না হয় জানানোর প্রয়োজন নেই।আমি বুঝে নেব।”
কেটে দিলো ফোন।স্পর্শী উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘের দিকে।সবকিছু কেমন ফিঁকে লাগছে।হ্যাঁ, সে চাইলেই বাবাকে বলতে পারে।কিন্তু মানুষটা যে মাত্রই সুস্থ হলো।এরমধ্যে আবার একটা মানসিক চাপ।আজ আর্শি না যাওয়ার আনন্দ সে বাবার চোখে স্পষ্ট দেখেছে।এখন যদি সে নিজেও যাওয়ার কথা বলে, তাহলে যে বাবার সেই আনন্দ টা আবারো পরিণত হবে বিষাদে।
রাত এগারোটা।সময়টা খুব বেশি নয়।এখনো বাড়ির কেউই ঘুমায়নি।মেঝো চাচির রুমে পিপাসা এবং আর্শির আড্ডা চলছে।বাকিরা যে যার মতো রুমে ব্যস্ত।স্পর্শী বেলকুনি থেকে রুমে আসলো।আজকে সম্ভবত পূর্ণিমা।চাঁদের ওই বড় ফালিটা সন্ধ্যার সাথে সাথে দেখতেই পিপাসা তাকে শাসিয়ে গেছে।বলেছে,
_”একদম রাত-বিরেতে বাইরে নামবি না।আজকে পূর্নিমা।নজর লাগবে।”
মায়ের কথাকে সম্পূর্ণ রুপে অগ্রাহ্য করে এতোক্ষণ বেলকুনিতে বসে ছিলো সে।হাতে এখনো পিয়াশার দেওয়া চুড়ি।না পড়লেও মুঠোতে রেখে দিয়েছে।অনেক ভাবনা-চিন্তা করার পর পা বাড়ালো বাবার কক্ষের দিকে।সম্পুর্ন রুপে সাহস সঞ্চয় করে তার দরজায় টোকা দিলো।স্পর্শী পরবর্তী ঘটনা নিয়ে নিশ্চিত।কথাগুলো বলার পর দু ধরনের রিয়াকশন হবে।হয় বাবা হুঙ্কার তুলে সারা বাড়ি মাথায় তুলবে।আর নাহয় একদম চুপ হয়ে যাবে।রুমটাকে একাকী অন্ধকার করে বিষাদে ছেঁয়ে ফেলবে নিজেকে।স্পর্শী খুব করে চায় প্রথম টা ঘটুক।বাবা তার উপর চড়াও হোক,মারুক,বাড়ি থেকে বের করে দিলেও দিক।কিন্তু নিজেকে একা করে যেন না ফেলে।এটা মৌন প্রতিশোধ হবে তার বিরুদ্ধে।আর এই মৌনতা সহ্য করার শক্তি যে স্পর্শীর নেই।
শামসুল দরজায় টোকা শুনতেই উঠে বসলো।তার ধারনা এই মুহুর্তে দরজার সামনে আর্শি দাঁড়িয়ে।এর আগেও কয়েকবার আর্শিকে দরজার সামনে ঘুরঘুর করতে দেখেছে।কিন্তু সে টোকা মারার সাহস করতে পারেনি।নিশ্চয়ই সকালে হাত ধরার পর হয়তো একটু সাহস সঞ্চয় করেছে।গম্ভীর কন্ঠে বললো,
_”ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?ভেতরে আসো।”
ত্রস্ত পায়ে ভেতরে ঢুকলো স্পর্শী।মুহুর্তেই হতাশ হলো শামসুল।বললো,
রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫৯
_”ওহ!তুমি।”
কোনো উত্তর দিলো না স্পর্শী।এগিয়ে গিয়ে বাবার পাশে বসলো।কিছুক্ষণ নিরব থেকে হাতের চুড়িজোড়া বের করে বাবাকে দেখালো।বললো,
_”এগুলো কি কাল ফেরত দিয়ে আসবে?নাকি রেখে দেব?”