সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৫১
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
শাফিন কেশে-টেশে একাকার। বুকের শ্বাস জোরালো। হিঁসহিঁস শব্দ হচ্ছে তাতে। চোখমুখ লাল। কোটর থেকে পানি পড়ে গলা ভেজার দশা। কাশির সাথে মুখ থেকে লালা বের হতে দেখে বন্ধুরা আরো উতলা হয়ে পড়ল। এইতো সারাদিন ছেলেটা ভালো ছিল! গিটার বাজাচ্ছিল,আড্ডা দিচ্ছিল। হুট করে এমন করছে কেন?
তীব্র ছুটে এসে পাশে বসল। মুশফিক কে বলল,
“ হাসপাতালে নিতে হবে। জিপ বার কর।”
শাফিন কাশতে কাশতে কিছু বলতে চায়। কিন্তু মুখ থেকে কথা ফোটে না। বন্ধুরা তার কথা শোনার অপেক্ষাও করল না। গাড়ি বের করতেই,
চারজন চার হাত পা ধরে রওনা করল হাসপাতালের পথে।
পুষ্পিতা,নূহা দুজনেই শঙ্কায় কাঠ। কী থেকে কী হয়ে গেল! আরমানও আয়েশাকে নিয়ে নেমে এসেছে। সেও দৌড়ে যাচ্ছে বাকিদের সাথে।
আয়েশা সেদিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন। হুট করে বুকের ভেতর কিছু একটা কামড়ে ধরল । মনে হচ্ছে এত সুখের মাঝে এক চোট ভয়ানক অসুখের বৃষ্টি আসবে। যার তোড়ে ভেসে যাবে সাজিয়ে রাখা সব কিছু।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শাফিনকে হাসপাতালে নেয়ার সারাদিন কেটেছে। দুপুর গড়িয়ে এখন প্রায় রাতের প্রহর। অথচ এতটা সময়েও
তীব্রদের কারোর কোনো খবর নেই। পায়চারি করতে করতে নূহা অনেকবার নাহিদের নম্বরে ডায়াল করল। তীব্রকেও কল দিলো। কিন্তু ওপাশ হতে কারোর সাড়া এলো না।
পুষ্পিতার ফরসা মুখ ফ্যাকাশে। আলো-বাতাসে ভরা বাড়িতেও ঘেমে চটচট করছে শরীর।
সালমা বেগম রাহাতকে নিয়ে সূর্য থাকতেই পৌঁছেছেন।
তিনি কেবল শুনেছেন পুষ্পিতার স্যারের বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আয়েশা এখনও সবিস্তারিত কিছু জানাননি। মেয়েদুটো চিন্তায় মরছে,এমন মুহুর্তে খুশির খবর তিনি বলবেন কোন মুখে!
পুষ্পিতা অধৈর্য হয়ে উঠে দাঁড়াল। নূহার ফোনকল তীব্র ধরছে না দেখে ভাবল, সরাসরি হাসপাতালে চলে যাবে। দূরের পথ হলেও, যাবে। মানুষটার খোঁজ নেই, ও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারবে কখনো?
পুষ্পিতা
ব্যগ্র চিত্তে হাঁটতে থাকা নূহার কাছে এলো।
কথা তুলতে যাবে,তক্ষুনি দরজায় শব্দ হয়। কেউ এসেছে! করাঘাতের উচ্চ ধ্বনি স্পষ্ট।
দুই তরুণীর দুশ্চিন্তায় বুঁদ মুখবিবরে আশার পদ্ম ফুটল অমনি। শুধু কি ওরা? আয়েশা নিজেও ভেতরের ঘর হতে ত্রস্ত বেরিয়ে এলেন।
পুষ্পিতা উড়ে গিয়ে দরজা খুলল। ওপাশে অবসন্ন নাহিদ,তীব্র দুজনেই দাঁড়িয়ে। বাকিরা নেই।
ওর আগেই নূহা হড়বড় করে বলল,
“ কী ব্যাপার, ভাইয়া? এতবার ফোন করলাম রিসিভ করলেন না !”
“ ফোন করেছিলে?”
তীব্রর ভাবমূর্তি এমন,যেন জানেই না কিছু। নিশ্চিত হতে পকেট হাতিয়ে ফোন বের করল। স্ক্রিনে একবার চোখ বুলিয়ে বলল,
“ ওহ,সাইলেন্ট ছিল। শুনতে পাইনি।”
নূহার রাগ হোলো। তারা এখানে অস্থিরতায় কুপোকাত,পুষ্পিতাটা তো আরেকটু হলে অজ্ঞান হয়ে যেতো। আর ওনারা কী না ফোন সাইলেন্ট করে ঘুরছে?
মেয়েটার পুরো ক্ষোভ গিয়ে বর্তাল নাহিদের ওপর। খ্যাক করে বলল,
“ আপনার ফোন কোথায় ছিল? তোলেননি কেন?”
ছেলেটা মাথা চুলকায়। মিনমিন করে,
“ না আসলে ঐ…”
“ কী না মানে ঐ শুনি? এদিকে যে এতগুলো মানুষ চিন্তা করছে আপনার কোনো হুশই নেই।”
মেয়েলি ধমকে বেচারার মুখটা শুকিয়ে যায়।
আয়েশা মুখ খুললেন এবার।
মেয়েকে পালটা ধমকে বললেন,
“ আহ,চুপ করতো তুই!
আমাকে কথা বলতে দে। তা হ্যাঁ বাবা,তোমাদের বন্ধু এখন কেমন আছে?”
নাহিদ বলল,
“ ভালো আছে, আন্টি। এইতো বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই এলাম।”
“ কী হয়েছিল ওনার?”
পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করল।
নাহিদ একটু ভাবুক হয়ে বলল,
“ ব্যাপারটা একটু কনফিউজড, বুঝলে।
ডাক্তার বলছে এলার্জির জন্যে এই অবস্থা। কিন্তু শাফিনের শুধু চিংড়িতে এলার্জি। ওতো চিংড়ির আশপাশও মাড়ায় না। মিরাজরাও একই কথা বলছে। আজকে তো দূর, গত তিনদিনেও ওরা বাসায় কোনো চিংড়ি টিংড়ি ঢোকায়নি।
কী যে হয়েছিলো, কিছুই বুঝতে পারছি না।”
রাহাত ঘুমিয়ে পড়েছে। গরমের বিরাট জার্নিতে সারারাস্তা বমি করেছে ছেলেটা। ছোট্ট মানুষ কাহিল এখন। সালমা ঘরের বাইরে এসে দরজা ভিজিয়ে দিলেন। পাছে শব্দ শুনে উঠে না যায়!
ওনাকে দেখেই তীব্র সালাম দিলো আজ।
ভদ্রমহিলার বিস্ময়ে বিষম খাওয়ার যোগাড় হলো তাতে। গতবার মুখের ওপর কেমন খ্যাকখ্যাক করে জবাব দিয়েছিল ছেলেটা! কর্কশ ভাষায় বলেছিল,
“ আপনার ধন্যবাদ আপনার কাছে রাখুন।”
আজ আবার কেমন মুহুর্তেই ভদ্র হয়ে গেল। বিহ্বলতার ধাত সামলে নিলেন তিনি। হেসে বললেন,
“ ওয়ালাইকুমুস সালাম। ভালো, ভালো আছেন?”
“ আমি আপনার ছেলের বয়সি। আমাকে তুমি করে বলবেন।”
সালমা প্রসন্ন হলেন একটু। আয়েশা এমনিতেই গতবার তীব্র-নাহিদ দুজনেরই খুব প্রসংশা করেছিলেন । তার সাথে আজকের হিসেব যেন কাটায় কাটায় মিলল।
নাহিদের চোখ পড়ল দেওয়াল ঘড়িতে। চোখ কপালে তুলে বলল,
“ এই রে! নয়টা বেজে গেছে? আমাদের ঘরের কোনো গোছগাছই হোলো না। কাল আমার অফিস আছে তো।”
পুষ্পিতা ছটফটাল জ্বিভের কথা খসাতে। মানুষ দুটো সকাল থেকে ওদের বাড়ি পালটানো নিয়ে এত খাটল,ওরা যদি একটু গিয়ে সাহায্য করে দেয়!
যদি মণি আর আন্টি একটু অনুমতি দিতেন!
তার উশখুশের মাত্রা হয়ত বুঝে নিলো নূহা। ওরও যে একই ইচ্ছে। নব্য প্রেমের বসন্তে যতটা সময় প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটানো যায়।
জ্বিভে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“ আম্মু! এত রাতে ওনারা কী থেকে কী করবেন,আমরা একটু সাহায্য করে দেবো?”
আয়েশা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়লেন। আগে হলে এমন হোতো কী না জানেন না। তবে ছেলেমেয়ে গুলো একে-অপরকে পছন্দ করে বসে আছে!
সব জানার পর এত রাতে মেয়েদুটোকে পাঠাতে মন খুঁতখুতঁ করছে তার।
সালমা তো ভেবেই ফেললেন আপত্তি করার কথা। স্যার হোক আর যাই হোক,পুষ্পিতাকে এই রাতের বেলা কারো ঘর গোছাতে পাঠাবেন না তিনি।
সবার সব প্রস্তুতিতে জল ঢালল ঐ একটা মানুষ। বলে দিলো এক কথায়,
“ না, দরকার নেই। আমাদের অল্প জিনিস,উই উইল ম্যানেজ!”
নাহিদও স্বায় মেলায়,
“ হ্যাঁ হ্যাঁ। আর এত রাত! এই সময় আপনাদের যাওয়াটা সবাই ভালো ভাবে নেবে না।”
উত্তর শুনে
ভীষণ খুশি হলেন আয়েশা। মুগ্ধতা আর তুষ্টতায় চকচক করল চোখদুটো। এই যে তিনি এক কথায় নাহিদ আর তীব্রকে দুই মেয়ের জন্যে মেনে নিলেন,
এক্ষুনিই যেন আরেকবার হাতেনাতে পেয়ে গেলেন কারণটা।
কিন্তু পুষ্পের ন্যায় কোমল তরুণীদের মন খারাপ হোলো। দুজন দুজনের দিক চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল একবার।
তীব্র-নাহিদ বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়। দরজা চাপিয়েই
আয়েশা মনে মনে কথা গুছিয়ে ফেললেন। আর এক মুহুর্তও দেরি নয়,এক্ষুনি সালমাকে ব্যাপারটা জানাবেন তিনি।
নূহার সিদ্ধান্ত নাহয় ওনার হাতে, কিন্তু পুষ্পিতা?
মেয়েটার সত্যিকার অভিভাবক তো সালমা বেগমই।
পুষ্পিতা একটা পরাস্ত নিঃশ্বাস নিলো।
তক্ষুনি ও ঘর হতে ফোন বাজল তার। বুকের মাঝে ধুকপুকে যে রেশ রংধনুর ন্যায় আকাশ পথে জেগেছে?
তার তোপেই সে বুঝে নিলো এখন কে ফোন করবে!
সবাইকে ছাপিয়ে ছুটে গেল মেয়েটা। স্বচ্ছ জলের বুকে নৌকা ভাসার মতোই তীব্রর নাম ভাসছে স্ক্রিনে।
ও ত্রস্ত তুলে কানে গুঁজল।
হাঁ করার আগেই তীব্র ঘোষণা করল,
“ কাল তোমাকে নিয়ে ঢাকায় যাবো। মা তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছেন।”
পুষ্পিতা চমকে বলল,
“ কাল?”
কাল কী করে হবে? না মানে,আন্টি অফিসে থাকলেও, মণি-রাহাত ওরা তো বাসাতেই আছে। কোথাও যেতে দেখলে মণি প্রশ্ন করবে,রাহাত সাথে যাওয়ার বায়না করবে। কী বলব আমি?”
ও যতটা উদ্বেগ নিয়ে বলল,ওপাশ থেকে উত্তর এলো ভ্রুক্ষেপহীন।
“ চিইল! এত প্যানিক কোরছো কেন?আমরা ভোরে যাব। তখন তোমার মণি কেন? আকাশের সূর্যটাও টের পাবে না।”
“ যদি ঘুম ভেঙে আমাকে খোঁজে?”
“ নূহাকে জানিয়ে রাখবে। ওর মাথায় যথেষ্ট বুদ্ধি আছে। ও কিছু একটা বলে দেবে সবাইকে। এখন ওসব ছাড়ো! শোনো আমার কথা,কাল মায়ের কাছে যাব। এরপর ফিরে এসে তোমার মণির কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখতে চাইছি।
পুষ্পিতার দুগালে পলাশ ফুটে উঠল।
মিহি গলায় বলল,
“ কখন যাব?”
তীব্রর বাঁকা উত্তর,
“ কেন? আমার কাছে আসার এত তাড়া?”
“ এ মা না..”
“ না মানে? আসতে চাও না?”
“ জি? চাই।”
তীব্রর কণ্ঠ পুরূ,
“ এই যে না বললে…”
পুষ্পিতা অসহায় কণ্ঠে বলল,
“ এমন ফ্যাসাদে ফেলছেন কেন? কটায় যাব বলুন না!”
“ ভোরে বললাম তো। তুমি তৈরি হয়ে থেকো,কাল দেখা হবে।”
তীব্র লাইন কেটে দিলো। পুষ্পিতা তাও নিশ্চিন্ত হতে পারল না। আয়েশা,সালমা দুজনেই ফজরের নামাজ পড়তে ওঠেন। আয়েশা আবার ঘুমালেও মণিতো ছাদে হাঁটাহাঁটি করে। পুষ্পিতা কী করে যাবে তখন!
মেয়েটা মুখ কালো করে ঘর ছেড়ে আসতেই পা দুটো থমকে গেল জায়গায়। সবাই কেমন আশ্চর্য চোখে চেয়ে।
কী অদ্ভুত চাউনী সবার!
সব মাড়িয়ে খটকা লাগল সালমার দৃষ্টিতে। এমন করে দেখছে কেন মণি?
পুষ্পিতা মিইয়ে গেল।
আড়চোখে নূহাকে দেখল এক পল। মেয়েটা দাঁত দিয়ে নখ খুটছে। চেহারায় ধরা পড়ার ভাব।
সালমা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“ কী হলো, ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? আয়।”
পুষ্পিতা ঘাবড়ে গেল আরো। এলো পিলপিলে পায়ে। মুখোমুখি দাঁড়াতেই সালমা শুধালেন,
“ তোর তীব্র স্যার নাকি তোকে বিয়ে করতে চায়?”
পুষ্পিতার বুকটা ছ্যাত করে ওঠে।
তড়িৎ নূহার পানে চাইল। ও দুহাত তুলে বলল,
“ আমি কিছু বলিনি। সব আম্মু বলেছে।”
পুষ্পিতার চোয়াল ঝুলে যায়।
আম্মু বলেছে মানে? আন্টিও জানেন না কি? হায় আল্লাহ,কীভাবে জানলেন!
ভয়ডরে এত গুলো প্রশ্ন তার জ্বিভে এলো না। মুখগহ্বরেই সমাধি নিয়ে ফেলল।
আয়েশা ঠোঁট চেপে হাসলেন। বললেন,
“ কী ভেবেছো? দুই বন্ধু এভাবে ডুবে ডুবে জল খাবে, আর আমি টেরও পাবো না? তোমরা আমাদের পেটে ধরেছো না কি আমরা, হ্যাঁ?”
পুষ্পিতার বুকে দামামার ধ্বনি স্পষ্ট। সংকেত বাজছে বিপদের।
আন্টি সব জেনে গেছে। দুই বন্ধু মানে,নূহার কথাও। জানবেইতো৷ লোকটা আজ যা সব কাণ্ড করল! কী দরকার ছিল অমন হাত ধরে ওকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার? পরপর নিজেই নিজেকে শাসাল পুষ্পিতা। ও কি কম বেহায়াপনা করেছে আজ?
তীব্র হাত পাতা মাত্রই তো নিজেও নাচতে নাচতে হাত এগিয়ে দিলো। ইস,মস্ত বড়ো ভুল হয়ে গেছে!
মেয়েটা ভয়ে ভয়ে সালমার দিকে চায়। রমণীর মুখ হাস্যহীন।
পুষ্পিতার মরুভূমির ন্যায় গলবিল আর সতেজ হলো না।
মণি কী তীব্র স্যার কে মেনে নেবেন? যদি না বলে দেয়!
তখন কী করবে পুষ্পিতা?
তীব্রকে ছাড়া কি ও বাঁচবে? আবার মণির অমতে পারবে ওনাকে বেছে নিতে!
এসব কথা প্রেমে পড়ার আগে কেন মাথায় এলো না ওর?
পুষ্পিতার হাত-পা থরথর করছিল। সেসময় সালমা কাছে এসে দাঁড়ালেন। জিজ্ঞেস করলেন সরাসরি,
“ তুই কি ওনাকে পছন্দ করিস?”
পুষ্পিতা চিবুক গলায় নিয়ে গেল। একটু করে মাথা নাড়তেই সালমা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
বললেন,
“ ওনার বাবা কী করেন?”
পুষ্পিতার বক্ষভাগ ধ্বক ধ্বক করে কাঁপছে। হৃদপিণ্ডের সরব গতি পরিষ্কার।
তীব্রর বাবার পরিচয় দিলেই যে মণি চিনে ফেলবে।
তার চুপসে থাকার মাঝে উওর দিলো নূহা। আমতাআমতা করে বলল,
“ ইয়ে, আন্টি ওনার বাবার পেশা দিয়ে কী হবে? বাবা যা মন চায় করুক না। না মানে, বিয়ে-সংসার সব তো ছেলের সাথে হবে, তাই না। দেখলেন তো, দেখতে শুনতে তীব্র ভাইয়া কত চমৎকার! আবার কলেজে পড়ায়। সম্মানীয় পেশা!
আপনি বাপকে ছাড়ুন, ছেলেকে দেখুন। পুষ্পিতার সাথে একশয় একশো মানাবে না বলুন? তাই আমি বলি কী, এত কিছু না ভেবে চলুন এক্ষুনি বিয়ের কার্ড ছাপাতে দিয়ে আসি।”
সালমা মৃদূ হেসে বললেন,
“ তা বললে কী হয় মা!
একটা বিয়ে তো আর একদিনের ব্যাপার না। এখানে সারাজীবন জড়িয়ে। আর এত তাড়াহুড়োই বা কীসের? সবে তো কথা উঠল। একটু ধৈর্য রাখো! কপালে লেখা থাকলে ঠিক হবে।
তারপর পুষ্পিতার দিকে ফিরলেন তিনি।
ভণিতাহীন বললেন,
“ দ্যাখ, মা! তোকে আমি পেলেপুষে বড়ো করেছি। তার মানে এই নয় যে, তোর পছন্দের ওপরেও আমার নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবো। আয়েশা আপার কাছে শুনলাম, তীব্রর কথা। আপা তো হীরের সাথে তুলনা করছেন। আমি সবে দুদিন দেখলাম, অমন চিনি না!
তবে আজ যা বুঝলাম তাতে খারাপ লাগেনি। তাও বিয়ের একটা ব্যাপারে হুট করে মত দেয়া যায় না। তোর মা আমাকে তোর দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। তাই তুই না চাইলেও তোর ওপর আমার কিছু কর্তব্য আছে।
তুই আমার ছোটো মেয়ে। মিথিলার বিয়েতে কত খোঁজ খবর নিলাম,কিন্তু দিনশেষে ছেলেটা বেরোলো লম্পট।
তোর বেলায় আমি কোনো ঝুঁকি নেবো না। সব বুঝেশুনে এগোবো। তীব্র শুনলাম ঢাকায় থাকে? আমাকে ঠিকানা দিতে বলিস। আমি বরং ঢাকায় গিয়ে ছেলেটার ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর নেবো।”
পুষ্পিতা ভেতর ভেতর আঁতকে উঠল। ঢোক গিলে চাইল নূহার দিকে।
নূহার দশাও তাই। দুজনেই বাসি মুড়ির মতো নেতিয়ে থাকেই।
তীব্রর ঠিকানা মানে মন্ত্রীর বাড়ি। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে যে কে,মণি তো জানে।
খোঁজ নিতে গেলেই তীব্রর সোনায় বাঁধানো অতীত বেরিয়ে আসবে। মণি যদি একবার শোনে বিট্টুই তীব্র।
সর্বনাশ!
সেই মাস্তান-বখাটে ছেলের সাথে ওর বিয়ে দেবে মণি? কক্ষনো সম্ভব তা!
উত্তেজনা আর ভয়! দুই মিলিয়ে পুষ্পিতার গোটা রাত অস্থিরতায় কাটল। চিন্তায় মাথা প্রায় পাথরের মতো ভারি! নূহা যা বলতে চেয়েছিল পারেনি। পুষ্পিতারও শোনার মন নেই।
তবে বিপত্তি বাঁধল আরেকদিকে। হুট করে পুষ্পিতা মুখ নাড়াতে পারছে না। দাঁতের মাড়ি সুদ্ধ কোথাও একটা ব্যথা। চাপা নাড়ানোরও জো নেই। মেয়েটা সেই অবস্থাতেই নতুন জামাকাপড় পরল।
আজকে ভাগ্য প্রসন্ন!
নতুন জায়গা বলেই হয়ত সালমা নামাজের পর আর ছাদের পথ ধরেননি। চুপচাপ আবার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েছেন। দৃশ্যটায় পুষ্পিতার বুকের দানবীয় পাথর যে কোথায় নেমে গেছে!
আয়েশাও উঠবেন আরেকটু দেরি করে। আর এই ফাঁকেই তাকে বের হতে হবে। মণি সজাগ হলে নূহা বলবে ও কলেজে গেছে।
তাকে সাহায্য করতে অত ভোরে মেয়েটাকেও উঠতে হলো।
পুষ্পিতা হবু শাশুড়ীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে, খবরটা পাওয়ার পর থেকেই আচমকা কেমন মুরুব্বি বনে গেছে নূহা। হাঁটাচলায়,ওঠা-বসায়
কতশত উপদেশ তার!
এই যেমন,
“ শোন,গিয়েই সালাম করবি। তোর যা গলার আওয়াজ,একটু জোরে স্পষ্ট ভাবে কথা না বললে কিন্তু ভাববে মেয়ে বোবা!
আর সব কথা অত মাথা নিচু করে বলার দরকার নেই। একটু চোখে চোখে তাকাস। ভাইয়া তো থাকবেন,বেশি মিনমিন করবি না। শাশুড়ী মানুষ! শুনেছি পৃথিবীতে দুটো জল্লাদ থাকে। একটা গলা কাটে ছুড়ি দিয়ে ! আরেকটা ছেলের বউকে কাটে কথা দিয়ে।
অবশ্য সবাই আবার এক না। তোর কপালে কোনটা পড়ে তাতো আর জানি না। তাই আগে থেকেই সাবধান করে দিচ্ছি!”
পুষ্পিতা দাঁতে ব্যথা নিয়েই মাথা নাড়ল। ওরা দোর খুলে রেখেছে। যাতে তীব্র এলেও কলিংবেল বাজাতে না হয়।
মিনিট কয়েক পরেই ওপরের সিঁড়ি থেকে মসমসে জুতোর আওয়াজ এলো। নিমিষেই সজাগ হয়ে দাঁড়াল পুষ্পিতা। বুঝে গেল কে আসছে!
পা বাড়ানোর আগেই নূহা আটকে দেয়। সতর্ক কণ্ঠে বলে,
“ দাঁড়া! আরেকবার দেখে নিই তোকে।”
নূহা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পুষ্পিতার আপাদমস্তক দেখল। মেয়েটাকে আজকে ও চুল বাঁধতে দেয়নি। সামনে থেকে ক গাছি নিয়ে পেছনে আটকালেও, বাকি সব পিঠে ছড়িয়ে। তারওপর নিজের সবথেকে ভালো জামাটা পরিয়েছে।
পুষ্পিতা তো এমনিতেই সুন্দরী! যা পরে তাতেই রূপ বেড়ে যায়।
কিন্তু ওসব ছাপিয়ে গেল তরুণীর দাঁতে ব্যথার ব্যাপার। সুশ্রী মেয়েটা কেমন গাল চেপে আছে। ঠিকঠাক বুলিও ফুটছে না। নূহার মায়া হোলো।
বলল,
“ একটা পেইন কিলার দেবো? যদি ব্যথা কমে!”
তার কথার মধ্যেই চৌকাঠে এসে দাঁড়াল তীব্র। পুষ্পিতার হাত গালে দেখে
বলল,
“ কী হয়েছে?”
এতক্ষণে মুখ খুলল সে।
খুব দুঃখ নিয়ে বলল,
“ মনে হয় আক্কেল দাঁত উঠছে। অনেক ব্যথা !”
“ এতদিন কি বেয়াক্কেল ছিলে?”
ফিক করে হেসে ফেলল নূহা।
পুষ্পিতা ঠোঁট ওল্টাল।
“ আজকেই আপনাদের বাড়ি যাব, আর আজকেই এই অবস্থা। কী করি বলুন তো!”
নূহা বলল,
“ ভাইয়া, ওর দাঁতটা কি ফেলা যাবে? দেখুন না,যদি ফেলতে পারেন!
তীব্র বলল,
“ আমি সব সময় লাথি মেরে মেরে মানুষের দাঁত ফেলেছি, নূহা। তোমার বান্ধবীর বেলায় এই নিয়ম প্রয়োগ করতে চাই না।”
নূহা দুষ্টুমি করে বলল,
“ তাহলে একটা চুমু দিয়ে দিন, যদি পড়ে যায়।”
পুষ্পিতা হাঁ করে ফেলল। পরপর চোখ রাঙাল ওকে।
নূহার ঠোঁটে মিটিমিটি হাসি। তীব্র নিজেও হয়ত কিছু
অস্বস্তিতে পড়েছে।
গলা ঝেড়ে প্রসঙ্গ এড়াতে বলল,
“ এসো।”
পুষ্পিতা যেতে যেতে নূহাকে চোখ দিয়ে শাসায়।
মেয়েটা তোয়াক্কাই করল না।
দরজায় এসে হাত নাড়ল বিদায় জানাতে। বলল,
“ সাবধানে যাস!”
তীব্র পুষ্পিতাকে নিয়ে প্রথমে মিরাজদের ভাড়া বাসায় এলো। চারদিকে তখন দোয়েলের কাকলী। সবে সূর্য উঠতে শুরু করেছে।
দু এক টোকাতেই মিরাজ এসে দরজা খুলল। হাই তুলতে তুলতে তাকাল সামনে। ওদের দেখেই ব্যস্ত হলো পরপর।
“ তোরা? আয় আয়।”
পুষ্পিতাকে বলল,
“ আসুন, ভাবি আসুন।”
মুশফিকরাও উঠে আসে। এই বাসায় খাট নেই। সব ফ্লোরিং করে ঘুমায়। আরমান বলল,
“ তোরা কি এখনই বের হচ্ছিস বিট্টু?”
“ হ্যাঁ, শাফিন উঠেছে?”
“ উঠেছে তো। আমরাও সজাগ ছিলাম। তোর কথাই হচ্ছিল এতক্ষণ। আজ ভাবিকে নিয়ে প্রথম বার আন্টির সামনে যাবি,আমরা সবাই এত এক্সাইটেড না!”
তার কথায় উচ্ছ্বাস। কিন্তু লজ্জা পেলো পুষ্পিতা। এমনিতেও তার নজর পায়ের পাতা থেকে খুব একটা ওঠে না। তারওপর সবার ভাবি ভাবি ডাকে,তা আরও দ্বিগুণ বেড়ে আসছে।
লুৎফার সাথে তীব্রর কথা হয়েছে কয়েকদিন আগে। সে যে পুষ্পিতাকে নিয়ে ঢাকায় যাবে,বন্ধুমহলে এটা পুরোনো খবর। শাফিন সহ সবাই-ই মোটামুটি জানতো!
তীব্র সেই ঘরে এলো যেখানে অসুস্থ শাফিন শুয়ে। গায়ের লালচে র্যাশ ডেবে গেছে। চোখমুখ এখনো বেশ ফোলা!
তীব্র একটা চেয়ার টেনে বসল। তাকে দেখে দ্রুত উঠে বসতে চাইল শাফিন। ও হাত তুলে মানা করে। কণ্ঠে নম্রতা,
“ এখন কেমন আছিস?”
“ ভালো। তুই আবার কষ্ট করে উলটো পথে আসতে গেলি কেন? দেরি হয়ে যাবে না?”
“ সমস্যা নেই। ও তোকে দেখতে চাইছিল! আর আমিও ভাবলাম একেবারে সবার সাথে দেখা করে যাই।”
কথাটায় শাফিন রুগ্ন চোখ তুলে পুষ্পিতাকে দেখল এক পল। মৃদূ হেসে বলল,
“ বসুন ভাবি!”
মেয়েটা খুব আস্তে বলে,
“ ঠিক আছি আমি। ”
তীব্র শাফিনের মাথায় হাত বোলাল। বলল,
“ ফ্রেশ হয়ে ওষুধ খেয়ে নিস। আমি আসি!”
মাথা নাড়ল শাফিন।
তীব্র বের হওয়ার সময় পুষ্পিতার নরম হাত মুঠোয় ভরল। বড্ড শক্ত সেই বাঁধন। কাঙ্খিত কোনো আসামী ধরতে পারলে পুলিশ যেমন জিম্মায় পুড়ে রাখে? তার চেয়ে কম কিছু নয়।
শাফিন কিছুক্ষণ নির্লিপ্ত চোখে তাদের প্রস্থান পথ দেখল। চোখ বুজে ফোস করে শ্বাস ফেলল তারপর।
বাকিরা ওদের এগিয়ে দিতে জিপ অবধি এলো।
একেকজনের কত আনন্দ! তীব্রর প্রেমের শুরু থেকে এই অবধির সাক্ষী ওরা। আনন্দ হবে না?
আজকে পুষ্পিতা লূৎফা- জামশেদ দুজনের সাথেই দেখা করবে। এরপর তীব্র প্রস্তাব রাখবে ওর পরিবারের কাছে। সব মিলিয়ে ওদের শেষটা ভালোয় ভালোয় হোক,এইত,এতটুকুই চাওয়া ওদের!
খোলা রাস্তার বুকে তীব্রর জিপ ছুটছে। এলোমেলো প্রভঞ্জনে পুষ্পিতার চুলের দুরূহ দশা।
ও কাঁধব্যাগ থেকে পাঞ্চ ক্লিপ বের করল,আটকাবে বলে। পূর্বেই
বাধ সাধল তীব্র। বলল,
“ থাকুক। সুন্দর লাগছে!”
কুণ্ঠিত পুষ্পিতা
নিম্নোষ্ঠ টিপে নেয়। ক্লিপটা ফের ঢুকিয়ে রাখে ব্যাগে। পরপরই বলল ,
“ একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে হ্যাঁ? কলেজের সময় পেরিয়ে গেলে, মণি কিন্তু সন্দেহ করবে!”
“ সন্দেহ কেন করবে?”
পুষ্পিতা মিনসে গলায় বলল,
“ আয়েশা আন্টি সব বলে দিয়েছেন। আমি দেরি করলে মণি ঠিক বুঝে যাবে আপনার সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছি।”
তীব্র অবাক চোখে চাইল।
কণ্ঠে স্ফূর্তি নিয়ে বলল,
“ তার মানে উনি সব জানেন?”
ও মাথা নাড়ল।
“ কিছু বলেননি?”
“ বলেছে। আপনার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেবে। যদি ভালো লাগে তাহলেই…”
এই অবধি এসে থামল মেয়েটা।
পরেরটুকু আর বলতে পারেনি।
কিন্তু স্নিগ্ধ মুখে যেন তীব্রর সব উত্তর লেখা। না বলতেও বুঝে নেয় সে। নিজেই বলল,
“ এত চিন্তা কীসের? ভাবছো তোমার মণি সত্যিটা জানলে বিয়েতে আপত্তি করবে? শোনো,
আমি একমাত্র তোমাকে নিয়ে ভয়ে ছিলাম। সেই ভয় যখন মিটে গেছে,বাকিদের নিয়ে আমি ভাবি না।
কে কী করবে সেটা তার ব্যাপার। আই থিংক, আমাদের ডেস্টিনি এক ভীতু মেয়ে।
নাহলে তোমার প্রতি আমার এমন মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি হোতো কখনো?
তোমার মণি খোঁজ নিলে নিক। আমার পরিচয় জানলে জানুক। তাতে আমার কিচ্ছু যায় এসে না। উনি রাজি নাহলেও তুমি আমার বউ হবে,রাজি হলেও হবে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে সোজা আমার বউকে গিয়ে তুলে নিয়ে আসব। তখন তুমি প্লিজ কেঁদেকেটে এটা বোলো না, যে পরিবারের বিরুদ্ধে যাবে না।
এক্কেবারে খেয়ে ফেলব তাহলে!”
পুষ্পিতা কী বলবে? তীব্রর শেষ লাইনেই তার কথা গলায় আটকে গেল।
এরপরই হাতের ওপর আরেকটা উষ্ণ হাত বসল এসে। আঙুলে আঙুল গুঁজে পুষ্পিতার পেলব হাত বুকের কাছে নিয়ে গেল তীব্র। ফরসা, লম্বা আঙুলের মাথায় ছোটো ছোটো নখ দেখে বলল,
“ হাতের নখ আরেকটু বড়ো রাখবে। এমন মাথা দাবিয়ে কাটবে না।”
তারপর কেমন করে চাইল সে। চোখের দৃষ্টিতে এক অন্যরকম আলো,অন্য কোনো আশা।
পুষ্পিতা বুঝতে না পেরে বলল,
“ কেন?”
“ কীসের কেন? আমার পিঠে বিয়ের প্রথম রাতের প্রমাণ রাখতে হবে না?”
মেয়েটার মনে হলো মাটি ফাঁকা। ধীরে ধীরে ও তলিয়ে যাচ্ছে সেখানে। এত বেহায়া মানুষ হয়,এত বেহায়া!
কুণ্ঠায় একাকার হয়ে বলল,
“ ছিহঃ নির্লজ্জ!”
হাতটা ত্রস্ত টানতে চাইল পুষ্পিতা। তীব্র দিলোই না। হাসল,ঝরঝরে বৃষ্টির মতো হাসল সে। প্রকৃতিতে সদ্য ভোরের আয়োজন চলছে তখন। সুনসান রাস্তায় লাল জিপের বড্ড নির্ভেজাল গতি। তীব্র সিটবেল্ট বাঁধেনি। এমনিতেও খুব একটা বাঁধে না।
সামনে ব্রিজ!
গাড়ির চার চাকা ব্রিজের বুকে উঠল। তরতরিয়ে চলার ফাঁকেই
তীব্রর চোখ পড়ল ডান পাশের ভিউ মিররে। অজগরের ন্যায় দৈত্যাকার ট্রাক
হিঁসহিঁস করতে করতে আসছে।
বড়ো বেসালাম বেগ তার! তীব্র চুপচাপ হুইল ঘোরাল।
ট্রাক যাওয়ার জায়গা করে দিতে ব্রিজের একদম পাশে আনল জিপ।
বিধিবাম! ভাগ্যে বোধহয় ভিন্ন কিছু লেখা। অসুরদেহী ট্রাক
ছুটে এসেই জিপের পেছনটাতে
সজোরে এক ধাক্কা বসায়। প্রখর আঘাতের কবলে তীব্রর হুইলে রাখা হাতটা হড়কে গেল।
ছোট্ট জিপ ত্রস্ত গিয়েই বাড়ি খেলো ব্রিজের শক্ত হাতলে। প্রকোপে উলটে গেল গোটা বাহন। আঘাতে চুরমার হলো সামনের কাচ। ভেঙে গুড়িয়ে যায় জানলা।
সংঘর্ষের অপ্রস্তুতিতে তীব্র টাল রাখতে পারেনি। ভাঙা জানলা হতে আস্ত শরীরটা তার ঠিকড়ে পড়ল বাইরে। ব্রিজের উঁচু পিলার লুফে নিলো মাথার তালুর ত্বক। তারপর শিলাখণ্ডের ন্যায় আছড়ে পড়ল নদীর ভেতর। গভীর জল যেন হাঁ করে চেয়েছিল। বলবান দেহটা গিলে নিলো চোখের পলকে। ঝুপ করে অতলে টেনে নিয়ে সব কিছু আবার শান্ত করল সে।
সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৫০
ততক্ষণে স্থলে থাকা জিপ হতে ধোঁয়া ছুটেছে৷ পরপরই তা পিষ্ট হলো ট্রাকের তলায়।
একটি নারী কণ্ঠ ছিটকে লুটিয়ে পড়ল বাতাসে। সেই সাথে দুমড়ে-মুচড়ে গেল, দুই শালিকের ঘর বাঁধার স্বপ্নরাও!