তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৭

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৭
তানিশা সুলতানা

আবরার কক্ষ থেকে বের হতেই আদ্রিতা বসে পড়ে। এদিক সেদিক খুঁজতে থাকে। টি-টেবিলের ওপরে কাঙ্ক্ষিত জিনিস পেয়ে যায়।
চটজলদি টি-টেবিল থেকে ফোন খানা তুলে নেয়। কল করে আতিয়া বেগম এর ফোনে।
রিং হতে হতে কেটে যায়। কল রিসিভ করে না সে।
মা ছাড়া দুনিয়াতে আরও একটা মানুষ আছে আদ্রিতার। সে হচ্ছে তার বাবা আরিফ।
মা ফোন ধরছে না দেখে আদ্রিতা বাবাকে কল করে।
সাথে সাথেই রিসিভ হয় কল খানা।

“বাবা
বহুদিন পরে বাবা ডাকটা শুনে আরিফ এর কলিজা খানা জুরিয়ে যায়। আঁখি পল্লব বন্ধ করে অনুভব করে ডাকটা।
এবং বলে
” আদ্রিতা মা ভালো আছো?
আদ্রিতা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
“বাবা আমি এখানে থাকতে পারবো না। আমাকে নিয়ে যাও। ভালো নেই আমি। ম/রে যাচ্ছি।
বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে আরিফ এর।
বিচলিত স্বরে বলে
” কি হয়েছে মা?
বলো আমায় কি হয়েছে?
“তুমি নিয়ে যাও আমায়। কালকেই চলে এসে আমাকে নিতে।
আসবে তো বাবা?
আরিফ একটু ভেবে জবাব দেয়
” টিকিট পেলে আসলো মা প্রমিজ। না পেলে এই সপ্তাহের মধ্যেই আসবো আমি।
কল কাটে আদ্রিতা। চিন্তিত আরিফ মাথায় হাত ঠেকিয়ে বসে থাকে। কি হয়েছে তার মেয়ের? কখনো তো এভাবে কথা বলে নি। বরাবরই নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে নারাজ সে। শত কষ্ট হলেও মুখ ফুটে বলে না। তাহলে আজকে কি হলো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

২০২৩ ডিসেম্বর ১৫ তারিখ। তাসিন ফ্যাশন হাউস এর একটা শাখা বাংলাদেশে খোলা হয়েছে। বসুন্ধরারা মার্কেটে নতুন তিনটে শোরুম ওপেনিং ডেইট ছিলো। শোরুম উদ্বোধনের জন্য আবরার তাসনিন বাংলাদেশে গিয়েছিলো।
বহুবছর পরে নিজ দেশের মাটিতে পা রাখতেই শক্তপোক্ত পাষাণ আবরারের হৃদয় কেঁপে উঠেছিলো।
শোরুম উদ্বোধন এর তিন ঘন্টা পরেই সুইজারল্যান্ড ব্যাক করার কথা থাকলেও দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে আবরার নিজের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে। টিকিট ক্যান্সেল করে হোটেলের রুম বুক করে ফেলে।
সন্ধ্যা সাতটায় শোরুম উদ্বোধন হবে। আবরার সেই টাইম অনুযায়ী সেখানে উপস্থিত হয়। কেক কাটা ফিটা কাটা এসব বিষয়ে আবরারের ইন্টারেস্ট ছিলো না।

তাই শোরুম এ কর্মরত মানুষরাই ফিতা এবং কেক কেটে দোকান খুলে।
সেই দোকানে প্রথম কাস্টমার হয়ে আদ্রিতা আসে। তার সাথে ছিলো স্মৃতি নামক মেয়েটি। যে আদ্রিতার বেস্ট ফ্রেন্ড।
আবরার তাসনিন এর দোকানে দশ হাজারের নিচে কোনো শাড়ি থ্রি পিছ কিংবা লেহেঙ্গার নেই।
অথচ আদ্রিতা দোকানে ঢুকে প্রথমেই থ্রি পিছ দেখাতে বলে।
দোকানদার পার্পেল রংয়ের এক খানা থ্রি পিছ বের করে। এবং উল্টেপাল্টে দেখায়।
আবরার এক কোণায় বসে ফোন ঘাটছিলো।
তখনই কানে আসে

“ভাইয়া প্রাইজ কতো এটার?
দোকানদার বলে
” বারো হাজার নয়শত নিরানব্বই টাকা।
আদ্রিতা স্মৃতির পানে তাকায়। এবং মুখ বাঁকিয়ে বলে
“তেরো হাজার বললেই তো পারেন। এক টাকা কম বলে কি বোঝাতে চান? এটার দাম বারো হাজার? মানুষকে হাবলু পেয়েছেন?
তেরো হাজার টাকার চকচকে নোট দিলে তো আবার বলবেন ” আপা এক টাকা নাই” চিনি না ভাবছেন আপনাদের? হারে হারে চিনি।
সে যাই হোক পাঁচশে টাকায় দিবেন?
দোকানদার হাবলার মতো তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার মুখ পানে। আবরারও মুখ তুলে তাকায়।

” আফা এইডা কোনো দাম কইলেন আপনি?
“বেশি বলে ফেলেছি?
ঠিক আছে সাড়ে চারশো টাকা দিবো। হলে দেন নাহলেও দেন। পছন্দ হইছে লাগবেই আমার।
দোকানদার হাত উঁচু করে দরজা দেখিয়ে বলে
” ওই যে গেইট
ওই খান দিয়ে বের হয়ে যান।
“আশ্চর্য আপনি কি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন?
” তো?
আপনাকে যে পিটানি দেই নি এটাই ভাগ্য।
তেরো হাজার টাকার ড্রেস পাঁচশো টাকা দাম করছেন। কাণ্ডজ্ঞান আছে আপনার?
পাগল কোথাকার।
“এই যে দোকানদার মুখ সামলে কথা বলুন। এই জামা দাম দুইশো টাকার থেকেও কম। ফুটপাতে এসব জামা শত শত বিক্রি হয়।

একটু বড়লোক বড়লোক ভাব দেখাতেই এই দোকানে আসছি। নাহলে আদ্রিতা চৌধুরী চৌধুরী এখানে আসতো না।
” ভালো হইছে আপা।
আপনি ফুটপাত থেকেই কিনেন গিয়ে। আমাকে ক্ষমা করুন।
আদ্রিতা দোকানদারকে বকতে বকতে বেরিয়ে যায় দোকান থেকে। আবরার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। বিরবির করে আওড়ায় “আদ্রিতা চৌধুরী”
তারপরের দিন আবরার এর সুইজারল্যান্ড এ ব্যাক করার দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে দাদাভাই এর কবর জিয়ারত করতে আসে। তখন পূণরায় আদ্রিতাকে দেখতে পায়। কবরের পাশে বসে কাঁদছে এবং প্রলাপ বকছে।
“দাদু ও দাদু জানো না আজকে কি হইছে।

বড় মা আমাকে বকা দিছে। মাকে কথা শুনিয়েছে। বড় মা এমন করে কেনো বলো তো দাদু? তোমার নাতিকে ফিরে আসতো বলো না দাদু। তাকে বলো আমাকে আর মাকে নিয়ে যেতে।
আবরার প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে। এবং পরপরই সিদ্ধান্ত নেয় আরও কিছু দিন বাংলাদেশে থাকবে সে। আদ্রিতা চৌধুরীর খোঁজ বের করতে হবে।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো এখন পর্যন্ত আবরার মেয়েটির মুখ দেখে নি। দোকানেও চুল দেখেছে এখনো চুল দেখছে। কি সুন্দর চুল গুলো। ঘনো কালো এবং বিশাল লম্বা।
আবরার কখনোই এতো লম্বা চুল দেখে নি। তাই বোধহয় একটু বেশিই কৌতুহল জেগেছে।
দীর্ঘক্ষণ কবরের পাশে বসে থেকে চলে যায় আদ্রিতা৷ সেখানে ফেলে যায় হাতের এক খানা চুরি। সেই চুরি এখনো রয়েছে আবরার এর পার্সোনাল কাবার্ডে।
এই টুকু বলেই থামে আবরার। সিয়াম ফ্লোরে শুয়ে পড়েছে বহুক্ষণ আগেই। এইরকম এট্রাকটিভ স্টোরি কি আর বসে বসে শোনা যায়?

ইভান আবরারের একদম গা ঘেসে বসে আছে। গালে হাত তার। চোখের পলকও ফেলছে। যেনো একটু নরাচরা করলেই স্টোরি শেষ হয়ে যাবে।
আমান ডেইরি মিল্ক চিবচ্ছে। পকেটেই ছিলো। আহাদ আবরারের পায়ের কাছে বসে আছে।
সব গুলো বদলের পানে এক পলক তাকায় আবরার। পরপরই দাঁড়িয়ে পড়ে।
বিরক্তির স্বরে বলে
” তোদের প্রবলেম কি হ্যাঁ
আমি জাস্ট একটা স্টোরি বলেছি।
আমার মুখের মধ্যে সিনেমা হল বসাই নি। ইডিয়েটের দল।
সিয়াম হাই তুলে। বুকে হাত দিয়ে আপন মনে বলে ওঠে
“কন্যা তোর লম্বা চুলে
কি ছিলো কে জানে?
দেখে আবরার হয়েছে ফিদা
ভেবে
সিয়ামের কবিতা শেষ হওয়ার আগেই আবরার ধমকে বলে ওঠে

” স্টপিট সিয়াম।
ডিজগাস্টিং লাগে তোর কবিতা।
আমানও আবরার মতো ধমক দিয়ে বলে
“চুপ কর না বাপ।
পরের টুকু শুনতে দে।
হ্যাঁ ভাই তারপর বল কি হলো?
আহাদ বলে
” কি আর হবে?
তারপর থেকে আমাদের গ্রেট তাসিন ভাই স্বপ্নে কক্সবাজার ঘুরছে আদ্রিতার হাত ধরে।
নিজের ঘন-কালো চাপ দাঁড়িতে হাত বুলায় আবরার।

“ছিহহ
স্বপ্নে হাত ধরে ঘুরবো কেনো?
বাসর সেরে দুই চার বাচ্চার বাবা হয়ে গিয়েছি।
বড় বড় পা ফেলে প্রস্থান করে আবরার। চার বন্ধু উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। সিয়াম বলে
” শুধু স্বপ্নে?
রিয়েল লাইফে করিস নি?
আমান মুখ বাঁকিয়ে বলে
“এখন রুমে যাচ্ছে কি ঘাস কাটতে?
” মানে? বাসর হবে আজকেই?
“অবিয়েসলি
আবরার ছাড় দিবে?
সিয়াম এক লাফে উঠে বসে।
” ভাই চল আমরা শুনবো।
আহাদ বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৬

“কিহহহ?
শুনবি মানে?
” মানে আঁড়ি পাতবো। দেখবো কি থেকে শুরু করে। কি কি বলে। কিভাবে সাউন্ড করে।
ইভান ভীতি স্বরে বলে
“নাহহ ভাই। আবরার জানতে পারলে রেগে যাবে
” আরেহহ ধুর
কিচ্ছু হবে না চল তো তোরা।
সিয়াম হামাগুড়ি দিয়ে চলে যায় আবরারের কক্ষের পানে। আবরারের পেছন পেছন ছুঁটতে থাকে ইভান আর আহাদ। আমান এখনো চিন্তিত। যাবে কি যাবে না সেটাই ভাবছে।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ২৮