পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১১

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১১
সাদিয়া আক্তার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আজ নতুন রুপে সেজেছে। মাস্টার্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে আজ এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ যারা অনার্স মাস্টার্স ও পিএইচডি শেষ করেছে তাদের মূল সনদ প্রদান করা হবে।
কেটে গেছে তিনটি বছর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের চন্দ্র এখন মাষ্টার্সের ছাত্র।
আর একবছর পরেই সে পরিপূর্ণ গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করবে। ছাব্বিশ বছর বয়সী টগবগে যুবক বলিষ্ট দেহে আটসাটো গ্রে কালারের শার্টে স্টেজের সামনে দাড়িয়ে জুনিয়রদের ইনস্ট্রাকশন দিতে থাকে

— চন্দ্র ফুল কম পরে গেছে,,,
শিহাবের কথা শুনে চন্দ্র পিছন ফিরে বিরক্তি নিয়ে বলে — তো আমারে না বলে ফুল আনতে কাউকে পাঠা
— চেইতা আছোছ ক‍্যান ভাই?? আমি কি করছি??
চন্দ্র চোখ গরম করে তাকাতে শিহাব মেয়েদের মতো মুখ ভেংচি মেরে চলে যায়।। শিহাব যেতে চন্দ্রর ফোন বেজে ওঠে চন্দ্র পকেট থেকে ফোন বের করতে দেখে তার চাচা মিরাজ সাহেব ফোন দিয়েছে
— আসসালামু আলাইকুম ছোট চাচা
— ওয়ালাকুম আসসালাম,, কেমন আছিস চন্দ্র।
— হু আলহামদুলিল্লাহ্
— কথা বলা যাবে এখন আব্বা,,,
— হ‍্যা বলো;,,,,, চন্দ্র সাইডে এসে বলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমার হাতে একটা ভালো চাকুরী আছে মাল্টিন‍্যাশনাল কম্পানির অ‍্যাসিসট‍্যান্ট ম‍্যানেজার পদে,,,
মিরাজ সাহেবকে বলতে না দিয়ে চন্দ্র নিজেই বলল — উহু চাচ্চু আমি চাকরি করব না ভার্সিটি থেকেই শিক্ষকতার জন‍্য জব অফার আসছে মাষ্টার্স শেষ হলে এখানেই জয়‍্যেন করব।
— ভেবে দেখ বাবা ভবিষ্যতে বাইরে সেট‍্যেল হওয়ার সুযোগ,,
মিরাজ সাহেবকে বলতে না দিয়ে চন্দ্র বলল
— দরকার নেই চাচ্চু বাংলাদেশই আমার জন‍্য ঠিক আছে এমনিতেই আমার জবের দরকার নেই তবুও করব জাষ্ট আ‍ব্বুর স‍্যাটিসফ‍্যাকশনের জন‍্য।
মিরাজ সাহেব আর কিছু বলল না চুপ বনে গেলো জানে চন্দ্রকে হাজার বলেও রাজী করানো যাবে না তার না মানে নাই। সেটা হ‍্যা করানো অসম্ভব। চন্দ্র কথা শেষ করেই চলে যায় আবার নিজের কাজে। কিছু মনে হতেই পারভেজ সাহেবকে কল দেয়। ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলে বলে

— আসসালামু আলাইকুম শশুর আব্বা
— সামলে আব্বাজান সামলে মেয়ে আমার রাজী না। অতএব আমি রাজী না।
পারভেজ সাহেবের কথা শুনে চন্দ্র বাকা হেসে গম্ভীর স্বরে বলে — তো ভালোয় ভালোয় মেয়েটাকে এখানে পাঠিয়ে দাও তাহলে তাকে কিভাবে রাজী করানো লাগে সেটা চন্দ্রের বউ চন্দ্রই বুঝে নিবে,,,
— পাগল ছেলে আমার মেয়ে তোর কাছে দিব না কি করবি,,
— সেটা তোমার থেকে ভালো কেউ জানবে না।
কারো ডাকে চন্দ্র কথোপকথন শেষ করে।। পুনম এবার এইচ এসসি দিচ্ছে। আর দুইটা পরীক্ষা শেষ হলে তার এইচ এসসি পরীক্ষা শেষ হবে। এই তিন বছরে চন্দ্র একবারের জন‍্যেও পারভেজ সাহেবের বাড়িতে পা দেয়নি। পারভেজ সাহেব বাদে কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি।।

কলেজে উঠার পর পুনমের দুইজন বন্ধু হয়েছে একজন ছেলে নয়ন আরেকজন মেয়ে মিহি।
এই দুইজন দুই বছর ধরে পুনমের সাথে ছায়ার মতো ছিলো। পুনমের দিনকাল মোটামুটি ভালোই কাটছে।
মায়ের সাথে এটা সেটা করে হাত বাটানো কলেজ সব মিলিয়ে ভালোই কাটছিল। রুপশার বিয়ের পর পারভেজ সাথে পুনমের প্রতি আরো বেশী ধ‍্যান দেয়। তাকে পড়াশোনা ও কাজের প্রতি মনোবল দেয়। বাবা সাহায্যে পুনমও এসএসসিতে জিপিএ 5 পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।
এরপর থেকে পুনমের একটাই লক্ষ্য তা হলো পড়াশোনা।। এবং জীবনে কিছু একটা করা।
— এই পুনু ঢাকায় কোন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হবি ভর্তি পরীক্ষার জন‍্য,,??
— জানিনা আব্বু জানে,, তুই কি করবি।
নয়নের দিকে তাকিয়ে বলল পুনম

নয়ন মিহির দিকে একপলক তাকিয়ে বলল — মেডিক্যালে পরীক্ষা দিব হলে ভালো না হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এছাড়া আর কোনো ইচ্ছা নাই আর ভাইয়া বলছে ইউসিসিতে ভর্তি করিয়ে দিবে।
— আমিও জানিনা আব্বু কি বলে। মিহির দিকে তাকিয়ে বলে — কিরে মিহি তুই কি করবি??
মিহি উদাস ভঙ্গিতে বলে — জানিনা আমার আ‍ব্বার আমাকে ঢাকায় কোচিং এ ভর্তি করানোর মতো সামর্থ্য নাই তোরা তো জানিস তবুও ঘরে পড়েই যতটুকু পারি তাই করব।
— চিন্তা করিস না আমরা তোকে হেল্প করব।
পুনম নয়ন একসাথে বলে উঠে। বন্ধুদের কথা শুনে মিহি মুচকি হাসে সেই হাসি দেখে পুনম নয়ন ও হাসে।
কথা বলতে বলতে পুনমের বাসা চলে আসলে পুনমে চলে যায় বাসায় ঢুকতে কোথা থেকে মুক্তি দৌড়ে এসে পুনমকে জড়িয়ে ধরে।
পুনম ও মুক্তিকে জড়িয়ে ধরে — আপুউউউ বলে চিৎকার দেয়।

— তুমি এখানে
— হ‍্যা কাল তোর পরীক্ষা শেষে পরসু তোকে নিয়ে ঢাকায় যাব
— পরসু ঢাকা যাব কই আব্বু তো কিছু বলল না।
— চাচ্চু তো মানতে রাজী না তার কথা আর কিছুদিন পরে তোকে পাঠাতে চেয়েছিল কিন্তু আব্বু রাজী করিয়েছে।
— সত‍্যি

মুক্তি মাথা নাড়ায়। দুইবোন আরো অনেক কথা বলতে বলতে ঘরে যায়। আজ মুক্তি একাই এসেছে কামরুল সাহেব গাড়ি ঠিক করে পাঠিয়েছে।। সে আসতে চাইলেও ব‍্যবসার কাজের জন‍্য আসতে পারেনি। বর্তমানে কামরুল সাহেবের ব‍্যবসা বেশ ফুলে ফেপে উঠেছে ঢাকা শহরের বাড়িটা ডুপ্লেক্স করেছে গাড়ি করেছে। পারভেজ সাহেবের ও ব‍্যবসা উন্নতি হয়েছে। সবাই বেশ ভালোই আছে। তবে এই তিন বছরে সবাই যাওয়া আসা করলেও চন্দ্র ও পুনম কেউ কারো বাসায় যায়নি।
।। খাওয়ার টেবিলে সবাই খেতে বসেছে নিশা রোজিনা বেগমকে কিছু ইশারা করে বললে রোজিনা বেগম পারভেজ সাহেবের উদ্দেশ্যে বলে

— পুনম ঢাকায় পরতে যাচ্ছে। নিশাও এবছর কলেজে ভর্তি হয়েছে আমি বলি কি নিশাকেও ঢাকায় কোনো কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলে ভালো হয়না। দুই বোন একসাথে কলেজে যাবে আসবে।।
পারভেজ সাহেব রোজিনা বেগমের কথা শুনে তাকায় তার দিকে আবার নিশার দিকে তাকায়।
— তুমি তো ঢাকায় যেতে চাওনি বলেই আমি এখানের কলেজে তোমাকে ভর্তি করিয়ে দিছি।
— আব্বু তখন ভেবেছি এখানে ভালো কলেজ কিন্তু এখানের কলেজ একদম ভালো না।
— অথচ পুনমও ঐ কলেজ থেকেই এবার ইন্টার দিচ্ছে,,,,,,,,
নিশা আর কিছু বলে না মাথা নিচু করে খেতে থাকে পুনম মুক্তি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার খেতে থাকে। রোজিনা বেগম গম্ভীর স্বরে বলল — নিশা তখন যেতে চায়নি এখন যাক সমস্যা কি??
পারভেস সাহেব এবার ইমোশনালি ব্ল‍্যাকমেইল করে বলল — মেয়েকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে নিশা চলে গেলে তুমি একা হয়ে যাবে না
রোজিনা বেগম ভেবে দেখলেন আসলেই পুনম চলে গেলেও তার সমস‍্যা নাই তবে তার এখন সব আশা ভরসা নিশাকে নিয়েই সে থাকতে চায়।

— হুম তাও ঠিক নিশা আম্মা তোমার কোথাও এখন যাওয়া লাগবে না
নিশা রোজিনা বেগমের কথা নাক ফুলিয়ে মুক্তির সাথে কথা বলতে খেতে থাকা পুনমের দিকে তাকায়। মনে মনে সে পুনমের প্রতি ক্ষুদ্ধ।।
— এই কাইল্লা চাদঁ ঢাকা শহরে পরব চন্দ্র ভাইয়ের বাড়িতে থাকবে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
মনে মনে ভেবে ভাতে মুঠো করে চটকায়। যেনো পারেনা পুনমকেই চটকে দিচ্ছে।।
খাওয়া দাওয়া শেষে পুনম মুক্তি একসাথেই ঘুমায়। কাল ঝিনুকরাও যাবে ঢাকায় তিনবোন ঝিনুক রিমি পুনম তিনজন একসাথে কোচিং করবে মুক্তিদের বাসা থেকে।
দুইদিন থেকে পুনমকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
দীর্ঘ পাচঁ ঘন্টা জার্নি শেষে পুনম মুক্তি ঢাকার সাভারে পৌছায়।।
পুনমের আসার খবর পেয়েই চাদনী বেগম বেজায় খুশী। সকাল থেকেই পুনমের পছন্দের রান্না করছে। গাড়িটা উঠোনে থামতেই চাদনী বেগম দৌড়ে আসে সাথে কাজের মেয়ে জরিনা।

— ঐতো আমার শাশুড়ি আম্মা চলে এসেছে,,,
মুক্তি ক্লান্ত পুনমকে গাড়ি থেকে নামায়। চাদনী বেগম দৌড়ে পুনমকে ধরে কপালে গালে হাত দিয়ে বলে — কি হয়ে পূর্ণ মা
— কিছুনা চাচী ঐ গাড়িতে তিনবার বমি করে ক্লান্ত হয়ে গেছি এই যা।
— চল চল ভিতরে চল
পুনমকে নিয়ে ভিতরে যায় তারা পুনম বাড়ির চারিদিকে দেখতে দেখতে ভিতরে যায়। পুনমকে তার বরাদ্দ কৃত রুমে নিয়ে যায়।

পুনম হাত মুখ ধুয়েই একটা ঘুম দেয় একঘুমে রাত এগারোটায় ঘুম ভাঙ্গে।
খিদেয় পেটে ইদুর দৌড়াদৌড়ি করছে টের পেয়ে হাত মুখ ধুয়ে ঘর থেকে বের হয়।
নিচে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে কাউকে না পেয়ে এদিক ওদিক তাকায়।
কাউকে না পেয়ে ধীর পায়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। এই বাড়িয়ে না আসলেও ভিডিও কলে এই বাড়ির প্রতিটি কোনা পুনমের দেখা।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১০

সেই অনুযায়ী রান্নাঘরের ফ্রিজে চেক করে কি আছে উবু হয়ে ফ্রিজে দেখতে থাকে কি কি আছে। এরমধ‍্যে পিছন থেকে ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাস পেতেই ভয় পায় পুনম ঘনঘন গরম নিঃশ্বাস পরছে পুনমের ঘাড়ে ভয় পায় পুনম চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে পিছনে তাকাতেই,,,,,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ১২