ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২৯ (২)

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২৯ (২)
মিথুবুড়ি

‘পুরুষ মানুষ বরাবরই সুযোগসন্ধানী । বিশেষ করে যখন ব্যাপারটা বউকে নিয়ে। রিচার্ডের রুমের দরজা বন্ধ করা হয় সাথে সাথেই । আর সেই ফাঁকেই ন্যাসো সুযোগ বুঝে ইবরাতকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। লুকাস বেচারা আর কী করবে! ফোনটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে সেও দরজা চাপলো।
‘রুমে ঢুকতেই ইবরাত মোচড়ামুচড়ি করে ন্যাসোর কোল থেকে নেমে গেল। চোখে স্পষ্ট বিরক্তি, ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“এটা কী করলেন? লুকা ভাইয়া দেখে ফেলল যে!”
‘ন্যাসো নিরুদ্বেগ ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকিয়ে জবাব দিল, “কি দেখে ফেলল?”
‘ইবরাত রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দু-হাত কোমরে রেখে চাপা স্বরে বলল,”আমাকে কোলে তুললেন যে!”
‘ন্যাসো খপ করে ইবরাতকে জাপটে ধরল। ইবরাত ওর বাহুর ভেতর মোমের মতো মিশে গেল, মুহূর্তেই রাগ গলে পড়ল। ন্যাসোর প্রসারিত বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে শান্তির নিশ্বাস ফেলল ইবরাত। ন্যাসো ইবরাতের মাথায় থুঁতনি চেপে ধরে গভীর অধিকার নিয়ে বলল,

“আমার বউকে আমি কোলে নেব। মানুষের দেখাদেখিতে কি এসে যায়?”
‘ইবরাত ন্যাসোর বুকে বিড়ালছানার মতো মিশে রইল। অভিমানী স্বরে ফিসফিস করে বলল,
“ইসসস! তখন তো পাত্তা দিতেন না!”
‘ন্যাসোর ঠোঁট একপাশে টেনে হাসি ফুটল। ইবরাতের মাথায় আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল। অতঃপর বুক থেকে সরিয়ে ওর ছোট্ট মুখটা নিজের বিশাল হাতের আজলায় ধরে খুবই নরম স্বরে বলল,
“অনেক বড় ভুল করে ফেলেছিলাম। আমাকে মাফ করে দিন,ম্যাডাম ফুলি।”
“ম্যাডাম ফুলি মানে?”
‘ন্যাসো ক্রোধের লাল বর্ণ ধারণ করা ইবরাতে নাকে নাক ঘষলো। দু’হাতে কোমরের আশপাশে বিস্তৃতি ছড়িয়ে তুষ্ট হেসে বলল,
“কিছু হলেই গাল ফুলিয়ে বসে থাকো। তো আর কি বলব হুহ?”
‘ইবরাত খামচি বসাল ন্যাসোর বুকে। ভেংকি কেটে বলল,
“বেশ করি। সবকিছুর সুদে-আসলে প্রতিশোধ নেব।”
‘ন্যাসোর চোখ বড় বড় হয়ে গেল। বিস্মিত ভঙ্গিতে বলল,
“কিসের প্রতিশোধ?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ইবরাত ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলল, “বিয়ের আগে কম কষ্ট দিয়েছিলেন আমাকে?”
‘ন্যাসো ঠোঁট কামড়ে হেসে ইবরাতকে আরও কাছে টেনে নিল। হাস্কি স্বরে বলল,”এখন আর কষ্ট দিই না, তাই না?”
‘ইবরাত নাক সিটকিয়ে উত্তর দিল,”না! তবে এখন খুব জ্বালাতন করেন। আপনার জন্য একটা রাতও শান্তিতে ঘুমাতে পারি না—” এইটুকু বলেই থেমে গেল ইবরাত। ঠোঁট কামড়ে চোখমুখ কুঁচকে ফেলল । ন্যাসো ঠৌঁট কামড়ে হেসে ওর লাল টুকটুকে গোল গালে চুমু খেয়ে কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিসিয়ে বলল,”আমার কথার উত্তর এখনো পাইনি।”
‘ন্যাসোর উত্তপ্ত নিশ্বাসে ইবরাতের লোমকূপ জেগে উঠল। অস্পষ্ট স্বরে ফিসফিসিয়ে বলল,”কোনটা?”
“এখন আর কষ্ট দিই না?”
“নাহ!”
‘ন্যাসোর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। ইবরাতের দিকে চেয়ে ঠৌঁট কামড়ে মুচকি হেসে বলল,
“তাহলে রাতে কান্না করো কেন?”

‘ইবরাত সঙ্গে সঙ্গে ন্যাসোর বুকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে গেল। ন্যাসো ফিক করে হেসে দিল। একসময় গম্ভীর ন্যাসোও এখন একেবারে প্রাণখোলা। ভালোবাসার যাতাকলে পড়ে অর্ধাঙ্গিনীর সান্নিধ্যে তার গম্ভীরতা উধাও।ইবরাত চোখ কুঁচকে বলল,
“আপনার মতলব আমার মোটেও সুবিধার লাগছে না, মশাই। দূরে সরুন। আমি এখনও উইক।”
‘ন্যাসো ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করুণ স্বরে বলল,
“প্লিজ! শুধু একবার।”
‘ইবরাতের কড়া জবাব এলো,”নাহ। আপনাকে আমি খুব ভালো করে জানি।”
‘ন্যাসো আবারো, “ট্রাস্ট মি, রাত।”
‘কিন্তু ইবরাতও নাছোড়বান্দা। কাটাকাট জবাব দিল,

“এই ক্ষেত্রে আপনাকে আমি এক আনার বিশ্বাসও করি না। ভেঙে দিয়েছেন আমার সব বিশ্বাস। না মানে না।”
‘ন্যাসোর চোখেমুখে অসহায় ছাপ ফুটে উঠল। চুপসানো গলায় বলল,”শুধু বিশ মিনিট প্রমিজ।”
‘ইবরাত চোখ রাঙিয়ে রুষ্ট গলায় বললো,”বাইরে কতো ঠান্ডা দেখেছেন?”
‘ন্যাসো দুষ্টু হেসে ইবরাতের দিকে এক পা এক করে এগোতে এগোতে বলল,
“বউ থাকলে সঙ্গে, ঠান্ডা লাগে না অঙ্গে।”
‘ইবরাত পাশ থেকে টিভির রিমোট নিয়ে ছুঁড়ে মারলো ন্যাসোর দিকে। কিরমিরিয়ে বলল,”স্বামী থাকলে সঙ্গে, শীত লাগে না অঙ্গে। স্বামী গেলে দূরে, কাঁপন উঠে সর্বাঙ্গে। দূরে সরুন তো।”
‘ন্যাসো পুরোপুরি মিইয়ে গেল। ইবরাত ন্যাসোর চেহারা দেখে ঠোঁট চেপে হাসল। হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই ন্যাসো ব্যস্ত পায়ে বেডসাইড কেবিনেটের দিকে এগোতে লাগল। ইবরাত উৎকণ্ঠিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ” কী করছেন আপনি?”

‘ন্যাসো যেতে যেতে বলল, “তুমি ঠিকমতো ওষুধ খাচ্ছ তো?”
‘ইবরাত সঙ্গে সঙ্গে চুপসে গেল। ঠোঁট চেপে, নাক-মুখ কুঁচকে মাথা নুইয়ে রাখল। ন্যাসো ড্রয়ার খুলে ওষুধের পাতা হাতে নিয়ে, চোখ গরম করে ইবরাতের দিকে তাকাল। পরপর কেবিনেটের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ওষুধসহ ইবরাতের সামনে গিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে দৃঢ় স্বরে বলল, “মুখ খুলো। তুমি এখনো অনেক ছোট, রাত। আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না।”
‘ইবরাত বাধ্য মেয়ের মতো ওষুধ খেয়ে নিল। কিন্তু ঠিক পরমুহূর্তেই ন্যাসোর দিকে ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে বিরবির করে বলল, “ইহহ! এখন ছোট বলতে আসছে! তখন তো ছোট কথাটা একবারও মনে পড়ে না। দড়ি, ওড়না, যা পাই তাই দিয়ে হাত বেঁধে ফেলে,মিচকে শয়তান একটা!”
‘ইবরাতের বিরবির কথাগুলো ন্যাসোর কানে স্পষ্টই গেল। ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি নিয়ে ইবরাতকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনল ন্যাসো। কপালে কপাল ছুঁইয়ে, চোখে গভীর দৃষ্টি নিয়ে নিভু স্বরে বলল, “রাগলে তোমাকে আরও বেশি সুন্দর লাগে, রাত। এভাবে রেগে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনো না। আমার কিন্তু তোমাকে এলোমেলো করে দিতে বেশিক্ষণ লাগবে না। ”

‘ইবরাত জানে ন্যাসোর কথা ফাঁকা হুমকি নয়। লোকটার চোখ-মুখের অভিব্যক্তি দেখে তার মতলব স্পষ্ট বোঝা যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইবরাত দ্রুত প্রসঙ্গ বদলে বলল,
“আমাকে বিয়ে করে আপনি খুশি তো?”
‘ন্যাসো একটু থমকে গেল। পরপরই ফিচলে হাসল, মুখের গাম্ভীর্য আরও নরম হয়ে এলো। ইবরাতকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে বলল, “খুশি? অনেক। এই এতিম আমি’টার তুমিই এখন সব। আমার পরিবার, আমার সুখ।”
‘ইবরাত লাজুক হাসল, মনের ভেতর উষ্ণতা ছড়িয়ে গেল। পরক্ষণেই মুখ তুলে বলল, “আর আমাদের ধর্ম গ্রহণ করে?”

‘ন্যাসো চোখের গভীরতায় অটল ভরসা নিয়ে তাৎক্ষণিক বলল, “শান্তির ধর্ম গ্রহণ করেও আমি খুব খুশি। তুমিই তো আমাকে শেখালে কোথায় সত্যিকারের শান্তি মেলে।”
‘ইবরাতের তনুমনে এক প্রখর অনুভূতি কামড়ে ধরল। কালো বর্তমানকে রুদ্ধ করে স্তব্ধ আকাশে ঝলসে উঠল এক নির্মল, বিশুদ্ধ দ্যুতি। হৃদয়ের আনাচে কানাচে দোল খেল কড়কড়ে বসন্তের সজীব দোলনা। সব ভুলে ইবরাতের চোখ আটকে গেল মানুষটার নিরেট চিবুকে। হঠাৎ ন্যাসোর চিবুক গম্ভীর হয়ে উঠল। গভীর নিশ্বাস নিয়ে বলল,
“আমাকে মনে হয় ইতালি যেতে হবে।”
‘ইবরাতের অবয়বে আঁধার নেমে এল। ন্যাসোর শার্টের কোণা খামচে ধরে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল,“কেন?”
‘ন্যাসোর চোখ মোলায়েম হলো। ইবরাতের মাথাটা নিজের অস্থির বুকে রেখে বলল,“ফাদারের শরীরটা ভালো নেই।”
‘ইবরাতের কণ্ঠ থরথর করে কাঁপল, “রিদ ভাইয়া জানে?”
“না। ফাদার কাউকে কিছু বলেনি। মান-অভিমান চলছে ওদের মাঝে। গার্ডের কাছ থেকে খবর পেয়েছি আমি।”
“কী নিয়ে মান-অভিমান?”

‘ন্যাসো একটু থেমে বলল, “বস ফাদারের কথা না শুনে বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। এটাই হয়তো ক্ষোভের কারণ।”
‘ইবরাত হঠাৎ ন্যাসোর বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে চাপা উদ্বেগে বলল,“আপনি এই লাইন ছেড়ে দিন না, প্লিজ।”
‘লম্বা শ্বাস টানলো ন্যাসো। ইবরাতকে সোজা করে দু’হাতে ওর মুখ চেপে ধরে দৃঢ় স্বরে বলল,
“তুমি সবটা জেনে আমার জীবনে এসেছো, রাত। আমি যেই লাইনে আছি, এখান থেকে আজ বেরিয়ে গেলে কাল আমার মৃত্যু নিশ্চিত। আমার লাশটাও খুঁজে পাবে না তুমি। আমার সাথে তোমার জীবনেও আশঙ্কা রয়েছে।”
‘ইবরাতের চোখে জল জমে আসে। বিষন্ন অনুভূতিতে ওর নরম ভগ্ন হৃদয় ভেঙে পড়ে। ন্যাসোর হাতে হাত রেখে ভেজা গলায় বলল,
“আমি বিয়ের পর থেকে মৃত্যুকে ভয় পাই । আমি মরে গেলে, যদি আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেন।”
‘ন্যাসো হেসে দিল ইবরাতের সরল কথায়। তবে এই সরল কথার আড়ালে থাকা গভীর ভালোবাসার অনুভূতি ভেবে বুকে প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেল। ইবরাতের কপালে শক্ত করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। হঠাৎ চোখে পড়লো বিছানার বেডশিটে লেগে থাকা ছোপ ছোপ রক্তের দাগে।
“একি? বেডশিট চেঞ্জ করেনি কেন?”
‘বেডের দিকে তাকাতেই পায়ের নিচে শিরশির করে উঠলো ইবরাতের। ইবরাতের তনুমনে এক অজানা অনুভূতির সঞ্চার হলো। পেটে অজস্র প্রজাপতি উড়ে গেল। এক ঝাঁক লজ্জা বাসা বাঁধল যেন ওর গায়ে। বুকের ভিতর দ্রিম দ্রিম শব্দটা থামার নামই নেই। হৃদয়ের প্রতিটি ধ্বনি মুহূর্তে আরও তীব্র হয়ে ওঠে।কাইকুইঁ করে রিনঝিনে আওয়াজে বলল,

“বাসায় তো আর কোনো মেড নেই। আম্মুকে কীভাবে বলি এটা? আর আমার আলসেমি লাগছিল তাই।”
‘ন্যাসো বিষয়টা বুঝতে পেরে, ইবরাতকে ছাড়িয়ে কাউচে বসিয়ে কেবিনেট থেকে একটি নতুন বেডশিট বের করে নিল। ইবরাত মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল ন্যাসোর দিকে। তাদের বিয়ের আজ পাঁচ দিন, অথচ এই পাঁচ দিনেই কতো পরিবর্তন এই মানুষটার মাঝে। স্বামী, স্বামী একটা ভাব এসে গিয়েছে একদম। ন্যাসোর চওড়া তামুকে আজ অন্যরকম ভাব। স্বতঃস্ফূর্ত কদম। ওষ্ঠপুটে চঞ্চল হাসি। অথচ এই হাসি খুব কমই দেখেছে সকলে। গুরুগম্ভীর কঠিন মুখবিবর দেখে মনে হতো দমকানো ছাড়া কিচ্ছুটি জানে না। অথচ এই লোক যে মারাত্মক লেভেলের ঠোঁটকাটা আর আদুরে, এটা তার থেকে ভালো কে জানে? সম্পর্কটা কতটা তিক্ত ছিল, এখন সেটা সময়ই জানে। আর এখন, একজন দায়িত্ববান স্বামী।
‘ন্যাসো চাদর বদলাতে বদলাতে চোখ উঁচিয়ে ইবরাতের দিকে তাকাল। ভ্রু নাচাতেই ইবরাত দু’হাত ছড়িয়ে দিল। ন্যাসো দাঁড়িয়ে গেল, একগাল হেসে নিজেও দু’হাত ছড়িয়ে ইবরাতের দিকে এগোল। ইবরাত আর দেরি করল না, ন্যাসোর গলায় ঝুলে পড়ল। দু’পা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরল ন্যাসোর কোমর, অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেল একদম। মেয়েটা এমন আদুরেই! সারাক্ষণ গায়ের সাথে মিশে থাকতে চায়। এতে অবশ্য ন্যাসোরও কোনো আপত্তি নেই। তার বিশাল শরীরে ইবরাত যেন একটা বাচ্চার মতোই। ইবরাতকে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেই ন্যাসো অনায়াসে বেডশিট বদলে ফেলল।

‘ইবরাত ন্যাসোর ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আপনার সাথে থাকলে আর কিছু করতে ইচ্ছে করে না।”
‘ন্যাসো মৃদু হাসল, চোখে ভরলো একরাশ স্নেহ। “তাহলে এভাবেই থাকো সারাজীবন,” বলেই ইবরাতের কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। আকস্মিকভাবে ন্যাসো ইবরাতকে বিছানায় শুইয়ে দিল, তবে সম্পূর্ণ নয়। দু’হাত বিছানায় রেখে নিজের ভারসাম্য ধরে রেখে, ইবরাতের উপর ঝুঁকে রইলো। ইবরাতের হাত এখনো ন্যাসোর গলায় পেঁচানো, আর পিঠ লেগেছে বিছানার নরম চাদরে। ন্যাসোর চোখে ঝলক দিয়ে উঠল অন্যরকম কিছু—গভীর, দাবি জানানো, এবং একটু বুনো। ন্যাসোর দৃষ্টি বুঝতে পেরে তলপেটে অচেনা চাপ অনুভব করল ইবরাত। বুঝতে পারল, ন্যাসোর ইচ্ছাটা স্পষ্ট। ন্যাসো ধীরে ইবরাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে গেল। পুরুষালি, গভীর হাস্কি স্বরে ফিসফিস করে বলল,
“সুন্দর করে বিছানা গুছালাম। এবার চলো, এলোমেলো করি।”

‘ইবরাত শ্বাস আঁটকে রইল। তবে ন্যাসো আর কোনো উত্তর বা সম্মতির অপেক্ষায় থাকল না। মুখ ডুবিয়ে দিল ইবরাতের ঘাড়ের নরম মাংসে। ওর ঠৌঁটের স্পর্শে জ্বলন ধরিয়ে দিতে থাকল ইবরাতের সর্বাঙ্গে। ইবরাতের শরীর কেঁপে উঠল। দু’হাতে বিছানার চাদর খামচে ধরল। তাদের দ্রুত হয়ে আসা নিশ্বাস ভারি করে তুলল চারপাশের বাতাস। ঘরের পরিবেশ মুহূর্তেই বদলে গেল—আলোর নরম আভায় আবেগের গভীর স্রোত বয়ে চলল। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে তখনই কর্কশ শব্দে বেজে উঠল ফোন। ইবরাতের উপর থেকে সরে আসলো ন্যাসো। ইবরাত সঙ্গে সঙ্গে বেডশিট দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলল। হাঁপাচ্ছে দু’জনেই। ন্যাসো ফোন কেটে তপ্ত শ্বাস ফেললো। বিরক্তে চ’উচ্চারণ করে তিরিক্ষি মেজাজ দেখিয়ে বলতে থাকল,
“রাত, আমরা ফিউচার প্ল্যানিং করার সময় দূরে কোথাও যেয়ে নিবো হুহ? এখানে থাকলে বসের জ্বালায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কখনোই আনা সম্ভব নয়৷”
‘ইবরাত ঠৌঁট চেপে হাসতে লাগল। ন্যাসো ঝুঁকে অর্ধনগ্ন ইবরাতের কপালে গভীর পরশ একে নিচ থেকে শার্ট তুলে পরতে পরতে বেরিয়ে গেল। ইবরাত বিছানার শেষ প্রান্তে পরে থাকা ওর জামাগুলো নিয়ে গায়ে চাপিয়ে নিল।

‘এলিজাবেথ মেঝেতে বিধ্বস্ত হয়ে বসে আছে। অন্তঃকরণে উতাল-পাতাল ঢেউ খেলছে, তবুও চোখে এক ফোঁটা জল নেই। খরার মতো শুকিয়ে গেছে ওর কোমল ত্বক। বুকের গভীর থেকে উঠে আসা ভাঙনের শব্দ ওকেই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, অথচ নির্বাক বসে আছে এলিজাবেথ।ঠিক তখনই রুমে ঢোকে ইবরাত। হাতে একটা ক্যাট বাস্কেট। এলিজাবেথ দ্রুত নিজের কষ্ট আড়াল করে নেয় আলগোছে। এলিজাবেথ
চোখ তুলে তাকায় ইবরাতের দিকে, ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি সাজিয়ে।
‘ইবরাতের ঠোঁটে চঞ্চল হাসি। এগিয়ে আসতে আসতে বলল, “কিরে, তুই নিচে বসে আছিস কেন?”
‘এলিজাবেথ চাপা হাসি দিল, উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আয়, তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমি চলে যাবো। তার আগে তোকে কিছু কথা বলে যাচ্ছি, মন দিয়ে শুন।”
‘এলিজাবেথ কথার মাঝেই খেয়াল করল ইবরাতের হাতে ধরা বাস্কেটটা। ভেতরে তাকাতেই চোখ ঝলমল করে উঠল। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলল, “জুলিয়েট?”
‘ইবরাত কপাল কুঁচকালো। পাশে বসে বলল, “তুই এর মধ্যে নামও ঠিক করে ফেলেছিস?”
‘এলিজাবেথ তড়িঘড়ি করে বাস্কেটটা নিয়ে ভেতর থেকে ছোট্ট বিড়ালটিকে বের করল। বুকের সঙ্গে জড়িয়ে আদরে ভরিয়ে দিল। চোখ ভরে এলো অশ্রুতে।

“হ্যাঁ! দেখার সাথেই নাম ঠিক করে ফেলেছিলাম। কিন্তু… এটা এখানে আসল কীভাবে? আমি তো ভেবেছিলাম সেদিন ঐ ধ্বংসযজ্ঞে ওকেও হারিয়ে ফেলেছি, সবার মতো…”
‘গলার স্বর ভাঙল, কিন্তু চোখেমুখে এখন শোকের বদলে প্রশান্তির আভাস। বিড়ালছানাটাও যেন এলিজাবেথকে চিনতে পেরেছে। বহুদিনের আপন সঙ্গীর মতো একদম ঘাপটি মেরে রয়েছে ওর বুকে। আদরগুলো সাদরে গ্রহণ করছে, মিটিমিটি চোখ বুজে। এলিজাবেথ অনুভব করল, বুকের ভেতরের যন্ত্রণাগুলো যেন ধীরে ধীরে কমে আসছে। অস্থির হৃদয়ে এক ধরনের শীতলতা ছড়িয়ে পড়ছে।
“এখানে আসল কীভাবে? কে নিয়ে এসেছে?”
‘ইবরাত পায়ের নখে চিমড়াতে চিমড়াতে বলল, “রিদ ভাইয়া।”
‘রিচার্ডের নাম শোনামাত্রই এলিজাবেথের মুখ তেঁতো হয়ে গেল। তবুও চোখে চকচকে কৌতূহল ফুটে উঠল। বলল,
“কিন্তু কীভাবে? জুলিয়েটকে তো আমি রাস্তায় পেয়েছিলাম। ও তো অ্যাডপটেড না।”
‘ইবরাত খানিকটা বিরক্তি ঝেড়ে বলল, “আরে বাবা, ওরা কি এয়ারলাইন্স দিয়ে যাওয়া আসা করে নাকি? প্রাইভেট জেটে করে নিয়ে এসেছে!”
‘কথাটা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল এলিজাবেথ। জুলিয়েটকে বুকের সঙ্গে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরল, পুরনো স্মৃতির গভীর কোনো কষ্ট ধীরে ধীরে যেন মুছে যাচ্ছে। কিছু মনে হয়েই এলিজাবেথ জিভ দিয়ে ঠৌঁট ভিজিয়ে বলল,

“জুলিয়েট কি এতোদিন তোর কাছে ছিল?”
‘ইবরাত এবার হাতের নখ দাঁতের চিপায় দিল। এটা ওর জন্মগত স্বভাব—নখ কামড়ানো। নখে দন্ত বসিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
“আরে না! ভাইয়া তো মায়াকে কাউকে ধরতেই দেয়নি। আমি শুধু প্রথম দিন দেখেছিলাম আর আজ।”
‘এলিজাবেথের কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফুটে উঠল। সংকুচিত কণ্ঠে বলল, “মায়া কে?”
“ও,” বিড়ালটির দিকে ইশারা করে দেখাল ইবরাত। নাক ছিটকাল এলিজাবেথ। “মানে! কে ওর এই নাম দিয়েছে?”
‘ইবরাত এবার বেশ চঞ্চল ভঙ্গিতে এলিজাবেথের দিকে ঘুরে বসল। কণ্ঠে উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল,
“ভাইয়া! শোন না, ভাইয়া যেদিন ওকে নিয়ে এসেছিল, আমি নিতে চেয়েছিলাম। তখন আমাকে কী বলল জানিস?”
‘এলিজাবেথ ভ্রু গুছিয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি ছুড়ে দিল ইবরাতের দিকে। ইবরাত এবার কণ্ঠস্বর গম্ভীর করে ঘাড় উঁচু করে রিচার্ডের মতো ভঙ্গি ধরে বলতে শুরু করল,
“নোপ, ইট’স ভেরি স্পেশাল। আমি আমার স্পেশাল জিনিস কারোর সাথে শেয়ার করতে অবস্তু নই। সরি।”
‘কথাগুলো শোনার পরও এলিজাবেথের মুখে স্থিরতা থাকল, তবে চোখের ভেতরে তোলপাড় আরও স্পষ্ট হতে লাগল। ইবরাত আবারও একই ভঙ্গিমায় বলতে শুরু করল,

_আমি একটু সাহস করে বললাম, “স্পেশাল হওয়ার পিছনের কারণটা কি ভাইয়া?”_ওমা, ভাইয়া সবাইকে অবাক করে দিয়ে, কোনোরকম রাগ-ঝাঁঝ ছাড়াই, বিলম্বহীন জবাবে বলল, “স্পেশাল পার্সন।”_এই উত্তর শুনে আমি, এমনকি সবাই অবাক। উনার দিকে তাকালে উনি আমাকে চোখে ইশারায় সবটা বুঝিয়ে দিলেন। পরে বুঝলাম স্পেশাল মানুষটা যে কে।”
‘এইটুকু বলে মিটিমিটি হাসল ইবরাত। আবার বলতে শুরু করল _”এরিমধ্য ভাইয়া লোকা ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, “লোকা, বেস্ট ক্যাট ফ্রুট নিয়ে আসবে। আই ওয়ান্ট টু গিভ হার প্রিন্সেস ট্রিটমেন্ট, দ্য ওয়েও মায়া ডিজার্ভস।”
‘এতটুকু শুনে এলিজাবেথের মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকল, তবে কোনো উত্তর মিলছিল না। ইবরাতে নিজের মতো বলতেই আছে,

“যখন ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম মায়া কে, তখন ভাইয়া ওকে দেখালো। মায়া নাম কেন রেখেছে, জিজ্ঞাসা করাতে বলল, “কজ শি এক্সাক্টলি লুকস লাইক ইউর সিস্টার। তাই মিলিয়ে রেখেছ।” এলিজাবেথ কতো কিউট, না?”
‘এইটুকু বলে ইবরাত হো হো করে হাসতে শুরু করল। ওর গাল ব্লাস করছে। এলিজাবেথের চোখজোড়া বিস্ময়ে ভরে উঠল। অজানা এক ভালোবাসার আভাস ছেয়ে গেল মনের আকাশে। বুকের ভেতর দ্রিম দ্রিম শব্দ হতে থাকলো,সেই শব্দগুলো অন্তরের গভীরে এক অজানা তৃপ্তি নিয়ে আসছিল। এলিজাবেথ কিছু বলতে যাবে, তখনই বাইরে থেকে বিকট গুলাগুলির শব্দ ভেসে এলো। কেঁপে উঠে দুজনেই। ভয়ে বিড়াল ছানাটি এলিজাবেথের বুকের সাথে আরো শক্ত করে চেপে যায়। শব্দ ক্রমশ বাড়তেই থাকে, যেন কোনো এক অমঙ্গল সংকেত নিয়ে আসছে।
‘এলিজাবেথ তড়িঘড়ি করে বিড়ালটিকে বাস্কেটে ঢুকিয়ে দিল। ইবরাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “কি হচ্ছে এসব? ওনারা কোথায়?”

‘এলিজাবেথের গলা কাঁপছে। তার থেকেও বেশি কাঁপছে ইবরাতের গলা, শরীর। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
“ওরা তো বেজমেন্টে গেল। এলিজাবেথ, এসব কি হচ্ছে? আমার খুব ভয় করছে রে।”
‘এলিজাবেথ বাস্কেটটি ইবরাতের কাছে দিয়ে দ্রুত জানালার কাছে গেল। বাইরে তাকাতেই গাঁ শিউরে উঠে। লনে গার্ডদের লাশ বিছিয়ে পড়ে আছে। যারা আক্রমণ করেছে ওরা বাইরের কেউ, ভাবতেই বুক শুকিয়ে এলো এলিজাবেথের। এই মুহূর্তে রিচার্ড ছাড়া তাদের কে বাঁচাবে? কিন্তু, কিন্তু_বেজমেন্টে বাইরের কোনো শব্দ যায় না, আর না ভিতরের শব্দও বাইরে আসে। এখন কি হবে?এরই মধ্যে অনেকগুলো পায়ের শব্দ ভেসে এলো। দলবেঁধে কারা যেন উপরে আসছে। এলিজাবেথ ছুটে গিয়ে ইবরাতকে বুকের সাথে চেপে ধরে৷ তাদের নিরাপত্তার শেষ আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায়। যদিও সে নিজেও দূর্বল। ইবরাত কেঁদে দেয়। ভয়ে জাপ্টে ধরে এলিজাবেথকে।

‘তখনই ছদ্মবেশী দশেরও অধিক লোকের দল উপরে চলে আসে। তাদের দেখামাত্রই ইবরাত এলিজাবেথের বুকে মুখ লুকিয়ে ভয়ে চেঁচাতে থাকে। হাতে ঝুলে থাকা বাস্কেটের ভেতর বিড়ালটিও ভয়ে গুটিয়ে যায়। এলিজাবেথের চোখের পাপড়ি কাঁপতে থাকে। শিউরে ওঠে অভ্যন্তর ওদের হাতের অস্ত্রের সমাহার দেখে। ছদ্মবেশীদের মধ্যে একজন ফোনে ছবি দেখে, এলিজাবেথের দিকে তাকিয়ে বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল, “এটাই সেই মেয়ে। নিয়ে চল এটাকে!”
‘সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন এগিয়ে এসে এলিজাবেথের বুক থেকে ইবরাতকে সরিয়ে, এলিজাবেথকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে আসতে থাকে। ইবরাত ছাড়ে না এলিজাবেথের হাত, ওদের সঙ্গে জোরাজুড়ি করে ছাড়াতে চায় এলিজাবেথকে। হাউমাউ করে কেঁদে আকুতি-মিনতি করতে থাকে, “ছেড়ে দাও আমার বোনকে, প্লিজ!” একইভাবে কাঁদছে এলিজাবেথও। বাস্কেটটা পড়ে যায় এক কোণায়। দুই প্রান্তে দুইজনের হাতে ধরে টানতে থাকে ঘাতক, তাদের আলাদা করার জন্য। ইবরাত শক্ত হাতে চেপে ধরে রেখেও পারছে না, তবে ছাড়ছে না। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যায়, বোনকে রক্ষা করার জন্য। গুমোট পরিবেশ অস্থির হয়ে ওঠে তাদের আহাজারিতে, যেন পৃথিবীটাও যেন থেমে গেছে।

‘ইবরাতের হাত শক্ত করে ধরে ছিল এলিজাবেথ, কিন্তু সন্ত্রাসীরা ওকে আরও শক্তভাবে টানছিল। এলিজাবেথের মুখে ভীতি আর কষ্ট, চোখে পানি জমে গেছে। “আপনারা দয়া করে ছেড়ে দিন আমার বোনকে, ইবরাত ছেড়ে দে আমায় !”—এলিজাবেথের কণ্ঠে অনুনয়, ভিতরে দূর্বার যন্ত্র এতোই ছটফট করছে যেন পৃথিবী ওর চারপাশে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ইবরাত, বুকের ভিতরে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছিল, কিন্তু সন্ত্রাসীদের শক্তি তাঁর সব চেষ্টা নস্যাৎ করে দিচ্ছিল। শেষে, উপায়ন্তর না পেয়ে একজন ছদ্মবেশী ইবরাতের মাথায় বিশাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। সাথে সাথে ইবরাতের মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। শরীর ছেড়ে নিচে পড়ে যায়, তবুও শেষ পর্যন্ত লড়ে যায়, নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে বোনকে রক্ষা করার জন্য।

‘এলিজাবেথ অসহায় চোখে দেখতে থাকে রক্তাক্ত ইবরাতকে। ঘাতকটি লাথি মেরে ইবরাতকে সরিয়ে, এলিজাবেথকে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। এলিজাবেথের চোখে ঘোলাটে জল জমে আসে, বুকের ভেতর এক অসীম শূন্যতা অনুভূত হয়। কিন্তু ভেতরে এক ভয়াবহ প্রতিজ্ঞা জাগে—সে নিজের বোনের জন্য কিছু করবে, নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও। এলিজাবেথকে টেনেহিঁচড়ে রুম থেকে বের করার সময় কৌশলে পায়ে ধাক্কা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। যার ফলে ইবরাত রক্তাক্ত অবস্থায় ঠেঙ্গাতে ঠেঙ্গাতেও আর আসতে না পারে। এই দরজার চাবি রিচার্ড ছাড়া কারোর কাছে নেই, আর রিচার্ডের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ছাড়া খুলেও না।

‘একজন ক্রোধের বশীভূত হয়ে এলিজাবেথ কে রেলিঙের উপর ফেলে ওর গলা চেপে ধরে। নিশ্বাস আঁটকে চোখ ঝাঁপিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। এলিজাবেথের গলা চেপে ধরা হাতটি হঠাৎ আলগা হয়ে গেল। কাশতে কাশতে গভীর শ্বাস নেয় এলিজাবেথ, চোখে কুয়াশা জমে গেছে। নিচে তাকাতেই দেখতে পেল, তাকবীর দাঁড়িয়ে আছে, হাতে বন্দুক। চোখ জ্বলজ্বল করছে, দৃঢ়তা আর ক্রোধের মিশেলে। মেঝেতে পড়ে থাকা ঘাতকের মাথা ছিন্নভিন্ন, রক্ত ছড়িয়ে আছে চারপাশে। তাকবীরের উপস্থিতি মুহূর্তেই এলিজাবেথের ভাঙা আত্মাকে জোড়া লাগাল। কিন্তু শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হলো না। উপর থেকে আরও শত্রুরা তাকবীরের দিকে তেড়ে আসতে থাকে। তবে তাকবীর অবিচল থেকে নিপুণ দক্ষতায় একে একে তাদের গুলি করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।

‘ইতোমধ্যে, এক সন্ত্রাসী এলিজাবেথের হাত ধরে টানতে শুরু করে। এলিজাবেথ দিশেহারা হয়ে তাকবীরের দিকে ফিরে চেঁচাতে থাকে, “ভালো মানুষ, আমাকে বাঁচান !” তাকবীর এক পলকের জন্য থামে, তাদের চোখ মিলতেই মনে হলো, যেন তারা দুজনই পরস্পরের জন্য শেষ ভরসা। হঠাৎ পিছন থেকে একজন তাকবীরের মাথায় আঘাত করে। পড়ে গেল তাকবীর। কপাল বেয়ে উষ্ণ তরল গড়িয়ে পড়লো। তবুও তাকবীর নিটল। রক্তাক্ত হয়ে গেলেও, সে ঘাতকের কাঁধে সুট করে এলিজাবেথকে মুক্ত করে, ছাড়া পেয়েই এলিজাবেথ ছুটে আসে তাকবীরের কাছে। এলিজাবেথ এক নিঃশ্বাসে তাকবীরের মাথার রক্তাক্ত জায়গায় চেপে ধরে, চোখে ভয় আর অসীম কষ্টের মিশ্রণ। নিচ থেকে আরো লোক উপরে আসছে, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে তাদের৷
‘তাকবীর ক্লান্ত, কিন্তু অবিচল থেকে এলিজাবেথকে বলে যাচ্ছে , “এলোকেশী প্লিজ যাও, ওরা আসছে!” কণ্ঠে অস্থিরতা, এক শেষ চেষ্টায় প্রার্থনা।
‘এলিজাবেথ তাকবীরের কথায় কাঁদতে থাকে, অঝোরে।

“আপনাকে এই অবস্থায় ফেলে আমি কি করে যাবো?” কান্না থামাতে পারে না এলিজাবেথ, শ্বাস ভারী হয়ে ওঠে।
‘তাকবীর জোর দিয়ে বলল, “আমি জন্মের পর থেকে কষ্ট পেতে পেতে এই জায়গায় এসেছি। প্লিজ, আমার কথা ভেবো না। পালাও তুমি। আমি তোমাকে হারাতে চাই না এলোকেশী।”
‘এলিজাবেথ তাকবীরের হাত থেকে আস্থা হারানোর ভয় নিয়ে, কণ্ঠে এক ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজে বলল, “আমিও আমার আস্থার জায়গা হারাতে চাই না ভালো মানুষ।”
‘তাকবীরের কণ্ঠ এবার কঠিন হয়ে উঠলো, “এলিজাবেথ, আমার কসম লাগে, তুমি পালাও।”
‘এলিজাবেথ আরও অসহায় হয়ে পড়ে। এলিজাবেথ জানে, একে অপরকে হারানোর কোনো উপায় নেই, কিন্তু তাকবীর ওকে পালানোর অনুরোধ করেই যাচ্ছে। তখনই সিঁড়ির উপরে আরো শত্রু এসে পড়ে। এলিজাবেথ শক্ত হয়ে জমে থাকে, ঠিক কী করবে বুঝে উঠতে পারে না, শুধু কান্না আরও তীব্র হতে থাকল। তাকবীর এবার এলিজাবেথের হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিয়ে, এক শোকার্ত চিৎকারে বলল, “এলিজাবেথ, পালাও!” তাকবীরের কণ্ঠে আর কোনো কোমলতা ছিল না, শুধুই কঠোরতা। কখনোই তাকবীর এভাবে এলিজাবেথকে নাম ধরে ডাকে না, কিন্তু এবার তাকবীর তা করে এলিজাবেথকে শেষ বার্তাটা দেয়।

‘এলিজাবেথ কাঁদতে কাঁদতে উঠে দাঁড়ায়, সিঁড়ির দিকে ছুটতে থাকে। কয়েকজন শত্রু এলিজাবেথের পেছনে আসতে চেষ্টা করলে, তাকবীর তাদের পা জাপ্টে ধরে। ওরা তাকবীরের ওপর পা দিয়ে আঘাত করে নিজেদের ছাড়িয়ে এলিজাবেথের পেছনে ছুটে যায়। যেন তারা আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এলিজাবেথকে শেষ করেই ছাড়বে। ধ্বংসযজ্ঞ, পাপাচারে নিবিষ্ট এক অন্তহীন মরিচীকায় গুন ধরা বিভীষিকাময় জীবন থেকে যতোই এলিজাবেথ পালাতে চায়না কেন, বিপদ ওকে ছাড়ে না। হঠাৎ করেই তাকবীরের চোখের রঙ পরিবর্তন হয়ে গেল।ওর মস্তিষ্কে জমে থাকা ক্রোধ বিস্ফোরিত হয়ে দেহের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়ল। চোখে তীব্র হিংসা, মুখে পৈশাচিক ঘৃণা, যেন ও সমগ্র পৃথিবীটাকে ভেঙে ফেলতে চায়। এটি তাকবীরের একটি বিভীষিকা, এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা, যা কখনো দেখা যায়নি।—তাকবীরের মাঝে আর কোনো মানবিকতা বয়ে নিয়ে আসছে না, এখন শুধুই ঘৃণায় টানানো এক ভয়ঙ্কর পশু। হিংস্রতার বশীভূত হয়ে ছুটে গেল ছাদের দিকে।

‘তাকবীর যেতে যেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ততোক্ষণে এক ভয়ঙ্কর ধাক্কায় একজন এলিজাবেথকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। সময় যেন সেখানে থমকে গেল, তাকবীরের চোখে। স্তব্ধ হয়ে রইল তাকবীর। তবে এলিজাবেথ পড়েনি। ঘাতকের হাতে ধরে ঝুলে ছিল, প্রাণপণে বাঁচার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। হাত বার বার ছুটে যাচ্ছিল। তখনও এলিজাবেথের হাতে লেগে ছিল তাকবীরের তাজা রক্ত। ঠিক তখনই, বেজমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে রিচার্ড, ন্যাসো এবং লুকাস। তাদের চোখ লনে পড়তেই, রিচার্ডের শিরদাঁড়া সোজা হয়ে যায়। ন্যাসো বিপদের আভাস পেয়ে এক মুহূর্তও দাঁড়ায় না। পিছনের পকেট থেকে রিভলভার বের করে, দ্রুত ভিতরে ছুটে যায়।
‘দূর থেকে, লুকাসের চোখ পড়ল ঝুলন্ত এলিজাবেথের দিকে, যে আপ্রাণ চেষ্টা করছিল উপরে উঠতে। তবে ঘাতকটি এলিজাবেথের হাতে অনবরত আঘাত করে যাচ্ছিল। লুকাস ঘাবড়ে রিচার্ডের দিকে তাকায়, যার চোখে কোনো অনুভূতি নেই, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আগে থেকেই তাকিয়ে ছিল এলিজাবেথের দিকে। রিচার্ডের চওড়া তামুকে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন দেখা যায়নি। লুকাস অস্থির হয়ে একবার রিচার্ডের দিকে, আবার এলিজাবেথের দিকে তাকাচ্ছে। খুব অবাক হচ্ছিল, রিচার্ডকে এত শান্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।

‘রিচার্ডের চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল, যেন সে কিছু খুব ভালো করে দেখছে। হঠাৎ করেই রিচার্ডের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। এই পরিস্থিতিতেও রিচার্ডকে হাসতে দেখে, লুকাসের চোখ ছলকে উঠে। তখনই রিচার্ড পকেট থেকে রিভলভার বের করে, এলিজাবেথের হাত বরাবর সোজা তাক করল। লুকাসের চোয়াল ফাঁক হয়ে যায়। এক মুহূর্তে, রিভলভার থেকে ধোঁয়া উড়িয়ে, একটা বুলেট এলিজাবেথের আঙুলের ফাঁক দিয়ে গিয়ে সোজা ঘাতকের হাতে বিঁধে গেল। এলিজাবেথের হাত শিথিল হয়ে পড়তে যেতে লাগল, কিন্তু তার আগেই রিচার্ড বাতাসের মতো ছুটে গিয়ে এলিজাবেথকে ধরে ফেলল। এলিজাবেথ ভয়ে রিচার্ডের কোলে পড়া মাত্রই চেতনা হারায়।
‘রিচার্ড অচেতন এলিজাবেথের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল। অতঃপর ধীরে ধীরে চোখ উঠল উপরে তাকবীরের দিকে। তাকবীরের চোখে চোখ পড়তেই রিচার্ডের চিবুক শক্ত হয়ে গেল। একইভাবে তাকবীরের চোখেও জ্বলে উঠল দৃঢ়তার আগুন। দু’জনের মাঝখানে অদৃশ্য এক বিদ্যুৎচমক ছড়িয়ে পড়ল।

‘বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের মালিক কাদের মজুমদার, কোম্পানির ম্যানেজার কামরুল, এমডি এবং একজন সহকারী—এই চারজনই গত পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ। তাদের পরিবার থেকে এ নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ জানানো হয়নি, যা রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে। গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা এবং সমালোচনা চললেও তাদের পরিবার চুপ থেকেছে, যা সাধারণ মানুষের মনে আরও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মগোপন করেছেন। কিন্তু কেন? তাদের একসাথে হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা আজও অজানা। বর্তমানে কোম্পানির সব দায়িত্ব সরকারের হাতে। দেশের স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকার প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সচল রেখেছে, তবে এর মালিকদের অনুপস্থিতি একটি স্থায়ী ধাঁধার মতো থেকে গেছে।
‘চারজনের মধ্যে একজন কোম্পানির ম্যানেজার হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রিচার্ডের সেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের স্যাতস্যাতে বেজমেন্টে। পাঁচদিন ধরে অনাহারে থাকার কারণে তার চোয়াল হাড়ের সঙ্গে মিশে গেছে, কিন্তু তার চোখের তেজ এখনো ম্লান হয়নি। মধ্যবয়সী শরীর দুর্বল হলেও মানসিক জোর একটুও কমেনি। লুকাসের মতো হিংস্র মানব প্রতিদিন তার উপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে। থাবার মতো হাত দিয়ে তাকে পিষেছে, কিন্তু পাঁচদিনেও মুখ দিয়ে একটি শব্দ বের করতে পারেনি। ম্যানেজারের নিস্তব্ধতা প্রতিটি আঘাতের চেয়েও ভারী হয়ে উঠছিল।

‘ হঠাৎ বেজমেন্টের সাটার কর্কশ শব্দ তুলে উপরে উঠতে থাকে। স্যাতস্যাতে ঘরে হালকা আলো ঢুকতেই কামরুল আতঙ্কে চোখ বুঁজে ফেলে। হৃদপিণ্ড দ্রুত লাফাচ্ছিল, আরেকটি নৃশংস আঘাতের অপেক্ষায়। কিন্তু আজ কিছু ভিন্ন ঘটল। রিচার্ড, লুকাস, এবং ন্যাসো তিনজন একসাথে বেজমেন্টে প্রবেশ করল। আশ্চর্যজনকভাবে তাদের চোখেমুখে ছিল না কোনো হিংস্রতার ছাপ। লুকাস নীরবে এসে কামরুলকে সোজা করে বসাল। ন্যাসো চেয়ারের পায়ের শব্দ তুলে একটি চেয়ার এনে রাখল ঠিক কামরুলের সামনে। রিচার্ড ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে পায়ের উপর পা তুলে বসল কামরুলের সামনে। ঠোঁটের কোণে সেই চিরচেনা বাঁকা হাসি। কিন্তু সেই হাসির পেছনে কি লুকিয়ে আছে, তা বোঝা অসম্ভব। রিচার্ড রুক্ষ কর্কশ গলায় অর্নথক হাসি হেসে চাপা স্বরে বলল,
“মানতেই হবে তোর দম আছে।”
‘রিচার্ডের বিদ্রুপ মাখা স্বরে কামরুল চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। চিবুক শক্ত করে, নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। রিচার্ড ঠোঁট কামড়ে বিদ্রূপে হেসে ওঠে।

“তবে, তোর ছেলের একদমই নেই। বাপের মতো হইলো না পোলা।”
‘সঙ্গে সঙ্গে মাথা তোলে কামরুল। বুকের ভেতর দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। রিচার্ডের দিকে চেয়ে গর্জে ওঠে,
“কুত্তার বাচ্চা! আমার ছেলেকে কিছু করলে তোকে আমি—”
‘কথা শেষ করতে দেয় না রিচার্ড। তার আগেই ঠাণ্ডা গলায় বলে ওঠে,
“আইডিয়াল কলেজ! সাবজেক্ট সাইন্স! উচ্চতা পাঁচ ফুট সাড়ে আট! কুঁকড়া চুল! বাদামী চোখের মনি! ডাস্ট এলার্জি আছে! তবে ক্যারেক্টার পেয়েছে একেবারে বাপের ষোল আনা। কাউন্সিলরের মেয়ের সাথে কাল রাতেও হোটেলে ছিল।”
‘কামরুলের মুখে কথা আটকে যায়। রিচার্ডের চোখে ঠাণ্ডা নিষ্ঠুরতা। কামরুল থমকে রইল, বুকের তেজ মিইয়ে গিয়ে চোখে ফুটে ওঠে নিখাদ ভয়। রিচার্ড আবারও ঠৌঁট কামড়ে হাসল কামরুলের দিকে চেয়ে। নিরেট ঠান্ডা গলায় বলতে থাকল,

“লতা আন্টি। দেখতে তো বেশ সুন্দরী। বয়স বাড়লেও মনের উত্তাপ কিন্তু কমেনি একটুও। আইডিয়াল কলেজের প্রফেসরের সাথে দেখলাম বেশ ভালো সখ্যতা, এপার্টমেন্টে যাতায়াতও নিয়মিত।”
‘রিচার্ডের বিদ্রুপভরা কথায় কামরুলের চোখ ঝলসে ওঠে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাবে তার আগেই রিচার্ড হেসে দু’পাশে মাথা নাড়িয়ে থামিয়ে দেয়। তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ন্যাসো আর লুকাসের দিকে ইশারা করল চোখে। ন্যাসো দ্রুত ছোট একটা টুল এনে রাখে তাদের মাঝখানে। লুকাস টুলের উপর ল্যাপটপ রেখে কামরুলের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। ল্যাপটপে ভিডিও প্লে হতে না হতেই কামরুলের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। ভিডিওর দৃশ্যগুলো তার মনের উপর হানাদেয় এক নিষ্ঠুর আঘাতের মতো। ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নেয় কামরুল। একজন স্বামীর পক্ষে নিজের স্ত্রীর এমন অন্তরঙ্গ মুহূর্ত আরেক পুরুষের সঙ্গে দেখা কখনোই সম্ভব নয়। রিচার্ড শব্দ করে হাসল। হাসিগুলো গিয়ে সরাসরি বিঁধতে থাকে কামরুলের শরীরে। রিচার্ড হেসে ঝুঁকল কামরুলের দিকে। ঠাণ্ডা গলায় বলল,

“কিন্তু এটা তো কেবল শুরু, কামরুল। এখনো অনেক কিছু দেখা বাকি।”
“কি চাস তুই।”
‘এতোক্ষণে গিয়ে মুখ খুলল কামরুল। ভাঙা গলায় কথাগুলো বলতেই রিচার্ড অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। রিচার্ডের হাসি কামরুলের ভেতরটা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা তীব্র যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি। হাসি থামিয়ে রিচার্ড আবারও ঝুঁকে হিসহিস করে বলল,
“কাদের।”
‘কামরুল অসহায় কণ্ঠে বলল, “আমি সত্যি জানি না স্যার কোথায় আছে।”
‘রিচার্ড ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসল। অতঃপর মুহুর্তেই বদলে গেল ওর চেহারার রঙ। হিংস্র ভাবে গর্জে উঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
“মাদারবোর্ড, আমাকে কি তোর শালা ভেবেছিস? তোর সাথে খাতির করে, তুই যা বলবি, আমি সেটাই বিশ্বাস করব? বল, কাদের কোথায়?”
‘কামরুলের কণ্ঠের তেজ যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। এতদিন অন্ধকার বেজমেন্টে থেকেও যতটা দমবন্ধ লাগেনি, রিচার্ডের চোখের ধাঁধাঁর সামনে এখন ঠিক ততটাই লাগছে। গভীর শ্বাস ফেলে কামরুল ভাঙা স্বরে বলল,
“সত্যি আমি জানি না। শেষবার স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছিল প্রায় দুই মাস আগে। তখন তিনি থাইল্যান্ডে ছিলেন। তুই যখন বাসেদকে মেরেছিলি, তখনই তিনি আমাকে ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন পালিয়ে যেতে। তিনিও পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।”
‘রিচার্ড সোজা হলো। নাটকীয় ভঙ্গিতে পায়ের উপর পা তুলে বসল। নিরুদ্বেগহীন ভাব নিয়ে নিরুদ্বেগ গলায় বলল,
“ওকে! আমিও যখন লাস্ট খবর নিয়েছিলাম, তখন তোর ছেলের শরীরের পঁচিশ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।”

‘আঁতকে উঠল কামরুল। তড়িঘড়ি করে বলে উঠল,
“তোর পায়ে পড়ি, আমার ছেলের কোনো ক্ষতি করিস না! আমি সত্যি বলছি, আমি কিছুই জানি না।”
‘রিচার্ড সরু গলায় বলল, “কাদের এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আছে। এবার কোথায় থাকতে পারে, সেটা বল।”
‘রিচার্ডের স্বাভাবিক গাঁ-ঝাড়া ভঙ্গি থাকলেও কামরুলের চোখে সন্দেহের ছাপ স্পষ্ট। সে তো নিজেও জানে না যে কাদের দেশে আছে। রিচার্ড কামরুলের চোখের সেই জড়তা লক্ষ করে চাপা ক্ষোভ জমিয়ে চাপা গলায় রেসিয়ে রেসিয়ে বলল,
“তোর বাপ তোকে বাঁচানোর জন্য লোক পাঠিয়েছিল, আর তুই সেটা জানিস না? শালা, কাদের মস্ত বড় ভুল করেছে। নিজের পাপ দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এবার তার ফল ভোগ করতেই হবে শুয়োরের বাচ্চাকে। বাঁচার জন্য কয়দিন সময় দিয়েছিলাল।”

‘কামরুল ছেলের চিন্তায় দিশেহারা। অন্য আর কিছুই তার মাথায় যাচ্ছে না। হঠাৎ রিচার্ডের পায়ের পড়ে কাঁদতে শুরু করে। “তোর পায়ে পড়ি, আমার ছেলেকে কিছু করিস না!”
‘লুকাস এক লাথি মেরে কামরুলকে দূরে ফেলে দেয়। মুখ থুবড়ে ছিটকে গিয়ে পড়ে কামরুল। ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস নিতে নিতে ভেজা চোখে মাথা তোলে কামরুল। পরিস্থিতি পরিষ্কার—এখানে সত্য বলা ছাড়া বাঁচার আর কোনো উপায় নেই। খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে রিচার্ড পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে। কামরুল ভাঙা গলায় বলে,
“স্যার বাংলাদেশে থাকলে প্রতি শনিবার গভীর রাতে ডিটিআই বারে যায়। তবে আমি সত্যি জানি না এখন তিনি কোথায়। উনার হাত বিশাল, সবকিছু আমার—”
‘বাক্য শেষ হওয়ার আগেই বন্দুকের আওয়াজ বেজে ওঠে। কামরুলের মগজ ছিটকে গিয়ে পড়ল দেয়ালে। রিচার্ড ধীর পায়ে রিভলভারের নলে এক ফু দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ব্যস্ত পায়ে হেঁটে বেজমেন্টের দিকে যেতে থাকল, পিছন পিছন গেল ন্যাসো। লুকাস টর্চার সেল থেকে কা°টারি, চাপা°তি নিয়ে নিজের কাজে লেগে পড়ল।

‘ধরিত্রীতে আঁধারের চাদর টানানো, রাতের মধ্যম প্রহর। পৃথিবী ক্লান্ত, ঘুমে মগ্ন সবাই, কিন্তু রিচার্ডের চোখে ঘুম নেই। তার মগ আধখালি, বাকি ভরা অনির্বাণ যন্ত্রণায়। হৃদয়ের গভীরে দাউদাউ আগুন জ্বলছে। তবে গ্যাংস্টার বস হিসেবে সে কখনোই স্বীকার করবে না—তার মনে কষ্ট থাকতে পারে, এমন ভাবনাও তার জন্য অপরাধ। রিচার্ড নিঃশব্দে বসে আছে, এক দৃষ্টিতে খালি জায়গায় তাকিয়ে। শক্তপোক্ত টানাপোড়ান আর বিষাদের প্রাচীর ঘিরে রেখেছে তাকে। তবু মুখে সেই চিরাচরিত তামাসার ছাপ। লিভিং রুমে ঢোকে ন্যাসো আর লুকাস, ঘুমজড়ানো চোখে। রিচার্ডের তলবেই আসতে হয়েছে তাদের। কাউচে হেলান দিয়ে বসা রিচার্ড তখনও গ্লাস হাতে অনবরত মদ পান করে যাচ্ছে। মুখে এক অদ্ভুত, অন্ধকার হাসি। লুকাস ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
“বস, কিছু বললেন?”

‘রিচার্ড একবার লুকাসের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসল। অতঃপর মৃদু স্বরে বলল, “জীবন আর পেছনের দরজা দিয়ে পালাতে দিচ্ছি না। এবার সব শেষ করব।”
‘ন্যাসো আর লুকাস কিছুক্ষণ চুপ থেকে একে অপরকে অবাক দৃষ্টিতে দেখল। তারা বুঝতে পারল না, রিচার্ড কী বলতে চাইছে। কিন্তু রিচার্ডের চোখে এক অদ্ভুত আভা, এক ধরনের অদৃশ্য পরিকল্পনা যে তাকে তাড়া করছে, তা পরিষ্কার ছিল। রিচার্ড ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে টেবিল থেকে দু’টো টিকিট তুলে তাদের দিকে বাড়িয়ে দিল।
‘ন্যাসো প্রথমে শব্দহীনভাবে টিকিটগুলো নিয়ে চোখ বুলাল। লুকাসও তাই করল। সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ছুটে গেল দুজনেরই। রিচার্ড ওদের কিছু বলতে না দিয়ে নিজে থেকেই বলতে থাকল,
“আমি যেই খেলায় নামতে চলেছি, সেখানে ধ্বংস ছাড়া কিছুই নেই। ন্যাসো, তুমি সংসার সাজাও। আমি সুইজারল্যান্ডে সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। তুমি আর ইবরাত সেখানে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করো। আর লোকা, তুমি দেশে ফিরে যাও, বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করো।”

‘তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ একে অপরের দিকে তাকাল। পরপর কোনো কথা না বলে, ন্যাসো ও লুকাস একে অপরকে নিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। রিচার্ড তপ্ত শ্বাস ফেলে কাউচে মাথা এলিয়ে দিল। গভীর শ্বাস ফেলে, চোখ বন্ধ করে নিজেকে প্রস্তুত করছিল। কিন্তু হঠাৎই, মাথার দু’পাশে বন্দুকের লোডেড শব্দ খুব কাছ থেকে শুনে তুষ্ট হাসল রিচার্ড। ট্রিগারের টিপে চাপ পড়ল, কিন্তু রিচার্ডের মুখে এক ফুটো হাসি ফুঁটে উঠল, ভয়ের পরিবর্তে। আত্মবিশ্বাসী চেহারা। হেসে দিল লুকাস,ন্যাসোও৷ পরপরই রিচার্ডের দু’পাশে এসে বসল দু’জন, রিচার্ডকে সঙ্গ দিতে শুরু করল।
হাতে তুলে নিল ওয়াইনের বোতল। তাদের একসাথে এই বসা যেন ভয়ংকর ভবিষ্যতের প্রস্তুতি ছিল। রিচার্ড আবার গ্লাসে মদ ঢালতে শুরু করল, চোখে এক নিষ্ঠুর পরিকল্পনার আভাস। ন্যাসো গ্লাসে চুমুক বসাতে বসাতে বলল,
“আমাদের বস কি তবে ভয় পাচ্ছে?”
‘রিচার্ড বাঁকা হেসে বলল,”যেই যন্ত্রে ভয় হয়, সেটা আমার নেই।”
‘মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো ন্যাসো, আবারও বলল,
“তবে যে আমাদের সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন?”

‘রিচার্ড সোজা হয়ে বসল। গম্ভীর হলো ওর কণ্ঠস্বর,”আমার কিছু না থাকলেও তোমাদের সাথে দু’টি জীবন জড়িয়ে আছে। আমি চাই না আর কারোর পরিবার ভেঙে যাক।”
‘পাশ থেকে লুকাস বলল,”আপনার কেউ নেই বুঝি?”
‘রিচার্ডের কাঠকাঠ জবাব,”জীবনে কাউকে রাখা মানে তার উপর নির্ভরশীল হয়ে যাওয়া৷ রিচার্ড কায়নাত কারোর উপর নির্ভর হতে জানে না।”
‘হঠাৎ ন্যাসো রিচার্ডের সামনে একটা পেপার ধরল। তাকাতেই চোখ শক্ত হয় রিচার্ডের। রুষ্ট গলায় চাপা স্বরে বলল,”কোথা থেকে পেয়েছো এটা?”
‘জবাব ন্যাসো দিল, “ম্যাম রুমে ভাঙচুর করার সময় এটা বেরিয়ে এসেছিল কেবিনেট থেকে। গার্ড ক্লিন করার সময় পেয়ে আমাকে দিল।”

‘সঙ্গে সঙ্গে রিচার্ড ছো মেরে পেপারটি নিয়ে নিল। আজ ন্যাসোর স্বরে খুবই দৃঢ়তা, বলল,
“এখনো আপনি সবকিছু অস্বীকার করবেন? আপনি কেমন মানুষ? নিজের মনের কাছে প্রশ্ন করতে কেন ভয় পান?”
‘রিচার্ডের সমুদ্র নীল চোখ দু’টোয় ধীরে ধীরে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত জমা হতে শুরু করে। ক্রোধে ধারালো চোয়াল মটমট করতে থাকে,কিছু অপ্রকাশিত কথার চাপ সহ্য করতে না পেরে। ন্যাসো, অবিরাম পিছু ছুটে চলা এক অভিশাপের মতো জিদ ধরলো আজ৷ বলল,
“হ্যাঁ, এটা সত্য, রিচার্ড কায়নাত প্রেমে পড়েছে।”
‘রিচার্ড, ন্যাসোকে চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রেখে বলল, “আই ওয়ার্ন ইউ ন্যাসো।”
‘ন্যাসো শান্তভাবে, কিন্তু দৃঢ় গলায় উত্তরে বলল, “না, বস, আপনাকে আজ মানতেই হবে।”

“তোমরা যাকে ভালোবাসা বল, তা আসলে মোহ—বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ভালোবাসা কখনোই বাস্তবতার যুদ্ধে জয়ী হতে পারে না। আমি চাই না সেই হেরে যাওয়া ভালোবাসা, যা শুধুমাত্র আবেগের নরম পর্দায় ঢাকা থাকে। আমি বিশ্বাস করি, ভালোবাসা ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তাতে যতই নৃশংসতা থাকুক, তবুও দুটি হৃদয় একত্রিত হোক। হোক—কোনো বাধা, কোনো কোমলতা, আর কোনো ভয় না রেখে।”
‘ক্রোধে রিচার্ডের গলা রুখে উঠল। ন্যাসো থেমে গেল, তার সীমা ছিল এতটুকুই। রিচার্ড ফোঁপাতে থাকল, অসহ্য ক্রোধে। লুকাস পাশ থেকে ছোট করে বলল, “তবে, ওটা কি মিথ্যে ছিল?”
‘লুকাস পেপারের দিকে ইশারা করে, রিচার্ডও সেদিকে তাকায়। তৎক্ষনাৎ চোখে এক পশলা উষ্ণতা ঢেউ তুলে, যেন কিছু একটা অজানা আবেগ বয়ে নিয়ে আসছে। ঠোঁটের কোণে অবাক করা স্মিত হাসি, যে হাসি কখনও অজান্তেই সাদা হয়ে ওঠে, রিচার্ড বলল, “রিচার্ড কায়নাতের মধ্যে মিথ্যে, ছলনা, প্রতারণা, ছলচাতুরী নেই।”
“আপনি সত্যিই হৃদয়হীন বস।”

“তোমরা আমাকে কঠোর বলছ, জানতে চাইছ কেন আমি ওকে এত দূরে রেখেছি, এসব করছি। কিন্তু তোমরা জানো না ওর জীবনের গভীরতম ক্ষত। জানো না, কত ভয়ংকরভাবে ঠকেছে এই মেয়ে। যেদিন সত্যিটা জানতে পারবে, সেদিন তোমাদের মাটির নিচ থেকে টেনে বের করা হবে। আমি চাই না ও আবার সেই আঘাতের মুখোমুখি হোক। আমি চাই, ও নিজেই নিজের শক্তি হয়ে উঠুক, সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে শিখুক। কারণ একমাত্র তবেই, ও সত্যিকারের অর্থে বাঁচতে শিখবে।”
‘ধীরে ধীরে দুজনেই হার মানে। তারা খুব ভালো করে জানে, রিচার্ড কখনো উদ্দেশ্যহীন কোনো কাজ করে না। নিশ্চয়ই রিচার্ডের প্রতিটি পদক্ষেপের পেছনে কোনো না কোনো গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। কিছু সময়ের জন্য নীরবতা আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে, যেন বাতাসের ভেতরেই এক অদৃশ্য চাপ তৈরি হয়। হঠাৎ, লুকাসের মনে কিছু মনে হয়৷

“বস, একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে।”
“কি?” রিচার্ড প্রশ্ন করল, চোখে উদ্বেগ।
“কামরুলের আর কাদেরের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিতরে বৌ, বাচ্চা সবাই ছিল।”
‘রিচার্ডের চোখে তখন এক অদ্ভুত দৃষ্টি, যেখানে ভয় ও রাগ কিছুই নেই। যদিও সে কামরুলকে ভয় দেখিয়েছিল, তার ছেলেকে কিছুই হয়নি। তবে এই ঘটনার পেছনে কে ছিল, তা এখনো অজানা। আর কাদের তো এখনো রিচার্ডের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ন্যাসো এক মুখশব্দে বলল, “কে করল?”
‘লুকাস মুখ খিঁচে বলল, “কে আবার করবে? ঐ মিনিস্টার শালা।”
‘ন্যাসো আগের মতোই শান্ত, তবে গম্ভীর হয়ে বলল,
“ঐদিকে খবর যাওয়ার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না।”
‘লুকাস বিরক্ত হয়ে উচ্চারণ করে, “আরে মাঙ্গের নাতি, গভীর জলের মাছ। শালা ঘাপটি মেরে বাইরে ছিল। যখন অ্যাটাক হলো, তখনই নিশ্চয়ই গাড়ির নাম্বার প্লেট দেখেছিল। আর একজন মিনিস্টারের পক্ষে এসব খুঁজে নেওয়া বা হাতে খেলা, কোন ব্যাপারই না! শালা হেব্বি ডেঞ্জারাস। গণহারে উড়িয়ে দেয় সব।”
“আজকে একসাথে দুই পার্টি ঢুকেছিল।”
‘রিচার্ডের কথায় দুজনেই চকিতে তার দিকে ফিরল। রিচার্ড একদৃষ্টে ওয়াইনের বোতলের দিকে চেয়ে আছে, ভাব এমন যেন বোতলের ভেতরেই সব উত্তর লুকিয়ে।রিচার্ড মাথা তুলল, দুজনের প্রশ্নবোধক দৃষ্টি আঁকড়ে ধরে, দৃঢ় ও গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“লাশগুলো হয়তো দেখোনি। এখানে টাইমিংটা দারুণ হয়েছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক কাদের লোক ঢুকেছিল। তবে এই চুনাপুঁটিদের পক্ষে কখনোই সম্ভব রিচার্ড কায়নাতের গার্ডের সাথে পেরে ওঠা। লনে যেই লাশগুলো ছিল, সেগুলো কাদের লোক। অপর পার্টি ভাড়া করা গুন্ডা—ভুল না হলে ভারতের। শক্তিশালী ছিল, ওরাই ভিতরে ঢুকতে পেরেছে। তোমরা হয়তো লাশ দেখোনি, তাই বুঝতে পারোনি। শালার একটাকেও জীবিত পেলাম না।”
‘লুকাস ঠোঁট কামড়ে বলল, “কিন্তু অপর পার্টি কে ছিল?”
‘রিচার্ড জবাব দিল না। তার চোখে এক গোপন রহস্যের
ঘনঘটা। লুকাস অস্থির হয়ে উঠে বলল,
“এখন তবে কী হবে, বস? আমরা তো জানি না নতুন শত্রু কে। যেকোনো সময়, যেকোনো দিক থেকে আঘাত আসতে পারে!”

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২৯

‘রিচার্ডের ঠোঁটে রহস্যের মৃদু ছায়া খেলে গেল। ঠোঁটের কোণে এক শীতল হাসি ফুটিয়ে এলিয়ে বলল,
“রিচার্ড কায়নাত এখনো মাঠে নামেনি। যখন নামবে, একটা একটা করে শুয়াবে ময়দানে।”
‘সঙ্গে সঙ্গে ন্যাসো তুষ্ট হেসে বলল,”তবে রিচার্ড কায়নাত নিজের দায়িত্ব এড়াতে চাচ্ছে কেন?রক্ষা করতে পারার মতো দম নেই?”
‘উচ্চশব্দে হাসল রিচার্ড। খুবই মজা পেল ন্যাসোর কথায় এমন। অতঃপর শোনা গেল রিচার্ডের প্রবল আত্মবিশ্বাসী স্বর,
“ফা°ক ন্যাসো। রিচার্ড কায়নাতের যেমন জানের মায়া নেই,তেমন জান নেওয়ার মায়াও করে না৷ আই ক্যান বার্ন দ্য হোল ওয়ার্ল্ড ফর মাই প্রিন্সেস।”

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩০