ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৪০
মিথুবুড়ি
‘পাখির কিচিরমিচির শব্দে এলিজাবেথের ঘুমে ছেদ পড়ল। তবু বিছানায় খানিকক্ষণ এদিক-ওদিক মোচড়ামুচড়ি করল। যদি ঘুমটুকু আরও একটু ধরে রাখা যায়। শেষমেশ হাল ছাড়ল ফোনে আসা একটানা নোটিফিকেশনের শব্দে। আধখোলা ঝাপসা চোখে ফোন হাতে নিতেই চমকে গেল। এক অচেনা নাম্বার থেকে অনেকগুলো ছবি পাঠানো হয়েছে।
‘ছবিগুলো দেখা মাত্রই এলিজাবেথের চোখ ভিজে উঠে। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক চাপ অনুভব করল। ছবিগুলো গতকালের। কেউ দূর থেকে তুলেছিল—অতটুকু স্পষ্ট। প্রতিটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে রিচার্ড একগুঁয়ে দৃষ্টিতে চেয়ে আছে এলিজাবেথের দিকে। তবে সেই দৃষ্টিতে গ্যাংস্টার বসের রাগ নেই, নেই হিংস্রতার লেশমাত্র। বরং সেখানে কিছু ছিল_কিছু এমন, যা রিচার্ডের ঠোঁট থেকে কোনোদিনও বের হয়নি। এমন কিছু যা ওকে অচেনা লাগাচ্ছে। কান্নায় গলা বুজে এলো এলিজাবেথের। ধীরে ধীরে হাত রাখল ফোনের স্ক্রিনে।
“মাফ করবেন আমায়। আপনার পাহাড় সমান অন্যায়ের কাছে আমার অনুভূতি বিধ্বস্ত।”
‘কথাগুলো বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই হঠাৎ গুলির এক বিকট শব্দে কেঁপে উঠল পুরো বাড়ি। চমকে উঠে এলিজাবেথ দৌড়ে ছুটে গেল নিচে। কিন্তু যা দেখল তা দেখার জন্য মন মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সিঁড়ির পাশে রামু দা পড়ে আছে রক্তে ভেজা শরীরে। বুক চিরে দিয়েছে বন্দুকের নির্দয় ঝাঁঝ। কিছুটা দূরেই লেডি জেসিকা পড়ে আছে কপাল থেকে টপটপ করে রক্ত ঝরছে। পাশেই একখানা ভাঙা ফুলদানি পড়ে যেন এখানেই হয়েছিল কোনো তুমুল সংঘর্ষ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘এলিজাবেথের আতঙ্কিত চোখ এগিয়ে গেল সামনের । দাঁড়িয়ে আছে তাজুয়ার দেওয়ান-চোখে ভয়ানক ক্ষিপ্ততা আর মুখে পশুর মতো হিংস্রতা। প্রাণভয়ে এলিজাবেথ দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করল। তার আগেই তাজুয়ার দেওয়ান ঘূর্ণিঝড়ের বেগে ছুটে গিয়ে পিছন থেকে টেনে ধরল এলিজাবেথের লাল কেশ। ভয়াল কম্পনে জমে যায় সমস্ত কায়া৷ এলিজাবেথ’কে টেনে হেঁচড়াতে হেঁচরাতে সিঁড়ি থেকে নিচে নামিয়ে আনলো পশুরি তাজুয়ার। শরীরে ভর করছে অশুদ্ধ শক্তি৷ চিবুকে রক্তপিপাসু ক্রোধ,সেই থাকে অধরে হিংসা অট্টহাসি। বিদঘুটে হাসি গুলো ঘন জঙ্গলের বদ্ধ ঘরের দেয়াল গুলোতে বারি খেয়ে আবারও ফিরে ক্রন্দনমূখী অহর্হিশে। দমবন্ধকর কান্নায় নিঃশব্দে হয়ে আসছে দেহ।
‘তাজুয়ার চুলের মুঠি টেনে নিজের দিকে ঘুরালো এলিজাবেথ’কে। ঘাতক প্রহরীর প্রথম আঘাত ই পড়ল গিয়ে চোয়ালে। এলিজাবেথ ছিটকে গিয়ে পড়ল টেবিলের উপর। চোয়াল থরথর করে কেঁপে উঠল, দু’ফোঁটা তরলে সিক্ত হলো কোমল পাশটায়। তাজুয়ার আবারও এসে চেপে ধরল এলিজাবেথের মাথা টেবিলের সাথে। নখের আঁচড়ের দাগ কাটা চিহ্ন হিসেবে বসে যায় ঘাড়ে। কাঁপাকাঁপা নিশ্বাস, অসহায়ের মতো গোঙানির শব্দ দূর্বোধ্য এলিজাবেথের। হাউমাউ করে কাঁদার চেষ্টা করেও পারল না গলায় আঁটকে আসে ভর্য়াত চিৎকার। তাজুয়ারের গর্জনমূখর চিৎকার।
“খা*কির মেয়ে। তোর জন্য আজ আমার সাজানো সাম্রাজ্য ধ্বংসের পথে। আমার বীর, আমার তৈরি পুতুল আমার হাতের বাইরে চলে গিয়েছে।”
“ছেড়ে দিন আমাকে।”
‘গলা থেকে অস্পষ্ট শব্দ বের হলো এলিজাবেথের। চোয়ালের চাপ দৃঢ় হতে থাকে শুধু। এলিজাবেথ কায়দা করে পা দিয়ে লাথি বসালো তাজুয়ারের পায়ে। ব্যাথায় কুকড়িয়ে বসে পড়ল তাজুয়ার তবুও দমল না। পিছন থেকে পা টেনে ধরল এলিজাবেথের। শুরু হলো ধ্বস্তাধস্তি। ধ্বস্তাধস্তিতে জিনিসপত্র পড়ে যাওয়ার ঝাঁঝড়া শব্দ বিদ্ধ করছে ভয়াল নিস্তব্ধতা। হেঁচকা টানে নিচে পড়ে গেল এলিজাবেথ।
‘এবার হুরমোড়ে কেঁদে দিল। ওর বুকভাঙা হাহাকারও গলাতে পারল না তাজুয়ারের ধ্বংসযজ্ঞের তান্ডব। একের পর এক তীক্ষ্ণঘাত করেই যাচ্ছে সে। নির্মম থাবার আঘাত গুলো তলিয়ে যাচ্ছে উষ্ণ তরলে। প্রতিরোধের শত ব্যর্থ চেষ্টা করেও পেরে উঠছে না এলিজাবেথ তাজুয়ারের প্রতিহিংস্রার দাবানল থেকে। ভয়ের তীব্র ঝাঁকুনিতে শিথিল হতে থাকে দূর্বল শরীর৷ তাজুয়ারের আঙুলের শিকল আঁটসাঁট হয়ে চেপে ধরল এলিজাবেথের নরম গলায়। শ্বাসরোধে কাঁপতে থাকা দেহটা যেন তার হিংস্রতা আরও বাড়িয়ে তুলল। বিষাক্ত গলায় তাজুয়ার চিৎকার করল,
“মা*গি বাজারি! তুই আমার সব শেষ করে দিলি। তোর ভাগ্যে লেখা ছিল তুই বিক্রি হবি, মরে যাবি… তবুও বাঁচবি না। আর আজ তুই আমার সব খুইয়ে দিলি! মাত্র কয়েকটা দিনের জন্য আমার সাজানো প্ল্যান চুরমার হয়ে গেল। তোকে তো কিছুদিনের ভিতর-ই পাচার করে দিতাম। সেজন্য কৌশলে বীর কেও দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু মাঝ থেকে সব ধ্বংস করে দিল ঐ শালা গ্যাংস্টার টা।”
‘এলিজাবেথের মুখ নীল হয়ে আসতে লাগল। শ্বাস যেন এক মরীচিকা। বুকের ভেতর আগুনের মতো কষ্টে ছটফট করতে করতে মেঝেতে হাত ছুঁড়ে থাকে। চারিদিকে প্রতিধ্বনি হচ্ছে হাত-পা ঝাপটানোর খটাখট শব্দ। চোখের সামনে পৃথিবী ধীরে ধীরে ঘোলাটে হয়ে এলো। ক্ষীণ দৃষ্টি গেল দরজার দিকে গেল, কেউ নেই,কেউ আসলো না ওকে বাঁচাতে।
‘তাজুয়ারের আঙুল তখনও বদ্ধ পিশাচের মতো শক্ত। এলিজাবেথের দেহ নিথর হয়ে এল। মাথা একপাশে গড়িয়ে পড়ল। তবুও তাজুয়ার থামল না। চোখে নিটল হিংস্র উন্মাদনা। হঠাৎই তাজুয়ারের শরীর দূরে ছিটকে গিয়ে মেঝেতে আছড়ে পড়ল। ভাঙা আসবাবের ওপর পড়ে কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এলো এক আর্তচিৎকার। এলিজাবেথের আধমরা দেহ যেন হালকা শ্বাস নিতে পারল। ঝাপসা চোখ গেল সামনে—দরজার ছায়ার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো এক দৈহিক অবয়ব। দীর্ঘ, অদম্য এক উপস্থিতিতে চারপাশে শীতল অথচ জ্বলন্ত শূন্যতা ছড়িয়ে দিল।
‘ঘোলাটে দৃষ্টি আটকালো দু’টি নীল চোখে। নীল চোখ দু’টোতে ঘনীভূত হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। এক ভয়াল ধ্বংসযজ্ঞের পূর্বাভাস। তাজুয়ার কাত হতে সোজা হতে না হতেই অতর্কিত’তে হচকিয়ে গেল। রিচার্ড বিদ্যুৎবেগে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল তাজুয়ারের উপর। ক্রোধে মটমট করতে ওর রুক্ষ ধারালো চোয়াল।
‘রিচার্ডের প্রথম আক্রমণ তাজুয়ারের পাঁজরে আঘাত হানল। বিকট শব্দে যেন হাড়ে ফাটল ধরল। তাজুয়ারের চিৎ’কার পুরো ঘরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। হতে থাকল একের পর এক নরক যন্ত্র’ণাদা’য়ক আক্রমণ। প্রতিটি বজ্রমুখর লাথি তাজুয়ারের শরীরকে মাটির গভীরে ঠেলে দিচ্ছে। র’ক্তে ভিজে গেল তাজুয়ারের ঠোঁট, চোয়াল। সেই র’ক্ত ছিটকে পড়ল ছাই রঙা মেঝেতে। রক্তজবার রঙে রঞ্জিত এক নিষ্ঠুর ক্যানভাস। রিচার্ডের চোখে জ্বলন্ত দানবীয় ক্রোধ। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। প্রতিটি মুহূর্তে আরও বেশি হিংস্র হয়ে উঠছে রিচার্ড। তাজুয়ারের মুখ পিটিয়ে ফাটিয়ে দিচ্ছে ব্রুট পরিহিত পা। চোখের কোণে জমে থাকা হিং’স্রতা প্রতিটি আঘাতে তাজুয়ারের জীবন চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে প্রস্তুত।
‘মেঝের উপর শুয়ে থাকা তাজুয়ারের দেহ কেবলই এক রক্তা’ক্ত পি’ণ্ড। ঠোঁট থেকে গলগল করে বেরিয়ে আসছে গাঢ় লাল র’ক্ত। বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে র’ক্ত আর হিংসার গন্ধে। তবুও রিচার্ড থামে না_অগ্নিকুণ্ড এখনো ভিতরে দাউদাই করে জ্বলছে। অস্থির হয়ে উঠেছে মস্তিষ্ক। মেঝেতে পড়ে হাঁপাতে থাকা এলিজাবেথের দিকে এক পলকও না তাকিয়ে হস্ততন্ত হয়ে ছুটে গেল কিচেনে। পাগলের মতো থালাবাসন হাতড়িতে কিছু খুঁজতে থাকে। মেঝে পড়া থালাবাসনের ক্রিং ক্রিং শব্দে বারবার কেঁপে উঠছে এলিজাবেথ।
‘রিচার্ডের হাত অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। এটা ক্রোধের কাঁপন। ছিন্নবিন্ন প্রলয়ের উন্মাদনায় মেতে উঠা হৃদয়হীন নিষ্ঠুর গ্যাংস্টার বস অনেক খুঁজে বের করল দু’টো কারা চামচ, বের করল গ্রীলের দু’টো শিক। অতঃপর নিজের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে হনহনিয়ে গেল কিচেনের ভেতরের গুপ্ত স্টোর রুমে।গোপন কক্ষটি যেন এক মিনি অ’স্ত্রাগার। বিশাল র্যাকগুলোয় সাজানো রয়েছে অগণিত যুদ্ধাস্ত্র- M436 রাইফেল, স্ট্রাইকার শটগান, MSR, AS50 স্নাইপার রাইফেল সাথে অগণিত বুলেট। রিচার্ডের চোখ দ্রুত খুঁজে বের করল তার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। উদ্দেশ্যকৃত জিনিসটা পাওয়ার সাথে সাথে ঠৌঁটের কোণো এক ভয়াল হাসি ফুটে উঠল। নিচ থেকে তুলে নিল একটি ভারী ধাতব বক্স।
‘পরপরই একই ভাবে হস্ততন্তর হয়ে ছুটে গেল মেঝেতে গো’ঙাতে থাকা তাজুয়ারের কাছে। তাজুয়ার তখনও মেঝেতে কাতরাচ্ছে, চোখমুখ দিয়ে অঝোরে র’ক্ত ঝড়ছে। রিচার্ডের শরীরে ভর করেছে পৈশাচিক আত্মা। র’ক্ত পিপাসায় পিপাসিত অভ্যন্তর। ভয়ংকর হাসি দিয়ে গিয়ে বসল তাজুয়ারের পেটের উপর। গলগল করে র’ক্ত বের হওয়ার কারণে সামনের কিছুই দেখতে পারছে না তাজুয়ার। পেটের উপর চাপের ফলে আর্তনাদের শব্দ বাড়ে।
‘রির্চাড খুবই ধীরস্থির ভাবে হাত দিয়ে ধুলো ঝেড়ে খুলল বক্সটি। ভিতরে ছিল আরও ভয়ঙ্কর সরঞ্জাম-তীক্ষ্ণ কাঁচি, কাঁটা’যুক্ত র’ড, স্টিলের শিক,নানান রকমের ছু’রি। প্রতিটি অস্ত্র হিংস্রতার আরেকটি রূপ। রিচার্ডের শান্ত দৃষ্টিতে তাকাল এলিজাবেথের গালের থাবার দাগগুলোর দিকে। অতঃপর তুলে নিল দু’টি শিক। ছুটতে থাকা হাত দু’টো শক্ত করে চেপে ধরল রিচার্ড। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেল ছটফটানি। দু’হাত দু’পাশে মিলিয়ে শিক দিয়ে বিদ্ধ করে দিল মেঝের সাথে। হিংস্রতা প্রভাবে বিড়বিড়িয়ে ওঠে পৈশাচিক, সাইকো মস্তিষ্ক।
“এই হাত দিয়ে আঘাত করেছিলি নাহ?”
‘রিচার্ড এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা করল না। দু’হাতে তুলে নিল চকচকে দু’টি কাটা চামচ। চোখে এক নিষ্ঠুর দহনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। হাত উঁচু করে মাথার উপর তুলল। অতঃপর আঘাতের পূর্বাভাস না দিয়েই অমানবিক শক্তিতে চামচ দু’টি সজোরে ঢুকিয়ে দিল তাজুয়ারের চোখের কোটরে। একটি বিকট, করুণ চিৎকার কাঁপিয়ে তুলল চারিপাশ। আশপাশের গাছ থেকে বন্য পাখিগুলো আতঙ্কে ছুটে গেল। তাজুয়ারের শরীর থরথর করে কেঁপে উঠছে একটু পরপর।
‘রিচার্ডের মুখে প্রশান্তিময় হাসির অস্পষ্ট ঝলকানি। ঠোঁটের কোণে লুকিয়ে থাকা দানবীয় হাসি আরও স্পষ্ট হলো। বৃদ্ধাঙ্গুলি আর তর্জনী দিয়ে চামচের মাঝখান শক্ত করে চেপে ধরে শুরু করল ধীর, নিখুঁত এক মোচড়ানি। চোখের কোটরের ভিতর থেকে ভোঁতা আর ভিজে চপচপ শব্দ শোনা গেল। হঠাৎই এক বীভৎস হেঁচকা টানে চামচ দু’টি বের করে ফেলল রিচার্ড। তবে সাথে করে মাংস, রক্ত আর কুচকুচে কালো চোখের মনি নিয়েই বেরিয়ে এলো চামচ দু’টো। তরল কালো র’ক্ত চামচ বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে চুইয়ে চুইয়ে তাজুয়ারের বুকে পড়ছে। রিচার্ড চোখের সামনে মণিগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে নিস্তব্ধ নেশায়। মানবিক দুর্বলতার চূড়ান্ত প্রহসন নিজের হাতে ধরে অনুভব করছে। চামচ থেকে গড়িয়ে পড়া কালো তরল রক্ত তার হাত বেয়ে পড়ছে, কিন্তু চোখে কেবল এক বিজয়ী শিকারীর নিষ্ঠুর জ্বলজ্বলে দৃষ্টি।
‘এবার রিচার্ড বাক্সের ভিতর থেকে বের করল একটা ছোট কুড়াল। এক টানে ছিঁড়ে ফেলল তাজুয়ারের বুকের পাঞ্জাবির অংশ। উন্মুক্ত করল সাদা লোমযুক্ত বুক। আশপাশ তোয়াক্কা না করেই তীব্রঘাতে কু’প বসালো বুকের মাঝ বরাবর। গলা থেকে বেপরোয়া চিৎকার বের হতে থাকে তাজুয়ারের। ফিনকি দিয়ে রক্ত গিয়ে ছিটে পড়ল রিচার্ডের হিংস্র মুখে। কুড়ালের তীক্ষ্ণঘাতে নির্মম খচখচ শব্দের সাথে মাং’স ছেঁড়া আর হা’ড্ডি ভাঙার কর্কশ শব্দ ভাসছে আতঙ্কিত বাতাসে৷ কোপাতে কোপাতে পাঁজরের মাঝটা ভাগ করে ফেলল রিচার্ড। ভিতর থেকে সাদা ফেনার মতো কি বের হচ্ছে। ওদিকে শোনা যাচ্ছে গরগর বমির শব্দ। এই নৃশংস অপ্রীতিকর দৃশ্য দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না এলিজাবেথ।
‘রিচার্ডের ক্ষিপ্ত হয়ে ছুটে গেল এলিজাবেথের কাছে। র’ক্তে তলিয়ে গিয়েছে রিচার্ডের অবয়ব। রক্তপিপাসুর মতো ভয়ংকর লাগছে ওকে। রিচার্ড’কে এগিয়ে আসতে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল এলিজাবেথ। কোনোকিছুর পরোয়া করল না রিচার্ড। এলিজাবেথ’কে চেপে ধরে ওর কামিজের নিচের অংশ ছিঁড়ে ওর চোখ আর হাত-পা বেঁধে দিল। সঙ্গে সঙ্গে আবারও ছুটে গেল তাজুয়ারের কাছে দেহ থেকে প্রাণ টেনে নেওয়ার বর্বর উল্লাসে। আগের স্থানে বসে আবারও হাতে তুলে নিলো রক্তে চুপেচুপে কুড়াল টা। যার ধারালো ফলা এখনও তাজুয়ারের কণ্ঠনালী আর মাংসের টুকরো বয়ে বেড়াচ্ছে।
“তুই অজ্ঞান হবি না এলিজাবেথ। তোকে শুনতে হবে এর আর্তনাদ। মেরে ফেলবো তোকে জ্ঞান হারালে।”
‘একটা, দু’টা,তিনটা,,,, পরপর তিনটে কুপে দফারফা ইস্তফা ঘটল তাজুয়ারের বুকে। থেমে গেল কোপানোর বিকট শব্দ,মাং’সার ছিঁড়ার শব্দ, রক্তের ঘড়ঘড়ানির শব্দ,নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেল মৃত্যুর পূর্ব নিঃশ্বাসের কর্কশতা। বেজে গেল তাজুয়ার দেওয়ানের মৃত্যুঘন্টা। বেদনার কন্টকময় মুহুর্ত অতিক্রম করে তাজুয়ারের আত্মা হার মেনে পালিয়ে গেলেও রিচার্ডের হিংস্রতা একটুও কমে না। মৃত্যুঞ্জয়ী সংকল্পে সংকল্পিত আজ সে। মস্তিষ্কে এখনও তোলপাড় ক্রোধে। প্রচন্ড প্রতিশোধস্পৃহা নীলাভ ক্ষত তৈরি করেছে যে ভিতরে।
‘রিচার্ড কুড়াল ছুঁড়ে ফেলে নিঃশব্দে ঝাঁপিয়ে পড়ল তাজুয়ারের নিথর দেহের ওপর। হাত দু’টি বুকের কাটা অংশে চেপে ধরে রাগে গর্জন তুলে এক হেঁচকায় দু’পাশ ছিঁড়ে দিল। ভিতরের শিরা, মাংস, হাড়ের চিঁড়ে যাওয়ার শব্দে বাতাস ভারী হয়ে উঠল। রক্তের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। রিচার্ড হাত ঢুকিয়ে তাজুয়ারের বুক তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল। পছন্দের জিনিসটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুহূর্তেই টেনে বের করে আনল তাজুয়ারের ক’লি’জা। লালচে অঙ্গটা হাতে তুলে পিশাচের মতো তাকিয়ে রইল রিচার্ড অদ্ভুত ঘোরলাগা দৃষ্টিতে। হাত থেকে র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। বিজয়ের উন্মত্ততায় নিথর দেহটাকে ছুঁড়ে ফেলে আবারও আঘাত করতে লাগল রিচার্ড। আজ সে মৃত্যু নিয়েই খেলায় মেতেছে।
‘বদ্ধ উন্মাদনের মতোই আচরণ করছে রিচার্ড। এতোকিছু করেও থামছে না ওর পাগলামি। আবারও ছুটে গেল এলিজাবেথের কাছে। এলিজাবেথ চেতনা হারিয়ে সেই কখন। তবুও উন্মাদনা! ওকে কোলে তুলে নিল রিচার্ড। কোলে করে নিয়ে আসল ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহের পাশে। এরপর করে বসল এক নিস্তব্ধ বিষ্ময়কর কাজ। ঝুলে থাকা পা দু’টো রাখল তাজুয়ারের কাটা বুকে। র’ক্তে চুবালো এলিজাবেথের পা দু’টো। ওকে কোল থেকে নামিয়ে সিঁড়ি পাশে শুইয়ে দিয়ে আবারও হৃদয়হীন, প্রাণহীন, চোখ হীন দেহের কাছে গেল রিচার্ড। কালো শার্টে র’ক্তের আবরণ দেখা না গেলেও ফোল্ড করা নিচের অংশে শুধু ছোপ ছোপ র’ক্তের দাগ।
‘রিচার্ড পাগলদের মতো পা ছড়িয়ে মেঝেতে বসে পড়ল, চোখে এক অদ্ভুত উন্মাদনার ছায়া। বক্সটা উল্টেপাল্টে খুঁজে বের করল সবচেয়ে সরু, তীক্ষ্ণ ধারালো ছুরিটা। তারপরও মেঝেতে সেটাকে কিছুক্ষণ ঘষে আরও ধারালো করে নিল, যেন ক্ষতির গভীরতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। অতঃপর
হাতে তুলে নিল তাজুয়ারের তাজা লাল কলি’জার পিন্ডটা। এক হাত থেকে অন্য হাতে ঘুরিয়ে খেলতে লাগল। কিছুক্ষণ পর খেলা শেষে মেঝেতে ধীরে রেখে এক ভয়ের নকশায় শুরু করল স্লাইস করা। প্রতিটি টুকরো নিখুঁত, রক্ত চুইয়ে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ছে, আর ঠোঁটে ফুটে উঠছে এক নির্মম, শান্ত হাসি।
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩৯
‘অকস্মাৎ ফার্মহাউজের চারপাশে গরম হাওয়া আর গাড়ির কর্কশ শব্দ ভেসে এলো।অনেকগুলো ভারী পায়ের ছন্দময় আওয়াজ ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে লাগল। রিচার্ড থমকে গেল! রক্তে ভেজা মুখে পিছন ফিরল। ফিরেই তার হিংস্র, উন্মত্ত চোখগুলোয় আতঙ্কের ছায়া ফুটে উঠল। যেন তার পৈশাচিক উল্লাসের মাঝেই আকাশ ভেঙে পড়েছে। চারপাশ থেকে ঘিরে আসছে অজানা বিপদের গন্ধ।