ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ১২

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ১২
তাজরীন ফাতিহা

উর্মি ভুঁইয়া বাড়ির সামনের লনে বসে বই পড়ছেন এবং চা খাচ্ছেন। অবসর পেলেই তিনি বইয়ের মধ্যে ডুবে যান প্রায়। খুবই মনোযোগ দিয়ে যখন বই পড়ছিলেন তখন সেখানে ইহাব পরিপাটি হয়ে হাতে বাইকের চাবি নিয়ে মায়ের পাশে বসলো। উর্মি ভুঁইয়া ছেলের উপস্থিতি টের পেলেন না। তিনি বইয়ের গভীরে একেবারে ডুবে রয়েছেন। ইহাব মাকে বইয়ের পাতায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করতে দেখে ডেকে উঠলো,
“আম্মু, ও আম্মু।”
উর্মি ভুঁইয়া বইয়ে চোখ রেখেই বললেন,
“কি দরকার? দ্রুত বলে যেখানে যাচ্ছিলে যাও।”
ইহাব বললো,
“কোথাও যাচ্ছিলাম জানলে কিভাবে? বইয়ের মধ্যেই তো ডুবে আছো।”
উর্মি ভুঁইয়া বললেন,
“সেটা জেনে তোমার কাজ কি? তোমরা বাপ, ছেলে আমার সামনে চোরের মতো হয়ে থাকো অথচ গ্রামের মানুষের সামনে বাঘ এর কারণ আগে বলবে তারপর বলছি কিভাবে জানলাম।”

বলেই বইয়ের একটা পৃষ্ঠা ভাঁজ করে বইটি বন্ধ করলেন। তারপর চশমা খুলে চারপাশের গাছগাছালি, প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন। এরপর চায়ের ফ্ল্যাক্স থেকে চা ঢেলে ছেলের দিকে চায়ের কাপ ঠেলে দিলেন। ইহাব ঢোঁক গিলে চায়ের কাপ হাতে নিলো। মা সবকিছু কিভাবে জেনে যায় সেটাই তার মাথায় ঢোকে না। উর্মি ভুঁইয়া বললেন,
“কি ভাবছো? মনে মনে ফন্দি করে লাভ নেই। সোজাসাপ্টা বলো।”
ইহাব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
“এটা তোমার ভুল ধারণা আম্মু। আমরা নরমাল থাকি অলওয়েজ।”
“ভুল হলে তো ভালোই। কিছু বলতে চাও?”
“নাহ। এমনিতেই তোমার পাশে বসতে ইচ্ছে হলো।”
উর্মি ভুঁইয়া চায়ের কাপে আবারও চুমুক দিয়ে ছেলের দিকে চাইলেন। তারপর বললেন,
“তোমার চোখ তো ভিন্ন কথা বলছে।”
ইহাব ইতস্তত করতে করতে বললো,
“আমার পছন্দের মেয়ে সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলে না আম্মু?”
উর্মি ভুঁইয়া চায়ের কাপ রেখে ছেলের বিপরীত পাশের চেয়ারে বসলেন। ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এবার বলো।”
ইহাব মাকে অন্য চেয়ারে বসতে দেখে বললো,
“ওপাশে গেলে যে আম্মু?”
“আই টু আই কন্ট্রাক্ট করতে। যেন কথাটা সহজে আয়ত্ত করতে পারি। আর এমনিতেও যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা আই টু আই হলে অপর পাশের মানুষটি কথাটা ঠিক কি অর্থে বললো তাও সহজে ক্যাপচার করা যায়।”
ইহাবের হঠাৎ করেই গরম লাগতে শুরু করে করেছে। আচমকা কথার তাল হারিয়ে ফেললো যেন। মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হবে ভেবে তার ইতস্ততভাব আরও বেড়ে গেলো। যদি তার পরিকল্পনা আম্মু ধরে ফেলে তাহলে সবকিছু ভেস্তে যাবে। উর্মি ভুঁইয়া চোখ সরু করে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি গূঢ় স্বরে বললেন,
“Any problem?”
“No, no problem।”

“এবার বলো তোমার পছন্দের মেয়েটি সম্পর্কে?”
“একটা কাজে যাচ্ছি আম্মু। বাসায় এসে বলবো।”
বলেই ইহাব চেয়ার ছেড়ে উঠতে নিলে উর্মি ভুঁইয়া বলে উঠলেন,
“উহু, চেয়ারে বসো। এখন শুনতে চাচ্ছি এখনই বলবে। তোমার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করার সময় আমার নেই। If you want to say it, say it now; otherwise, I will never listen to you again.”
এই কথার পরে ইহাবের বলার আর কিছু থাকে না। এখন মাকে না বললে আর কোনোদিনও যে এটা শুনবে না সেটা ইহাব খুব ভালো করেই জানে। ইহাব শক্ত হয়ে চেয়ারে বসে গ্লাসে পানি ঢেলে খেলো। তারপর জোরে শ্বাস টেনে রোবটিক গলায় বললো,
“আসলে আম্মু, মাহাবুব আংকেলের মেয়েকে আমার ভীষণ পছন্দ।”
উর্মি ভুঁইয়া ছেলের দিকে অবিশ্বাস্য নজরে চেয়ে আছেন। তিনি হতভম্ব গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

“Are you joking?”
“No, not joking. I’m serious.”
উর্মি ভুঁইয়া এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না ছেলের কথা। কিভাবে সম্ভব? উনি তটস্থ ভঙ্গিতে বললেন,
“তোমার পাপা জানে?”
ইহাব মুখ নিচু করে বললো,
“না।”
উর্মি ভুঁইয়া বললেন,
“তুমি কি জানতে না এই সম্পর্ক তোমার বাবা কোনোদিনও মেনে নিবে না? এমনকি তুমি হঠাৎ করে ধনী ফ্যামিলি ছেড়ে ওই ফ্যামিলির মেয়েকে পছন্দ করতে কেন গেলে? তোমার বন্ধু গ্রামে এসেছে?”
ইহাবের চোয়াল শক্ত হলো। মাকে রাজি করাতেই হবে। মা রাজি না হলে তার কোনো পরিকল্পনা সফল হবার নয়। ইহাব মায়ের চেয়ারের পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসলো। তারপর খুব সফটলি বললো,
“আম্মু, প্লিজ পাপাকে রাজি করানোর দায়িত্ব তোমার। কিভাবে পছন্দ হলো জানি না তবে তাকে ভালো লেগেছে।”
উর্মি ভুঁইয়া বললেন,

“এই কথা জানলে তোমার পাপা একটা খুনাখুনি বাঁধিয়ে ফেলবে। ওদের স্ট্যাটাসের সাথে আমাদের স্ট্যাটাস যাবে না বলে নানা হাঙ্গামা করবে।”
“তুমি আছো না। পাপা কিচ্ছু করবে না। প্লিজ আম্মু, প্লিজ।”
খুব অনুনয় করে বললো ইহাব। উর্মি ভুঁইয়া বিভ্রান্ত হলেন মনে হলো। তার হিসেব কিছুতেই মিলছে না। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলেন,
“তোমার বন্ধু বাড়িতে এসেছে? তার কোনো খোঁজ পেয়েছো? কথা হয় তোমার সাথে? কি কারণে গ্রাম ছেড়েছে এই বিষয়ে কিছু জানো?”
ইহাব উত্তর দিলো না। শুধু তার চোখের সাদা অংশটুকু লাল হয়ে উঠলো।

মানহা বই নিয়ে বসেছে। ছাত্রী হিসেবে মোটামুটি ভালোই সে। মায়মুনা বেগমের ডাকে বই বন্ধ করে উঠোনে দৌঁড় দিলো। মাকে উঠোন ঝাড়ু দিতে দেখে বললো,
“জ্বি মা।”
মায়মুনা বেগম বললেন,
“উঠোনটা ঝাড়ু দে। আমি তোর মেজো ভাইকে ভাত দিয়ে আসি।”
“তুমি এই হাঁটুর ব্যথা নিয়ে ভাত দিতে যাবে? মেজো ভাইয়া আজকে খেতে আসবে না?”
“আসলে তো এতক্ষণে এসে পড়তো। হয়তবা কাজের চাপে আছে। শুনেছি ঢাকা থেকে “কৃষি সম্প্রসারণ প্রযুক্তি” থেকে লোক এসেছে। মনে হয় তাদের সাথে আলোচনা করছে। রাত হবে সম্ভবত। তাই খাবারটা দিয়ে আসি ঠান্ডা হওয়ার আগে।”
“আচ্ছা আমিই যাচ্ছি। তোমার যেতে হবে না।”

“তুই যাবি? একা যেতে পারবি? তোকে ছাড়তে সাহস পাচ্ছি না। রাস্তা এই ভর দুপুরে এমনিতেই ফাঁকা থাকে।”
“আরে ভয় পেয়ো নাতো। বোরকা পড়ে এক দৌঁড়ে খাবার দিয়ে চলে আসবো।”
মায়মুনা বেগম তারপরও কেমন যেন আগ্রহ পেলেন না। যুবতি মেয়ে। একলা অতখানি পথ যাবে? বিপদ আপদের এনিতেই রাখ ঢাক নেই। চারদিকে যে পরিমাণে খারাপ খবর শোনা যায় তার বুকে কামড় দিয়ে উঠলো। তিনি নিজেও মেয়ের সাথে বোরকা পড়ে নিলেন। মানহা জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি বোরকা পড়লে যে? আমি যাচ্ছি তো।”
“আরে তোর বাবা ঘুমোচ্ছে নাহলে তাকেই পাঠাতাম। তোকে একলা ছাড়তে ভয় করছে আমার। চল যাই।”
মানহা আর কিছু বললো না। মাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। দুই মা, মেয়ে গল্প করতে করতে হেঁটে যাচ্ছে সামনে। পথিমধ্যে ইহাব বাইক থামিয়ে মায়মুনা বেগমকে সালাম দিলো। মানহা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে মায়ের দিকে সেটে রইলো। ইহাব এক পলক সেদিকে চেয়ে মায়মুনা বেগমের দিকে তাকালো। মায়মুনা বেগম সালামের জবাব দিয়ে বললেন,

“কিছু বলবে বাবা?”
“না আন্টি, আপনাদের দেখে থামলাম। কোথায় যাচ্ছেন এই ভর দুপুরে?”
ইতোমধ্যে পাঁচটি বাইক এসে ইহাবের বাইকের পিছনে থামলো। বাইক পাঁচটি ইহাবের বন্ধুদের। মানহা প্রচণ্ড অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। মায়মুনা বেগমও বিব্রত হলেন। বললেন,
“বাবা তোমরা কোথাও যাচ্ছিলে মনে হয়। যাও। আমরা মাহদীর কাছে যাচ্ছিলাম খাবার দিতে।”
“আপনি আমার কাছে দিন। আমি দিয়ে আসবো। আপনারা বাসায় চলে যান। জনমানবহীন এখানে আপনাদের জন্য সেইফ না। আশা করি বুঝেছেন?”
মানহার দিকে তাকিয়ে কথাটুকু বলে থামলো। মায়মুনা বেগম কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না। ইহাবের কাছে খাবারটা দিতে তিনি সাহস পাচ্ছেন না। ইহাব সেটা বুঝতে পেরে মায়মুনা বেগমকে আশ্বস্ত করে বললো,
“আগের কথা ভুলে যান। আমিও মনে রাখি নি। আপনারাও মনে না রাখলে খুশি হবো। ভরসা করে দিতে পারেন। খাবারটা আপনার ছেলের হাতেই পৌঁছুবে।”

মায়মুনা বেগম কাঁপা হাতে টিফিন ক্যারিয়ারটা ইহাবের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। ইহাব মুচকি হেঁসে নিলো। মানহা মাকে খামচে ধরে দিতে নিষেধ করলো কিন্তু তার আগেই ইহাবের হাতের করতলে টিফিন ক্যারিয়ারের হাতল ঝুলছে। ইহাব মানহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনার আম্মুকে নিয়ে বাসায় যান। মায়ের হাত খামচে লাভ নেই। টিফিন ক্যারিয়ার নিশ্চয়ই আমি চুরি করবো না, করলে বিরাট কিছুই করবো। সামান্য টিফিন ক্যারিয়ার আমার চাহিদা নয়।”
মানহা মুখ কঠিন করে মাকে টেনে বাড়ির উদ্দেশ্যে উল্টো ঘুরে হেঁটে চলে গেলো। ইহাব মুখ থেকে হাসি সরিয়ে গম্ভীর ভঙ্গিতে বাইকে বসলো। সাব্বির, পল্লব, আসিম, মুহিব ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে ছিল এতক্ষণ। একমাত্র হাসান টিফিন ক্যারিয়ারটার দিকে তাকিয়ে আছে। তার শয়নে স্বপনে একমাত্র খাবার ঘোরে। সাব্বির বললো,
“এই তাহলে তোর কান? মাথাটা তাহলে…”
ইহাব চোখ রাঙিয়ে চাইলো।

নিশাত আজকে ঘরের প্রয়োজনীয় কিছু কিনতে মারওয়ানকে বলে এসেছিল। টাকাও দিয়ে এসেছে। কে জানে ভাদাইম্মাটা কিনেছে কিনা? স্কুলে আজকে প্রোগ্রাম ছিল। বিকেল চারটা বাজে এখন। অনেক বেলা হয়ে গেছে। চারপাশ জনশূন্য প্রায়। নিশাতের কিছুটা ভয় লাগছে। কিছুদূর হাঁটতেই তিনজন বখাটে ছেলেকে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতে দেখলো। নিশাত চুপচাপ পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় একজন বলে উঠলো,
“আমগো এলাকার বিয়াত্তা কড়া মাল!”
নিশাতের গা গুলিয়ে বমি চলে আসলো এই নোংরা কুরুচিপূর্ণ কথায়। দ্রুত কদম ফেলে প্রস্থান করতে নিলেই কারো শক্ত হাত তাকে থামিয়ে দিলো। নিশাত চোখ বন্ধ করে ব্যাগ দিয়ে জোরে বারি দিলো হাতে।
“হ্যাঁ আমাকেই মারতে পারবি। জীবনে শুধু আমার সাথেই পেরেছিস। ওদের চোপা বরাবর কয়েকটা লাগিয়ে আসতে পারিস নি?”
নিশাত মারওয়ানের কঠিন কণ্ঠ শুনে চোখ খুললো। মারওয়ানকে ওদের দিকে চোখ মুখ লাল করে তাকাতে দেখে বললো,

“চলুন বাসায়।”
“ছেলেকে ধর।”
বলেই ছেলেকে এগিয়ে দিলো নিশাতের দিকে। নিশাত কোলে তুলে নিলো ছেলেকে। মারওয়ান হাতের হ্যাঙ্গার একত্র করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। ছেলে গুলো মারওয়ানকে দেখে কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। মারওয়ান বললো,
“কি বলছিলি?”
“কেন রে? তুই জেনে কি করবি? তোর মতো বেডার কপালে এতো মাখনের মতো কর্মঠ বউ কিভাবে মিললো কে জানে?”
আরেকজন তাল দিয়ে বললো,

“ভাদাইম্মার রাজকপাল। বউরে বোরকা পড়াইয়া আবার আকাম কুকাম করায় কিনা কে জানে? এসব লাইনে তো আবার টেকা বেশি। নইলে ঢাকা শহরের মতো এইখানে এহনও আছে কেমনে? শা*লা… ”
ব্যাস আর কিছুই বলতে পারলো না। খালি চপাৎ চপাৎ আওয়াজ এবং চিল্লানোর শব্দই শোনা গেলো বিগত আধা ঘণ্টা। সবগুলো হ্যাঙ্গার ভেঙে রাস্তার উপর পড়ে আছে। নিশাত হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। কোলে নাহওয়ানকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। থরথর করে কাঁপছে তার পুরো শরীর। মারওয়ানকে সে কখনোই এতো রাগান্বিত হতে দেখেনি। বিবাহিত জীবনের চার বছরে এই প্রথম মারওয়ানের কঠিন রাগ দেখলো। মারওয়ান যে বখাটে কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছে তার গলায় পাড়া দিয়ে বললো,
“তোর ভাগ্য ভালো মারামারি ছেড়ে দিয়েছি নাহলে তোর জবান টেনে ছিঁড়ে ফেলতে দুই মিনিটও সময় লাগতো না আমার। মেয়েছেলে দেখলে বাজে কথা, বাজে ইঙ্গিত দিতে জিহ্বা লকলক করে? আর কোনোদিন যদি মায়ের জাতের দিকে চোখ তুলে কু*ত্তার নজরে চেয়েছিস সেদিনই তোদের চোখ উঠিয়ে ফেলবো বা*স্টার্ড।”
বলেই মুখের উপর লাথি দিলো। মুখ থেকে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো বখাটের। মারওয়ান কপাল থেকে ঘাম মুছে হাত নাড়ালো। মারামারি করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের আঘাতও পেয়েছে সে। নিশাতের থেকে ছেলেকে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটা দিলো। নিশাত রোবটের মতো তার পিছনে হাঁটতে লাগলো। নিশাত টলছে। বাসায় এসে পাথরের মতো বসে থাকলো কিছুক্ষণ। নাহওয়ান মায়ের কাছে ঘুরঘুর করছে। মারওয়ান মুখ ধুয়ে এসে দেখলো নিশাত মূর্তির মতো বসে আছে। নাহওয়ানকে কোলে নিয়ে অন্যরুমে গেলো। খেলনা বের করে ছেলের হাতে দিয়ে বললো,

“বাবা না আসা পর্যন্ত খেলো।”
নাহওয়ান মাথা নাড়িয়ে খেলতে লাগলো। মারওয়ান নিজেদের রুমে গিয়ে নিশাতের পাশে বসে বললো,
“গোসল করে ফেলো নাহলে মুখ হাত ধোও। ক্ষুধা লেগেছে?”
নিশাতের কোনো নড়চড় নেই দেখে মারওয়ান নিজের বাহু দিয়ে বারি দিলো। তারপরও কোনো কথা বললো না নিশাত। মারওয়ান বললো,
“আজকের সব কথা ভুলে যাও। কিচ্ছু হয়নি।”
নিশাত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললো,
“কতকিছু হলো।”
“কিছু হয়নি।”
“এতো জঘন্য কথা, চাহনি আমাকে ঘুমাতে দিবে না।”
“গোসল করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“হবে না।”
মারওয়ান চোখ লাল করে বললো,
“মেজাজ খারাপ করিস না।”
তারপর স্ত্রীর বোরকা খুলে জামাকাপড় নিয়ে নিশাতকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকলো। ঝর্না ছেড়ে নিশাতকে ডলে ডলে গোসল করাতে লাগলো। নিশাত কেঁদে উঠে মারওয়ানের গলার শার্ট খামচে ধরলো। মারওয়ান কিছু না বলে গোসল করিয়ে গা মুছিয়ে জামাকাপড় পড়িয়ে দিলো। ভাত বেড়ে নিশাতকে খাইয়ে দিলো। তারপর বললো,

“ঘুমিয়ে পড়। এইযে জড়িয়ে ধরেছি পৃথিবীর শত বাজে কথা, বাজে চাহনি আর তোমার গায়ে লাগবে না। আমি লাগতে দিবো না।”
বলেই নিশাতকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরলো। তার বুকের শার্ট ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে মারওয়ান নিশাতকে আলাদা করলো। তারপর কপালে চুমু দিলো অনেকক্ষণ। স্ত্রীর পাশ থেকে আস্তে করে উঠে পাশের রুমে গেলো। ছেলেকে গাড়ির সাথে গাড়ি বারি লাগাতে দেখে বললো,
“ঘুমাবি না পেঙ্গুইন?”
নাহওয়ান বাবাকে দেখে হেঁসে দিলো। বললো,
“বাবা ডিচুম ডিচুম করে।”
“তাই?”
“হু।”

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ১১

গাড়ি দুটোকে বারি দিয়ে বললো নাহওয়ান। মারওয়ান বললো,
“ওরে বাবা। আয় তোর সাথে ডিসুম ডিসুম করি।”
নাহওয়ান ঘাড় কাত করে ছোট ছোট হাত দিয়ে বাবার শরীরে কতগুলো থাবা মারলো। মারওয়ান হেঁসে ছেলের মার খেলো। তারপর হাতা গুটিয়ে যেই ছেলেকে ধরতে যাবে অমনি নাহওয়ান “ওলে বাবা” বলে ফুড়ুৎ করে দৌঁড় দিলো।

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ১৩