শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২২

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২২
নূরজাহান আক্তার আলো

-‘স্বর্ণ!’
-‘(…..)’
-‘এ্যাই স্বর্ণ!’
-‘(…..)’
-‘ এ্যাই বেয়াদব আর কত গিলবি?’
-‘শহীদ না হওয়া অবধি।’
-‘আমাকে নামতে হলে আজ সত্যি সত্যিই আমার হাতে খুন হবি।’
দোতলায় নিজের রুমে শুয়ে পা নাচাতে নাচাতে কথাটি বলল সায়ন।
এমন ভাব যেন অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করছে সে। স্বর্ণ কেবল মুখে এক লোকমা ভাত দিয়েছে। বেচারি গিলা দূর মুখ নাড়িয়ে চিবাতেও পারে নি।

তার আগেই অধৈর্য হয়ে ডাকতে শুরু করেছে সায়ন। সমানে চেঁচাচ্ছে। স্বর্ণ চুপচাপ শুনল। তবে উঠে যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করল না। কেউ না
জানুক সে তো জানে কেন চেঁচাচ্ছে। মাথাব্যথা নাকি ছাই! পাজি ছেলের ধান্দা অন্যকিছু খুব ভালো করে জানে সে। যাবে না সে। সত্যিই যাবে না। শখ আপুর কাছে ধরা খেয়েও শখ মিটেনি ফাজিল ছেলের। থাকবে কি করে? লজ্জা বলে কিছু থাকলে তো? নিজের রুমে শুয়ে শখ’ও শুনছে সায়নের গলাস্বর। হাসছে মিটিমিটি। ভাইয়ের মাথাটা বুঝি সত্যিই গেছে।
প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই হয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এদিকে ছেলের কান্ডে সিঁতারা নিজের কাছে থাকা পেইন কিলার নিয়ে
ছুটলেন দো’তলায়। ছেলের বুঝি সত্যি মাথা ব্যথা করছে। নয়তোএভাবে ডাকাডাকি করতো না নিশ্চয়ই। বড় মাকে যেতে দেখে স্বর্ণ ঠোঁট টিপে হাসল। তার জায়গায় বড় মাকে দেখে সায়নের মুখটা কেমন হবে ভেবে হাসি চওড়া হলো। সিরাতের সামনে হাসি আঁটকাতে গ্লাস উঁচিয়ে একটু পানি খেল। নয়তো এভাবে হাসতে দেখলে প্রশ্নের তোপে পড়তে পারে।

ওদিকে সায়ন শুয়ে অস্থির অস্থির করছে। ওপাশ-অপাশ করে চোখ মুখ বুজে আবার ডাকার আগে মাকে দেখে বোকা বোকা হাসল। ঠোঁটে হাসি এঁটে উঠে বসল। সিঁতারা সঙ্গে আনা মেডিসিন ছেলের ডান হাতে ধরিয়ে গ্লাস এগিয়ে দিলেন। সায়ন মুখ কাঁচুমাচু করে হাতে মেডিসিন নিয়ে চুপ করে বসে রইল। তার তো কোথাও ব্যথা ট্যথা কিছু নেই। আসলে স্বর্ণকে একটু কাছে পেতে এতক্ষণ তাড়া দিচ্ছিল। নয়তো পাজি মেয়ে আসতো না। কিন্তু এখন কি হবে? কি বলে বাঁচবে? মনে মনে একথা ভেবে সায়ন কথা খুঁজতে লাগল। কিন্তু এ মুহূর্তে কথা খুঁজে পেল না। পৃথিবীতে কথার আকাল পড়ে গেল নাকি কে জানে! ছেলেকে বসে থাকতে দেখে সিঁতারা তার মাথায় স্নেহের হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,

-‘কি হলো বাবা, খা।’
-‘ হ্যাঁ? হুম, হুম, এইতো খাচ্ছি।’
-‘খুব বেশি মাথাব্যথা? কড়া করে এক কাপ চা করে দেই?’
-‘না, না, চা খেলে এখন আর ঘুম আসবে না। আমি বরং ঘুমানোর ট্রাই করি।’
-‘ওষুধটা খেয়ে নে বাপ তারপর ঘুমা। আমি চুল টেনে দিচ্ছি এমনিতেই ঘুম চলে আসবে।’
একথা বলে সিঁতারা সায়নকে তাড়া দিয়ে ওষুধ খাওয়াল। সায়নও খেতে বাধ্য হলো। তারপর উনি ছেলের শিয়রে বসে কখনো ছেলের মাথার চুল টেনে দিতে লাগলেন। কখনো কপাল টিপতে থাকলেন। মনে মনে সায়ন স্বর্ণের গুষ্ঠি উদ্ধার চোখ বুঝে নিলো। একটুপর ছেলেকে গভীর নিঃশ্বাস ফেলতে দেখে সিঁতারা লাইট অফ চলে গেলেন। উনি যেতেই সায়ন উপুর হয়ে শুয়ে বিরবির করে বলল,
-‘খেতে চাইলাম সুন্দরী বউ অথচ খেতে হলো পেইন কিলার। কপাল!’

একথা বলে স্বর্ণকে গালি দিতে দিতে সে সত্যি সত্যিই ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল। ঘড়ির কাঁটা চলছে টিকটিক করে। রাতের শেষ প্রহর। নিবাসের সকল সদস্য গভীর ঘুমে মগ্ন। তখন কেউ দো’তলার রুমের দরজা খুলল। পা টিপে টিপে বের হলো সন্তপর্ণে। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে দরজায় হাত ছোঁয়াল। পাসওয়ার্ড টিপে প্রবেশ করল রুমে। এদিক-ওদিক উঁকিঝুঁকি মেরে নিঃশব্দে দরজা আঁটকে দিলো। লাইট জ্বালালো। বিছানায় বসল। এরপর চোখ বুলাল চারপাশে। সামনে থাকা বিশাল বড় ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে মলিন হাসল। হাত রাখল আঘাতপ্রাপ্ত ঠোঁটের কোণে। তখন হাতের ফোনটা ভাইব্রেট হতে দেখে হাসল। জানত কলটা এখনই আসবে। সে কল রিসিভ গা এলিয়ে দিলো নরম বিছানায়। নাকে এসে ঠেঁকল খুব পরিচিত ঘ্রাণ। তখন ফোনের ওপাশেও নীরাবতা।
কিছুক্ষণ পর কানে এসে বিঁধল গমগমে সেই কন্ঠস্বর,

-‘ এত রাতে আমার রুমে কি, হুম? ঘুমাস নি কেন?’
-‘ঘুম ভেঙ্গে গেল আর আসছে না।’
-‘এজন্য আমার রুমে আসতে হবে?’
-‘এলে কি ক্ষয়ে যাবে?’
-‘তা যাবে না তবে আসার কারণ থাকতে হবে।’
-‘কেন? রুমে কি হিরে জহরত লুকিয়ে রেখেছেন যে ভয় পাচ্ছেন?’
-‘এরচেয়েও দামী কিছু।’
-‘চুরি করি তাহলে?’
-‘চুরি করতে গেলে কৌশল জানা আবশ্যিক।’
-‘শুনি কি সেই কৌশল?’
-‘ রুমের মালিকের থেকে চুরির কৌশল জানতে চাচ্ছিস? ঘটে বুদ্ধির ছিঁটেফোঁটা না থাকলে যা হয় আর কি!’
-‘আমি অসুস্থ। বকবেন না খবরদার।’

-‘ এখনো ব্যথা আছে?’
– ‘আছে।’
-‘(…..)’
-‘শুদ্ধ ভাই?’
-‘হুম।’
-‘ আমাকে এই ফোনটা দেওয়ার কারণ কি?’
-‘বলেছিই তো, বিয়ের কাজ কতদূর এগোলো জানার জন্য।’
-‘কাজ শুরু করি নি এখনো।’
-‘কাল থেকে শুরু কর। বিয়ে করব। বিয়ে করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
-‘হঠাৎ বিয়ে পাগল হয়ে গেলেন কেন? কাহিনী কি?’
-‘ বয়স তো কম হলো না।’
-‘ তাই বলে হঠাৎ করে কেন?’
-‘ওসব তুই বুঝবি না। আরো বড় হ।’
-‘বুঝব না অথচ আমার ঘাড়ে গুরু দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন।’
-‘ দেওয়ার কারণ সময় মতো বুঝে যাবি।’

একথা বলে শুদ্ধ চেয়ারে হেলান দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসল। শীতল চোখের সামনে যেভাবে বুকের মধ্যে ফোন লুকিয়েছিল ভাবলেও হাসি পায়। অস্বত্বি লাগে। মূলত এই কারনে ফোন নিজের কাছে রাখার সাহস করে নি। ফোনটা দেখলেই সেদিনের ঘটনা মনে পড়ে যেতে। যেটা তার জন্য শুভকর কিছু হতো। কেন হতো না? এই ‘কেন ‘এর জবার নেই।
জবাব খোঁজারও প্রয়োজন মনে করে নি কখনো। সে চোখ খুলে তাকাল
লেপটপের দিকে। তার বিছানায় শুয়ে আছে শীতল। কানে ফোন। বুকের উপর একটা বালিশ। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিছানা জুড়ে। পরনে কালো কালার লেডিস টপস সঙ্গে ঢিলেঢালা প্লাজু। পুরো লুক নাদান বাচ্চা টাইপের। অথচ দুষ্টুমিতে পিএইচডি করা। কথা, কাজে
দূরন্তপণা। শীতল কিছুক্ষণ আগে রুমের পাসওয়ার্ড চাপতেই তার কাছে নোটিফিকেট চলে এসেছে। এতরাতে রুমে কে ঢুকতে চাচ্ছে? কি কাজ?

নাকি অন্যকেউ বাসায় ঢুকেছে? মূলত এসব ভেবে লেপটপে চেক করে দেখে দরজার সামনে জুবুথুবু শীতল দাঁড়িয়ে আছে। হেলেদুলে বারবার পাসওয়ার্ড ইন করছে। তাকে দেখে কনফার্ম বাটন পেস করতেই দরজা খুলে গেছে। ডিসক্লাইন করলে একাধিকবার পার্সওয়ার চাপায় বৈদ্যুতিক শখ খেতো। বৈদ্যুতিক শকে ঝাঁকি খেয়ে সে ওখানেই ম’রে পড়ে থাকত।
অথচ বোকা শীতল টের পায় নি রুমের মালিক না চাইলে রুমে ঢুকতেও পারত না। বর্তমানে দুজনেই চুপ। চলছে নীরাবতা। অদ্ভুত কারণে নিশ্চুপ থাকতে ভালো লাগছে। ফোন কানে ধরে একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনছে। কাকতালীয়ভাবে দু’জনেই মন খারাপ। মনে অনেক কথা জমা
অথচ বলতে ইচ্ছে করছে না। শীতল আবার বেশিক্ষণ চুপ থাকতে পারে না। চুপ থাকলে পেটের মধ্যে গজগজ করে। এই স্বভাবের কারনে সেই আগে নীরাবতা ভাঙ্গল। ধীর কন্ঠে বলল,

-‘ শুদ্ধ ভাই?’
-‘ হুম।’
-‘একটা কথা বলি?’
-‘না।’
-‘কেন? বলি না প্লিজ?’
-‘বারণ যখন শুনবিই না তখন পাগল ছাগলের মতো জিঞ্জাসা করিস কেন?’
-‘আপনার কি মন খারাপ?’
-‘একথা কেন মনে হলো কেন?’
-‘আপনার বুকচাপা নিঃশ্বাস আমার কানে কানে গুনগুন করে বলে গেল।’
একথা বলে খিলখিল করে হাসল শীতল। হাসতে গিয়ে কাঁটা ঠোঁটে টান খেলো। ব্যথাতুর শব্দ করে ঠোঁট চেপে ধরল। শুদ্ধও হাসি শুনল। শুনল তার করা ব্যথাতুর শব্দও। কেন জানি বুক ভার হলো। তারপর লেপটপে চোখ রেখে বলল,

-‘রুমে যা।’
-‘কেন?’
-‘যেতে বলেছি।’
-‘যাব না।’
-‘তুই চুন্নি। তোকে বিশ্বাস নেই। তোকে রুমে রাখা রিস্ক, যা বলছি।’
-‘আমি চুন্নি? কি চুরি করেছি আমি? খবরদার বরছি উল্টা পাল্টা অপবাদ দিবেন না।’
-‘ আমার নতুন টি-শার্টটা গায়েব করেছিস। পারফিউম। সি ব্লু রিচওয়াচ টাও দু’দিন আগে ঝেড়েছিস। আর বলব?’
শীতল জিভে কামড় দিলো। সত্যি সত্যিই গায়েব করেছে। কিন্তু বিশুদ্ধ পুরুষ জানল কিভাবে? কথায় কথা বাড়ে। কিছু বলতে গেলে সত্য ফাঁস হয়ে যাবে। এরচেয়ে ভালোই ভালোই কলটা কাটা উত্তম। তাই সে বলল,
-‘ যেই না রুমের চেহারা তার নাম আবার পেয়ারা। থাকবই না আপনার রুমে।’

একথা বলে সে কল কেটে দিলো। তারপর পুরো রুম টইটই করে ঘুরে,
এটা-ওটা নেড়েচেড়ে দেখল। রুমের এককোণে থাকা ছোট্ট ফ্রিজ খুলে সফট ড্রিংকস্ বের করল। খেলো ধীরে সুস্থে। অত্যাধুনিক ডিজাইনের
ড্রেসিংটেবিলের কাঁচ সরিয়ে থরে থরে সাজানো পারফিউম ঘেটে ঘুটে দেখল। তারপর পছন্দসই একটা নিয়ে নিজের শরীরেও মাখল। খোলা চুল গুলো খোপা করে স্টাডি টেবিল থেকে একটা কলম নিয়ে খোঁপাতে গুঁজে দিলো। চুলের কাঠি কাজ সারল কলম দিয়ে আর কি! এরপর থম মেরে কিছুক্ষণ বসে থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েও থেমে গেল। পিছু ফিরে তাকাল বিছানার দিকে। বিছানাটা যেন টানছে তাকে। ভাবল সে যদি এখানে থেকেও যায় শুদ্ধ জানতেও পারবে না। কল কেটে দিয়েছে জানার কথাও না। চোখে আবার ঘুম ধরা দিয়েছে। রুমে যেতে আলস্য
লাগছে। এসব ভেবে সে ড্রিম লাইট অন করল। রুমে ছেঁয়ে গেল নীলচে নরম আলোয়। তার রুমটার থেকেও এই রুমটা বড়সড় খুব বেশি সুন্দর। গোছগাছ থাকে অলটাইম। এজন্য খুব লোভ হয়। মন বলে শুদ্ধকে বের করে রুমটা দখল করে নিতে। মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে সে এগোল বিছানার দিকে। শুয়ে পড়ল নিশ্চিন্ত মনে। এরপর বিরবির করে বলল,

-‘একটু ঘুমাই। একটু ঘুমালে পাপ হবে না। জানতেও পারবেনা রুমের খ’চ্চ’র মালিক।’
একথা বলে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো। পরিচিত ঘ্রাণ নাকে এলে প্রাণ ভরে টেনে নিলো। এরপর অবান্তর ভাবনা ভাবতে ভাবতেই ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল। শুদ্ধ চেয়ারে হেলান দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল তার অনুপস্থিতিতে, তার রুমে, তার বেডে, অন্যকারো রাজত্ব। অথচ না কিছু বলতে পারল আর ধমকে বের করে দেওয়ার ইচ্ছে করল।

এখন মধ্যরাত। ঘুমিয়ে আছে সুখী মানুষগুলো। ইয়াসির রাতের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সিগারেট ফুঁকছে। নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছে। তার মনে একটি আফসোস জমা হয়েছে। সেই আফসোসের নাম শীতল। আজকে
পাখিটাকে না চাইলেও ছাড়তে হয়েছে। পাখিটার সেই পুতুল মুখ, শরীর শিরশির করা গোলাপি ঠোঁট, অধর কামড়ে হাসি, রাগী ফেস, চঞ্চলতা,
সব চোখের তারায় ভাসছে। কুটকুটে যৌবনের তাড়নায় জীবনে অনেক মেয়েকেই খেয়েছে। কিন্তু না মন তৃপ্ত হয়েছে আর না দেহ। এবার মনের মতো কাউকে পেলে নিজের কাছে রেখে দিলে কেমন হয়? ঠিক বন্দিনী করে। সম্পত্তির মতো নিজের নামে দলিল করে। যাতে কেউ না কাড়তে পারে। হুম, কাজটা করলে কিন্তু মন্দ হয় না। তার জীবনে হেতু দরকার।

সংসার করার ইচ্ছে কোনোকালেই ছিল না কিন্তু জীবনটা আজকাল খুব বেশি পানসে লাগে। একাকী সময়গুলোতে কাউকে পাশে পাওয়ার শখ জাগে। অনেক তো হলো বাউন্ডুলেপণা। এবার তাহলে শীতল রাণীকেই বন্দিনী করা যাক। রেখে দেওয়ার যাক নিজের খুব কাছে, নিজের করে।
তার স্তব্ধ বাড়িতে চঞ্চলপাখিটি উড়ে উড়ে, ঘুরে ঘুরে, বেড়াবে। তার মন কেমন করা খিলখিল হাসিতে সুখ এসে ঝুমঝুম করবে। গাইবে। নাচবে। আর সে দু’চোখ ভরে দেখবে। হাসবে। আগলে রাখবে। এছাড়াও চঞ্চল
পাখিটাকে সে রোজ রাতে বউ সাজাবে। লাল টুকটুকে লাজেরাঙা বউ।
মোটকথা, বউয়ের সাজে কখনো কারো সঙ্গে রাত্রিযাপন করা হয় নি।
না কারো বউয়ের সাজ নষ্ট করার কারণ হতে পেরেছে। এবার হবে। খুব তাড়াতাড়ি হবে। সামর্থ্যবান পুরুষ হয়ে যদি বউসাজে বউয়ের সাজ নষ্ট করতে না পারে তবে কেমন পুরুষ সে, ছ্যাহ্! পুরুষ সমাজ কি মানবে?
মানা উচিতও না। সে জানে না এসব কেন ভাবছে। তবে ভাবতে ভালোই লাগছে। তার এমন বেপরোয়া ভাবনা ছেদ ঘটল ফোনের রিংটোনে। কল রিসিভ করে কানে ধরতেই কেউ বলল,

-‘ওই ছেলেগুলো কই? কোথায় পাঠিয়েছো তাদের?’
-‘পালাতে বলেছি পালিয়েছে। কোথায় গেছে আমি কি করে বলব?’
-‘ সত্যি কথা বলো ইয়াসির।’
-‘কি আশ্চর্য! আপনাকে মিথ্যাকথা বলব কেন? আপনি কি আমার বেড পার্টনার যে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে আরেক রাউন্ড খেলার ফায়দা খুজব?’
-‘ তুমি কি নরমাল কথা বলতে পারো না?’
-‘না পারি না। কারণ আমার সেক্স পাওয়ার আপনার মতো লো বাজেটের না। আমার পাওয়ার অলটাইম তুঙ্গে তাই আমিও থাকি চাঙ্গে।’

-‘এতই যখন পাওয়ার মেয়েটাকে রেপ করলে না কেন?’
-‘শুদ্ধ মশাইকে একটু খেলিয়ে নিতে মন চাইল। তাছাড়া ওই নটি বয় আগে দেশে আসুক। বিদেশী বসে বোনের কলঙ্কিত দেহ দেখে কতটুকুই বা শোকপালন করবে?
-‘ও ফিরলে আরো পারবে না। শকুনি দৃষ্টি তার। এমনি এমনি শীর্ষস্থানে নাম পৌঁছায় নি।’
-‘বলেন কি, দেখে তো মনে হয় না।’
-‘গভীর জলের মাছ। যা করে তা দেখায় না আর যা দেখায় আসলে সে সেটা না। তাই ওকে হেলাফেরা করা ঠিক হবে না।’
-‘ও আই সি। সমন্ধি দেখি গোটাটাই চিজ বার্গার।’
-‘ও তোমার বউয়ের ভাই না যে সমন্ধি ডাকবে।’
-‘ডাকলে কি পাপ হবে?’

-‘তা জানি না তবে সিরিয়াস হও। চোখ কান খোলা রাখো। গাধার মতো একাজ বার বার করে সময় নষ্ট করছো তুমি। মেয়েটাকে ছেড়ে শুদ্ধকে খোঁচালে এর ফল ভালো হবে না।’
-‘ভ্যাজর ভ্যাজর না করে টাকা পাঠান দেখি। পকেটে টাকা না থাকলে শরীরে এনার্জি পাই না।’
ইয়াসিরের কথা শুনে লোকটা কল কেটে দিলো। কয়েক মিনিট পর তার ফোনে মেসেজ এলো। মাত্রই একাউন্টে তিন লাখ টাকা ঢুকেছে। এবার শান্তি লাগছে। মনে শান্তি নিয়ে ভাবতে লাগল পরের থাবাটা ঠিক কোন
জায়গায় দিলে শুদ্ধ সোনা আঁতকে উঠবে? কাঁটা মুরগির মতো ছটফট করবে ?চৌধুরী নিবাসে নাকি দু’টো কুঁচো চিংড়ি আছে। নামটা বোধহয় সাম্য, সৃজন। তাদের থাবার গুটি বানালে কেমন হয়? উম, ভালোই হয় বোধহয়। তাহলে আর কি ভালো দিয়ে ভালো কাজই সম্পূর্ণ করা হোক।

গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে সায়ন। রুম জুড়ে অন্ধকার। সময় তখন ভোর পাঁচটার কাছাকাছি। সেই মুহূর্তে নিঃশব্দে তার রুমে প্রবেশ করল কেউ। আস্তে করে জ্বালালো ড্রিম লাইট। আবছা আলোয় দেখল দাপুটে, রাগী,
ছেলের শান্ত চেহারা। সে সাবধানে হাতে রাখা কেকটা সেন্টার টেবিলের উপর রাখল। এরপর কোলবালিশটা সরিয়ে সায়নের পাশে শুয়ে পড়ল।
মায়া লাগল ডাকতে।বুকের কাছ থেকে কোলবালিশ সরায় বিরক্ত হলো সায়ন। বউটাও কাছে আসে না। কোলবালিশও আজকাল কাছে থাকতে চাই না। কি যে জ্বালা!
সে ঘুমের ঘোরে কোলবালিশ হাতড়ে নিতে গিয়ে হাত পড়ল নরম কিছুর উপর। বালিশ তো এত নরম না। বিড়াল টিড়াল নাকি? রুমের দরজাটা খোলা দেখে ঢুকেছে পড়েছে বোধহয়। একথা মাথায় আসতেই সে চোখ খুলতে গিয়েও খুলতে পারল না। কেউ চোখের উপর হাত রেখেছে। তার খুব কাছে ঝুঁকে এসেছে। কানে কানেও বলছে, ‘ শুভ জন্মদিন শাহরিয়ার চৌধুরী। শুভ হোক আপনার জীবনের আগামী পথচলা। সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য
এসে আলোকিত করুক আপনার জীবন।’

সায়ন হাসল। তার চোখ থেকে হাত সরালে ঘুম ঘুম চোখে দৃষ্টি মেলতেই চোখের তারায় বিষ্ময় খেলে গেল। তড়িৎ উঠে বসতে গিয়েও নিজেকে দমিয়ে নিলো। চোখ ডলে আবার তাকাল। স্বর্ণও তাকিয়ে আছে। সায়ন অবাক হয়ে দেখছে শাড়ি পরা স্বর্ণকে। স্বর্ণ শাড়ি পরে না। কালেভাদ্রেও না। আর পড়লেও কখনো বাইরে যায় না। অথচ আজ এ রুপে, এ বেশে তাকে দেখে সায়ন কথার খৈই হারিয়ে ফেলল।শুধু মুগ্ধ নয়নে দেখে গেল তার মনোহরণীকে। তারপর আজলা ভরে স্বর্ণের দুই গালে হাত রেখে বলল,
-‘ কাজি অফিস খোলা থাকবে এখন?’
-‘না।’
-‘কাজির বাড়িতে লোক পাঠায় তুলে আনুক ব্যাটাকে?’
-‘উহুম।’
-‘ তাহলে তুই কিছু একটা কর?’
-‘কি করব?’
-‘হয় বিয়ে নয়তো বেসামাল আমিটাকে সামলে নে।’
-‘উঠে বসো।’

একথা বলে স্বর্ণ সরে গেল। কেকটা এনে দাঁড়াল ঠিক সায়নের সামনে। সায়নের চোখে মুখে মুগ্ধতা। বিহ্বলতা। অপ্রত্যাশিত ভালোলাগায় বুক ভরে গেছে। স্বর্ণ সেজেছে। তার স্বর্ণ তার জন্য সেজেছে। যত্ন করে চোখে কাজল পড়েছে। ঠোঁটে লিপস্টিকের হালকা ছোঁয়া। অঙ্গে জড়ানো তারই দেওয়া জামদানি শাড়ি। আচ্ছা শাড়িটি বেশি সুন্দর নাকি তার স্বর্ণ অঙ্গে জড়িয়েছে তাই এত সুন্দর লাগছে? সায়নকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখেও স্বর্ণ কিছু বলছে না। হাসছে না। আর না লজ্জায় নুইয়ে পড়ছে। সে সায়নকে উঠে বসিয়ে ইশারায় কেক কাটতে ইশারা করল।
সায়ন কেকটা সামনে রেখে স্বর্ণকে হেঁচকা টানে বসাল তার সামনে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল পেছন থেকে। গ্রাবীয় থুতনী ঠেঁকিয়ে চুমু খেল। খোঁচা দাঁড়ি ঘষে দিলো মসৃণ ত্বকে। ক’দিনের না কামানো দাঁড়ির খোঁচা খেয়ে স্বর্ণ বিরক্তি নিয়ে তাকাল। সরে বসার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না আঁটকা পড়ল পুরুষালি শক্ত বাঁধনে। সায়ন তার হাতের উপর হাত রেখে কেক কাটল। দু’জন দু’জনকে খাওয়াল। স্বর্ণ রিচওয়াচ গিফ্ট করল।এবং নিজে হাতে তা পরিয়ে দিলো। সায়ন তাকাল জানালার দিকে। দেওয়াল ঘড়িতে বাজে পাঁচটা আঁটচল্লিশ। বাইরের আলো ফুটে নি। মনেও ছিল না আজ তার জন্মদিন। জন্মদিনের সকালটা এত সুন্দর হবে ভাবতেও পারে নি। সে পুনরায় স্বর্ণকে কাছে টেনে নিলো। যত্নে করে চুমু আঁকল চোখে, গালে, গলায়। তারপর ফিসফিস করে ডাকল,

-‘জ..জান!’
-‘হুম।’
-‘চলনা বিয়ে করে ফেলি? আজই বাসায় জানিয়ে দেই? শুধু শুধু টাইম ওয়েস্ট করে কি লাভ বল?’
-‘ আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি?’
-‘ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছিস।’
-‘যেই ফিল্ডে পা রেখেছো দু’দিন পর দম ফেলানোর সময় পাবে না। এরই মধ্যে বিয়ে?’
-‘তাও ঠিক কিন্তু মন তো মানছে না। এককাজ করি চুপিচুপি বিয়ে করি? পরে জানাব সবাইকে? আমার বিশ্বাস আমার বাপ ছাড়া বাড়ির কেউ’ই অমত করবে না।’
-‘শখ আপুর বিয়েটা হয়ে যাক এরপর তোমার পালা।’
-‘কিন্তু…..!’
-‘কি?’
সায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে’ই শুয়ে পড়ল। মুখ রাখল স্বর্ণের গলার ভাঁজে। এরপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বিরবির করে আওড়ালো,

এলোমেলো হয়ে যায় মন, কেন আজ বুঝি না
দাবানল যেন ছড়ালো পার করে সীমানা
শ্বাপদের মতো হানা দেয় এ মনের কামনা
নিজেকেই দেখে লাগে আজ
অ..অচেনা, অচেনা, অচেনা।
সায়ন থামল। স্বর্ণ মনে মনে হাসল। তারপর সায়নের চুল খামছে ধরে গলার ভাঁজ থেকে মুখ তুলে চোখে চোখ রাখল। সায়নের নিদারুণ ফেসে নজর বুলালো। কপাল, গাল, নাক, ঠোঁট, রেখে চুমু আঁকল খোঁচা খোঁচা দাড়ির থুতনীতে। তারপর বলল,
-‘স্কলারশিপ নিয়ে দুই বছরের জন্য বাইরে চলে যাই?’
-‘কেন?’

-‘যত দিন যাচ্ছে তোমার চিপকাচিপকি বাড়ছে। দিনকে দিন অধৈর্য হয়ে যাচ্ছো তুমি। এরচেয়ে দূরে চলে যাই। তুমি এদিকে কাজ সারো। দু’বছর পর নাহয় দেশে ফিরে সংসার সাজাব আমরা। এতে আমার পড়াশোনা ঠিক থাকবে আর তুমিও লক্ষ্যে স্থির থাকতে পারবে।’
-‘প্রতিনিয়ত আমার যৌবনের খ্যাতায় আগুন জ্বালিয়েও মন ভরছে না, না তোর? এখন তোকে রোজ না দেখে, না ছুঁয়ে, মেরে ফেলার পায়তারা জুড়েছিস? এতই সোজা? এতই সস্তা আমার প্রেমানুভূতি?’
-‘ ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো এতে দু’জনেরই ভালো হবে।’
-‘ সর যা। ভুলেও আর আমার রুমে আসবি না তুই। তোর ভালোবাসার গুষ্ঠিকে চু…চন্দ্রাবতী।’
একথা বলে সায়ন রেগে উঠতে গেলে স্বর্ণ থামিয়ে দিলো। সায়নের দুই গাল আজলা ভরে ধরে একগালে মৃদুভাবে থাপ্পড় মেরে বলল,

-‘মুখ খারাপ করতে বারণ করেছি না?’
-‘তুমি আমার বালের আবদার করবা? আর আমি শক্তিহীন পুরুষের মতো মেনে নেবো? আবার গালিও দেওয়া যাবে না। গালি দিবো না তো কি এভাবে চুমু দেবো?’
কথাশেষ করে স্বর্ণের ঠোঁটে চট করে চুমু খেয়ে নিলো। কাজটা এত দ্রুত করল যে তাকে বারণ করারও সময় পেল না। স্বর্ণ কিছু বলার আগেই
নিজে সিরিয়াস হয়ে বলল,
-‘আমি ইচ্ছে করে তোকে ভালোবাসি নি। যা হয়েছে তা মনের অজান্তে।

কিন্তু বর্তমানে আমাদের রিলেশন নিয়ে আমি খুব সিরিয়াস। ভালোবাসি তোকে তাই বউ বানাবো তোকেই। নয়তো মন কঠুরী আজীবনের জন্য সিলগালা করে দেবো। আর মজা করে যদি দূরে যাওয়ার কথাটা বলিস তাহলে বলব দারুণ জোক্সস্। ফিলিংস হচ্ছে নাইচ, ওয়াও, অসাধারণ, নেক্সট, পরের পার্ট প্লিজ। আর যদি সিরিয়াসলি বলিস তাহলে আগে ওয়ার্নিং ছাড়াই বাসর সারব, প্রেগনেন্ট করব, তারপর বিয়ে করে বাসায় জানাব। এটা অন্তত মাথায় গেঁথে রাখিস?’
স্বর্ণ চুপ করে শুনল। তারপর সায়নকে সরিয়ে সায়নের বুকে মাথা রেখে চুপ করে শুয়ে থাকল। সায়ন তাকে বুকে আগলে চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে যত্ন সহকারে। শান্তিতে দু’চোখে ঘুম নেমে আসছে। সায়নের মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। সে স্বর্ণের কানে কানে বলল,

-‘শাড়ি কি আমার জন্য পরেছিস?’
-‘হুম।’
-‘তাহলে খোলার দায়িত্ব’ও তো আমারই, তাই না?’
-‘রুমে যাব, সরো।’
-‘মামার বাড়ির আবদার বললেই মনে হচ্ছে যেতে দেবো।’
-‘তাহলে মুখ বন্ধ রাখো।’
-‘ তাহলে একটু আদর করতে দে।’
-‘আগামী তিনদিন তোমার কাছে আসা তো দূর কথাও বলব না। এখন যেতো না সময় বেড়ে যাবে। তুমিই ভাবো তুমি কি করবা!’
একথা বলে স্বর্ণ ওকে ধাক্কা দিয়ে উঠে চলে গেল। দরজা খুলে যাওয়ার আগে সায়ন মুখ কাঁচুমাচু করে বলল,
-‘যাচ্ছিস যা। আমাকে রেপ করে যা প্লিজ। নয়তো তোর ছোঁয়ায় একটু কলঙ্ক লেপ্টে দিয়ে যা, জান।’
-‘আবার শুরু করলে?’
-‘না মানে সকালে আয়নায় নিজেকে দেখে যাতে সান্ত্বণা দিতে পারি তাই আর কি!’
তার কথায় স্বর্ণ খুব বিরক্তি হয়ে তাকিয়ে চলে গেল। স্বর্ণকে রেগে যেতে দেখে সায়ন শব্দ করে হেসে ফেলল। তার লাগামছাড়া কথা ও কাজ শুধু পাগলিটাকে রাগানোর জন্যই আর কি! পরিশেষে সফল।

এক সপ্তাহ পরের ঘটনা,
শীতল এখন সুস্থ বলা চলে। তার চঞ্চলতা দেখে বোঝার উপায় নেই কত বড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে ফিরেছে। তার মতে,তার জন্য চিন্তা করার
অনেক মানুষ আছ। সে শধু শুধু চিন্তা করে রক্ত শুকাবে কেন? এরমধ্যে সে শুদ্ধর বিয়ের ব্যাপারে ইনিয়ে বিনিয়ে সবার কাছে বলেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার কেউ বিশ্বাস করতেই চায় না। শীতলের কথা শুনে সিঁতারা নিজে শুদ্ধকে জিজ্ঞাসা করেছিল,
-‘শীতল খেতে বসে বলছিল তুই নাকি পাত্রী দেখার কথা বলেছিস। সত্যি নাকি বাপ?’
-‘পাগল ছাগল মানুষ কত কথায় তো বলে সব কথা ধরতে আছে? আমি কাজে এসেছি এসব বিয়ে টিয়ের কথা বলে মনোযোগ নষ্ট করতে চাচ্ছি না আপাতত। ওর কথায় কান দিও না।’
ছেলের কথা শুনে সিঁতারা দীর্ঘশ্বাস চাপলেন। ভেবেছিলের ঘটনা সত্যি বোধহয়। খুশিও হয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে তো মুখে উপর না করে দিলো।

দু’দিন পর শীতল পুনরায় কলেজ যাওয়া শুরু করল। কেউ বাঁধা দিলো না তবে সায়ন তিনবোনের জন্য কড়া সিকিউরিটির ব্যবস্থা করল। যেটা তিনবোনের কেউ টেরও পেল না। শুদ্ধ স্কেচগুলো পেয়ে গেছে। সায়নকে পাঠিয়েছে কাজ শুরু করতে। সায়ন ইনিয়ে বিনিয়ে শীতলকে সেগুলো
দেখিয়েছে। শীতল বিষ্ময় নিয়ে কনফার্ম করেছে এরাই ছিল। বোনের কথা শুনে সায়ন মাথায় হাত বুলিয়ে হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করেছিল,
–‘ বোন, মনে কর এই ছেলেগুলোকে হাতের কাছে পেলে, তখন কি করবি? মাফ করে দিবি?’
-‘মোটেও না। ওরা আমাকে মেরেছে। মেরে ঠোঁটের র’ক্ত বের করেছে। যখন আমার বুকে লাথি মারল আমার মনে হয়েছিল আমি মরেই যাব। শ্বাস নিতে পারছিলাম না। হ্দপিন্ড যেন ছিটকে বেরিয়ে আসবে এমন ভাবে লাফাচ্ছিল। বিশ্বাস করো ভাইয়া, খুব কষ্ট হয়েছিল আমার,খুব। ওদের পেলে করাত দিয়ে ওদের হাত কাটব। কাঁচা চামচ দিয়ে ওদের হার্ট খুঁচিয়ে দেবো। বেয়াদবগুলো তখন বুঝবে কারো বুকে ব্যথা দিলি কেমন লাগে।’

-‘ধর এমনভাবে কেউ তাদের মেরে তোর কাছে পার্সেল করল। ভয় পাবি না তো?’
-‘মোটেও না।’
-‘তাহলে আবেদন মঞ্জুর করা হলো।’
-‘মানে? কিসের আবেদন? কিসের মঞ্জুর?’
-‘ও কিছু না। তুই পেয়ারা খা, আমি যাই গা।’
সায়নের কথার আগামাথা কিছুই বুঝল না সে পেয়ারা খাওয়াতে মন দিলো। সিঁতারা এসে তখন জানালেন শুদ্ধকে নাকি কলে পাচ্ছেন না। ছেলেটার সাথে কথা হয় নি গতকাল থেকে। একথা শুনে শীতল নিজেই ফোন করল শুদ্ধকে। কলের পর কল দিতেই থাকল। তবুও কেউ রিসিভ করল না। আঁটবারের বেলায় কেউ রিসিভ করে বলল,

-‘হেই শীতল, শুদ্ধকে আঁটকাও বোন!’
-‘আঁটকাব? কিন্তু কেন, কি হয়েছে?’
-‘ লাইফ রিস্ক নিয়ে sky diving করার পায়তারা জুড়েছে? কার উপর রেগে আছে কে জানে।’
-‘এটা আবার কি?’
-‘ একটা কাজে প্রাইভেট জেট নিয়েছিলাম। এখন ও বলছে প্যারাসুট নিয়ে জেট থেকে লাফ দেবে। এই পাগলকে কি করে সামলাব আমি?’
-‘ লাফ দেবে মানে? চলন্ত জেট থেকে লাফ দেবে?’
-‘হুম। তাও একা নয় ঐশ্বর্যকে নিয়ে।’
-‘ঐশ্বর্য কে?’
-‘ আমাদের দলের হার্ট-হ্যাকার। দেখবে ওদের?’
একথা বলে কামরান ফোনের ব্যাক ক্যামেরা অন করতেই দেখতে পেল শুদ্ধকে। সাদা টি-শার্ট, কালো প্যান্ট পরা সুদর্শন যুবকটির কাঁধে ব্যাগ।

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২১

সে কথা বলতে বলতে জেটের দরজা খুলে দিলো শুদ্ধ। কামরান তাকে বলতেও পারল না শীতল কলে আছে তাকে দেখছে। তার আগেই শুদ্ধ লাফ মেরেছে জেট থেকে। এরপরপরই লাফ দিলো আরেকজন। তার শারীরিক গঠন বলে দিচ্ছে সে মেয়ে। চোখে মুখে আত্নবিশ্বাসের ছাপ।
অপরুপ সৌন্দর্য্যে অধিকারী বলার অপেক্ষা রাখে না। কামরান ক্যামেরা নিচের দিকে তাক করতেই দেখতে পেল শুদ্ধ পড়ে যাচ্ছে নিচের দিকে। নিচে বড় বড় পাহাড়। উপর থেকে পড়লে বাঁচানো যাবে না। শেষ..শেষ।
এইটুকু দেখে ভয়ে শীতলের দেহ কাঁপতে লাগল। ঘামতে লাগতে দরদর করে। আর দেখার সাহসও করল না সে চিৎকার করে উঠল শু…..শুদ্ধ ভাই!

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৩