শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৩

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৩
নূরজাহান আক্তার আলো

কামরান নিচের দিকে ক্যামেরা তাক করতেই দেখতে পেল শুদ্ধ পড়ে যাচ্ছে। মাথার উপরে স্বচ্ছ সুনীল আকাশ। নিচে বড় বড় পাহাড়। তীব্র বাতাসের গতি তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে৷ এত উপর থেকে পড়লে বাঁচার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। শেষ..সব শেষ। এটুকু দেখামাত্র তার শরীর কাঁপতে লাগল। ঘামতে লাগল দরদর করে। গলায় যেন মরণ তৃষ্ণা। হতবাক দৃষ্টি। তার ইচ্ছে করল দু’হাত বাড়িয়ে শুদ্ধকে ধরে নিতে। জাপটে ধরে চিৎকার করে বলতে, ‘এ কেমন পাগলামি শুদ্ধ ভাই! কেন এমন করছেন? জানে কি ভয় ডর নেই আপনার।’ সে মনে মনে চিৎকার করে কথাগুলো বললেও কন্ঠস্বর যেন বোবা। কথা হারিয়ে গেছে। প্রচন্ড ভয়ে বাকহারা। ততক্ষণে শুদ্ধ দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেছে। আর দেখা যাচ্ছে না তাকে। তবে কি সত্যি সত্যি পড়ে গেল? মরে গেল? শীতল আর ভাবার সাহস করল না। শুধু অসহায় সুরে ডেকে উঠল,’ শু…..শুদ্ধ ভাই! কে আছো ওকে বাঁচাও!’

একথা বলে চট করে উঠে দাঁড়াল শীতল। কোলের উপরে থাকা চিপসের প্যাকেট পড়ে গেল মেঝেতে। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল করুণ সুরে। ডাকতে লাগল বড় মাকে, বড় আব্বুকে।কর্ণকুহুরে প্রতিধ্বণি হতে লাগল বড় আব্বুর বলা পুরনো কথাগুলো, ‘তোমরা একেকজন আমার জীবন বাগানের জীবন্ত ফুল। তোমাদের কারো কিছু হলে আমি একটুও ভালো থাকব না। খুব কষ্ট পাব। বেঁচে থাকার শক্তি হারাব। আর তোমরা ভালো থাকলে আমি ভালো থাকব। সুখে থাকব। আমার জীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে পরিপূর্ণ থাকবে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শুদ্ধ ভাইয়ের কিছু হলে বড় আব্বুর কি হবে?সায়ন, শুদ্ধ দুটোই উনাদের সন্তান হলেও শুদ্ধ ভাইকে বড় আব্বু একটু বেশিই ভালোবাসে। আর বড় মা ভালোবাসে সায়ন ভাইকে। মোটকথা,শুদ্ধ ভাই সত্যি সত্যি মরে গেলে
তাকেই বা ধমকাবে কে? মারবে কে? এটা ওটা কিনে দেবে কেন? খোঁচা মেরে কথা বলবে কে? চৌধুরী নিবাসের সবথেকে খারাপ মানুষটা হচ্ছে শুদ্ধ ভাই। তাই বলে সে কখনোই চায় নি সে হারিয়ে যাক। ফুরিয়ে যাক। তার এমন করুণ পরিণতি হোক। আর কেন চাইবে? শাষণ করলে রাগ, ঝাল দেখালেও সে জানে শুদ্ধ সবার ভালো চায় সবসময়। অথচ সেই মানুষটা থাকবে না একথা ভাবতেও পারছে না সে। এ কি হয়ে গেল? কি ঘটে গেল তাদের সাথে।
আচমকা শীতলের চিৎকার শুনে থমকে দাঁড়িয়েছে শারাফাত চৌধুরী।

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন হাউমাউ করে কান্না করা শীতলের দিকে। সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন তিনি। উদ্দেশ্যে কড়া করে এক কাপ চা পান করার। মাথাটা ধরেছে খুব। কাজের চাপ বেশি থাকায় বিশ্রাম হচ্ছে না তেমন।
শরীরটা খারাপ লাগায় বাড়িতেই ছিলেন। মাথা ব্যথার কথা সহধর্মিনীকে জানলে নিচে আসতে বলে সিঁতারা চুলায় চা বসিয়েছে। উনি যতবারই চা বানাবে দুই জা ‘ও সুড়সুর করে চলে আসবে। দাঁত বের করে হাসবে। হাসির মানে চায়ের ভাগ চায়। চা দিলে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলবে,’ভাগ্যিস পার্স হারানোর বাহানায় বড় ভাইয়ার সাথে তোমার পরিচয়টা হয়েছিল। নাহলে এত স্বাদের চা মিস করে ফেলতাম। সাধের জীবনটাও অর্ধেক বৃর্থা হয়ে যেত।’ বাড়ির বাচ্চারা শুনে ফেললে লজ্জার অন্ত থাকবে না। তাই সিঁতারা দু’ জাকে ধমকে থামালেও তার মুখে থাকে লাজুক, মিষ্টি হাসি। উনাকে লজ্জা পেতে দেখে হেসে উঠে সিরাত আর সিমিন। কথায় কথায় খোঁ’চা’তে থাকে গম্ভীর শারাফাত চৌধুরীকে প্রেম রোগের রোগী বানানোর অপরাধী হিসেবে।
এই মূহূর্তে সিঁতারার পাশে দাঁড়িয়ে সিমিন চিংড়ি মাছ কাটছেন। বাড়ির
ছেলেমেয়ে গুলো উনার হাতের চিংড়ির মালাইকারী পছন্দ করে। সায়ন তো একাই খাবে তিন/চার পিচ। খেতে খেতে বলবে,

-‘ওহ ছোটো আম্মু, স্বর্ণের বরের দেখি সোনা বাঁধানো কপাল। শাশুড়ির হাতের অমৃত খাবার ফ্রিতে খেতে পারবে।’
একথা শুনে শীতল স্বর্ণের দিকে একবার তাকিয়ে গালভর্তি হেসে জবাব
দিবে,
-‘শুধু আপুর না, আমার বরেরও। ‘
কথাটা সায়নের খুব একটা পছন্দ হবে না। সে খাওয়া থামিয়ে সিরিয়াস কন্ঠে প্রতিবাদ করবে,
-‘চিংড়ি, ইলিশে, তোর বরের এলার্জি আছে। সে এসব খেতে পারবে না। আর খেলেও আমার ভাগে কম পড়বে তাই সাধাসাধি করব না।’
-‘তুমি কি করে জানলে আমার বরের এলার্জি আছে?’
-‘জানি, জানি, সব জানি।’
-‘কিভাবে জানো শুনি?’
-‘শুধু আমি না শুদ্ধও জানে, জিগা ওরে?’
-‘শুদ্ধ ভাই আপনিও জানেন?’
-‘হুম।’
-‘বলুন না সেই সৌভাগ্যবান কে?’
-‘তুইও চিনিস তাকে।’
-‘চিনি? চেনাজানার মধ্যে?’
-‘হুম।’
-‘আমাদের পাড়ার কেউ?’
-‘হুম।’
-‘ কে সে, প্লিজ বলুন না, বলুন?’
-‘পাড়ার মোড়ের গাবু পাগলা।’

একথা শুনে শীতলের মুখের হাসি মিলিয়ে যাবে। অভিমান এসে জড়ো হবে তার ডাগর ডাগর চোখের পাতায়। মুখ দিয়ে সব সময় লালা ঝড়ে এমন ছেলেকে বিয়ে করবে না। গাবু তার বর হতেই পারে না। অতঃপর সে সায়ন, শুদ্ধর নামে নালিশ জানাবে শারাফাত চৌধুরীকে। খেতে বসে ছেলে মেয়েদের ঝগড়া দেখে হাসবে সকলে। বলা বাহুল্য, শুদ্ধ খায় অল্প সল্প। সবকিছুতে খুঁতখুঁতে স্বভাব ছোটোবেলা থেকেই। কোনো খাবার সে গপগপ করে খায় না। যা খাবে সীমিত। পাতেও তুলবে পরিমানমতোই। এই ব্যাপারটা উনার ভালো লাগে। মুগ্ধও করে। তার ভাষ্যমতে, থাকলেই খেতে হবে কিংবা নষ্ট করতে হবে, এমনটা তো নয়। খাবারের মর্ম বোঝা উচিত।
মোটকথা, সেও চিংড়ি খায় তবে একটাই সমস্যা এলার্জি। অগত্যা এক টেবিলে বসে সবাই খেলেও সে ছুঁয়ে দেখে না। ব্যাপারটা ভাবলে খারাপ

লাগলেও কিছু করার নেই। এসব পূর্বের কথাগুলো স্মরণ করে সিমিন মনে মনে হাসছিল। দোয়া করছিল পুরো পরিবারটা যেন আজীবন সুখে ভরা থাকে।
তখন সিরাত ফোনে কথা বলতে বলতে রান্নাঘরের দিকে এলেন। উনার মা আগের তুলনায় এখন সুস্থ আছেন। এজন্য তার মুখে হাসি ফুটেছে।
ক’দিন পর মেজো জাকে হাসতে দেখে খুশি হলো দুই জা। সিরাত কথা বলে ফোনটা রেখে সিঁতারাকে বলল,
-‘ভাবি? সামনেই তো রোজার মাস। রোজার আগে কোথাও থেকে ঘুরে এলে কেমন হয়?’
-‘কোথায় যাবি?’

-‘কাছেকোলে কোথাও যাই? অথবা চলো পিকনিক করি? বাচ্চাগুলোও খুশি হবে। আচ্ছা শুদ্ধ কবে ফিরবে?’
-‘ দু’দিন ধরে তাকে ফোনেই পাচ্ছি না। এত কিসের কাজ আল্লাহ জানে।’
-‘বিয়ে দিয়ে দাও। বউয়ের টানে বাইরে থাকার কথা মাথায় আনবে না।’
-‘রাজি হলে দিয়েই দিতাম। কিন্তু দুই বজ্জাতের এক বজ্জাতও বিয়েতে রাজি না। তাদের নাকি সময় নেই।’
একথা বলতে না বলতেই শীতলের চিৎকার শোনা গেল। চুলা অফ করে
কোনোমতে ছুটে গেলেন তিন জা। গিয়ে দেখেন শীতল ফোনের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। কাঁপছে থরথর করে। শুদ্ধ ভাই! শুদ্ধ করে ডেকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে। ততক্ষণে তার চিৎকার শুনে বাকিরাও ছুটে এসেছে। জিঞ্জাসা করছে কি হয়েছে? কি দেখে ভয় পেয়েছে? আর শুদ্ধর নাম ধরে চিৎকার করল কেন? শুদ্ধ ঠিক আছে? শীতল ধপ করে বসে পড়ল। তার শরীরের শক্তি যেন কেউ শুষে নিয়েছে। তবুও ঢোক গিলে ছলছল চোখে বড় মার উদ্দেশ্যে বলল,

-‘শুদ্ধ ভাই জেট থেকে লাফ দিয়েছে বড় মা। নিচে অনেক বড় বড় পাহাড়।’
-‘ বলিস কি? তুই কি করে জানলি?’
-‘ ভিডিও কলে দেখলাম।’
-‘কই দেখি? আমাকেও দেখা?’
-‘কল ঢুকছে না।’
একথা বলে ঠোঁট ভেঙ্গে কেঁদে ফেলল শীতল। রীতিমতো ফোঁপাচ্ছে সে।শারাফাত চৌধুরীও ততক্ষনে ছুটে এসেছেন। বসেছেন শীতলের পাশে। হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস নিয়ে খাওয়ার ইশারা করে শান্ত হতে বললেন।
পানি খেয়ে সে গড়গড় করে বলল কী কী দেখেছে। শীতলের কথা শুনে সবাই চিন্তায় পড়ে গেলেন। নিজেরাও যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। শীতল তখন ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,

-‘ বড় আব্বু শুদ্ধ ভাই বোধহয় রাগ করে এই সিধান্তটা নিয়েছে। তাছাড়া কেন জেট থেকে লাফ মেরে মরতে চাইবে বলো?’
-‘রাগ? কিসের রাগ?’
-‘ভাইয়া বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমাকে ফোনটা দিয়েছে বিয়ের কাজ কতদূর এগোলো জানার জন্য। দিনে দুবার আমাকে শুধায় বিয়ের কাজ কতদূর এগোলো। আসলে নিজের বিয়ের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না তাই আমাকে বলে। প্লিজ বড় আব্বু ভাইয়ার বউ দেখো। বউয়ের অভাবে উনার মনের দুঃখ বেড়ে গেছে। সেই দুঃখে বোধহয় উনি
সুইসাইড করতে চাচ্ছে।’

শীতলের কথা শুনে সিঁতারা আঁতকে উঠলেন। শীতলের থেকে ফোনটা নিয়ে নিজেই কল দিলেন শুদ্ধর নাম্বারে। না পেলেন না। সিঁতারার চিন্তিত মুখে দেখে শীতল পুনরায় বলল,
-‘ বড় মা, শুদ্ধ ভাইকে বিয়ে দিচ্ছো না বলেই সে এমন কান্ড ঘটিয়েছে। তোমরা আমার কথা শোনো আমি একফোঁটাও মিথ্যা কথা বলছি না।’
-‘তুই বলিস, সে বিয়ের জন্য পাগল অথচ আমি জিজ্ঞাসা করলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।’
-‘লজ্জা পায়। এমনকি আমাকে কি বলেছে জানো? বলেছে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিতে নয়তো অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে। কতবার যে বললাম মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়ে দাও। কেউ শুনলে না। বিয়ের শোকেই ভাইয়া পৃথিবীকে বাই বাই করে দিলো বোধহয়।’
একথা শীতল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগাল। এইটুকু সময়ে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। হেঁচকি উঠছে। এবার শারাফাত চৌধুরী শীতলের মাথায় হাত রেখে বললেন,
-‘ কিছু হবে না মা। ভয় পেও না। শুদ্ধ এর আগেই স্কাই ড্রাইভিং করেছে।’
-‘বড় আব্বু নিচে বড় বড় পাহাড় ছিল। শু..শুদ্ধ ভাই পড়ে যাচ্ছিল।’
-‘পড়তো না। ওর পিঠে ব্যাগ দেখেছো না ওটা তে প্যারাসুট আছে। সময় মতো ব্যাগের চেন খুলে দিলেই আর পড়বে না। বাতাসে ভাসতে থাকবে।’

একথা শুনে শীতল বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল। রিক্স নিয়ে এসব করার কি দরকার? সে চোখ মুছল। এই সামান্য ব্যাপার না বুঝে বোকার মতো কেঁদে ফেলল। ছিঃ! ছিঃ!
তখন তার মাথায় খেলে গেল একটা মেয়েকেও লাফ মা’র’তে দেখেছে। এদের কত্ত সাহস! অথচ উঁচু ভবন থেকে নিচে তাকালেই তার বুকের ভেতর ধড়ফড় করে। দম আঁটকে আসে। তার কান্না থেমেছে দেখে আর দাঁড়াল না সে। নিজের রুমে গিয়ে দরজা আঁটকে শুদ্ধকে মেসেজ করল,
‘মেয়েদের সাথে উড়াউড়ি হয়ে গেলে কল দিবেন, জরুরি কথা আছে।’
মেসেজটি সেন্ড করে তার মাথায় ক্লিক করল বড় আব্বু বোধহয় তাকে শান্ত করতে একথা বলল। নাকি ঘটনা সত্যি? যখন চিৎকার করল সবাই ছুটে এসেছিল। চিন্তা ভাসছিল সবার চোখে মুখে। কিছু একটা ভেবে সে
দরজা খুলে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দেখল বড় মা প্রেসার বাড়িয়ে ফেলেছে।
সিরাম, সিমিন চিন্তিত মুখে উনার হাত-পা ডলছে। মুখে কিসব বলছে। শখ আপু মায়ের পাশে বসে প্রেসার মাপছে। বড় আব্বু কাউকে বারবার ফোন করছে। তারপর তার ধারণায় সঠিক তাকে বুঝ দিতে বড়রা তখন অভিনয় করল। মনে মনে একথা ভেবে সে পুনরায় ডুকরে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে ছুট দিলো রুমের দিকে। চোখের সামনে ভাসতে লাগল শুদ্ধর লাফ মারার ভয়ংকর দৃশ্যটা।

ধরতে গেলে আমাদের জীবনটা খুব ছোট। শুদ্ধর কাছে জীবনের মানে হলো মর্জিমতো জীবনের স্বাদ খুঁজে নেওয়া। খাওয়া-দাওয়া, আর ঘুম জীবনের মানে হতে পারে না। সে তার জীবনে এভভেঞ্চার পছন্দ করে। এডভেঞ্চার নাহলে জীবনের মানে বড্ড পানসে। জীবন চলতি পথে সুখ ও দুঃখের কাহিনী সাজায়। এসবে ভিড়ে তার মনে হয় জীবনকে নিয়েও একটু বাজি ধরা যাক। আজ হলেও মরতে হবে কাল হলেও। ভাগ্যে যদি লেখা থাকে অবিবাহিত অবস্থায় মারা যাবে তাহলে কি কেউ সেই নিয়তি খন্ডাতে পারবে?পারবে না, কখনো না! তাহলে হাত গুঁটি বেঁচে থাকবে?
অবশ্য জীবনের মায়া যাদের কম তারা জীবন বাজি ধরতে পছন্দ করে।

এটাই স্বাভাবিক। এই যে উড়ন্ত জেট থেকে লাফ মেরেছে এটাও কি কম সাহসের ব্যাপার? তার দেখে ঐশ্বর্যও তাই করেছে। এই মেয়েকে দেখেও অবাক লাগে। সাধারণ মেয়েরা সাপ, খোপ দেখে ভয়ে কাল ঘাম ছুটিয়ে ফেলে। অথচ ঐশ্বর্য তার বিপরীত। খুব মেয়ে স্কাই ড্রাইভিং করার সাহস দেখায়। মুখে বললেও অনেকে শেষ মূহূর্তে এসে ফিরে যায়। নতুবা ভয়ে, আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কামরান, অর্ক জেটের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে। দু’জনই বাতাসে গা ভাসিয়ে আকাশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভয় ডর নেই দু’টোর। কামরান আর অর্ক নিজেরাও রেডি হয়ে তাকাচ্ছে
একে অপরের দিকে। এরপর দুই বন্ধু হাসতে হাসতে লাফ দিলো। ওদের দেখে আরো দশ বারোজনও লাফ দিলো। একজোড়া কাপল নিজেদের
এক বেল্ট বেঁধে একসাথে লাফ মেরেছে। মেয়েটাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে ছেলেটাকে। চিৎকার করছে প্রাণপণে। সেই জায়গাটুকু মুহূর্তের মধ্যেই পিঁপড়ার মতো আরো অনেককে দেখা গেল।ঐশ্বর্য দাপুটের সাথে দমে আছে প্যারাসুটে। চোখে- মুখে অত্যাধিক খুশির মাত্রা। স্কাই ড্রাইভিং তার কাছে খুব পছন্দের রাইড।

এই রাইডে লাইফ রিস্ক আছে। মারাত্মক খুশি আছে। মোদ্দাকথা, লাইফ রিস্ক আছে বলেই তার ভালো লাগে। সে
আকাশপানে একবার তাকিয়ে তাকাল শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ তাকিয়ে আছে নিচে থাকা বিশাল সমুদ্রের দিকে। টলটল করছে নীল পানি। ওপর থেকে অসাধারণ লাগছে। ভাবছে অন্যকথা। মুখে মিটিমিটি হাসি। তার থেকে কিছুটা দূরে অর্কের ডাক শুনে শুদ্ধ সেদিকে তাকাল। অর্ক দাঁত কেলিয়ে চিৎকার করে বলল,
-‘চল ফিরে যাই?’
-‘তোরা যা।’
-‘শীতল কাঁদছে ভাই?’
-‘কাঁদুক।’
-‘মজা করছি না কামরানের কসম।’
-‘তোরা কি জানলি শীতল কাঁদছে?’
-‘ফোন করেছিল তোকে৷ এই হারামজাদা তোর লাফ মা’রা দেখিয়েছে ওকে।’
-‘তারপর?’
-‘কল কেটে গেছে। মেয়েটা বোধহয় ভয় পেয়েছে। ‘

শুদ্ধ কিছু বলল না দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। কিছু বলেও লাভ হবে না যতক্ষণ না নিজে কথা বলবে। এরপরের ঘটনাও তার জানা। শীতল কাঁদবে, সেই কান্না দেখে তার মা সহ বাড়িসুদ্ধ সবার কানে ঘটনাখানা পৌছে যাবে।
তার মায়ের উঁচ্চতায় ফোবিয়া আছে। ছেলে লাইফ রিক্স নিয়ে আকাশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই কথা ভেবে হয় উনার প্যানিক এ্যাটার্ক হবে নতুবা টেনশনে প্রেসার বাড়িয়ে ফেলবে। মূলত এজন্যই কোনো কাজের কথা কাউকে বলতে চায় না।এখন কিছু করারও নেই, কাঁদতেই থাক। কাঁদলে চোখ পরিষ্কার থাকে। তাকে চুপ থাকতে থেকে কামরান হাসল। তারপর ভ্রুঁ নাচিয়ে বলল,
-‘বুকের জ্বালা কমাতে ল্যান্ড করো বন্ধু।’
-‘হুম করতেই তো হবে। না করলে তোর একটা ব্যবস্থা কিভাবে করব?’
-‘কিসের ব্যবস্থা বন্ধু?’
-‘এখানে থাকার ব্যবস্থা।’

কামরানের হাসিটা মিলিয়ে গেল। চোখ মুখ শুকিয়ে গেল। শুদ্ধর শীতল কন্ঠে থ্রেট মানে কপালে দুঃখ আছে। দেশে ফিরে বিয়ের পিড়িতে বসার কথা। না, না, যেভাবেই হোক শুদ্ধকে মানাতেই হবে। বোঝাতেই হবে খুব অনুতপ্ত সে। এই পাপ আর জীবনেও করবে না। কিন্তু সেটা আর সম্ববও হলো না তার আগেই শুদ্ধ পাশ কাটিয়ে চলে গেল। এর পরপরই সংকেত পেল দ্রুত জেট উঠার। সবাই একে একে এলে এবার জেট ছুটল ল্যান্ড করার উদ্দেশ্যে। প্রায় তিন ঘন্টার পর জেট ল্যান্ড করলে শুদ্ধ দ্রুত পায়ে ছুটল রুমের দিকে। যেতে যেতেই কল করল সিঁতারার নাম্বারে। ছেলেকে সুস্থ দেখে সিঁতারা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। বকলো এমন কাজ না করার জন্য। শুদ্ধ হাসল। তবে আশেপাশে শীতলকে না দেখে বুঝল সে কাঁদতে ব্যস্ত। কাঁদুক, আর একটু কাঁদুক। কাঁদলে মন পরিষ্কার থাকে। মোটকথা,
কেউ যখন কারো জন্য ব্যাকুল হয়ে কাঁদে তখন দেখতে ভালোই লাগে। তার তো লাগে। মহারানী আর ঘন্টা খানিক কাঁদুক। সে এখন ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে, তারপর নাহয় কল ব্যাক করবে।

এই নিয়ে এগারোবার কল দিয়ে ভ্রুঁজোড়া কুঁচকে নিলো আহনাফ। আজ সকাল থেকে শখকে কলে পাচ্ছে না সে। গেল কই মেয়েটা? সকালথেকে মিষ্টি কন্ঠটা শুনতে পায় নি। বুকের ভেতর খাঁ খাঁ করছে। অসহ্য লাগছে।
সকালের শুরুটা এত জঘন্য কাটল দিনটা কি হবে কে জানে। দিনগুলো বড্ড বেশি বেইমানি শুরু করেছে, কাটতেই চায় না, কবে বছর কাটবে? কবে শখকে বউ করে ঘরে তুলবে? কবে বাহুডোরে জাপটে ধরে বুকের জ্বালা কমাবে? এসব কবে হবে? কবে? কবে? কবে?

সে দেশ ছেড়েছে কয়েক সপ্তাহ হয়েছে। শখ এয়ারপোর্টে এসেছিল তার সাথে দেখা করতে। যদিও এতটা কল্পনা করে নি। কিন্তু শখের এই ছোট্ট কাজে ভীষণ খুশি হয়েছিল। বড় রা না থাকলে জোর করে হলেও একটু জড়িয়ে ধরতো। কিন্ত সায়ন থাকায় সেই সাহস করে নি। অপেক্ষার ফল সুমিষ্ঠ হয়। সে সুমিষ্ঠ ফল পেতেই অপেক্ষা করতে হবে। এসব ভেবে সে রান্না শেষ করে ফ্রেশ হতে গেল। একটুপরে অফিসে যেতে হবে। এদেশে নিজের কাজ নিজে করতে হয়। তাই সব কাজ তারই করা লাগে। যদিও কাজ করতে মন্দ লাগে না। তবে কাজের ফাঁকে গল্প করার একটা মানুষ থাকতো বেশ হতো। সেই মানুষটা যদি শখ হলে তাহলে তো কথায় নেই।
আহনাফ ফ্রেশ হয়ে মাথা মুছতে মুছতে ফোন হাতে নিতেই দেখে শখের মেসেজ এসেছে, ‘ল্যাবে আছি। স্যার আছে৷ চিন্তা করবেন না আমি ঠিক আছে।’

এই ছোট্ট একটা মেসেজে তার বুকে শীতলতা নামল। কিছুটা চিন্তামুক্ত হলো। সেও ছোট্ট একটা মেসেজ সেন্ড করে রাখল, ‘ ভীষণ ভালোবাসি শখপাখি।’
মেসেজটা দেখে শখ মুখ টিপে লাজুক হাসল। সারাদিনে পাঁচ সাতবার শুনতে হয় এই ম্যাজিক্যাল বাক্যটা। শোনার অপেক্ষায় করে সে। কারণ আহনাফের কন্ঠে আদুরে সুরে বলা বাক্যটা শুনলে তার মন ভরে যায়। একদল খুশি বুকপাজরে ডানা ঝাপটাতে থাকে। প্রেম, প্রেম, তালবিহীন
ছন্দে সুখরা গুনগুনিয়ে গাইতে থাকে, নাচতে থাকে, তাদের আপন সুরে আপন তানে।

দু’দিন ধরে পার্টি অফিসে ঝামেলা চলছে। ঝামেলার সুত্রপাত অংকনের
হদিস পাওয়া নিয়ে। ছেলেটাকে সায়ন গুম করেছিল জানতে বাকি নেই কারো। তবে কোথায় রেখেছে? বাঁচিয়ে রেখেছে নাকি মে’রে ফেলেছে?
নাকি অন্যকিছু করার পরিকল্পণা এঁটেছে সে? এখন অবধি তার কোনো খবরই পাওয়া যায় নি। অংকনের বাবা পাগলা কুকুরের মতো হিংস্র হয়ে উঠেছে। আবু সিদ্দিককে হুমকিও দিয়েছে অংকনের খোঁজ বের করতে।
নয়তো আবু সিদ্দিকের কচি কাঁচা মেয়ে নিয়ে ১৮+ খেলাধুলার ভিডিও ফাঁস করে দেবো।
চাপে পড়ে আবু সিদ্দিক ইনিয়ে বিনিয়ে সায়নের থেকে কথা বের করার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু ধূর্ত সায়ন সেসব কথার ধারে কাঁছে ঘেঁষে না। হয় প্রসঙ্গ পাল্টায় নতুবা গালিগালাজ শুরু করে। তখন আবু সিদ্দিকি কথা বলার সাহস পান না। সায়নের এমন বেপরোয়া কাজে কনক বরাবরের মতো আজই খোঁচা মেরেছে। সায়ন দু’একবার হেসে উড়িয়েও দিয়েছে।

কিন্তু কনক যখনই মা তুলে গালি দিলো তখন নিজেকে সামলাতে পারল না। ক্ষীপ্ত সিংহের মতো তেড়ে গিয়ে শক্ত থাবায় কনকের শার্টের কলার চেপে ধরে একের পর ঘুষি দিতে থাকল। শক্ত হাতের ঘুষির তোপে নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে গেল কনকের। পার্টি অফিসে থাকা অন্য ছেলেরা কোনো তাদের থামায়। কনক আপাতত হসপিটালে। দুটো দিন সেখানে থাকতে হবে। হাতাহাতিতে সায়নেরও লেগেছে তবে হসপিটালে যাওয়ার মতো হয় নি। রাগে ফুঁসছে সে। আফসোস করছে আরো দু’চার ঘা কেন বসাল না? কেন জন্মের মতো কথার বলার শক্তি কেড়ে নিতে পারল না।
ঘটনা শুনে আবু সিদ্দিক পার্টি অফিসে এসেছে। তার সঙ্গে এসেছে নতুন এক মুখ। সায়ন তাকে দেখেও কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করল না। ধপ করে বসল চেয়ারে। তারপর টি- শার্ট পেছনে ঠেলে সিদ্দিকের উদ্দেশ্যে বলল,

-‘আজ থেকে আপনার দল আপনি সামলান।’
-‘কেন? তুই কোথায় যাবি?’
-‘ সেই কৌফিয়ত আপনাকে দেবো না।’
-‘সায়ন! আজকাল বড্ড চেটাং চেটাং কথা বলিস তুই। কার সাথে কথা বলছিস ভুলে যাস না।’
-‘ ভুলি নি এখনো। ভুললে স্ব-শরীরের বসে থাকার শক্তি পেতেন না।’
-‘তিন রাস্তার মোড়ে পার্টি অফিস বানাচ্ছিস শুনলাম। কি এমন হলো যে নতুন করে পার্টি অফিসের দরকার পড়ল?’
-‘কেন এর উত্তর আপনি ভালো করেই জানেন সিদ্দিক ভাই। তাও যখন আমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছেন তাই বলছি, আমি আর আপনার দলে থাকব না। না মানে, না! আর না আপনার হয়ে কাজ করব। এবার থেকে আমার দলের লিডার আমি।’

-‘আখের গুছিয়ে নিয়ে এখন আমাকে ই বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছিস? তা পারবি তো টিকতে? ‘
-‘ সায়নের আখের টাখের প্রয়োজন পড়ে নি, পড়বেও না। আপনার মতো আমি বস্তি থেকে উঠে আসি নি সিদ্দিক ভাই। আর না ফিকিন্নি ঘরের ছেলে৷ আর না দলে ঢুকে আপনি আমায় বান্ডিল বান্ডিল টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তাই এসব বালের কেচ্ছা অন্যকে শুনান যদি দান-ভিক্ষা আসে। আমি শুরু করলে কিন্তু খুব একটা ভালো হবে না।’
সিদ্দিক অপমানটুকু গিলে নিলো। চোয়াল শক্ত করে দাঁতের দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল সায়নের দিকে। সায়ন কিছু মিছু আন্দাজ করেছে কি না জানতে উনি নিজেকে সামলালেন। তারপর শুধালেন,
-‘শুনলাম নির্বাচন করবি।’
-‘করব।’
-‘এতদিন তোকে আমার ডানহাত বানিয়ে লোকের কাছে মুখ চেনালাম।
সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে ঘুরলাম। রাজনীতিতে রাজ করার কৌশল শেখালাম। তুই কি না এখন আমার পেছনেই বাঁশ দিতে উঠে পড়ে লেগেছিস?’

-‘উহুম, ভুল বললেন ভাই। বরং আপনিই আমার কারনে সকলের মুখে মুখে এসেছেন। নয়তো আগে যা ভেড়াচু’দা ছিলেন আপনাকে দিয়ে আর যায় হোক অন্তত রাজনীতি হতো না। তাই ওসব শা’ও’য়া’র ভান্ডামি বাদ দেন। নয়তো ভান্ডামি করার জন্য ওইটাই আর থাকবে না।’
-‘তোর কি মনে হচ্ছে না তুই ইচ্ছে করে শত্রুতা তৈরি করছিস?এর ফল ভালো হবে না সায়ন।’
-‘নাহলে নাই। ভালো জিনিসে এলার্জি আমার।’
-‘তাহলে আমার বিপক্ষে সত্যি সত্যিই দাঁড়াচ্ছিস?’
-‘বোধহয়।’
-‘হঠাৎ এই সিধান্ত কেন?’

-‘বউ বলেছে অন্যের পা না চাটতে। সে আবার চাটাচাটি একদমই পছন্দ করে না। তার কথা মাথায় রেখে সিধান্ত নিলাম বাঁচতে হলে বীরের মতো করে বাঁচব নয়তো প্রাণের মায়া ছেড়ে দেহ মাটিতে লুটাব।’
একথা বলে সায়ন উঠে দাঁড়াল। তার বরাদ্দকৃত রুমে তার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে হাঁটা ধরল তিন রাস্তার মোড়ের দিকে। তাকে যেতে দেখে দাঁড়িয়ে থাকা গুটি ত্রিশেক ছেলেও সিদ্দিকের দিকে তাকিয়ে হাঁটা ধরল। আজ থেকে তাদের দল আলাদা। পার্টি আলাদা। লিডার আলাদা।
আজ থেকে তারা শাহরিয়ার ভাইয়ের লোক। মোটকথা, তারা এতদিন সিদ্দিকের সঙ্গে ছিল সায়নের কথায়। সিদ্দিক যদি শাহরিয়ার ভাইয়ের ছোটো বোনকে কি’ড’ন্যা’প করার ব্যাপারে সঙ্গ না দিতো তাহলে তারাও দল ছাড়ত না। আর না এতদিনের গড়া অবস্থান শাহরিয়ার ভাই এভাবে পায়ের তলা পিষে চলে যেতো।

শুদ্ধ রুমে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে ফোনের আলো জ্বলছে। ফোনের ডিসপ্লেতে ভাসছে চেনা জানা নাম ‘ব্যাঙাচি।’ সে গায়ে টি-শার্ট জড়িয়ে কলটা রিসিভ করতেই দেখতে পেল শীতলের মুখ। কেঁদে কেঁটে
চোখ,মুখ, মালোপোয়ার মতো ফুলিয়েছে। নাক টিয়া পাখির মতো লাল।তবে টিয়ার নাক টিকালো আর শীতলের নাক বোচা। একথা ভেবে তার ঠোঁটে হাসি খেলে গেল। তাকে হাসতে দেখে শীতলের চোখজোড়া জলে ভরে উঠল। নিচের ঠোঁট কামড়ে কোনোমতে কান্না আঁটকিয়ে ফোঁপাতে ফোঁপাতে শুধাল,
-‘আপনি মারা গেলেন কিভাবে?’
অবান্তর প্রশ্ন শুনে শুদ্ধ মাথা মুছতে মুছতে ত্যাড়াভাবে জবাব দিলো,

-‘প্রেমসাগরে ডুব দিয়ে। ডুববি? আয়।’
-‘বড় মাকে কল করে ঠিকই তো কথা বললেন অথচ আমাকে একটা কল দিলে কি এমন হতো?’
-‘তোকে কেন দিবো? তুই কি আমার বউ যে কাজ থেকে ফেরামাত্রই তোকে কল করব?’
-‘বউ হলেই কল দেওয়া যায়? অন্যকেউ হলে দেওয়া যায় না?’
-‘না যায় না।’
-‘কেন যায় না?’
-‘জানি না। তবে এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইলে আমার বউ হয়ে যা দেখবি সব খবরাখবর তোকেই আগে জানাব।’
-‘আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে শুদ্ধ ভাই।’
-‘রাখ তোর সারপ্রাইজ। তুই আবার আমার রুমে ঢুকেছিস? সুন্দর করে বললে ভালো লাগে না শুনতে, না? ফিরতে দে আমায়।’

-‘আপনার রুম সাউন্ড প্রুফ তাই এসেছি। স্পেশাল সারপ্রাইজ দিতে সাউন্ডপ্রুফ রুম লাগত।’
একথা শুনে শুদ্ধ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাল। বোঝার চেষ্টা করল এর মাথায় কি ঘুরছে। তার কুঁচকানো ভ্রুঁ দেখে শীতল হাসল। তারপর ব্যাক ক্যামেরা অন করে মেঝেতে পড়ে থাকা কাঁচের ভাঙ্গা পারমিউমের বোতলগুলো দেখিয়ে বলল,
-‘আপনার জন্য কেঁদেছি আমি। চিন্তা করেছি। রুমে ফিরেও কত কল দিয়েছি। অথচ আপনি ইচ্ছে করে আমার কল ধরেন নি। কেন ধরেন নি? না ধরার কারণে একটা একটা করে আছাড় মেরে আপনার প্রতিটা পারফিউমের বোতল ভেঙ্গেছি।’
শুদ্ধ দেখল সত্যি সত্যিই তার শখের পারফিউমগুলো মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে। কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিছানার চাদর বিন ব্যাগের উপর।
সিলিং ফ্যানের বাতাসে বালিশের তুলো উঠছে। একথায় রুমের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ঘূর্নিঝড় বয়ে গেছে। ভীষণ শখের জিনিসপত্রের অবস্থা
দেখে সে চেঁচিয়ে উঠল,

-‘শীতলের বাচ্চা! রুমের কি অবস্থা করেছিস? এসব ঠিক করতে টাকা কি তোর বাপ দিবে?’
-‘আমার বাপ কেন দিবে?’
-‘দিবে না তো কোন হুঁশে এসব করেছিস বে’য়া’দ’ব?’
-‘বেশ করেছি আরো করব।’
-‘কেন করবি? তোর বাপ কি স্বজ্ঞানে তোকে আমার হাতে তুলে দিয়েছে যে, আমি বউয়ের ভুলকে আমি ফুল মেরে নেবো?’
-‘ তুলে দিলে মেনে নিলেন?’
-‘নিতাম।’
-‘ওকে ডান। ফিরে আসুন।’
-‘ফিরলে কি হবে?’

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২২

-‘বাবাকে বলব আমাকে আপনার হাতে তুলে দিতে। তারপর আমিও দেখব, আপনি কতটা কি মেনে নিতে পারেন।’
-‘পরশু রাতের ফ্ল্যাইটে ফিরছি আমি। রেডি থাক।’
একথা শুনে রাগে বোম হয়ে থাকা শীতলও একরোখা কন্ঠে জবাব দিলো,
-‘ঠিক আছে।’

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৪