Violent love part 17
Mariam akter juthi
‘আহহ, এখন শান্তি লাগছে।
‘আরে কি করছেন কি?ছাড়ুন আমাকে।
‘নাড়াচড়া করো না।
কিন্তু সে-কি আর আয়ানের কথা শুনে? উহুম মোটেও না। আয়ান জড়িয়ে ধরতে আয়ানের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য আয়ানের বুকে তখন থেকে, থাপরা থাপরি করেই যাচ্ছে। আয়ান কাজে ব্যাঘাত পেতে, আরো শক্ত করে তানিশাকে জড়িয়ে ধরল যাতে ও নড়াচড়া করতে না পারে। আয়ান তানিশা কে এতটা জোরে ওর সাথে চেপে রেখেছে যে, তানিশা নাড়াচাড়া পর্যন্ত করতে পারছে না। একটা সময় বিরক্ত হয়ে, শান্ত হয়ে যায় তানিশা। আয়ান অনেকক্ষণ জড়িয়ে থাকার পর, তানিশাকে ছেড়ে দিয়ে ওর দিক তাকাতে ভীষণ মায়া হয় ওর। অতঃপর আয়ান ওর হাত দ্বারা তানিশার গালের দুই পাশে আবদ্ধ করে, পরপর পুরো মুখমণ্ডলে চুমুতে ভরিয়ে দেয়। হঠাৎ এমনটা হওয়ায় তানিশা কিছুটা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। আয়ান কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে কন্ঠ নামিয়ে বললো,
‘আপনি দিন দিন অসভ্যতামি করছেন।
‘হবু বউয়ের সাথে একটু আকটু অসভ্যতামি করাই যাই, কি বল? মুখ চেপে অন্য দিক তাকিয়ে।
‘আপনি কি এসব করার জন্য আমাকে ডেকেছেন?
‘বলতে পারো একদমই তাই।
এটা শুনে তানিশা চলে যেতে নিলে, আয়ান ওর হাত ধরে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে তানিশার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বললো,
‘খেয়েছ দুপুরে?
‘দেখুন আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন।
‘কিছু জিজ্ঞেস করছি?
তানিশা একপ্রকার বাধ্য হয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো,
‘হুম খেয়েছি।
‘পরিক্ষা তো আর একটা আছে তাই না?
‘হুম।
‘নিজের যত্ন নিবে।
‘হুম।
‘তোমাকে দ্বিতীয় বার যেন ফোন দেওয়া না লাগে, প্রথম কলেই রিসিভ করবে।
‘,,,,,,,,,,।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আয়ান তানিশা কে চুপ থাকতে দেখে, ওকে ছেড়ে দিতে, তানিশা আয়ানের থেকে অনেক টা দূরে সরে দাঁড়াতে আয়ান আর কিছু না বলে, বাইকে উঠে তানিশা কে ‘বাই’ বলে চলে যায়। আয়ান চলে যেতে তানিশা রাগী ফেস করে হালকা চেঁচিয়ে বললো,
‘আসছে, রাজনীতি করে পাশাপাশি বড়ো লোক বলে? যা চাইবে সেটাই হবে নাকি? আবার বলে হবু বউ, আরে ব্যাটা দরকার পরলে তিশার মতো সুগার ডেডি কে বিয়ে করবো তা-ও আপনাকে করবো না, ও থুরি ওই তিশা তো টাকার জন্য বুইড়া টারে বিয়া করছে। তাহলে আমি কেন সুগার ডেডিকে বিয়ে করবো। কি বলতে কি বললাম আল্লাহ জানে, আল্লাহ তুমি সুগার ডেডি কথাটা শুইনো না, সব ওই লোকটার জন্য হয়েছে। খাচ্চর ব্যাটা ছেলে,—বলে দফ দফ পা ফেলে বাসার ভিতরে চলে আসে।
“তখন জুথি রুমে আসার পরে, আয়নার সামনে দাঁড়ায়। জুথির চোখ ঝলঝল করে ওঠে যখন হীরের চেইনটার উপর চোখ পরে।ওর হাতটা আনমনে চেইনটার উপর রাখে,জুথির চেইনটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সময় ফারি চেইনের বক্স টা হাতে নিয়ে ওর রুমে এসে জুথিকে চেইন ধরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
‘পছন্দ হয়েছে?
‘,,,,,,,,,,,,,।
‘কি হলো চুপ কেন?
জুথি আয়না থেকে চোখ সরিয়ে ফারির দিক তাকিয়ে বললো,
‘আসলে উনি আমার একটা চেইন ছিঁড়ে ফেলেছিলেন সেদিন। তার জন্য,,
‘তোকে খুব মানিয়েছে।
‘হুম, এটা দেখে দামি ব্র্যান্ডের মনে হচ্ছে, কিন্তু উনি যে চেইন টা আমার ছিঁড়ে ফেলেছিলেন সেটা এতো দামি ছিল না।
‘তো?
‘আমার কাছে তো অনেক গুলো টাকা আছে, যেগুলো আমায় পরিক্ষার সময় সবাই দিয়েছিল। সেখান থেকে চেইনের দামটা জেনে দিয়ে দিব। কি বলিস?
জুথির কথায় ফারি বিরক্ত হয়ে বললো,
‘ভাই কি তোর কাছে টাকা চেয়েছে? আর সবচেয়ে বড় কথা তোকে বিক্রি করলেও চেইনের অর্ধেক টাকাও হবে না।
জুথি ফারির কথায় ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘কেন? আমাকে বিক্রি করতে হবে কেন?
ফারি ওর হাতের বক্সটা সহ পেপার টা জুথির হাতে দিয়ে বললো,
‘দেখ গাধি এটা সুইজারল্যান্ড থেকে আনানো। আর পেপার টায় রেট লেখা আছে, ১ মিলিয়ন। ও তুই তো আবার বাহিরের টাকার রেট বাংলাদেশী টাকায় কত হয় সেটা জানিস না? সমস্যা নেই আমি বলে দিচ্ছি। ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যেটা সুইজারল্যান্ড এর ১ মিলিয়ন।
জুথি ফারির কথা শুনে চোখ দুটো বড় বড় করে বললো,
‘এত দামি চেইন আমার চাই না, আমি এক্ষুনি এটা ফেরত দিয়ে আসবো।
‘তুই কি করবি সেটা তুই জানিস, তবে দেখিস চেইন ফেরত দিতে গিয়ে আলু ভর্তা না হয়ে আসিস।— ঠ্যাস মেরে কথাটা বলে জুথি কে আর কিছু বলতে না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
“পরপর কেটে গেছে দুটো দিন, আজকে ইভার ভার্সিটি প্রোগ্রাম পহেলা বৈশাখের। সকাল সকাল ফারি জুথিকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ওর রুমে নিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে অনুনয়ের সুরে বললো,
‘আমি তোদের বড় হয়েও আজ পর্যন্ত শাড়ি পরা শিখতে পারলাম না। তাই এত সকাল সকাল তোদের কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে নিয়ে আসলাম,আমাকে একটু শাড়ি পরিয়ে দেনা তোরা।
একবার জুথি ফারির দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ফারি জুথির দিকে তাকাচ্ছে। সকাল ৭:৪৯ মিনিটে ঘুম ভাঙ্গিয়ে আনায় ফারির তেমন রাগ না হলেও জুথির বেশ রাগ হল, আর হবেই না কেন? কালকে রাত ১২:৪৪ মিনিট পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে, ইতিহাস পরীক্ষা বলতে কথা। তত রাত পর্যন্ত পড়াশুনা করে, খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে ছিল। এখন একটু ঘুমাবে তা না ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় দিল। তাই খিটখিটে মেজাজ নিয়ে জুথি বললো,
‘বনু তোমার আর সময় হলো না শাড়ি পড়ার?
‘সোনা পাখি আজকে প্রোগ্রাম, তাছাড়া আজকে ও আসার কথা বলেছে।
ইভার মুখে ও আসবে শুনে জুথি ফারি ঘুমের রেশ কাটিয়ে ইভার কাছে গিয়ে লজ্জা লজ্জা ভাব করে বললো,
‘বনু, আমার তো এই পরীক্ষাটা দিলেই শেষ। এবার তোমার বিয়েটা খাবো প্লিজ বাড়ির সবাইকে ভাইয়ের বিষয়ে বল। আর তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে আমাদের একটা বিয়ে খাওয়ার সুযোগ করে দাও।
‘হ্যাঁ, ও একদম ঠিক বলেছে আপু তাড়াতাড়ি সবাইকে বল আমরা তোমার পাশে আছি।
ইভা ওদের দুজন কে উৎসাহিত হতে দেখে মুখটা ফ্যাকাশে করে বললো,
‘আমার তো ভয়ে কলিজা শুকিয়ে আসছে। তাছাড়া আমার মন বলছে আমি যতই তাদের বুঝাই না কেন তারা কোনদিনও এই সম্পর্ক মেনে নিবে না। তার সাথে আমার কত দিনের ইচ্ছা একসাথে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবো। কিন্তু সেটা মনে হয় পূর্ণ হবে না,
‘কেন আমরাও বলবো তোমার সাথে। তুমি একদম চিন্তা করোনা।
‘আমি নেয়ামুলকে অনেক ভালোবাসি। চোখ দুটো ছোট ছোট করে।
‘এত মন খারাপ না করে আগে দেখা তো করো, দেখো ভাইয়া কি বলে।
‘হুম।
সময়টা প্রায় দুপুর, ইভা অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়, ভার্সিটির চারুকলার পিছনের বাগানটায় নেয়ামুলকে দেখা করতে বলেছিল। ও সেখানটাই গেছে। গিয়ে দেখে নেয়ামুল একটা বেঞ্চের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। ইভা ছোট ছোট পায়ে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
‘কেমন আছেন আপনি?
নেয়ামুল ইভার উপস্থিতিতে টের পেয়ে ওর দিক ঘুরে বললো।
‘আলহামদুলিল্লাহ, তুমি কেমন আছো?
‘আলহামদুলিল্লাহ।
‘আপনার সাথে কিছু কথা ছিল?
‘বলো।
‘বাসায় প্রায়ই বিয়ের প্রস্তাব আসে। আপনি কি কিছু বলবেন না?
‘কি বলবো আমি?
‘আমি আর কত করবো বলেন? কতবার বুঝাবো তাদের?
‘আমি আমার আম্মুর কাছে বলেছি, তোমার আর আমার সম্পর্কটা কোনভাবেই কন্টিনিউ হচ্ছে না।
‘কিন্তু আমি তো আপনাকে,
‘আমিও তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তবে সমস্যাটা হচ্ছে, সম্পর্কে আমরা চাচা ভাতিজি হই। সেটা যতই দূর সম্পর্কের হোক। এর জন্যই আম্মু আব্বুকে কিছু বলতে চাইছে না। তাছাড়া আমি কিছু করিও না যে তোমাকে বিয়ে করে খাওয়াবো।
‘একবার যদি,, — ওর বাকি কথা শেষ করার আগে আরিশ ইভার হাত ধরে ওর দিক ঘুরিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো,
‘ঠাসসস। —‘কি করছিস এই ছেলের সাথে এখানে?
‘আসলে ভাইয়া,
‘বাড়ি চল।
‘ভাইয়া আমি,
‘কোন কথা শুনতে চাই না, কাল রাতে আব্বু কি বলেছিলে তোকে শুনিস নি?
‘,,,,,,,,,,,,।
ইভাকে নিচের দিক তাকিয়ে কান্না করতে দেখে আরিশ নেয়ামুলের দিক তাকিয়ে করা কন্ঠে বললো
‘কান খুলে শুনে রাখো তালুকদার বংশের সাথে আমাদের খান বংশের কোনদিনও কোন সম্পর্ক হবে না। তাই আমার বোনের থেকে দূরে থাকবে। আর অবশ্যই ওর বিয়ের কার্ড তোমাকে পাঠিয়ে দিব, বিয়ের দিন চলে আসবে।
বলে ইভার হাত ধরে চলে আসে, ইভা আসার সময় কান্না করে আরিশ কে বললো,
‘আমি বড় আব্বুর পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করব, তাও তুমি তাকে কিছু বোলো না প্লিজ ভাইয়া।
‘,,,,,,,,,,,।
‘আমি ওর সাথে দেখা করেছি শুনলে বড় আব্বু কষ্ট পাবে।
“সময়টা সন্ধ্যা ৭:১২ মিনিট, ইভাকে দেখতে খান বাড়িতে ছেলে পক্ষের লোকেরা এসেছে। যদিও আজকে ইভাকে দেখতে আসবে সেটা সাফওয়ান খান গতকাল রাতেই জানিয়েছিলেন। ছেলে নাকি তার পরিচিত, তাছাড়া তারাও খান বংশ। এখানে যেহেতু সাফওয়ান খান নিজেই রাজি তাই মোমেনা খান আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি ছেলের ব্যাপারে। রোদ ফারি জুথি , ইভা রুমে এক কোণে বসে আছে। আর রোদের আম্মু মেহজাবিন খান ইভাকে রেডি করছেন পাত্রপক্ষের সামনে নেওয়ার জন্য। ইভা ও চুপচাপ বসে আছে, চাচিমানি যেভাবে যা বলছেন সেটাই চুপচাপ করে যাচ্ছে।
“তখন ইভাকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর”
ইভা কে কান্না করতে করতে রুমের ভিতরে যেতে দেখে,জুথি ফারি তার কিছুক্ষণ পর সবার চোখের আড়ালে ইভার রুমে গিয়ে দেখে ইভা বিছানোর উপর শুয়ে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে। এটা দেখে জুথি ইভার কাদের উপর হাত রেখে বললো,
‘এভাবে কাঁদছিস কেন বুনু?
‘তাকে আর আমার পাওয়া হলো না। কান্না করে।
‘কি হয়েছে সেটা বলবা তো?
‘আরিশ ভাইয়া ওর সাথে কথা বলতে দেখে ফেলেছে, ভাইয়া ডায়রেক্ট বলে দিয়েছে ওর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক হবে না। আর যদি এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করি তো,
আরিশের কথা শুনে জুথির মেজাজ তো পুরো ফায়ার, বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
‘কি পেয়েছে টা কি উনি? সবার জীবন কি ওনার কথায় চলবে? আমি এখুনি ওনার সাথে কথা বললো,— বলে রুম থেকে বের হতে নিলে ইভা জুথির হাত ধরে বললো,
‘আজ আমাকে দেখতে আসবে, বড়ো আব্বু নিজে ছেলে পছন্দ করেছেন।
‘তুই কিছু বলবি না?
‘আমি মেনে নিয়েছি, আল্লাহ আমার কাপালে যেটা লিখে রেখেছেন সেটাই হবে।
‘পারবে অচেনা মানুষটাকে মেনে নিতে?
‘যখন ফ্যামিলির সবাই চাইছে, তখন মানিয়ে নিব।
ইভার মুখে এমন কথা শুনে জুথিও আর কিছু না বলে ফারির দিকে তাকিয়ে দু’জনে একসাথে হুররে বলে ইভা কে জরিয়ে ধরে বললো,
‘অবশেষে একটা বিয়ে খেতে পারবো। এটা বলে দুজন ইভার সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে রুম থেকে চলে আসে।
ওরা দুজন চলে যেতে ইভা বিছানার উপর বসে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেলে চোখ থেকে দু ফোটা পানি ফেলল, কি আজব তাই না? আমি বললাম মেনে নিব ওরাও কি খুশি হয়ে গেল। কিছুক্ষণ আগেও যারা আমার পাশে ছিল এখন তারা আমার একটা কথায় মত ঘুরিয়ে নিলো, আদৌ কি আমি মানাতে পারবো?
Violent love part 16
“বর্তমান”
সারিবদ্ধ মানুষের ভিতর শাড়ি পরে বসে আছে ইভা, তার ভিতর কোন অনুভূতি নেই। নিচের দিক তাকিয়ে মনমরা হয়ে বসে আছে। এমন সময় ইভা চেনা কন্ঠ শুনে চোখ তুলে তাকাতে দেখে,,,