Violent love part 21
Mariam akter juthi
আরিশ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে শরীর মুছতে মুছতে বের হয়ে দেখে,ওর পরিপাটি গোছানো বিছানা সম্পূর্ণ এলোমেলো করা, তার উপর ছড়িয়ে আছে চারটা ড্রেস। আরিশ মেঝেতে তাকাতে দেখে ট্রলির চারপাশটা চকলেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ট্রলির থেকে চোখ সরিয়ে কভারের দিকে তাকাতে দেখে ওর গোছানো জামা কাপড় সব মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আরিশ সম্পূর্ণ রুমটা দেখে স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে পরে। আরিশ তো জানতো? আজকে সে বাহিরে বের হলে তার ফিরতে লেট হতে পারে। তাইতো সে তার মৌ কে শুধু বেঁধে রাখার ভয় দেখিয়েছিল।
কারণ রুম থেকে বের হতে তার মৌ যে বাঁধন খোলার চেষ্টা করবে সেটা তো সে জানে? তাইতো সে জেনে বুঝে এমন করে বেধেছে,যেন তার মৌ নিমিষেই বাঁধন খুলে ফেলতে পারে। কিন্তু সে এটা বুঝতে পারিনি তার হাফফুট হাতের বাঁধন খুলে তার রুমের 13 টা বাজাবে। আরিশ এটা ভেবে মুচকি হাসে, — চকলেট তো নিয়েছে তাও সব না। যদিও সম্পূর্ণ ট্রলিতে যা ছিল সব জুথির জন্যই ছিল। আরিশ আলাদা করে তার মৌয়ের জন্য নিয়ে এসেছিল। কিন্তু, তার মৌ তার কাছে এসে দাবি করেনি? যে তার জন্য সে কিছু এনেছি কিনা? কিন্তু তার মৌ কিছু জিজ্ঞেস করেনি। তাইতো আরিশের ও আগ বাড়িয়ে দেওয়া হয়নি তার মৌয়ের জন্য আনা সামান্য গিফট গুলো।— আরিশ এসব ভেবে চকলেট গুলো ট্রলিতে তুলে পাশাপাশি ড্রেসগুলোও রেখে, ওর জামা কাপড় গুলো কাবারডে গুছিয়ে রেখে, পিছন ভাবেই বিছানার উপর চিত হয়ে শুয়ে পড়লো। আজ সারাদিন এতো কাজের চাপে শরীর ব্যথা করছে ওর। এই সময় তার মৌ তার ভীষণ প্রয়োজন। তাই আরিশ ওর ফোনটা হাতে নিয়ে ফারি কে টেক্স পাঠায়,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ফারি, মৌ কে আমার রুমে জলদি আসতে বল।
“ফারি রুমে বসে মনোযোগ দিয়ে ইংলিশ মুভি দেখছিল, আর মনে মনে মজা নিচ্ছিলো, তখন ফোনে আরিশের নাম্বার থেকে টেক্সট আসতে দেখে মেসেজটা পড়ে ভ্রু কুঁচকে রিপ্লাই পাঠালো,
‘ভাই তুমি তো সকালে মৌ কে তোমার রুমে লক করে গেলে ,ও তো তোমার রুমেই আছে।
ফারির টেক্সটের সাথে সাথে আরিশের টেক্সট আসে।
‘গাধা মৌ আমার রুমে থাকলে কি তোকে পাঠাতে বলতাম?
ফারি মেসেজটা পড়ে মুখ ফুলিয়ে মনে মনে বললো,—‘বুঝলাম না? সবাই আমাকে গাধা বলে কেন? বলে জুথির রুমের দিকে পা বাড়ায়।
“জুথি রুমে এসে চকলেট গুলো লুকিয়ে রেখে, ওর জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়,আরিশের পরা ড্রেসগুলো চেঞ্জ করার জন্য। জুথি ড্রেস চেঞ্জ করে বের হতে দেখে ফারি ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে জুথি চুলগুলো হাত দিয়ে খোপা করতে করতে ওর কাছে এসে বললো,
‘এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
‘আরিশ ভাই তোকে তার রুমে যেতে বলেছে।
জুথি ফারির কথা শুনে ভেংচি কেটে বললো,
‘এ্যা,, আসছে ভাই ডাকছে? তুই যা আমি কোথাও যাবো না।
ফারি জুথিকে ভেংচি দিয়ে কথা বলতে দেখে নাক মুখ কুঁচকে বললো,
‘আমাকে ডেকেছে? যে আমি যাব? তোকে পাঠাতে বলেছে।
‘তুই তাকে বলে দে, আমি কোথাও যাব নয় আকা’রে না।
‘ঠিক আছে আমি বলছি তুই যাবি না।
‘হ, বল।
ফারি জুথির কথায় মোবাইলটা ওর সামনে ধরে বললো,
‘এটা পর।
জুথি ফারি কে ওর দিকে কেমন করে হাসতে দেখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ,
— ‘আরিশ দুটো রাগের ইমোজি দিয়ে, লিখেছে।
‘ঠিক আছে, ওকে আসতে হবে না। ওকে বল রেডি থাকতে আমিই বরং ওর রুমে আসছি। জুথি মেসেজটা পড়ে চোখ মুখ ছোট করে বললো,
‘আমি তো মজা করে বললাম, আমি এখনই তার রুমে যাচ্ছি তো।—বলে ফুঁসতে ফুঁসতে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
জুথি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে, ফারিও মুচকি হেসে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা পর্যন্ত যেতে জুথির ফোন বেজে ওঠে,ফারি ফোন বাজতে দেখে ফোনের কাছে আসতে আসতে ফোনটা কেটে যায়,ফারি জুথির ফোনটা হাতে নেয় কে ফোন করেছে দেখার জন্য। ফারি ফোন টা হাতে নিয়ে দেখে সেখানে জানু লিখে সেভ করা। জানু লেখা দেখে ফারি বুঝতে পারে এটা তানিশা নাম্বার। অতঃপর ফারি ফোনটা রেখে চলে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে ওর চোখ পড়ে ফোনের ওয়ালপেপার এর উপর। সেখানে আরিশের ধোয়া উড়ানো একটা পিক। আর তার ওপর লেখা , ‘আরিশান আরিশ খান’ মাই লুচু খান সাহেব। তার পাশে লজ্জা পাওয়ার ইমোজি দেওয়া। এটা দেখে ফারি, ওর ফোনে একটা পিক তুলে নিয়ে মনে মনে বলে,—‘তলে তলে পিরিত করে আমি জানলেই দোষ? আর আমি বলতে গেলে হয়ে যাই গাধা। বাহ,বাহ খুব ভালো। বলে ফারি ওর রুমে চলে যায়।
“লিমা খান, মেহজাবিন খান, দুজনে কিচেন রুমে রাতের আহারবস্তুর বন্ধব্যবস্থা করছিলেন। সানজিদা খান, তা একে একে এনে টেবিলের উপর সাজ্জাছিলেন। মোমেনা খানের শরীরটা ভাল না থাকায় আজকে উনি ওনার রুমেই আছেন। নিচে আর আসেন নি। তাই বাকি তিন’জা মিলে সব পরিপাটি করে রেডি করছেন। সানজিদা খান টেবিল সাজানোর সময় হঠাৎ উনার উপরে চোখ পড়ে,জুথি ছোট ছোট পায়ে আরিশের রুমের দিকে যাচ্ছে, এটা দেখে উনি গলা ছেড়ে ডাকলেন।
‘মৌ নিচে আসো।
জুথি ওর বড় আম্মুর কন্ঠ শুনে উপর থেকে সানজিদা খানের তাকিয়ে বললো,
‘হ্যাঁ বড় আম্মু আমি,,
‘হ্যাঁ তাড়াতাড়ি এখানে আসো।
জুথি একবার আরিশের রুমের দিক তাকিয়ে ঢোক গিলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে ওর বড় আম্মুর কাছে এসে বললো,
‘আমাকে ডেকেছো কেন?
সানজিদা খান টেবিলের কাছ থেকে এসে, জুথির দাড়িতে হাত দিয়ে গালের এপাশ ওপাশ দেখে বললেন,
‘সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি মনে নেই? তাড়াতাড়ি বস খাবার দিচ্ছি।
‘বড় আম্মু, আমি,, — ওর সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগে সানজিদা খান বললেন,
‘আগে খাবার খাও তারপর তোমার কথা শুনবো।
জুথি একবার উপরের দিক তাকিয়ে সানজিদা খান কে বললো,
‘তোমার ছেলে,,
‘আমার ছেলেকে আমি দেখব, তুমি আগে খাও।
জুথি সানজিদা খানের কথায় ভরসা করে চেহার টেনে খেতে বসে পড়ে। জুথি চেয়ারে বসতে সানজিদা খান প্লেটে খাবার বেড়ে দেন। জুথি খাবারের প্লেট অর্ধেক শেষ করতে না করতে আরিশ হুট করেই জুথির সামনে থেকে প্লেটটা মেঝেতে ফিক্বা মেরে চেঁচিয়ে বললো,
‘তোকে আমার রুমে আসতে বলেছিলাম না?
সানজিদা খান আরিশের কথায় ওর সামনে গিয়ে বললেন,
‘আরিশ ও সকাল থেকে কিছু খাইনি।আমি,,
‘আম্মু আমার থেকে ওর খাবার বেশি হয়ে গেল? একই রকম চেঁচিয়ে।
‘বাবা, তুমি,,,,
জুথি আরিশের হুংকার শুনে, হাতটা ধুতে না ধুতে আরিশ জুথির হাতটা, টান দিয়ে ওর কাছে এনে পাজা কোলে তুলে ওর রুমের দিকে হাটা দিলো।আরিশ কে সানজিদা খান জুথিকে ওভাবে কোলে তুলে নিয়ে যেতে দেখে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বললেন,
‘হে আল্লাহ, আমার ছেলেটার রাগটা একটু কমিয়ে দিন। আর নয়তো মেয়েটা মার খেতে খেতেই মরে যাবে।
আরিশ জুথি কে বিছানার উপর রেখে, দরজাটা ভিতর থেকে লক করে ওর কাছে এসে দুই বাহু চেপে ধরে বললো,
‘তোর পেটে কি হয়েছে? এত খাই খাই কেন?
‘,,,,,,,,,,।
‘আমার সামনে একদম চুপ করে থাকবি না। চেঁচিয়ে।
জুথি আরিশের হুংকার শুনে ভয়ে আরিশ কে জড়িয়ে ধরে,কন্ঠ নামিয়ে বললো,
‘আ,আমি তো খাই খাই করি না, বরং আমি তো আপনার রুমেই আসতে যাচ্ছিলাম। তখন বড় আম্মু,, জুথি আরিশে কে জড়িয়ে ধরতে আরিশ জুথির গলায় মুখ ডুবিয়ে জুথির গায়ের ঘ্রাণ নিয়ে স্লো বয়েজে বললো,
‘চুপ।
আরিশ জুথির গায়ের সাথে এভাবে কিছুক্ষণ লেপটে থাকার পর ঘাড়টা উঠিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললো,
‘আমার হাত পা টা ভীষণ ব্যথা করছে একটু টিপে দে।
জুথি আরিশের কথা শুনে অবাক হয়ে বললো,
‘আমি?
‘তো তুই ছাড়া এই রুমে আর কেউ আছে নাকি?
‘কিন্তু,,
Violent love part 20
‘কথা পেঁচাবি না, হাত পা টিপে দে। বলে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়।
এটা দেখে জুথি আরিশের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে মনে মনে বললো,—‘শেষ পর্যন্ত এই লোক পা টিপার জন্য এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করে আমাকে নিয়ে এলো? আমাকে খেতেও দিল না, খারাপ লোক। বলে আরিশের পা দুটো জুথির ছোট হাত দুটো দাঁড়া টিপে দিতে লাগলো। জুথি আরিশের পা ১০ মিনিট টিপতে না টিপতে ও ভাবেই আস্তে করে আরিশের পায়ের উপর ঘুমিয়ে পড়ে। আরিশ পায়ের উপর তার মৌকে নেতিয়ে পড়তে দেখে চোখের উপর থেকে হাতটা সরিয়ে বিছানার উপর উঠে বসে জুথিকে বাচ্চাদের মতো কোলের মধ্যে আবদ্ধ করে নিয়ে, নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
‘কপাল করে একখান বউ পাইছি, তোর জোর করে নিয়ে এলাম একটু সেবা করবে বলে, এখন উল্টো আমাকে সেবা করতে হবে।