ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৩৩+৩৪
তাজরীন ফাতিহা
সময় এক নীরব জলধারা। যার গতি বোঝা যায় না অথচ সে বিরামহীনভাবে বয়ে চলে, থামে না। নাসির উদ্দিন এবং মাহাবুব আলম এক সপ্তাহ হয় চলে গেছেন। নিশাত আবারও দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইদানিং কোনো কিছুই তার ভালো লাগে না। বাবা, শ্বশুর যেদিন চলে গেলো সেদিন এক বাঁধ ভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েছিল নিশাত। বাবা, শ্বশুরকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ কেঁদেছিল সে। নাসির উদ্দিন, মাহাবুব আলম দুজনের চোখেও ছিল নিঃশব্দ টলমল এক দিঘি। চাইলেও নিশাতের মতো কাঁদতে পারেননি তারা। নাসির উদ্দিন মেয়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে মারওয়ানকে উদ্দেশ্যে করে বলেছিলেন,
“আমার মেয়ের চোখের পানি, দুশ্চিন্তা কিংবা মন খারাপের কারণ যদি আরেকবার হও এবং সেই কথা আমার কানে যায় সেদিনই তোমার ঘরে হবে ওর শেষ পদচারণা। মনে রেখো, ও আমার রাজকন্যা। রাজকন্যা থেকে রাণী হওয়ার প্রয়াসে তোমার ঘরে পাঠিয়েছিলাম এর মান তুমি রাখতে পারো নি। রাণী না বানাতে পারো অন্তত চাকরানী বানিয়ে রেখো না। সম্মান দিতে না পারো অসম্মানিত কোরো না।”
ব্যাস এইটুকুই ছিল মেয়ে জামাইয়ের প্রতি তার নসিহত। মারওয়ান অসুস্থ শরীর নিয়ে শ্বশুরের কথা চুপচাপ শুনেছে। শেষে তার সুস্থতা কামনা করে যখন তারা চলে গেলেন নিশাতের কান্না যেন কোনো মতেই থামতে চাইলো না। মারওয়ান নিঃশব্দে ওই কান্না দেখেছে। না থামতে বলেছে আর না থামিয়েছে।
নিশাত স্কুলের ডেস্কে মাথা ফেলে পুরোনো কথা স্মৃতি মন্থন করছিল। তার শরীরটা কয়েকদিন যাবৎ ভালো যাচ্ছে না। কেমন ক্লান্ত, জরাজীর্ণ লাগে। স্কুল শেষ করে বাসায় গিয়ে নামাজটা পড়ে টানা ঘুমায়। ঘুম তার শেষ হয়না। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলেই ঘুমায় সে। যেন কত বছরের ক্লান্তি জেঁকে ধরেছে তাকে। রুবি ম্যাডাম ক্লাস শেষ করে এসে দেখেন নিশাত মাথা ফেলে শুয়ে আছে। তিনি নিশাতের পাশের ডেস্কে বসে নিশাতকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“অসুস্থ নাকি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিশাত প্রতিউত্তর করলো না। ততক্ষণে সে ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে। রুবি ম্যাডাম উত্তর না পেয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে নিশাতের কপাল ছুঁয়ে চেক করলো জ্বর কিনা। জ্বর তো নয় তবে কি শারীরিক কিংবা মানসিক অবসাদ? নাজমা ম্যাডাম পিছন থেকে বললেন,
“আপনি তো আসেননি কয়েকদিন। ইদানিং উনি প্রতিদিন নিয়ম করে ঘুমান। মনে হয় সারা রাত ঘুমাতে পারেননা। বাচ্চা, স্বামী, সংসার, চাকরি সব সামলাতে বেচারি হিমশিম খায়। বেচারির স্বামীটা ভালো পড়েনি। কাজ করে না, ফার্মের মুরগির মতো বসে বসে বিড়ি টানে আর বউয়ের টাকা গেলে। আমার হাজব্যান্ড এমন হলে কবেই ছেড়ে দিতাম। এসব কাপুরুষদের এতো তোষামোদ করে চলতে হবে কেন? কতবার বলেছি লিগেল স্টেপ নিন কিন্তু তিনি তো তিনিই একেবারে দয়ার সাগর মিসেস ফৌজিয়া নিশাত। যেন ঐ কাপুরুষের সংসার না করলে তার কতকিছু গচ্ছা যাবে। এসব পতিব্রতা স্বভাবের জন্যই তাকে গনায় ধরে না ওই লোক।”
রুবি ম্যাডাম মনোযোগ দিয়ে নাজমা ম্যাডামের কথা শুনছিলেন। তিনি তো এসব কিছুই জানতেন না। নাজমা ম্যাডাম এতো কিছু জানলেন কি করে? রুবি ম্যাডাম বললেন,
“আপনি জানলেন কিভাবে তার হাজব্যান্ড এরকম? কই নিশাত ম্যাম তো কোনদিন আমাদের সাথে তার পরিবারের বিষয়ে কিংবা স্বামীর বিষয়ে কোনো আলাপ করেননি? এমনকি তার হাজব্যান্ডের চেহারাও তো দেখিনি কখনো। তাহলে আপনি এতকিছু জানলেন কিভাবে?”
নাজমা ম্যাডাম বললেন,
“আমি নিজ চোখে দেখেছি ম্যাডামের সাথে একবার। তখন থেকে চেহারা দেখলেই চিনে ফেলি লোকটাকে। প্রায়ই দেখি বিড়ি খায় আর ঘোরাফেরা করে। এই দেখে একদিন নিশাত ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোনো কাজবাজ করে না নাকি আপনার হাজব্যান্ড? সারাদিনই এদিক সেদিক দেখি। তখন ম্যাডাম বলেছিলেন আপাতত চাকরি নেই। এমনিতেও আমাদের হাজব্যান্ডরা প্রায়ই আমাদের ড্রপ করে নিয়ে যায় কিন্তু তার হাজব্যান্ড কখনোই নিতে আসেনা। সেই থেকেই বুঝেছি লোকটা সুবিধার না। গায়ে হাত তোলে নাকি কে জানে? তুলতেও পারে এসব পুরুষদের দ্বারা অসম্ভব কিছুই না।”
রুবি ম্যাডাম বিচক্ষণ মানুষ। তিনি অন্যের কথায় প্রভাবিত কম হন। তাই নাজমা ম্যাডামের কথা সব বিশ্বাস না করলেও একেবারে অবিশ্বাসও করলেন না। আসলেই তো নিশাতকে তো কখনোই কেউ ড্রপ করে নিয়ে যায়না। তাদের হাজব্যান্ডরা শত ব্যস্ততার মাঝেও মাঝেমধ্যে তাদের নিতে আসে কই নিশাত ম্যাডামের জন্য কাউকে তো দেখা যায়নি কখনো। তিনি চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে রইলেন।
স্কুল ছুটি হলে সবকিছু গুছিয়ে বের হতে নিলে রুবি ম্যাডাম পিছন থেকে ডেকে উঠলেন। নিশাত থেমে হালকা হেঁসে বললো,
“কিছু বলবেন ম্যাম?”
রুবি ম্যাডাম হেঁটে এসে নিশাতের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বললেন,
“আপনার সময় হবে কিছুক্ষণ? একটু কথা বলতাম আরকি।”
নিশাত হাতঘড়িতে সময় দেখে বললো,
“বেশি সময় লাগবে কি? আমার আবার বাসায় ফিরতে হবে।”
“বেশি সময় নেবো না।”
“আচ্ছা বলুন ম্যাডাম।”
“চাকরি, সংসারজীবন কেমন চলছে আপনার?”
নিশাত মুচকি হেঁসে বললো,
“আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ ভালোই রেখেছেন।”
“ইদানিং বেশ ক্লান্ত লাগে আপনাকে, কোনো সমস্যা?”
“না। আসলে প্রেশার যাচ্ছে একটু।”
রুবি ম্যাডাম ইতস্তত করতে করতে বললেন,
“আপনার সাংসারিক কোনো সমস্যা কিংবা জটিলতা থাকলে আমাকে শেয়ার করতে পারেন। সাধ্যের মধ্যে থাকলে চেষ্টা করবো সমাধান দিতে।”
নিশাতের হাসিমুখ মলিন হয়ে গেলো। যদিও নিকাবের আড়ালে রুবি ম্যাডাম তা দেখলেন না। নিশাত খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“কোনো সমস্যা নেই ম্যাম। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ ভালো রেখেছেন। কখনো কোনো সমস্যা হলে জানাবো।”
কথার প্রতিউত্তরে রুবি ম্যাডাম সম্মতি জানিয়ে নিশাতের সাথে স্কুল থেকে বেরিয়ে এলো।
ক্লান্ত ভঙ্গিতে বাসায় ঢুকে গোসল করে নামাজ পড়ে ভাত নিয়ে বসলো নিশাত। নাহওয়ান নিশাত আসলেই তার পিছনে পিছনে ঘোরে। সারাদিন পর মাকে দেখলে সব সন্তানই বোধহয় এমন চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষায় থাকে কখন মায়ের কোলে ঘাপটি মারবে। স্বামী, সন্তানকে ভাত দিয়ে নিশাত বিছনায় শুয়ে পড়লো। মারওয়ান তা দেখে কিছু বললো না। জানে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসবে একটাই। রেস্ট নিয়ে কিছুক্ষণ পর খাবে। খাওয়াদাওয়ার প্রতি মারাত্মক অরুচি জন্মে গেছে নিশাতের। মারওয়ান ছেলেকে খাইয়ে দিয়ে মুখ ধুইয়ে দিয়ে বললো,
“পাশের রুমে গিয়ে খেল।”
নাহওয়ান ঠোঁট ও গাল ফুলিয়ে গোলগোল নজরে তাকিয়ে বললো,
“মায়েল কাচে যাই। ডুডু কাবো।”
মারওয়ান চোখ রাঙিয়ে বললো,
“ওই তোকে একটু আগে এতগুলো ডানো দুধ খাওয়ালাম এখন আবার দুধ খেতে চাস কত্তবড় সাহস? কয়েকদিন পর পর তোর দুধের বাতিক ওঠে কেন? বড় হয়েছিস না? এখন দুধ খাওয়া বন্ধ। ”
নাহওয়ান বাবার দুই পাশে পা ছড়িয়ে গুলুমুলু আঙুল দুটো একটু ফাঁকা করে বললো,
“ইননা, ইট্টু কাবো বিশি কাবো না।”
“চুপ! একটুও না। এতোবড় বেটা হয়ে দুধ খাবে। আরেকবার দুধ খেতে চাইলে পাছায় সিল মেরে দেবো।”
“পাচায় চিল মালবে?”
“হ্যাঁ, দুধের বাতিক না কমলে একদম সিল মেরে দেবো।”
নাহওয়ান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো,
“ইননা। ডুডেল বাটিক নাই।”
মারওয়ান ভাত প্লেটে বাড়তে বাড়তে বললো,
“গুড এবার ঠিক আছে। যা খেলা কর।”
নাহওয়ান বাধ্য শান্ত বাচ্চার মতো ঘাড় নাড়িয়ে অন্য রুমে খেলতে চলে গেলো। মারওয়ান প্লেটে তরকারি নিয়ে নিজেও খেতে শুরু করলো। তার তাড়া আছে। এক জায়গায় যেতে হবে। তাই দ্রুত খাবার খেতে লাগলো। নিশাতের তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। চোখ খুলে মারওয়ানকে খেতে দেখে ডাকলো,
“শুনুন।”
মারওয়ানের খাওয়া থেমে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে নিশাতের দিকে চাইলো। নিশাত বালিশে মাথা ঠেকিয়েই ক্লান্ত গলায় বললো,
“আমাকে একটু ভাত খাইয়ে দিতে পারবেন?”
মারওয়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার জরুরি একটা কাজ আছে। এখন নিশাতকে ভাত খাওয়াতে গেলে কাজটা যাবে আবার নিজেরও খাওয়া হবে না। নিশাতের আবদারও ফেলতে পারছে না। সে চিন্তিত হলো বেশ। তারপর কি মনে করে ভাতের প্লেট নিয়ে নিশাতের পাশে বসে লোকমা এগিয়ে দিলো। নিশাত উঠে বসে ভাত মুখে নিলো। চোখে মুখে ক্লান্তি তার। মারওয়ান খাওয়াতে খাওয়াতেই বললো,
“শরীর কি বেশি খারাপ?”
নিশাত ঘাড় নাড়িয়ে সায় জানালো। ভাতের লোকমা দ্বিতীয়বার এগিয়ে দিতেই মারওয়ানের পকেটে ফোন ভাইব্রেট হতে লাগলো। লোকমা এগিয়ে রেখেই পকেট থেকে বাটন ফোন বের করে রিসিভ করে কানে ধরলো। ওপাশ থেকে কি বললো কিছুই শুনতে পেলো না নিশাত তবে মারওয়ানের চেহারার পরিবর্তন লক্ষ্য করলো। ফোন পকেটে ভরে লোকমা নামিয়ে নিতে গেলে নিশাত তার হাত ধরে লোকমা মুখে পুড়লো। মারওয়ান কোনো রিয়েক্ট করলো না। শুধু বললো,
“বাকিটুকু খেয়ে নিও। একটা কাজ আছে।”
কথা শেষ করে নিশাতকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধুয়ে বেরিয়ে গেলো। নিশাত থালার দিকে টলমলে চোখে তাকিয়ে রইলো। আজকে সে জায়নামাজে অনেকক্ষণ কাঁদবে। তার একটা স্বাভাবিক স্বামী, সংসার হলো না এই আক্ষেপ তার আজীবন থাকবে।
আড্ডাস্থলে বসে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়াচ্ছে ইহাব। পাশে সাব্বির, পল্লব, আসিম, মুহিব চা খাচ্ছে আর হাসান ও ইহাবের দুই চ্যালা শামীম আর রবিন কেক খাচ্ছে। ইহাবকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। সাব্বির চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
“তুই নম্বর ওয়ানের বোনকে বিয়ে করেছিস কেন সত্যি করে বল তো? আমরা তো ভেবেছিলাম প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করেছিস এখন তো কাহিনী উল্টো মনে হচ্ছে। একটু ব্যাপারটা ক্লিয়ার করবি তুই আসলে কি প্যাঁচ লাগাচ্ছিস?”
ইহাব চেয়ারে হেলান দিয়ে সিগারেটের ধূম্র নাক মুখ দিয়ে ছেড়ে উদাস কণ্ঠে বললো,
“যাক অভিনয়টা খারাপ করিনি তাহলে!”
পল্লব ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কিসের অভিনয়?”
“এইযে প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করার যে অভিনয় করলাম সেটাই।”
মুহিব চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,
“যদি ভুল না হই তাহলে মারওয়ান ও তোর মাঝের তৃতীয় পক্ষের উদ্দেশ্যে ছিল এই নাটক তাই তো?”
ইহাব নির্লিপ্ত কণ্ঠে জবাব দিলো,
“হু।”
আসিম চায়ে বিস্কুট ভেজাতে ভেজাতে বললো,
“তা ফল কিছু পেয়েছিস? নম্বর ওয়ান কি তোকে ক্ষমা টমা করে গলায় গলা মিলিয়েছে?”
ইহাব কথাটা শুনে বিষাদ মাখা হাসি হাসলো। সিগারেট আরেকটা ধরিয়ে বললো,
“ও কোনোদিন আমাকে ক্ষমা করবে নারে। আমার মৃত্যুতেও নাকি ওর কিছু যায় আসে না। ওকে আমি পাথর বানিয়ে দিয়েছি রে। ”
সাব্বির, পল্লব, আসিম, মুহিব বন্ধুর দুঃখে ব্যথিত হলো। হাসান এমনিতে কথা কম বলে। আড্ডায় তাকে খেতেই বেশি দেখা যায় তবে আজ হঠাৎ খেতে খেতে বললো,
“আমি হলেও ক্ষমা করতাম না। এতো বিশ্বস্ত বন্ধুর থেকে যদি এতো বড় অপবাদ পায় তাহলে ক্ষমা করার প্রশ্নই তো আসেনা। তুই সেদিন ওকে শুধু অবিশ্বাস করিসনি বরং ওর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষীও দিয়েছিলি। আমরাও সবাই তোকে বিশ্বাস করেছিলাম, সঙ্গ দিয়েছিলাম। সেদিনই আমরা আমাদের নম্বর ওয়ানকে হারিয়েছি। যার কাছে একসময় আমাদের মূল্য ছিল সবার ঊর্ধ্বে এখন তার কাছে আমরা স্রেফ তুচ্ছ মূল্যহীন। আমাদের বাঁচা মরায় ওর কেন কিছু যায় আসবে?”
কথা শেষ করে হাসান চায়ের কাপে চুমুক দিলো। তারপর আবারও বললো,
“ওর পরিস্থিতে আমাদের কিছু যায় এসেছিল কি? ওর খারাপ সময়ে আমাদের পাশে পেয়েছিল কি? তুই তো দিব্যি ক্যারিয়ার নিয়ে ভালো আছিস, তোর পরিবার ভালো আছে কিন্তু ওর আর ওর পরিবারের উপর দিয়ে কি গিয়েছিল ভুলে গিয়েছিস? মাহবুব আংকেল তোর সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হলো কেন সেটাই তো আমার মাথায় ঢুকছে না? তোর আর ওর পরিবারের সাথে যে দ্বন্দ্ব ছিল সেটা মিটলো কিভাবে? কী জাদু বলে মাহবুব আংকেলকে বশ করলি আল্লাহ জানেন।”
ইহাবের চোখ বড্ড জ্বলছে। কথাগুলো বুকে বিঁধছে। মাহবুব আংকেলকে রাজি করানো সহজ ছিল না। সে এক করুণ ইতিহাস। সে যে মাহবুব আংকেলের পায়ে পড়ে ক্ষমা চেয়েছিল এই কথা কেউ কোনোদিন জানবে না। সে জানতে দেবে না। মানহাকে বিয়ে করে সিকিউরিটি দিয়ে সে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছে কিন্তু কিছু ভুলের প্রায়শ্চিত্ত বুঝি এতো জলদি হয়! এক বিষাদমাখা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আধ খাওয়া সিগারেটের দিকে তাকিয়ে আওড়ালো,
“জ্বালিয়ে দিলে সিগারেটের ক্ষয় হয় কিন্তু দুঃখ গুলো জ্বলে পুড়ে ছাই হয়না কেন?”
টেবিলের উপর ঠক ঠক আওয়াজ হচ্ছে। চেয়ারের উপর গম্ভীর হয়ে আশপাশ সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সম্পূর্ণ কালো কাপড়ে আবৃত ব্যক্তিটি। তার সামনেই উপনীত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন লোক। ব্যক্তিটি ঠকঠক থামিয়ে বললো,
“কাগজটা দিন।”
একজন কাগজটি এগিয়ে দিলো। ব্যক্তিটি ইশারায় সবাইকে বসতে বললো। তারপর কাগজ খুলে দেখলো সেখানে লেখা,
“আসবে সেই ক্ষণ যদি ধরতে পারো আমার পণ।”
তার নিচে বেশ ডিজাইন করে লেখা “33”।ব্যক্তিটি কাগজটা টেবিলে রেখে বললো,
“বেশ জটিল ধাঁধা মনে হচ্ছে।”
“জ্বি স্যার। বেশ চতুর এবং ধুরন্ধর লোক বোঝাই যাচ্ছে।”
কথাটি শুনে ব্যক্তিটি কুটিল হেঁসে আবারও টেবিলে ঠকঠক আওয়াজ করতে লাগলো। সামনের লোকটি ব্যক্তিটির রিয়েকশনে ভয় পেলো কিছুটা। ব্যক্তিটি ঠকঠক থামিয়ে গলায় সুর টেনে গাইতে লাগলো,
“মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি
কোন মিস্ত্ররী বানাইয়াছে
মন আমার দেহ ঘড়ি।
একখান চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া,
চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া
জনম ভইরা চলতে আছে
মন আমার দেহ ঘড়ি।”
ব্যক্তিটি গান থামিয়ে সামনের লোকদের ইশারা করে বললো,
“কিছু বুঝলেন?”
সবাই মাথা নাড়ালো অর্থাৎ বুঝেনি। ব্যক্তিটি এবার মুখে ‘চুক চুক’ শব্দ করে বললো,
“এইটুকু যদি না বোঝেন তাহলে কিসের কাজ করতে এসেছেন আপনারা? ম্যারম্যারে বুদ্ধি নিয়ে এই প্রফেশনে এসেছেন? গানটায় একটা ক্লু দিয়েছি এবার বলুন কি সেই ক্লু?”
সামনের লোকগুলো চিন্তিত হলো। হঠাৎ একজন বললো,
“স্যার ঘড়ির সাথে কোনো কানেকশন আছে কি?”
কথাটি শুনে ব্যক্তিটি রহস্যময় হেঁসে বললো,
“ধাঁধায় একটা নির্দিষ্ট সময় নির্দেশ করেছে বলতে পারবেন সেটি কোন সময়?”
লোকগুলো বুঝলো ব্যক্তিটির কথার টোন। ব্যক্তিটি একজনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“নিয়াজ সাহেব আপনি বলুন। আপনার আইকিউ তো ভালো।”
প্রশ্ন শুনে সামনে উপবিষ্ট নিয়াজ নামের লোকটির উদ্বিগ্ন ঘর্মাক্ত মুখশ্রী কাগজের উপর নিবদ্ধ হলো। যেখানে বড় বড় করে লেখা ’33’।
সামনের ব্যক্তি লোকটির পানে সরু নেত্রে চেয়ে পেপার ওয়েট ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,
“বলুন তো কয়টা বাজে?”
বেশ অনেকক্ষণ পর নিয়াজ নামক লোকটি বললো,
“ছয়টা অথবা নয়টা?”
উত্তর শুনে ব্যক্তিটি ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
“হলো না তো।”
“স্যার আপনিই বলুন। আমাদের প্রেডিকশন ভুল হবে।”
ব্যক্তিটি দাঁড়িয়ে বুট জুতার খটখট আওয়াজ করতে করতে বোর্ডে গিয়ে ’33’ লিখলো। লিখে বললো,
“এখানে ধাঁধা যে দিয়েছে সে মাইন্ড গেম খেলতে চেয়েছে। সংখ্যা দুটো যদি একটি অপরটির মুখোমুখি বসিয়ে একত্র করি তাহলে কি হবে?”
কিছুক্ষণ নীরবতা চলে ওপাশ থেকে উত্তর এলো,
“এইট (😎? তারমানে আটটা বাজে?”
ব্যক্তিটি উত্তর শুনে ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,
“আরে রিল্যাক্স, শেষ করতে দিন। আরও আছে। ইংরেজির কাজ তো শেষ। এখন বাংলায় ’33’ কে কি লিখা যায়?”
“অবশ্যই ৩৩।”
“এবার এই দুটো সংখ্যাকে আলাদা করে যদি বলেন তাহলে কিভাবে বলবেন?”
“তিন তিন নাহয় দুটো তিন।”
ব্যক্তিটি মার্কার রেখে হাতের কালি মুছতে মুছতে বললো,
“আপনাদের জবাবের মধ্যেই উত্তর আছে।”
একজন উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললো,
“কোথায় স্যার? তিন তিন আর দুটো তিনের মধ্যে কিভাবে উত্তর আ….”
মাঝপথে কথা থামিয়ে লোকটি বললো,
“Sir, do you mean 2:03?”
ব্যক্তিটি সায় জানালো। তারপর মুখ গম্ভীর করে বললো,
“তাহলে আট তারিখ রাত দুটো তিন মিনিটে তাদের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হচ্ছে কি বলেন?”
ওপাশ থেকে সমস্ত নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে উত্তর এলো,
“স্যার আপনি কি শিওর আট তারিখ রাত দুটো তিনের কথা বলা হয়েছে? অন্যকিছুও তো মিন করতে পারে।”
ব্যক্তিটি চারপাশে তাকাতে তাকাতে গম্ভীর আদল কঠিন করে বললো,
“উহু অন্য কিছু মিন করবে না। বেশি কঠিন করেও ভাবা যাবে না আবার সহজ করেও না। দুই ভাবে ভাবলেই ধাঁধার উত্তর পাবেন না। যে দিয়েছে বহু মাথা খাটিয়ে এই ধাঁধা দিয়েছে যেন তাকে ধরতে না পারি তাই মধ্যপন্থায় ভাবতে হবে। আর এটা ঠিক ধাঁধা না। গুগলি টাইপ প্রশ্ন। এগুলো সহজভাবে ভাবা যায়না। আর আমার সিক্স সেন্স এটাই বলছে।”
ওপাশ থেকে সমস্বরে জবাব এলো,
“ওকে স্যার, অপেক্ষা তাহলে আট তারিখ রাত দুটো তিন মিনিটের।”
নিশাত আজ আলমারির অব্যবহৃত ড্রয়ার খুলে খাতা, বই নামাতে গিয়ে বেশ কয়েকটি চিঠি পেয়েছে। সচরাচর এই ড্রয়ার কেউ খোলে না। চিঠিগুলো তার কাছে অস্বাভাবিক লেগেছে। চিঠি সম্বোধনে কিলার জাদ এবং আজাদ নামটা স্পষ্ট ছিল। এটা যে মারওয়ানের চিঠি তা বুঝতে বিন্দু মাত্র সময় লাগেনি নিশাতের। বিভিন্ন খুনের বিবরণ, নামের সিরিয়াল নম্বর, বিভিন্ন মানুষের তথ্য সব রেড মার্ক করে করা চিঠিগুলো।
নিশাতের এসব দেখে চোখে মুখে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের বাড়ির চিঠির কথা স্মরণে এলো তার। এসব কি হচ্ছে? লোকটা কি খারাপ কোনো কাজে যুক্ত? এসব চিঠি তো ভালো ইঙ্গিত দিচ্ছে না? যদিও সবকিছু অস্পষ্ট তবুও একটু বুদ্ধি খাটালেই বোঝা যায় এসব ভালো কোনো বার্তা নয়। তার হাত পা কাঁপছে। মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া নিয়ে ঘুরছে সে। কাজ করেনা মেনে নেয়া যায় তাই বলে খুন? সেদিন কি আসলেই অ্যাকসিডেন্ট করেছিল নাকি মার্ডার করতে যেয়ে আঘাত পেয়েছে? না আর কিছু ভাবতে পারছে না নিশাত। অতিরিক্ত চাপ না নিতে পেরে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেলো সে।
চোখ মেলে দেখলো অন্ধকার মেঝেতে শোয়া সে। নিশাতের প্রথমে বুঝতে সময় লাগলো কোথায় সে? কতক্ষণ অজ্ঞান ছিল সঠিক জানা নেই তার। মাগরিবের পর পর আলমারি খুলতে এসেছিল তারপর সবকিছু ঝাপসাভাবে স্মৃতিতে উঁকি দিলো। বুকের উপর ভারী ভারী লাগছে। নাহওয়ান গুনগুন করে কাঁদছে আর তাকে ডাকছে। নিশাত মাথা ওঠাতে গিয়ে খেয়াল করলো তার মাথা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। মাথা খাড়া করতে পারছে না সে। দরজায় প্রবল ধাক্কার শব্দে ব্যথা শরীর নিয়ে উঠে বসলো। নাহওয়ান মাকে উঠতে দেখে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলতে লাগলো,
“মা কতা বলো না কেনু? টুমাকে ইট্টোবাল ডাকচি ওটো নাই টুমি।”
নিশাত ছেলেকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখলো খানিকক্ষণ। বাচ্চাটা ভীষণ ভয় পেয়েছে। কাঁপছে ছোট্ট শরীরটা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চিঠিগুলো ড্রয়ারে রেখে দিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেই দরজা খুললো সে। মারওয়ান বিধ্বস্ত ভঙ্গিতে বাইরে দাঁড়ানো। নিশাতকে দেখে বললো,
“এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে? প্রায় আধা ঘন্টা ধরে দরজা ধাক্কাছি, ফোন দিচ্ছি কোনো রেসপন্স নাই। মহিষের মতো ঘুমাচ্ছিলে নাকি? আজ এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছো যে? ফাইয়াজ ঘুমায়নি এখনো?”
নাহওয়ান বাবার মুখে নিজের নাম শুনে বাবার দিকে কান্নায় ফোলাফোলা নয়নে চাইলো। মারওয়ান ছেলেকে ফোঁপাতে দেখে বললো,
“কিরে কাদিস কেন কবুতরের ছাও? মা মেরেছে নাকি?”
নাহওয়ান বাবার কথা শুনে আবারও কেঁদে দিলো। মারওয়ান ছেলেকে কোলে নিয়ে বললো,
“থাক কাঁদে না। তোর মাকে মাইর দেবো নে।”
নিশাত কিছু না বলে রোবটের মতো রুমে চলে গেলো। মাকে মারার কথা শুনে নাহওয়ান আরও বেশি করে কাঁদতে লাগলো। মারওয়ান বললো,
“আরে মুশকিল তো? এতো কাদিস কেন?”
নাহওয়ান বাবার ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে বললো,
“মা কতা বলে না। মাকে ডাকচি টাও উটে নাই।”
মারওয়ান ছেলেকে চেপে ধরে বললো,
“তোর মা ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছিল। তাই দরজা খুলতেও আজ লেট করেছে। এতো ঘুম এলো কোত্থেকে বল তো?”
ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে রুমে ঢুকে দেখলো নিশাত মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি ঘুমের ওষুধ খেয়েছো নাকি? ছেলের ডাকেও নাকি আজ ওঠোনি? শরীর কি বেশি খারাপ? ওষুধ এনে দিতে হবে?”
নিশাত প্রতিউত্তর করলো না। আগের মতোই শুয়ে থাকলো। মারওয়ান আর না ঘেঁটে ছেলেকে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। নাহওয়ান আবারও মায়ের বুকের উপর গিয়ে শুলো। নিশাত ছেলেকে বুকে টেনে নিলো। তার চোখের কার্নিশ বেয়ে উত্তপ্ত নোনাজল গড়িয়ে পড়লো। এই পানি ব্যথার, মানসিক যন্ত্রণার নাকি ভবিষ্যতের কোনো কঠিন সিদ্ধান্তের তা বোঝা গেলো না।
জিনান খুবই মনোযোগ সহকারে ফাইল ঘাটছে। কম্পিউটারের কীবোর্ডে খানিক পর পর হাত চলছে তার। নেওয়াজ নিজেও গ্লাভস পড়ে কি যেন পরীক্ষা করছে। মুনতাজির কোত্থেকে এসে ক্লান্ত হয়ে খালি চেয়ারে বসলো। জিনান তা দেখে বললো,
“কি অবস্থা? কাজ কতদূর এগোলো? বেশি প্রেশার যাচ্ছে নাকি?”
“ভালোই। বুঝলেন সবই বুদ্ধির খেলা মিস্টার জিনান আদহাম। মাথা খাটিয়ে এই প্রফেশনে টিকে থাকতে হয় নাহলে একবারে ডাক আউট হয়ে যেতে হয়।”
জিনান কম্পিউটারের মাউস ঘোরাতে ঘোরাতে বললো,
“তা তো অবশ্যই। বুদ্ধি ছাড়া এই পেশার তো কোনো ভ্যালু নেই। সেসব যাক স্যার যে কাজে পাঠিয়েছেন সেটা কমপ্লিট করতে পেরেছেন? কোনো তথ্য জোগাড় করতে পেরেছেন কি?”
“অবশ্যই। আপাতত আট তারিখ রাত দুটো তিন মিনিটে আমাদের উপস্থিত থাকতে হবে। সেখানেই সম্ভবত আমাদের বহু প্রতীক্ষিত অতিথিকে অ্যাপায়ন করা হবে।”
“শালার একেকটা চক্র কি সাংঘাতিক? সবগুলোই মারাত্বক। কোনটাকেই ফেলে রাখা যাচ্ছে না। কোনটা রেখে কোনটাকে যে ধরবো কূলকিনারা পাচ্ছি না।”
“আগে এই চক্রকে ধরি তারপর মার্ডারারের কেসটা ওপেন করতে হবে। এবারের চক্রটা বেশি চালাকি করতে গিয়ে ধাঁধার মাধ্যমে আমাদের ইনভাইট করেছে দেখা যাক কিভাবে টেক্কা দেয় এরা।”
জিনান তার নীল চক্ষু কুঞ্চিত করে বললো,
“তারা তো আর বোঝেনি আমাদের একজন ট্যানলেন্টেড অফিসার আছেন। যিনি বুদ্ধি দিয়েই তাদের ক্লু ধরে বাংচাল করে ফেলবেন।”
মুনতাজির হেঁসে বললো,
“কি যে বলেন না? আপনিও কিন্তু কম ট্যানলেন্টেড নন মিস্টার।”
জিনান মুখ গম্ভীর করে বললো,
“আমি যদি ট্যালেন্টেড হতাম তাহলে তো আমিই যেতাম মিস্টার।”
মুনতাজির রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে দুলতে দুলতে বললো,
“আর ইউ জেলাস?”
“অফকোর্স নট।”
মুনতাজির হাসলো। তারপর হাসি থামিয়ে বললো,
“তারপর বলুন আর কোনো ক্লু কি পেয়েছেন ওই মার্ডারার সম্পর্কে?”
নেওয়াজ এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার মুখ খুললো। ল্যাপটপে টাইপ করতে করতেই বললো,
“আমাদের টিমের লোকেরা তথ্য দিলো খুনির স্ত্রী আর একটা সন্তান আছে। স্ত্রী সম্ভবত চাকরি করে। ভুলও হতে পারে। যেই ধুরন্ধর মাল; আসল তথ্য জোগাড় করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার । তারপরও যতটুকুই কালেক্ট করা হয়েছে মিথ্যা মনে হচ্ছে না কারণ সেদিন আমরাও জেনেছিলাম খুনির পরিবারে দুইজন সদস্য।”
জিনান কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে নীলাভ চক্ষু প্রসারিত করে টাইপিং করতে করতেই বললো,
“আমারও তেমনটাই মনে হচ্ছে।”
ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৩২
মুনতাজির চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। অতঃপর কফির কাপে চুমুক দিলো। কি হবে সামনে? তারা কি আদৌ কোনো সলিউশন বের করতে পারবে নাকি অসফল হবে? সবই এখন গোলকধাঁধা।