আপনাতেই আমি পর্ব ১৯

আপনাতেই আমি পর্ব ১৯
ইশিকা ইসলাম ইশা

তীব্র রুমের জানলা থেকে রিদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কল করে কাউকে,
ম্যাডাম আয়ানের গাড়িতে গেছে তোমরা পিছু যাও।
কথাটা বলেই বের হয়ে যায় তীব্র।
রাত তখন প্রায় ১০টা বেজে দশ মিনিট,
রিদি কালো শাড়ি পড়েছে। খোঁপা করে মালা গুজেছে তাতে।হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি পড়েছে।চোখে কাজল দিয়ে ঠোঁটে গাড়ো লিপস্টিক দিয়েছে।

মজনু বাসায় এসেছে ১০মিনিটের মতো। সিক্রেট রুমে নিজের কিছু কাজ সেরে মজনু বেশে বের হয়ে আসে। বিশাল ড্রয়িং রুম পেরিয়ে নিজের রুমে যেতেই দেখে লাইট বন্ধ। মজনু ভু কুঁচকে তাকায়।হাতড়ে লাইট জ্বালানোর আগেই লাইটার জ্বলে ওঠে।হলদে আলোয় রিদিকে বোঝা যাচ্ছে।শ্যামাবতীকে দেখে থম হয়ে গেছে মজনু।রিদি ছোট ছোট মোমবাতি জ্বালিয়ে দিতেই ঘরে আলোকিত হয়।সেই আলোই স্পষ্ট দেখতে পেল মজনু রিদিকে।হলদে আলোয় কালো শাড়িতে রিদিকে দেখে পলক ও ফেলছে না মজনু।এমন আবেদনময়ী নারী হয়ে আজ তাকে মেরে ফেলবে নাকি!!
মজনু শুকনো ঢোক গিলল।হাত বাড়িয়ে মুখের উপর পড়া চুলগুলো সরিয়ে দিল।রিদি কেঁপে উঠলো।চোখ বন্ধ করে নিল। এরপর মজনুর হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে এলো। বিশাল বেলকনিতে বিছানা পাতা দেখে অবাক হল মজনু।রিদির দিকে তাকিয়ে দেখল রিদি মিটমিট হাসছে,
“আজ আমরা চন্দ্র বিলাস করব!! আপনার বুকে মাথা রেখে চাঁদকে সাক্ষী করব আমাদের ভালবাসার।”
মজনু শুধু চেয়ে আছে রিদির দিকে। হঠাৎ এসব বুঝল না মজনু।রিদি হুট করেই জরিয়ে ধরলো মজনুকে।আরো একটু শক্ত করে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমি শুধু আপনাকেই চায়।আপনি ছাড়া আমার কোনকিছু চায় না।আপনার হয়ে বাঁচতে চায়,আপনার হয়েই মরতে চায়।
মজনু ভীষণ অবাক হলেও রিদির মাথায় হাত রাখল।হুট করে রিদি কেঁদে ফেলল। মজনু কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
আপনি ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে চায় না।ভালোবাসি! ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে!!
মজনু বুঝল না রিদির হঠাৎ করা কান্ড।তবে নিজেকে সামলে রিদিকে নিয়ে পাতা বিছনায় বসল।পকেট থেকে কাগজ কলম বের করে লিখল,
কি হয়েছে বেগমজান!!আমাকে সত্যি সত্যি সব বলুন।
আপনি ঠিক আছেন!!
রিদি টলমলে চোখে তাকিয়ে বলল,
আপনি কি আমাকে ভুল বুঝবেন মজনু সাহেব??
মজনু অবাক হয়ে খাতায় লিখল,
কি হয়েছে আমাকে সব বলুন!কলেজে কোন সমস্যা হয়েছে??
রিদি মাথা নেড়ে না বলল।এরপর পুরো ঘটনা খুলে বললো।
মজনু অবাক হওয়ার ভান করে লিখল,

তীব্র চৌধুরী ডাক্তার??? সত্যি!!!
আমিও প্রথমে এমনি অবাক হয়েছি!! মানুষ মারতে যার হাত কাপে না সে আবার নাকি মানুষকে বাঁচায়??
মজনু লিখল,
আপনি কি তীব্রর সাথে কাজ করতে চান না!!
রিদি সাথে জবাব দিলো না।একটু থেমে বলল,
না।চায় না। কিন্তু আমাকে করতে হবে।প্রথমত ওনার ওনি ঐ কলেজের।আমি যদি কিছু বলি তাহলে হয়তো আমার ওপর বদলা নিবে। আমার পরাশুনার ক্ষতি করবে।নিজের ক্ষতি আমি মেনে নিয়েছি কিন্তু আপনার এতো পরিশ্রম আমি বিফলে যেতে দিব না।আমার পড়াশুনার ক্ষতি করব না। আপনার সম্পদ বিক্রির টাকা আমি বিফলে যেতে দিব না।

মজনু লিখল,
আপনার কি সমস্যা হয় তীব্রর সাথে মানে ওনি কি খারাপ ব্যবহার করে??
রিদি হাসল,
খারাপ ব্যবহার এর পিএইচডি করছেন ওনি।
মজনু লিখল,
কি করেছে??
রিদি মজনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
সবাই কেন আপনার মতো হয় না মজনু সাহেব!সবাই কেন মন দেখে ভালোবাসে না।সবাই কেন গায়ের রং দেখে যার্জ করে?তাছাড়া
তীব্র আমার কাছে ভয়ংকর অতীত ছাড়া কিছুই না।ওনাকে দেখলেই ওনার করা নিষ্ঠুর আচরণ গুলো মনে পড়ে।আপনি জানেন ওনি কালো মানুষের হাতের কিছু খায় না!! একবার আমি ওনার ক্ষততে এই হাত দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিলাম তাই ওনি….

ওনি আমার গলা চেপে ধরেছিল। ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলাম তখন!মনে হচ্ছিল এই বুঝি বন্ধ হয়ে যাবে নিঃশ্বাস! রিদির চোখের পানি গড়িয়ে পরল অতীত মনে করে। মজনু ঝট করে রিদিকে নিজের বুকে চেপে ধরে।
রিদির কথাটা যেন তীরের মতো বিধল মজনুর বুকে। রিদির পুরো মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে আবারো চেপে ধরল বুকে।
মনে মনে বলল,আপনি ভুল ভাবছেন বেগমজান। সেদিন ফুপি আপনাকে মারার পরেও আপনি চুপ ছিলেন তাই রাগ হচ্ছিল আপনার ওপর। বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলাম।মনে হচ্ছিল আপনাকে মেরে একবারে সব শান্ত করে দেয়।কিন্তু আপনি যে আমার শান্তি হয়ে যাবেন তা তো জানতাম না।আমি খুব সরি বেগমজান খুব খুব খুব সরি!!
রাত তখন ২টা ৫০। চারদিকে অন্ধকার হলেও চাঁদের আবছা আলোয় দেখতে পেল রিদিকে মজনু।তার সাথে লেপ্টে থাকা রমনী তাকে ঘৃনা করে। সত্যি ই ঘৃনা করে।কোই সে করতে চেয়েও পারল না। মজনু ভাবে অতীতের কথা গুলো।
নিজের তৈরি বেকানো বিল্ডিং এ কিছু ফাইল চেক করছিল তীব্র। হঠাৎ চোখ পড়লো বোরকা,হিজাব, নিকাবে ঢাকা একজোড়া বিস্মিত চোখ!! চারদিকে হয়তো বিষ্ময় নিয়ে দেখছে! তীব্র ভু কুঁচকে তাকাল!!! আশেপাশে খেয়াল করে দেখল পাশেই আরো একটা সুন্দরী রূপসী মেয়ে দাড়িয়ে আছে। তীব্র কয়েক পলক মেয়েটিকে দেখে নিয়ে আবারো চোখ রাখে আগের মায়াবী চোখের দিকে। পিটপিট করে যখন চোখের ঘন কালো পাপড়ি ঝাপটাল তীব্র দেখল সেই দৃষ্টি।

বসের চোখ মুখ কুঁচকানো দেখে থাইয়ের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল লাবিব।প্রথমেই চোখ পড়ল লাল জামা পড়া অপরুপ সুন্দর মেয়েটার দিকে!মেয়েটা দেখতে যে সুন্দরী তাতে কোন সন্দেহ নেই।বস তাকাতে পারে ভেবে সেদিকে আর দেখবে না ভেবেও আবারো তাকালো।মেয়েটা আসলেই সুন্দর। সুন্দরী মেয়েটা নজরের বাইরে চলে গেলেও যখন বসের দৃষ্টি ফাইলে ফিরে নি তখন আবারো দেখল লাবিব। কালো বোরকায় আবৃত একজোড়া চোখের একটা মেয়ে ছাড়া কিছু দেখল না সে।বস কি মেয়েটাকে দেখছে!! কিন্তু বস দেখছে কি!এতো গুলো সুন্দরী মেয়েদের সাথে থেকেও তাঁদেরকে পরের দিন চিনতে পারে না।কারো দিকে ২মিনিটের বেশি তাকাই না সে যতোই সুন্দর হোক।তাহলে বোরকায় আবৃত মেয়েটার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?আদো কি তাকেই দেখছে!!
লাবিবের ভাবনার মাঝেই তীব্র বলে,
ফুপির মেয়ে??

লাবিব হচকচিয়ে তাকাল স্যারের দিকে।আসলে সে ভাবনায় ব্যস্ত ছিল আরকি!!কথা বুঝে ঝটপট বলল,
জি বসসস!!! ভীষণ সুন্দর দেখতে!তার সাথেই বড় স্যার আপনার বিয়ের কথা ভাবছে।
তীব্র শুনে কোন রিয়্যাক্ট করল না। ততক্ষণে রিদি ভেতরে চলে গেছে দেখে ফাইলে মনোযোগ দিলেও তা টিকলো না।তীব্র বিরক্ত হল খুব নিজের প্রতি।এক ফাইল দুবার চেক করেও যখন ভুল করল। রেগে ফাইল রেখে অপর পাশের বড় থাই দেয়া দরজা খুলে দিল। ফুরফুরে বাতাস এসে হানা দিল চোখ মুখে।

সামনের দিকে তাকাতেই চোখ গেল ফুল হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা কেশবতী কন্যার দিকে।হাটু সমান সিল্কি চুল গুলো ছাড়া।মেয়েটা এপাশে হয়ে থাকায় এক সাইড শুধু দেখতে পেল তীব্র।মেয়েটা দু হাত তুলে খোপা করতে চাইলো কিন্তু একটু পর ঝরঝর করে তা খুলে গেল। বিরক্ত হল মনে হয়।হাত বাড়িয়ে ছুয়ে দিল গাঁদা ফুলের গাছ।ফুলের কাছে নাক নিয়ে ঘ্রাণ নিল ফুলের এতেই মুখে বিরক্ত সরে ফুটে উঠল মিষ্টি হাসি।এবার তীব্র সরাসরি দেখল রিদিকে।৫ ফিট ২কি ৩ ইঞ্চি লম্বা মেয়েটার পারফেক্ট ফিগার।গায়ে মিষ্টি কালারের ওরনা জরানো হালকা হলুদ বনের মেয়েটাকে।বাতাসে মুখের সামনে ছোট ছোট চুল গুলো উরছে।তীব্র চোখ দেখে ভূ কুঁচকে তাকাল। কিছুক্ষণ আগে দেখা চোখের মালিক তাহলে মেয়েটা।তীব্র খুটিয়ে দেখল।চোখ গিয়ে আটকালো মায়াবী মুখশ্রীতে। একবার, দুবার অনেকবার চোখ বুলাল মুখশ্রীর দিকে। হুট করেই মেয়েটি দৌড়ে চলে গেল। রিদি চলে যাওয়াই বিরক্ত হল তীব্র।রাগ হলো বেশ।তার দেখা শেষ না হতেই কেন চলে গেল??

রাত তখন ১১টা হবে।বেশি রাত না।নিজের রুমে ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছে তীব্র।আজ রাতেও নতুন মেয়ে রেডি তার জন্য।বাবার জন্য আজ অফিস না গেলেও নিজ বিল্ডিং থেকে বের হয়নি তীব্র। কিন্তু নিজের রুমে কিছু কাজ থাকায় এসে গোসল সেরেছে।রেডি হতে হতে কানে আসে কারো গুনগুন আওয়াজ।আওয়াজ টা গানের।তীব্র আওয়াজ ধরে বেলকনিতে আসে।থাই থেকেই দেখতে পায় তখনকার মেয়েটাকে।গান শুনতে না চাইলেও দাঁড়াল তীব্র। তাকিয়ে রইল পাশের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা কেশবতী কন্যার দিকে খোলা চুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে গান গাইছে,

“”আমার একলা আকাশ থমকে গেছে
রাতের স্রোতে ভেসে
শুধু তোমায় ভালবাসে
আমার দিন গুলো সব রং চিনেছে
তোমার কাছে এসে
শুধু তোমায় ভালবাসে
তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে
আমার ছাদে এসে।
আমার ক্লান্ত মন
ঘর খুঁজেছে যখন
আমি চাইতাম,পেয়ে চাইতাম
শুধু তোমার টেলিফোন…

আপনাতেই আমি পর্ব ১৮

তীব্র শুনল সেই কন্ঠের গান।গান বন্ধ হতেই রিদি চলে যায় দেখে আবারো রাগ হলো তীব্রর। রেগে বের হলো রুম থেকে।নিচে লাবিব অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিল।তীব্র কে আসতে দেখে চটপট গাড়িতে বসল।তবে তীব্রর রাগি চেহেরা তাকে ভাবাল!!

আপনাতেই আমি পর্ব ২০