Violent love part 30
Mariam akter juthi
‘রাদিফ আব্বু তোমার সাথে আমার কথা আছে! খাবার শেষে আমার রুমে এসো। বলে উনি হাতটা ধুয়ে বাকি জা’য়েদের দিক তাকিয়ে ইশারা করলেন, যার মানে উনি যাচ্ছেন,তোমরা কষ্ট করে গুছিয়ে নিও। সানজিদা খান ওনার ইশারা বুঝতে পেরে ইশারা করেই বুঝালেন উনাকে যেতে। উনি উঠে চলে যেতে নিলে রাদিফ খাবার মুখে তুলতে নিয়েও প্লেটে রেখে বললো,
‘কি বলবে আম্মু? এখানে,, —ওর কথা শেষ করতে না দিয়ে লিমা খান গুরু গম্বির কন্ঠে বললেন,
‘আলাদাভাবে বলবো, রুমে এসো। বলে উনি ওনার রুমে চলে গেলেন, উনি চলে যেতে রাদিফ খাবারটা তাড়াতাড়ি করে শেষ করে হাতটা ধুয়ে, হাত মুখ মুছে,মায়ের দরজায় নক করতে লিমা খান বললেন,
‘দরজা খোলাই, তুমি ভিতরে আসো।
রাদিফ দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে দেখে তার বাবা সোফায় বসে পেপার দেখছেন, মা বিছানা গুছাচ্ছেন, রাদিফ এটা দেখে চুপচাপ দাঁড়াতে লিমা খান বললেন,
‘এখানে বসো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রাদিফ মায়ের কথায় বাধ্য ছেলের মত, বিছানায় বসতে লিমা খান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘আমি যদি তোমাকে কিছু বলি, আমার কথা শুনবে?
রাদিফ মায়ের কথায়, ধীরে স্পষ্ট গলায় বললো,
‘তুমি আমার মা হাও, আম্মু! তুমি একটা কথা বলবে আমি রাখবো না, এটা হয় না মা। তুমি বলো কি বলবে?
লিমা খান ছেলের কথায় মুচকি হেসে পাশে বসে বললেন,
‘তোমার তো বিয়ের বয়স হয়েছে, তাই আমি চাই তোমাকে বিয়ে করাতে। তাছাড়া তুমি তো রোদ মামুনিকে ছোটবেলা থেকেই দেখেছো? আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি, উনি বলেছেন তুমি রাজি থাকলে ওনার সমস্যা নেই।
লিমা খানের সব কথার মাঝে, রোদের নামটা শুনে রাদিফ ভ্রু কুঁচকে না বোঝার মত করে বললো,
‘রোদ, মানে বুঝলাম না? ওর কথা কেন আসছে?
‘হুম, তোমার পাশে রোদ কে খুব ভালো মানাবে।
‘হোয়াট? এসব কি বলছ তুমি আম্মু? রোদ আর আমার সাথে? নো,, – বলে মাথাটা এপাশ ওপাশ করলো, যার মানে তার মায়ের কথাটা মেনে নিতে পারছে না।
রাদিফ কে এমন রিয়াক্ট করতে দেখে লিমা খান ভ্রু কুঁচকে বললেন,
‘কেন রোদ কি পচে গেছে? তাছাড়া রোদের আম্মুর সাথে আমি কথা বলেছি। এখন তোমার মতামত নিয়ে বাড়ির সবাইকে জানাবো।
‘কিন্তু আম্মু আমি তো রোদ কে ভালোবাসি না, আমি তো জুথি কে ভালোবাসি। তাহলে আমি রোদ কে কেন বিয়ে করতে যাব?
‘জানি তো তুমি জুথি কে পছন্দ করো, তাইতো রোদকে বিয়ে করতে বলছি।
‘তুমি জেনেও কেন বলছো আম্মু?
‘কারণ জুথি বিবাহিত!
রাদিফ তার মায়ের কথায় বিরক্ত হয়ে কঠিন কন্ঠে বললো,
‘তোমরা সেই একটা বিয়ে নিয়ে পড়ে আছ? যার কোন মানে হয় না, আম্মু।
‘এটা তোমার ধারণা, জুথি সাথে আরিশের একবার বিয়ে হয়েছিল ইসলামিক ভাবে,এখন সে আইনগতভাবেও আরিশের বউ।
‘মানে?
‘মানে এটাই, কিছুদিন আগে একরাত্রে আরিশ আমাদের সবাইকে ডেকে বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারে জুথিকে সাইন করিয়ে নিজেও সাইন করে। তাছাড়া সবাই ওদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে, কিন্তু তুমি এটা জানো না, সেদিন তুমি সেখানে ছিলে না তাই।
রাদিফ তার মায়ের কথায়, থমকালো, অতঃপর আনমনেই বিছানায় ধপ করে বসে পড়ে মনে মনে আওড়ালো– ‘না না না এটা আমি মানতে পারবো না, জুথি কিছুতেই আমার থেকে আলাদা হতে পারে না।
রাদিফ কে আনমনে বিড়বিড় করতে দেখে লিমা খান শ্বাস ছেড়ে বললেন,
‘তুমি কি আমার কথা শুনবে না আব্বু?
‘জুথি জানে বিয়ের কথা?
‘না।
রাদিফ ওর মায়ের মুখে না শুনে, কিছু টা আস্বস্ত হয়ে বললো,
‘আম্মু আমি জুথির সাথে একবার,,, ওকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে না দিয়ে লিমা খান বললেন,
‘তুমি যদি আমার কথা না শোনো,তুমি যদি রোদ কে বিয়ে না করো, তাহলে কোনদিন তুমি আমাকে মা বলে ডাকবে না, বলে মুখটা অন্য দিক ঘুরালেন।
ততক্ষণে মাহমুদ খান, ছেলে বউ দুজনের কথাই শুনলেন, অতঃপর পেপার গুলো ঘুচিয়ে রাখতে রাখতে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
‘হ্যাঁ, বাবা তুমি রোদ কে বিয়ে করো, দেখবে মা বাবার দোয়ায় তুমি খুশি হবে। তাছাড়া রোদ মেয়ে হিসেবে অসাধারণ একটা মেয়ে। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমরা কোনদিন তোমার খারাপ চাইবো না।
রাদিফ বাবা-মা দুজন কে এক কথা বলতে দেখে, আর কিছু বলার ভাষা খুজে পেল না, কারণ সে তার মা-বাবার বাধ্য সন্তান হওয়ায় তাদের মুখের উপর কিছু বলতেও পারছে না। মেনেও নিতে পারছে না। রাদিফ ওভাবে কিছুক্ষণ বসে কিছু না বলে উঠে চলে যেতে নিলে লিমা খান বললেন,
‘বললে না তো?
‘তোমাদের যা ইচ্ছে। বলে রাদিফ আর এক মুহূর্ত ও দাঁড়ালো না,হাত দুটো মুঠি বদ্ধ করে সেখান থেকে চলে আসলো।
রাদিফ ওর বাবা মাকে কথাটা বলে তো এলো, ও কি রোদকে আদৌ বিয়ে করবে? নাকি মায়ের মুখের দিক তাকিয়ে নষ্ট হবে দুটো জীবন? ও আর এ বিষয়ে নিতে পারছে না, আর না ভাবতে পারছে। কারণ ও জানে ওর বাবা-মা রোদের বাবা-মায়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে, তারা হাসিমুখে রাজি হয়ে যাবে, তখন ও না চাইলেও রোদকে বিয়ে করতে হবে। এটা মাথায় আসতে হুট করে আনমনে মুখ থেকে বেরিয়ে এলো —‘না। এটা বলে উঠে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে পাইচারি করে বিড়বিড় করে আওড়ালো,
‘আমাকে জুথির সাথে আলাদা কথা বলতে হবে, ওকে বোঝাতে হবে আমি ওকে ভালোবাসি। আর ও তো জানেই না, ওর আবার ও বিয়ে হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, ওতো আরিশ কে ভয় পায়? ও, ওর সাথে কোনদিন থাকবে না। একবার যদি ওকে বোঝাতে পারি, তাহলে বাবা-মাকে ও বোঝাতে পারবো। তখন হয়তো তারা বুঝবে জুথি আমার সাথে থাকবে।
“তখন আরিশ খাবার প্লেট নিয়ে রুমে আসতে দেখে, জুথি বিছানায় নেই। অতঃপর আশেপাশে তাকাতে, তখন জুথি ওয়াশরুমের দরজা খুলে মাত্র বের হয়েছে। আরিশ জুথি কে দেখে দরজাটা ভিতর থেকে লক করে খাবার প্লেট টা নিয়ে বিছানায় বসতে, জুথি গুটি গুটি পায়ে কিছু না বলে রুম থেকে কেটে পড়তে দরজা পর্যন্ত যেতে আরিশ গম্ভীর কন্ঠে বললো,
‘বারবার ছাড় দিচ্ছি বলে সব সময় ছেড়ে দিব এটা মনে করিস না? তাই আমাকে রাগাস না। — বলে দু মিনিট বসে অপেক্ষা করতে, জুথি তখনো ওর সামনে এসে না বসায়, খাবার প্লেটটা সামনে থেকে ধাক্কা মেরে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে উঠে জুথির দিকে যেতে নিলে আহমিস্ক জুথি দৌড়ে এসে লাফ দিয়ে আরিশের গলা জড়িয়ে ঝুলে পারতে, যার দরুন ওর পা দুটো মাটি থেকে অনেকটা উঁচু হয়ে গেল। তাৎক্ষণে আরিশ ও তাজ্জব হয়। জুথিকে ঝুলে থাকতে দেখে দু হাতে ওকে আগলে ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘সমস্যা কি? আমাকে না জানালে ভালো লাগেনা?
তাৎক্ষণে জুথি ওভাবে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় বলল,
‘উহুহ….। যার মানে তাকে তার না জানালে ভালো লাগে না।
আরিশ জুথির উহুহ শুনে ওর কানে মধু কামড় দিতে জুথি ওভাবে আরিশের বুকে আরেকটু শিটিয়ে গেল। আরিশ জুথি কে বিছানায় বসিয়ে ওর পাশে বসে গাল দুটো হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে সমস্ত মুখমন্ডলীতে একে একে চুমু দিয়ে ঠোঁটে হালকাভাবে চুমু খেয়ে বললো,
‘আমার রুমে, আমার বুকে স্থান তোর! এখানেই তোর শুরু এখানেই সীমাবদ্ধ মৃত্যু পর্যন্ত। বলে খাবার প্লেটটা সামনে এনে খাবার মেখে জুথির মুখের কাছে ধরতে জুথি ছোট করে হা করে খাবারটা মুখে নিয়ে মনে মনে গম্ভীর পুরুষের দিক তাকিয়ে বললো, — ‘আপনি বলুন আর না বলুন, আমি জানি আপনি আমাকে ভালবাসেন! ফারির কথাই হয়তো সত্যি, কিছু মানুষ ভালোবাসা প্রকাশ করতে জানে না। তবে তাতে কি হয়েছে? আপনি আপনার ভালোবাসার কথা নাই বলতে পারেন, কিন্তু আমি তো আমার ভালোবাসার কথা আপনাকে প্রকাশ করতে পারি? হ্যাঁ আমি বলব আমার ভালবাসার কথা আপনাকে, তারপর নাহয় দুজনের এক হাওয়া যাবে? ততক্ষণে না হয় আমাকে একটু সময় দেন?
“সময়টা সকাল ১১.২২ মিনিট, খান বাড়ির সকলের মুখে হইচই, বড়দের রান্নার বিভিন্ন আইটেম। বাড়ির মেয়েদের গিফট নিয়ে কাড়াকাড়ি। সব মিলিয়ে যেন একটা খুশির আমেজ চলছে। সাইফুল খান সে তো একবার এক মেয়ের দিক তাকাচ্ছে তো আর একবার আরেক মেয়ের দিক তাকাচ্ছে। সামনে পাশে পিছনে সবাই গিফটের জন্য গোল হয়ে বসে আছে। উনি এটা দেখে একটা লাগেজ টেনে খুলতে খুলতে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
‘গিফট কিন্তু সবার জন্য এনেছি, তবে ছোট থেকে বড়দের দেওয়া হবে। এবার সিরিয়াল দাও।
উনার কথাটা বলতে দেরি, কিন্তু ওদের সত্যি সত্যি লাইন দিতে দেরি হল না। সাইফুল খান ওদের দিক তাকিয়ে মুচকি হাসলেন, মনি হয় তাও মানা যায়, কিন্তু বড় মেয়েগুলো যে এমন করে দেখে উনি আবারও হাসলেন অতঃপর ভাবলেন, ‘মেয়ে গুলো কেমন বড় হয়েও বাচ্চা বাচ্চা রয়ে গেল? উনি সবার জন্য আনা একে একে গিফট সবার হাতে দিতে বললেন,
‘রোদ আম্মু?
‘হ্যাঁ আপু বলো?
‘আমার পাশে বসো!
উনি এটা বলতে রোদ ছোট ছোট পায়ে হেঁটে ওনার কাছে বসতে উনি আবারো বললেন,
‘আমার ছোট ফারি কই? তুমি আমার এই পাশে বসো।
ফারিও বাবার ডাকে দৌড়ে গিয়ে অন্য পাশে বসতে উনি দুই মেয়েকে দুহাতে আগলে দুজনের মাথায় চুমু খেয়ে বললেন,
‘আমার সোনা মায়েরা ভালো আছে তো? কতদিন পর আমার পাখিদের মুখ দেখলাম।
সাইফুল খান কে মেয়েদের এমন বুকে নিয়ে ভালবাসতে দেখে, মুহূর্তেই ভিজে উঠে দু জোড়া চোখ। আর সেই চোখ দু জোড়া আর কারো নয়, বরঞ্চ ইভার আর জুথির। আজ তাদের বাবা তাদের মাঝে যদি থাকতো, তাহলে সেও তো এভাবেই তাদের আদর করতো? সাইফুল খান রোদ ফারি কে আদর দিয়ে যখন ইভাদের ডাকবে তখন ওদের দিকে তাকাতে দেখে ওদের চোখে পানি, এটা দেখে উনি অবাক হয়ে ওদের ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে ওদের ইশারায় ডেকে বললেন,
‘এদিকে আসো তোমরা মামনি!
উনি ডাকতে ওরাও ছোট ছোট পায় ওনার কাছে আসতে উনি ওদের বুকে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘তোমাদের চোখে পানি কেন মা?
উনার কথায় ওরা শুধু মাথা লাড়ালো, যার মানে না,এমনিতেই। উনি সব গিফট একে একে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে, ফ্রেশ হতে রুমে চলে গেলেন।
Violent love part 29
“আজ ৫ তারিখ, ৭ তারিখ ইভার গায়ে হলুদ,৮ তারিখ মেহেদী অনুষ্ঠান, ৯ তারিখে বিয়ে। তাই বিয়ের প্রায় বন্ধ ব্যবস্থার শুরু হয়ে গেছে। কাকে কি দাওয়াত দেওয়া হবে ভাইয়েরা মিলে প্রায় লিস্ট করে ফেলেছেন। এখন ঘরের কীর্তিদের পালা বাকি। উনাদের বাপের বাড়ির লোকেদের কিভাবে কি দাওয়াত দিবেন সেটাই ওনাদের ডেকে জিজ্ঞাসা করছেন। একে একে সবাই সবার আত্মীয়-স্বজনদের কথা জানিয়ে যে যার কাজে গেছেন। তখন মাহমুদ খান সবাইকে এক জায়গায় ডেকে বললেন,
‘সেজ ভাই যেহেতু দেশে ফিরেছে, তাই তোমাদের সাথে আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কথা ছিল!