প্রেমঘোর পর্ব ৫৫+৫৬+৫৭+৫৮+৫৯
নার্গিস সুলতানা রিপা
সাদাদ নামায পড়ে এসেছে।নৌশিন সাদাদের সামনে দাঁড়িয়ে সাদাদের পান্জাবির বোতাম খুলে দিচ্ছে।
“কি আমার জানপাখি!মনে হচ্ছে কিছু বলবে??”
“না…….”
“উমমম আমার তো মনে হচ্ছে,কিছু একটা বলবে…..”
“না…… এমনি…..”
“আচ্ছা!!তাহলে মুখ টা এমন ভার হয়ে আছে কেন??বলেছি তো সেমিস্টার টা শেষ হোক তারপর ভাববে এসব নিয়ে……”
“না সেটা না…..”
“দেখি রাখো বোতাম…..এবার বলো তো কি হয়েছে…….”
নৌশিন কিছু বলবে….তার আগেই ওর ফোন টা বেজে উঠলো…………
“হ্যাঁ মা বলো……”
নৌশিন ফোন টা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো….
সাদাদ পান্জাবি টা চেন্স করে নিয়ে খাটে গা মেলে দিলো…..বাইরে খুব গরম!!
নামায থেকে এসে কিছুটা টায়ার্ড আর কি!
………
“হ্যাঁ মা….বলো……”
“জামাই এসেছে??”
“হুম…..আমি না বলতেই পারছি না…..যদি ও কিছু মনে করে??ওর যা রাগ….”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আরে এতে মনে করার কি আছে??তুই ই না বলেছিলি,জামাই বলেছে তোর ক্লাস শুরু হওয়ার আগে তোকে আনবে একবার……এসে তো একটা দিনও থাকতে পারিস নি মা!!তুই বললি আসবি তাই তো আমি গেলাম না……তোর ভাবীর শরীর টা তেমন ভালো না আর দিন এগিয়ে আসছে যেতে চেয়েছিলো আমি যেতে দিলাম না…..”
“মা এমন করে বলবে না তো…..আমি কিন্তু কালও বললাম তোমাকে খুব মিস করছি…তুমি এমন করে বলে আরও আমাকে ইমোশনাল করছো…..”
“কি করবো মা…..তোকে দেখি না এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলো…….তুই এক কাজ কর সাদাদকে ফোন টা দে……”
“কিহ্???”
“হ্যাঁ….দে…..”
“না…..”
“না মানে কেন???কাল কাঁদলি তুই আসার জন্য….আজ না করছিস…এতো ভয় পাওয়ার কি আছে.???”
“মা ও যদি রাগ করে??”
“কেন রাগ করবে??”
“না ও তো বলেছিলো ভার্সিটি খোলার আগে নিয়ে যাবে….পরশু ই তো ক্লাস চালু…ও তো কিছুই বললো না…..”
“এই মেয়েকে নিয়ে কি করবো আমি…….”
“মা!!!……..”
“এই খবর দার একদম কাঁদবি না….আমি আনার ব্যবস্থা করছি……না হলে আমিই যাবো….তবুও যেন চোখের পানি না আসে…..পরে আবার মাথা ব্যথা করবে……”
“সত্যি আসবে তো??”
“কি…..এখনো কাঁদতেছিস??চোখ মুছ মা….ভালো মা আমার কাঁদিস না…….মাথা ব্যথা করবে কাঁদলে…..সোনা মা আমার আমি আসবো বললাম তো……”
“ছাই আসো তোমরা…..কেউ তো এলে না……কত দিন হলো!!!”
“পাগলী আমার!!তুই যে বলছিলি আসবি তাই তো…..”
“আমি কি জানতাম ও ভুলে যাবে!!!……..”
“তোকে কাঁদতে না করলাম তো!!কাজের চাপে ভুলে গেছে হয়তো…….আমি আসবো আজ বিকেলেই আসবো…….চোখ মুছ এবার…..”
“উমমমমমম………..”
“পাগলী একটা আমার……..”
“আচ্ছা,তাহলে রাখলাম…..আজকে না আসলে কিন্তু কথাই বলবো না আর………”
“আচ্ছা বাবা আচ্ছা……..বাই…..”
“হুম….বাই……”
……… নৌশিন ফোন কেটে পেছনে তাঁকাতেই ঢুক গিলতে লাগলো……..
কারণ ওর পেছনে যে স্বয়ং সাদাদ।
সাদাদ এক দৃষ্টিতে নৌশিনের দিকে তাকিয়ে।
নৌশিন ভয়ে কাঁপছে!সাদাদ এভাবে তাঁকিয়ে আছে তার মানে ও সব শোনে ফেলেছে।
নৌশিন কিছু বলার আগেই সাদাদ নৌশিনের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নেয়।আর সাথে সাথে কল করে নৌশিনের মায়ের নম্বরে…..
দু রিং হতেই ফোন তুলে নৌশিনের মা………..
নৌশিন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর সাদাদ কানে ফোন নিয়ে নৌশিনের দিকে…………
“হ্যাঁ….মা বল…..”
“আসসালামু আলাইকুম মা……”
“ও বাবা….ওয়ালাইকুম আসসালাম……কেমন আছো??”
“জ্বি মা ভালো….আপনি??”
“আলহামদুলিল্লাহ…… তোমার মাকে ফোন করেছিলাম বাবা….মেয়েটাকে অনেক দিন দেখি না তো……..”
“তাই আসবেন তাই তো??”
“হ্যাঁ….নৌশিনও বলেছিলো…..”
“আমি চাই না আপনাদের বাড়ির কোনো সদস্য আমার বাসায় পা রাখুক….”
কথাটা শোনা মাত্রই নৌশিনের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠে….সাথে সাথে একরাশ প্রশ্নসিদ্ধ নয়নে সাদাদের দিকে তাঁকায়!!
নৌশিনের মায়ের যেন পায়ের তলার মাটি সরে গেছে!এটা কি বলছে মেয়ে জামাই!এতো বড় কথা!কি বলবে কোনো কিছু বুজতে পারছে না নৌশিনের মা…চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে বারবার কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলা মেয়ের কলকের বলা কথাটা মনে পড়ছে “আই মিস ইউ মা….”…….মেয়ে তো আজও কাঁদলো “মা আসবে তো??….”।।।।
আর কিছু ভাবার আগে সাদাদ আবারও বলতে শুরু করে…..”আশা করি আমার কথা বুজতে পেরেছেন??”
প্রত্তিতুরে কিছুই বলতে পারলো না নৌশিনের মা…
এমন ব্যবহার করে কোনো মেয়ে জামাই জানা ছিলো না তার!মনের মধ্য একটা ভয় কাজ করতে লাগলো…
না না অপমানের কথা ওনি ভাবছেন না!ওনার ভয় একটায়… “আমার মেয়ে টা ভালো আছে তো…..”
“মা,আশা করি বুজতে পেরেছেন…..তাহলে রাখছি আমি…….”
সাদাদ কল টা কেটে দিলো।
নৌশিনের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
ঐদিকে নৌশিনের মা যে কিছু ভাবতে পারছেন না।
সাদাদ নৌশিনের ফোনে কিছুক্ষণ কি জানি টাইপ করলো……নৌশিন সাদাদের থেকে এমন ব্যবহার আশা করে নি!
সাদাদ রাগ করতে পারতো নৌশিনের সাথে কিন্তু তাই বলে……. না নৌশিন চিনতে পারছে না এই সাদাদকে…..
সাদাদ নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে বলা শুরু করে,
“কান্না বন্ধ করো…..বিয়ের পর মেয়েদের বাবা মা কে ছাড়া থাকার চেষ্ঠা করা উচিত……”
“……………..”
“বললাম কান্না বন্ধ করো……আমার ক্ষুদা পেয়েছে খুব চলো খাবার দিবে…….”
নৌশিনের কিছু বলার শক্তি চলে গেছে….ওর মা কি ভাবছে!!মা কে তো কোনো দিন এভাবে বাবাও বলে নি!সেখানে সাদাদ কি রকম একটা ব্যবহার করলো!
“কি হলো,আজাইরা কথা না ভেবে চলো খাবার দিবে….আর বাবা মা কে ছাড়া থাকার অভ্যাস করো…….আর আমার এতো টাকা নেই যে দু দিন পর পর শশুড় বাড়ির লোক বাসায় এনে খাওয়াবো…..”
নৌশিনের সারা শরীরে একটা কম্পন বয়ে গেলো সাদাদের কথাটা শোনে।
ছিঃ…সাদাদ খাওয়ার কথা বললো।নৌশিন এবার আর চুপ থাকতে পারলো না…….
“আ আ মার ব বব বাবা,মা তোতো তোমা তোমার বাড়িতে খেতে আস আসবে সাদ সাদাদ??”
এতোটাই ভেঙে পড়েছে যে ভেতর থেকে কথাটাও আসছে না।
“আরে রাখো তো এসব কথা…..আমাকে খেতে দাও চলো……”
নৌশিন আর কিছু বললো না….চোখ টা মুছে নিলো কিন্তু আবার চোখ টা ভিজে গেলো।।।।এভাবে কতবার চোখ মুছে নিলো সে নিজেও জানে না।
সাদাদ একই ভাবে নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে,নৌশিন সাদাদের থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক আগেই।
আবারও সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে ভাঙা স্বরে বললো,
“চলো….খেয়ে নিবে…..”
“হুম….”
নৌশিন নিচে মেনে গেলো।
ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।আজ যে চির চেনা সাদাদ কে বড্ড অচেনা লাগছে।
সবার জন্য খাবার রেডি করছে রাফসা আর নৌশিন।
“কি রে মন খারাপ?”
মাথা নেড়ে না জানালো নৌশিন।
“উম হু…..আমার তো তেমন মনে হচ্ছে না….”
“আসলে একটু মাথাটা ধরেছে তো তাই কেমন যেন লাগছে……”
“মা সেকি!তোর মাথা ব্যথা আর তুই কাজ করছিস….সর সর।।।আমি করে নিবো….যা গিয়ে বস…”
“না ভাবী…মাথা ব্যথা নয় তো একটু ভার ভার লাগছে আর কি….”
“সে যাই হোক….তুই বস তো।।।খারাপ তো লাগছে!!”
“ঠিক আছি আমি…..”
“চুপ যা সবার সাথে বস…আমি এগুলো নিয়ে আসছি……..”
নৌশিন অনেক জোর করার পরও কোনো লাভ হলো না…….বাধ্য হয়ে নৌশিন ডায়নিং টেবিলে বসলো তবু আবার সাদাদের পাশে….কারণ এটা ছাড়া আর সব চেয়ার বুকিং………..
“দেখি খেয়ে নে…..”
“কি গো ছোট বউ মা,এমন দেখাচ্ছে কেন তোমায়??”
“আর বলবেন না কাকি,ওর নাকি শরীর টা খারাপ লাগছে……”
“ও মা সে কি!”
“না কাকি বেশি খারাপ লাগছে না একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে…….”
“আচ্ছা,ঠিক আছে খেয়ে একটা ঘুম দিবে কেমন?”
“জ্বি বাবা…….”
…..আজ নৌশিন চুপচাপ যতটা খাওয়া যায় খেয়ে নিলো,গলা দিয়ে খাবার টা নামতেই চাইছিলো না বারবার সাদাদের কথাটা কানে বাজছিলো ‘তার নাকি শশুড় বাড়ির লোককে খাওয়ানোর টাকা নেই’…..’আর সাদাদ তো এটাও বলেছিলো ওর বাড়িতে যেন ঐ বাড়ির কারও পা না পড়ে….তারমানে?সাদাদ তো এটা বললো না,যে আমাদের বাড়ি!ও তো বললো-ওর বাড়ি…..তার মানে ওর কাছে আমি এই বাড়ির কেউ না’…….
“কি রে,গ্লাস হাতে নিয়ে কি এতো ভাবছিস…….”
“না ভাবী,এতো খাচ্ছি।।।।।”
নৌশিন পানি টা কে কাউকে কিছু না বলেই উপরে চলে গেলো।
এমনিতে খাবার সময় সবার সাথে অনেক কথা বলে কিন্তু আজ সেটা হলো না।
“সাদাদ তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে দেখো আমার নৌশিন মায়ের শরীর বেশি খারাপ লাগছে কি না??”
“ওকে বাবা…….”
সাদাদ কিছু একটা ভেবে মুঁচকি একটা হাঁসি দিলো।তারপর খাবার টা খেয়ে সে ও নিজের রোমে চলে যায়।
নৌশিন উপুড় হয়ে শুয়ে কেঁদে চলেছে……..
“এই উঠো…..”
নৌশিন উঠলো না কেঁদে যাচ্ছে শুধু……..ওর শরীর যে গুলিয়ে যাচ্ছে…..সাদাদ তো বলেছে নৌশিনের বাড়ির কাউকে খাওয়াতে পারবে না….আর সাদাদের মতে ও তো এ বাড়ির কেউ না!যদি হতো সাদাদ তো এটা বলতো না যে ‘আমার বাড়ি’ তাহলে নৌশিন তো এই বাড়ির খাবার খেয়েছে…এটা যে শরীরে থাকতে চাইছে না…………
“কি হলো উঠতে বললাম না আমি……..”
“বুজেছি তোমার কান্না থামবে না………..অরূপ!!অরূপ…………”
সাদাদ অরূপকে ডাকতে ডাকতে রোম থেকে বেরিয়ে যায়।নৌশিন নিজেকে সামলাতে পারছে না,
বারবার মায়ের কথা মনে পড়ছে।’মা নিশ্চয় খুব কষ্ট পেয়েছে,সাদাদ কেন বললো মাকে এসব??আমারি দোষ…মা কে আসতে বলা ঠিক হয় নি আমার,আমার জন্য মা অপমানিত হলো!কি কম আছে ওদের যে এই বাড়িতে খাওয়ার জন্য আসবে!!!!’…..নৌশিন মনে মনে ভেবে চলেছে এসব….
আজ চির চেনা সাদাদকে সত্যিই বড্ড অচেনা লাগছে।আর কিছু ভাবতে পারলো না নৌশিন পিঠের উপর ভারী,কমল কিছুর অসিত্ব অনুভব করলো।
হাতে কোনো নরম ছোঁয়া পেলো,বুঝতে আর বাকী রইলো না নৌশিনের…..অরূপ ওর পিঠে শুয়ে আছে।বাধ্য হয়ে বুকে চাঁপা কষ্ট টা আর বের করতে পারলো না!চোখ টা মুছে ফেলতে হলো…………
“নতুন বউ….কাঁদছো কেন তুমি??”
নৌশিন ঠিক হয়ে শুয়ে অরূপকে নিজের বুকে শুইয়ে দিয়ে জবাব দিলো,
“কই না তো বাবু….আসলো মাথা ব্যথা করছিলো তো তাই…….”
“ও…..দালাও আমি মাথা টিপে দিই……”
অরূপ কপালে নরম দুহাতে আস্তে আস্তে চাপ দিতে থাকে…..বাঁধা দিলো না নৌশিন….এই নরম হাতের ছোঁয়া যে ওকে অন্য রকম সুখ দেয়……….এই নরম ছোঁয়া পেয়ে নৌশিন কখন যে ঘুমিয়ে যায় নিজেই বুজতে পারে নি……….
আসরের আযান শোনে ঘুম ভাঙে নৌশিনের……বুকে ভারী কিছু আছে মনে হচ্ছ,
চোখ মেলে অরূপকে নিজের বুকে আবিষ্কার করলো নৌশিন।কি সুন্দর বাচ্চাটা নৌশিনের উপর হাত পা মেলে দিয়ে গলায় মাথা রেখে শরীরের উপর শরীর দিয়ে ঘুমাচ্ছে……….
নৌশিন আরও কিছু আবিষ্কার করছে নিজের উপর…..সাদাদ নৌশিনের গা ঘেষে ঘুমাচ্ছে…..এক হাত নৌশিনের মাথার উপর দিয়ে কাঁধে রাখা……..আর অন্য হাত অরূপেরর উপর দিয়ে রেখে দুজনকে জড়িয়ে রেখেছে…..
আর পা দুটো দিয়েও নৌশিনের দুটো পা আটকে রেখেছে সাদাদ………………
সব মিলিয়ে নৌশিন যে একটু নড়বে তার উপায় টুকুও নেই…………..এই সব কিছুর মাঝে এই যে অরূপের কমল দেহ টা নৌশিনের উপর সেটা যেন একটা বিশাল আলোড়ন বইয়ে নিচ্ছে নৌশিনের মনে,
ইশশশশশ……এতটা নিষপাপ কমলতা আর কোথায়ও পাওয়া যায় না!
মা হওয়ার এতো সুখ!!নৌশিন এক ফোটাও নড়লো না…..যদি অরূপ জেগে যায়!তাই,নৌশিন নিজের যে হাত টা মুক্ত আছে সেটা দিয়ে আরও শক্ত করে জড়িয়ে নিলো অরূপকে।নৌশিন গায়ে হাত রাখা মাত্রই অরূপ নিজেরর মাথা টা নাড়াতে শুরু করছে….নৌশিনের কেমন জানি শুড়শুড়ি লাগছে গলায়……নিশব্দে হেঁসে উঠে নৌশিন………
তার সাথে বুকে ভেতর একটা মাতৃত্ববোধের ইচ্ছা আরও তীব্র হয়ে ওঠে…….
এমন ভাবে চুমু দিচ্ছে অরূপের কপালে,গালে মনে হয় ওর ই ছেলে।
সব মেয়েরা বাচ্চা চায় কিন্তু এই মেয়ে টা যেন পুরোই একটা বাচ্চা পাগলী।……
“ইশশ!অরূপ যদি আমায় মা বলে ডাকতো! হুম….ও তো আমায় নতুন বউ বলে ডাকে,ওকে বলবো মাঝে মাঝে নতুন মা বলে ডাকতে!যদি না ডাকে😞….না না সব সময় না ডাকলো….মাঝে মাঝে ডাকবে….আমি তো ওকে মায়ের মতোই ভালোবাসি,
না না মায়ের মতো কি!আমি ওর আরেক টা মা….কাকি তো আরেক টা মা হতেই পারে!!!ডাকবে নিশ্চয় ডাকবে,আমি বললে ও ডাকবে…..আমি বলবো ডাকতে……. “এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নৌশিনের ওর মায়ের কথা মনে পড়ে যায়…….আর পরমুহুর্তেই মনে পড়ে-তার মা কে বলা সাদাদের সেই বিশ্রিধরনের কথাটা………
বুক টা ধুকধুক করে উঠলো নৌশিনের…..সাদাদের মুখের দিকে তাঁকালো.
মায়ের মুখটাও চোখের সামনে ভেসে উঠে……..
একটা তীব্র ব্যথা জিইয়ে উঠলো বুকের গহীনে…………………..
অনেকক্ষণ হলো আসরের আযান দিয়ে দিয়েছে।নৌশিন আর শুয়ে না থেকে নিজের উপর থেকে অরূপকে খুব সাবধানে বিছানায় শুইয়ে দিলো।উঠতে যাবে কিন্তু পারছে না কারণ পা দুটো সাদাদের পায়ের মাঝে আষ্টেপিষ্ঠে বাঁধা।পা বেড় করতে চাইলে ব্যর্থ হয় নৌশিন।সাদাদকেও তো নামাযের জন্য ডাকা দরকার যত কিছুই হোক তাই বলে নামাযের জন্য ডেকে দিবে না?তা কি করে হয়!
নৌশিন সাদাদকে ঘুম থেকে তুলে,দুজনে এক সাথেই বিছানা থেকে উঠে যায়।নৌশিন সাদাদের দিকে একবারের জন্য তাঁকায় নি কিন্তু সাদাদ পলকহীন ভাবে নৌশিনকেই দেখে যাচ্ছে।
সাদাদ খাটের উপরি বসে আছে।নৌশিন ওযু করে জায়নামায হাতে নিবে এমন সময় সাদাদ নৌশিনের হাত ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।খুব শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে নৌশিনকে।
“এত কান্না করতে হয়??কি এমন বলেছি??”
নৌশিন দুচোখ বয়ে আবারও নোনা জল পড়তে লাগলো।সাদাদ নিজে কি বুঝতে পারছে না?একটা মেয়ের কাছে তার বলা তখনকার সে কথা গুলো কতটা কষ্টের।
“আবার কাঁদছো?”
নৌশিন নিশ্চুপ……
“দেখো,চোখ মুখ কিন্তু লাল হয়ে ফুলে গেছে…..আর বেশি করলে মাথা ব্যাথা করবে জান……”
নৌশিনের আর ভালো লাগছে না।কি করে লাগবে সাদাদ যে ওর মা কে খুব কষ্ট দিয়েছে।আর নৌশিন সাদাদকে যতটা ভালোবাসে তার মা বাবা কে ঠিক ততটাই ভালোবাসে।
নৌশিন চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো,
“ছাড়ো……নামায পড়বো….তুমিও নামায পড়ে আসো……”
সাদাদ আর কথা বাড়ালো না,নৌশিনকে ছেড়ে দিয়ে ফ্রেস হয়ে নামাযের জন্য মসজিদে চলে যায়।নৌশিনও নামায টা সেরে নিলো।
নামায পড়ে নৌশিন আবারও অরূপের পাশে শুয়ে পড়লো।অরূপ নিজের পাশে কারও অস্তিত্ব পেয়ে নিজের মা ই ভেবেছে হয়তো।গলা জড়িয়ে ধরে নৌশিনের।নৌশিনও পরম আদরে আগলে নেয় অরূপকে।সাদাদ নামায থেকে এসে একই অবস্থায় নৌশিনকে দেখতে পায়।কিছু না বলে নিজের ফোনটা নিয়ে রোমের বাইরে চলে গেলো।
নৌশিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশ থেকে নিজের ফোন নিয়ে কল করলো মায়ের নম্বরে।
কিন্তু ওপাশ থেকে কল টা আর রিসিভ হলো না।
আবারও কল করবে এর মাঝে অরূপ ওঠে যায়।বেচারা আবার চোখ খুলে মা কে না দেখলে কান্না শুরু করে।আজ চোখ খুলে নৌশিনকে দেখেছে,কাঁদে নি….কিন্তু মা কে দেখতে না পেয়ে ছলছল চোখে ঘুমভাঙা স্বরে বলে উঠে,
“আম্মু যাবো…….”
নৌশিন একটা আদুরে হাঁসি দিয়ে অরূপকে নিজের বুকে আগলে নিয়ে-অরূপের মায়ের কাছে দিয়ে আসে।
রোমে এসে বিছানা টা ঠিক করছে এমন সময় সাদাদ রোমে আসে।ফোনটা ড্রেসিং টেবিলে রাখতে গিয়ে নৌশিনকে বলছে,
“রেডি হয়ে নাও….বের হবো আমরা…..”
নৌশিন কথাটা শোনলেও কোনো ভ্রুক্ষেপ করলো না।
“কি বললাম আমি??রেডি হতে বলেছি কিন্তু!!!”
নৌশিন এখনও কিছু বললো না।সাদাদ রেগে গিয়ে নৌশিনের হাত থেকে ভাজ করা কাথাটা ছুড়ে দিয়ে নৌশিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলা শুরু করে,
“কি বলছি আমি তোমার কানে যায় না?”
“…………..”
“কি হলো??বোবা হয়ে গেছো তুমি??”
“সাদাদ ভালো লাগছে না আমার……ছাড়ো….”
“কেন ভালো লাগছে না তোমার??বাবা মায়ের জন্য পাগল হয়ে গেছো??”
“সাদাদ প্লিজ মা বাবাকে কেন এনছো এখানে?”
“তো??কেন ভালো লাগছে না তোমার??কি এমন বলেছি আমি?”
“সাদাদ প্লিজ……..”
“স্টপ দিজ…….কান্না আমার সহ্য হয় না…..সো যা বলছি তাই করো……..”
“সাদাদ আমার সাথে কেন এমন করছো তুমি?”(কাঁদতে কাঁদতে)
সাদাদ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জবাব দিলো,
“জানি না আমি…….”
“সাদাদ!!!প্লিজ….আমার সাথে এমন করো না,আমার কষ্ট হয় খুব প্লিজ…..”
সাদাদ কিছুটা অসস্তি নিয়ে আবারও বললো,
“কেঁদো না,রেডি হয়ে নাও এক সাথে ডিনার করবো…..”
নৌশিন খুব খারাপ লাগছে এখন,সাদাদ নোশিনের মনের কষ্ট টা না বুঝে শুধু নিজের ইচ্ছা টাই দেখছে।
আর কিছু না বলে,নৌশিন নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্ঠা করলো।কিন্তু ওর মন বলছে,”সাদাদ!কখনো ওকে এভাবে কষ্ট দিতে পারে না…….কখনো না….”
নৌশিন ইচ্ছা না থাকা সত্বেও সাদাদের ইচ্ছা রাখার জন্য রেডি হয়ে নিলো।রেডি বলতে জাস্ট একটা গোল্ডেন কালারের শাড়ি,শাড়িটার পাড়ে সাদা বেডিং এর উপর নানা রংয়ের স্টোন…আর সারা শাড়ীতে হালকা স্টোনের সুন্দর করে লাক্চারী করা।শাড়ী টা বেশ সুন্দর কিন্তু নৌশিনকে সুন্দর লাগছে না এতে।সাজে নি তার জন্য নয়,ওর মুখে যে হাঁসি টাই নেই তাই।সাদাদও একটা আজাশী রংয়ের পান্জাবী আর সাদাদ চুরিদার পায়জামা পড়ছে।বেশ লাগছে সাদাদকে।জাস্ট দেখার মতো।নৌশিন খোপা করতে করতে সাদাদকে এক নজর দেখে নিয়েছে।
আবারও এক নতুন ভালোলাগার আভাস ছুঁয়ে যায় নৌশিনের মনের অন্তরালে।
এই অনুভতি টা আজ অপ্রকাশিত ই রয়ে গেলো।
ঢাকা পড়ে রইলো নৌশিনের ঝপসা চোখে।
নৌশিনের খোপা করা শেষ হলে সাদাদ কে বলে,
“আমার হয়ে গেছে……”
সাদাদ নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে দেখে….নৌশিন একটা সুন্দর শাড়ি পড়েছে,বেশ মানিয়েছে নৌশিনকে।কিন্তু নৌশিন শুধু এটাই করছে দেখে মনে হচ্ছে মুখে একটি ক্রিমও লাগায় নি।
এমন কি বাইরে গেলে যে সবসময় হুজাব বাঁধে সেটাও করে নি আজ।
মন টা বুঝি বিষন্নতায় ছেঁয়ে গেছে।
আর মুখ টাও শুকিয়ে আছে মোয়েটার।
কিছু বললো না সাদাদ…..নৌশিনের কাছে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলো।
পেনকেক লাগিয়ে দিলো,
চোখে হালকা কাজল এঁকে,মাশকারাও দিয়ে দিলো।নৌশিন এতোক্ষণ কিছু বলে নি,এবার বললো,
“এতো সেজে কি হবে?”
সাদাদ নৌশিনের চোখে আইসেড দিয়ে দিতে দিতেই বললো,
“চুপ…..বেশি কথা বলবে না…..”
নৌশিন চুপ করে বসে রইলো।।।যা ইচ্ছা করুক সাদাদ নৌশিনের সে সব দিকে নজর দিতে আর কোনো আগ্রহ ধরছে না।
শুধু বুকের ভেতরে লালচে হৃৎপিন্ড টা ধুকধুক করছে আর ভালোবাসার মানুষটাকে বিশ্বাস করে এখনো, সেটারইজানা দিচ্ছে।
সাদাদ নৌশিনের ঠোঁটে লাল রং এর লিপস্টিক লাগিয়ে দিলো।হলকা করে নয়,গাঢ় করে।এক কথায় সাদাদ নৌশুনকে এই সাজে সাজিয়ে নিজেই আবারও প্রেমে পড়ে যাচ্ছে।বেশ খানিক টা সময় সাদাদ নৌশিনের দিকে এক পলকে তাঁকিয়ে আছে।তারপর একটা সাদাদ হিজাব এনে বেঁধে দেওয়ার চেষ্ঠা চালাচ্ছে কিন্তু নৌশিন যেমন সুন্দর করে বাঁধে তেমন করতে পারছে না।
অবশেষে রেগে গিয়ে বলে,
“ধুর……করো এটা…..পারছি না…..”
নৌশিন সাদাদের দিকে এক বার তাঁকিয়ে,হাত থেকে হিজাব টা নিয়ে খুব অল্প সময়ের মাঝেই হিজাব টা সুন্দর করে পড়ে নিলো।
“বাহ্…..এতো জলদি করে ফেললে….”
কিন্তু নৌশিনকে কেমন লাগছে সেটা বললো না সাদাদ।নৌশিন কিছু না বলে সোফায় এসে বসে।সাদাদ যখন যেতে বলবে যাবে তাই এখানে বসলো।
সাদাদও কোনো কথা না বলে,আলমারি থেকে কিছু গহনা বের করে আন।নৌশিনের পাশে সেগুলো নিয়ে বসতেই নৌশিন বলে উঠে,
“এতো গয়না??”
“হ্যাঁ…..কম ই তো…..আমার ইচ্ছে হচ্ছে গয়নাতে দেখবো তাই পড়বে আজ…সরি পড়বে কি!আমিই পড়িয়ে দিবো…”
সাদাদ নৌশিনের গলায় একটা ভারী হার,হাতে বালা আর হাত ভর্তি সব ভারী ভারী সোনার চুড়িতে ভড়িয়ে দিলো।বলতে গেলে নৌশিনকে সাদাদ আজ নিজের হাতে পুরো গর্জিয়াস সাজে সাজিয়ে নিয়েছে।
নৌশিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদাদ নৌশিনকে কোলে তুলে রোম থেকে বেরিয়ে যায়।
“আরে কি করছো??নামাও আমায়…..আমি তো যাবো….নামাও আমায়….কেউ দেখবে….”
কিন্তু না সাদাদ কোনো কথাই শুনছে না।নৌশিন আশোপাশে চোখ বুলিয়ে একরকম অবাক হয়ে যায়।বাসায় এই সময় সবাই ড্রয়িং রোমে থাকে কিন্তু আজ পুরো বাড়িতেই কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
সাদাদ নৌশিনকে নিয়ে সোজা গাড়িতে বসিয়ে দেয়।নৌশিন চুপচাপ বসে আছে।এতো কথা বলেও লাভ হয় নি তাই শুধু শুধু আর কি বলবে…এতোক্ষণ তো কতবার জানতে চাইলো,বাড়ির সবার কথা।কিন্তু সাদাদ মুখে কুলু পেতো রেখেছে একদম।
সাদাদ গাড়ি স্টার্ট দেয়,নৌশিন সিট ব্লেট বাঁধে নি তাই গাড়ী স্টার্ট করার আগে সেটাও বেঁধে দেয় সাদাদ কিন্তু কোনো কথা বলে নি।যাওয়ার সময় দাড়োয়ানকে কি যেন বললো সাদাদ…..নৌশিন সেটাও জানতে চেয়েছে কিন্তু সাদাদ সেই আগের মতোই নির্বাক।
গেট পাড় হয়ে সাদাদ গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেয়।
যেটা নৌশিনের একদম পচ্ছন্দ না।এতো জোরে গাড়ি চালানো তো ঠিকও না।কখন কি হয়!কে জানে?
“কি করছো??এতো স্পিডে কেন চালাচ্ছো তুমি?”
ভয় লাগছে নৌশিনের…..এতো জোরে গাড়ি চালাচ্ছে সাদাদ যে আশে পাশের সব গাড়িকে ক্রস করে গেছে।এমন কি কোনো সিগনালও মানছে না সাদাদ……….নিজের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সে।।
গাড়ি থামলো একটা হাসপাতালের সামনে।
“সাদাদ,হাসপাতলে কেন??কার কি হয়েছে???”
সাদাদ কিছু না বলে নিজের আর নৌশিনের সিটব্লেট টা খুলে দেয়।
“সাদাদ,প্লিজ কিছু তো বলো……হাসপাতালে কেন এলাম আমরা??কার কি হয়েছে??”
সাদাদ গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে,নৌশিনের পাশের দরজা টা খুলে নৌশিনকে নামতে বলে।ব্যর্থ নৌশিন কোনো উত্তর না পেয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়।
সাদাদ নৌশিনের হাত ধরে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যায়।সাদাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে-সে ভীষণ রকমের চিন্তিত।ভয় লাগছে নৌশিনের।কার কি হলো?
লিফ্ট দিয়ে দুজনেই পৌঁছে যায় সাত তলায়।খুব বেশি ভীর নেই এখানে।বেসরকারী হাসপাতাল তো ভীর মোটামোটি কম ই থাকে।তার উপর এটা দেখে মনে হচ্ছে অপারেশন করা রোগী গুলোকে এখানে ট্রান্সফার করা হয়।
“সাদাদ…..এবার তো বলো কার কি হয়েছে??আমরা এখানে কেন এলাম?”
সাদাদ কোনো উত্তর না দিয়ে নৌশিনকে একরকম টেনে ই একটা কেবিনে নিয়ে গেলো।বড় একটা কেবিন কিন্তু কেবিন পুরো টাই ফাঁকা।
নৌশিন অনেক টা খারাপ লাগা নিয়ে আবারও প্রশ্ন করে সাদাদকে,
“সাদাদ,এমন চুপ করে কেন আছো??আচ্ছা!আমার কি টেনশন হয় না??”
সাদাদ কিছু না বলে ঘরের লাইট টা বন্ধ করে দেয়।সাথে সাথে নৌশিনের আত্মা চমকে উঠে।আঁতকে উঠে চিৎকারও দেয়।এক মুর্হুত দেরী করে নি সাদাদ,বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় নৌশিনকে।মুখটা চেপে ধরে বুকের ভেতরে যেন অন্ধকার টা নৌশিনের চোখে না পড়ে।আশেপাশে মিট মিট করে আলো জ্বলে উঠে।
“এবার চোখ খোলো….ভয় পাবে না……”
নৌশিন সাদাদের বুক থেকে মাথা তুলে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো,হ্যাঁ চারপাশে ছোট ছোট আলো জ্বলছে।তবুও ভয় লাগছে নৌশিনের।সাদাদের একটা হাত খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
সাদাদ একটা শিস দিতেই একটা নার্স কেবিনে ডুকে।কিন্তু একি!নার্স তো একা আসে নি…কোলে একটা ফুটফুটে বাচ্চাও আছে।
অবাক হয়ে যায় নৌশিন।
নার্স টা এসে বাচ্চাটা কে নৌশিনের কোলে দেয়….
নৌশিন বাচ্চা টাকে পরম আদরে নিজের কোলে ঠাঁই দিলো।সব ভুলে গিয়ে ছলছল চোখে সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে ইশারায় জানতে চাইলো,’কে এই বাচ্চা?”
দরজার পাশ থেকে কেউ একজন জানান দেয়,
“তোমার ভাতিজা…….”
দরজার দিকে তাঁকায় নৌশিন।আল্লাহ্,নৌশিনের বাবা!!”
“বাবা….??তু মি??”
স্মিতহাস্যে জবাব আসে,
“হ্যাঁ,মামনি……”
ব্যাকুল হয়ে নৌশিন জানতে চায়,
“ও কার বাচ্চা??”
“কেন???ফারিহা আনজুম নৌশিনের ভাতিজা হলে কার বাচ্চা হতে পারে??”
নৌশিন একবার সাদাদের দিকে তো আর একবার ওর বাবার দিকে তাঁকিয়ে বাচ্চার দিকে তাঁকায়…
একটা সাদাদ ধবধবে ছোট্ট একটা বাচ্চা……কি মিষ্টি আর মায়াবী চাহনী তাঁর….
আবারও বাবার দিকে বোকার মতো তাঁকিয়ে আছে নৌশিন,ওর মাথায় কিছু ডুকছে না।লাইট অন করে সাদাদ।বেড থেকে আওয়াজ আসে,
“গাঁধী,আমার বাচ্চা……”
ফিরে তাকাঁয় নৌশিন…..
“ভা বীীীীী!!!!!!”
“শুধু তুই ই আদর করবি নাকি??আমাকে একটু দে না?? ”
এখনও সব নৌশিনের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে সে একজন মানবিকের ছাত্র হয়ে আসছে বুয়েটের কোনো ক্লাস করতে।বাচ্চা টাকে কোলে নিয়ে আগের মতোই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নৌশিন।সাদাদ খপ করে বাচ্চা টা নৌশিনের কোল থেকে নিয়ে নিলে হুশ আসে তার।
সাদাদ বাচ্চাকে তার মায়ের পাশে শুইয়ে দেয়।কেবিনে ডুকে নৌশিনের মা আর শাশুড়ি।তার মানে ঐ বাড়ির সবাই হাসপাতালে এসেছে।অবাকের উপর অবাক হয়ে যাচ্ছে নৌশিন।
বলতে শুরু করে ওর মা….
“তিনটার দিকে হয়েছ তোর ভাতিজা…….(বাচ্চার কাছে গিয়ে)কি সুন্দর হয়েছে আমার দাদু ভাই টা…..আপা(নৌশিনের শাশুড়িকে)দেখেন চোখ দুটো আমার নৌশিনের মতো একদম…”
“হ্যাঁ,হ্যাঁ……তাই তো দেখছিলাম এতক্ষণ….দেখে তো মনে হবে আমার বৌ মায়ের ই বাচ্চা…….”
“জামাইবাবা,তুমি কি বলো??’
মুচকি হেঁসে মাথা নাড়ায় সাদাদ।সাদাদ আর নিজের মায়ের মুখে এতো হাঁসি দেখে আরও অবাক হচ্ছে নৌশিন।সাদাদ ওর মা কে যে কেমন করে বললো তখন!সেটা ত ওদের দেখে বুঝা যাচ্ছে না।তাহলে??
কেবিনে ডুকে নৌশিনের ভাই……হাতে মিষ্টি….
“আরে পরে ভাবিস সব কিছু….আগে মিষ্টি তো খা…..”
মুখের সামনে মিষ্টি ধরে দাঁড়িয়ে আছে ওর ভাই।ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে তাঁকিয়ে আছে নৌশিন।
“কি রে হা কর……”
নৌশিন হা করলো না,পাশ কাটিয়ে হন হনিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।পেছন ডাকলো সবাই কিন্তু থামলো না নৌশিন।
“এই যা…..হলো তো???হয়েছে তোমাদের শান্তি???কতবার বলেছিলাম….এতো টা না করতে ওর সাথে??এখন নিশ্চয় রাগ করেছে….আর কে ই বা রাগ করবে না?”(নৌশিনের ভাবী)
নৌশিন কেবিন থেকে বের হয়ে ওয়েটিং রোমে ওর শশুড় বাড়ির বাকী সবাইকে দেখতে পায়।এমনি কি অরূপও আছে।
তার মানে সবাই জানতো,শুধু নৌশিন ছাড়া।
নৌশিন আর তাঁকালো না কোনো দিকে।সিরি বেয়ে নিচে নামতে থাকে।পেছন পেছন ডাকতে ডাকতে সাদাদ ও নামছে।নৌশিনের থামার নাম নেই……চোখের পানি মুছছে আর মানছে….।পাঁচ তলায় নৌশিন,সাদাদ ধরে ফেলে নৌশিনের হাত।
“সরি সরি সরি সরি………রাগ করে না জান……সবাই মিলে একটু মজা করছিলাম তোমার সাথে……..”
নৌশিন কেঁদেই চলেছে।হাজির হয় নৌশিনেরও মা ও।
“আল্লাহ্…..মা কাঁদে না।।।।কাঁদিস না এভাবে….এমনিই চোখ মুখ ফুলে আছে…..”
নৌশিন হাত ছাঁড়ানোর চেষ্ঠা করছে……সাদাদ কিছুতেই ছাড়ছে না।
“সরি বললাম তো……আর কোনো দিন এমন হবে না….রাগ করো না প্লিজ….”
কাঁদতে কাঁদতে নৌশিনের জবাব,
“সরি বলেই সব শেষ হয়ে যায় তাই না??চুপ করে আছো কেন মা??তার মানে তুমি আর সাদাদ আমার সাথে সব টাই মিথ্যা মিথ্যা করেছিলে??আমাকে নিয়ে তো খুব মজা করা যায় তাই না??”
“না না….আমিও ভেবেছিলাম সাদাদ বাবা,সত্যি সত্যি বলছে না কি এসব……আর তোর ভাবীর পেইনেরর বিষয় টা তোকে পড়ে জানাতাম…..আর সাদাদ বাবা যে উল্টাপাল্টা বললো,সেটা পরে এসএমএসে সব বলেছে আমায়….এই সব প্ল্যান সাদাদ,তোর বাবা আর ভাইয়া মিলে করেছে…..আমি না করেছিলাম এতো কিছু করতে….আর আমি তো সাদাদের কথা শোনে আপসেট হয়ে বসে ছিলাম….এসএমএসের আগা মাথা বুঝার চেষ্ঠা করছিলাম তারপর তোর বাবা এসে বললো সবকিছু…..”
“হয়েছে???আর কিছু বলার আছে তোমার??”
“রাগ করে না মা…..আমিও সরি বলছি….আর এমন হবে না……”
“সাদাদ হাত টা ছাড়ো আমার…….”
“না…”
“হাত টা ছাড়তে বলছি আমি…..বেশি বেশি করবে না একদম…..ছাড়ো হাত….”
“মা না ভালো..এমন করো না…..”
“ওফফ….মা যাও তো তোমার নাতি দেখো….আমাকে দেখতে হবে না তোমায়……এমন মজার জিনিসকে এত পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই…….ইশশশশ….সাদাদ হাত ছাড়তে বললাম তো আমি??”
“কই যাবা তুমি??”
“জাহান্নামে……ছাড়ো তুমি….আমার তোমাদের কারও সামনে থাকার কোনো ইচ্ছা নেই….ছাড়ো….”
“মা আপনি ওপরে যান…..আমি দেখছি…..”
সাদাদ নৌশিনের মা কে কেবিনে যেতে বলে।ওনি চলে যান।
“এখন ছাড়ো আমায়……”
“কোথায় যাবে তুমি??”
“মরবো আমি হয়েছে??”
“নৌশিননননন……”(ধমক দিয়ে)
“ভালো লাগছে না আমার…..ছাড়ো তুমি…..”
সাদাদ নৌশিনকে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই জড়িয়ে ধরে,
“সরি জান….আমিই এতো মজা করছিলাম….আমি না আজ কে তোমাকে এই বাড়িতে নিয়ে আসতাম….বাট দুপুরের দিকে ভাইয়া ফোন করে ভাবীর কন্ডিশন বললো….খারাপ কিছু না ভালো খবর দিয়েছিলো ডক্টর।….আর বেবি হবে শোনে আমি তোমাকে নিয়ে এই প্ল্যান টা করি….আর আমি ভেবেছিলাম তুমি তোমার মায়ের সাথে এমন কথা বলায় রাগ দেখাবে আমার উপর তাই বেশি উল্টাপল্টা করেছি…যেন তোমার রাগ দেখতে পারি….আর তোমাকে সবাই মিলে বাচ্চাটা নিয়ে সারপ্রাইজ দিবো বলে……”
আশেপাশের সবাই সাদাদ আর নৌশিনকে দেখছে…..
নৌশিন বুজতে পারছে…….
কিন্তু ওর সবার ওপর খুব অভিমান হচ্ছে…..বিশেষ করে সাদাদ আর ওর মায়ের উপর….বাচ্চা র বিষয় না হয় সারপ্রাইজ রাখতে পারতো সেটা আনন্দের ব্যাপার….কিন্তু তাই বলে তার আগে যে সব কথা উঠিয়েছিলো ওরা…সেগুলো নিয়ে কি কেউ এমন দুষ্টুমি করে…কত কষ্ট পাচ্ছিলো সে…….এখন কি আর করার করে ফেলেছে তো ওরা…..এখন তো আর বকলে,মারলে সেটা ফিরে আসবো না………..আর এমনি এমনি ছেড়ে দিলও শয়তানীগুলো শাস্তি পাবে না…….কত কষ্ট দিয়েছে মেয়েটাকে সব কয়টা মিলে……..হুহুহু……..
একটু শাস্তি দেওয়া দরকার……………..
ঐ দিন রাতের বেলায় বাচ্চাকে বাসায় আনা হয়।
নরমাল ভাবেই বাচ্চা হয়।
বাচ্চা বেশ নাদুসনুদুস আর সুস্থ হলেও বাচ্চার মায়ের শরীর টা একটু খারাপ হয়ে পড়েছে।কিন্তু বেচারী কোনো মতেই হাসপাতালে থাকতে রাজি না।নৌশিনের ভাই অনেক রোজাজুরি করলেও কোনো কাজ হয় নি,মেয়েটা ঠিকই কান্নাকাটি কে শশুড়কে রাজি করিয়ে ফেলেছে।
লাবীব(নৌশিনের ভাই)এতে একটু রাগ করলেও বাচ্চার মায়ের সাথে রাগ দেখাতে পারলো না….তারউপর ওর বাবা ওকে সার্পোট করছে তাই।
আর ডাক্তারও ছাড়তে চাইছিলো না তাই ডাক্তারের পরার্মশে দুজন নার্স আনা হয় বাড়িতে বাচ্চার মায়ের দেখাশোনা করার জন্য।শারীরিক ভাবে বাচ্চা হওয়ায় কিছুটা অসুস্থ হলেও নৌশিনের ভাবীর মনের জোর অনেক….আছে না কিছু মেয়ে অনেক স্ট্রং মেন্টালির হয় তেমন আর কি।সাদাদ আর নৌশিনও এ বাড়িতেই আছে।নৌশিন ওর শশুড় বাড়ির সবাইকে বলে এসেছে আর এটাও বলেছে যে “আমরা আমার সাথে সবাই চিটিং করেছো,দু দিন কথাই বলবো না তোমাদের সাথে”😂…….অরূপ আসার জন্য খুব বায়না করছিলো কিন্তু ওর মা সামলে নিয়েছে………..
বাসার এসেছে প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেছে,নৌশিন বাসার সার্ভেন্ট আর নার্স দুটো ছাড়া কারও সাথে কোনো কথা বলে নি।এখনও খারাপ লাগছে ওর।মজা করে মানুষ…ঠিক আছে…..তাই বলে এভাবে??আর বেশি রাগ হচ্ছে ওর বাবা-মা আর সাদাদের উপর….কি সব কথা বলেছিলো যার জন্য কত কি ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলো নৌশিন…তাই অভিমান করে কথা বলছে না কারও সাথে………..
নৌশিন বাচ্চা নিয়ে ড্রয়িং রোমে বসে বাচ্চাটাকে অনেক ভাবে আদর করছে।বাচ্চা পেলে মেয়েটার আর কিছু লাগে না।এমনকি বাচ্চা পেয়ে বাসায় এসে ফ্রেস পর্যন্ত হয় নি।যদিও ওর মা আর সাদাদ অনেক বার বলেছে এসব ভারী জিনিস চেন্জ করে নিতে….আর নৌশিনেরও এগুলো পরে থাকতে খুব খারাপ লাগছিলো।কিন্তু ওদের ওপর জেদ দেখিয়ে আর চেন্জ করে নি।বাচ্চা নিয়ে বসেছে।।।।।।।।
“কি রে ওকে দে…..একদিনের বাচ্চার সাথে এতো কি করিস তুই??”(নৌশিনের মা)
নৌশিন বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে আর হাত পা একটু করে বুলিয়ে দিচ্ছে…..কোনো জবাব দিলো না তার মায়ের কথায়।ওর মা আবারও বললো,
“দে মা…ওর মায়ের কাছে দিয়ে আসি……সেই কখন থেকে তো রাখলি….”
আর বাচ্চা টাও কি আজিব…ফুপুর কোলে উঠে কোনো কান্না কাটি করছে না।
“দে মা,ওর মায়ের কাছে দিয়ে আসি…..”
নৌশিন কিছুটা বিরক্ত ভাব নিয়ে মুখ খুলে এবার,
“আমি তো রাখছি….”
নৌশিনের মা কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাদাদ নৌশিনের কুল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে ওর শাশুড়ির কোলে দিয়ে দেয়।নৌশিন সাদাদের দিকে এক নজর তাঁকিয়ে “ধ্যাঁত”বলেই নিজের রোমে চলে যায়।সাদাদও রোমে এসেছে।নৌশিন পা তুলে বিছানায় বসে আছে।সাদাদ যে পাশে দাঁড়িয়ে আছে সে দেখেছে তবুও কিছু বলছে না।ভালোই লাগছে না ওর…..কি করবে বেচারী আর তারউপর সাদাদ বারবার ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে ওকে।আর তার সাথে তাল মিলিয়ে নৌশিনের ভাইয়াও নানা রকম দুষ্টুমি করেছে।আর বাসার আসার পর সাদাদ বিকেলে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা এমন কি ও কি কি বলছে সেটাও নৌশিনের বাবা আর ভাইয়ের সাথে শেয়ার করেছে।আর নৌশিন যে বিকালের কাহিনীর জন্য সাদাদের ওপর রাগ দেখায় নি তার জন্য সবাই মিলে খুব মজাও নিয়েছে।
আর একটু নৌশিন একটু শান্তিতে বসেছিলো বাচ্চা টা নিয়ে ওর মায়ের কত তাঁড়া।
আর সাদাদ তো আছেই…….
এখন একটু চুপচাপ বসে আছে তারও উপায় নেই,সাদাদ পাশে দাঁড়িয়ে থেকেই হাত টেনে নিয়ে হাত ভর্তি চুরি নিয়ে নাড়াচ্ছে।
নৌশিনের দু হাত এক সাথে করে দু হাতের চুরি একসাথে করে বাজাচ্ছে।আপনারাই বলুন,কার না মেজাজ টা গরম হয়???
অবশেষে সাদাদের জ্বালা সহ্য করতে না পারে ফিরে তাঁকায় সাদাদের দিকে………
“ইশশশশশ…….ব্যাথা লাগে কিন্তু আমার!!”
এইবার সাদাদ নৌশিনের সামনে গিয়ে বসে পড়ে…..
হাত দুটো আগের মতোই একসাথে করে বাজাচ্ছে…
হাত ভর্তি সোনার চুরি আর বালা সেগুলো কি কম ভারী নাকি!!এভাবে বাজাচ্ছে হাতেও তো লাগছে………
“উফফফ……কি ফাজলামী শুরু করছো তুমি??ব্যাথা পাই না আমি??”
হাত দুটো নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে সাদাদ নৌশিনের একদম কাছে গিয়ে বসে করুণ শুরে বলছে,
“ও জান….আমি তো সরি বলেছি…..এখনও মন খারাপ করে থাকবে.??সরি তো!!সরি না বলো??”
নৌশিনের খুব হাঁসি পাচ্ছিলো সাদাদের মুখের এমন ভাব দেখে…..তবুও হাঁসলো না……..
“জানু ও জানু….লাভ ইউ না???দেখো না কি সুন্দর একটা বাচ্চা এসেছে…..তোমার বাচ্চা আরও সুন্দর হবে…..আমি খুব তাড়াতাড়ি সব ব্যবস্থা করে দিবো জান……অন্য কারও বাচ্চা আর বেশি দিন কোলে রাখতে হবে না….তোমার কোল ই ভরিয়ে দিবো……প্রমিজ জান…. আর এমন দুষ্টুমি করবো না…….আমি তো তোমার রাগ দেখার জন্য এমন করে বলেছিলাম…আর খাওয়ার কথা বলেছি!আমি চেয়েছিলাম তখনি তুমি রেগে গিয়ে আমার কলার ধরে বলবে”আমার বাপের কি তোর চেয়ে কম আছে??যে তোর বাড়িতে খেতে আসবে”…….”
নৌশিন সাদাদের এমন সব কথা শুনে না হেঁসে পারলো না…………
“তুমি!!!!!!!!”(হাঁসতে হাঁসতে)
ভালোবাসার মানুষের সাথে বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকা যায় নাকি।তার উপর সে যদি হয় সাদাদের মতো কেয়ারিং আর দুষ্টু।
“যাক বাবা…..হাঁসি এলো মুখে…..কতক্ষণ ট্রাই করার পর…..আমি আর তোর রাগী এই কান্নার রূপ দেখতে চাই না…মেয়ে মানুষ রাগলে ঘর বাড়ি ভাঙচুর করে জানতাম…বাট কথা না বলে চুপচাপ কাঁদে কিছু না বলে তা জানা ছিলো না…..আমার তোর রাগ দেখার ইচ্ছা চলে গেছে রে ভাই…….”
নৌশিনেরর চোখে পানি আর মুখে হাঁসি….সাদাদের বুকে ঘুষি দিতে দিতে বলছে…..
“তুমি না….. তুমি আসলেই খগব খারাপ…. বাজে লোক তুমি……”
সাদাদ হাঁসতে হাঁসতে নৌশিনের হাত দুটো আটকিয়ে
নিলো……”বরকে মারতে নেই জানু…….আদর করতে হয়…. বেবি দিবো তো……”
নৌশিন তো নিজেই সব সময় বাচ্চা বাচ্চা করে কিন্তু আজ সাদাদের মুখে এই কথাটা শোনে কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে আর লজ্জাও লাগছে খুব।নৌশিনের হাত দুটো সাদাদের হাতে…লজ্জায় মাথা নিঁচু করে আছে নৌশিন…অসম্ভব ভালো লাগছে তাঁর কারণ সাদাদ বলেছে তাকে আর বেশি ওয়েট করাবে না কোল জোরে একটা ফুটফুটে কাউকে এনে দিবে।
“ওরে আমার লজ্জাবতী লতিকা আর লজ্জা পেয়েও না গো……..”
নৌশিন কিছু বললো না….ওর মুখে বলা একটা শব্দ যেটা প্রায় ই বলে “ধ্যাত”সেটা বলেই সাদাদের বুক মুখ লুকায়।
সাদাদও হেঁসে দিয়ে জড়িয়ে ধরে নৌশিনকে।💜💜💜💜
নৌশিন ভারী ভারী সব গহনা,শাড়ি খুলে নিয়ে সাবেক নৌশিনের মতো ড্রেস আপ নিয়ে গুন গুন করে ওয়াশরোম থেকে বের হচ্ছে।কালো প্লাজো,বাদামী রংয়ের শর্ট জামা আর কালো ওড়না…….এই সব ড্রেসে না আমাদের নৌশিন টাকে একদম বাবু বাবু লাগে।গুন গুন করে ড্রসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে যায় নৌশিন……চুল আচরিয়ে নিচ্ছে আর আয়নার ভেতর দিয়ে সাদাদের সাথে চোখাচোখিতে মুচকি মুচকি হাসছে…..সাদাদ তো সেই কখন থেকে নৌশিনকে দেখে যাচ্ছে…….এই বেসে বেশ লাগে নৌশিনকে অবশ্য সাদাদের কাছে নৌশিন সবসময়ের জন্য হুরপরী………..
নৌশিন বেনুনী শুরু করে টুল থেকে উঠে এসে সাদাদের সামনে বসে….
“বলছি,,,শুনো না…..”
উঠে বসে সাদাদ…..নৌশিনের দিকে তাকিয়ে বলল,”কি বলো শুনি…..”
“আমি কিন্তু এক সপ্তাহ থাকবো…….”
সাদাদ কথা টা শোনা মাত্রই মনে হলো আকাশ থেকে পড়লো……বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে নৌশিনের দিকে…..
“কি হলো!!!এভাবে কি তাঁকিয়ে আছো???আমি থাকবো অনেক দিন……”
মুখ খুললো সাদাদ,
“পাগল!!!!”
“মানে??”
“মানে আবার কি??তুমি ওয়ান উইক থাকবে এখানে??”
“তো??তুমি কিন্তু একদিন বলেছিলে আমি চাইলে হাইয়েস্ট ওয়ান উইক থাকতে পারি….তাহলে???”
সাদাদ নৌশিনের হাত থেকে অর্ধেক করা বেনুনী টা নিয়ে সুন্দর করে শেষ পর্যন্ত বেঁধে দিলো……….
তারপর নৌশিনেরর দুগালপ হাত রেখে বলল,
“আমি কি করে থাকবো??”
“কেন??”
“কেন মানে??তোকে ছাড়া এক সপ্তাহ!!!আমি পারবো না তো….”
“কেন?আমাকে ছাড়া থাকবে কেন??তুমি রোজ আসবে….তাহলেই তো হলো….”
“সেটা হয় নাকি??শশুড় বাড়ি রোজ আসলে লোকে তো সোছা বলবে রে আমায়….”
“সাদাদ!!!!…..”
“আরে বাবু তা না…..দেখো ট্রুলি বলতে গেলো আমি তো এই বাড়ির জামাই….আই মিন মেহমান….আমি চাইলে তোমার সাথে দু দিন থাকতেই পারি তাই বলে তুমি এক সপ্তাহ থাকবো বলে যে আমিও থাকবো…সেটা তো কেমন দেখায়!!!তা ছাড়া আমার শশুড় বাড়ি তো একদম কাছে আমি যখন খুশি চলে আসতে পারি……দূরে হলে না হয় বউকে নিয়ে আরাম করে এক সপ্তাহ থেকে আসতাম বছরে এক বা দু বার কিন্তু বাসা তো কাছেই তাই বলছিলাম যে…..”
“তাই কি বলছিলে???”
“প্রতি মাসে আনবো……”
“তো??”
“প্রতিমাসে দু দিন এসে থাকবে……আসলে এক সপ্তাহ না আমার জন্য কষ্ট হয়ে যাবে…..অভ্যাস হয়ে গেছিস তুই……সকালে কে ডেকে দিবে??চোখ খুলে কার মিষ্ট মুখ টা দেখবো?রাতে কে বুকে মাথা রাখবে???”
নৌশিন কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না…….সে ও তো সাদাদকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারে না আজ কাল……তবুও ঘটনা সামলাতে বলল,
“ওকে….এক সপ্তাহ না আমি তিন দিন থাকবো…….”
“এ্যা??”
“আবার কি??আমি তো ঐ দিন হাফ রাত এন্ড হাফ ডে থাকলাম….বেবী টা হয়েছে একটু আদর করবো না?….”
সাদাদ নিশ্চুপ হয়ে নৌশিনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে….নৌশিন সাদাদের হাত ধরে আল্লাদী কন্ঠে বলে উঠে,
“ও সাদাদ……উমমমম…..”
সাদাদ ঠোঁটের কোণে একটা হাঁসি টেনে বলে,
“আজ কিন্তু একটা রাত পাড় হয়ে গেলো…..আজ আমি আছি…..দু দিন থাকবে তুমি…..পরের দিন বিকেলে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো……”
নৌশিন না কে??ওর মতো খুশি আর কেউ না….তারমানে নৌশিন আজ রাত বাদে দু রাত বাপের বাড়ি থাকার সুযোগ পাচ্ছে………”উম্মাহ….থ্যাঙ্ক ইউ…. থ্যাঙ্ক ইউ…. ”
“হেয়য়য়য়…..”
“উমমমমম……আমারও কিন্তু কষ্ট হবে….কার বুকে মাথা রাখবো??”
“আাহা রে বাবা আদুরী,স্বামী সোহাগী রে…..”
“কিহ???”
“জ্বি যুশরী…..”
“এই যুশরী টা আবার কি??”
সাদাদ নৌশিনকে টেনে নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
“যুশরী হলো যুবতী আর কিশোরীর সংমিশ্রণ…..আমার জান পাখি টা বয়সে যুবতী হলেও চলন বলন আর মুখের কাঠামোতে পনেরো বছরের কিশোরী আর বয়সের যৌবনতায় কুল কিনারা ভরা একটা যুবতী……ইশশশশশ…..কি যে না!!….”
সাদাদ নৌশিনের মুখেরর দিকে এমন ভাবে তাঁকিয়ে কথা গুলো বলছে,নৌশিন তো লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে……..
“হয়েছে…আর লজ্জা পেও না যুশরী…..যৌবন যে ফুটে উঠে…..এই যুবকের নেশা লেগে যাবে তো…..ঐ লজ্জা মাখা মুখ যে আমার মাতালের সুরী…..মাতাল হতে এক মুহুর্তও লাগবে না……”
কথাগুলো বলেই সাদাদ নৌশিনের লাল টুক টুক মুখ দেখে হা হা করে হাঁসতে থাকে।আর এতে নৌশিন আরও লজ্জা পায়…..মুহুর্তেই সাদাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়…………
পর দিন সকালে সাদাদ খাওয়া দাওয়া করে নৌশিনদের বাড়ি থেকে নিজের অফিসে চলে যায়।
রোজকার মতোই আজও নৌশিনের কপালে একই রকম ভালোবাসার ছোঁয়া জুটে।এই উষ্মতারর আবেশ টা যেন সব কিছু ছাড়িয়ে যায়….ভালোলাগার সব সীমানা পেড়িয়ে ভালোবাসার সীমানায় কড়া নাড়ে…..আবেশ টা যেন শেষ হওয়ার নয়….সবটা জোড়ে শুধু একটা ঘোর সৃষ্টি করে রাখে….প্রেমঘোরে আবদ্ধ করে রাখে দুটি আত্মাকে।
আজ সাদাদ বিকেলে আসবে না এখানে….ওর বাসাতে যাবে বলে গেছে সবাইকে।নৌশিনের সারাটা দিন বাচ্চা টাকে নিয়েই কেটে যায়…..মাঝে মাঝে শুধু দুধ খাওয়ানোর সময় বাচ্চার মা বাচ্চা টাকে কাছে পেয়েছে বাকী টা সময় বাচ্চা নৌশিনের কাছে ছিলো। এত কিছুর মাঝে সাদাদ কে খুব মিস করছিলো নৌশিন….আর ঐ বাড়ির সবাইকেও…কেমন যেন মায়া লেগে গেছে ওদের সবার উপর বিশেষ করে অরূপের উপর। তাই অনেকবার সাদাদের সাথে কথা বলেছে তার সাথে বাসায়ও ফোন করে নিয়েছে।
সন্ধ্যার দিকে বাচ্চাকে ওর মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।এই টুকু বাচ্চার তো মায়ের আবেশ দরকার তাই।একজন নার্স নৌশিনের ভাবীর খেয়াল রাখছেন আর অন্য জন নৌশিনের সাথে বসে ড্রয়িং রোমে আলাপ করছে ওনিই এতক্ষণ দেখভাল করছিলেন এখন একটু রেস্ট নিচ্ছেন আর কি…
কথার ফাঁকে নার্স টা নৌশিনকে জিঙ্গেস করে,
“ম্যাডাম,আপনার স্বামী কিন্তু ওনের হ্যান্ডসাম….ওনাকে দেখে শোনে রাখেন তো??”
নৌশিনের কাছে নার্সের প্রশ্ন টা ঠিক যুতসই মনে হলো না…..একে তো বললো সাদাদ খুব হ্যান্ডসাম তার মানে সে সাদাদকে খুব ভালোভাবে খেয়াল করেছে তারউপর আবার এটাও জানতে চাইছে যে নৌশিন তার বরকে দেখে শোনে রাখে কি না!!!আজব ধরনের কথা একটা…….
নৌশিনকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে নার্স টা আবারও বলে,
“ম্যাডাম…..আমি মনে হয় আপনার চেয়ে বয়সে অনেক বড় হবো…..আমি কিন্তু বিবাহিত….আর সব কিছু বুঝেই আপনাকে বলছি,পুরুষ মানুষ….একটু দেখে শোনে রাখবেন….”
নার্স টা কথা বলার সময় চোখ মুখ কেমন একটা অদ্ভুদ করে রাখলো…দেখে এটা বুঝা যাচ্ছে যেন সাদাদ ওনার কত দিনের চেনা….আর ওনি সাদাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে এমন বলছেন।নৌশিনের ভালো লাগছে না এই মহিলা কে।নৌশিন এইসব সন্দেহবাজ মহিলাদের খুব কম পচ্ছন্দ করে।ওর কথা একটাই….”মনে হয় মানুষ…সে মনে যদি অন্য কেউ এসে যায় তাহলে সেখানে জোরাজোরি করার কিছু নেই আর মন একটাই হয় যদি মনের মানুষকে সত্যিই একবার মন দেওয়া হয় তাহলে সে মনে কোনো রূপসী ই হোক আর কোনো মোস্ট ড্যাসিং বয় ই হোক তার কোনো জায়গা নেই….সে জায়গা শুধু ভালোবাসার মানুষের জন্য”
নৌশিন নার্সে ওনার কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে উঠে যায় সেখান থেকে।মাকে সাহায্য করার জন্য রান্না ঘরে যায়।আরফানরা আসবে আজ আাচ্চা দেখতে তাই ওর মাকে অনেক কিছু করছে সাথে সাথে নৌশিনও হাত লাগাচ্ছে।
“আচ্ছা মা….ভাবীর আট মাসেই বেবী হয়ে গেলো….”
“আট মাসে না রে পাগলী…..তোর ভাবী তো প্রথম দিকে ডেট ঠিক ঠাক বলতে পারে নি আর ডাক্তারের হিসেবে আট মাস দু সপ্তাহ ছিলো তোর বিয়ের সময়….আর আমার হিসেবে নয় মাস পড়েছে এটা…..ডাক্তার তো বলেছিলো পরের সপ্তাহে সিজারের কথা…..কিন্তু আল্লাহর রহমতে আগেই হলো সেগুলোর দরকার হলো না…….”
নৌশিন কি যেন ভেবে।।।কিছু সময় পর আওয়াজ দিলো,
“মা…..”
“হুম…..”
“আমিও বেবী নিবো…..”
মেয়ের মুখে এই কথা শুনে নৌশিনের মা খুব বেশী খুশি হয় নি….সেটা মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে……
“কি বলছিস তুই??”
“হুম…আমিও বেবী নিবো….আমার বাচ্চা খুব ভালো লাগে মা…..”
নৌশিনের মা ভাবছে সাদাদ নিশ্চয় নৌশিনকে বাচ্চা নেওয়ার কথা বলেছে না হলে ঐ বাড়ির কেউ….তাই ওনি কড়া ভাষায় নৌশিনকে জানায়,
“না,বিয়ে হয়েছে দু সপ্তাহ হলো আর ওনার বাচ্চার শখ হয়েছে….আমি তোর শাশুড়ির সাথে কথা বলবো….এখন এসব না….শরীরে নাই কিছু আমার মেয়ের…আর ওরা বললেই বাচ্চা নিতে হবে…..বউ মা কি নাদুস নুদগস তাই জীবন যায় যায় আর আমার ছোট একটা মেয়ে ওর আবার বাচ্চা…..”
নৌশিন ঠিক বুঝতে পারছে ওর মা কি ভেবেছে…..তাই ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“না মা…সাদাদ আমাকে ঐসব কিছু বলে নি…আর ঐ বাড়ির অন্য রাও না….আমি ই সাদাদকে বলেছি ও না করে দিয়েছ….প্লিজ তুমি ঐ মা কে কিছু বলো না…..”
নৌশিনের মা নৌশিনকে নিজের সামনে এনে ধমকের সুরে বলল,
“কি??তুমি বলেছে সাদাদকে বেবীর কথা??”
ভয় পেয়ে হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়ায় নৌশিন……
“বাহ্….ভালোই বড় হয়ে গেছো তুমি!বাইশ বছর বয়সে বাচ্চা হয় মানুষের স্বাভাবিক কিন্তু বাইশ বছর বয়সে তেতাল্লিশ কেজি ওজনের মানুষ কম ই হয়…..তাই আগে নিজেকে তৈরী করো….তার পর এসব চিন্তা ভাবনা করো…..”
প্রেমঘোর পর্ব ৫১+৫২+৫৩+৫৪
নৌশিন প্রায় কেঁদে দিবে দিবে অবস্থা……
“তোমার ভাবীর একত্রিশে বাচ্চা হলো…..আগের টা তো টেকে নি আর নিজেও মরার মতো হয়ে গেছিলো…দেখেছো তো তুমি…..তোমার চেয়ে হেলদি ছিলো আর বয়সও ছিলো তারপরও কি হলো!!বাচ্চা টা টিকে নি আর তোমার ভাবী!!তাই আমি চাই না তুমি ঝুঁকের বসে কিছু একটা সিধান্ত নাও….সময় হোক তারপর এসব……”..