অনুভবে তুমি পর্ব ৪৯

অনুভবে তুমি পর্ব ৪৯
লিজা মনি

দেখতে দেখতে পনেরো দিন চলে যায়। এই পনেরো দিনে ইয়ানার শরীরের দাগ গুলো কমে যায়। আগের মতো আর ভেসে উঠে না। ইয়ানা সকালে খাওয়া দাওয়া করে আয়নার সামনে নিজেকে পরখ করতে থাকে। আজ মনটা খুব ফুরফুরা। হল্লা পার্টি আর রুই তারা আসবে। কিন্তু দুই দিন ধরে মাথাটা খুব ধরে আছে। কাল থেকে বমি বমি পাচ্ছে কিন্তু বমি আর করতে পারছে না। আহান সকালে অফিসে চলে গিয়েছে হয়তো রায়ান ভাইয়া তাদের সাথে আসবে। ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে যায়। কিছুক্ষন পর কলিং বেলের শব্দ পেয়ে ইয়ানা খুশিমনে দরজা খুলে দেয়। সবাইকে দেখে মুখে এক তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে।

ইয়ানা — কেমন আছিস তোরা?
আয়াত — আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস ইনু?
ইয়ানা — আলহামদুলিল্লাহ। কিরে আকাশ অবনিকে নিয়ে আসলি না?
আকাশ — কষ্টের কথা আর মনে করিয়ে দিছ না বইন। মাইয়ার বাপ একটা রিনা খানের জামাই। কি বাপ আল্লাহ স্বামীর সাথে দেখা দেখা করতে দেয় না। বিশ্বাস কর বইন আমি যদি আগে জানতাম এমন কিছু হবে তাহলে ওই রিনা খানের জামাইকে রিনা খান থেকে আলাদা রাখতাম। তাহলে বুঝত বিয়ে করা বউ ছাড়া কত কষ্ট।
ইয়ানা — কিরে তর না মামা হয় এমন কথা বলছিস কেনো? আমাদের কে না জানিয়ে কিছু করলে এমন ওই হবে। কিন্ত এইভাবে আটকে রাখা তো ঠিক না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আকাশ — জানি না এমন কেনো করছে। আমি আর মাত্র এই মাস অপেক্ষা করব যদি এই মেয়ে আমার কাছে না আসে সত্যি বলছি কি করব নিজে ও জানি না। সাহস খুব হয়েছে আমাকে ইগ্নোর করা এই মেয়েকে হাড়ে হাড়ে বুঝাব।না আসলে তুলে নিয়ে আসব।
আকাশের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকায়।
আয়াত — আহান ভাইয়ার শীর্ষ হতে চাস নাকি?
আকাশ — প্রয়োজনে হলে তাই করব।
সবাই হাসি তামাশার এক পর্যায়ে ইয়ানা সবার জন্য খাবার নিয়ে আসে। তাদের হাসি ঠাট্টার মধ্যে দাদুমনি ও শামিল হয়।

ইয়ানা খাবারের ট্রে টেবিলের উপর রাখতে গিয়ে মনে হচ্ছে হাত কাঁপছে। নিজের চারপাশে পুরো পৃথিবী ঘুরঁছে নাকি ও পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে বুঝতে পারে না। হঠাৎ ইয়ানার দিকে রুয়ানার নজর যায়।
রুয়ানা — আপু তুমি ঠিক আছো? তোমায় কিছু করতে হবে না তুমি বসো আমি করে দিচ্ছি।
ইয়ানা ধীরে ধীরে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে ইয়ানার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে যায়।
আয়াত —- ওহহ নো দাদুমনি ইয়ানার কি হলো কিছু সময়ের মধ্যে।
দাদুমনি ভড়কে গেলেও কিছু ভেবে ইয়ানার পাশে গম্ভির হয়ে বসে।
রুহান — তোরা থাক আমি আহান ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি।
দাদুমনি *—- না দেওয়ার প্রয়োজন নেই আমি দেখছি।

দাদুমনি ইয়ানার হাতের শিরা ধরে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। এরপর সবার দিকে এক পলক তাকায়। সবাই অশান্ত মন নিয়ে দাদুমনির দিকে তাকিয়ে আছে।
আরু— কি হয়েছে দাদুমনি ভয়ের কিছু নেইতো?
দাদুমনি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” খালামনি হতে যাচ্ছিস মাইয়া “”
দাদুমনির কথা শুনে সবাই হা করে তাকায়। যখন কথাটির মানে বুঝতে পারে তখন সবাই কি বলবে বুঝতে পারছে না।
রুয়ানা —- কি যে খুশি লাগছে আমি আবার খালামমি হবো। আহিয়া স্কুল থেকে এসে এই খবরটা শুনলে খুব খুশি হবে।আমি তাড়াতাড়ি আব্বু আম্মুকে জানাচ্ছি।নাহ এখন জানাবো না সারপ্রাইজ দিব।

অনেক্ষন পর ইয়ানার ঙ্গান ফিরে। মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে। চারদিকে পরখ করে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। হল্লা পার্টি সবার কথা মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নামতে নেই ঠিক তখন কেউ বলে উঠে,,,,,,
“” অভিনন্দন মিসেস অগ্নি চৌধুরি আর আমাদের ইনু বেবি””
ইয়ানা অভিনন্দনের কথা শুনে কপাল কুচকে নেই। ওকে কেনো শুভেচ্ছে জানাচ্ছে আশ্চর্য।
সুমু — বুঝতে পারিস নি তাই তো।
ইয়ানা মাথা নারিয়ে না বলে। সুমু বিরক্ত নিয়ে বলে,,,,

“”দেখ এই মাইয়া বলে বুঝতে পারছে না? এত বড় আকাম করে কি বাচ্চা সাজছে।””
ইয়ানা — আমি সত্তিই কিছু বুঝতে পারছি না। কি আকাম করেছি আমি? আমি কোনো ভুল করেছি?
আয়াত — করেছিস তো খুব বড় ভুল করেছিস?
ইয়ানা — আমি কখন কি করলাম? কি করেছি বল না?
আরু— আমাদের কে দুই দুইবার খালামনি বানিয়ে।
ইয়ানা হালকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” অর্থাৎ আমি .. আমি আবার কনসিভ করেছি? “”

সুমু — হ্যা। কিন্তু তার আগে প্রেগনেন্সি কিট নিয়ে টেস্ট করে নে। দাদুমনির কথা তো ভুল ও হতে পারে।
ইয়ানা নিজের পেটে আলতো করে হাত রেখে খুশিতে কান্না করে দেয়।
আয়াত —- হয়েছে বাবা আর কান্না করতে হবে না আগে টেস্ট করে আয়।
ইয়ানা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ওয়াশরুমে চলে যায়
উত্তেজনায় তার হাত পা কাপছে। ইসস আবার ও সে মা হতে চলল।
ইয়ানা অনেক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়। লজ্জায় তার মাথা কাটা যাচ্ছে উফফফ। ইয়ানাকে ওয়াশরুমের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সুমু অধৈর্য গলায় বলে,,,,

“” লজ্জা তুই তর জামাইর সামনে পাইছ আগে আমাদের আসল জিনিস দেখা। পসেটিভ এসেছে নাকি নেগেটিভ””
ইয়ানা কাপাঁকাপা হাতে তাদের কাছে কীট টা দেয়। কীট হাতে পেয়ে সুমু ইয়ানার গালে টুস করে চুমু খেয়ে বলে,,,,
“” থ্যাংক্স এত বড় খুশির খবর আমাদের মাঝে আবার দেওয়ার জন্য””
রুহান — সে না হয় ইয়ানার খুশির খবর দুই দুইবার পেলাম কিন্তু কথা হচ্ছে আপনার থেকে এই খবর কবে পাবো মেডাম। আপনি ও আমাদের মামা হওয়ার সুযোগ করে দিন। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আপনার কাছ থেকে পাবো। আমাদের রায়ান ভাইয়া যথেষ্ট রুমান্টিক।
রুহানের কথা শুনে সবাই ঠোঁট চেপে হাসে। সুমু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। বন্ধু মানে হলো যেকোনো যায়গায় লজ্জায় পড়া।

আকাশ—— লজ্জা পেয়ে লাভ নেই রুহান যা বলেছে মনে যাতে থাকে। আমাদের মামা হওয়ার সুযোগ করে দেন।
আরু— তরটা কে বলবে আকাশ? তর বিয়ে ইয়ানার বিয়ের পাশাপাশি হয়েছে। সময়ের ব্যবধান বেশি না। আমাদের কবে ফুপ্পি বানাবেন আপনি।
আকাশ — তাহলে বউ ছাড়া ফুপ্পি বানাবো কিভাবে তোদের? বউ এনে দে প্রমিস করছি দুইদিনে ফুপ্পি বানিয়ে দেখিয়ে দিব।
আকাশের কথা শুনে আরু চুপসে যায়। কেন যে এই নির্লজ্জরে বলতে গিয়েছিলো খোদা মালুম জানে।

বিকালের দিকে সবাই চলে যায়। এখন রাত দশটা ছুঁই ছুঁই। ইয়ানা বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর আহানের আসার অপেক্ষা করছে। কেনো জানি সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসছে। ইয়ানা আহানকে সারপ্রাইজ দিবে বলে সবাইকে নিষেধ করেছে যাতে এই খবর কাউকে না বলে।
ইয়ানা নিজের পেটে হাত রেখে আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। এই বাচ্চাটা ইয়ানার জন্য অমুল্যসম্পদ। সে আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আবার ও মা হওয়ার আনন্দ দেওয়ার কারনে। আবার ও মাতৃত্ব অনুভব করতে পারছে সে ভীষনভাবে অনুভব করছে। তার দেহে আরেকটি দেহ বড় হচ্ছে আর সে আহানের অংশ। আহানের অস্তিত্বকে নিজের গর্ভে ধারন করছে। আজকে নিজেকে প্রচুর ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।
দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ইয়ানা চোখ তুলে তাকায়। আহানকে দেখতে পেয়ে কিছুটা ভয় ও পায়। ওইদিন রাতের কথা তো সে ভুলে যায় নি। আহানকে যতটুকু চিনে বাচ্চার কথা শুনে কখনো রাগ করবে না। খুব খুশি হবে সে নিজে ও।

আহান এক পলক ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হওয়ার জন্য। ইয়ানা আহানের দৃষ্টি অনুসরনের জন্য প্রেগনেন্সি কিটটাকে মিনি টেবিলের উপর রাখে। এরপর বিছানার উপর বসে আহানের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।কিছুক্ষন পর আহান টাওয়াল দিয়ে চোল মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। আজ কেনো জানি আহানের দিকে তাকাতে ও লজ্জা লাগছে সাথে ভয় ও। আহান ইয়ানাকে কাচুমাচু করতে দেখে জিজ্ঞাসা করে,,,,,
“” তুমি ঠিক আছো ইয়ানা “”
আহানের কন্ঠস্বর পেয়ে ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” হ. হ্যা ঠিক আছি।””

আহান আর কিছু বলে না। আহান আয়নার সামনে দড়িয়ে ঘুমানোর আগে যা যা করতে হয় সবকিছুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইয়ানা আহানের দিকে বিরবির করে বলে,,,
“” ঘুমাতে যাবে নাকি কোনো পার্কে এত সাজার কি আছে আজব। “””
প্রায় অনেক্ষন পর আহান টেবিল থেকে বিছানায় এসে বসতেই ইয়ানা বলে,,,,,
“” টেবিলের উপর পানি রাখা আছে খেয়ে নিন “”
আহান — পানি খাব কেনো? আমি তো খেয়ে এসেছি।
ইয়ানা — এক গ্লাস পানি খেলে কি আপনার ফিটন্যাস কমে যাবে।
আহান কপাল কুচকে বলে,,,,

“” কোনোদিন তো আমাকে পানি খাওয়ার কথা বলো নাই আজ হঠাৎ পানি খাওয়ার কথা বলছো কেনো?
ইয়ানা — অন্যদিন বলিনি আজ বলেছি। খেয়ে নিন পানিটা।
আহানকে পানি খাওয়ানোর উদ্দেশ্য হলো প্রেগনেন্সি কীটের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করানো।
আহান ইয়ানার কথা মত পানিটা খেয়ে নেয়। ইয়ানা আহানের সারা শব্দ না পেয়ে ঘাড় কাত করে আহানের দিকে তাকায়। দেখে আহান শুয়ার জন্য বালিশ ঠিক করছে।
ইয়ানা মনে মনে ভাবে,,, আজ কি কানা হয়ে গিয়েছে? পানি খেতে গিয়ে কি কিছু দেখেনি?
ইয়ানা আহানের হাত থেকে বালিশ ছুঁ মেরে নিয়ে নেয়।
আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে বলে,,,,,

“” সমস্যা কি তোমার বালিশ কেড়ে নিয়েছো কেনো? এত রাতে কি তোমার সাথে বালিশ খেলা খেলব সিনেমার নায়েকদের মত। আমি এত নাটক করতে পারি না বালিশ দাও।
ইয়ানা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” প্লিজ আমাকে হাসাবেন না। আপনি নাটক করতে জানেন না এইটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছেন। আমাদের বিয়ে কিভাবে হয়েছে এইটা যদি কেউ মুভি করে বিশ্বাস করেন সবচেয়ে টপ মুভির আ্যওয়ার্ড পাবে। আপনার সমস্ত খুন যদি ভিডিও করে ছাড়া হয় তাহলে হরর মুভিকে ও হার মানাবে। আর আপনার ভালোবাসা যদি বিশ্লেষন করতে যায় তাহলে ওই যে ডার্ক রুমান্টিক মুভি হয় না ওইটাকে ও হার মানাবে বেশি করে। আসছে ওনি নাটক করতে পারেন না। “”
আহান বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,

“” এত রাতে কি তোমাকে আমার চরিত্রের বিশ্লেষন দিতে বলেছি? আর তুমি ডার্ক রুমান্টিক মুভির কথা কিভাবে যানো। নিশ্চয় তুমি এইসব দেখেছো?””
ইয়ানা — এই না না আমি ডার্ক রুমান্স দেখি না একবার ভুল করে একটা আ্যপে চলে গিয়েছিলাম তখন আমি আর সুমু দেখিছি। বেশি দেখিনি শুধু একটু দেখেছি। এইসব মুভি আমাদের জন্য না। তাই দেখা বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। আর আপনার ফোনে একটা আ্যপ দেখেছি। আপনি নিশ্চয় দেখেন তাই না?
আহান — এইসব ফালতু জিনিস দেখার আমার সময় নেই।
ইয়ানা — তাহলে এইগুলো আসছে কোথা থেকে?
আহান — দেখেছি তো? আমার মোবাইলে ছিলো না। তোমাকে বিয়ে করার পর ইউভি আর রায়ান জোর করে ডাউনলোড করে দিয়েছে।

এরপর আহান শুয়ে পড়তে যাবে তার আগেই ইয়ানা চিৎ কার দিয়ে বলে,,,,,
“” প্লিজ শুয়ে পড়বেন না। আপনাকে কিছু দেখাব””
আহান কপাল কুচকে দুই ঠোঁট চেপে ইয়ানার দিকে ভালোভাবে পরখ করে বলে,,,,,
“” কি দেখাবে নতুন করে? সব তো আমি দেখে নিয়েছি। আবার নতুন করে দেখাতে চাইলে আসতে পারো কাম।
আহানের কথা শুনে ইয়ানা বড় বড় করে তাকায়। ওকি বলছে আর ওনি কি বলছে। ইয়ানা মনে মনে গালি দেয় “লুচ্ছা মাফিয়া ”
এরপর আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

“” আপনি চোখ বন্ধ করুন।চোখ খুলবন না কিন্তু “”
আহান — আজব চোখ বন্ধ করব কেনো?
ইয়ানা — করুন না আহান।
আহান ইয়ানার কথা অনুযায়ী অনিচ্ছা সত্তেও চোখ বন্ধ করে। ইয়ানা ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে প্রেগনেন্সি কীটটাকে হাতে নিয়ে আবার পুনরায় বিছানায় গিয়ে বসে। এরপর কাপাকাপা হাতে আহানের হাতের উপর প্রেগনেন্সি কীটটা রাখে। ইয়ানা মৃদু সুরে বলে,,,,
“” এইবার চোখ খুলোন “”
আহান চোখ খুলে নিজের হাতের উপর প্রেগনেন্সি কীট দেখে কপাল কুচকে নেয়। এরপর ভালোভাবে পরখ করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল দুই ফোটা নোনা জল। এই কান্না খুশির নাকি কোনো কিছু হারানোর ভিতরকার আর্তনাদ। আহানকে স্তব্দ হয়ে থাকতে দেখে ইয়ানা মৃদু সুরে ডাক দেয়,,,

“” আহান। “”
ইয়ানার ডাক শুনে আহান ইয়ানার দিকে তাকায়। আহানের চোখে পানি দেখতে পেয়ে বুকটা মুচর দিয়ে উঠে। এই শক্তপোক্ত মানুষটা ইয়ানা কাঁদতে দেখে না। হাজার সমস্যা নিজের একা হাতে মোকাবেলা করে কিন্তু কখনো ভেঙ্গে পড়তে দেখে না। আকস্মিক আহান ইয়ানাকে নিজের বক্ষে জাপটে ধরে।
আহান — এত ভালোবাসা তো আমি তোমার থেকে চাই নি ইয়ানা। আমার জন্য এত ভালোবাসার দরকার নেই। আমি তো শুধু তোমাকে চেয়েছিলাম। শুধু আমি তোমাকে ভালোবাসব তুমি কেনো এত ভালোবাসবে আমাকে।
ইয়ানা — আপনি খুশিত আহান?
আহান ইয়ানার চিবুক ধরে বলে,,,,

“” বলে বুঝাতে হবে বুঝতে পার না তুমি?
আহানের কথা শুনে ইয়ানা নিজের চোখ নামিয়ে নেয়।
আহান ইয়ানার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,,,,,
“” তুমি ঘুমাও আমি আসছি। “”
ইয়ানা — এইতো বলছিলেন ঘুমাবেন এখন আবার কোথায় যাচ্ছেন?
আহান ইয়ানার পুরো মুখে অজস্র চুমু খেয়ে বলে,,,,,
“” বাহির থেকে আবহাওয়ার প্রশান্তি নিতে চাই। শুধু বারান্দায় যাব।””

ইয়ানা ও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। আহান ইয়ানার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা বারান্দায় চলে যায়। এরপর ডুকে পরে নিজের তৈরি করা বিশাল বারে। ইয়ানার সামনে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারলে ও আহান ভিতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বার বার চোখে ভেসে আসছে এক টুকরা মাংস পিন্ড। এইটা শুধু মাংস পিন্ড নয় আহানের প্রথম অস্তিত্ব ছিলো। যাকে ঘিরে হাজার ও সপ্ন বুনেছিলো সে। আহানের ভিতরে শুধু হাহাকার করছে। ইয়ানা কিছু দেখেনি ডক্টর শুধু আহানকে দেখিয়েছিলো।

অনুভবে তুমি পর্ব ৪৮

সেই দৃশ্য সে আজ ও ভুলতে পারে না। কি করে ভুলবে এইটা তো তার প্রথম সন্তান ছিলো। তাই তো তিলে তিলে শেষ করেছে সন্তানের হত্যাকারীকে। এখন শুধু বাকি রয়েছে কাকা – কাকিয়া আর মায়ের হত্যাকারী। আহান অতিরিক্ত উত্তেজনায় হুইস্কের বোতল খুলতেই আবার ও ইয়ানার মুখ ভেসে উঠে। মনে পড়ে যায় ইয়ানার নারীসত্তায় বড় হচ্ছে তার অস্তিত্ব। অ্যালকোহলের বোতলটাকে সজোরে আছার মারে ফ্লোরে। নিজেকে শান্ত করে মনে মনে একটা কথা আওড়ায় আগেরবারের মত ভুল এইবার করা যাবে না। শত্রুর হাত থেকে সবসময় ইয়ানাকে রক্ষা করতে হবে।

অনুভবে তুমি পর্ব ৫০