ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৪২

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৪২
তাজরীন ফাতিহা

বিবাহের চতুর্থ বর্ষের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে মারওয়ান আজাদের আজ কি বোধোদয় হলো জানা নেই তবে নিশাতকে নিয়ে আজই প্রথমবারের মতো বাইরে পদার্পণ করেছে সে। ছেলেকে নিয়ে অসংখ্যবার বাইরে বেরুলেও নিশাতকে নিয়ে এই প্রথম প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসেছে সে। নিশাত অদ্ভুত নজরে তা শুধু চেয়ে দেখছে। ফজর পড়ে নাস্তা বানাতে গেলে হঠাৎ মারওয়ান এসে বললো,

“আজ নাস্তা বানানো লাগবে না বাইরে নাস্তা করবো সেখান থেকে তুমি নাস্তা করে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিও।”
নিশাত প্রথমে গাঁইগুই করছিলো না যাওয়ার জন্য। কিন্তু মারওয়ানের ধমকে রেডি হতে বাধ্য হয়েছে। দায়বদ্ধ স্ত্রীর মতো ছেলেকে তৈরি করে নিজের ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে মারওয়ানের সাথে। রাস্তায় এই প্রথম মারওয়ানের পাশে কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটছে সে। অনেকেই অদ্ভুত চোখে তার সাথের লম্বা পুরুষটির দিকে তাকিয়ে ছিল যেন বিশ্বাস করতে পারছে না তার পাশে এই লোকটা কে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এলাকার অনেকেই জানে নিশাত সিঙ্গেল এখনো বিয়ে হয়নি থাকে বাবা মায়ের সাথে আর পড়াশোনার পাশাপাশি জব করে। এটা কিভাবে ছড়িয়েছে নিশাত জানে না। হয়তোবা নিশাতকে কখনো মারওয়ানের সাথে দেখেনি বিধায় লোকজন নিজ মনে ভেবে নিয়েছে।

সেদিন স্কুল থেকে আসার সময় এক ভদ্রমহিলা তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেন।। তার ছেলের জন্য নাকি এরকম ধার্মিক মেয়ে খুঁজছেন তিনি। অনেকদিন ধরেই নাকি তার উপরে নজর রাখছেন। বাসার ঠিকানা চেয়েছেন সম্বন্ধ নিয়ে আসবেন। নিশাত থতমত খেয়ে গিয়েছিল। অন্যকাউকে ভেবে তাকে বলে দিয়েছে মনে করে দ্রুত চলে এসেছে সেখান থেকে। কি সাংঘাতিক এক বাচ্চার মাকে কিনা বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে লোকজন!
মারওয়ান ছেলেকে কোলে নিয়ে পার্কের সরু রাস্তায় হাঁটছে। পাশেই নিশাত চারিপাশ মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে দেখছে। কি সুন্দর প্রকৃতি! মুখ দিয়ে আপনাআপনি বেরিয়ে গেলো সুবহানাল্লাহ। নিস্তব্ধ চারিপাশে ছায়াময় বৃক্ষরাজি, পাতার ফাঁকে ফাঁকে গলিয়ে পড়ছে প্রাতঃকালের নরম রৌদ্রের ছায়া সাথে পাখিদের কলতান জুড়িয়ে দিচ্ছে প্রাণ। ইস্ মন জাগানিয়া এক পরিবেশ

চারিধারের দৃশ্য অবলোকন করতে করতে কখন যে মারওয়ানের হাতের ফাঁকে নিজের হাত গলিয়ে দিয়েছে খেয়াল নেই নিশাতের। মারওয়ান নিজের হাতের ভাঁজে মুঠোকৃত হাতটির দিকে চেয়ে নিশাতের দিকে শান্ত দৃষ্টি ফেললো। নিশাত মগ্ন প্রকৃতি দেখায়। মারওয়ান নিকাবে আবৃত মুখটির দিকে দৃষ্টি মেলে বুঝলো ভিতরে রয়েছে আদুরে উচ্ছ্বসিত একখানা মুখশ্রী। সকালের মিষ্টি রোদ যেন নিশাতের চক্ষুদ্বয়কে আরও উজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত করে তুলেছে। নাহওয়ান বাবার কোলে বসে একটু পর পর বলে চলেছে,

“উইত্তো গাচ, উইত্তো পাকি, উইত্তো পুল।”
নিশাত অদূরে একটা পাখি দেখিয়ে নাহওয়ানকে বললো,
“নাহওয়ান দেখো বুলবুলি পাখি।”
নাহওয়ান মাকে অনুসরণ করে হাত উঁচিয়ে বললো,
“বাবা বাবা বুলবুল পাকি।”
মারওয়ান আশেপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে বললো,
“আমি দেখেছি, তুই দেখ গোল আলু।”

নাহওয়ান হাত তালি দিচ্ছে আর নিজের আনন্দ জানান দিচ্ছে। একটু পর মারওয়ান ছেলেকে কাঁধে তুলে নিলো। নাহওয়ান ফিচ ফিচ করে হেঁসে দিলো। তার হাসির ধ্বনি চারপাশে মুখরিত হচ্ছে। ফৌজিয়া নিশাত অবচেতনে তার কাঠখোট্টা অর্ধাঙ্গের ডান হাত জড়িয়ে সেই নির্মল, নিষ্পাপ হাসি শ্রবণ করছে।
“ভোজন বিলাস” হোটেলের তিন চেয়ার দখল করে আছে মারওয়ান, নিশাত আর নাহওয়ান। একটি চেয়ার ফাঁকা যেটায় নিশাত ব্যাগ রেখেছে। নাহওয়ান বাবার কোলে বসে পাশের চেয়ারে পা ছড়িয়ে দিয়েছে। নিশাত মারওয়ানের মুখোমুখি চেয়ারে বসা। তার অস্বস্তি হচ্ছে এত মানুষের ভিড়ে। হোটেলটা ছোট তবে মানুষে গিজগিজ করছে। সকালের এই সময়টায় কর্মব্যস্ত মানুষের ভিড় লেগে থাকে হোটেলটায়।

তাছাড়া এই হোটেলের প্রত্যেকটা আইটেম অনেক সুস্বাদু হয়। দামও কম থাকে তাই সাধ্যের মধ্যে মজার মজার আইটেমের স্বাদ নিতে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত সকলে ভিড় জমায়। মারওয়ান এখানে প্রায়ই খায় তাই এই হোটেলেই এনেছে নিশাতকে। ছেলেকে নিয়ে আগেও অনেকবার আসা হয়েছে তবে নিশাতকে নিয়ে এই প্রথম। নিশাত আশপাশ দেখে হাসফাঁস করছে। মারওয়ান তীক্ষ্ণ নজরে নিশাতের অস্বস্তি, বার বার এদিক ওদিক চাওয়া পর্যবেক্ষণ করলো। আচমকা বললো,

“লিলিপুট, আমার পাশে এসে বসো।”
নিশাত চমকে মারওয়ানের দিকে চাইলো। মারওয়ান ছেলেকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে নিশাতকে ভিতরে ঢোকার জন্য ইশারা করলো। নিশাত ব্যাগ নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো। সমস্যা হলো নিশাতের বড় ভ্যানিটি ব্যাগটায়। এতক্ষণ তো সেটা নিশাতের পাশের খালি চেয়ারটায় রেখেছিল এখন কোথায় রাখবে এই ভেবে উদ্বিগ্ন হলো। মারওয়ান পাশে বসে বললো,
“ব্যাগটা টেবিলের উপরে কোণায় রাখো।”
নিশাত রাখলো। মারওয়ান খাবারের অর্ডার দিয়ে এলো। নিশাত ঘামছে প্রচুর। এত মানুষের ভিড়ে কমফোর্ট ফিল করছে না সে। মনে হচ্ছে তার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। উপরন্তু মানুষের ভিড়ে চারপাশ উত্তপ্ত লাগছে। মারওয়ান পাশেই ছেলের সাথে দুষ্টুমি করছে।

“তোকে কিছু খাওয়াবো না পান্ডা।”
নাহওয়ান বাবার কোলে পা দুলাতে দুলাতে বললো,
“ইননা, আমি কাবো।”
মারওয়ান ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“কি খাবি?”
“চিপ।”
“তোর জন্য এই সকাল সকাল চিপস বানিয়েছে কে?”
নাহওয়ান মারওয়ানের দিকে আঙুল তাক করে বললো,
“টুমি।”
“এহ্ ওনার জন্য চিপস বানাবো আমি? রাণী ভিক্টোরিয়ার আওলাদ ভাবিস নিজেকে?”
নাহওয়ান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। নিশাত ফিক করে হেঁসে দিলো। যা শুধু মারওয়ানের কর্ণগোচর হলো। মারওয়ান ঘাড় ফিরিয়ে চাইলো নিশাতের দিকে। নিশাত নিকাবের আড়ালে মুচকি মুচকি হাসছে। মারওয়ান কপাল কুঁচকে বললো,

“তুমি হাসছো কেন?”
“কে যেন ছেলেকে ব্রিটিশের নাতি বলে? ভিক্টোরিয়া কিন্তু ব্রিটিশ রাণী।”
মারওয়ানের কপাল আরও কুঞ্চিত হলো। ঠিকই তো, এটা তো খেয়াল ছিল না তার। এই মা, ছেলে মহাচালাক। ভাবা যায়, তাকে ঘোল খাওয়াচ্ছে। এরমধ্যেই নাস্তা এসে হাজির। মারওয়ান তার আর নিশাতের জন্য পরোটা, ডাল, ভাজি আর গরুর গোশত অর্ডার করেছিল। আর নাহওয়ানের জন্য তেল ছাড়া রুটি আর ডিম অর্ডার করেছে। নিশাতের দিকে পরোটার প্লেট আর তরকারির বাটি এগিয়ে দিয়ে নিজে খাওয়া শুরু করলো।
নিশাত নিকাব একটু উঠিয়ে বিসমিল্লাহ বলে ডাল আর গোশত ভুনায় পরোটা ডুবিয়ে মুখে পুড়লো। উম পুরোই অমৃত। মুখে দেয়ার সাথে সাথে চোখ বন্ধ হয়ে গেলো তার। মারওয়ান ছেলেকে খাইয়ে নিজেও খেলো। নিশাতের খেতে বেশ সময় লাগলো। নিকাব পড়ে খাচ্ছে দেখে সময় লাগলো তার। খাওয়া শেষে মারওয়ান বিল মিটিয়ে দিলো। নিশাত বুঝলো পকেট ভারী আজ। নিশ্চয়ই টাকা পাঠিয়েছেন শ্বশুর আব্বা। ছেলেকে আদর করে নিশাত স্কুলে চলে গেলো। আজকে তার মনটা ফুরফুরে লাগছে।

গত দুইদিন ধরে উর্মি ভুঁইয়া মানহার সাথে রাগারাগি করছেন। কিছু থেকে কিছু হলেই মেজাজ দেখাচ্ছেন। মানহা এই প্রথম উর্মি ভুঁইয়াকে ভিন্নরূপে দেখলো। তাকে যখন ধমক দিচ্ছিলো তখন তার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। এই বাড়িতে যাকে এত্তো আপন ভাবতো সেই যখন বদলে যায় তখন এর থেকে কষ্টের বোধহয় আর কিছু হয়না। সামান্য রান্না, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে উর্মি ভুঁইয়া কথা শুনিয়েছেন সেটা ভাবলেই কেমন গা শিউরে উঠছে তার। তাহলে কি এতদিন যেই রূপ দেখেছে সেটা ছিল মুখোশ?

যত পুরোনো হবে ততই কি খোলস পাল্টে যাবে সবার। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি নির্যাতন করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় এটা কি তার বেলাতেও বাস্তবায়ন হবে? তার কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে। আগের মানহা হলে বোধহয় প্যানিক অ্যাটাক করে সেন্সলেস হয়ে যেতো। তবে এখনকার মানহা কথায় কথায় প্যানিক অ্যাটাক করেনা তাই এই কষ্ট হজম করা জানতে হবে তার। শ্বশুরবাড়ি তো এমনই। এই বাড়িতে তার আপন কেউ নেই। সবাই স্বার্থের জন্য তাকে ব্যবহার করছে। ফ্লাফিকে নিয়ে মন খারাপ করে বারান্দায় বসে বসে এসবই ভেবে চলছে সে।
ইহাব ক্লান্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো। আশেপাশে মানহাকে না দেখে ডাক দিলো। মানহা ডাক শুনে রুমে আসলো। তার চোখ মুখ ফোলা। কান্নার ফল। ইহাব ভ্রু কুঁচকে বললো,

“কি হয়েছে?”
“কিছু না।”
ইহাব এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
“চোখ মুখ তো ভিন্ন কথা বলছে।”
মানহা কোনো প্রতিউত্তর না করে মুখ শক্ত করে রাখলো। ইহাব মানহার গালে, কপালে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে বললো,
“কই জ্বর তো আসেনি। তাহলে মন খারাপ কেন?”
“মন খারাপ নয়। আমি ঠিক আছি।”
বলেই পাশকাটিয়ে চলে গেলো। ইহাব কপাল কুঁচকে বললো,

“ওহে মাহাবুব দুহিতা,
মন কেন বিষণ্ন তোমার?
গভীর নেত্রের তনয়া,
হৃদয় করেছো তোলপাড়
একটুখানি হেঁসে আমার
হিয়া করো চুরমার।”
মানহা অবাক হয়ে ইহাবের দিকে চাইলো। ইহাব কোমরে দুই হাত রেখে মানহার দিকে এক ভ্রু উঁচিয়ে চেয়ে আছে। মানহা থতমত খেয়ে বললো,

“ফ্রেশ হন। খাবার দিচ্ছি।”
বলেই রুম থেকে বেরুতে নিলে ইহাব বললো,
“আরে কবিতার উত্তরে তো কিছু বলে যাও পাষাণ নারী।”
মানহা কিছু না বলে দ্রুত প্রস্থান করলো। বেচারি শরম পেয়েছে। তাই তো পালিয়ে গেলো। ইহাব মানহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললো,
“একবার তোমাকে পাই, ধরবো জড়াই।”

ইমতিয়াজ ভুঁইয়া স্ত্রীকে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছেন না। উর্মি ভুঁইয়া পাগলামি করছেন। সবার সাথেই মেজাজ দেখাচ্ছেন। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া মহা ফ্যাসাদে পড়েছেন। হঠাৎ আবার এই আচরণের মানে বুঝতে পারছেন না তিনি। উর্মি ভুঁইয়া শক্ত গলায় বললেন,
“এখান থেকে যান। আমাকে একা থাকতে দিন। ভালো লাগছে না কিছু।”
ইমতিয়াজ ভুঁইয়া বললেন,
“ওষুধটা খাও তারপর যাচ্ছি।”
“বললাম না আমি এখন ওষুধ খাবো না। পেটে একটাও মানুষ ধরিনি। সব কয়টা বজ্জাত হয়েছে। মায়ের কথা শোনে না। এই পরিবারে আমি এখনো তো ওই দুইটা শত্রুর জন্যই পড়ে আছি নাহলে এই সংসারকে লাথি মারে কবে চলে যেতাম। আমার কথা অমান্য করে কত বড় বেয়াদব।”

ইমতিয়াজ ভুঁইয়া কপাল কুঁচকে বললেন,
“তুমি কি তোমার ভাইদের সাথে আবারও কথা বলেছো?”
উর্মি ভুঁইয়া তেজ দেখিয়ে বললেন,
“হ্যাঁ বলেছি তো কি হয়েছে? ওর মামা ওকে কতবার যেতে বলেছে অথচ সে নাকি ফোনই ওঠায় না। আমি বলে দেয়ার পরেও কতবড় অবাধ্য সে! বউ আসার পর দিনদিন উচ্ছন্নে যাচ্ছে সে।”
ইমতিয়াজ ভুঁইয়া বললেন,

“কিন্তু তোমার ছেলে তো আগেও এমন ছিল। পরের মেয়ের দোষ টানছো কেন?”
“কিহ আমি দোষ টানছি? ছেলের বউয়ের পক্ষ নিচ্ছেন যে হঠাৎ? ওদেরটা চোখে পড়ে না, আমারটাই চোখে পড়ছে আপনার? পড়বেই তো। নিজের সন্তানের সব দোষ মাফ আর স্ত্রীর বেলায় লাফ?”
যত্তসব আজগুবি কথাবার্তা। কোথায় লাফ দিয়েছে সে। মাথার এন্টেনা সব ছিঁড়ে গেছে মনে হয়। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া আর কথা না বাড়িয়ে উর্মি ভুঁইয়াকে জোর করে ওষুধ খাইয়ে দিলেন। বকবক করতে করতে কিছুক্ষণের মধ্যেই উর্মি ভুঁইয়া ঘুমে ঢুলে পড়লেন। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিলেন। তিনি সামনের দিনগুলো ভেবে শঙ্কিত।

হেড রকিং চেয়ারে দুলছেন আর চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। সামনে বসে আছে জিনান আদহাম, নেওয়াজ শাবীর, মুনতাজির জায়েদ। হেড মুনতাজিরের উদ্দেশ্যে বললেন,
“শরীর কেমন তোমার?”
“জ্বি মোটামুটি ভালো।”
“নিজের যত্ন নিও। AC এর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে সবার?”
জিনান, নেওয়াজ উভয়ই মাথা নাড়ালো। হেড দু হাত সামনে এনে বললেন,
“পারফরমেন্স কেমন?”
নেওয়াজ জোর দিয়ে বললো,

“আউটস্ট্যান্ডিং অ্যান্ড আনবিলিভ্যাবল। আমরা এতটাও আশা করিনি।”
হেড মুখে সন্তুষ্টির রেখা ফুটে উঠলো। জিনানকে কোনো কথা বলতে না দেখে বললেন,
“What’s your opinion, Adham?” (তোমার মতামত কি আদহাম?)
জিনান ধ্যান চ্যুত হলো। গলা পরিষ্কার করে হেডের দিকে গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“এক্সিলেন্ট স্কিল। His performance is excellent.”
হেড হালকা হাসলো। মুনতাজিরের দিকে চেয়ে বললো,
“তুমি তো ছুটিতে ছিলে তাই তার সাথে সাক্ষাৎ হয়নি একটু পরে আসবে দেখা করে নিও।”
মুনতাজির মুখ টানটান করে বললো,
“আমি তো তাকে চিনি স্যার। মোটামুটি পরিচয় আছে। তাই তার সম্পর্কে একটু হলেও ধারণা আছে।”
হেড মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললেন,

“হ্যাঁ তাইতো।”
হঠাৎ কিছু মনে করার ভঙ্গিতে বললেন,
“তোমাদের তো বলাই হয়নি, আরেকজন বিশেষ এজেন্টও আজকে অ্যাটেন্ড করবে। সেও চমৎকার দক্ষতা সম্পন্ন। আমার পছন্দের। আর কিলার জাদকে পুলিশ কাস্টডিতে পাঠাতে হবে আজ।”
সবার মুখে উদ্বেগ দেখা দিলো। গ্লাস ডোরে নকের শব্দ হলো। হেড আসার সম্মতি দিলেন। ডোর টেনে প্রবেশ করলো কঠোর মুখ ভঙ্গির সুঠাম দেহ ও বলিষ্ঠ গড়নের একজন। মাথায় হ্যাট পরনে লং কোট। হেড দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা জানালেন। হেডের সাথে সাথে বাকিরাও দাঁড়িয়ে গেলো।
“আরে তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম। কতদিন পর আমাদের ডিপার্টমেন্টে তুমি। ওয়েলকাম ওয়েলকাম মিস্টার মার্ভ জেন।”

মার্ভ জেন পকেটে হাত ঢুকিয়ে হেঁটে এগিয়ে এসে হেডের সাথে করমর্দন করে হালকা রসিকতার স্বরে বললো,
“Thanks Sir. Maybe You have gained weight.” (ধন্যবাদ স্যার। মনে হচ্ছে আপনার ওজন কিছুটা বেড়েছে।)
হেড উচ্চস্বরে হেঁসে দিয়ে বললেন,
“আসলেই??”
মার্ভ জেন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। এদিকে জিনান আদহাম, নেওয়াজ শাবীর, মুনতাজির জায়েদ তিনজনের মুখই গম্ভীর। দেখে মনে হবে কেউ তাদের মুখে বিছুটি পাতা লাগিয়ে দিয়েছে। হেডকে এই প্রথম এত হাসতে দেখছে তারা। মনে হচ্ছে পার্টনার পেয়েছে তার। অথচ তাদের বেলায় মুখটা সবসময় গম্ভীর করে রাখবে। নেওয়াজ মুখ লটকে বললো,

“সেদিন আমিও তো বলেছিলাম স্যার আপনি সামান্য মোটা হয়ে গেছেন ওইদিন মুখটাকে কেমন করে ফেলেছিল দেখেছিলেন না আপনারা? তার সুঠাম দেহের প্রতি নাকি বদনজর দিচ্ছি অথচ আজকে তার বিশেষ এজেন্ট এসে ওজন বেড়ে গেছে বলায় কি খুশি! মানে কুচ ভি।”

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৪১

জিনানও খেয়াল করেছে বিষয়টা। মুনতাজির জায়েদ তো একেবারই সাইলেন্ট হয়ে গেছে। একটা টু শব্দও করছে না। মার্ভ জেন মুখ গম্ভীর রেখেই কিছু বলে চলেছে। সেটার প্রেক্ষিতে হেড জোরে জোরে হাসছেন। তার মনে হচ্ছে কানের পাশ দিয়ে সাঁই সাঁই করে বুলেট যাচ্ছে। জিনান মুনতাজিরকে খোঁচা দিয়ে বললো,
“ব্যাপারটা কি বলুন তো মুনতাজির সাহেব?”
মুনতাজির চোখ তীক্ষ্ণ করে রসকষহীন গলায় বললো,
“স্পেশাল ট্রিটমেন্ট ফর স্পেশাল এজেন্ট।”

ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৪৩