ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৪১
তাজরীন ফাতিহা
কখনো কখনো ধরিত্রীতে এমন কিছু অতিপ্রাকৃতিক কিংবা অভাবনীয় ঘটনা ঘটে যার কোনো ব্যাখ্যা মানুষ্যজাতির কাছে থাকে না। সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টির জন্য এই ভূলোক একটা জটিল ধাঁধার স্থান হিসেবে সৃজন করেছেন। এখানে অনেক কিছুরই কোনো বিশ্লেষণ হয়না, হতে পারেনা। বিজ্ঞানও এর সঠিক সমাধান বের করতে পারেনা। সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে প্রতিনিয়ত এমন রহস্যময় স্থান, অমীমাংসিত রহস্য এবং ঘটনার সাথে আবাস গড়েই প্রাণীকুল টিকে আছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। সৃষ্টির বিনাশ লগ্নেও কি থাকবে কোনো জটিল রহস্য?
ঘুমের মধ্যে ঢুকরে কাঁদছে নিশাত। শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠছে তার। ছটফট করছে সে। আচমকা ঘুম ভেঙে গেলে হাঁপাতে হাঁপাতে লাফিয়ে উঠে বসলো। তড়িৎ আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজলো কাউকে। কিন্তু কেউ নেই। পুরো রুম নিস্তব্দ। চারিপাশে পিনপন নীরবতা। নিশাতের আত্মা লাফাচ্ছে যেন। চোখের পাপড়ি ভেজা। তার বুক ধড়ফড় করছে। শ্বাস টানতে পারছে না। চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। নিশাত কোনমতেই নিজেকে থামাতে পারছে না। দু হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। বুকটা হাপরের মতো ওঠানামা করছে তার। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
একটু ধাতস্থ হয়ে হুড়মুড় করে পাশের রুমে গেলো। পুরো রুম অন্ধকার। চোখে ঝাপসা দেখছে সে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ব্যথা করছে। হার্ট দ্রুত লাফাচ্ছে। হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে রুমের লাইট জ্বালালো। চোখে লাইট পড়তেই তীব্র জ্বলন শুরু হলো। বিছানায় তাকিয়ে স্বস্তির দম নিলো। বাবা ছেলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে। ছেলেকে কোলের মধ্যে টেনে মারওয়ান আজাদ ঘুমাচ্ছে। নিশাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো তিনটা বাজে। তাহাজ্জুদের সময় হয়ে গেছে। কাঁপা শরীরে ওযু করে জায়নামাজ বিছিয়ে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে দাঁড়ালো। কান্নার দমকে সূরা, কেরাত, দোয়া কোনকিছুই ঠিকমতো পড়তে পারছে না সে। মহান রব তাকে কিসের সংকেত দিচ্ছেন বারবার। সে ভাবতে পারছে না কিছু। শুধু কাঁদছে। বোবা কান্না যাকে বলে। মোনাজাতও আজ ঠিকমতো করতে পারলো না।
“আল্লাহ তুমি আমাকে এ কোন ইশারা দিচ্ছো? ইস্তেখারার রেজাল্ট যদি এটা হয় তাহলে আমি এটা চাইনা মাবুদ। তুমি রক্ষা করো আমার পরিবারকে। আমাকে পথ দেখাও ইয়া আল্লাহ। আমার স্বামী, সন্তানকে সুস্থ রাখো।”
এটুকু বলে হাত তুলে রেখে আবারও বুক ভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়লো নিশাত। তার চারপাশ ভূমিকম্পের মতো দুলছে।
কোনোমতে জায়নামাজ রেখে আবারও পাশের রুমে গেলো সে। মারওয়ান চিৎ হয়ে শোয়া। মাথার নিচে এক হাত রেখে ভ্রু বেঁকিয়ে ঘুমাচ্ছে সে। আরামের গভীর আলিঙ্গনে ডুবে আছে তার নিদ্রা। নিশাত কেঁদে উঠে হুমড়ি খেয়ে তার বুকের উপর মাথা ঠেকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। নিশাতের শরীর দোলায় মারওয়ান নড়েচড়ে উঠলো। কপাল কুঁচকে আশপাশ হাতড়ালো। বুকের উপর ভারী কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করায় ঘুম ভেঙে গেলো তার। চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলো তার বুকের উপর কিছু কাঁপছে। বিরক্তিকর দৃষ্টি মেলে বললো,
“এতো রাতে কার শরীরে এতো কারেন্ট যে কাঁপাকাঁপি করার জন্য আমার বুকটাকে বেছে নিয়েছে?”
নিশাত কান্না থামিয়ে বুকের মধ্যে মাথা আরও গেড়ে দিলো। মারওয়ান চ্যাহ শব্দ করে বললো,
“বুকটা কি ফেড়ে দেবো যেন শরীর সুদ্ধ আমার ভিতরে ঢুকে যেতে পারো?”
নিশাত কথা না বলে কাঁপতে লাগলো। মারওয়ানের ঘুম ভাঙায় মারাত্মক বিরক্ত লাগছে। স্বাভাবিক সেটা। ঘুমের কোনো মানুষকে ওঠালে যে কেউ বিরক্ত হয়। সে কর্কশ কণ্ঠে বললো,
“আশ্চর্য কিছু না বলে মৃগী রোগীর মতো করছো কেন?”
নিশাত প্রতিউত্তর না করে মারওয়ানের গেঞ্জি ভেজাতে লাগলো। মারওয়ান বুকের কাছে ভেজা অনুভূত হওয়ায় বললো,
“আরে হয়েছেটা কি? রাত তিনটায় পতিভক্তি দেখাচ্ছো কেন? পতিব্রতা হয়েছো ভালো কথা কিন্তু আমাকে ডিস্টার্ব করছো কেন?”
নিশাত হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে মাথা ব্যথা বানিয়ে ফেলেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। শ্বাস টানতে পারছে না। মনে হচ্ছে বুকে ভারী কিছু বিঁধে আছে। নিশাতের কান্না থামলেও হেঁচকি বন্ধ হয়নি। অতিরিক্ত হেঁচকির ফলে শ্বাস নিতে পারছে না সে। কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। নিশাতের এমনিতেও শ্বাসকষ্ট আছে। মারওয়ান নিশাতকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে দেখে নিশাতকে নিয়ে উঠে বসলো। নিশাত এখনো মারওয়ানের বুকে মাথা দিয়ে আছে। মারওয়ান নিশাতকে বুক থেকে সরাতে চাইলেও নিশাত সরলো না। জিদ নিয়ে মাথা দিয়ে রাখলো। মারওয়ান বললো,
“কি হয়েছে বলবে তো? শ্বাস টানতে পারছো না তবুও জিদ দেখাচ্ছো কেন? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো নাকি কেউ কিছু বলেছে?”
নিশাত স্বপ্নের কথা শুনে আবারও মারওয়ানের বুকের মধ্যে মুখ চেপে ধরে অশ্রু ঝড়াতে লাগলো। মারওয়ান মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। নিশাত একটু থেমে মাথা উঠিয়ে মারওয়ানের চোখে চোখ রেখে ধীর কণ্ঠে বলতে লাগলো,
“আপনি কি খারাপ কোনো কাজে যুক্ত? আমাকে একটু বলুন প্লিজ? আপনি কি আসলেই এমন নাকি আপনার আরেকটা চরিত্র আছে?”
মারওয়ান থম মেরে গেলো। চোয়াল শক্ত করে নিশাতের দিকে তাকালো। নিশাত হেঁচকি তুলে কোনরকম শ্বাস নিয়ে বললো,
“আল্লাহর কসম আপনি খারাপ কোনো কাজে জড়াবেন না। যদি জড়িয়ে থাকেন ফিরে আসুন প্লিজ। আমার নাহওয়ান আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।”
মারওয়ান ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কিসব আবোল তাবোল কথা বলছো এই রাত বিরেতে? মাথা ঠিক আছে?”
নিশাত মারওয়ানের বুকে মাথা রেখে বললো,
“আমি কি বলছি নিজেও জানি না। আমাকে একটু ঘুম পাড়িয়ে দিন। আমার খুব কস্ট হচ্ছে।”
মারওয়ান মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
“আমার সাধের পাকা ঘুমটা ভাঙানোতে আমারও কষ্ট হচ্ছে।”
নিশাত চোখ বুজে অস্ফোস্ট স্বরে বললো,
“আপনার কষ্টের চেয়ে আমার কষ্ট হাজার গুণ বেশি। ঘুম পাড়িয়ে দিন। দয়া করে আমি ঘুমিয়ে গেলে আপনার বুক থেকে আমাকে ওঠাবেন না।”
কাঁপতে কাঁপতে কথাগুলো বলে মারওয়ানের বুকে পাখির বাচ্চার মতো পড়ে রইলো। মারওয়ান মুখ গম্ভীর করে ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখেই নিশাতের দিকে চেয়ে আছে। আসলে নিশাতের উল্টোপাল্টা কথার আগামাথা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে।
তোমাকে চাই আমি আরও কাছে
তোমাকে বলার আরও কথা আছে
আমি বলতে পারিনা মুখে তওবা তওবা
দিলে জখম হলো উহু আহা..
ইহাব রান্নাঘরে এসেই মানহাকে দেখে গানটা গেয়ে উঠলো। মানহা মাথায় কাপড় দিয়ে কাজ করছিল। গান শেষ হতেই ইমতিয়াজ ভুঁইয়া রান্নাঘরের ভিতর থেকে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠলেন। ইহাব বাবাকে রান্নাঘরে দেখে কথা বলতে ভুলে গেলো। মানহা তো লজ্জায় শেষ। একদিন শাশুরির সামনে আজকে আবার শ্বশুরের সামনে। ইশ কি লজ্জাটায়ই না পড়তে হলো! উর্মি ভুঁইয়া অসুস্থ থাকায় ইমতিয়াজ ভুঁইয়া আজকে স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিতে রান্নাঘরে ঢুকেছেন স্পেশাল কিছু রাঁধতে। মানহাকে ধমকে ধমকে সব কাজ করাচ্ছিলেন। নিজেও টুকটাক হেল্প করছিলেন। কাজের থেকে বেশি মুখ চলছিল তার। কিছুক্ষণের জন্য চুপ হতেই ছেলের গান শুনে নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। ইহাব চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,
“তোমার এখানে কি পাপা? ভেবেছিলাম মম রান্নাঘরে তাই তার জন্য গাইলাম এখন দেখি সেই নাই। খুবই দুঃখজনক।”
ইমতিয়াজ ভুঁইয়া গলা পরিষ্কার করে বললেন,
“মায়ের জন্য এই গান?”
ইহাব থতমত খেয়ে বললো,
“হ্যাঁ, তো?”
“কিছু না। কিম্ভুতকিমাকার!”
ইহাব কোনরকম রান্নাঘর থেকে কেটে পড়ে বুকে থু দিয়ে বললো,
“আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। বাবার আজই ওখানে থাকতে হলো। ধুরু ধুরু মুডের দফারফা!!”
ইহাব চলে গেলে মানহা ঘোমটা আরেকটু টেনে কাজ করতে লাগলো। লোকটার জন্য শ্বশুরের সামনে কি বিচ্ছিরি একটা অবস্থা হলো। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া ধমকে বললেন,
“এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন? স্বামী বাড়িতে আসার সাথে সাথে তার পিছু পিছু যেতে হয় এটাও শিখিয়ে দিতে হবে? শাশুড়ির সাথে থেকে এইসব শিখেছো? মহিলা নিজেও ত্যাদড় ছিল এখন ছেলের বউকেও ত্যাদড় বানাচ্ছে।”
মানহা শ্বশুরের কথা শুনে কোনরকমে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তার এত লজ্জা লাগছিল। ভালোই হয়েছে শ্বশুর নিজেই তাকে সরিয়ে দিয়েছেন নাহলে আর কিছুক্ষণ থাকলে লজ্জাতেই মরে যেতো সে।
তোমাকে চাই আমি আরও কাছে
তোমাকে বলার আরও কথা আছে
বলতে পারিনা মুখে তওবা তওবা
দিলে জখম হলো উহু আহা..
উর্মি ভুঁইয়া বিছানায় শায়িত। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া মুখে গান শুনে ভ্রু ভাঁজ করলো। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া সেই গান বারবার আওড়াচ্ছেন আর উর্মি ভুঁইয়াকে চোখ মারছেন। উর্মি ভুঁইয়া তা দেখে বললেন,
“বুড়ো বয়সে ভিমরতি ধরেছে?”
“না প্রেম ধরেছে। আসো উর্মিমালা প্রেম করি।”
“আমার শরীরে এত বিদ্যুৎ নেই। আপনার শরীরে বেশি বিদ্যুৎ থাকলে পারমাণবিক কেন্দ্রে দান করুন। দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি কমবে।”
বলেই চোখ বুজলো। কয়েকদিন ধরে মাথা ব্যথাটা আবারও বেড়েছে। ভালো লাগছে না কিছুই। খাবারও বিস্বাদ ঠেকছে। শুয়ে শুয়েই দিন পার করছেন উর্মি ভুঁইয়া। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া স্ত্রীর কথায় হতাশ হয়ে বললেন,
“তুমি সবসময় তিতা রসকষহীন। আমার ফিলিংসের দফারফা করে দাও অলওয়েজ। হতাশ চরম হতাশ!”
মাঝরাতে শুনশান রাস্তায় দৌড়াচ্ছে কেউ একজন। পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে ইন্টিলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের সদস্যরা। হঠাৎ সামনের লোকটি ঘুরে গুলি তাক করলো নেওয়াজের দিকে। ইন্টিলিজেন্স গ্রুপের সবাই দাঁড়িয়ে গেলো। সামনের লোকটি গুলি তাক করে বললো,
“এক পা এগুলে শ্যুট করে দেবো। ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকা হয় যেন।”
কথা শেষ করে পা বরাবর গুলি ছুড়তে ছুড়তে দৌঁড়াতে লাগলো সামনের লোকটি। হঠাৎ সামনে কালো গাড়ি এসে পড়ায় সে দ্রুত উঠে বসলো গাড়িতে। গাড়ির পিছে পিছে সকল এজেন্ট ছুটতে লাগলো। কিন্তু হাতের নাগালে পেলো না। জিনান আদহাম রাস্তায় পা দিয়ে বারি মেরে গাড়িটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“শিট শিট! আজকেও হাত থেকে পালালো ওই কিলার জাদ। This guy is absolutely rubbish. He’s a complete waste of time.”
তার কথা শেষ হতেই গুলির আওয়াজ হলো। রাতের ধ্বংসাত্মক নিরবতা ছাপিয়ে গুলির আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। ঠিক তখনই সামনের চলন্ত গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেলো। ডিপার্টমেন্টের সবাই তা দেখে আবারও দৌঁড়াতে লাগলো। সেখানে গিয়ে দেখলো সম্পূর্ণ কালো লং কোটে আবৃত হুডি পড়া একজন যেই লোকটাকে তারা ধাওয়া করছিল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বন্দুক হাতে নিয়ে। তাদের বুঝতে বাকি রইলো না একটু আগে সেই গাড়ির সবগুলো চাকা পাংচার করে দিয়েছে গুলি করে। সামনের লোকটি ও তার লোকদের পায়েও গুলি করে রাস্তায় বসিয়ে রেখেছে। আবছা গূঢ় কণ্ঠে পিস্তল কপালে ঠেকিয়ে বললো,
“কিলার আজাদ!”
সামনের লোকটি দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
“কে তুই?”
“তোর যম।”
কিলার জাদ আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে ভয়ংকরভাবে হাসতে লাগলো। তারপর হাসি থামিয়ে বললো,
“যে নিজেকে আড়াল করে রাখে সে নাকি এই কিলার জাদের যম। হাস্যকর!”
কালো কাপড়ে আবৃত লোকটি হাঁটু ভাঁজ করে বসে বললো,
“আড়াল থেকে বেরুলে যদি প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলিস তাহলে ব্যাপারটা বাজে লাগবে না?”
“এই কিলার জাদ কিছুতে ভয় পায়না। প্যান্ট ভেজানো তো দূরের কথা।”
কালো আবরণের লোকটি পিস্তল কপালে ঘষতে ঘষতে বললো,
“সত্যি..!”
“ইয়েস। লুকিয়ে লুকিয়ে ফাঁপর আর কত দিবি? নিজের পরিচয় দে? কে তুই?”
কালো কাপড়ে আবৃত ব্যক্তিটি উঠে দাঁড়ালো। নিজের হুডি মাথা থেকে সরিয়ে রহস্যময় কন্ঠে বলে উঠলো,
“সাইফার। আজারাক সাইফার।”
কিলার জাদ চোখ বড় বড় করে তাকালো। তার শরীরে কারেন্টের ঝটকা লেগেছে। ইন্টিলিজেন্স গ্রুপের সদস্যরাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই সেই বিশেষ এজেন্ট। আজারাক সাইফার কিলার জাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো,
“You came to play, I built the game.
(তুই খেলতে এসেছিস আর আমি খেলাটা বানাই।)”
কিলার জাদ ক্ষেপা বাঘের মতো গর্জন করে বললো,
“তোকে আমি ছাড়বো না আজারাকের বাচ্চা। তোকে শেষ না করা পর্যন্ত আমার বিনাশ হতে পারেনা।”
আজারাক সাইফার নিজের লং কোটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,
“অথচ আজ তোর বিনাশ হয়ে গেছে। কতদিন আর বাইরে ঘুরবি বল? এবার একটু নিজের আসল ঠিকানায় চল। অনেক আপ্যায়ন করবো প্রমিস।”
বলেই ইন্টিলিজেন্স সদস্যদের চোখ দিয়ে ইশারা করলো। তারা চোখের ইশারা বুঝে সবাইকে গাড়িতে উঠালো। কিলার জাদকে ধরতে এলেই ছিটকে সরে গেলো সে। আস্তে আস্তে নিজেই খোঁড়া পা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর আজারাক সাইফারের দিকে বাজের দৃষ্টি ফেললো। আজারাক সাইফার ঠোঁট বেঁকিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে। জিনান আদহাম তার পাশেই দাঁড়ানো। সবাইকে গাড়িতে ওঠানো হলে আজারাক সাইফার নিজের Glock 19 পিস্তলটি কোটে ঢুকিয়ে ফেললো। জিনান হাত বাড়িয়ে বললো,
“পারফেক্ট সময়ে এসেছেন। I am Zinan Adham.”
আজারাক সাইফার হাত মিলিয়ে বললো,
“I’m Azarak Cipher.”
“কঠিন নাম। আপনাকে সাইফার সাহেব বলে ডাকলে মাইন্ড করবেন?”
“No.”
ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৪০
নেওয়াজ শাবীর নিজেও হাত মিলিয়ে হালকা ঠোঁট প্রসারিত করে বললো,
“আপনার ডেডিকেশন কিন্তু চমৎকার। খুবই ঠাণ্ডা মাথার খিলাড়ি আপনি।”
আজারাক সাইফার ঠোঁট প্রসারিত করে রহস্যময় ভঙ্গিতে হাসলো।