শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৪৭

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৪৭
নূরজাহান আক্তার আলো

সারারাত গোপনে কাজ সেরে সকালবেলা ফিরেছে আজম আর সায়ন।প্ল্যান সাকসেস হওয়ার আনন্দে একটু আধটু নেশাও করেছে তারা। তবে হাঁটাচলা ভালো করে না খেয়াল করলে সেটা বোঝার উপায় নেই। এখন তাদের প্ল্যান সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমাবে তারপর সন্ধ্যায় উঠে ইয়াসিরের ডেরায় আরেকবার হামলা চালাবে। গতরাতে যে ক্ষতি করেছে এতক্ষণে জায়গা মতো খবর টবর চলে গেছে নিশ্চয়ই। এখন তেহরানে বসে বসে ইয়াসিক মনের দুঃখে একবার কপাল চাপড়াক আরেকবার নাহয় পেছন চাপড়াক।

এসব নিয়েই কথা বলতে বলতে অফিসে ঢুকে দেখে স্পেশাল চেয়ারে রাজকীয় ভঙ্গিমায় শুদ্ধ বসে আছে। তার পরনে গতদিনের সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট। শীতলদের রেখে এখানেই এসেছে বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কেন এসেছে? সে আসতে বলেছে? তার কি কেউ আছে এ পৃথিবীতে? নেই, নেই তো, থাকলে কী আর কেউ বাড়ি থেকে তাড়াতে পারত? তারা জানে না সে বাড়ি ছেড়ে থাকতে পারে না? আদৌ কখনো থেকেছে? মায়ের হাতের খাবার না খেলে ওর পেট ভরে না। সারা দুনিয়া খেয়ে নিলেও মায়ের হাতের ডাল-ভাত না খেলে মনে হয় পৃথিবী ক্ষুধার রাজ্য। এক রাত কেটে গেল তার ভাই-বোনরা কই? কানের কাছে তারা কিচিরমিচির করছে না কেন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নানান আবদার নিয়ে ছুটে আসছে নাই বা কেন? শীতলটাও তো একবার ফোন করল না, বোনের ছায়ায় থেকে ওই বেয়াদবটাও আরো বেয়াদব হয়ে গেছে। শীতলের কথা মনে হতেই সায়ন শুদ্ধের মুখের দিকে তাকানোর আর সাহস পেল না। এক পাষাণ, নিষ্ঠুর মানবীর জন্য শুদ্ধ-শীতলের বিয়ে আঁটকে গেল। তাদের কথা না বললে হয়তো শুদ্ধ-শীতলের বিয়ের আঁটকানোর ক্ষমতা কারোই থাকত না। সে আঁটকাতে দিতো না কিন্তু ভেবেছিল চারবোনের বিয়েটা যদি একসাথে হয় তাহলে মন্দ কি! তারও ইচ্ছে করে না গোপনে প্রেম চালিয়ে যেতে সে তো স্বর্ণকে আগে থেকেই বলতো বিয়ের কথা। বরং স্বর্ণই তাকে বারবার আঁটকেছে।

এটা ওটা বলে বুঝিয়েছে নয়তো তাদের কথায় সবাই আগে জানত। কিন্তু যার জন্য জানাল সেই সবার আগে হাত ছেড়ে নিজের পথ বেছে নিলো। মধ্যেখান থেকে শুদ্ধর শীতলকে দূরত্বের দহনে নতুন করে পড়তে হলো। বর্তমানে তার ভাই-বোনের কষ্ট কারণ সে একথা ভাবলেও অপরাধবোধে বুক পাঁজর ভেঙে আসছে। যাদের সম্পর্কের সূচনা নিজে করেছিল সময়ের ব্যবধানে সেই এখন হয়েছে তাদের দূরত্বে থাকার মূল কারণ। এটা কি কষ্ট নয়? মনে মনে একথা ভেবে সে একনজর ভাইকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো। শুদ্ধ দেখল। বুঝল, ভাইয়ের মনের কথা। কেন জানি তার ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসিও ফুটে উঠল। তারপর কিছুক্ষণ নীরব থেকে শুদ্ধ বলল,

-‘ বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে না তাই এখানে এলাম। ‘
ততক্ষণে সায়ন হাত-পা ছড়িয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়েছে। মাথাটা টলছে। শরীরটা যেন ভার ছেড়ে দিতে পারলে বাঁচে। তার দেখে দেখে আজমও তার পায়ের কাছে শুয়ে পড়ল। তখন শুদ্ধর কথার জবাবে সায়ন বলল,
-‘ সবাই চিন্তা করবে। ‘
-‘করবে না বলো করছে।
-‘তাহলে যা।’
-‘ শুধু আমার জন্য চিন্তা করছে আমি কিন্তু একবারও বলি নি।’
শুদ্ধর প্যাঁচ খাটানো কথায় সায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল ভাইয়ের দিকে।
ঠোঁটের কোণে মলিন হাসি ফুটিয়ে বলল,

-‘আমি যাব না। ‘
-‘যেতে কখন বললাম? তোমাদের যখন যা ইচ্ছে করতে পারো আমি কাউকে বারণও করব না, থামতেও বলব না।’
-‘তাহলে বাড়ি যাচ্ছিস না কেন?’
একথা শুনে শুদ্ধ চেয়ারে মাথা হেলিয়ে ঘূর্ণায়মান সিলিংয়ের দিকে তাকাল। তারপর বেশ কিছুক্ষণ থেমে ধীরে ধীরে বলল,
-‘সাহসে কুলাচ্ছে না। ‘
-‘আমি তো জানতাম আমার থেকেও আমার ভাই সাহসী।’
-‘ হুম তাতো বটেই! তবে আজ এটাও জেনে রাখো তোমার ভাই একটা অপ্রিয় মুখের কাছে ভিতু। এক আদুরে স্নিগ্ধ মুখের খিলখিল করা হাসির কাছে কুপোকাত। এক চঞ্চলা হরিণীর অভিমানী দৃষ্টির কাছে পরাজিত।
ঘুরে ফিরে শুধু ওই একটা জায়গায় আঁটকে যাই। আর তাকে হারানোর ভয়েই নীরব যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত কুঁকড়ে থাকি।’

এইটুকু বলে শুদ্ধ থামল। পরপর শুকনো ঢোক গিলে পুনরায় বলল,
-‘আর রইল বাড়ি ফেরার কথা, আসলে বাড়িতে ফিরতে ইচ্ছে করছে না কারণ বাড়ি গেলে আজ আর কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে ইঁদুরের মতো মাথা বের করে উঁকি মেরে বলবে না, ‘তা শুদ্ধ ভাই, রাজ্য জয় করে ফিরলেন বুঝি?’ নতুবা তার বড় আব্বুকে নালিশ করার ভয় দেখাবে না। পরক্ষনেই মিষ্টি করে হেসে নালিশ থেকে বাঁচার জন্য ঘুষ চেয়েও বসবে না। খেতে বসলে হুড়মুড় করে পাশের চেয়ারটা দখল করবে না। টেবিলভর্তি খাবার থাকলেও তার দৃষ্টি আমার প্লেটের দিক থেকে সরে না। তাকে বাড়ি সুদ্ধ সবাই যত যা কিছু তুলে দিক তার নজর শুধুই তার শুদ্ধ ভাইয়ের প্লেটের দিকে। থাকুক সেখানে এক টুকরো আধখাওয়া মাংস তবুও তার সেটাই লাগবে। কিন্তু আজ থেকে কেউ আমার ভাগের খাবারে ভাগ বসাবে না।

যখন আমার খাবারে হামলা করতে সাকসেস হতো তখন মনের আনন্দে সে পা নাচাত। আচমকা আমার পায়ের সাথে বারি খেলে মুখ কাঁচুমাচু
করে বলত, ‘ ইয়ে শুদ্ধ ভাই টেবিলের নিচে অনেক মশা। ‘ আমি বাড়ি না থাকলে কেউ মনের রাগ মিটাতে আমার রুমটাও এলোমেলো করবে না।
আমার শখের পারফিউম মেখে ঘুরঘুর করবে না। টি-র্শার্ট নিয়ে পালাবে না। ফোন লুকিয়ে রাখবে না। মারের ভয়ে গাছে উঠতে ভয় করবে না।

স্টাডি টেবিলে বসে আমার নেটে যাতা একটা ছবি এঁকে নিচে লিখবে না, ‘চৌধুরী পুত্র শোয়াইব শুদ্ধ।’ এত না, না, এর মাঝে কী একটু ভালো থাকা যায়? নাকি স্বস্তি নিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়?’
এইটুকু বলে শুদ্ধ থেমে গেলে সায়ন একদৃষ্টিতে শুদ্ধর ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কী বলবে? কি বলে বুঝ দেবে? আচ্ছা একবার কি উঠে শুদ্ধর পাজোড়া ধরে মাফ চাইবে? তার ভুল সিধান্তের জন্যই তো এখন
ভাই কষ্ট পাচ্ছে। তাতে ছোটো ভাইটার বুকের ভাঙ্গন কি কমবে? থামবে ওই বুকের ঝড়? শত চেষ্টা করেও সায়ন একটা শব্দও উচ্চারণ করতে পারল না। আজকাল কি যখন তখন কথা বলার শক্তিও হারিয়ে ফেলছে সে? কই আগে তো এমন হতো না। তবে কী নতুন রোগে ধরেছে তাকে?

এদিকে দুভাইয়ের অবস্থা দেখে নীরবে ঝরঝরিয়ে কেঁদে যাচ্ছে বেচারা
আজম। সে মানতে পারছে না এদের অবস্থা। ভালোবাসা দুটো মানুষকে ভেঙে চুরে শেষ করে দিচ্ছে। ভালোবাসার এত শক্তি? এত দহন? কোন বালের টানে মানুষ শুধু শুধু আরেক জনকে ভালোবাসতে যায়? কি বা আছে ওই বালের ভালোবাসায়? বেশ কিছুক্ষণ নীরবতার কেটে গেল।
কেউ টু শব্দটুকুও করল না তবে শুদ্ধ হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে সায়নকে বলল,
-‘ভাইয়া চলো।’
ভেজা কন্ঠে সায়ন জবাব দিলো,

-‘আমি যাব না ভাই, তুই ফিরে যা।’
-‘ ফ্ল্যাট নিয়েছি তুমি আর আজম আজ থেকে সেখানেই থাকবে। রাত বিরেতে এখানে থাকাটা রিস্কি হয়ে যাবে। তাছাড়া আম্মুরা যখন তখন এখানে আসতে পারবে না। ফ্ল্যাটে থাকলে তারাও আসতে পারবে। সাম্য সৃজন কি তোমাকে না জ্বালিয়ে বাড়িতেই বসে থাকবে? রাস্তা পার করে এখানে আসতে আবার এক্সিডেন্ট ঘটাবে। মূল কথা হলো, তোমার বোন আমার কথা বলার শক্তিটুকুও কেড়ে নিয়ে গেছে। আমি এই মুহূর্তে দুটো
কথা বলার শক্তিও পাচ্ছি না। আমি আপাতত নতুন ফ্ল্যাটে যাচ্ছি তুমিও চলে এসো। আর হ্যাঁ, গতকাল থেকে না খাওয়া ক্ষুধাও লেগেছে, আসার সময় খাবার নিয়ে এসো, খেয়ে নাহয় না হওয়া বউকে নিয়ে শোক পালন করব।’
ছটফটে গলায় একথা বলে বিল্ডিংয়ের নাম, ফ্ল্যাট নং, বলে একটা চাবি ছুঁড়ে দিয়েই শুদ্ধ বেরিয়ে এলো। সে জানে তার ক্ষুধার কথা শুনলে তার ভাই না এসে থাকতেই পারবে না।

শুদ্ধ দ্রুত পায়ে রাস্তা পার হয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল শীতলের কোনো কল বা মেসেজ এসেছে কী না। হ্যাঁ যা ভেবেছিল তাই, মোট তেরোটা কল, সাতটা মেসেজ এসে জমে হয়েছে। ফোন সাইলেন্ট করেছিল মনেই ছিল না হঠাৎ মনে হতেই বেরিয়ে এসেছে। এবং তার ভাবনা সঠিক দেখে মুখে এবার হাসি ফুটল, বিশেষ করে ডিসপ্লের উপরে ভাসতে থাকা মেসেজটি দেখে, ‘ কেউ কি আমাকে একটুও মিস করছে না? কথা বলছে না কেন তার ব্যাঙাচির সাথে?’
এদিকে শুদ্ধ বেরিয়ে যেতে সায়নও হুড়মুড় করে উঠে বসল। বাঁ পায়ের কাছে শুয়ে থাকা আজমকে লাথি মেরে উঠিয়ে বলল,

-‘এ্যাই শালা শুনলি না আমার ভাইয়ের ক্ষুধা পেয়েছে? চল, খাবার নিয়ে যেতে হবে। আর আমি শোকে মরছি কেন? এক শাশুড়ির মেয়ে রিজেক্ট করেছে তাতে কী? কত শাশুড়ির মেয়ে আছে না? সায়ন কি ফেলনা রে? ফেলন না।’
একথা বলে পার্টির অফিসের দরজায় তালা ঝুলিয়ে বের হতেই দেখল রাস্তার ওপারে শুদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে। ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।
সে এগিয়ে গিয়ে আচমকা রাস্তার মধ্যেই শুদ্ধকে জড়িয়ে ধরল। শুদ্ধ ভ্রুঁ কুঁচকে কল কেটে বলল,

-‘আমি স্বর্ণ না;শুদ্ধ! ‘
ভাইয়ের কথা শুনে সায়ন ফিক করে হেসে ফেলল। তারপর ভাইকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-‘তোর বোন নেই তাতে কী তোকে দিয়ে কাজ চালাব।’
ভাইয়ের কথা শুনে শুদ্ধ এমনভাবে নাক মুখ কুঁচকে দুপা পিছিয়ে গেল যে সায়ন আর আজম হো হো করে হেসে উঠল। তারপর তিনজনই গেল নতুন ফ্ল্যাটের দিকে। যাওয়ার পথে কিনল পছন্দই খাবার। তাদের হাসি মুখে দেখে চায়ের দোকানের ভেতরে বসে থাকা সাফওয়ান চৌধুরী শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন। আর মনে মনে দোয়া করলেন পৃথিবী উল্টে যাক ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্ক টিকে থাক।

সকালের দিকে শারাফাত চৌধুরীর সাথে কথা বলে শীতলের মন একটু ভালো হয়েছে। কান্নাকাটি থেমেছে। হঠাৎ তার আরেকজনের কথা মনে হতেই খোঁজ করে জানতে পারল, তার রুবাব ভাইয়া সকালে চলে গেছে শতরুপা চৌধুরীর কাছে। এই বাড়িতে নাকি তার দমটা আঁটকে আসছে।
বাকিরা কত করে বারণ করল কিন্তু কারো কথা শোনে নি ছেলেটা, শুধু ভেজা কন্ঠে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলেছে,’এতদিন এখানে পড়ে ছিলাম ছোটো ভাই-বোনদের জন্য তারাই যখন নেই তাহলে থেকে আর কি হবে? তারা যেদিন আবার ফিরবে, আবার এই বাড়িতে চাঁদের হাঁট বসাবে আমিও সেদিন ফিরব।’

একথা শুনে শীতল আরেকচোট কেঁদে রুবাবের সাথে কথা বলল। কেঁদে কেঁদে বলল চট্টগ্রামে চলে যেতে। রুবাব শুধু মলিন হাসল কেবল, তবে ভুলেও সায়নকে যে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে একথা শীতলকে সে
জানাল না। শুধু সে নয় চৌধুরী বাড়ির কেউই জানায় নি। কারণ এতেও পাগল মেয়েটা নিজেকে দোষী ভাববে। বোনকে খুব কাঁদতে দেখে রুবাব বলল তার ছুটি শেষে দিকে যাওয়ার আগে অবশ্যই সে দেখা করে যাবে।
একথা শুনে শীতলকে মানিয়ে আকার ইঙ্গিতে জানাল সায়ান নাকি খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে তার সাথে যেন একটু কথা বলে। সায়ন, রুবাব, সাম্য সৃজন, শখ, স্বর্ণ এরা কেউ শীতলের কাছে কম না,সব ক’টা ভাইবোনকে জান দিয়ে ভালোবাসে সে। আরেক ভাই কষ্ট পাচ্ছে শুনে শীতল তখনই ফোন দিলো সায়নকে। বেশ কয়েকবার কলটা বেজে বেজে কেটে গেল।

শীতল ভাবল শাহাদত চৌধুরী নাম্বার দেখে সায়ন কল রিসিভ করছে না।
হয়তো রেগে আছে। এখন থাক একটুপরে নাহয় তার ফোন থেকে কথা বলবে। মনে মনে একথা ভেবে সে থমথমে মুখেই শাওয়ার নিয়ে খাবার খেলো। তখনো কেঁদে কেঁটে চোখ, মুখের যা তা অবস্থা। সিমিন চৌধুরী ভ্রুঁজোড়া কুঁচকে এতক্ষণ বসে বসে মেয়ের রং ঢং দেখে গেলেন। কিছু বলতে গেলে শাহাদত চৌধুরী আর স্বর্ণ বার বার আঁটকে দিচ্ছে। নয়তো বেয়াদবটাকে চড়িয়ে ঢং ছুটিয়ে দিতেন। এমন ভাব করছে যেন তাকে বাড়ি থেকে তুলে এনে আঁটকে রাখা হয়েছে। এতই যখন বাড়ির লোকের প্রতি দরদ আসতে গেলি কেন?

আসলি তো এতসব ঢং দেখানের মানে কি? বিয়ের পর এতগুলো দিন ওই বাড়িটাকে আপন বাড়ি, ওই বাড়ির মানুষগুলোকে বুকে জায়গা দিয়ে আগলে এসেছেন, এখন তাদের ছেড়ে আসতে উনার যখন কোনো সমস্যা হচ্ছে না,তাহলে দু’দিনের ছানাপোনা হয়ে তোদের এত বাঁধা কিসের? পৃথিবীতে এসেছিস’ই বা কদিন হলো? সংসারের মায়া বুঝিস? বুঝিস নিষ্ঠুর এ পৃথিবীর পার-প্যাঁচ? বুঝিস না! জানিস না মেয়ের মায়েদের জ্বালা। জানলে আজকের পরিস্থিতি বদলে যেতো। এমন ধরনের নানান কথায় উনার রাগ চড়ে গেল। এখন এখানে বসে থাকলে কাকে কী বলে বসবেন জানেন না তাই উঠে রুমের দিকে গেলেন। তখন বড় জায়ের বলা সব কথাগুলো শুনেছেন। কিন্তু সব কথা জবাব নেই, পরিস্থিতি মোতাবেক থাকলেও দিতে নেই, কারণ জবাবের আরেক নাম সঠিক সময়।

সারাদিন কেটে এখন বিকেল। গোধূলি মুহূর্ত। রুম থেকে বেরিয়ে শীতল বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে সেনা হাউজের চারপাশ। জায়গাটা ভীষণ সুন্দর। তবুও মন খারাপ থাকায় কিছু ভালো লাগছে না। মন খারাপের কারণ সকালে শুদ্ধর সঙ্গে দেখা করে বিদায় নিতে পারে নি। ফোন করলে শুদ্ধ রিসিভ করে নি, না মেসেজের রিপ্লাই করেছে। পাষাণ পুরুষটাকে নিয়ে হয়েছে যত জ্বালা। বাড়িতে থাকতেই পাত্তা দিতো না এখন এতদূর চলে এসেছে। শীতল হাঁটতে হাঁটতে একটু এগিয়ে গেল। দেরি করে গোসল করায় চুলগুলোও এখনো ভেজা তাই লম্বা চুলগুলো ছেড়ে রাখা। ছাড়া চুল মৃদুভাবে উড়ছে বিকেলের স্নিগ্ধ বাতাসে।

পরনে সাদা ও কালো মিশেলের নতুন থ্রি-পিচ। ওড়নাটা যেন অবাধ্য। হঠাৎ তার নজরে এলো সিঁড়ি বাঁধা পুকুরের দিকে। পুকুরে ফুটে আছে অনেক লাল শাপলা। সে লাল শাপলা কাছ দেখে নি তবে একবার স্ব-পরিবারে পিকনিকে গিয়ে সেখানকার বড় একটা পুকুরে লাল শাপলা দেখেছিল। তুলে গেলে বড় মা বলেছিল, লাল শাপলা তুলতে নেই এই ফুলের গোড়ায় নাকি বিষধর সাপ থাকে। সাপের কথা শুনে সেদিন আর তুলে নি।

শীতল কি ভেবে গালে হাত দিয়ে পুকুরের মাঝ সিঁড়িতে বসল। মিনিট না পেরুতেই সেখানে স্বর্ণও উপস্থিত হলো। কেবল শাওয়ার নিতে ঢুকেছে এই সুযোগে বাইরে বেরিয়ে এসেছে শীতল। বোনকে না দেখে খুঁজতে খুঁজতে সেও ছুটে এসেছে।পাশে বসেছে নিঃশব্দে। তার উপস্থিতি টের পেয়ে শীতল একবার তাকিয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকাল পুকুরের টলটল জলের দিকে। চোখে ভাসছে কত কথা, কত স্মৃতি। আজ ইদের পরদিন, সব ঠিক থাকলে বাড়িতে কত কত মজা হতো। নয়তো চৌধুরীদের তিন গিন্নির এক গিন্নির বাপের বাড়িতে স্ব-পরিবারে দাওয়াত খেতে যেতো।
যখন এসব ভাবনায় মশগুল তখন সেখানে আর্মির ড্রেস পরা এক যুবক এসে দাঁড়াল। পেছন দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে উপস্থিতি জানান দিয়ে হাসিমুখে বলল,

-‘ম্যম, আমি জুবায়ের। স্যার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন আপনাদেরকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য, তা কোথায় যেতে চান বলুন?’
একথা বলে জবাবের আশায় পাশে বসা স্বর্নের দিকে তাকাল। চোখে মুখে মুগ্ধতা। শাহাদত স্যারের মেয়ে আছে জানত, তবে পুতুলের মতো দেখতে তা জানা ছিল না। বলা বাহুল্য, মিসেস শাহাদতও ভীষণ সুন্দরী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জুবায়ের বয়স ভেদে বুঝল স্বর্ণ বড় আর শীতল ছোটো। কিন্তু এখানে কে স্বর্ণ আর কে শীতল বুঝে উঠতে পারল না। কারণ স্যারের থেকে শুধু নাম দুটো শুনেছে সে। এদিকে জুবায়েরের
দৃষ্টি খেয়াল করে শীতল তার আপাদমস্তক পরখ করে ভ্রুঁ কুঁচকাল। মনে মনে মুখ বাঁকাল। তারপর বলল,

-‘আমার বোন বোবা কথা বলতে পারে না যা বলার আমাকে বলুন।’
বোবা শুনে জুবায়েরের মুখে বিষ্ময় খেলে গেল। আফসোসও হলো এত সুন্দর মেয়েটা কী না বোবা! তবে হবু কেউ হতে যাচ্ছে ভেবে হাসিমুখেই বলল,
-‘সরি ম্যম আমি আসলে জানতাম না।’
-‘ইটস ওকে।’
-‘তা কোথায় যেতে চান বলুন?’
-‘আশেপাশে সমুদ্র আছে? যেখানে পা ডুবিয়ে বসে থাকা যাবে।’
-‘পতেঙ্গা আছে। ‘
-‘ভিড় কেমন?’

-‘সমুদ্র পাড়ে তো ভিড় থাকে তারউপরে আজ আবার ইদের পরেরদিন।
সাধারণ জনতা সেদিকেই হুমকি খেয়ে পড়বে। তবে আপনারা চাইলে আপনাদের আশপাশে ভিড় কম রাখার চেষ্টাটুকু করতে পারি।’
-‘ওহ। যদি যাই, আপনি কি এই ড্রেসআপে আমাদের নিয়ে বের হবেন?’
-‘ জ্বি না ম্যম। অফিশিয়াল কাজ ব্যতীত ইউনিফর্ম পরে আমাদের যেখানে সেখানে যাওয়ার নিয়ম নেই। কাজেই সিভিল ড্রেস আপে বের হতে হবে।’
-‘তাহলে ঠিক আছে নয়তো আর্মি নিয়ে ঘুরছি ভেবে অনেকেই তাকাবে, এজন্যই বললাম আর কি!
-‘জ্বি বুঝেছি।’

শীতল একবার বোনের দিকে তাকিয়ে জানাল একটুপরেই রেডি হয়ে আসছে তারা। দুপুরের দিকে মা-বাবা গিয়ে চলার মতো টুকটাক শপিং করে এনেছে, আরো করতে হবে। তারপর জুবায়ের রেডি থাকতে বলে চলে গেল। তখন স্বর্ণ বোনের দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
-‘আমাকে বোবা বললি কেন? আমি কবে বোবা হলাম?’
স্বর্নের কথা শুনে শীতল উঠে দাঁড়িয়ে হাত ঝাড়ল তারপর ভাব নিয়ে বলল,
-‘সায়ন ভাইযার আদেশ ভুলেও যেন তোমার আশপাশে কাউকে ঘেঁষতে না দেই। ভাইয়ার আদেশ অনুযায়ী আজ থেকে তুমি বোবা।’

-‘সে বলবে আর আমাকে মানতে হবে?’
-‘হবে।’
-‘কেন হবে?’
-‘কারণ আমার ভাই তোমাকে ভালোবাসে। পাগলের মতো ভালোবাসে।’
-‘থাক ভাইকে নিয়ে আর উকালতি করতে হবে না। এখন বল, ওর সাথে তোর কথা হয়েছে?’
-‘হয়েছে।’
-‘ আমার নামে অভিযোগ করেছে?’
-‘না। শুধু বলেছে তোমার আশেপাশে যেন কেউ না ঘেঁষতে পারে। যদি ঘেঁষে তাহলে শুদ্ধ ভাইকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দেবে। অর্থাৎ ভাসুরের দেওয়া দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতেই হবে, নয়তো আমার ‘ওগো’ হাত ছাড়া হয়ে যাবে।’
বোনের কথা শুনে না চাইতেও স্বর্ণ হেসে ফেলল। তারপর দুইবোন গল্পে গল্পে রেডি হতেই শাহাদত চৌধুরী বলল,
-‘ যাচ্ছে মা, যাও। জুবায়ের দায়িত্ববান ছেলে আশা করছি সমস্যা হবে না। আর যা লাগবে জুবায়েরকে বলবে, কেমন? আর হ্যাঁ, বলতেই ভুলে গেছি সে কিন্তু নিজেও মেজর। আশা করি তাকে সন্মান করবে, সন্মান দিয়ে কথা বলবে।’

জুবায়ের মেজর শুনে শীতল অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকাল। স্বর্ণের মধ্যে কোনো ভাবান্তরই দেখা দিলো না কারণ তখন তার ইউনিফর্মে সে র‍্যাংক ব্যাজ দেখেছিল। তারপর জুবায়ের ডেকে পাঠালে তারা দুইবোন পাকিং লটে গেল। নামি দামীর গাড়িতে হেলান দিয়ে সিভিল গেটআপে
তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল জুবায়ের। তাদের দেখে নিজেই হাসিমুখে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। বলা বাহুল্য, আর্মি কাট করা চুলের ছেলেটা যথেষ্ট সুদর্শন। মিশুকে। তবে কথা বলছে, মজা করছে মেপে বুঝে। বের হওয়ার আগমুহূর্তে শুদ্ধর একটা মেসেজ পেয়েই শীতলের মনটা ভালো হয়ে গেছে। বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে শুদ্ধকেও জানিয়েছে। জবাবে তার ঘাড়ত্যাড়া পুরুষ বলেছে, ‘হিজাব পরে ভদ্র বেশে বের হবেন। আর যার তার সাথে কিলকিল করা থেকে বিরত থাকবেন। একটা অভিযোগ যদি কানে আসে, পিঠের চ্যালাকাঠের বারি একটাও কম পড়বে না বলে দিলাম।’
আগে শুদ্ধ যখন এই ধরনের কথা বলত খুব রাগ করত, মনে মনে গালি দিতো। কিন্তু এখন বুঝে এসবের আড়ালেও ভালোবাসা লুকিয়ে আছে।

ভদ্রতার খাতিরে টুকটাক কথা বলছে জুবায়েরের সাথে। তাদেরকে এটা ওটা দেখাচ্ছে, চিনাচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্বর্ণ কথা বলতে পারে তা জুবায়ের জানে। এবং এটাও জানে এদের দুইবোনের একজন চঞ্চল তো আরেকজন খু্বই শান্ত। সেই হিসেবে দু’জনের কথা কথা হচ্ছে। এদিকে
জুবায়ের এর আদেশ পেয়ে কয়েকজন আর্মি সৈনিক সিভিলে পতেঙ্গায় উপস্থিত হয়ে জায়গা বেছে নিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। সমুদ্রে পা
পা ভেড়ানো যাবে এবং স্পেশালভাবে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করেছে। যেখানে ভিড়ভাট্টা থাকবে না, হইহট্টগোল থাকবে না। এদিকে এটা ওটা দেখতে দেখতে যেতে যেতেই মাগরিবের আজান হয়ে গেল। জ্যামে বাঁধা পেল। তারপর ধীরে ধীরে যখন পৌঁছাল তখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা।

রাত হয়ে গেলে সমুদ্র দেখতে পারবে না ভেবে শীতল মুখটা ভোঁতা করে বোনের দিকে তাকাল। এইদিকে স্বর্ণ গাড়িতে উঠেই কড়া দৃষ্টিতে খেয়াল রাখছে জুবায়ের এর প্রতি। এরমধ্যে খাপলা কিছু দেখলেই গুঁজে রাখা ছুরি বসাতে দ্বিধা করবে না। কাছের মানুষগুলো ভালো সবাই। সবাই খুব বিশ্বস্ত তবুও অন্ধবিশ্বাস কাউকেই নয়। সে বরাবরই একটু কঠিন ধাঁচের। তিক্ত কাজ, তিক্ত কথাগুলো আগে করে/ভাবে বলে অপছন্দের তালিকা দখল করেছে। বাবার পরিচিত এই লোকটা ;তাদের নয়! আর বাবা-মাও যে বিশেষ কারণে তাদেরকে একসাথে পাঠিয়েছে এটা বুঝতে তার কষ্ট করতে হয় নি। বরং বুঝে ফেলে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছে।

গাড়ি থামলে তারা একে একে সবাই নামল। একটু পথ হেঁটে সামনে এগোতেই দমকা বাতাসে শরীর জুড়িয়ে দিলো। উড়ছে লাগল পরনের ড্রেস। আকাশটা আজ গম্ভীর হয়ে আছে। চাঁদ নেই, তারা নেই, জোৎসা নেই, কেমন যেন
থমথমে হয়ে আছে আকাশের অবস্থা। লাইটের ঝলকানিতে দেখা যাচ্ছে
সমুদ্রের কোলঘেঁষে সিমেন্টের ব্লক রাখা। শীতল ব্লকের উপর বসে পা ভেজাতে ভেজাতে আশপাশে তাকাল। আকাশের অবস্থা দেখে তেমন লোকজন নেই বোধহয়। তবে তার কেন জানি ভালো লাগছে আর এই ভালো লাগাটা দ্বিগুন হতো যখন পাশে তার বিশুদ্ধ পুরুষটাকে পেতো।
আবার শুদ্ধকে মনে পড়ায় সে মনে মনে বলল,

-‘শুনছো হে সমুদ্র, আজকে আমি একা পা ভেজালাম খুব তাড়াতাড়ি আমার বিশুদ্ধ পুরুষকেও নিয়ে আসব। তোমার সঙ্গে তার পরিচয় করে দেবো। প্রথম খ্যাচখ্যাচ করলেও পরে দেখবে আমার পুরুষটা খুব উদার মনের। সে একজন পাহাড় লাভার হলেও সমুদ্রকেও অনীহা করবে না।
বরং তোমাকেও সাদরে গ্রহন করবে তখন আমরা দু’জন দু’জনার হাতে হাত রেখে একসাথে সমুদ্রে পা ভেজাব।’
অতঃপর সেখানে অনেকক্ষণ সময় কাটাল তারা। ঘুরে দেখল। পতেঙ্গার দোকানগুলো থেকে কেনাকাটা করে গাড়িতে উঠতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। বৃষ্টির মধ্যেই জুবায়ের গাড়ি টানছে কাছে কারণ শাহাদত চৌধুরী কলের পর কল দিয়ে যাচ্ছেন। চলেও এসেছে প্রায় আর কিছুদূর গেলে পৌঁছে যাবে। কিন্তু মেঘের গর্জন শুনে অন্তর-আত্মা কেঁপে উঠল। এবং এত জোরে জোরে মেঘ ডাকছে শীতল ভয়ে বোনকে আঁকড়ে ধরে বসে আছে। চোখ মুখে ভয়ের ছাপ। অগত্যা বাধ্য হয়ে এবার জুবায়ের বলল,

-‘সামনের একটা রেস্টুরেন্টে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি? রাতও তো অনেক হয়েছে ডিনারটা সেরে ফেলি। ততক্ষণে বৃষ্টি কমে যাবে, ইনশাআল্লাহ। ‘
অবস্থা দেখে সম্মতি দিতেই একটা পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্টে তাদের গাড়ি এসে থামল, ভিজেপুরে তারা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ। তিনজনে বসল কর্নারে থাকা একটি টেবিলে। স্বর্ণ ওড়না দিয়ে বোনের মাথা, মুখ, গা মুছে দিলে
জুবায়ের নিজেও রুমাল দিয়ে মাথা মুছতে মু়ছতে শুধু দেখে গেল। মনে মনে বেশ করে হাসলও। তারপর খাবার অর্ডার করলে খাবারও আসল খুব তাড়াতাড়ি। খেতে খেতে শীতল এদিক ওদিকে তাকাতে গিয়ে তার
সামনের একটা টেবিলে নজর গেল। সেখানে একটা ছেলে বসে আছে এবং একাই রাজকীয় ভোজ নিয়ে বসেছে। তবে একটা খাবারেও স্পর্শ করেছে কী না সন্দেহ। শীতল তাকে দেখতে দেখতে ছেলেটা হঠাৎ চোখ তুলে তার দিকে তাকাল তাতেই চার চোখের চোখাচোখিও হয়ে গেল।

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৪৬

এবং তার চোখ দেখে শীতল আচমকা ভীষম খেলো। কাশতে কাশতেই
দেখেই গেল সামনে বসা ছেলেটাকে। আচ্ছা নীল চোখ দেখল নাকি? কি আশ্চর্য, বাংলাদেশেও নীল চোখের মানুষ আছে? কই কখনো দেখে নি তো তবে অদ্ভুত সুন্দর ছেলেটার চোখজোড়া। উম, ছেলেটা কি বিদেশি নাকি বাঙালি? চেহারা দেখে অবশ্য মনে হচ্ছে বাঙালি আর বিদেশীর মিশেলে তৈরি।

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৪৮