Violent love part 40
Mariam akter juthi
“মোমবাতির স্নিগ্ধ আলোয়, গোলাপ ফুল রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধে রাদিফের রুম জুড়ে মো মো করছে। তার ঠিক মধ্যখানে, রোদ ঘাপ্টি মেরে গুজো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। চারদিকে মোমের আলোয় আলোজিত। মোমের হলুদ আলোয় রাদিফের সাজানো ফুলের রুম যেন ঝলঝল করছে। সেই আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এক কেশবতী কেশ ছড়িয়ে সিল্কের গারো লাল খয়রি শাড়ি এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে, যার দরুন রোদের শাড়ি কিছুটা হাটু পর্যন্ত উঠে এসেছে। একদম ফর্সা শরীল হলুদ আলোয় রোদ কে যেন রাদিফের রুমে সাজিয়ে রাখা এক আকর্ষণীয় শোপিস লাগছে। এই অবস্থায় ওকে যদি একবার কেউ দেখতো, তাহলে একটু হলেও তার ওকে ছুঁতে মন চাইতো।
খান বাড়ির মেয়েদের যদি সুন্দর্যতার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হত, তাহলে কোন সংকোচ কিংবা প্রশ্ন ছাড়াই নিঃসন্দেহে রোদ কে দেওয়া হতো। কিন্তু আফসোস খান বাড়ির কোন ছেলের চোখ এই ফুলের দিক পড়েনি। যদি পড়তো? তাহলে তারা ক্ষণে ক্ষণে রোদের সৌন্দর্যের প্রশংসা করত। বারবার তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে চাইত,তার রূপ লাবণ্য। বিপরীত দিকে যদি, বদরামি চঞ্চলতা ফাইজলামি, বলদামি, ঘারত্যারামি করায় অ্যাওয়ার্ড দিত তাহলে নিঃসন্দেহে সেটা জুথি পেতো। আর সেই বলদ মেয়েটার প্রেমেই পড়েছিল দু’ই পুরুষ। যার জন্য একজন দহনে পুড়লেও বাধা ঢেঙ্গিয়ে জয় করতে পারেনি, সে হচ্ছে নায়ক। “যে ভালোবেসেছে তার মন তাকেই চেয়েছে, সে না পাওয়ার পর্যায়ে গিয়েও তাকে ছিনিয়ে নিয়েছে, সে হচ্ছে ভিলেন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“হেরে যাওয়া, না পাওয়া, শব্দ দুটো খুবই সহজ মনে হয়। কিন্তু এর ভয়াবহতা মারাত্মক। যে এর কবলে একবার পড়েছে, তারা কদমে কদমে এর মর্মার্থ বুঝেছে। প্রেমের দহন খুবই ভয়ানক জিনিস, তা না পাওয়ার যন্ত্রনা হৃদয়ে জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়, হৃদয়টা কুরে কুরে খায়। আর ঠিক সেই মুহূর্ত যদি, তাকে বিপরীত একজনের সাথে বেঁধে দেওয়া হয়! তখন মনে হয় সেই মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে তিলে তিলে ধ্বংস করি, কেন সে জেনে শুনে আমার জীবনে এলো? রাদিফ যে কোনো দিন স্মোকিং করেনি সে আজ খান-মহলের পিছের বাগানটায় বসে সিগারেট খাচ্ছে। তার মন আজ কিছুতেই রুমের দিক যেতে দিচ্ছে না। তার মন বারবার চিৎকার করে বলতে চাইছে, —‘হে নিষ্ঠুর পৃথিবী কেন আমি তাকে পেলাম না? কি অন্যায় করেছিলাম আমি? যার জন্য এমন নিষ্ঠুর যন্ত্রণা দিলে আমায়? এসব ভেবে রাদিফ একদিকে সমানতরে স্মোকিং করছে, তো চোখ থেকে টপটপ পানি ফেলছে। তার পাশেই রাদিফের ফোনটাতে তখন থেকে বেঁচে চলছে।
Yeh jism hai toh kya…
Ye rooh ka libaas hai…
Yeh dard hai toh kya…
Ye ishq ki talash hai…
Fanaa Kiya mujhe…
Ye chahne ki ass ne…
Tarah Tarah..
Shikast hi hua…
Raza hai kya Tari..
Dil-O- jahaan tabaah Kiya…
Sazaa bhi kya Tari..
Wafaa ko bewaraa Kiya..
Wah re Zindagi..
Se yun mujhe Juda Kiya..
Kahaan kahaan..
Phirun main dhoondta…
গানটা সম্পূর্ণ শেষ হয়ে একা একাই, আরেকটা গান বাজতে শুরু করলো, har Ada ki hoti hai.. গানগুলো চলা মুহূর্ত রাদিফ একাধারে এসব চিন্তায় মগ্ন থাকায়, লিমা খান ওকে খান মহলে না পেয়ে বাগানের পিছনে বসার জায়গায় এসে দেখে তার ধারণাই ঠিক। তার ছেলে এখানেই একা একা বসে আছে, এটা দেখে লিমা খান রাদিফের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন,
‘রাদিফ..
রাদিফ হঠাৎ মায়ের কন্ঠ পেয়ে হাতের সিগারেটটা নিচে ফেলে চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হওয়ার ভান করে মায়ের দিক ঘুরে বললো,
‘আরে আম্মু তুমি?
‘হ্যাঁ আমি, রাত কটা বাজে দেখেছো তুমি?
‘হুম ৯ টা পেরিয়ে দশটার ঘরে যাবে। স্বাভাবিক ভাবে।
‘তো তুমি এখনো এখানে বসে আছো কেন? দেখো রাদিফ পাস্ট যেটা ফেলে এসেছ, সেটাকে উড়িয়ে দাও। পেজেন্ট যেটা চলছে সেদিকে ফোকাস করো। মনে রেখো রোদ তোমার বিয়ে করা স্ত্রী, ওর প্রাপ্ত মর্যাদা স্বামীর অধিকার, ভালোবাসা কোন কিছু থেকে তুমি ওকে বঞ্চিত করবে না। ওকে সম্পূর্ণটা পাই পাই করে দিবে। ওর যেন কোনদিন মনে না হয়, ওর স্বামীর দিক থেকে ও অবহেলিত হয়েছে। আর যে কথাটা বলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল, আমার বছরের মাথায় নাতি-নাতনি চাই। আশা করি তোমাকে ফের এ সম্পর্কে আর বোঝাতে হবে না? — বলে উনি চলে যেতে নিলে রাদিফ ভাঙ্গা কন্ঠে বলে উঠলো,
‘আম্মু ভালোবাসাটা তো অমর, যার কোন মৃত্যু হয় না। মনের এক কোনে থেকেই যায়। তাহলে আমি কিভাবে… — ওর কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগে লিমা খান ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
‘ভুলে যাও, আজ আমি লিমা খান, তোমার মা হয়ে বলছি। একদিন আসবে যেদিন তোমার মনে হবে, তুমি ঠকনি বরং তুমি নিজের জীবনে জিতেছো। এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পেয়েছ। তখন তোমার মনে হবে, সেদিন তুমি যাও কষ্ট পেয়েছিলে, সে কষ্ট পাওয়ার তোমার কোন প্রয়োজন ছিল না। তখন তোমার আপনা আপনি মনে হবে। আল্লাহতালা উত্তম পরিকল্পনা কারি, উনি যা নিয়ে নেন, তার দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেন। তুমিও বউ সন্তান নিয়ে খুশি থাকবে। তখন তোমার কাছে যদি জুথি কে ফিরিয়ে দেওয়াও হয়, তখন তুমি অনাহাসে বলবে –‘এখন আর তোমাকে আমার প্রয়োজন নেই। আমি রোদ কে পেয়ে ভালো আছি। — লিমা খান কথাগুলো বলে আর দাঁড়ালেন না দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ির ভিতরে চলে গেলেন।
রাদিফ লিমা খানের পদাচরণের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
‘যদি শেষ জীবনে অপশন হিসাবে জুথি আসে, তাহলে আমি ওকেই বেছে নিব। – বলে মায়ের কথা রাখতে নিজের রুমে চলে গেলো।
“হইচই পরিবেশ সবার মুখে আনন্দের হাসি। রনির বাড়ির গুরুজনরা সেই বউ নিয়ে আসার পরপরই কাল’কে বৌভাতের আনুষ্ঠানিক, আলোচনায় ব্যস্ত। কেমন কি করলে ভালো হবে, সবার দাওয়াত ঠিকঠাকমতো দেওয়া হয়েছে কিনা, রান্নার লোকেরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে কিনা, এসব নিয়েই টুকটাক কথা উনাদের। উনারা এসব কথা বার্তায় ব্যস্ত থাকলেও, ছোটরা গানের তালে তাল মিলিয়ে নাচ করছে। তো কেউ কেউ খাবার তুলে খাচ্ছে। আবার ইভার সমবয়সী কিংবা তার চেয়ে একটু ছোট বয়সের মেয়েরা, মানে এইভার ননদ’রা সবাই ইভাকে ঘিরে ওর রুমে বসা। তাদের দাবি, এখন তারা বাসর ঘরে বসবে টাকার জন্য। যতক্ষণ না রনি তাদের বাসর মানি দিচ্ছে, তারা এই ঘর থেকে যাবে না।
ইভা চুপচাপ গোল হয়ে বসে সবার কান্ড দেখছে আর ঝিমুচ্ছে, তার ছোট ১৯ বছরের শরীরটায় আর ক্লান্তি নিতে পারছে না। কতক্ষণ আর এভাবে বসে থাকা যায়? সেই সন্ধ্যা সাতটা থেকে এখন রাত এগারোটা, এ টাইম এর মধ্যে বউ দেখতে মানুষ আসা-যাওয়া তো লেগেই আছে। এদিকে ইভা মিষ্টি আর শরবত খেতে খেতে বিরক্ত। তার প্রায় এখন বমি আসার পালা। তবুও মনে হচ্ছে আজ এদের থেকে মিষ্টি শরবত খাওয়া থেকে ইভার কোন রকম বিরতি নেই। ওর ক্ষণে ক্ষণে ঝিমুতে থাকার মধ্য, রনি বেচারা অনেক কষ্টে রুম অব্দি এসে পৌঁছেছে। বেচারা রনি সেই কখন থেকে বউয়ের কাছে আসবে বলে ট্রাই করল, কিন্তু কই আর আসতে পারল? তিন তিনটে ধাপ পেরোতে হল তাকে, প্রথমে বন্ধু মহল, তাদের মধ্য ঠাট্টার ছড়াছড়ি।
রনি ‘সে আজ বিড়াল টা ঠিক মতো মারতে পারবে তো? নাকি তারাও এসে তাকে সাহায্য করবে বিড়াল মারতে? কেউ কেউ তো ঠোঁট কামড়ে হেসে এটাও বলছে, – ‘ভাই এত তাড়াতাড়ি নেওয়ার ইচ্ছা না থাকলে, ফ্লেভার নিয়ে ঢুকিস। ওদের এসব গভীরত্ব কথাবার্তা রনি কোন রূপ এড়িয়ে চলে আসতে, ওখানে থাকা সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। বেচারা রনি এক ধাপ কোনরকম পার করে, ভিতরে আসতে মুখোমুখি হলো পরিবারের কাছে। ওকে দেখা মাত্র বড়রা ওকে ডেকে আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা বললো কিছুক্ষণ। রনি না চাইতেও বেশ সময় ওনাদের সাথে কথা শেষ করে, রুমের দিকে অগ্রসর হতে রুমের বাহিরে তার ভাইদের সাক্ষাৎ পেল। ওদের এভাবে ওর রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে মনে মনে আওড়ালো, — ‘ওরা তো বাহিরে বোম আতশবাজি ফুটাচ্ছিল, তাহলে এখানে এলো কেন? ওর এসব ভাবার মধ্যে রকি সীমান্ত একসাথে বলে উঠলো,
‘বাসর রাতে বাসর করতে চাও? তাহলে আমাদের পারিশ্রমিক দাও। কারণ পুরো বাড়ি ডেকোরেটরের লোক বিয়ে করানো হলেও, বাসর ঘর কিন্তু আমরা সাজিয়েছি। – মিটি মিটি হেসে।
ওরা এ কথা বলতে রনি বিরক্তি নিঃশ্বাস ত্যাগ করে বললো,
‘তোদের লজ্জা নাই? বড় ভাইয়ের কাছে এসবের জন্য টাকা চাইতে এসেছিস।
রনির কথায় রকিদের সাফ সাফ উত্তর,
‘বাসর করতে তোমার লজ্জা হবে না, আমাদের টাকা চাইতে, দিতে তোমার লজ্জা?
রনি আর কথা বাড়ালো না সোজা ওদের ডিমান্ড জানতে চেয়ে বললো,
‘কত?
রনি কত বলতে রকি ওর পাশে তাকিয়ে চার জন দেখে বললো,
‘বেশী না বিশ হাজার দাও। – ওরা কথাটা বলতে রনি টাকা গুনে ওদের হাতে দিতে ওরা হেসে উঠে বললো,
‘বিশ হাজারই দিয়ে দিবে জানলে, কিছু বাড়িয়ে বলতাম। – বলে আফসোস করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রনিকে রুমের ভিতর ঢুকতে দিয়ে ওরা চলে যায়। বেচারা রনি ওরা চলে যেতে ঝামেলা মুক্ত নিঃশ্বাস ফেলে, রুমের ভিতরে আসতে বোনদের রাজ্য দেখে মনে মনে চরম বিরক্তি প্রকাশ করল। তিন তিনটা ধাপ পেরোলো তবুও বউয়ের নাগাল পেল না? রনি তার বোনদের হাবভাব দেখে বুঝতে পারল এরাও বাসর মানির জন্য এসেছে তাই আর না পেঁচিয়ে ডাইরেক্ট বললো,
‘তোদের কত চাই?
রুমে এসেই রনি এ কথা বলাতে ওরা নড়েচড়ে বসে বললো,
‘যেহেতু বুঝতে পেরেছ আমরা তোমার রুমে কেন আছি, তাহলে বেশি না দশ হাজার দাও আমরা চলে যাচ্ছি। – ওরা কথাটা বলতে রনি পরিশিষ্ট থাকা ১২ হাজার ওদের হাতে ধরিয়ে দিতে ওরা টাকার দিক তাকিয়ে বোকা বনে গেল। ওদের চাওয়া মোতাবেক বাড়তি দেওয়া তে ফিসফিস করে একে অপরকে বললো, – ‘বিশ হাজার বললে ভাল হত? ওই যে কথায় আছে না, যত পায় তত চায়। ওরাও ঠিক তেমন, ওরা এসব ভেবে আর কোন রূপ কথা না বাড়িয়ে রুম ত্যাগ করতে। রনি ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে হাফ ছেড়ে বেঁচে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো। অতঃপর সব কিছু মাথা থেকে বের করে ঘুরে ইভার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বিছানার কাছে এগিয়ে এসে আসতে ইভার কাছে বসে মুগ্ধ দৃষ্টিতে ইভার দিকে তাকাতে, রনির এমন তাকানোতে ইভা সাথে সাথে লজ্জায় মুখখানা ছোট করে নিচের দিকে তাকাতে রনি আর একটু ঝুকে ইভা কে দেখতে ইভা লজ্জায় রনির গালটা ওর ডান হাত দ্বারা সরিয়ে দিল, ওভাবে নিচের দিকে তাকানো অবস্থাতেই। ইভাকে এমন লজ্জা পেতে দেখে রনি ওকে আর একটু লজ্জা দেওয়ার জন্য, ওর কানের কাছে এগিয়ে ইভার কানে নাক ঘসে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ওহ বিবি জান, আপনি তো পুরো টমেটো। আপনাতে এভাবে বিভোর করবেন জানলে, ইশ আরো আগেই আপনার খোঁজ লাগিয়ে দিতাম। এভাবে কেন নেশা ধরালেন এ রাতে? আমি যদি আদর করতে শুরু করি কন্ট্রোল করতে পারবেন তো আমাকে? পারবেন তো আমাকে নিজের সাথে সহ্য করতে?
রনির এতুর কথায় ইভা নাক দিয়ে শ্বাস করতে না পেরে, মুখ দিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে কোনরকম তুতলিয়ে বললো,
‘দে,দেখুন আপনার এক ভাবি কিছু জিনিস দিয়ে সেটা দিয়ে বাসর রাতের নিয়ম মানতে বলেছে, আপনি যদি সেগুলো মান…ইভার আর বলা হলো না তার আগেই রনি ওকে টেনে বুকের মধ্য নিয়ে ওর মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
‘আমার রুমে জোছনার আলো দেওয়ার জন্য, এই চাঁদ যদি সর্বক্ষণ আমার রুম জোরে বিচরণ করে। তাহলে আমি অনায়াসে সকল নিয়ম মানতে রাজি। এবার বলে ফেলুন তো বিবিজান আপনাকে একটু ভালোবাসতে হলে কি কি নিয়ম পালন করতে হবে? শেষ কথাগুলো ওর মুখের দিকে ঝুঁকে।
রনির পরপর এমন কথায় ইভা মুখ লুকাতে রনির বুকের মাঝে একটু চেপে যেতে, রনি ওকে নিজের সাথে আর একটু চেপে ধরতে ইভা বললো,
‘দুজন নাকি দুজনার মুখের পান খেতে হবে। আয়নায় নাকি মুখ দেখতে হবে। সবশেষ আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। — ওরা একে একে দুজন সব নিয়ম শেষ করে, আল্লাহর দরবারে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, রনি ইভাকে নিয়ে বিছানায় বসাতে ওর পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা বক্স বের করে সেটা খুলে ছোট হীরের চিকচিক করা প্যান্টেড সহ স্বর্ণের চেইন পরিয়ে দিল। অতঃপর ধীরে ধীরে দুজন হারালো এক গভীর ভালবাসায়, যে ভালোবাসা অতুলনীয়। যা দুটো দেহের মনের শেষ হবার নয়। যা একবার পাইলে বারবার চাইতে মন চায়। কারণ এ মিলন আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নিজে পছন্দ করেন। আজ আল্লাহকে সাক্ষী রেখে দুটো দেহ পরিপূর্ণভাবে এক হলো।
“তখন রাদিফ মায়ের কথায় রুমে আসতে, দেখে রোদ এলোমেলো অবস্থায় শুয়ে ঘাপ্টি মেরে ঘুমিয়ে আছে। যদিও রাদিফ রুমে আসায় ঠাস করে রুমের দরজা লাগাতে, দরজা লাগানো শব্দ পেয়ে রোদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ততক্ষণে রোদ দরফরিয়ে উঠে দরজার দিকে তাকাতে রাদিফের চেহারা কেমন দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর করানো দেখে, আস্তে করে রাদিফের থেকে চোখ সরিয়ে শাড়িটা ঠিক করে বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো,
‘আসলে আপনি আসছিলেন না তো, তাই বসে থাকতে থাকতে চোখটা লেগে গিয়েছিল। তবে আপনি চিন্তা করবেন না,আমি আপনার বউ বলে সমস্যা হবে না। আপনি চাইলে এক্ষুনি আমি আমার রুমে যেতে পারি। — রোদ কথাগুলো বলতে, রাদিফের কোনরকম সাড়াশব্দ না পেয়ে রুমের দরজা পর্যন্ত আসতে রাদিফ ওর দু বাহু শক্ত করে চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে চোখ গরম করে হালকা চেঁচিয়ে বললো,
‘বিয়ের পিঁড়িতে বসে, বিয়ে করে, সবগুলো নাটক কর আমার সাথে? তোদের নাটকের পাত্র আমি? হ্যাঁ?
রাদিফের এঁতুর আচরণে রোদ মাথাটা নিচের দিকে করে আস্তে করে বললো,
‘ব,ব্যা থা লাগছে তো আ,আমার, কেন এ,এভাবে চেপে রেখেছেন?
রাদিফ রোদের তোতলানো কথায় তেতে উঠে বলল,
‘লাগে লাগুক তোর ব্যথা, আমাকে বিয়ে করার আগে মনে ছিল না? এখন আমার রুম থেকে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে আমার মায়ের থেকে ক্রেডিট নিবি তাই না? সেটা আমি মানবো এটা তোর মনে হয়? বিয়ে যখন করেছিস তখন আমার সাথে এই রুমেই থাকতে হবে তোকে। আর তুই থাকতে বাধ্য,আর যদি অবাধ্য হওয়ার চেষ্টা করিস তো এক থাপ্পড় মেরে অজ্ঞান করে রেখে দিব। মনে রাখিস আমি কিন্তু ভালো মানুষ না। – বলে ওকে দেওয়ালের থেকে ঘুরিয়ে জোরে বিছানার উপর ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে রোদ ব্যথায় মধু আওয়াজ করে বললো, — ‘আহ…
শান্তশিষ্ট রাদিফের এমন বাজে আচরণ দেখে, রোদ ফুপিয়ে কেঁদে উঠতে রাদিফ হাত দুটো মুঠি বদ্ধ করে বললো,
‘আমার সামনে একদম ন্যাকামি কান্না করবি না। স্বামী বলে যে তোকে আদর দিবহ যত্ন করে খাওয়াবো, তোর সকল ইচ্ছাকে সম্মান করে মেনে নিব। বছর শেষে বাচ্চা দিব, এমন ভালো মানুষ কিন্তু আমি নাই। বিয়ে করেছিস না আমাকে? স্বামীর ভালোবাসা ছাড়াই আজীবন থাকতে হবে তোকে। আর তুই থাকতে না চাইলেও তোকে আমি বন্দি করে রাখবো। তখন স্বামীর ভালোবাসা না পাওয়ার কতটা কষ্ট যন্ত্রণা বুঝতে পারবি, – উক্ত কথাগুলো বলে গায়ের কোটটা টেনে খুলে রোদের গায়ে ফিক্কা মেরে হনহন করে রুমের বারান্দায় চলে যায়। রাদিফ ইচ্ছে করেই আর রুমের মধ্যে থাকেনি, কারণ কাউকে এতে করে চেয়েও না পাওয়ার বেদনা।
সে জায়গায় অন্য কেউ দৃশ্যটা কল্পনা করতেও রাদিফের শরীর জ্বলছে। মন তো চাচ্ছে রোদ নামের মেয়েটাকে তুলে আছাড় মারতে। আদৌ কি একদিনের জন্য রোদ কে মানতে পারবে জুথির জায়গায়? নাকি অন্য কারো জায়গা রোধ দখল করেছে বলে রোজ ব্যথায় অত্যাচারে ব্যথিত হবে? হ্যাঁ হ্যাঁ উঠতে বসতে ওকে আমি… এসব ভেবে রাদিফ নিজ হাত দুটো আবারো মুঠি বদ্ধ করে নিয়ে , চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলে, রুমে এসে রোদ কে না দেখেই শুয়ে পরলো। রোদ রাদিফের এমন ভিন্নরূপ দেখে ভয়ে আসতে রাদিফের শরীর থেকে অনেকটা দূরত্ব রেখে শুয়ে পরলো। বলা তো আর যায় না? শরীরে শরীর লেগেছে বলে দুটো চড় না মেরে দেয়। এসব ভেবে দুজনেই একটা সময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যায়।
“সময় তো কাটছে সময়ের মতো, এইতো মিনিটের পর মিনিট কেটে ঘন্টা পার হয়ে চব্বিশ ঘন্টা পেরিয়ে যেতে, জুথির জ্ঞান তখনো না ফিরতে আরিশ ওকে নিথর দেহে পড়ে থাকতে দেখে শূন্য চোখে তাকিয়ে ছিল। তার বউ টার কখন জ্ঞান ফিরবে? কখন তাকে একটু আদর দিবে? কোথায় কোথায় ব্যথা দিয়েছে নিজ হাতে ছুঁয়ে ব্যথা কমিয়ে দিবে। এই আশায়। আরিশের পরপর এসব ভাবার মধ্য , কেটে গেছে আরো দুটো ঘন্টা। তখনো জুথি একইভাবে শুয়ে আছে দেখে, আরিশ আর নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারল না। হাত দুটি মুঠি বদ্ধ করে নিথর হয়ে পড়ে থাকা জুথির দুই বাহুতে হাত রেখে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
‘বউ এখন তো ওঠ! আর কত এভাবে যন্ত্রণা দিবি? আমার বুকে ব্যথা করছে তো, ওঠ না বউ, এই বউ? বউরে চোখটা খুলনা আমার কলিজা। আরিশের এলোপাথালি অনেক কথায় জুথির কোন রেসপন্স না পেয়ে আরিশ ওর থেকে সরে হাতের কাছে রাখা কাচের জগটা উঠিয়ে মেঝেতে আছাড় মেরে মাথার চুল দু হাতে দুপাশ থেকে খামচে ধরে চেঁচিয়ে বলল,
Violent love part 39 (2)
‘হাফ ফুটের বাচ্চা, আমার অবাধ্য হোস? তখন থেকে চোখ খুলতে বলছি, চোখ খুলছিস না, সামান্য ইন্টিমেন্ট হয়েছি বলে এভাবে বিছানায় পড়ে থাকবি? ছ্যঃ আরিশ খানের বউ এতটা দুর্বল হবে জানলে, আগে কলিকাতার হারবাল খাইয়ে নিতাম। তাতে যদি এভাবে মরার মত করে পরে না থাকতি। – বলে জুথি কে জাগাবে বলে ওর কাছে তেড়ে এসে ওকে টেনে তুলতে নিলে কিছু একটা মনে করে ওকে ছেড়ে বাঁকা হেঁসে হাত দুটো পুনরায় মুঠিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে রাগে গজগজ করতে করতে, ছুটলো ডক্টর আহিলের উদ্দেশ্যে।
“গন্তব্য তার বউ কেন 24 ঘন্টা পর চোখ খোলো না? কোন *বালের ডক্টরি করে গেল ডক্টর আহিল? আজ এর শেষ দেখে ছাড়বে ও…