ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৪৫+৪৬
তাজরীন ফাতিহা
আমি বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছি,
নেত্রযুগল যেন সিন্ধুর ঢেউ!
ইন্দ্রনীল নয়ন মেলে ঝাপটালো পলক,
আমি ডুবে গেলাম এক ঝলক।
কাঠিন্য ভরা লোচনে দেখি উত্তাল পারাবার,
নীল সমুদ্রে খুঁজে বেড়াই উজ্জ্বল সীতাহার।
চাই একটুখানি হৃদ লহরীর দিদার,
নীলাভ্র, খুলবে কি সেই দ্বার?
নেওয়াজ শাবীরের কণ্ঠ থেমে গেলো। উপস্থিত সকলের দৃষ্টি তার উপর নিবদ্ধ। মার্ভ জেন, মুনতাজির জায়েদ, আজারাক সাইফার সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ নেওয়াজের কণ্ঠে কবিতা শুনে এক লহমায় সকলের কাজে ফুল স্টপ পড়ে গেলো। সবাই উপস্থিত থাকলেও জিনান আদহাম সেখানে অনুপস্থিত। মুনতাজির নেওয়াজের উদ্দেশ্যে বলল,
“গোয়েন্দাগিরি ছেড়ে কবি হয়ে গেলেন নাকি মিস্টার নেওয়াজ?”
নেওয়াজ পিছনে হাত দুটো বেঁধে প্রতিউত্তর করল,
“ভাবছি হয়ে যাবো, এত বিখ্যাত কবির ভিড়ে নিজেকে বড্ড বেমানান লাগছে।”
কথা শেষ হতে না হতেই আগমণ ঘটলো জিনান আদহামের। হাতে মোটা মোটা দুটো ফাইল। উপরে বড় বড় করে লিখিত ‘Urgent’। বোঝাই যাচ্ছে আজকে ডবল খাটনি যাবে। জিনানকে দেখে নেওয়াজ থেমে গেলো। মুনতাজির বলল,
“কি অবস্থা, এতক্ষণ হেডের রুমে? জরুরি তলব?”
জিনান এসেই নিজের বরাদ্দকৃত চেয়ারে ধপাস করে বসে শার্টের বোতাম খুলে হা করে বাতাস খেতে লাগলো। খানিক বাদে মুখ খুলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“বুঝলেন মিস্টার, জীবনে আমার সুখের কমতি ছিল না। আমি ছিলাম অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী। আমি বিশ্বাস করতাম, অ্যাডভেঞ্চার ছাড়া লাইফ মূল্যহীন। তাই ছোট থেকেই রিস্ক কাজগুলোতে আকর্ষণ অনুভব করতাম। নিজের বিশ্বাসকে পরিপূর্ণতা দিতে হয়ে গেলাম সিক্রেট এজেন্ট। ব্যাস সেইদিন থেকে জীবনে অসুখের কমতি নাই।”
বলেই ফোঁস করে দম ছাড়লো জিনান। মুনতাজির তাকে সমবেদনা জানালো। মার্ভ জেন কম্পিউটারের স্ক্রিনে চোখ রেখে মাউস নাড়াচ্ছে। আজারাক সাইফার পায়ের উপর পা তুলে বসে চেয়ার এপাশ ওপাশ ঘুরাচ্ছে আর সকলের কথা শ্রবণ করছে। নেওয়াজ এবারে মুখ খুলল,
“ভাই রিফ্রেশের জন্য একখানা কবিতা শোনাই ?”
জিনান আগ্রহী হয়ে বলল,
“অবিয়েসলি ব্রাদার, প্লিজ কন্টিনিউ।”
নেওয়াজ একটু আগের কবিতাখানা আবারও আবৃত্তি করতে লাগলো। জিনানের সরু চাহনি নেওয়াজের দিকে নিবদ্ধ হলো। নেওয়াজ এক ভ্রু উঁচিয়ে তার দিকে চেয়ে বলল,
“চাই একটুখানি হৃদ লহরীর দিদার,
নীলাভ্র, খুলবে কি সেই দ্বার?”
মুনতাজির সূক্ষ্ম নজরে উভয়কে পর্যবেক্ষণ করে কৌতুক স্বরে বলল,
“আপনাদের চক্ষু প্রেম হচ্ছে নাকি? আমরা কি দোষ করলাম ভাই?”
নেওয়াজ চোখ সরিয়ে হালকা হেঁসে পকেট থেকে আরেকটি কাগজ বের করতে করতে বলল,
“আপনাদের জন্যেও আছে।”
মুনতাজির নড়েচড়ে উৎসুক দৃষ্টি ফেলল। নেওয়াজ ভাজকৃত কাগজটি খুলে পড়তে শুরু করল,
“Beneath his ocean eyes, a thousand untold poems sleep, Where silence sways like tides in secrets deep.”
(তার সমুদ্র দৃষ্টির অন্তরালে ঘুমিয়ে আছে হাজারো অপ্রকাশিত কবিতা, যেখানে গভীর রহস্যের নীরবতা ঢেউয়ের মতো দোদুল্যমান।)
মার্ভ জেন এপর্যায়ে মুখ খুলল,
“জাস্ট কিউরিয়াস, হঠাৎ এই প্রেমময় কাব্যিক আলোচনার স্পেসিফিক কারণ আছে কি?”
নেওয়াজ চেয়ারে বসে রিল্যাক্স মুডে বলল,
“আসলে হয়েছে কি, খুবই মনোযোগের সহিত ফাইল ঘাটছিলাম। হঠাৎ ফাইলের মধ্যে এত রোমান্টিক রোমান্টিক কবিতা, চিরকুট পেয়ে খুশি হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়লো, আরে শালা আমার চোখ তো নীলও নয় আবার সমুদ্রের মতোও নয় তাহলে আমি খুশি হচ্ছি কেন?”
মার্ভ জেন, মুনতাজির ভাবনায় মশগুল হলো। কি মনে করে মার্ভ জেনের সরু চাহনি জিনানের উপর পড়ল। যার চোখ বর্তমানে ফাইলে আবৃষ্ট। মুনতাজিরও তার চোখ অনুসরণ করে সেদিকে চাইল। হঠাৎ নিজ আসন ছেড়ে উঠে এসে বলল,
“আদহাম সাহেব, আপনার আঁখিতে আমার নয়ন মিলাতে চাই, অনুমতি প্লিজ।”
জিনান লেখা স্থির রেখে ফাইল থেকে মুখ উঠিয়ে চাইলো। মুনতাজির তুড়ি বাজিয়ে বলল,
“কি যেন একটা মিলছে মনে হচ্ছে? ইউরেকা, পেয়ে গেছি! নিলি নিলি আঁখি। ”
আজারাক সাইফার চেয়ার ছেড়ে উঠে নিজের কোট ঝেড়ে মুনতাজিরের পাশ ঘেঁষে হেঁটে যেতে যেতে বলল,
“এটা মিলাতে এতক্ষণ লাগল মিস্টার মুনতাজির? ইন্দ্রনীল নয়ন, নীলাভ্র, ‘his ocean eyes’ যখন বলেছে তখনই তো বুঝে যাওয়ার কথা।”
মুনতাজির চোখ তীক্ষ্ণ করে বলল,
“আমি আসলে ভেবেছিলাম নেওয়াজ সাহেবের ইয়ে তার জন্য কবিতা লিখলো কিনা?”
কথাটায় সূক্ষ্ম খোঁচা ও রসিকতার আঁচ। নেওয়াজ মাথার পিছনে হাত রেখে পায়ের উপরে পা তুলে বসে ছিল। মুনতাজিরের কথা শুনে লাফিয়ে ওঠার ভঙ্গিতে বলল,
“হোয়াট!! আমার ইয়ের কবিতা আপনাদের শোনাতে যাবো কোন দুঃখে? ওয়েট, ইয়ে কি?”
“ইয়ে মানে বিয়ে। আই মিন বউ আরকি।”
“আমার বউয়ের কবিতা এখানে বলব কোন লজিকে? হোয়াট এ কমনসেন্স?
আজারাক ফাইল নিয়ে হেঁটে আসতে আসতে বলল,
“তার কমনসেন্স রেস্ট নিচ্ছে। ডোন্ট প্যানিক।”
মুনতাজির বাঁকা হেঁসে নেওয়াজের দিকে চাইলো। যেন এসবে তার কিছু যায় আসেনা। সে উৎফুল্ল ভঙ্গিতে জিনানের কাঁধে হাত রেখে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“কার, হুম?”
মার্ভ জেন এবার ঘাড়ে ম্যাসেজ করতে করতে বলল,
“আপনার জন্য তো নয়, আপনি এত খুশি হচ্ছেন কেন?”
“সিঙ্গেল সম্ভবত। মিঙ্গেল হলে বুঝত এগুলো জ্বলন্ত অঙ্গার ছাড়া কিছু না।”
নেওয়াজের ঝটপট উত্তর। আজারাক নিজের বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে বলল,
“শুনুন মিস্টার মুনতাজির, ওটা তার একান্ত কেউ তাকে উদ্দেশ্যে করে লিখেছে। তাই তাকে জেরা করা বন্ধ করুন। একান্ত কথা একান্ত থাকাই শ্রেয়, দোকান্ত হলেই সমস্যা। কি দরকার অন্যের পার্সোনাল বিষয় শোনার?”
মুনতাজির ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করে বলল,
“নিরামিষ।”
নেওয়াজ বিরস মুখে বলল,
“মিস্টার সাইফার ডোন্ট বি হাইপার। It’s just for fun, don’t take it seriously.”
আজারাক কথা না বাড়িয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে কাজে মনোনিবেশ করল। বাকিরাও কাজে মনোযোগী হলো। পুরো অফিসকক্ষে নীরবতা নেমে আসলে জিনান চেয়ারে হেলান দিয়ে মাথা চেপে ধরলো।
উমায়ের ভুঁইয়া, উজান ভুঁইয়া উভয়ই উর্মি ভুঁইয়ার শিয়রের পাশে বসে আছেন। ইনাবা মায়ের অসুখ শুনে গত পরশু বাড়িতে এসেছে। এসে পুরো বাড়ি মাতিয়ে ফেলেছে। মানহার বেশ আরাম লাগছে। এতদিন পর মরা বাড়িটায় প্রাণ এসেছে যেন। ইনাবা মামাদের জন্য নাস্তা নিয়ে বাবা মায়ের রুমে ঢুকল। টেবিলে সেসব সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। উমায়ের ভুঁইয়া ভাগ্নিকে দেখে কাছে ডাকলেন। ইনাবা উমায়ের ভুঁইয়া আর উজান ভুঁইয়ার মাঝে ঝট করে বসে পড়ল। উজান ভুঁইয়া চা হাতে নিয়ে বিস্কুট ভিজিয়ে খাচ্ছিলেন ইনাবা বসাতে চা ছলকে তার গায়ের উপর পড়ায় চিৎকার করে বললেন,
“নাবার বাচ্চা!!”
ইনাবা জিভে কামড় বসিয়ে বলল,
“স্যরি মামুজান।”
“তোর স্যরি দিয়ে আমি কি করব? আমার সাধের চা।”
“অমন করছ কেন? আরেক কাপ এনে দিচ্ছি।”
উমায়ের ভুঁইয়া চোখ রাঙিয়ে বললেন,
“আশ্চর্য সামান্য চায়ের জন্য এটা কেমন বিভেব উজান? চা না খেলে মরে যাবি? এমন একটা ভাব করছিস মনে হয় জীবনেও চা দেখিসনি। ইডিয়ট কোথাকার।”
ইনাবা বড় মামাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আরে মামু রুক জাইয়ে, মামুজান মজা করছে আমার সাথে। তুমি চা খাও তো।”
উমায়ের ভুঁইয়া ভাগ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে উর্মি ভুঁইয়ার সাথে আবারও কথায় মশগুল হলেন। ইনাবা ছোট মামার দিকে মাথা এগিয়ে বলল,
“মামুজান আজকে ঘুরতে নিয়ে যাবে?”
“কোথায় যেতে চাস?”
ইনাবা ভাবুক হয়ে বলল,
“ভাবির গ্রামের ঐদিকে যাওয়া যায়। জায়গাটা বেশ সুন্দর।”
“ওকে। এবার নুডুলসটা দে।”
ইনাবা নুডুলসের বাটি এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
“তুমি প্রচণ্ড ফুডি।”
উজান ভুঁইয়া খেতে খেতেই জবাব দিলেন,
“ফুড ছাড়া আমি কিছু নারে। পেটে খাবার না পড়লে আমার ক্যান্সার হয়।”
ইনাবা চোখ কপালে তুলে বলল,
“হোয়াট ক্যান্সার??”
উজান ভুঁইয়া নুডুলস এতই মুখে পুড়েছেন যে কথা বলতে পারছেন না। দ্রুত গিলে বললেন,
“থুক্কু ওটা আলসার হবে। খাওয়ার সময় কথা বলিস না তো, কথা গুলিয়ে ফেলি।
“তুমিও না।”
কথা শেষ করে ইনাবা মিট বক্স এগিয়ে দিল যেটা সে নিজ হাতে বানিয়েছে। উজান ভুঁইয়া নুডুলস গপাগপ খেয়ে মিট বক্সের উপর হামলে পড়লেন। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া রুমে ঢুকে উর্মি ভুঁইয়ার ভাইদের দেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললেন। উজান ভুঁইয়াকে এভাবে খেতে দেখে কপাল ভাঁজ করে বললেন,
“আস্তে খাও। খাবার পালিয়ে যাচ্ছে না।”
মনে মনে বললেন,
“কয় বছরের অভুক্ত কে জানে? চেয়ারম্যান বাড়ি সুদ্ধ খেয়ে ফেলবে মনে হচ্ছে।”
ইমতিয়াজ ভুঁইয়ার কথা শুনে উমায়ের ভুঁইয়া, উর্মি ভুঁইয়া উভয়ই চাইল। উমায়ের ভুঁইয়া নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করলেন। ইনাবা বাবাকে দেখে এগিয়ে গেলো। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া মেয়েকে আদর করলেন। বড়দের কথার মাঝে না থেকে ইনাবা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া খেয়াল করলেন উর্মি ভুঁইয়া তার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আশ্চর্য সে কি করেছে? সে চোখ সরিয়ে শালা, সমন্ধির সাথে কথা বলল। তারা কিছুক্ষণ আলাপ করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। রুম থেকে বের হতেই ইমতিয়াজ ভুঁইয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কোনোদিকে না তাকিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলেন। বের হয়ে দেখলেন উর্মি ভুঁইয়া চোখ বুজে আছেন। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে রুম থেকে বেরুতেই দেখলেন দেয়াল ধরে মানহা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে ফ্লোর খুঁটছে। তিনি কপাল মসৃণ করে স্বভাবসুলভ গম্ভীর গলায় বললেন,
“দাঁড়িয়ে আছ কেন? কিছু বলবে?”
মানহা মিনমিন করে বলল,
“ইয়ে মানে আব্বু নাস্তার ট্রেটা নিতে এসেছি।”
ইমতিয়াজ ভুঁইয়ার কেমন যেন লাগল। আগে সারাক্ষণ উর্মি ভুঁইয়ার সাথে সাথেই থাকত আর এখন রুমে ঢুকতেও ভয় পাচ্ছে মেয়েটা। উর্মি ভুঁইয়া কি আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিয়েছে মেয়েটার মধ্যে। তিনি নিজেই নাস্তার ট্রে এনে মানহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
“ইনাবা কোথায়?”
“আপু বাড়ির সামনে ছোট মামার সাথে ব্যাডমিন্টন খেলছেন।”
“মেইডরা কোথায়?”
“ওনারা কাজ করছেন, তাই আমিই এলাম।”
মানহার ধীর কণ্ঠ। ইমতিয়াজ ভুঁইয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
“আচ্ছা যাও।”
বলেই ইমতিয়াজ ভুঁইয়া চলে যেতে নিলে মানহা ডাকলো,
“আব্বু, একটু বাবার বাসায় যেতে চাচ্ছিলাম।”
ইমতিয়াজ ভুঁইয়া ভ্রু কুঁচকে বললেন,
“কবে?”
“আজই, ইনাবা আপুর সাথে। আবার চলে আসব।”
“ইহাব যাবে না?”
মানহা মাথা নিচু করে বলল,
“ওনাকে জানাইনি এখনো।”
“জানাও। ও গেলে যাও, সমস্যা নেই।”
বলেই রুমে চলে গেলেন তিনি। মানহা মুখ গোমড়া করে ট্রে রেখে নিজের রুমে চলে এলো। ওনাকে বললে যদি যেতে না দেয়। গতরাতে ফোনে কার সাথে যেন রাগারাগি করেছে। আবার খুব সকালে গম্ভীর মুখে বাইরে বেরিয়ে গেছে। তাই কিছু বলতে ভয় পাচ্ছে। তার সাথেও যদি রাগারাগি করে। ফোন হাতে নিয়ে কয়েকবার ডায়াল করতে গিয়েও ফিরে আসছে। শেষে সাহস নিয়ে “বদ জ্বীন” লেখা নাম্বারটাতে ফোন দিয়ে কানে ধরলো। রিং হচ্ছে তবে ধরছে না। মানহা ট্রাই করল বেশ কয়েকবার। শেষে জিদে কান্না পেয়ে গেল। লাস্ট আরেকবার ডায়াল করতেই রিসিভ হলো। মানহা রিসিভ হতেই সালাম দিলো,
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম সালাম।”
(বিঃদ্রঃ সঠিক উচ্চারণ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কাজেই উপরিউক্ত ভাবে সালাম দেয়া পরিহার করবেন সবাই।)
“শুনছেন?”
“শুনছি, বলো।”
“কি করছেন?”
“কোস্তাকুস্তি করি।”
“এ্যা, এটা কেমন উত্তর?”
“যেমন প্রশ্ন তেমন উত্তর।”
“উফফ আপনি সোজা কথা এত প্যাঁচান কেন?”
“কি করছি তা জানার জন্য নিশ্চয়ই ফোন দাওনি? কি বলবে সোজাসাপ্টা বলো।” ইহাবের রূঢ় কণ্ঠ।
মানহা একটু দম নিয়ে বলল,
“আপনি কোথায়?”
“এইতো কাজীর সামনে। কোস্তাকুস্তি শেষে কবুল বলব।”
মানহা চিল্লিয়ে বলল,
“কিহ!! আপনি কি আমার সাথে মশকরা করছেন?”
“তোমার কি মনে হচ্ছে?”
“মশকরাই তো মনে হচ্ছে।”
ওপাশ থেকে ইহাবের উত্তর,
“তোমার কথাও আমার মশকরা মনে হচ্ছে।”
মানহা দাঁত খিঁচে বলল,
“আমি মশকরার কি করলাম?”
“করোনি?”
মানহা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“না।”
“ও আচ্ছা। ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছো, কি করছেন? আপনি কোথায়? এগুলো মশকরা নয়তো কি আস্কারা? তুমি জানো না এই টাইমে আমি কোথায় থাকি, কি করি?”
মানহার নিজের প্রতি নিজের মারাত্মক রাগ হলো। সে তো এমনি জাস্ট কথা আগাতে কথাগুলো বলছিল। এত ক্ষেপে যাবে তা তো বোঝেনি। লোকটার মাথা যে গরম সেটা কথাতেই বোঝা যাচ্ছে। মানহা বোধহয় আরও রাগিয়ে দিল। এখন যদি বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে তাহলে কি করবে ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে। সে আর কথা না বাড়িয়ে বলল,
“আচ্ছা ভুল হয়েছে আমার। আপনি কাজ করুন।”
বলেই ফোন কেটে বন্ধ করে রাখল। কান্না পাচ্ছে তার। তবে কাঁদল না। শক্ত হয়ে সব কাজ করল। ইনাবা তাকে অনেকবার যেতে সাধলেও সে না করে দিলো। শেষে না পেরে ইনাবা তার মামাদের সাথে একাই ঘুরতে চলে গেল। মানহা রুম আটকে পড়ে রইল। রাত দশটা নাগাদ ইহাব আসলো। নিজের রুমের সামনে এসে দরজা বন্ধ দেখে কয়েকবার ধাক্কালো। একটুপর দরজা খোলার আওয়াজ এলো। ইহাব রুমে ঢুকে দেখল ঘর অন্ধকার। সে কপাল কুঁচকে লাইট জ্বালালো। বিছানায় তাকিয়ে দেখল মানহা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। ইহাব কপাল কুঁচকেই বলল,
“অসুস্থ নাকি?”
কোনো উত্তর এলো না। ইহাব সেদিকে আর না ঘেঁটে হাতঘড়ি, ঘর্মাক্ত শার্ট খুলে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো। ডিভানে কিছুক্ষণ বসে ঠান্ডা হলো। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। মানহাকে আগের ন্যায় দেখে কপালে ভাঁজ পড়ল। ইহাব মুখ মুছে মানহার পাশে বসল। কাঁথা সরাতে গেলে মানহা শক্ত করে ধরে রাখল। ইহাব জোর খাটিয়ে তা সরিয়ে দেখল মানহার চোখ মুখ মুখ ফুলে আছে। সে অবাক হয়ে বলল,
“কি হয়েছে তোমার? চোখ, মুখের এই অবস্থা কেন? খাওয়াদাওয়া করোনি?”
মানহা শক্ত হয়ে বলল,
“আমার চিন্তা না করলেও চলবে। সরুন।”
ইহাব অবাক গলায় বলল,
“আশ্চর্য কাঁদছো কেন? মেরেছে কে? আমি তো মারিনি তাহলে?”
মানহা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“সুখে কাঁদি। আমি তো মানুষ না রোবট তাই খালি ভ্যাটকাবো।”
ইহাব মানহার পাশে শুয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“এতক্ষণ পরে স্বামী এসেছে ভ্যাটকাবে না তো কি ল্যাটকাবে?
মানহা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,
“বেডা জাত। কাজের সময় নাই। বাইরে থাকলে রাজার ব্যাটা সাজে, ঘরে আসলে রোমান্স খোঁজে।”
ইহাব বলল,
“কথা বলো না। ফিল করতে দাও। ডোন্ট ডিস্টার্ব।”
মানহা নিজের কথার গুরুত্ব না পেয়ে নড়েচড়ে বলল,
“কালকেই ভাইয়ার কাছে চলে যাব।
ইহাব তা শুনে মানহাকে চেপে ধরে গুনগুন করে গাইলো,
“তুমি আমার রোমান্স,
আমি তোমার পাপ্পি।
শ্লা ব্রোকে কাট্টি।
মানহা ধস্তাধস্তি করে কোনরকম বলল,
“ভাইয়া জানলে মারবে আপনাকে লাত্থি।
নিশাতের সাথে মারওয়ানের মাঝে অদৃশ্য যুদ্ধ চলছে। কেউ কারো সাথে কথা বলছে না। উভয়ই নির্লিপ্ত। ছেলেকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে কথাবার্তা বলছে। নিশাত রান্নাঘরে রাতের রান্নার আয়োজন করছে। আজকে করবে রুই মাছ ভুনা আর পাতলা ডাল। হঠাৎ কি মনে করে মারওয়ানের নম্বরে ডায়াল করে ছেলের কানে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“বাবাকে শুধু বলবে, আজকে মাছ আর ডাল রান্না হচ্ছে।”
বাকিটা মারওয়ান আজাদ বুঝে নিবে। রোজ রোজ গোশত ভাত খেতে চায় যেন কোন দেশের নবাব। নাহওয়ান ফোন কানে নিয়ে বসে আছে। মারওয়ান ধরলে নাহওয়ান বলল,
“বাবা, আচকে মাচ ডাল লান্না হচ্চে।”
ওপাশ থেকে মারওয়ানের চোখ কুঁচকে গেল। বলল,
“আচ্ছা।”
“বাবা তক্কেট আনিও।”
“আনবো না।”
“ইননা।”
“রাখ পান্ডা।”
“আচ্চা লাকি।”
ওপাশ থেকে টুট টুট শব্দ এলেও নাহওয়ান কান থেকে ফোন নামালো না। বাবা বাবা করতে থাকল। নিশাত ছেলের কান থেকে ফোন নিয়ে রেখে রান্নায় মন দিল। একটু পর নাহওয়ানকে বাটিতে গুঁড়ো দুধ দিয়ে গেল। বাচ্চাটা দুধ পেয়ে দুহাতে নিয়ে খাচ্ছে। পুরো জামা ভরিয়ে ফেলেছে। খাওয়া শেষ হতেই মায়ের কাছে গিয়ে বলল,
“মা, কেয়েচি।”
নিশাত ঘুরে নাহওয়ানের এই দশা দেখে মাথায় হাত দিল।
“এসব কি করেছো?”
নাহওয়ান ফোকলা হেঁসে বলল,
“ইট্টু ডুড কেয়েচি।”
নিশাত ছেলের হাত, মুখ সব ধুয়ে দিতে দিতে বলল,
“দুধ এভাবে খায়? সব ভরিয়ে ফেলেছো।”
বুকের কাছে জামার উপরের গুঁড়ো দুধ ঝেড়ে পরিষ্কার করে দিল। তারপর ছেলেকে কোলে নিয়েই রান্না করতে লাগলো। রান্না শেষে ওযু করে এশার নামাজে দাঁড়ালো। নাহওয়ানও মায়ের পাশে নিজের ছোট্ট টুপি পড়ে দাঁড়িয়ে গেল। নামাজ শেষে দুই মা, ছেলে কোরআন তিলওয়াত করল। করেছে নিশাত আর তার কোলে বসে চুপটি করে বসে তা শুনেছে নাহওয়ান। প্রার্থনা শেষে স্কুলের পরীক্ষার খাতা দেখতে বসে গেল নিশাত। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। মারওয়ান রুমে ঢুকে বিছানার উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাগজ দেখে বলল,
“ঘরে এসেও শান্তি নেই। নিজের মর্জি মতো বাসা বানিয়ে রেখেছে। মাছ রান্না করে, খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিছানা ভরে রাখে। একবিন্দু শান্তি নেই কোথাও। নিশাত কথা না বাড়িয়ে খাতাপত্র গুছিয়ে পাশের রুমে চলে গেল। ঐ লোকের সাথে কথা বলা বাদ দিয়েছে সে। অযাচিত কথা বলার কোনো মানেই হয়না। মারওয়ান নিশাতকে চুপচাপ চলে যেতে দেখে ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল,
“অ্যাটিটিউড।”
নাহওয়ানকে দেখে বলল,
“ওই কবুতরের ছাও খেয়েছিস?”
নাহওয়ান গোলগাল শরীরটা নিয়ে দৌঁড়ে এসে মারওয়ানের পা ঝাপটে ধরে বলল,
“কাইনি।”
মারওয়ান ছেলেকে কোলে নিয়ে বলল,
“ভালো করেছিস। আমার সাথে বিরিয়ানি খাবি।”
নাহওয়ান মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল,
“মুজা মুজা কাবো।”
“হ্যাঁ। পকেটে হাত দে।”
নাহওয়ান বাবার বুক পকেটে হাত ঢুকিয়ে চকলেট বের করে আনল।
রাত দুইটা। নিশাতের ব্যাক পেইন উঠেছে। একটু চোখ বুজেছিল হঠাৎ ব্যথায় শিরদাঁড়া টনটন করছে। খাতা কেটে কিছুক্ষণ আগেই শুয়েছিল সে। আচমকা ঘুম ভেঙে যাবে বুঝতে পারেনি। পাশের রুমে ছেলে আর ছেলের বাপ ঘুমাচ্ছে। বেশি রাত জাগলে এই রুমে সে একাই ঘুমায়। আজকেও ব্যতিক্রম হয়নি। ধীরে ধীরে কোমরে হাত রেখে আলমারি ধরে দাঁড়ালো। চারপাশ অন্ধকার। লোকটা সব বাতি নিভিয়ে দিয়েছে। জানে সে বাতি না জ্বালিয়ে ঘুমাতে পারেনা। শরীরে কাঁটা দেয়। তাই ইচ্ছে করে করেছে। অন্ধকারে লাইটের সুইচ খুঁজে পাচ্ছে না। ব্যথায় দাঁড়াতে পারছে না। গলা শুকিয়ে এসেছে।
পানি পিপাসা লেগেছে। কোনরকম দেয়াল ধরে ধরে রান্নাঘরে গেল। রান্নাঘরের বাতি জ্বালিয়ে পানি পান করল। ছোট পাতিলে গরম পানি বসিয়ে দিল। রান্নাঘরের সিংক ধরে দাঁড়িয়ে রইল।
মারওয়ান বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল। প্রতি রাতেই টানে। সিগারেট খাওয়া নেশায় পরিণত হয়েছে। না খেলে অস্বস্তি হয়, আরাম লাগে না। কিছুতেই ছাড়তে পারেনা। হঠাৎ ভিতর থেকে টুং টাং শব্দ শুনে সিগারেটে লম্বা টান মেরে সেটা বাইরে ফেলে রুমে আসলো। রান্নাঘর থেকে আলো আসায় সেদিকে এগিয়ে গেল। রুম থেকে উঁকি মেরে দেখল নিশাত কোমরে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চুল খোলা। চুলায় সম্ভবত কিছু দিয়েছে কিন্তু কি তা বোঝা যাচ্ছে না। নিশাত দাঁড়িয়ে থাকায় ভালোভাবে দেখতে পারছে না। যাবে কি যাবে না এই দোনামনায় পা বাড়াল। নিশাতের পিছন থেকে উঁকি মেরে দেখল চুলায় গরম পানি ফুটছে। মারওয়ান দৃষ্টি সংকুচিত করে ভাবলো এই রাতে গরম পানি দিয়ে কি করবে? চা খাবে নাকি?
নিশাত পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল। কাউকেই দেখল না। মনের ভুল সম্ভবত। কাঁপা কাঁপা হাতে গরম পানি নামালো। অস্বাভাবিক কাঁপছে হাত দুটো। র্যাক থেকে হট ওয়াটার ব্যাগ নামিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে গরম পানি ভরতে নিলে অর্ধেকটুকুই পড়ে গেল। নিশাত ব্যথায় অসহায় হয়ে কান্না করে দিল। কাঁপতে কাঁপতে ব্যালেন্স না রাখতে পেরে পড়ে যেতে নিলে শরীরটা শক্তপোক্ত কিছুর সাথে বাধা পেল। সে কান্নারত মুখটা উঠিয়ে সেদিকে চাইল। মারওয়ানের কাঠিন্য মুখ নজরে এলো। মারওয়ান তখন মুখ ধুতে গিয়েছিল। নিশাত নিজের দৃষ্টি সরিয়ে আবারও ব্যাগে পানি ভরতে নিলে মারওয়ান খ্যাচ করে তা টেনে নিল। সে নিজের ভারসাম্য সিংকে দিয়ে দুই হাত মাজায় রেখে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। মারওয়ান গরম পানি ভরতে ভরতে বলল,
“এখনো তেজ কমে না।”
পানি ভরা শেষে নিশাতের দিকে চাইল। যে বর্তমানে চোখ বন্ধ করে পিছনে যতটুকু হাত যায় ততটুকু দিয়ে টিপছে। চোখের কোণায় পানি শুকিয়ে আছে। বোঝাই যাচ্ছে অতিরিক্ত ব্যথায় কাহিল হয়ে গেছে বেচারি। মারওয়ান নিশাতের ব্যাক সাইডে ওয়াটার ব্যাগ ধরে রাখল। নিশাত ঘুরে নিতে চাইলে মারওয়ান শক্ত করে ধরে রাখল তাকে। তাই নড়তে পারল না সে। খানিকপর ব্যথা কিছুটা কমে এলে নিশাত বলল,
“আর লাগবে না। কমেছে ব্যথা।”
মারওয়ান একহাতে নিশাতকে উঠিয়ে নিজেদের ঘরে নিয়ে বিছানায় বসালো। নিশাত কিছুটা জোরেই বলল,
“আমি ঘুমাব। টানাহেঁচড়া পছন্দ না।”
মারওয়ান নিশাতের কথা গ্রাহ্য না করে তাকে জোর করে শুইয়ে দিয়ে ওয়াটার ব্যাগ চেপে ধরে রাখল। শুতে গিয়ে নিশাত ব্যথা পেয়ে হালকা শব্দ করে উঠল। মারওয়ান বলে উঠল,
“কলকব্জা সব নড়ে গেছে তবুও বিয়ের জন্য সম্বন্ধ আসে। রুচি কি ছ্যাহ!”
নিশাত প্রতিউত্তর করল না। ঐদিনের সম্বন্ধ আসার পর মারওয়ান হেন কথা নাই যে খোটা মারেনি। নিশাত প্রথম প্রথম চিল্লালেও এখন আর রা করেনা। কথায় কথা বাড়ে। এই লোককে বোঝানোর সাধ্য তার নেই। মারওয়ান কোমরে মালিশ করে দিতে দিতে বলল,
“বাচ্চার মা, চলন বলন হবে মা মা অথচ সাইজের জন্য দেখা যায় বাচ্চা বাচ্চা। মন চাচ্ছে ধ্বজভঙ্গ কোমর আরও ভেঙে দিতে। লাঠি নিয়ে চলাচল করবে তাহলে আর বিয়াত্তা মহিলার সম্বন্ধ আসবে না, তেজও দেখাবে না।”
নিশাতের সাড়া শব্দ নেই। মারওয়ান কিছুক্ষণ একা একা বকবক করে উঁকি দিয়ে দেখল নিশাতের চোখ বন্ধ। মারওয়ান নিঃশ্বাস ফেলে শুয়ে পড়ল। বিড়বিড় করে বলল,
“উচিত কথা বললে কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না। এতক্ষণ কাকে কি বললাম? ঝগড়া করতে বলো ফাল দিয়ে উঠবে। শালার বেডি জাত।”
ভবঘুরে সমরাঙ্গন পর্ব ৪৪
নিশাতের ঠোঁট প্রসারিত হলো। ঘুমায়নি সে। শক্ত হাতের মালিশে আরামে চোখ বুজে ছিল। মারওয়ানের হাত সরে যাওয়ায় ভালো লাগছিল না। নিশাতের মাথায় চট করে বুদ্ধি এলো। চোখ বুজেই হঠাৎ কোমর ধরে ব্যথায় গুঙিয়ে উঠল। ভাবখানা এমন যেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে। মারওয়ান তার দিকে একপল চেয়ে শুয়ে থেকেই কোমরে হাত দিয়ে মালিশ করতে লাগল। নিশাত আবারও আরামে চোখ বুজলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে মনে মনে বলল,
“নারীর ছলনার কাছে পুরুষ তুমি শিশু।”