Violent love part 42

Violent love part 42
Mariam akter juthi

“সন্ধ্যা রাত, তবে ঘড়ির কাটায় ৮.৩৭ মিনিট। জুথি আরিশের রুমে বসে ওর জামা কাপড় গুলো ভাঁজ করে কভারে ভরছিল। কারণ আরিশ রুমের দরজা বাহির থেকে পিন লক সেটআপ করে গেছে। যাতে করে জুথি সেদিনের ন্যায়, ওর রুম থেকে জুথির রুমে যেতে না পারে। জুথি জামাকাপড় গুলো রাখার এক সময়, আরিশ দরজা খুলে ভিতরে আসতে জুথি আড় চোখে একবার দেখেও দেখল না। বরং আগের ন্যায় জামা কাপড় গুলো কভারে রাখছিল। জুথি কে জামা কাপড় গুলো রাখতে দেখে, আরিশ স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল,

‘মৌ?
“তিন তিনটা দিন পর, আরিশের মুখে মৌ ডাকটা শুনে, জুথির হৃদয়টা আঁতকে উঠলো। চোখ দুটোতে মুহূর্তেই পানি এসে টলটল করল। তবুও আরিশের ডাকে পিছন ঘুরে তাকালো না। বরং ওকে আগের ন্যায় ইগনোর করে জামা কাপড় গুলো রেখে কাভার টা আটকে, আরিশের পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে আরিশ আবারো স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
‘ডাকলাম তো? কানে যাচ্ছে না?
কে শুনে কার কথা? জুথি নিজের মতো করে, আরিশের থেকে চলে আসতে নিলে আরিশ ওর ডান হাতের বাহু টেনে ঘুরিয়ে ওর সামনে এনে দুই বাহুতে হাত রেখে চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘সমস্যা কই?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘,,,,,,,,,,,,। — জুথি কে কিছু না বলে নিচের দিক তাকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, আরিশ পরপর দুটো নিঃশ্বাস ফেলে। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ওকে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরতে নিলে, জুথি ওকে সজোরে নিজের থেকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাতে, আরিশ হঠাৎ ধাক্কায় ব্যালেন্স হারিয়ে পিছিয়ে যায়। দু সেকেন্ড পার হতে, আরিশ কি হয়েছে বুঝতে পেরে, দাঁতে দাঁত চেপে চোখ গরম করে জুথির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘মৌ আমাকে রাগাস না, আদর করতে এসেছি। চুপচাপ সহ্য করে নে। আর নয় তো, – এতটুকু বলে আরিশ অন্য দিক তাকিয়ে ঘন ঘন কয়েকটা নিশ্বাস ফেলে, মাথা দুপাশ ঘুরিয়ে জুথির দিকে হাত বাড়িয়ে ওকে কাছে ডেকে বলল,
‘কাম, ভীষণ আদর করার ইচ্ছে হচ্ছে, সত্যি বলছি ব্যথা দিব না।

জুথি আরিশের কথার মানে বুঝে, চোখ দুটো গরম করে তাকালো। তবে এই লোককে যে, ও কিছু বলতে পারবে না, এটা জেনে ইগনোর করে চলে যেতে, আরিশ জুথি কে বারবার এভাবে ইগনোর করতে দেখে, নিজেকে বারবার স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে চেয়েও রাখতে পারল না। সে তো এসেছিল তার মৌ কে একটু ভালোবাসা দিবে বলে, তাকে একটু আদর করবে বলে। কিন্তু এই মেয়ে তাকে কোনদিনও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে দেবে না। আরিশ রাগে শূন্য হয়ে, ওকে টেনে মুহূর্তেই দেয়ালের সাথে চেপে ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিতে, জুথি আরিশের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে, আরিশ ওকে ছাড়লো না। বরং নিজের রাগ কমানোর জন্য সেই সমস্ত রাগ, জুথির ঠোটের উপর ছাড়লো। আরিশের এক সময় রাগ কমে আসতে, জুথির ঠোঁট ছেড়ে উঠে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আমি ততক্ষণই স্বাভাবিক থাকবো, যতক্ষণ পর্যন্ত তুই আমাকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করবি। অন্যথায় মনে রাখিস, তোকে আমি এক চুল পরিমাণও ছাড় দেবো না। দরকার হয় তোকে মেরে নিজেও মরে যাব। তবুও আমার অবাধ্যতা হতে দিব না।
আরিশ কথাগুলো বলতে, জুথি মুখ ফিরিয়ে অন্যপাশ তাকালো। তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝরলো। তার এসব শুনতে ভালো লাগছে না, তাই অন্যপাশ তাকাতে আরিশ বারবার নিজের রাগকে স্বাভাবিক রাখতে চেয়েও পারল না,জুথির মুখ ফিরানো দেখে নিভে যাওয়া রাগটা পুনরায় মস্তিষ্কে জাগ্রত হতে, আরিশ ওকে ওর দুই বাহু চেপে চেঁচিয়ে বলল,

‘মৌয়ে’র বাচ্চা তোর সাহস হয় কি করে? আমাকে ইগনোর করার? অন্য দিক মুখ ফিরিয়ে থাকার? বল..?
জুথি ভয়ে সিটিয়ে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বললো,
‘আপনি আমাকে এভাবে ঘর বন্দী করে রাখবেন কতদিন? শুনুন, আপনি যদি জোর করে আমার উপর অধিকার খাটাতে আসেন তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে দিব।
জুথির এতুর কথায় আরিশ দাঁতে দাঁত চেপে জুথির চুলের মুঠি ধরে ওর চিবুক চেপে বললো,
‘একটুখানি পুটুলি, বলে কিনা নিজেকে শেষ করে দিবে? মনে তো চাচ্ছে তুলতুল নরম গাল চাপ রে লাল করে দেই। আরিশ হঠাৎ ওকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে হাত দুটো মুঠিবদ্ধ করে রুম থেকে বেরিয়ে, পুনরায় আবারো বাহির থেকে পিন লক সেটআপ করে দিল। কারণ এই মেয়ের সামনে থাকলে নির্ঘাত ওর মাথায় রক্ত উঠে যাবে তখন আবারো আঘাত করবে পরবর্তীতে সে নিজেই কষ্ট পাবে।

আরিশ দরজা বন্ধ করে চলে যেতে জুথি ওভাবেই বালিশে মুখ চেপে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
‘কেন এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন আমাকে?কেন এভাবে ভালোবাসার দহনে পোড়াচ্ছেন? আমি তো আপনাকে ভালোবাসি। তাহলে আপনি কেন বোঝেন না? আমার অভিমান? আমার কষ্ট? আপনি যদি আমাকে মেরে কেটে ভাসিয়েও দেন, তবুও আমার আপনাকেই চাই। পৃথিবীর সবচাইতে নিকৃষ্ট কাজও যদি আপনি আমার সাথে করেন, তবুও আপনি ময় আপনিটা কেই বরংবার চাই। কিন্তু আমি নিজেকে আর আপনার কাছে সঁপে দিবো না, আমিও দেখবো আপনি জেদ দেখিয়ে কতদিন আমাকে এভাবে আটকে রাখতে পারেন।

আরিশ ইচ্ছে করেই রুম থেকে বেরিয়ে গেছে, আর নয় তো এই মেয়েকে আজ সে আদর করতোই। কতদিন হয়ে গেল? তার মৌ কে সে একান্ত নিজের করে পায় না। তাই কখন কন্ট্রোল হারিয়ে আবারো জোর করে কিছু করলে, তখন দেখা যাবে তার বউটা এবার আর তিন দিন নয় বরং দশ দিন অচেতন হয়ে পড়ে থাকবে। কারণ সে অল্প আদর করে সন্তুষ্ট নয়, তার যতক্ষণ পর্যন্ত মন না ভরবে সে তার বউকে আদর করবে। তাই জোর করে নয়, বরং দুজনার স্ব-ইচ্ছায় পরবর্তীতে হবে। আর রইল বাকি? তার মৌ নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথাটা? তাহলে সেটা কোনদিনও জুথি পারবে না। কারণ সেই সমস্ত কোন জিনিস আরিশ নিজের রুমে রাখিনি যেটা দিয়ে জুথি নিজেকে আঘাত করতে পারবে। তাই নির্ভয়েই আরিশ রুম ত্যাগ করেছে তৎক্ষণে।

“আজ ৮ দিন হল জিয়ানলুইজি গ্যান্টানার’ খান বাড়ির বিয়ে উপলক্ষে এখানে এসেছেন। জুথির অসুস্থতার জন্য ওনারা এখন পর্যন্ত যেতে পারেননি। এখন যখন জুথি মোটামুটি সুস্থ আছে তাই ওনার ফ্যামিলি নিয়ে সুইজারল্যান্ড ফিরবে বলে গোছগাছ করলে,আরিশ ওনাদের যেতে নিষেধ করে আরো কিছুদিন থাকতে বললে, উনারা থাকার ইচ্ছা পোষণ করলেও, গ্যান্টনার’ ওনার বিলাসবহুল ব্যবসা, তার দেখাশোনা করার জন্য আরিশের কথায় স্ত্রীর সন্তানকে রেখে সুইজারল্যান্ড ফিরেন। তাতে আরিশ কিছু বলেনি। কি বলবে? কতদিন হলো উনি এখানে এসেছেন, এখন যদি নিজ ব্যবসায় ফিরে তাতে হাত না লাগায় তাহলে সেটা তো রসাতলে যাবে তাই না? তাই আরিশ তাকে যেতে না করেনি। কারণ ওর মামনি লুসিয়ান তো ছিলই। তবে আরিশ গ্যান্টানার’ কে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ছাড়বে বলে সাথে এসেছে। আরিশ উনাকে ঠিকঠাক মত এয়ারপোর্টে রাত্র ১১ টার ফ্লাইটে উঠিয়ে দিয়ে চলে আসে।

“রোদ রাদিফের রুমের বারান্দায় বসে রাতের আকাশের, ঝলঝল করা গোল আকৃতির চাঁদটার দিক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার কিছুই ভালো লাগছে না। শান্তশিষ্ট ভদ্র মানুষটা এই কয়দিনে কেমন হিংস্র মানুষে পরিণত হয়েছে। কই সে তো বাড়ির সবার সাথে আগের মত স্বাভাবিকই থাকে। তাহলে রোদ কে দেখলেই কেন তার বেপরোয়া স্বভাবগুলো জেগে ওঠে? রোদ তো তার কাছে জোর করে ভালোবাসা চাইছে না? বিয়েটা তো তাদের নামের মাত্র, সেটা তো সেদিন বাসর রাতেই রাদিফ তাকে জানিয়ে দিয়েছিল, তাহলে তার আর কিসের আশা রইল? রোদ চাঁদটার দিকে তাকিয়ে, আরো হাবিজাবি কত কিছু চিন্তা করে রুমের মধ্যে আস্তে দেখে রাদিফ অফিসের জামাকাপড় গুলো খুলছে। রাদিফ কে কাপড় চেঞ্জ করতে দেখে রোদ মনে মনে আওড়ালো, — ‘উনি আসলো কখন? কোই আমি তো কোন শব্দ পেলাম না। – রোদ সরু চোখে রাদিফের দিক তাকিয়ে কথা গুলো আওড়ানোর মধ্যে রাদিফ রোদের উপস্থিত টের পেয়ে ওকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বাঁকা হেসে নাক চাপার মতো করে রোদের দিকে ঘুরে বলল,

‘ছিঃ আমার রুম থেকে এমন বাজে গন্ধ আসছে কেন? মনে হচ্ছে কোন জ্যান্ত পচা জিনিস আমার রুম জুড়ে ঘুরঘুর করছে। – বলে রোদের একদম কাছে গিয়ে, নাক টেনে ওর শরীরের গন্ধ শুঁকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখ গরম করে রোদ কে আবারো বলল,
‘যা ভেবেছিলাম, গন্ধটা তোর শরীর থেকেই আসছে।
রাদিফের এমন অপমান জনক কথা শুনে, রোদ বোকা বনে গিয়ে নিজের শরীরের গন্ধ শুঁকতে দেখে, না কোন বাজে গন্ধ তার শরীর থেকে আসছে না। তাই ছোট ছোট চোখ করে রাদিফের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কই আমি তো কোন গন্ধ পাচ্ছি না? আপ,, —ওর কথা সম্পূর্ণ করার আগেই, রাদিফ রোদের চিবুক চেপে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘বললাম না গন্ধ আসছে, তুই এক্ষুনি গোসল করবি। আর নয়তো তোকে, – এতোটুকু বলে ঘাড়টা কাত করে বাঁকা হেসে বলল,

‘তোর ঐ নরম গাল চাপরে লাল করে দিব।
কি আর করার? এখন রোদ যদি রাদিফের কথা না শুনে তখন ঠিকই এই লোকটা তাকে, বন্ধ রুমে তার নরম গাল দুটো থাপরে লাল করে দিবে। তাই রাদিফের থেকে চোখ সরিয়ে মাথাটা নিচু করে বলল,
‘ঠিক আছে আমি গোসল করছি। বলে রোদ জামাকাপড় না নিয়েই ওয়াশরুমে চলে যায়। – রোদ চলে যেতে রাদিফ সেদিক তাকিয়ে আবারো বাঁকা হাসলো, অতঃপর মনে মনে আওরালো, – ‘সবে তো মাত্র শুরু, তোর জীবনটা আমি একদম নরক বানিয়ে জ্বালিয়ে ছাই করে দিব। তখন বুঝবি আমাকে বিয়ে করার কত মজা।

Violent love part 41 (2)

“রোদ প্রায় ২০.২২ মিনিট গোসল শেষ করে, জামা কাপড় পড়তে নিলে দেখে ও কোন জামাকাপড় না নিয়েই গোসলে ঢুকেছে, এটা দেখে রোদ নিজেই নিজের উপর বিরক্ত হলো। পুরো ওয়াশরুম জুড়ে, একটা তোয়ালে ছাড়া কোন শুকনো কাপড় নেই। রোদ ভেবে পায়না, এখন সে কি করবে? তাই কোন উপায়ান্তর না পেয়ে ভিজা কাপড় চেঞ্জ করে তোয়ালেটা গোল করে পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরোনোর জন্য রুমের ভিতর উঁকি মেরে দেখল রাদিফ আছে কিনা, রাদিফের কোন ছায়া বস্তু না পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে কভার পর্যন্ত আসতে রুমের বারান্দা থেকে কারো রুমে ঢোকার শব্দ পেয়ে রোদ ততক্ষণে ঘুরে সেদিক তাকাতে দেখে, রাদিফ ওর দিকে কেমন করে তাকিয়ে। এটা দেখে রোদ ও কি পরে রাদিফের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা না ভেবেই তুললিয়ে বলল,
‘গোসল করেছি তো, এখন আর আমার গা থেকে গন্ধ আসছে না সত্যি বলছি…

Violent love part 43

5 COMMENTS

Comments are closed.