তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ২

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ২
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

রায়ানের ডাক শুনে অনু দৌঁড়ে আবার ওপরে এলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করল,
“কী? ডেকেছিলেন?”
রায়ান ভাই চোখ-মুখ কুঁচকে কর্কশকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“কফির মগে লিপস্টিকের দাগ কেন?”
অনুর আবার হৃৎপিণ্ড বের হয়ে আসার উপক্রম। শেষমেশ ধরা পড়েই গেল! এমন গাধামি সে কী করে করল? অনুকে চুপ থাকতে দেখে রায়ান ফের ধমক দিয়ে বলল,
“চুপ করে আছিস কেন? কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি!”
অনু ভয়ে ভয়ে বলল,

“আমি জানি না!”
“জানিস না মানে? কফি তো তুই-ই এনেছিস।”
“হ্যাঁ, কিন্তু কফি আমি বানাইনি।”
“জানি আমি। তুই যে অকর্মার ঢেঁকি, কোনো কাজকর্ম কিছু পারিস না, করিসও না তা আমার ঢের ভালো জানা আছে। এখন আমি জানতে চাচ্ছি, আমার কফির মগে লিপস্টিকের দাগ কেন? তুই খেয়েছিস?”
অনু এবার চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে মিথ্যে বলল,
“ছি, ছি! না, না। ঐটা মনে হয় লিলি খালা করেছে।”
রায়ানের বিস্ময়ের শেষ নেই। সে আকাশ থেকে পড়েছে এমন রিয়াকশন দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“লিলি খালা লিপস্টিক দেয়?”
অনু ঠোঁট উলটে চটপটে আবার মিথ্যে বলল,
“দিতেই পারে!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রায়ানের অভিজ্ঞ ও ধূর্ত দৃষ্টি ঠিকই অনুর মিথ্যে ধরে ফেলেছে। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“চোখের সামনে থেকে এখনই দূর হয়ে যা।”
অনু অবাক হয়ে বলল,
“আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেন?”
“কেমন করেছি?”
“কেমন যেন!”
“এক থা’প্প’ড়ে তোর সব কয়টা দাঁত আমি ফেলে দেবো। দিনদিন খুব ভালো মিথ্যা বলা শিখেছিস তাই না? চাচ্চু জানে?”
অনু ধরা খেয়ে গেছে আবার। সে কাঁদোকাঁদো হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কী মিথ্যা বলেছি আমি?”

“ঐটা না হয় সবার সামনেই বলব আমি। এখন চোখের সামনে থেকে চলে যা।”
অপমানে, ভয়ে মুখটা থমথমে হয়ে গেল অনুর। বাবা আর ভাইদের কানে এই কথা গেলে আর রক্ষা নেই। তারা সবাই অনুকে যথেষ্ট আদর করে, বাবা-ভাইদের চোখের মণি সে। কিন্তু তাই বলে মিথ্যা তারা বরদাস্ত করবে না। তাও আবার কিনা রায়ান ভাইয়ের সাথে! রায়ান ফিরে আসার সব আনন্দ, খুশি পানি হয়ে যাচ্ছে অনুর। এই রায়ান ভাইটাও কেমন জানি! এত কেন কঠোর?
দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। সবার কাজ ছিল কিন্তু রায়ানের জন্য আজ আগে আগে চলে এসেছে। আজকের টেবিলটা সম্পূর্ণ লাগছে। সব কাজিনরা, চাচ্চু ও দাদা-দাদি একসাথে খেতে বসেছে। ফুপুরা এখনো আসেনি। বিকেল হবে তাদের আসতে আসতে। লিলি খালা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছিল। রায়ান জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করল,

“লিলি খালা, তুমি লিপস্টিক দাও?”
ভয়ে কুঁকড়ে গেল অনু। সর্বনাশ! রায়ান ভাই সত্যি সত্যিই বলে দেবে নাকি? লিলি খালা আঁতকে উঠে বলল,
“কী কও এডি! আমি লিপস্টিক দিমু ক্যান? আমার কি অহন ঐ বয়স আছে?”
“বয়সে কী আসে যায়? মনের ইচ্ছেটাই আসল। অনুদের জন্য অনেকগুলো কসমেটিক্স এনেছি ঢাকা থেকে। তুমি একটা লিপস্টিক নিয়ে নিও। পান খেয়ে ঠোঁট লাল করার চেয়ে লিপস্টিক দিয়ে করবে।”
লিলি খালা লজ্জা পেয়ে বললেন,
“পাগল হইয়্যা গেছে পুলায়।”

অনু চোরের মতো তাকাল রায়ানের দিকে। রায়ানও তখন তাকাল অনুর দিকে। দুজনের চোখাচোখি হতেই রায়ান অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করল মিথ্যা বলার জন্য। সঙ্গে সঙ্গে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দৃষ্টি নামিয়ে নিল অনু।
রায়ানরা দুই ভাই এক বোন। ভাই-বোনের মধ্যে সে মেজো, ভাই বড়ো এবং বোন ছোটো। ওরা তিন ভাই-বোন হয়েছে তিন রকম স্বভাবের। বড়ো ভাই রিয়াদ চৌধুরী নদীর মতো শান্ত, শীতল। কথা খুব কম বলে। তবে সে ভীষণ বিনয়ী। রায়ানের সাথে ওর বয়সের পার্থক্য মাত্র ২ বছরের। বর্তমানে ত্রিশ চলছে। এখনো বিয়ে-শাদীর নাম নেই ওর মুখে। বাড়ির সবাই রাজি করানোর জন্য কম চেষ্টা করেননি। কিন্তু রিয়াদের একেকবার একেক অজুহাত। এতসব অজুহাতের কারণ আর কেউ না জানলেও রায়ান খুব ভালো করেই জানে। তাই ভাইয়ের বিয়ের কথাবার্তা উঠলে সে খুব একটা রা করে না। অন্যদিকে রায়ান হয়েছে রিয়াদের বিপরীত মেরুর।

সে খুব রাগী, জেদি। মুখ দেখলেই মনে হয় রেগে আছে। যা মন চাইবে তা-ই করবে। একগুঁয়ে, বেপরোয়া স্বভাবের। কাউকে পরোয়া করার সময় নেই ওর। গ্রাজুয়েশন ও মাস্টার্স শেষ করে ঢাকাতেই একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করে নিজের মতো আনন্দে ছিল। বাবা, চাচাদের অনুরোধে আবার ফিরে আসতে হয়েছে গ্রামে। ছোটো বোন জুঁই হয়েছে দুই ভাইয়ের কম্বিনেশন। কখনো খুব শান্ত আবার কখনো খুব রাগী। জুঁই প্রায় অনুর সমবয়সী। জুঁই পড়ছে এখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে আর অনু অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে। জুঁই পড়াশোনায় তুখোড় মেধাবী কিন্তু অনু? সে পড়াশোনায় একদম লবডঙ্কা!

অনু পড়াশোনায় যেমনই হোক, স্বভাবে সে ভীষণ চঞ্চল। তোতাপাখির মতো কথা বলতেই থাকে সারাক্ষণ। বাবা ও দুই ভাইয়ের ভীষণ আদরের। শুধু তাই নয় দাদা-দাদি, চাচ্চুরা ও চাচিরাও অনুকে চোখে হারান। অনুর বড়ো দুই ভাই তমাল চৌধুরী ও আয়ান চৌধুরী। তমাল মাস্টার্স শেষ করে বাবার ব্যবসা-বাণিজ্য দেখছে। আয়ান এখনো স্টুডেন্ট। মাস্টার্সে পড়ছে।
সেজো চাচ্চুর চার মেয়ে, এক ছেলে। একটা ছেলের আশাতেই চারটা মেয়ে ঘর আলেকিত করে এসেছে। মাহফুজা, কল্পনা, আরিফা, ইতি ও ওদের আদরের ছোট্ট ভাই ইয়ামিন। মাহফুজা অনুর সাথেই অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। কল্পনা ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে, আরিফা ক্লাস টেনে এবং ইতি ক্লাস ফোরে পড়ে। ইয়ামিন এখনো বেশ ছোটো। স্কুলে ভর্তি করানো হয়নি।

নয়া চাচ্চুর শুধু দুই ছেলে। রবিন চৌধুরী ও হাসান চৌধুরী। রবিন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে কল্পনার সাথে। হাসান পড়ে ক্লাস নাইনে।
ছোটো চাচ্চুর দুই মেয়ে। জান্নাত ও জমেলা। জান্নাত ইতির সঙ্গেই ক্লাস ফোরে পড়ে। জমেলা পড়ে ক্লাস ওয়ানে। এই আধুনিক যুগে এসে জমেলা নামটা শুনে একটু খটকা লাগতে পারে। বিস্মিতও হতে পারে মানুষজন। মূলত জমেলা নামটা রেখেছেন ছোটো চাচ্চুর শাশুড়ি। তাই কেউ আর দ্বিমত করেনি। এটাই ওর ডাক নাম এখন। স্কুলে অবশ্য আরেকটা ভালো নাম আছে।

এতগুলো কাজিন একসাথে খেতে বসেছে। কিন্তু কোনো হট্টগোল নেই। ভয়ে সবাই যতটুকু পারছে নিরব থাকছে। এর আগে একবার খেতে বসে খুব হইচই করেছিল সব বিচ্ছুগুলো। সবাইকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল রায়ান। পরে অবশ্য রিয়াদ ভাইয়ার সুপারিশে শাস্তি মওকুফ করেছিল রায়ান ভাই।

রায়ানের হঠাৎ করে গ্রামে ফিরে আসার কারণ হলো বাবা এবং চাচারা মিলে গ্রামে একটা গার্মেন্টস বানিয়েছেন। গ্রামে অসহায়, গরিব মানুষদের কাজের কথা চিন্তা করেই মূলত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পাঁচ ভাই একসাথে ব্যবসা করতে পারবে এটাও তো কম নয়। এখন শুরুতেই বিশ্বাসযোগ্য, অভিজ্ঞ মানুষ পাওয়া তো মুশকিল। তারা পাঁচ ভাই প্রত্যেকেই শিক্ষিত। তবুও তাদের উপযুক্ত ছেলে-মেয়েদের হাতে বেশিরভাগ দায়িত্ব দিয়ে তারা একটু স্বস্তিতে থাকতে চান। কোথায় কোন লোক লাগবে, তাদের কী রকম কোয়ালিফিকেশন থাকা উচিত, স্যালারি কেমন হবে এসব বিষয় তাদের চেয়ে তাদের ছেলে-মেয়েরাই ভালো বুঝবে।
খেতে খেতে কাজের প্রসঙ্গে এলো রায়ান। বাবা ও চাচাদের উদ্দেশে বলল,
“বড়ো ভাইয়া, তমাল তো ছিলই। তাছাড়া আয়ানেরও মাস্টার্স শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গে ফুল টাইম দিতে পারবে অফিসে। কেন আমাকে আসতে হলো তাহলে?”
রিয়াদ উত্তরে বলল,

“শুধু আমরা থাকলেই তো হবে না। তোকেও সাথে থাকতে হবে। জাস্ট বিল্ডিংটা কমপ্লিট হয়েছে এখন। বাকি সব জিনিসপত্র আনা, সেট করা, লোক নেওয়া, উদ্বোধন সব তো বাকিই পড়ে আছে। আয়ান এখনো এত কিছু বোঝে না। আর ওকে এত চাপ দেওয়াও ঠিক হবে না এখন। আর একটু জীবনটা উপভোগ করুক। এখন এত কাজ কি তমাল আর আমি একা হাতে সামলাতে পারব?”
রায়ান বাম হাত তুলে পরাজিত হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
“আচ্ছা বাবা ঠিক আছে! আমি আছি তোমাদের সাথে। আমার পরিবারের আগে কোনো কিছুই ইম্পোর্ট্যান্ট নয়।”
সব কথা চুপচাপ শুনছিল অনু। এতক্ষণ সে জানতো না যে, রায়ান ভাই একেবারের জন্য গ্রামে চলে এসেছে। এখন এত বড়ো ও সুন্দর সত্যিটা জানতে পেরে সে খুশিতে ঝলমল করছিল।
ডাল দিয়ে ভাত মাখতে মাখতে রায়ান ভাই ছোটো চাচিকে জিজ্ঞেস করল,
“চাচি, আচার বানাও নাই এবার?”

ছোটো চাচির রান্নার হাত দারুণ। বাড়িতে যত রকমের বিদেশি আইটেম বানানো হয় সব ছোটো চাচি একা বানান। এছাড়া তিনি আচারটা বানান বেশ ভালো। রায়ান ভাইয়ের খুব পছন্দের। ছোটো চাচি ব্যস্ত হয়ে বললেন,
“হ্যাঁ, বানিয়েছি তো। নিয়ে আসছি দাঁড়াও।”
ছোটো চাচি আচার আনতে যাওয়ার পর রায়ান মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আম্মু, আমার না চিংড়ি মাছ দিয়ে কচুশাক খেতে ইচ্ছে করছিল অনেকদিন ধরে। কচুশাক পেলে রান্না করে দিও তো।
“ঠিক আছে। আর কী কী খাবি বলিস।”
আয়ান তখন বলল,
“এসব তো ঠিক না, বড়ো চাচি। শুধু ভাইয়ার পছন্দমতো রান্না করলেই হবে? আমরা কী দোষ করেছি?”
বাকিরাও আয়ানকে সমর্থন করল। হরতালের সুরে বলে উঠল,
“সহমত, সহমত।”

রিয়াদ তখন হাসতে হাসতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে রায়ানকে বলল,
“ওকে দিতে চেয়েছিলি অফিসের দায়িত্ব? যে নিজেই একটা বাচ্চা! ওর চেয়ে ইয়ামিনকে দায়িত্ব দিলে ভালো কাজ করতে পারবে।”
আয়ান ভাবসাব নিয়ে বলল,
“ভাইয়া একদম আমার যোগ্যতা নিয়ে কথা বলবে না। অফিসটা শুধু চালু করো আগে। তারপর দেখো, আমি কীরকম কাজ করি।”
“আচ্ছা দেখব।”
কথায়, গল্পে সবার খাওয়া শেষ। ছোটোরা সবাই উঠে চলে গেছে। বড়োরা এখন অফিসের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে রায়ানকে দেখছিল অনু। কী সুন্দর করে হাত নাড়িয়ে কথা বলছে রায়ান ভাই। একটা মানুষ এত কেন সুন্দর হবে? নাকি অনুর চোখেই শুধু এত সুন্দর লাগে? বেখেয়ালিভাবে রায়ান বারান্দার দিকে তাকাতেই দ্রুত সরে পড়ল অনু। ভয় পেয়ে বুকে থু থু ছিঁটিয়ে তৎক্ষণাৎ প্রস্থান করল নিজের রুমে।

অনেকদিন পর রাতে একটা শান্তির ঘুম হয়েছে রায়ানের। সকাল হলেই অফিসের চিন্তা নেই আপাতত। ঘুম থেকে উঠে আগে গোসল করে নিল। একটু বাইরে যাবে হাঁটতে। পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা করবে। কালো রঙের প্যান্টের সাথে অ্যাশ কালার একটা পোলো শার্ট পরেছে রায়ান। জেল দিয়ে চুলগুলো সেট করে, বডি স্প্রে দিয়ে নিল। এরপর তার সবচেয়ে পছন্দের স্বভাব কালো সানগ্লাস চোখে দিয়ে নিচে নামল।
সিঁড়ি পেরিয়ে উঠানে এসে সবার জটলা দেখে এগিয়ে গেল। অনু উঠানে বসে কাঁদছে। বড়ো ফুপি অনুর হাত ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে ধরে রেখেছেন। ছোটো ফুপি মাথায় হাত বুলিয়ে বলছেন,
“কাঁদে না পাখি, ঠিক হয়ে যাবে সব।”
চশমা খু্লে রায়ান জিজ্ঞেস করল,

“কী হয়েছে?”
সেজো চাচি বললেন,
“আর বলিস না! তুই যে রাতে কচুশাক খেতে চাইলি? তাই সকাল না হতেই ইয়ামিন আর জমেলাকে নিয়ে জঙ্গলে চলে গেছে কচুশাক তুলতে। বুনো কচুশাক তাই এখন হাত চুলকাচ্ছে আর কাঁদছে।”
রায়ান খেয়াল করল উঠানের একপাশেই অনেকগুলো কচুশাক পড়ে আছে। সে তার মায়ের উদ্দেশে বলল,
“ঘরে লেবু আছে?”
“আছে।”
“লেবু কেটে নিয়ে আসো।”
লিলি খালা বললেন,
“আমি আনতাছি।”
অনু তখনো কাঁদছিল। লিলি খালা লেবু কেটে এনেছে। রায়ান লেবুর রস চিপে অনুর হাতে লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,
“একটু পর ঠিক হয়ে যাবে। কাঁদিস না।”

অনু তবুও কাঁদছিল। রায়ান এবার ধমক দিয়ে বলল,
“কে বলেছিল তোকে গিয়ে জংলা কচু আনতে? এখন আবার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছিস!”
এরপর ইয়ামিন ও জমেলাকেও ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“তোদের হাত চুলকাচ্ছে না? তোরা কেন কাঁদছিস না?”
জমেলা ভয়ে ভয়ে বলল,

“অনু আপা তো আমাদের কচু ধরতে দেয়নি।”
রায়ান আবার অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাল অনুর দিকে। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি আর কিছু হলো না তোর!”
ধমক খেয়ে অনু চুপসে গেছে। ফুঁপিয়ে উঠে বলল,
“আমি কী করে জানব যে ওগুলোতে হাত চুলকাবে?”
“না, না তা জানবি কী করে? পড়াশোনা যে করিস না এটাই তার নমুনা। কচুতে যে ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল থাকে জানিস না?”

অনু এবার চুপ করে রইল। কচুতে কোন ক্যালসিয়াম থাকে তা সে কী করে জানবে? সে কি কোনো কচু বিশেষজ্ঞ নাকি আজব! রায়ান লেবুর টুকরা লিলি খালার হাতে দিয়ে বলল,
“একটু পর যদি চুলকানো না কমে তাহলে হলুদ ও বেসনের পেস্ট বানিয়ে হাতে লাগিয়ে দিও।”
লিলি খালা মাথা নাড়িয়ে বললেন,
“আচ্ছা।”
রায়ান চলে যাচ্ছিল। আবারও পিছু ফিরে বলল,
“জংলা কচু এনে নিজের হাত চুলকাচ্ছিস ইট’স ওকে। আল্লাহর দোহাই লাগে এই কচুশাক আবার আমাকে রান্না করে খাওয়াইস না।”

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১

নিজের কথা বলা শেষ করে রায়ান চোখে চশমা লাগিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। ওর যাওয়ার পানে দাঁত কিড়মিড় করে তাকিয়ে আছে অনু। সে মনে মনে বলতে লাগল,
“নি’ষ্ঠু’র, নি’ষ্ঠু’র, নি’ষ্ঠু’র! আপনি খুব নি’ষ্ঠু’র রায়ান ভাই। এতকিছুর মাঝেও আমার ভালোবাসা, যত্নটুকু আপনার চোখে পড়ল না? অবশ্য কী করেই বা চোখে পড়বে? দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টাই তো ঐ কালো চশমাটা চোখে ঝুলিয়ে রাখেন। বিরক্তিকর!”

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ৩