প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১৪
সাইয়্যারা খান
গুমোট এক পরিবেশ চারিদিকে। চোখটা নিভু নিভু সাফিনের। তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে আছে তারই পরিচিত ছেলেপেলে। সাফিনের হাঁটুতে হকিস্টিক দিয়ে একটা আঘাত করা হলো। জীবনেই শেষ চিৎকারটুকু যেন তখন যেন দিয়ে উঠলো সাফিন। তার আর্তনাদ শোনার মতো এই গোডাউনে আপাতত কেউ নেই। যারা আছে তাদের নিকট এই আর্তনাদ কষ্ট না বরং খুব মজার কিছু। এতটাই মজার যে একজনের আঘাতের শব্দে তারা তৃপ্তি পেলো না। আরেকজন লোহার শিকলটা হাতে পেঁচিয়ে পিঠে আঘাত করলো। সাফিন যেন শেষ চেষ্টাটুকু করলো তারই পরিচিত মানুষ গুলোর সামনে। করুণ স্বরে কেঁদে ডেকে ওঠলো,
“আব্বা, আব্বা মাফ করে দেন। মাফ করে দেন। আমার দুইডা বাচ্চা। ওগো কেউ নাই।”
পল্লব পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। তার ডান হাতে একটা রেঞ্জ। মাথার ক্যাপটার দরুন চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে না নাহয় তার চোখ দেখে কারো বুঝার ক্ষমতা নেই যে এতটা ঠান্ডা মাথায় এভাবে কাউকে আঘাত করা যায়। সাফিনের দেহে যখন একের পর এক আঘাত লাগছে, সে যখন খুব করে কাঁদছে, মুক্তি চাইছে ঠিক তখনই পল্লবের ঠান্ডা স্বর শোনা গেলো,
“ওকে ছাড়।”
সবগুলো ছেলেপুলে সরে গেলো। গোল করে অর্ধমৃত সাফিনের দেহটাকে তারা ঘিরে আছে। আচমকা হাতে থাকা রেঞ্জ দিয়ে সাফিনের মাথায় আঘাত করে ও। বিকট এক চিৎকার শোনা যায় গোডাউনে। পল্লব সেই সময়টায় সাফিনকে বলে ওঠে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আবার, আব্বা ডাক।”
সাফিনের মস্তিষ্ক অল্প সাড়া দিলো। সে ডাকতে চাইলো,
“আআব্বাহ।”
সাথে সাথে তার মাথায় পুণরায় রেঞ্জের আঘাত। এবারে আর শব্দ হলো না। পল্লব মিনারেল ওয়াটারের বোতলটা হাতে নিয়ে সাফিনের সামান্য ফাঁকা হওয়া মুখের উপর ঢালতে লাগলো। তখনও সাফিনের চারপাশে লোকজন ভর্তি। পল্লব একটু কপাল কুঁচকে তাকালো। একটু চোখ সরিয়ে বললো,
“কিরে *য়োরের বাচ্চাটা নড়ে না দেখি।”
একজন এগিয়ে এসে হাতের হকিস্টিক দিয়ে একটু এদিক ওদিক নেড়েচেড়ে বললো,
“ভাই, মনে তো হয় ম’ইরা গেসে।”
“ধ্যাত! *ল একটা। এত তারাতাড়ি ম’রে গেলো?”
পল্লবের কপালে সামান্য ঘাম। ফোনটা হাতে নিয়েই ডায়াল করলো বাবার নাম্বারে। রিসিভ হতেই শুধু জানালো,
“আব্বা, সাফিনকে মে’রে ফেলসি।”
ওপাশ থেকে বলা কথা শোনা গেলো না তবে পল্লব শেষে বললো,
“আমার দোষ নেই এখানে।”
উপস্থিত ছেলেপেলে যখন দেখলো পল্লবের কপালে ঘাম তখন কিছুটা ভয় যেন তারাও পেলো। একেরপর এক কল দিতে লাগলো তখন পল্লব। এরমধ্যেই দেখলো কিছু পরিচিত মুখ এগিয়ে আসছে এখানে। তখনও পল্লব ততটা ভয় পাচ্ছে না কারণ তার আপন চাচা চেয়ারম্যান। সেই সাথে চাচার সাথে তার আরেকটা সম্পর্ক আছে, কেউ স্বীকার করছে না যদিও তবুও একটা সম্পর্ক আছে তাদের। তার বাবার ক্ষমতাও কম না। উমায়ের শিকদার সহ তাদের হাতের মুঠোয়।
এই গোডাউনটা মূলত ভরা বাজারের মাঝে। বাজারের পাশ কেটে একদম খোলা মাঠের বিপরীত দিকে এই গোডাউন। সারারাত কোন লোকজন থাকে না। ভোর হতেই একে একে কাজে আসে কাঁচা বাজারের ব্যাবসায়ীরা যা বিকেল হতেই শেষ হয়ে আসে। গোডাউনে দিনের বেলা পল্লব আসে না। আজই আসতে হয়েছিলো। তারই দলের লোক তার উপর বাটপারি করছিলো যা এতদিন টের পায় নি। এই পুরো বাজারের সিন্ডিকেট সামলায় পল্লব। প্রতিটা স্থায়ী অস্থায়ী দোকান থেকে চাঁদা তোলা হয়। চাচার চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগটা কাজে লাগায় সে। গত একটা বছর অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করছিলো সাফিন কিন্তু জানায় নি পল্লবকে অথচ এই সাফিন অতি কাছের মানুষ পল্লবের। কাছের মানুষের বাটপারিটাই মানতে পারে নি পল্লব তাই তো আজ তাকে ডেকে সুন্দর করে জিজ্ঞেস করেছিলো। সুন্দর প্রশ্নের উত্তর সাফিন সুন্দর ভাবে দিতে পারলো না তাই তো তার জানটা একটু কষ্ট দিয়ে বের করে আনলো পল্লব যদিও সে বুঝতে পারে নি সাফিন এতটা তারাতাড়ি মা’রা যাবে।
তখনও কেউ জানে না এই গোডাউনে কি হয়েছে। তৌসিফ তালুকদার নিজে লোক পাঠিয়ে পল্লবকে বাড়ী পৌঁছে দিয়েছে। পল্লব আসার আগে তৌসিফের সাথে হাত মিলাতে আসতে চেয়েছিলো। তৌসিফ ফোনে না করেছে। বুঝিয়ে বলেছে,
“তুমি বাসায় যাও এখন। এখন এদিকে আসাটা ঠিক হবে না। পুলিশ কেস হয়ে গিয়েছে।”
পল্লবের মাথা তখন কাজ করে না। বাড়ী ফিরতেই নাসেরের হাতে এক চড় খেলো ও। বাবার দিকে দৃষ্টি তুলে তাকাতেই নাসের গর্জে ওঠে,
“খু’ন করতে গেলি কেন?”
“হয়ে গিয়েছে। তুমি চাচ্চুকে বলো মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করতে।”
নাসের রাগে কাঁপছে। পল্লব দেখলো ওর মা দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। ঠিক মিনিটের ব্যবধানে বাড়িতে পুলিশ হাজির হলো। নাসেরের মতো ক্ষমতাবান মানুষ কিছু করতে পারলো না। পল্লব আশ্চর্য হয়ে দেখলো পুলিশের হাতে স্পষ্ট ছবি। সেই ছবি ফেসবুকে সহ ছড়িয়ে পরেছে। কে, কখন, কোথায় তুললো এর উত্তর নেই। চৌদ্দ জন যাদের ঐ ছবিতে দেখা যাচ্ছে তাদের মধ্যে পল্লব সহ তিনজনকে মূল আসামী করে গ্রেফতার করা হলো। নিজ বাড়ী থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে তুলা হলো জীপ গাড়িতে। নাসের মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। শুধু পুলিশ হলে রাতেই ছেলে ঘরে আনতো কিন্তু এখন তো পুরো ফেসবুকে ছড়িয়ে গেলো সেটা৷ এখন কি হবে?
বিপদের বন্ধুই বড় বন্ধু। চরম শত্রু তৌসিফ তখন ফোন দিয়েছে। নাসেরকে সালাম দিয়েই তৌসিফ বললো,
“আমি পল্লবকে সহিসালামত বাসায় পাঠালাম নাসের ভাই। বাড়ীতে আটকাতে পারলেন না?”
সরাসরি তীক্ষ্ণ খোঁচা দিলো তৌসিফ। পরপরই বললো,
“টিভি চ্যানেলের মুখটা আগে বন্ধ করান, নাহয় দেশে ছড়ালে ছেলে পাবেন না। আমার তরফ থেকে পুরো সাহায্য পাবেন।”
“তৌসিফ।”
“শুনছি আমি। চিন্তা করবেন না৷ বাচ্চা মানুষ, র’ক্ত কথা বলবেই। আমি পাশে আছি।”
তৌসিফ সত্যি সত্যিই পাশে থাকার মতো সবটুকু ব্যাবস্থা করলো। উমায়ের শিকদার পর্যন্ত নাসেরের বাড়ীতে হাজির। পুরো এলাকাবাসী যখন সব জেনে গেলো তখনই রাতে খবর এলো কানে, পল্লবকে কোর্টে তোলা হবে। এখানে সরাসরি খু’নে জড়িত সে। এই কেস যে সহজে ছুটবে না তা যেন বুঝে গেলো নাসের সহ বাকিরা। ঠিক তখনও তৌসিফ এক অকল্পনীয় সাহায্য করলো। নাসেরকে ফোন করে বললো,
“আপনার এলাকার নিম্ন শ্রেণির লোক ভাড়া করুন। ওদের বলুন থানায় জড়ো হতে। ওরা যখন পল্লবের জামিনের জন্য আন্দোলন করবে তখন কিছুটা হলেও মামলার মোড় ঘুরবে।”
নাসের আরো একবার অভিভূত হলো। কাজ করানো হলো তৌসিফে’র কথা মতো। কিছুটা বোধহয় কাজেও দিলো।
নিচের অফিস কক্ষে তিন ভাই বসা। তুরাগ গা এলিয়ে বসা। তৌসিফের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোর মাথা যে এতটা সূক্ষ্ম তা জানতাম না৷”
“তাহলে আপনি আমাকে চেনেনই নি।”
মাঝখান থেকে তুহিন বললো,
“এই কাজ কিভাবে হলো মেজভাই? ওরা এতটা বিশ্বাস করলো তোমাকে?”
তৌসিফ সামান্য হাসলো। বললো,
“বিপদের সময় মানুষ সবাইকেই বিশ্বাস করে। এখানে শুধু ঝোপ বুঝে কো’প মা’রার জন্য দক্ষ একটা হাত প্রয়োজন।”
“সেই হাতটাই যে তোমার তা বোকা** গুলো বুঝলো না কিভাবে? তুমি পল্লবকে বাড়ী পাঠিয়ে যে পুলিশে খবর দিয়েছো তাও টের পেলো না। ওদের এতোদিনের গোডাউন ওটা পুরো ভাঙচুর হয়েছে অথচ ওরা ভাবছে সাধারণ জনগণ করেছে কিন্তু এটাও তো তুমি করালে। কিন্তু মেঝ ভাই, আন্দোলন করানোর বিষয়টা বুঝলাম না।”
এবারে তুহিন উত্তর দিলো,
” ওদের কাছে আরেকটু নিজেকে বিশ্বাস যোগ্য বানালো, এই যা।”
“মেঝ ভাই একটা মাস্টার মাইন্ডসেটের মানুষ।”
তৌসিফ সামান্য হেসে ফেললো। তুহিন একটু গলা পরিষ্কার করে বললো,
“ভাই, সেলিব্রেশন হবে নাকি?”
তৌসিফ সায় দিলো। রনিকে হাঁক ছেড়ে ডেকে বললো,
” এক বোতল সাথে বরফ দিও।”
প্রতিবারের ন্যায় জি ভাই বলে রনি চলে গেলো। তিন ভাই তখন মেঝেতে বসা। তুহিন মাথা এলিয়ে দিলো তৌসিফে’র কোলে। ছোট্ট তুহিনটা যেন তখন বলে উঠলো,
“মেঝ ভাইয়া, আম্মু থাকলে বিরিয়ানি খাওয়া যেতো বলো? এখন শুধু বললেই হতো।”
তৌসিফ হ্যাঁ না কিছুই বললো না। তুহিনটা ছোট তাই মায়ের সাথে তার আদর ভাবটা ছিলো বেশি কিন্তু সেই আদরটা তার বিয়ের পর কিভাবে জানি একটু অন্যরকম হয়ে গেলো কিন্তু তৌসিফ তখনও মায়ের ন্যাওটাই রয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করলেও মায়ের রূপ যেন চোখে লাগে। তুরাগ গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললো,
“তায়েফা আপা বোধহয় আসবে এরমধ্যে।”
তৌসিফ চট করে তাকালো। মুখটায় হাসি ভর করলো। জিজ্ঞেস করলো,
“কবে? আমাকে তো জানালো না।”
“দিন বলে নি। গতকাল কথা হলো। আসবে মনে হলো।”
তুহিন ততক্ষণে মেঝ ভাইয়ের কোলে মাথা দিয়েই চোখ বুজেছে। তুহিনের সাথে আজ তৌসিফে’র বেশ আলাপ হলো। তুহিন সতর্ক করে বললো,
“ওদের সাথে যেই খেলা তুই খেলসিছ, সাবধানে। ওরা হায়েনার জোট হয়ে একসাথে থাকছে। আমি জানি তুই একাই সিংহ।”
তৌসিফ কথা বলে না। তায়েফা আপা আসছে এতেই মনটা তার খুব ভালো হয়ে আছে।
হক বাড়ীটা বেশ গমগমে। নতুন বউ বাড়িতে, মেহমান একেরপর এক লেগে আছে। শ্রেয়া এত মানুষ অভ্যস্ত না। বাবা-মা নিয়ে তিনজনের পরিবার থেকে হঠাৎ এক যৌথ পরিবারে আসায় খাপ খাওয়াতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে যেন। তারমধ্যে মেহমানের ঢল। কিন্তু এই বাড়ীতে কিছু চমৎকার বিষয়ও আছে। এই যেমন তাকে রান্নাঘরে ঢুকতে হয় না। কোন কাজে হাত দিতে হয় না। গতকাল সেধেই রান্নাঘরে গিয়েছিলো শ্রেয়া। নতুন বউ একেবারে ঘরে থাকলে কেমন দেখায়? রান্নাঘরে ঢুকে কাজ করার কথা বলতেই শাশুড়ী ধমক দিলো। পিহাকে ডেকে শ্রেয়াকে ঘরে পাঠালো। শ্রেয়া তখন যথেষ্ট ভয় পেলেও একটু পরই তিনি লেবুর শরবত হাতে নিয়ে রুমে এসে শ্রেয়াকে দিলেন। সুন্দর করে বুঝিয়ে বললেন,
“কাজের জন্য সারাটা জীবন পরে আছে। এখন সময় ঘুরবে ফিরবে আর আরাম করবে।”
শ্রেয়া যেন বেশ অবাক হয়। কাজের মধ্যে কাজ শুধু তার নিজের কাপড় নিজে ধুতে হয়। হেমন্তের কাপড় হেমন্ত ধুয়ে ফেলে। শ্রেয়া একটু লজ্জিত বিষয়টা নিয়ে। ও দেখেছে বাড়ীতে বুয়া আছে। বুয়াকে কাপড় নিয়ে ছাদে যেতেও দেখেছে তাহলে হেমন্ত কেন নিজের কাপড় নিজে ধোয় এই প্রশ্নের উত্তরটা শ্রেয়া জানে না। জিজ্ঞেস করবে ভেবেও করা হচ্ছে না। আজ তিনদিন শ্রেয়া এই বাড়ীতে। সবচাইতে চমৎকার লাগে হেমন্তের ভাই-বোন গুলোকে। তার মধ্যে পৌষটা একটু ভিন্ন। শ্রেয়ার সাথে সে মিশতে আসে নি। অজানা এক কারণে দূরে দূরে থেকেছে অথচ কেন জানি শ্রেয়া নিজ থেকে গিয়েই ওর সাথে মিশলো। পৌষ’র ছোট্ট একটা কুঠুরি আছে। সেই কুঠিরিতে রাত বিরাতে আড্ডা বসে, সেখানে নানানরকম খাবারের আয়োজন হয়, আড্ডা হয়, মজা হয়, মাঝেমধ্যে হাতাহাতিও হয়। অবাক করা বিষয় ছোট্ট ইনি, মিনিও এতে অভ্যস্ত। পৌষ’কে দ্বিতীয় দিন শ্রেয়া জিজ্ঞেস করেছিলো,
“ইনি, মিনি তো খুব ছোট। ওরা তোমাদের সাথে এভাবে মিশলো কিভাবে?”
উত্তরে পৌষ নাক, মুখ কুঁচকে বলেছিলো,
“ছোট চাচা রোম্যান্টিক মানুষ। দুই বাচ্চা হওয়ার পর রোম্যান্সে সমস্যা হচ্ছিলো। যাহ, দিলো তারা আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে। কুট্টি থেকেই আমাদের হাতে, পিঠে বড় হয়েছে তাই মিশে গিয়েছে। কি ছোট চাচ্চু ঠিক বলেছি না?”
শ্রেয়া তখন চমকে পেছনে তাকিয়েছিলো। ছোট চাচা শশুড় যে পেছনে ছিলো তা ও জানতো না। ছোট চাচা কাঁশতে কাঁশতে কাটিয়ে গেলেন আর শ্রেয়া নত মুখে বসে রইলো। তা দেখেও পৌষ হাসলো কতক্ষণ। মেয়েটাকে শ্রেয়া শুধু হাসতেই দেখেছে অথচ অনেক প্রশ্নই এই কয়দিনে জমা হয়েছে তার মনে। খুব সূক্ষ্ম ভাবে ওর শাশুড়ী এড়িয়ে যাচ্ছে পৌষ’কে। না চাইতেও নানার ঘটনা শ্রেয়াকে ভাবিয়ে তুলে। দরজায় ঠকঠক শব্দ হতেই শ্রেয়া উঠে দাঁড়ালো। পিহা দাঁড়িয়ে সেখানে। শ্রেয়াকে দেখেই বললো,
“ভাবী, নিচে ডাকে তোমাকে। তুমি কি আসবে? যদি না আসতে চাও তাহলে আপা ব্যাবস্থা করবে।”
“মানে কি ব্যাবস্থা করবে?”
“জানি না তো কিন্তু আপা ম্যাজিক জানে৷ কিছু একটা তো অবশ্যই করবে।”
শ্রেয়ার একটু মাথা ব্যথা হচ্ছে তাই বললো,
“আজ তাহলে ম্যাজিকটা দেখাতে বলো পৌষকে। আমার মাথাটা ব্যথা করছে একটু।”
পিহা দৌড়ে গেলো। শ্রেয়া বিছানায় পিঠ লাগাতেই পুণরায় দরজায় টোকা পরলো। এবারেও পিহা এসেছে। শ্রেয়াকে ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই শ্রেয়া অবাক হয়ে বললো,
“তোমরা কি এনেছো এগুলো?”
“ম্যাজিক। আপা পাঠিয়েছে।”
পৌষ শ্রেয়ার মাথা ব্যথা শুনেই বাহিনী পাঠিয়েছে কাজে। পিহা শ্রেয়াকে শুতে বলেই ওর কপাল টিপে দিচ্ছে। মাথার কাছে দুই পাশে ইনি, মিনি বসে একটু একটু চুল টেনে দিচ্ছে। শ্রেয়া’কে অবাক করে দিয়ে একটু পর চৈত্র চা নিয়ে এলো। দিয়েই বললো,
“আপা পাঠিয়েছে।”
চৈত্র আর থাকলো না। শ্রেয়ার চোখে তখন পানি টলটল করে। হেমন্ত বাসায় নেই অথচ তার যত্নে সামান্য ত্রুটি রাখছে না হেমন্তের ভাই-বোনরা।
গালে জোরে একটা চড় খেয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে পৌষ। চড়টা দিয়েছেন বড় চাচি৷ পৌষ আগেই ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তখনই ওর বুকের দিকে দুই কাপ চা ছুঁড়ে মা’রলো বড় চাচি। রাগে গজগজ করতে করতে বললেন,
“তুই কি চাস? কি চাস তুই? আমার ছেলের সংসার ভাঙবি? অ্যই তুই হেমন্তকে বিয়ে করবি? মায়ের মতো রুচি খারাপ হয়েছে? আমাকে চিনিস নি পৌষ তোকে রাস্তায় নামিয়ে দিব।”
এক কাপ চা তখন বাকি ছিলো। পৌষ নাকের পাটা ফুলিয়ে সোজা বড় চাচির মাথায় ঢেলে দিলো। রাগে হিসহিসিয়ে তেড়ে বললো,
“আমার মাকে টানবে না।”
বড় চাচি হতভম্ব হয়ে গেলেন। পৌষ’র চুলের মুঠি হঠাৎ খপ করে চেপে ধরতেই পৌষ’র মুখ দিয়ে মৃদু আর্তনাদ আসতে নিলো যা সহসা দাঁতে দাঁত চেপে আটকে দিলো পৌষ। তাকে আঘাত করা এত সোজা না। এত সহজে পৌষ’কে কাঁদানো যাবে না। প্রয়োজনে পৌষ কাঁদাবে সবাইকে কিন্তু নিজে কাঁদবে না। কিছুতেই না। দাঁত চেপে শুধু বললো,
“চুল ছাড়ো বড় চাচি।”
তিনি আরেকটু চেপে ধরলেন।
“না ছাড়লে কি করবি?”
“বহুত কিছু করব। ছাড়ুন।”
বড় চাচি তখনও ছাড়লেন না। এবারে নিজের শরীর ঝাঁকি দিয়ে পৌষ জোরে বলে উঠলো,
“চুল ছাড় জোছনা।”
চুল ছাড়িয়ে পৌষ রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। টেবিলের উপরে থাকা কাঁচের জগটা হাতে তুলে বড় চাচির উপর সবটুকু পানি ঢেলে বললো,
প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১৩
“প্রচুর গরম হয়ে আছো তুমি। ঠান্ডা করে দিলাম।”
বলেই তরতর করে নিজের ঘরে চলে গেলো পৌষ। ঘটনার দর্শক শুধু ছোট্ট ইনি, মিনি। আর কেউ না।