অন্তঃদহন পর্ব ৩৫ (২)
DRM Shohag
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে সন্ধ্যা। ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য কয়েক পা এগিয়ে আবার-ও উল্টোদিকে আসে, আকাশকে দেখার জন্য। গতকাল আকাশ তাকে জড়িয়ে ধরার একটু পর ছেড়ে দেয়। এরপর তাকে শিমুর ঘরে পাঠিয়ে দেয় ঘুমানোর জন্য। সন্ধ্যা আকাশের কথা মেনে ঘুমোতে গিয়েছিল। কিন্তু বেচারি গতকাল রাতের কাহিনী মাথা থেকে বের করতে পারছে না। আকাশের প্রতিটি কাজগুলো তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আকাশের বলা আস্ত কলিজা কথা মনে পড়তেই শিউরে উঠল। ধীরে ধীরে পায়ের গতি কমে এসেছে। মাথা নিচু করে হাঁটছে। আকাশের ঘরের সামনে দাঁড়াতেই শক্তপোক্ত বুকে কপাল ধাক্কা খেয়ে পিছন দিকে পড়ে যেতে নিলে আকাশ সন্ধ্যার হাত টেনে দাঁড় করায়। সন্ধ্যা মাথা উঁচু করে তাকায়।
আকাশ মৃদু হেসে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যা দৃষ্টি নিচু করলে আকাশের ফর্সা লোমহীন উদাম শরীর চোখে পড়ে। সন্ধ্যা ঢোক গিলল। আকাশ বা হাতে সন্ধ্যার হাত ধরে রেখে ডান হাত সন্ধ্যার গালে রেখে মৃদুস্বরে বলে,
– আমাকে দেখতে এসেছিলে বউ?
সন্ধ্যা মাথা নিচু করে রইল। আকাশ অসহায় কণ্ঠে বলে,
– আমি তো অসুস্থ হয়ে গিয়েছি বউ, পুরো শরীর ভীষণ ব্য’থা করছে।
কথাটা শুনতেই সন্ধ্যা আকাশের দিকে তাকায়। আকাশের মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। সন্ধ্যার খারাপ লাগলো। আকাশ যে গতকাল বলল, তার তেমন লাগেনি।
সন্ধ্যার মুখে চিন্তার ছাপ দেখে আকাশ মনে মনে হাসলো। আসমানী নওয়ানকে এদিকে আসতে দেখে সন্ধ্যা ভাবলো আকাশের মাকে বললে আকাশ হসপিটাল যাবে, সে বললে তো যায় না। এজন্য সেদিকে পা বাড়াতে নিলে আকাশ সন্ধ্যার হাত টেনে ধরে। তার মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
– মা আমি উঠেছি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আসমানী নওয়ান আকাশ আর সন্ধ্যাকে একসাথে দেখে থেমে গেলেন। তিনি দেখতে এসেছিলেন আকাশ উঠেছে কি-না। ছেলে-মেয়ে দু’টোকে একসাথে দেখে মৃদু হাসলেন। এরপর শিমুর ঘরে যায়।
সন্ধ্যা আকাশের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চাইছে। আকাশ সন্ধ্যাকে টেনে তার ঘরের ভেতর নিয়ে যায়। সন্ধ্যা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইছে। আকাশ সন্ধ্যার হাত ছেড়ে ডান হাতে সন্ধ্যার কোমর জড়িয়ে তার সাথে চেপে ধরে। উল্টো ঘুরেই বা হাতে দরজা ঠেলে দেয়। দৃষ্টি সন্ধ্যার দিকে।
খুব ভালোই বুঝেছে, সন্ধ্যা তার মাকে বিচার দিতে যাচ্ছিল। সে তো বউয়ের সেবা পাওয়ার জন্য মিথ্যা বলল। অথচ তার বোকা বউ উল্টো বুঝে বসে আছে। আকাশ বা হাতের দু’আঙুলের সাহায্যে সন্ধ্যার কপালে একটা টোকা দেয়। সন্ধ্যা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। আকাশ মৃদু হেসে বলে,
– স্বামী অসুস্থ হলে বউদের সেবা করতে হয়, জানো না?
সন্ধ্যা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। আকাশের কথায় মেয়েটি সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়। আকাশ আবার-ও বলে,
– আজ কলেজ যাবে?
সন্ধ্যা উপর-নীচ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। কিন্তু আকাশ অসুস্থ, কথাটা মনে পড়তেই আবার-ও দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বোঝায়, সে যাবে না। আকাশ সন্ধ্যার মনোভাব বুঝতে পেরে শব্দহীন হাসে। সন্ধ্যার মাথা নিচু। আকাশ বা হাত সন্ধ্যার থুতনির নিচে রেখে, সন্ধ্যার মুখ সামান্য উঁচু করে। মৃদুস্বরে বলে,
– যেতে হবে না। তুমি সকাল সকাল খালি হাতে আমাকে দেখতে এসেছ কেন? অসুস্থ মানুষকে দেখতে আসলে হাতে করে ফলমূল আনতে হয়, জানো না?
সন্ধ্যা বোকাচোখে তাকায়। ভাবে, সে আকাশকে দেখতে আসলে তাকে ফলমূল আনতে হবে?
আকাশ চোখ ছোট ছোট করে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। মুখাবয়ব গম্ভীর, তবে মনে মনে হাসছে।
সন্ধ্যা চোখ নামিয়ে নেয়। আকাশের প্যান্টের পকেটে ফোন বুঝতে পেরে সন্ধ্যা আকাশের পকেট থেকে ফোন বের করে। আকাশ দেখল, কিছু বলল না। তার ফোনে লক নেই, এজন্য সন্ধ্যা নিজেই ফোন খুলে কিছু টাইপ করল। এরপর আকাশের দিকে ফোন ধরলে আকাশ তাকায় ফোনের দিকে।
– আমার কাছে টাকা নেই। আমাকে টাকা দিন। আমি ফল কিনে আনছি। আপনি টাকা দিবেন বলে ভাববেন না, ওগুলো আপনার। কারণ টাকায় কারো নাম লেখা থাকে না।
লেখাটি পড়ে আকাশ ঘাড় বাঁকিয়ে একটু কেশে ওঠে। অতঃপর সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
– ফলেও তো কারো নাম লেখা থাকে না।
সন্ধ্যা আবার-ও টাইপ করে,
– থাকবে।
আকাশ বলে,
– তুমি কি ফলের উপর তোমার নাম লিখে দিবে?
সন্ধ্যা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। আকাশ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– তাহলে আমিও আমার টাকার উপর নাম লিখে দিব।
সন্ধ্যা টাইপ করে,
– টাকা তো দোকানওয়ালা নিয়ে নিবে। আর আপনি ফল খাওয়ার পর-ও খোসা আমার কাছে রয়ে যাবে। যার উপর স্পষ্ট আমার নাম লেখা থাকবে।
আকাশ হতবাক হয়ে যায়। তার শান্তশিষ্ট ভদ্র বউয়ের মাথার এতো প্যাঁচ!
সন্ধ্যা আকাশের দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসে। সন্ধ্যার হাসি আকাশের চোখে পড়ে। আকাশ দ্রুত নিজেকে সামলে বা হাতে সন্ধ্যার মাথা থেকে ওড়না ফেলে দেয়। এরপর সন্ধ্যার শ’ক্ত খোপা খুলে দেয়। সন্ধ্যা অবাক হয় আকাশের কান্ডে। আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে তার বা হাত সন্ধ্যার ঘাড়ের পিছন দিয়ে চুলের ভাঁজে রাখে। সন্ধ্যা কেঁপে ওঠে। আকাশ সূক্ষ্ম হাসলো। বা হাতের বুড়ো আঙুল সন্ধ্যার কানের এপাশে এনে আলতো করে চলায়, মুখ এগিয়ে নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– ফল খাবো না। মিষ্টি খাবো বউ।
সন্ধ্যার শরীর শিরশির করছে। আকাশের কথা শুনে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকায়। আকাশ সন্ধ্যার চোখে চোখ রেখে বলে,
– চিন্তা নেই। এই মিষ্টি খেতে টাকা লাগে না।
আকাশের কথার মর্মার্থ বুঝতে পেরে সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। আকাশ মিটিমিটি হেসে বলে,
– অসুস্থ মানুষকে খাইয়ে দিতে হয়। তুমি খাইয়ে দিবেনা?
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। আকাশ তার মুখ আরেকটু এগিয়ে আনলে সন্ধ্যা দ্রুত বামদিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বুজে নেয়। আকাশ বিরক্ত হলো, তবে সন্ধ্যার ল’জ্জা বুঝতে পেরে হাসলো। সন্ধ্যা দু’হাতে আকাশকে ঠেলে সরাতে চাইলো। আকাশ ছাড়লো না। ডান হাতে সন্ধ্যার কোমর আরেকটু শ’ক্ত করে ধরল। চুলের ভাঁজে রাখা বা হাত ঘাড়ের পিছন দিয়ে নিয়ে সন্ধ্যার বাম গালে রেখে সন্ধ্যার মুখ নিজের দিকে ফেরায়। সন্ধ্যা দ্রুত চোখ মেলে তাকায়। আকাশের দৃষ্টি তার ঠোঁটে বুঝতে পেরে ঢোক গিলল। দৃষ্টি এলোমেলো হয়। আকাশ গলা নামিয়ে বলে,
– বুঝেছি, বউ আমার কিপ্টে। নিজে থেকে খাওয়াবেনা। আমাকেই খেতে হবে।
কথাটা বলে সাথে সাথে নিজের বাসনা পূরণ করতে সন্ধ্যার ঠোঁটজোড়ায় নিজের রাজত্ব চালায়। বা হাত সন্ধ্যার গাল থেকে নামিয়ে গলায় আনে। বাম কাঁধে পড়ে থাকা ওড়না ফেলে দেয়।
সন্ধ্যার বা হাতে আকাশের ফোন শ’ক্ত করে ধরে। অ’সহ্য অনুভূতিতে নেতিয়ে পড়ে মেয়েটা। ডান হাত আকাশের বুকে রেখে, দুর্বল হাতে আকাশকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলো। আকাশ গায়ে মাখলো না।
দু’মিনিটের মাথায় সন্ধ্যার হাতে আকাশের ফোন কর্কশ কণ্ঠে বেজে ওঠে। বিরক্তিতে আকাশের কপালে ভাঁজ পড়ে। সন্ধ্যা ছটফট করলে আকাশ আরও বিরক্ত হয়। ফোন বাজতে বাজতে কেটে গিয়ে আবার-ও নতুন করে রিং হয়।
আকাশ চরম বিরক্ত হয়। তার জীবনে শান্তি নেই। বউকে কাছেই কায় না, যা একটু পায়, আশেপাশের যত বে’য়া’দ’ব আছে, সবগুলো তার কাছে ম’র’তে আসে।
সমানে কলের শব্দে আকাশ সন্ধ্যাকে ছেড়ে দেয়। চোখেমুখে বিরক্তি। ছাড়া পেয়ে সন্ধ্যা দ্রুত দু’পা পিছিয়ে যায়। বাম কাঁধের ফেলে দেয়া ওড়না টেনে কাঁধে তুলে নেয়। মাথা নিচু তার। একটু-আধটু কাঁপছে শরীর। আকাশ সন্ধ্যার হাবভাব দেখছে। মুখে হাসি নেই। বিরক্ত সে। সন্ধ্যার উপর না, যে ফোন করেছে তার উপর। ফোনের ওপাশে যে আছে তাকে পেলে আজ উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখবে।
আকাশের ফোন আবার-ও বেজে উঠলে সন্ধ্যা মাথা নিচু রেখেই আকাশের ফোন বাড়িয়ে দেয়। হাত মৃদু কাঁপছে। আকাশ বুঝতে পারলো। সন্ধ্যার হাত থেকে ফোন নিয়ে দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। আকাশকে সরে যেতে দেখে সন্ধ্যা স্বস্তি পায়। দ্রুতপায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজার দিকে।
আকাশ বায়ানের কল রিসিভ করে ধমকে বলে,
– কি প্রবলেম তোমার? ম’র’বা ভালো কথা। আমি কি বলেছি ম’রা’র আগে আমাকে জানিয়ে ম’র’তে?
বায়ান অবুজ গলায় বলে,
– স্যার আমিতো নিজেই জানিনা আমি ম’র’বো!
আকাশ একই সুরে বলে,
– জানোনা কেন?
বায়ান মাথা চুলকে বলে,
– সেটাও তো জানিনা স্যার!
আকাশ রে’গে বলে,
– আমার প্রায়ভেট টাইমে কল করে তুমি আমায় চরম বিরক্ত করেছ। তোমার জন্য মারাত্মক শা’স্তি রেডি করছি, দাঁড়াও।
বায়ান ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
– স্যরি স্যার! আর হবে না। আপনি বা’থ’রু’ম পুরোপুরি সেড়ে নিন। আমি আবার পরে কল করব।
আকাশ হতবাক হয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– কি বললে?
বায়ান উত্তর করে,
– আপনিই তো বললেন প্রায়ভেট…..
আকাশ রা’গে ফোঁসফোঁস করতে করতে কড়া ধমক দেয়,
– সাটআপ। আর একটা বা’জে কথা বললে, তোমার পা’ছার ছাল তুলে ফেলব।
বায়ানের হাত থেকে ফোন পড়তে পড়তে বেঁচে যায়।
দরজায় সন্ধ্যা এখনো দাঁড়ানো। আকাশকে এভাবে রে’গে রে’গে কথা বলতে দেখে মেয়েটা অবাক হয়।
লাস্টে এসে এতো জোরে ধমক শুনে বায়নের সাথে সাথে সন্ধ্যা নিজেও ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। সাথে আকাশের লাস্ট কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
দরজায় সন্ধ্যাকে দেখে আকাশ নিজেকে সামলে নেয়। এই বউটা তার আড়াল থেকে সব শুনে নেয় কেন? সে কিসব বলে ফেলে, আর তার সন্ধ্যামালতী সব শুনে নেয়, দেখে নেয়। কি জ্বালা!
আকাশ কল হোল্ড করে, সন্ধ্যার দিকে চেয়ে দুষ্টু হেসে বলে,
– মিষ্টির রিভিউ এর জন্য দাঁড়িয়ে আছো সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা বিস্ময় চোখ তাকায়। আকাশ মিটিমিটি হেসে বলে,
– মিষ্টিটা অনেক ইয়াম্মি ছিল বউ!
ল’জ্জায় সন্ধ্যার কান গরম হয়ে উঠল। আর এক সেকেন্ড-ও এখানে দাঁড়ায় না। এক দৌড় দেয়। সন্ধ্যাকে এভাবে দৌড় দিতে দেখে আকাশ শব্দ করে হেসে ফেলে।
একটু পর নিজেকে সামলে ফোন কানে ধরে গম্ভীর গলায় বলে,
– বায়ান তোমার গার্লফ্রেন্ড কবে ফিরবে গ্রাম থেকে?
বায়ান অবাক হয়, তার স্যার সকালের এতো খোঁজ নিচ্ছে কেন হঠাৎ? উত্তর দেয়,
– স্যার দু’দিন পর আসবে হয়ত।
আকাশ বলে,
– আচ্ছা। বগুড়া যাওয়ার প্ল্যান আপাতত ক্যান্সেল।
বায়ান আমতা আমতা করে বলে,
– স্যার সকাল কি কিছু করেছে? কিছু করলে ওর হয়ে আমি স্যরি স্যার! ও খুব ভালো।
আকাশ রে’গে বলে,
– আর আমার কাছে কালো।
বায়ান সাথে সাথে বলে,
– না স্যার, ও তো ফর্সা।
আকাশ বিরক্ত হয়ে বলে,
– গাধা। কাজ কর।
বলেই কল কেটে দেয়।
রুমের এপাশ-ওপাশ পায়চারি করতে শুরু আকাশ। সকাল আর তার মায়ের কথা ভাবতেই রা’গে চোয়াল শ’ক্ত হয়ে যায়। ডান হাতে ফোন শ’ক্ত করে ধরে। বা হাত মুঠো করে। শা’স্তি কাকে বলে সন্ধ্যার সৎ মা, আর বোনকে বোঝাবে সে। তার বাবাকে-ও। এগুলোর সাথে যে যে কানেক্ট আছে সবগুলোর কড়ায়গণ্ডায় হিসাব নিবে সে।
আকাশ সারাদিন বাড়িতেই ছিল। সন্ধ্যার পর পর কিছু কাজে বাইরে বেরিয়েছিল। ঘণ্টা দুই পর বাড়ি ফেরে। গাড়ি গ্যারেজে রেখে গাড়ি থেকে নামলে আনিকাকে বাড়ির দিকে যেতে দেখে আকাশ আনিকা পাশে এসে দাঁড়ায়। হাঁটতে হাঁটতে বলে,
– রাব্বি কোথায়? একা এসেছিস না-কি?
আনিকা উত্তর করে,
– হ্যাঁ।
– গত দু’দিন কোথায় হাওয়া হয়েছিলি?
– হাওয়া হব কেন? বাসায়-ই ছিলাম। আসতে পারিনি একটি কারণে।
আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কি এমন কারণ? বললাম ইরা, সৌম্য’র বিয়ে।
আনিকা মৃদুস্বরে বলে,
– অনামিকার-ও বিয়ে ছিল।
কথাটা শুনে আকাশের পা থেমে যায়। বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় আনিকার দিকে। আকাশকে থেমে যেতে দেখে আনিকা আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ অবাক হয়ে বলে,
– কি বললি?
– কাউকে বলিনি। শুধু ছেলে এসে বিয়ে করে গিয়েছে।
আকাশ ঢোক গিলল। তার নিজেরই তো খারাপ লাগছে। তাহলে অরুণের কেমন লেগেছে? এইজন্য অরুণ গতকাল ওভাবে চলে গেল? অরুণের অনেক মেসেজ সে পেয়েছে আজ সারাদিনে। কিন্তু সিন করেনি। ভীষণ খারাপ লাগছিল। অরুণের কথাগুলোর ভার অনেক বেশি ছিল। আকাশ দ্রুত পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে অরুণের মেসেজ চেক করে। অনেক স্যরি, ভুল স্বীকার মেসেজ এর উপরে একটি মেসেজে চোখ আটকায় আকাশের।
– আমি সন্ধ্যাকে নিয়ে এভাবে বলতে চায়নি আকাশ। ওটা মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল। মাথা ঠিক ছিল না আমার। অনামিকার ক্ষেত্রে তুই সবসময় আমায় বাঁধা দিতি বলে অনেক রা’গ হয়েছিল। তাই ভুলভাল বলেছি। স্যরি রে!
অনামিকার বিয়ে হয়ে গিয়েছে আকাশ। এটা শুনে আমি আর ওই দেশের মাটিতে পা রাখতে পারিনি।
মেসেজটি পড়ে আকাশ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। আনিকার দিকে তাকিয়ে বলে,
– তুই জোর করে ধরে বেঁধে বোনকে বিয়ে দিলি না-কি?
আনিকা সাথে সাথে উত্তর দিল না। খারাপ লাগছে তার। অনামিকার জন্য নয়, অরুণের জন্য। তার ফোন তুলছেনা অরুণ। কোথায়, সেটাও জানেনা। মৃদুস্বরে বলে,
– অনামিকা নিজের পছন্দেই বিয়ে করেছে। গত আট মাস আগে থেকে ওর একটি ছেলের সাথে রিলেশন ছিল।
আকাশ অবাক হয়ে বলে,
– তিন মাসে অরুণকে ভুলে গেল? এ বছরের সেরা জোক্স!
আনিকা কিছু বলে না। আকাশ আবার-ও বলে,
– অরুণ নু’ড পিক নিয়ে অপরাধ করলে তোর বোন নু’ড দিয়ে অপরাধ করেছে। অরুণ স্বভাবসুলভ মেয়েদের সাথে বেশি মিশতো। উপর উপর গার্লফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড বলে মুখে ফেনা তুলতো, ভেতরে ছিল ফাঁকা। এসব জেনে অনামিকার খারাপ লাগা নরমাল। ছেড়ে দিতে চাওয়া নরমাল। অরুণ নু’ড পিক ভাইরাল করার ভ’য় দেখিয়েছে অনামিকাকে ওর কাছে রাখতে চেয়েছে, হয়তো এটা অপরাধ। কিন্তু মজার ব্যাপার ও ভাইরাল করেনি। বরং অনামিকার সম্মান রাখতে পিকগুলো সেই কবেই ডিলিট করেছে। আমি সাক্ষী। গত ১১ মাসে ওকে কোনো মেয়ের সাথে ফ্লাট করা তো দূর, উল্টে অনামিকার জন্য অপেক্ষা করে গিয়েছে। বিয়ের খবর পেয়ে ক’ষ্ট পেয়ে দেশ ছেড়েছে। আর তোর বোন কি করল?
আনিকার মাথা নিচু। সে নিজেও এসব কিছুই জানতো না, কি বলবে। আকাশ তাচ্ছিল্য কণ্ঠে বলে,
– একজনকে নু’ড পিক সেন্ড করে, তিনমাসের মাথায় আরেকজনের গলায় ঝুলে গেল! আসলে তোর বোন অরুণকে ভালোইবাসতো না। যখন-ই বুঝল, অরুণ ওকে ভালোবাসে, তখনই সুযোগ বুঝে অরুণের জীবন থেকে সরে পড়ল। কারণ সে বুঝে গিয়েছে, অরুণ আর যাই করুক, তার পিক ভাইরাল করবে না!
কিছু বলার নেই। তবে ভালো হয়েছে। তোর বোনের মতো থার্ড’ক্লাশ মেয়ে আমার ফ্রেন্ডকে ডিজার্ভ করেনা। শুধু তোর বোনকে আমার সামনে পড়তে নিষেধ করিস। নয়তো থা’প্প’ড় একটাও মাটিতে পড়বে না।
শেষ কথাটা রে’গে বলে আকাশ৷ এরপর বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বলে,
– ভেতরে আয়। ফ্রেন্ডরা কখনো পর হয় না। আর মা তোকে ডেকেছে।
আনিকা চোখের কোণে জমা পানি মুছে নেয়। একটু হাসলো আকাশের কথায়। আকাশ ভেবেছে, অনামিকাকে এসব বলায় আনিকা তাকে ভুল বুঝবে, এজন্যই এমন কথা বলল। অতঃপর আকাশের পিছু পিছু এগিয়ে যায়।
আকাশ বাড়ির ভেতরে এসে আশেপাশে তাকালে সন্ধ্যাকে খুঁজল। না পেয়ে হতাশ হয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। আনিকা আসমানী নওয়ানের সাথে কথা বলে। এরপর শিমু, ইরা, সন্ধ্যা আসলে তাদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়।
আকাশ ঘরে এসে অরুণের মেসেজটির রিপ্লে করে,
– ভেবেছিলাম তোর আর অনামিকার মাঝে মান-অভিমান চলে। তুই অপরাধ করেছিস, অনামিকা শা’স্তি দিচ্ছে। তুই মানাতে না পারলে অপেক্ষা কর। তাই উল্টাপাল্টা কিছু করতে বাঁধা দিতাম। যাইহোক, এসব বাদ। বাংলাদেশে আয়। ফর্সা মেয়ে বাদ। সন্ধ্যামালতীর মতো শ্যামা মেয়ে এনে দিব তোকে, অনেক সুখী হবি।
অরুণের ফোন হাতেই ছিল। আকাশের রিপ্লে পেয়ে জানে পানি এসেছে তার। যা ভুলভাল বলে এসেছে, নিশ্চিত ছিল বছরখানেক আকাশ তার সাথে কথা বলবে না তার সাথে। সেখানে একদিন পরেই রিপ্লে পেয়ে অরুণের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোন ফিলিংস হলো। একটু হেসে রিপ্লে দেয়,
– তুই চাইলে সন্ধ্যামালতীকেই দিতে পারিস। তোর আর ক’ষ্ট করে মেয়ে খুঁজতে হবে না। দারুণ না আইডিয়াটা!
অরুণের মেসেজটি পড়ে আকাশ রে’গেমেগে হাতের ফোন সর্বশক্তি দিয়ে আঁচড়ে ফেলে। এসব মজা নেয়া যায় না। কত বড় সাহস তার সন্ধ্যামালতীকে নিয়ে আবার উল্টাপাল্টা বলে! দাঁত কিড়মিড় করে বিড়বিড়িয়ে বলে,
– বে’য়া’দ’বের বাচ্চা অরুণ, তোকে ছাড়ব না আমি। একবার বাংলাদেশে আয়, বায়ানের সাথে তোর-ও পা’ছার ছাল তুলব।
কিছুক্ষণ পর রা’গ কমে গেলে এগিয়ে গিয়ে ফোন তুলে দেখল, ফোনের অস্তিত্ব নেই। সন্ধ্যা ফেলেছিল, তখন শুধু গ্লাস ফেটেছিল। এবার শেষ। একদম গুঁড়ো। এর ব্যাটারি-ও বেঁকে গিয়েছে একদম। আকাশ হতাশ হলো। মনে মনে ভাবলো, ফোন গিয়েছে তো কি হয়েছে? বউ তো ভালো আছে! এতেই শান্তি!
গতকাল রাতে ইরাকে নিয়ে কিছু কথা বলার সময় ১১ মাস পর উচ্চারণ করেছিল সৌম্য। ইরা অবাক হয়েছিল। সৌম্যকে জিজ্ঞেস করলে, সৌম্য কার্জন হলে না গিয়ে গত ১১ মাসের সব ঘটনা ইরাকে বলে। শুধু ইরার বাবা মারা যাওয়ার ব্যাপারটা এখন-ও জানায়নি।
সৌম্য অফিস থেকে ফিরেছে রাত দশটায়। আজ ফিরতে লেট হয়ে গিয়েছে। গত দু’দিন ছুটি নিয়েছিল। আজ অফিস ছিল। দরজা খুলে দিয়েছে আসমানী নওয়ান। ইরাকে কোথাও দেখেনি সৌম্য। জিজ্ঞেস-ও করেনি কাউকে। ঘরে এসে গোসল করে নেয়। ক্লান্ত লাগছে। পরনে কালো প্যান্ট, উদাম শরীর। বাসায় থাকা অবস্থায় ছোট থেকে লুঙ্গি পরার অভ্যাস। কিন্তু এই বাড়ি একটা লুঙ্গি-ও নেই বলে সৌম্য’র বিরক্ত লাগছে।
ইরা ঘরে এসে সৌম্যকে দেখে বলে,
– তুই কখন এসেছিস?
সৌম্য ইরার দিকে তাকালো। ইরার পরনে থ্রি-পিস দেখে ভালো লাগলো তার। কিন্তু ওড়না নেই, সব চুলগুলো অর্ধেক করে দু’পাশে রেখেছে। সৌম্য মৃদুস্বরে বলে,
– এসে গোসল করলাম। তোর ওড়না কোথায়?
ইরা এগিয়ে এসে সৌম্য’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
– খুঁজে পাচ্ছি না। কোথাও হয়তো খুলে পড়েছে।
সৌম্য অবাক হয়ে বলে,
– মানে?
ইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,
– এই বাড়ির-ই কোথাও আছে। খুঁজতে হবে। তাছাড়া ওড়নাগুলো অনেক বড় হয়। স্কার্ফ হলে ভালো হয়।
সৌম্য হতাশ চোখে চেয়ে রইল ইরার দিকে। ইরা সৌম্য’র হাত ধরে বলে,
– তুই কি মন খারাপ করেছিস সৌম্য?
সৌম্য কিছু বলল না। ইরার হাত থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নেয়। ব্যাপারটায় ইরার বুকে চিনচিন করে ওঠে। অসহায়ের কণ্ঠে ডাকে,
– সৌম্য?
সৌম্য ঘাড় বাঁকিয়ে টেবিলের উপর থেকে একটি কালো টিপের পাতা নিয়ে ইরার চোখের দিকে তাকায়। এটুকুতেই ইরার চোখের কোণে পানি জমেছে। সৌম্য কি বলবে বুঝল না। ভেতর থেকে একটি টিপ বের করে ইরার কপালের মাঝ বরাবর টিপ পরিয়ে দেয়।
সৌম্য’র মনে হলো, ফর্সা মুখে কপালের মাঝ বরাবর ছোট্ট একটি কালো টিপ ইরার সৌন্দর্য কয়েকশোগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইরার মুখের দিকে চেয়ে সৌম্য মৃদু হাসলো। এরপর টিপের পাতাটি ইরার হাতে দিয়ে, তার দু’হাতের আঁজলায় ইরার মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– কাঁদছিস কেন? কিছু বলেছি আমি?
ইরা উত্তর করে,
– ভেবেছিলাম, তুই রা’গ করে আর কথা বলবি না।
সৌম্য ইরার দিকে চেয়ে রইল। ইরা আবার-ও বলে,
– তুই কি করে জানলি আমার কালো ছোট টিপ পছন্দ? আমি তো তোকে কখনো বলিনি।
সৌম্য উত্তর দেয়,
– টিপের দোকান দেখলে, তোর দৃষ্টি সবসময় এই কালো টিপের পাতায় আটকে থাকতো।
ইরা অবাক হয়ে বলে,
– কখন এতো খেয়াল করতি আমায়?
সৌম্য একটু হেসে বলে,
– সবসময়!
ইরা মন খারাপ করে বলে,
– সর্বোচ্চ দশ টাকা দাম। তখন কিনে দিতি না কেন?
সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দেয়,
– ভীতু ছিলাম তাই।
– এখন সাহসী হয়েছিস?
সৌম্য ডান হাতের দু’আঙুলের সাহায্যে ইরার নাক টেনে বলে,
– আমি সাহসী হয়েছি কি-না জানিনা। তবে তুই আমায় বিয়ে করে ভীতু হয়েছিস। এটা সিইওর।
ইরা অবাক হয়ে বলে,
– কিভাবে?
সৌম্য গম্ভীর গলায় বলে,
– আমি আসার আগে থ্রি-পিস পরেছিস। সারাদিন তো নিজের পছন্দের পোষাক পরে ঘুরে বেড়িয়েছিস।
ইরা থতমত খেয়ে তাকায়। ধরা খেয়ে দৃষ্টি এলোমেলো হয়। সৌম্য মৃদু হেসে বলে,
– একদিনে কিছু করতে বলিনি আমি। ধীরে ধীরে শিখে যাবি ইরাবতী। এতো চাপ নিতে হবে না।
ইরা আপ্লূত হলো। সৌম্য দু’হাতে ইরার চুলগুলো সামনে থেকে সরিয়ে পিছনে নিয়ে গেল। ইরা ল’জ্জা পায় একটু। কিন্তু কিছু বলল না। সে যেমন পোষাক-ই পরুক,, সামনে ওড়না, স্কার্ফ বা চুল রাখে সবসময়।
সৌম্য ইরার হলুদ ফর্সা গলায় দৃষ্টি রাখে। ডান হাত উঠিয়ে হাতের উল্টোপিঠে আলতো করে বুলায় আর নরম গলায় বলে,
– জামার গলা বড়। ভালো লাগছে!
ইরার দৃষ্টি নিচু। সৌম্য মৃদুস্বরে বলে,
– তাকা আমার দিকে।
ইরা সৌম্য’র কথা মেনে চোখ তুলে সৌম্য’র দিকে তাকায়। সে ভেবেছিল, সৌম্য তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই তাকেও তাকাতে বলছে। কিন্তু সৌম্য’র দৃষ্টি দেখে ইরা কেঁপে ওঠে। সৌম্য দুষ্টু হেসে বলে,
– সুন্দর!
ইরা দু’হাতে সৌম্য’কে আলতো হাতে ধাক্কা দিয়ে মেকি রা’গ দেখিয়ে বলে,
– তুই দিনদিন অ’স’ভ্য হয়ে যাচ্ছিস।
সৌম্য যেভাবে ছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি-ও এদিক-ওদিক হয়নি। ইরা না পেরে উল্টো ঘুরে যেতে নিলে সৌম্য ইরার হাত টেনে ধরে। ইরা সৌম্য’র দিকে তাকায়। ভীষণ ল’জ্জা পায় সে।
এক পর্যায়ে সৌম্য’র দৃষ্টি থেকে বাঁচতে এগিয়ে এসে সৌম্য’কে দু’হাতে জাপ্টে ধরে। সৌম্য হাসলো। দু’হাতে ইরাকে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় একটা চুমু আঁকে।
১১ টার পর আকাশ তার ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে নামে। আশেপাশে তাকায়, কাঙ্ক্ষিত মানুষকে দেখতে না পেয়ে চরম হতাশ হয়। সারাদিন বাড়ি থেকেও ঘর থেকে বের হয়েছিল কয়েকবার। কিন্তু একবার-ও সন্ধ্যার দেখা পায়নি। কি জ্বালা! বউকে একটা চুমু খেলেই বউ তার গুহায় লুকিয়ে পড়ে। সে কি তার বউটাকে চুমু খাবে না? এমন হলে তার জীবন চলবে কি করে?
আকাশ হতাশ হয়ে সোফায় গিয়েে বসল। মাকে ডাক দেয়ার আগেই আসমানী নওয়ান, সাথে শিমুর মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আকাশ অসহায় কণ্ঠে বলে,
– মা আমার বউ কোথায়?
আকাশের কথার ধরণে আসমানী নওয়ান আর শিমুর মা হেসে ফেলল। শিমুর মা এগিয়ে এসে বলে,
– তোমার বউ তো রান্নাঘরে।
আকাশ সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে,
– সত্যি বলছ তো খালা?
আসমানী নওয়ান হেসে বলে,
– হ আব্বা। মিথ্যা কইব ক্যা?
আকাশ রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,
– রান্নাঘরে অনেক গরম। তোমরা এখানে বসে একটু ফ্যানের বাতাস খাও মা, খালা।
আকাশের কথা শুনে দু’বোন হাসলো। সন্ধ্যা সব কাজ শেষে দু’টো বাটি ধুয়ে তাকের উপর রেখে উল্টো ঘোরার সাথে সাথে আকাশ সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায় সন্ধ্যা ভ’য় পেয়ে যায়। তবে আকাশ ধরেছে বুঝতে পেরে স্বস্তি পায়।
সন্ধ্যার ওড়না গলার সাথে, খোপা করা চুল আধখোলা হয়ে আছে। আকাশ সন্ধ্যার গালে একটা চুমু খেয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– আমার শান্তি তুমি।
সন্ধ্যা ডান হাত তুলে আকাশের পিঠে রাখে। আকাশ সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে রেখে সন্ধ্যার গালে পরপর পাঁচটা চুমু খায়। এরপর সন্ধ্যাকে ছেড়ে দু’হাতে সন্ধ্যার মুখ আগলে নিয়ে বলে,
– কোথায় ছিলে বউ?
সন্ধ্যা আকাশের দিকে চেয়ে আছে। সে আজ সারাদিন ইরা, আর শিমুর সাথে ছিল। আনিকা এসেছিল, সে-ও অনেক কথা বলেছে। আনিকা চলে গেলে সন্ধ্যা রান্নাঘরে এসে রান্নার কাজে হেল্প করেছে। আকাশ অসহায় কণ্ঠে বলে,
– স্পেশাল মিষ্টির অভাবে আমার ডায়াবেটিস ধরবে সন্ধ্যামালতী। একটু বোঝো বউ!
সন্ধ্যা বিস্ময় চোখে তাকায়। আকাশের এসব অদ্ভুদ অদ্ভুদ কথা শুনে বেচারির মাথা ঘোরে। আকাশ একটু ঝুঁকে সন্ধ্যার ঠোঁটে টুপ করে একটা শুকনো চুমু খায়। এরপর সন্ধ্যার হাত ধরে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
ডায়নিং-টেবিল এর এখানে এসে আকাশ একটি চেয়ার টেনে বসে। এরপর পাশের চেয়ার টেনে সন্ধ্যাকে টেনে বসায়। আসমানী নওয়ান আর শিমুর মা সবার জন্য ভাত বেড়েছেন। ইরার মা-ও টেবিলে বসে পড়েছে। পাশে শিমুর মা, তার পাশে শিমু বসেছে।
সৌম্য আর ইরা উপর থেকে নেমে আসে। দু’জন পাশাপাশি বসে। টেবিলের মাথায় সৌম্য। একটু ঘুরে ডানদিকে আকাশ, অর্থাৎ সৌম্য’র একদম ডান পাশে বসেছে আকাশ। সৌম্য’র বাম পাশে একটু ঘুরে ইরা বসেছে। কেউ কোনো কথা বলল না। সবাই চুপচাপ খাওয়ায় ব্যস্ত হয়।
ইরার মা আসমানী নওয়ানের উদ্দেশ্যে বলে,
– আসমানী তুমিও বসো।
আসমানী নওয়ান বলেন,
– বসতাছি ভাবি। তোমরা খাও।
তার দৃষ্টি আকাশের দিকে। প্রায় সবার দৃষ্টি-ই আকাশের দিকে। আকাশ তার পাতের মাছ নিয়ে কাটা বেছে বেছে সন্ধ্যার পুরো প্লেটের চারিদিকে সাজিয়ে দিয়েছে। যেন সন্ধ্যা কোনো বাচ্চা। সন্ধ্যা খাওয়া বাদ দিয়ে তার প্লেটের দিকে হা করে চেয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে, সে পাঁচ বছরের বাচ্চা।
সৌম্য ব্যাপারটি খেয়াল করে একটু হাসলো। অতঃপর বলে,
– বোনু খেয়ে নে।
সন্ধ্যা একটু নড়েচড়ে বসে। আকাশ একটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,
– খাও বউ। মাছ বেছে দিয়েছি বলেই এতো ল’জ্জা পাচ্ছো! ল’জ্জা রেখে খাও। নয়তো আমি খাওয়ানো স্টার্ট করব। আর আমি খাওয়ালে কিন্তু হাত দিয়ে খাওয়াবোনা।
সন্ধ্যা দ্রুত ভাত মাখাতে ব্যস্ত হয়। আকাশ হাসলো। এরপর সোজা হয়ে বসে নিজে খাওয়ায় ব্যস্ত হয়।
আসমানী নওয়ান এগিয়ে এসে আকাশের মাথায় হাত বুলায়। আকাশ ঘাড় বাঁকিয়ে মায়ের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলে,
– মা তোমার মাছ দাও। বেছে দিচ্ছি। যতই হোক মা আমার বহুত হিংসুটে!
আসমানী নওয়ান আকাশের কান টেনে বলে,
– বে’দ্দ’প ছেলে। আমি আমার জান্নাতরে দেইখা হিংসা করমু?
আকাশ ভাবলেশহীনভাবে ভাত খায়। যেন সে মহা সত্যি কথা বলেছে।
আসমানী নওয়ান হাসলেন। তার ছেলেটা কতমাস পর এভাবে হাসছে! ভেবেই বুকটা প্রশান্তিতে ভরে যায় তার। এরপর এগিয়ে এসে সৌম্য’র পাশে দাঁড়ায়। সৌম্য’কে জিজ্ঞেস করেন,
– বাসার মালিককে নিষেধ করছ আব্বা?
সৌম্য ছোট করে বলে,
– এখন-ও করিনি। আজ করব।
আসমানী নওয়ান সৌম্য’র মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
– তুমি আমারে মা কইয়া ডাকোনা ক্যান আব্বা?
সৌম্য বিব্রতবোধ করে। সে মা ডাকতে চাইলেও হঠাৎ করে মা ডাক আসছে না। আকাশ পাশ থেকে বলে,
– তোমার ছোট ছেলে শরম পায় মা শরম। কঠিন ল’জ্জা তার।
সৌম্য বিরক্ত হয়ে বলে,
– তো কি আপনার মতো নি’র্ল’জ্জ হবো?
আকাশ কটমট দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
– মনে হচ্ছে ল’জ্জার গোডাউন আছে তোমার কাছে!
সৌম্য চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– অবশ্যই আছে। ঠিক যেমন আপনার কাছে নি’র্ল’জ্জ’তার গোডাউন আছে।
আকাশ রে’গে বলে,
– আমি তোমার বড় ভাই।
সৌম্য ভাবলেশহীনভাবে বলে,
– ওহ, মনে ছিল না।
ওদিকে সকলে খাওয়া রেখে অবাক হয়ে আকাশ আর সৌম্য’র দিকে চেয়ে আছে। এভাবে কোনো ছেলেদের ঝগড়া করতে দেখেনি বোধয়। সন্ধ্যা, আর ইরা সবচেয়ে বেশি অবাক। বিস্ময়ে দু’জনেরই বা হাত মাথায় চলে গিয়েছে।
আকাশ দাঁত কিড়মিড় করে তাকায় সৌম্য’র দিকে। কি বে’য়া’দ’ব ভাবা যায়! বড় ভাইয়ের মুখে মুখে তর্ক করছে। আকাশ রে’গে বা হাতের কনিষ্ঠ আঙুল সৌম্য’র দিকে উঁচিয়ে বলে,
– তোমাকে তো আমি…….
মাঝখান থেকে আসমানী নওয়ান কপাল চাপড়ে বলেন,
– আরে তোমরা দুই ভাই মেয়েদের মতো এইভাবে ঝগড়া করতাছ ক্যান?
আকাশ দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
– মা তোমার এই ছোট ছেলে এক নাম্বার ঝগরুটে।
সৌম্য রে’গে বলে,
অন্তঃদহন পর্ব ৩৫
– আর আপনি ঝগরুটের গুরু, আমি কেবল আপনার শিষ্য মাত্র।
শিমু খেতে খেতে মিটিমিটি হেসে গুণগুণ করে গায়,
– আপনি গুরু আমি শিষ্য, বুদ্ধি আমার কম
আপনি বুঝাইয়া দিলে, বুঝিতে সক্ষম।
Agr part kno diccan