তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১৫

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১৫
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

“আমার শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে, রায়ান ভাই। আমাকে একটু রুমে নিয়ে যান।”
রায়ানের হুঁশ ফিরল। নিজেকে ধাতস্থ করে জিজ্ঞেস করল,
“কী হয়েছে?”
“শরীরটা কেমন জানি খারাপ লাগছে!”
“অসুস্থ শরীর নিয়ে তুই সিঁড়িতে কেন দাঁড়িয়ে ছিলি? এখানে একটু দাঁড়া। আমি ছাদ থেকে চেয়ার দুটো নিয়ে আসি।”
রায়ান অনুকে ছাড়াতে চাইলে, অনু আরো শক্ত করে রায়ানকে জড়িয়ে ধরল। মেকি কান্নার ভান ধরে বলল,
“না, না! আমি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না। মাথা ঘুরছে।”
রায়ান এবার সতর্ক হলো। অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

“খুব বেশি খারাপ লাগছে?”
“হু।”
“রুমে চল।”
রায়ান অনুকে ধরে ধরে রুমে নিয়ে গেল। এতক্ষণ ওদের কথোপকথন শুনেছে এবং দেখেছেও আয়ান ও জুঁই। ওরা সতর্ক হলেও লুকানোর জায়গা ছিল না ছাদে। রায়ান ভাই যদি একবার ছাদে আসতো তাহলে দুজনেই আজ ধরা পড়ে যেত। ভাগ্যিস অনুটা ছিল! অজান্তেই বোনটা ওর উপকার করে দিয়েছে ভেবে মনে মনে কৃতজ্ঞ হলো আয়ান। এদিকে জুঁইয়ের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত ছিল নিজের ভাইকে দেখে। আজ যে ঠিক কী হতে পারত বা হতো তা সে কল্পনাও করতে পারছে না! রায়ান, অনু যাওয়ার সাথে সাথেই ওরাও ছাদ থেকে নেমে গিয়েছে।
রুমে এসে অনু শুয়ে পড়েছে। রায়ান বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ডাক্তার ডাকব?”
অনুর মুখাবয়ব পরিবর্তন হয়ে গেল মুহূর্তেই। সে বিছানায় শোয়ার সময় দেখেছে আয়ান এবং জুঁই দ্রুত ওর রুমের সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে। তাই তারও এখন আর রায়ানের সাথে ভাব জমানোর কোনো প্রয়োজন নেই। সে মুখটা গম্ভীর করে বলল,
“না।”
“তাহলে চাচিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
“কাউকে পাঠাতে হবে না। একটু রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাব।”
রায়ান ভ্রু কু্ঁচকে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। মাত্রই তো কত নরম ছিল। হঠাৎ করে আবার এমন গরম হয়ে যাওয়ার মানে কী? তবে অনুকে সে ঘাঁটাল না। নিচে অনেক কাজ আছে। মেহমানদের আপ্যায়নে সাহায্য করতে হবে। তাই সে চুপচাপ অনুর রুম থেকে চলে গেল।

রাত প্রায় দশটা বাজে। রিয়াদ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মন-মেজাজ একদম ভালো নেই। স্নিগ্ধাকে দেখে আসার পরই দাদা স্নিগ্ধার ফোন নাম্বার দিয়েছিলেন ওকে, কথা বলার জন্য। কিন্তু রিয়াদ ফোন করেনি। কথা বলার ইচ্ছে নেই ওর। আজ স্নিগ্ধার পরিবারের মানুষের সামনেও সে বেশ নিরব ছিল। আগের মতো চাইলেও সে সরব হতে পারছিল না। কাউকে নিজের মনের কথা বোঝানোরও তো উপায় নেই কোনো।
লাইট নিভিয়ে শোয়ার পরপরই ওর ফোনটা বেজে উঠল। আননোন নাম্বার। এই রাতে তাকে কে কল করবে? রিয়াদ কল রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলল,

“আসসালামু আলাইকুম, কে?”
ঐপাশ থেকে মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে এলো। মিষ্টি রিনরিনে কণ্ঠ থেকে জবাব এলো,
“ওয়া আলাইকুমুস-সালাম। আমি স্নিগ্ধা।”
নাম শুনে চুপ করে রইল রিয়াদ। নিরবতা ভাঙতে স্নিগ্ধা জিজ্ঞেস করল,
“চিনতে পেরেছেন?”
রিয়াদ রাশভারী কণ্ঠে বলল,
“জি।”
“বিরক্ত করলাম?”
“জি না। বলুন।”

“আসলে সেভাবে কিছু বলার নেই। আপনার নাম্বার দিল আজ মা। বলল আপনার সাথে কথা বলতে। কী কথা বলব জানি না।”
রিয়াদ নিশ্চুপ। তার নিজেরও বলার মতো কিছু নেই। স্নিগ্ধা নিজেই বলল,
“আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন?”
রিয়াদ বিরক্ত হচ্ছে না। কিন্তু তার কথাও বলতে ইচ্ছে করছে না। তবে সে ভদ্রতা বজায় রাখল। সৌজন্যতার খাতিরে বলল,
“না, বিরক্ত হচ্ছি না। কেমন আছেন?”
রিয়াদ নিজে থেকে প্রশ্ন করায় স্নিগ্ধার এখন একটু ভালো লাগছে। এতক্ষণ সহজ হতে পারছিল না। জড়তা কাজ করছিল। তাছাড়া এখনো বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটানোর শব্দ হচ্ছে। এত নার্ভাস আর ভয় যে কেন লাগছে!
স্নিগ্ধা সহজ হওয়ার চেষ্টা করল। ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলল,

“আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও ভালো আছি।”
“খেয়েছেন রাতে?”
“জি। আপনি?”
“হ্যাঁ।”
এবার দুজনই চুপ করে রইল। রিয়াদের কিছু বলার নেই এমনিও। অন্যদিকে স্নিগ্ধার অনেককিছু বলার থাকলেও মেয়েলি ইগো, জড়তা, সংকোচ ও লজ্জার জন্য সে অনেক কিছুই বলতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়েই ফোন রাখতে হবে। রিয়াদ নিজেও সহজ হচ্ছে না ওর সাথে। হয়তো প্রথমবার কথা বলছে বলে তার মধ্যেও এক প্রকার জড়তা কাজ করছে। স্নিগ্ধা বলল,

“ঠিক আছে। এখন তাহলে রাখছি। পরে আবার কথা হবে।”
“আচ্ছা।”
“শুভ রাত্রি।”
“শুভ রাত্রি।”
ফোন কেটে জোরে শ্বাস নিল স্নিগ্ধা। এতক্ষণ যেন ভয়ে নিঃশ্বাস আটকে ছিল। ফোনের গ্যালারিতে ঢুকে ও রিয়াদের ছবি দেখছে এবং মিটিমিটি হাসছে। ছবিগুলো রিয়াদের ছোটো ফুপি পাঠিয়েছিল। প্রথম দেখাতেই স্নিগ্ধার রিয়াদকে ভালো লেগে গিয়েছিল। যখন দেখল রিয়াদের পরিবারও ওকে পছন্দ করেছে তখন তো খুশির সীমা ছিল না। আজ ওর বাবা-মা ঐ বাড়ি থেকে ফিরে এসে পজিটিভ উত্তর দিয়েছে। তাদেরও রিয়াদ এবং ওর পরিবারের সবাইকে ভীষণ ভালো লেগেছে। স্নিগ্ধা এজন্য ভীষণ খুশি। তাই মা যখন বলল কল করে কথা বলার জন্য তখন আর অপেক্ষা করেনি স্নিগ্ধা। লজ্জার পরোয়া না করে নিজে থেকেই কথা বলেছে। সে ফোনে রিয়াদের ছবিটার ওপর হাত বুলিয়ে বলল,
“আপনি ভীষণ সুন্দর মিস্টার রিয়ার চৌধুরী।”

রোমিওকে কোলে নিয়ে উঠানের জলচৌকিতে বসে আছে অনু। দাদি ওর মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিলেন। রিয়াদ ও স্নিগ্ধার বিয়ের কথা মোটামুটিভাবে বেশ ভালোই আগাচ্ছে। এখন শুধু বিয়ের ডেট ফিক্সড করা বাকি। একদিন সময় করে দুই পরিবার বসবে। সব স্বাভাবিকের মাঝেও বেশ কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে। কিন্তু কারো চোখে পড়ছে না। যার ঘটনা শুধু সে-ই অনুভব করতে পারছে।

আয়ান ও জুঁইয়ের প্রেম জমে ক্ষীর হয়ে গেছে। বাড়ির সবাই বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত বলে তারাও কথা বলার সময় বেশি পায়। সবার সামনে পাশাপাশি বসে চোখে চোখে কথা বললেও কেউ বুঝতে পারে না। তবে অনু বোঝে। সে দূর থেকে তার ভাই ও জুঁইয়ের প্রেম দেখে এবং মনে মনে আফসোস করে এই ভেবে যে, ওদের ভালোবাসা হয়তো কখনোই পূর্ণতা পাবে না। অপরদিকে অনুর অবহেলা এবং এড়িয়ে চলার মাত্রা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। একসাথে পাশাপাশি বসে থাকলেও অনু এমনভাবে রায়ানকে এড়িয়ে চলে, যেন ওর কোনো অস্তিত্বই নেই! একটা মানুষ এতটা বদলে যেতে পারে কী করে? অনুর এরকম আচরণে রায়ানের মেজাজ তুঙ্গে উঠে আছে। এছাড়া আছে আরেক ঝামেলা সূর্য! পড়াশোনা সব বাদ দিয়ে এখানে এসে পড়ে আছে। তা ও আসতেই পারে। রায়ানের যেমন এটা দাদাবাড়ি, সূর্যরও তেমন নানাবাড়ি। দুজনেরই সমান অধিকার আছে। এই বাড়িতে সূর্যর আসা নিয়ে কিংবা থাকা নিয়ে তো রায়ানের কোনো মাথা-ব্যথা নেই। মাথা-ব্যথা শুধু এতটুকুই যে, সারাক্ষণ অনু আপু, অনু আপু বলে মুখ দিয়ে ফ্যানা তুলে ফেলে। অথচ কাজকর্ম করে সব প্রেমিকের মতো। বাড়ি ভরতি এত মানুষ; অথচ অনুর সব টেক কেয়ার যেন ওরই করা লাগবে। বিরক্তিকর!

অপরদিকে রিয়াদ ও স্নিগ্ধার বিষয়টি। প্রতিদিনই দুজনের কথা হচ্ছে। কথা হচ্ছে বললে ভুল বলা হবে। সময় অতিবাহিত হয় শুধু। দুজনই ফোন কানে নিয়ে চুপ করে থাকে। রিয়াদ বুঝতে পারে যে, স্নিগ্ধা ওর প্রতি দুর্বল হতে শুরু করেছে। অনেকবার সে বলতে চেয়েছে, এই বিয়েতে তার মত নেই। কিন্তু স্নিগ্ধার ঝলমলে আনন্দমাখা কণ্ঠ শুনে আর বলতে পারেনি। স্নিগ্ধার আনন্দ মাটি করতে ইচ্ছে করেনি। এছাড়া বিয়ের কথাবার্তা প্রায় গ্রাম ছড়িয়ে গেছে। এই বিয়েটা না হলে রিয়াদের কিছুই হবে না। কিন্তু স্নিগ্ধার দিকে আঙুল উঠবে। অনেক কটু কথা শুনতে হবে, অপদস্থ হতে হবে মেয়েটাকে। রিয়াদ এসব চায় না। এমনিও স্নিগ্ধাকে বিয়ে না করলেও অন্য কাউকে না কাউকে তো বিয়ে করতেই হবে। তাহলে শুধু শুধু স্নিগ্ধাকে কষ্ট দেওয়ার দরকারটাই বা কী!

এগুলোই হচ্ছে সব স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যে অস্বাভাবিক ঘটনা; যেগুলো বাকিদের চোখের আড়ালে রয়ে যাচ্ছে।
রায়ান উঠানেই একটা চেয়ারে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিল এবং আড়চোখে অনুকে পরখ করছিল। কারণ অনুর ঠিক পাশেই চেয়ার নিয়ে বসে আছে সূর্য। দাদি বিভিন্ন ভূতের গল্প শোনাচ্ছিলেন ওদের। অনু খুব আফসোস নিয়ে তখন বলল,
“এখন আমার ভূতের মুভি দেখতে ইচ্ছে করছে।”
সূর্য আনন্দিত হয়ে বলল,
“তাহলে চলো সিনেমা হলে গিয়ে দেখে আসি?”
জুঁই দাদির জন্য পান ছেঁচে এনে দাঁড়িয়েছে মাত্র। সেও বেশ উচ্ছাসিত হয়ে বলল,
“তোরা ভূতের মুভি দেখতে যাচ্ছিস নাকি? তাহলে আমিও যাব।”
এবার জুঁইয়ের সঙ্গে যোগ হলো মাহফুজা, আরিফা, কল্পনা, ইতি, জান্নাত, জমেলা রবিন, হাসান, সায়মন ও সিয়াম। সবাই হই-হুল্লোড় শুরু করে দিয়েছে ইতোমধ্যে। তাহমিনা বেগম ধমক দিয়ে বললেন,
“না, না কোথাও যাওয়া লাগবে না। বাড়িতে বসে যত মন চায় মুভি দেখ।”
বড়ো ফুপি তখন বললেন,

“আহা! যাক না ভাবি। সবসময় এমন আটকে রাখেন কেন ওদেরকে? এখনই তো বয়স মজা, আনন্দ করার।”
“সবগুলো ছোটো, ছোটো। সূর্য এতগুলাকে সামলাতে পারবে নাকি? ও তো নিজেই ছোটো। বাড়ির বড়ো কোনো ছেলে না থাকলে কোন সাহসে এতগুলো মেয়েকে একা ছাড়ব, পারভীন?”
রায়ান এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিল সবার কথা। এবার সে একটু নড়েচড়ে বসল। ফুপি নিশ্চয়ই এখন রায়ানকে সাথে যেতে বলবেন। সে প্রথমে রাজি হবে না। একটু ভাব নেবে। নয়তো অনু ভাববে, ওর জন্যই রায়ান যাচ্ছে।
ফুপি বললেন,
“তমাল, রিয়াদ কোথায়?”
“ওরা অফিসে গেছে।”

রায়ান মনে মনে শয়তানি হাসি দিল। এখন আর রায়ান ছাড়া তো অন্য কোনো অপশন নেই ওদের। সে আরেকটু ভাব ধরে বসল। সানগ্লাসটি সাথে থাকলে ভালো হতো। চোখে দিয়ে আরেকটু ভাব নেওয়া যেত। সূর্য বলল,
“তাহলে এখন উপায়? রায়ান ভাইয়া তো হলে গিয়ে মুভি দেখে না!”
রায়ান দাঁত-মুখ খিঁচে সূর্যর দিকে তাকাল। পারছে না এক্ষুনী গিলে খেতে। মনে মনে একশোটা গা’লি দিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগল,
“হত’চ্ছা’ড়া বদমাইশ ছেলে! সিনেমা হলে যাই না মানে তো এই নয় যে এখন যাব না। তোকে কে বলেছে মাতব্বরি করার? অ’সভ্য একটা!”
ঠিক তখন আবার এলো আয়ান। সে ফুপির পাশে বসে বলল,
“ডোন্ট ওয়্যারি। আমি তো আছি। আমি নিয়ে যাব ওদেরকে।”
ফুপি বললেন,
“যাক, তাহলে তো সমস্যার সমাধান হয়েই গেল। এখন আর বাচ্চাদের বাঁধা দিয়েন না ভাবি। একটু ঘুরে-ফিরে আসুক।”
রায়ান বসে বসে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগল। আয়ানকেও মনে মনে গা’লি দিচ্ছে এবার। হাত কামড়ে বিড়বিড় করছে,

“আসছে আমার হাতেম তাই! আলাদীনের চেরাগের জ্বীন! সমস্যা সমাধান করতে আসছে। একবার খালি সুযোগ পাই সব কয়টাকে পি’টিয়ে ভর্তা বানাব দেখিস!”
এতকিছুর মাঝেও রায়ান ভেবেছিল তাকে যাওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করা হবে। কিন্তু একটা বিচ্ছুও একটাবারের জন্য রায়ানকে যাওয়ার জন্য সাধল না! সবগুলোর গায়ে অনুর বাতাস লেগেছে। অনুর সঙ্গে থেকে থেকেই সবগুলো ওর মতো নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছে। এদিকে আরেক হতচ্ছাড়া সূর্য, বলে বসে আছে রায়ান সিনেমা হলে গিয়ে মুভি দেখে না! এখন সে যেচেও যাওয়ার কথা বলতে পারছে না। কী এক মুসিবত!
সবাই মুভি দেখার আনন্দে লাফাচ্ছে। নাচছে।রায়ান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সবগুলোকে ধমক দিয়ে বলল,
“থাম। চুপ একদম! মুভি দেখতে যাবি ভালো কথা। এত কীসের হাউকাউ? সবগুলো গোরুর পাল গিয়ে সিনেমা হলে একটা ঝামেলা পাকাবি। এদেরকে তুমি একসাথে পাঠাচ্ছে চাচ্ছো ফুপি?”

কাজিনরা এবার ভয় পেতে লাগল। রায়ান ভাই যদি একবার ফুপি কিংবা মা, চাচিদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয় যে মুভি দেখতে যাওয়া হবে না, তাহলে সত্যিই আর যাওয়া হবে না। সবাই থমথমে মুখে রায়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। রায়ান ভাই চোখ-মুখ শক্ত করে বলল,
“একটাও কোনো লাফালাফি করবি না। চুপচাপ গিয়ে রেডি হবি। আমি নিয়ে যাব তোদের সবাইকে মুভি দেখতে। যা এখন গিয়ে রেডি হ।”
সবাই খুশিতে আবার লাফাতে যাবে তখন রায়ান ভাই চোখ রাঙানি দিল। সবাই দ্রুত চলে গেল তখন রেডি হতে। তাহমিনা বেগম বললেন,

“ভালোই হলো তুই সাথে যাচ্ছিস। আয়ান তো ওদের মতোই বাচ্চা একদম। ওকে কেউ ভয় পায় না, মানতোও না। উলটো আয়ানও ওদের মতোই বাচ্চামো করতো। এখন তুই সাথে যাচ্ছিস, আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম। তোর ভয়ে হলেও উলটা-পালটা কিছু করবে না।”
রায়ান ভাই মনে মনে শয়তানি হাসি দিল ফের।
সবাই মিলে রেডি হয়ে একসাথে বেরিয়ে পড়েছে। রায়ান ভাই সবার জন্য টিকিট কাটল আগে। আজকে ওরা দেখবে ইংলিশ ভূতের মুভি ‘দ্য ফার্স্ট ওমেন’। যারা একদম ছোটো ওদেরকে মাঝখানে বসানো হয়েছে। সূর্য এসে অনুর পাশে বসতে চাইলে রায়ান ভাই বলল,
“ঐ সাইডে ইতি একা বসেছে। ওর পাশে গিয়ে বোস।”
“ওর এইপাশে তো আরিফা আছে।”
“যা বলেছি কর।”

রায়ান ভাইয়ের মুখের ওপর কথা বলার সাহস নেই সূর্যর। তাই বাধ্য হয়েই ইতির অন্য পাশে গিয়ে বসল সূর্য। রায়ান ভাই বসল অনুর পাশে। অনু সবই বুঝতে পারছে কিন্তু কিছু বলছে না। অনুর অন্য পাশে বসেছে জুঁই। রায়ান ভাই মনে মনে ভীষণ খুশি। অনু ভূতে ভীষণ ভয় পায়। নিশ্চয়ই ভয় পেয়ে রায়ানের হাত ধরবে। মুভি শুরু হয়েছে। রায়ানের মুভির জন্য কোনো টানটান উত্তেজনা নেই। কখন ভয়ের সীন আসবে আর কখন অনু ওকে জড়িয়ে ধরবে সেই অপেক্ষায় আছে।

কিছুক্ষণ বাদে সেই কাঙ্ক্ষিত ভয়ের মুহূর্ত এসেছে। তবে রায়ান ভাইয়ের ধারণা সত্যি হয়নি। অনু এবং জুঁই দুজনকে দুজনকে জাপটা-জাপটি করে ধরে রেখেছে ভয়ে। রায়ান হতাশ হলো। সে ভেবেছিল, অনু ভয় পেয়ে রায়ানকে জড়িয়ে ধরবে। অন্তত ভয়ে হাতটা তো ধরবে! জড়িয়ে ধরল ঠিকই, তবে রায়ানকে নয়; ওর বোনকে।
মুভির মাঝখানে রায়ান ওয়াশরুমের নাম করে বাইরে গেল। কিছুক্ষণ পায়চারি করে ফিরে এলো বুদ্ধি নিয়ে। ফিরে এসে জুঁইকে বলল,
“তোরা দেখি অনেক ভয় পাচ্ছিস। দেখি সর আমি মাঝখানে বসি।”
জুঁই ভীতকণ্ঠে বলল,

“হ্যাঁ, ভাইয়া প্লিজ এখানে বসো। ভয় পেয়ে অনুর হাত তো খা’ম’চি দিয়ে আমি শেষ করে ফেলতেছি!”
জুঁই সরে মাঝখানে সিট দিল রায়ানকে। রায়ান মনে মনে হাসল। কিন্তু ওদের সামনে ভাব নিয়ে বলল,
“তোরা ভয় পেলে আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারিস।”
জুঁই ভয়ে ঠিকই রায়ানকে খা’ম’চি দিয়ে অবস্থা খারাপ করে ফেলছে। কিন্তু অনুর এপাশ আ’ক্র’ম’নবিহীন। রায়ান ভাই বিস্ময় নিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখল, অনু ওড়না চোখের ওপর রেখে সীটে হেলান দিয়ে বসে আছে। মুভি দেখতে এসে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর মানে কী? রায়ান ভাই জিজ্ঞেস করল,

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১৪

“মুভি দেখিস না কেন?”
অনু ভাবলেশহীনভাবে জবাব দিল,
“ভয় লাগে।”
“আমি তো আছি।”
“এটাই সবচেয়ে বড়ো ভয়।”
রায়ান ভাই কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। কথাগুলো গিলে ফেলল। আর কতভাবে এই মেয়েটা তাকে অপমান করবে!

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ১৬