দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩২
আফরোজা আশা
গভীর রাতে কানে ফোন চেপে ধরে একাধারে কথা বলছেই রহমান। ছোট শ্যালিকা রুমানার সাথে সব কথাবার্তা শেষে ফোন রাখলো। চিন্তিত মন শান্ত হলো কিছুটা। দুহাত পেছনে রেখে আঁধারে মড়ানো আকাশের দিকে চেয়ে নিজের করা কাজের উপর নিজেই প্রশ্ন করলো। মেয়েকে দূরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করলো? পরক্ষনে নিজেই জবাব দিল ভুল করেনি। মেয়ের সুরক্ষা আর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর জন্য যে পথ বেছে নিয়েছে তাতে কোনো ভুল নেই।
শব্দ তুলে হাতে থাকা মুঠো ফোনটা বেজে উঠল। আকাশের দিক থেকে নজর সরিয়ে ভ্রুঁ গুটালো রহমান। এতো রাতে তো কেউ ফোন দেবার কথা না। রুমানার সাথে যেটুকু কথা বলার ছিল তা তখনি সম্পূর্ণ করেছে। ফোন সামনে এনে সেইভ করা নাম দেখে গুটানো ভ্রুঁ বিরক্তিতে আরো কুঁচকে গেল। ধরবে না, ধরবে না বলেও ধরল।
‘ দিনকাল ভালোই চলছে পাটোয়ারী সাহেব? ’
‘ খারাপ চলার মতো কিছু হয়নি। ’
রহমানের দাম্ভিক কথায় ঠোঁট বাঁকালো দিগন্ত। ঘুষি খাওয়ার ফলে হাসতে গিয়ে গালে ব্যাথা পেল কিন্তু তোয়াক্ক করল না।
‘ শুনলাম আপনার ছোট মেয়ে জ্বর বাঁধিয়েছে। ’
রহমান পূর্বের ন্যায় কঠিন গলায় বলল,
‘ শুনেছো যখন, তখন তাই। সিজনাল ফিভার। ’
‘ যদি বলি আমার প্রেমে পড়ে আপনার মেয়ের জ্বর এসেছে! ’
মুখের কাঠিন্যতা ছেড়ে শব্দ করে হাসলো রহমান। কণ্ঠে কৌতুকতা মিশিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ পাগলের সুখ মনে মনে। ’
দিগন্তও কম কিসে! রহমানকে ফিরতি জবাব দিল তখনি,
‘ আসলেই তাই! এই যেমন আপনি আপনার নিছক একটা ভাবনায় সুখ খুঁজে পাচ্ছেন। ’
রহমানের হাসি মুখে ঝামা পড়ল। গম্ভীর গলায় বলে উঠল,
‘ তোমার সাথে আমার মস্করা করার সম্পর্ক নয়। এতো রাতে ফোন দিয়েছো কেনো? ’
দিগন্ত আয়েসী ভঙ্গিতে বেডে হেলান দিয়ে বলল,
‘ মেয়ের চিন্তায় আপনার ঘুম আসছে না। তাই সঙ্গ দিতে ফোন দিলাম। আফটার অল; দিগন্ত তালুকদারের মন আপনার মতো ছোট না। ’
রাগে চোয়াল আঁট হলো রহমানের। কিছুটা শক্ত কণ্ঠে বলল,
‘ ধরলাম মেয়ের চিন্তায় ঘুমাইনি আমি কিন্তু তুমি রাত জেগে কি করছো? গুন্ডামি, মাতলামি আর অন্যের পিছে লাগা ছাড়া তো কাজ নেই। ’
চুলে হাত দিয়ে ব্যাকব্রাশ করতে করতে ঠোঁট জোড়া কিঞ্চিৎ প্রসারিত করল দিগন্ত।
‘ আহা! প্রশ্নটা করে লজ্জায় ফেলে দিলেন যে পাটোয়ারী সাহেব। শ্বশুড়ের সামনে কিভাবে বলি তার মেয়ে আমার স্বপ্নে এসে বড্ড পীড়া দেয়। রাতকে রাত সে ভয়ে ঘুম আসে না। যদিও আমি লজ্জাশীল না তবে ম্যানারস ভালো বলে কথাটা বলতে পারলাম না। ’
গাল ফুলিয়ে বড় শ্বাস ছাড়লো রহমান। এই ছেলের কথার মারপ্যাঁচে কিছুতেই পড়বে না। তাচ্ছিল্যতার সাথে বলল,
‘ নিজের লিমিটের মধ্যে থাকো। বলেছিলে, আমার মেয়ের থেকে দূরে থাকবে। ভুলে গেলে? এই তোমার কথার দৌঁড়? ’
দিগন্ত পাল্টা প্রশ্ন করলো,
‘ আমাকে কখনো স্বচক্ষে দেখেছিলেন আপনার মেয়ের আশেপাশে? ’
‘ না ’
‘ এক্স্যাক্টলি! এটাই আমার কথার দৌড়। ’
একটা জোয়ান ছেলের কথার কাছে, চুল পাঁক ধরা রহমানের কথা টক্কর খাচ্ছে, ভাবলেই রক্ত ছলকে উঠছে রহমানের। রাগী গলা হুংকার ছুড়ে বলল,
‘ আদব-কায়দাহীন ছেলে! বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না। রাখো ফোন। ’
কান থেকে ফোন নামিয়ে দুপাশে না ভঙ্গিতে মাথা নাড়ালো দিগন্ত। আফসোসের সুরে বলল,
‘ কী জ্বালা! দিগন্ত তালুকদারের সাথে কথায় না পেরে লোকটা চেতে গেছে। ’
কয়েকদিন রেস্টে থেকে বেলা এখন পুরোপুরি সুস্থ। আজ ওর রেজাল্ট বেড়িয়েছে। পাটোয়ারী বাড়ি আনন্দে মেতে আছে। গোলেন্ড প্লাস এসেছে বেলার। রেজাল্ট পাওয়ার পর থেকে খাওয়া-দাওয়া আর আদর-যত্নের কমতি নেই। বাবু সেজে সবার আদর-সোহাগ দেখছে বেলা। সাথে মাথায় বিরাট ফন্দি আটছে।
রহমান পাটোয়ারী হাত বোঝাই করে মিষ্টির প্যাকেট এনেছে। মেয়ের সাথে কথাবার্তা শেষ করে আবার ছুটল নিজের কাজের উদ্দেশ্যে। এতোক্ষন বেলা চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করছিল। যেই না রহমান চলে গেল ওমনি আমেনার কাছে জেদ ধরল তালুকদার বাড়ি যাবে। আমেনাও সাত-পাঁচ না ভেবে বৃষ্টির সাথে যাওয়ার পারমিশন দিয়ে দিল।
পারমিশন পেয়ে বেলা লাফাতে লাফাতে রুমে এলো। আলমিরা ঘেঁটে ঘেঁটে টকটকে লাল রাঙা একটা থ্রি-পিস বের করল। আয়নার সামনে গিয়ে গায়ের সাথে জড়িয়ে হেলেদুলে দেখলো নিজেকে কেমন লাগছে। ভালো লাগছে দেখে ঝটপট পড়ে ফেললো। অতঃপর আবারো আয়নার কাছে এসে একটু সাজলো। ঠোঁট রাঙালো হালকা লাল লিপস্টিকে। কোমড় ছুঁইছুঁই চুলগুলো ছেড়ে দিল। সামনের ছোট চুলগুলো দুদিক থেকে টেনে এনে একটা ছোট ক্লাচ দিয়ে আটকে দিল।
মন মতো তৈরি হয়ে বৃষ্টি সাথে চলল পাটোয়ারী বাড়িতে। বের হওয়ার সময় দুজনের হাতে মিষ্টি ধরিয়ে দিল আমেনা।
ঘণ্টা খানেক হয়েছে তালুকদার বাড়ি এসেছে বেলা। কিন্তু মনটা ভার হয়ে আছে। যার জন্য এতো আয়োজন করে এলো, সে বাড়িতে নেই। সবাই ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। কথা বলার এক ফাঁকে মাইশা খেয়াল করলো বেলার মনযোগ নেই।
‘ বেলা, কি হয়েছে? মন খারাপ? ’
মাইশার কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে হলো না বেলার। সবাই উপস্থিত থাকলেও দিশা রুমে। ভাতঘুম দিয়েছে। তাই উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ তোমরা কথা বলো। আমি বরং দিশা আপুর ঘুম ভাঙিয়ে আসি।’
বাণী ওকে আটকাতে চাইলে মিতালী থামিয়ে দিল। বেলাকে যেতে বলল। বেলাও আর দাঁড়ালো না। সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে হাঁটা ধরল। মাইশা কিছুটা অবাক হলো। ও প্রশ্ন করলো অথচ বেলা শুনেও উত্তর দিল না। তবে সবার কথাবার্তার মাঝে ভুলে বসল এই ছোট ব্যাপারটা।
উপরে উঠে দিশার রুমের সামনে এসে থামলো বেলা। হাটখোলা গেট দিয়ে দেখলো ভেতরের দিকে। হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে দিশা। তা দেখে আবার হাঁটা ধরল বেলা। দোতলার সবচেয়ে শেষের রুমে এসে থামলো আবারো। ভিড়ানো দরজাটা হাত দিয়ে ঠেলা দিল। খুলে গেল দরজাটা। গটগট পায়ে রুমের ভেতরে এলো বেলা। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরোটা দেখলো। অতঃপর মুখ ফুটে দুঃখী গলায় বলল,
‘ রুম আছে কিন্তু রুমের মানুষটা নাই। কত তালবাহানা করে এলাম। কাজের কাজ কিছুই হলো না। ’
পুরো রুম বেলকনি ঘুরঘুর করল বেলা। পরিপাটি ঘর দেখে মুখ ভেটকালো। দিগন্তের এ্যাশ ট্রের কাছে এসে ঠোঁট কামড়ে ধরে তাকিয়ে থাকলো কিয়ৎক্ষন। অতঃপর হাত উঠিয়ে আলতো ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিল সেটা। ট্রেতে জমা থাকা সিগারেটের ছাইগুলো ফ্লোরের কিছু জায়গায় ছড়িয়ে গেল। তা দেখে হাসলো বেলা। পা ঘুরিয়ে এলো কালো কাউচটার কাছে। একটা সাদা শার্ট রাখা সেখানে। হাতে তুলে নিল সেটা।
ছোট ছোট পা ফেলে দিগন্তের বেডসাইড টেবিল থেকে নীল মার্কার টা নিল। মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে ভাজ করে রাখা শার্টটা খুললো পুরোপুরি। মার্কার হাতে ইচ্ছে মতো আঁকিবুঁকি করলো তাতে। শেষ করে মুখের সামনে তুলে ধরলো। ঠোঁট জুরে খেলে গেল বিস্তর হাসি। অতঃপর শার্টের এক জায়গায় টুপ করে ঠোঁটের ছাপ বসিয়ে দিল। হালকা লিপস্টিক দেওয়ায় কারণে সাদা শার্টে সেটা স্পষ্ট বুঝা গেল না। তা দেখে হাস্যরত মুখ কালো হলো। কান্না এলো বেলার। শার্টটা সেখানেই ফেলে রেখে ধুপধাপ করে দৌড় লাগালো দিশার ঘরের দিকে। এসে দিশাকে ধাক্কাধাক্কি করে ডাকলো। কিন্তু দিশার ঘুমের কাছে বেলার সে ডাক হার মানলো। দিশাকে ছেড়ে দিয়ে ওর ড্রেসিং টেবিলের কাছে এসে হাতড়ে সব জায়গা দেখলো বেলা। অবশেষে নিচের ড্রয়ারে এসে পেল একটা লাল লিপস্টিক।
গাঢ় করে ঠোঁট রাঙিয়ে পুনরায় ছুটলো দিগন্তের রুমের দিকে। রুমে এসে ফেলে রাখা শার্ট হাতে নিয়ে পূর্বের জায়গায় ঠোঁট ছোঁয়ালো। এবার ঠিক আছে। দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে দেখে মন খুলে হাসলো। যেভাবে গুছিয়ে রাখা ছিল সেভাবেই গুছিয়ে কাউচের উপর রাখলো। উল্টো ঘুরে রুম থেকে চলে যাওয়ার জন্য কয়েক পা আগাতেই খট করে শব্দ ভেসে এলো। চলন্ত পা’দ্বয় থেমে গেল মূহুর্তেই। শব্দের উৎসের দিকে চোখ ঘুরাতেই মাথায় বাজ পড়লো বেলার। চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে উঠলো,
‘ আপনি কখন এলেন? ’
টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিলো দিগন্ত। বেলার কণ্ঠস্বর কানে লাগতেই চোখ পড়লো ওর দিকে। মিনিট খানেক সময় নিয়ে দেখলো ওকে। অতঃপর বলল,
‘ আমার রুমে কি করছিস? ’
বেলা চোখ ছোট ছোট করে দিগন্তের দিকে এক আঙুল তাক করে বলল,
‘ আগে না আমি প্রশ্ন করলাম। উত্তর দেন। ’
নিজেদের মধ্যকার দূরত্বটুকু মিটিয়ে বেলার সামনাসামনি এলো দিগন্ত। ভ্রুঁ নাচিয়ে বলল,
‘ বেশি সাহস দেখাচ্ছিস না? ’
বেলা দু’ঠোঁট নাড়িয়ে উচ্চারণ করল, ‘ না তো। আমি এই গেলাম আর আসলাম এর মাঝে আপনি হুস করে উড়ে চলে এলেন কেনো? ’
দিগন্তের নজর আটকালো বেলার নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলা গাঢ় লালচে অধরের দিকে। সেখান থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ধমকের স্বরে বলল,
‘ ঠোঁটে কি দিয়েছিস? বিচ্ছিরি লাগছে। ’
দিগন্তের এহেন মন্তব্য ভেতরে ভেতরে দাগ কাটল বেলার। বাইরে তার ছাপ পড়ল না। সোজা বলল,
‘ আপনার জন্য দেই নি। যার জন্য দিয়েছি তার ভালো লাগলেই চলবে। দেখছেন না সেজেছিও। ’
বলে কিঞ্চিৎ ভাব নিয়ে খোলা চুলগুলো হাত দিয়ে নাড়লো বেলা।
শান্ত চোখ জ্বলে উঠল দিগন্তের। হাতের ভেজা টাওয়ালটা সজোরে মেঝেতে ফেলে দিল। তড়িৎ গতিতে বেলার চোয়াল চেপে ধরে বুড়ো আঙুলের সাহায্যে লিপস্টকটা মুছে দিতে চাইলো। কিছুটা ওর আঙুলে উঠল। বাকিটুকু বেলার ঠোঁটের চারপাশে ছড়িয়ে গেল। হিসহিসিয়ে বেলাকে বলল,
‘ মুখে খুব খই ফুটেছে। অসভ্য মেয়ে! আর কখনো এসব দেখলে আগুন লাগিয়ে দিবো। ’
বেলার কোনো ভাবাবেগ নেই। দিগন্তের রাগান্বিত মুখপানে চেয়ে ছিল একদৃষ্টে। নাক শিরশির করল। নেত্রদ্বয় ছাপিয়ে গেল পানিতে। টলমলে চোখে ধরা গলায় বলল,
‘ রেজাল্ট পাওয়ার পর থেকে আম্মুর ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিলাম। এক মুহূর্তও কাছ ছাড়া করি নি। ’
কান্নার বেগ বাড়তে চাইলো বেলার। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আটকা আটকা গলায় বলল,
‘ এ..এতোক্ষন এতো কথা বললেন কিন্তু যেটা ব..বলার ছিল সেটা বলেন নি। ’
হাতের জোর ঢিলা করলো দিগন্ত। শান্ত গলায় বলল,
‘ বেলা; কাঁদবি না। ’
দিগন্তের বলতে দেরী হলো না, এদিকে বেলার চোখ গড়িয়ে টুপটুপ করে অশ্রুবিন্দু ঝরে পড়তে লাগলো। বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের ন্যায় ঝলকে উঠল দিগন্তের অন্তঃস্থল। দিশেহারা হলো সে। বেলার দুগাল আকড়ে ধরে আদুরে গলায় বলল,
‘ চুপ! কাঁদবি না। তোর কান্না আমার জন্য ক্ষতিকর। ’
এবার কান্নার সাথে হেঁচকিও উঠল বেলার। দিগন্ত ফাঁকা ঢোক গিললো। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে মোলায়েম স্বরে বলল,
‘ হুসস! কান্না থামা, সোনা। আমি এলোমেলো হয়ে যাই। ’
বেলা হেঁচকি আর কান্নার মাঝে থেমে থেমে বলল,
‘ আ..আপনি খ..খারাপ। ’
সায় জানিয়ে ঠান্ডা গলায় বলল দিগন্ত,
‘ হুম। খুব খারাপ। ’
‘ বলেননি ক..কিছু। ’
‘ সময় হলে বলব। ’
‘ ব..বিচ্ছিরি বলেছেন। আ..আমার লিপস্টিক নষ্ট করেছেন। ’
বেলার কান্নারত মুখাবয়ব আর কণ্ঠস্বর বেকাবু করে ফেললো দিগন্তকে। ভেতরের অস্থিরতা চূড়ান্ত পর্যায়ে। সাথে বেলার অভিযোগগুলো ওর ভীত নাড়িয়ে দিতে সক্ষম। সহসা বেলা মুখে সামনে নিজের দাবাং হাতটা আলগোছে মেলে ধরলো। মুখ নামিয়ে বেলার ঠোঁট বরাবর নিজের হাতে উপরেই চুমু এঁকে দিল। অতঃপর বেলার কপালে কপাল ঠেকিয়ে গভীর স্বরে বলল,
‘ ভুল করেছি,সোনা। চুপ কর প্লিজ। আমার সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। তোর কান্নারত এই রূপ আমার দুর্বলতা। ’
দিগন্তের কাজে আর কথায় নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে বেলার। কিন্তু চোখের পানি থামাতে পারছে না। নিজ থেকেই গড়িয়ে চলেছে। সাথে একের পর এক হেঁচকি তো আছেই।
দিগন্ত দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল বেলাকে। পাগল করে দিয়েছে ওকে। হাত উঠিয়ে পেছনের দিকের চুল খামচে ধরে রাগী গলায় বলল,
দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩১
‘ উফফ! কান্না থামাচ্ছিস না কেনো? আর আসবি না আমার আশেপাশে। বেয়াদব একটা। কেঁদেকেটে আমাকে; এই দিগন্ত তালুকদারকে সিডিউস করছিস। অসভ্য মেয়ে মানুষ। ’
বলে ঝটপট পা চালিয়ে রুম ছেড়ে চলে গেল বাইরে।
বেলা আগের জায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। অবশেষ আবারো কাউচের কাছে গিয়ে দিগন্তের সাদা শার্টটা হাতে নিল। ঠোঁটের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা লিপস্টিকগুলো সেই শার্টেই মুছলো। অতঃপর সেটা এনে দিগন্তের বেডের ওপর এলোমেলো ভাবে রেখে চোখের পানি মুছে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।