প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১৮ (২)

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১৮ (২)
সাইয়্যারা খান

টেবিলের সামনে এসে পৌষ দাঁড়াতেই তৌসিফ নিজে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পৌষ’কে চেয়ার টেনে বসিয়ে নিজেও বসলো ঠিক পাশের চেয়ারে। পৌষ মনে মনে একটু বিরক্তই বটে। এত বড় বারো চেয়ারের একটা ডাইনিং টেবিলে এভাবে গায়ের সাথে বসতে হবে কেন? এমনিতেই খুব কম পৌষ ডাইনিং এ বসে খায়। নিজের খাবার নিয়ে সোফায় অথবা প্রায় রান্না ঘরে বসেই খেয়ে নিতো। হেমন্ত সামনে থাকলেই টেবিলে বসতে হতো নাহয় একা বসে মানুষের কালো মুখ দেখতে পৌষর খুবই বিরক্ত ধরতো। প্লেটে ব্রেড দিয়ে তৌসিফ নিজেই ডিম পোর্চ দিলো। পৌষ অসন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে রয়। পাউরুটি ততটা পছন্দের না ওর। সকালে চা, পরোটা না হলে হয়? তৌসিফ কমলা রঙের শরবত এক গ্লাস ভর্তি করে দিলো পৌষকে। চুপচাপ বসে থাকতে দেখে তৌসিফ ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

“খাচ্ছো না যে?”
“পাউরুটি ভালো লাগছে না।”
” হেলদি ব্রেকফাস্ট এটা হানি। কাম আ’উইল হেল্প ইউ।”
বলেই তৌসিফ ব্রেড ছিঁড়ে। পৌষ চেপে রাখা মুখটা অবশেষে খুলেই ফেললো।
“হেলদি? আপনি জানেন এটা কিভাবে বানায়? নাংগু-পাংগু পোলাপান দিয়ে আটা পাড়িয়ে পাড়িয়ে বানায় এটা। নাম শুনে বুঝেন না? পাউরুটি মানে পা দিয়ে বানানো রুটি। এবার বুঝে নিন পা কতটা পরিষ্কার করে বানায় তারা।”
তৌসিফের হঠাৎ মনে হলো ওর পেট মুচড়ে বমি চলে আসবে। তার আবার একটু খুঁতখুঁত স্বভাব আছে। সবকিছুতেই খুঁত খুঁত কাজ করে। এই যে সে জানে এটা পা দিয়ে বানায় নি তবুও মনে হচ্ছে নাহ, এটা পা দিয়েই বানিয়েছে। খেতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। একটু জুস মুখে দিয়ে পৌষকে ইশারায় জুস খেতে বলতেই পৌষ নাকোনো করে। তৌসিফ এবার ওর দিকে ফিরলো। সরল চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কি খাবে তাহলে?”
ক্ষুধা অবশ্য লেগেছে। লাজলজ্জা ভুলে পৌষ উত্তরে বললো,
“পরটা হলেই হয়।”
তৌসিফ ওখানে বসেই বুয়া বলে ডাক দিলো। বুয়া আসতেই তৌসিফ বললো,
“পরটা বানিয়ে আনো। তারাতাড়ি।”
পৌষ নিচু স্বরে বললো,
“আমিই তো বানাতে পারি।”

তৌসিফ সামান্য হাসলো। হাত বাড়িয়ে হাতের উল্টো পিঠ ছুঁয়ে দিলো পৌষর বাম গাল। ঝঙ্কার তুললো বুঝি পৌষর দেহ? পেটে সামান্য গুড়গুড় করলো। এভাবে কেউ কখনো ছুঁয়ে দেখে নি ওকে। পৌষ হঠাৎ মিহিয়ে গেলো একদম। তৌসিফ কপাল কুঁচকালো। পৌষর মুখটা হঠাৎই ছোট হয়ে এসেছে। হাতটা সরিয়ে নিলো তৌসিফ। পৌষর চেয়ার টেনে একদম নিজের মুখোমুখি করলো। খুঁটিয়ে কখনো দেখা হয় নি মেয়েটাকে তার। এই কথা বললেই এখন খোঁটা দিবে পৌষ। হঠাৎ চুপসে কেন গেলো ও তৌসিফ বোধহয় বুঝতে পারলো। কারণ বুঝে কিছুটা হাসলোও মনে মনে। বাঘের গুহায় রাত কাটিয়ে বাঘিনী ভয় পাচ্ছে সকালে। বিষয়টা হাস্যকৌতুক। তৌসিফের ভেতরে একটু মায়া জাগ্রত হলো। পৌষ’র মাথায় হাত দিয়ে বললো,
“খেয়ে রেস্ট নিবে। আমি বের হব।”

পৌষ কথা বললো না। গুমোট এক ভাব সৃষ্টি হলো যেন। তৌসিফ অবাক হলো নিজের উপর। ও খুব করে চাইছে সামনের মানুষটা কথা বলুক। এতগুলো বছর একাই নাস্তা করা হয়েছে তার। এমন হুট করে এক রাতে অভ্যাসটা ধোঁকাবাজি করবে কে বুঝেছিলো। বুয়া পরোটা রেখে যেতেই তৌসিফ চেয়ার ঠিক করলো। পৌষ চুপচাপ মুখে তুলছে খাবার। তৌসিফ খেয়াল করলো ওর ভেতরের পরিবর্তন। কিছু তো একটা হলো তার। আচমকা পৌষর দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেললো ও,

“তোমার কি মান্থলি কোন সমস্যা হচ্ছে পৌষরাত?”
পৌষর খাওয়া থামলো এক সেকেন্ডের জন্য অতঃপর মাথা নেড়ে না করে খেতে মনোযোগ দিলো। তৌসিফ খেয়ে উঠার কিছুক্ষণ পর পৌষও উঠে। তৌসিফ পৌষের সামনে মিনুকে ডেকে বললো,
” পৌষরাত, ওকে তো চিনলেই। কিছু প্রয়োজন হলে ওকে জানাবে। বুয়া আছে, যা মন চায় খাবে।”
মিনুকে যেতে বলেই তৌসিফ পৌষর সামনে এলো। পৌষ চোখ তুলে একবার তাকিয়েই তা নামালো। তৌসিফ আস্তে করে শুধু বললো,

“এভাবে ঝড়ে যেও না হানি। আমি তোমাকে খারাপ নিয়তে স্পর্শ করিনি। তেমন নিয়ত থাকলে গতরাতে তো ছেড়ে দিতাম না। আপনি তোমার জন্য হালাল পৌষরাত।এটা খুব স্বাভাবিক একটা টাচ ছিলো। ভয়ের কিছু নেই এখানে।”
আটকে রাখা ক্ষুদ্র শ্বাস ফেললো পৌষ। তৌসিফ ওর নাকে ছোট্ট একটা টোকা দিয়ে বললো,

“আমার সংসারে পা ফেলার সাথে সাথেই এটা তোমার নামে লিখিত হয়েছে। আমি থেকে নিয়ে প্রতিটি ইটে তোমার অধিকার পৌষরাত। আজ থেকে বরং এই মূহুর্তে থেকে অতীত ভুলে যাও। আমার আম্মু নেই তোমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার মতো। আমি বললাম, তুমি বুঝে নাও এই সংসার। আমার সংসার ছন্নছাড়া আজ বহু বছর। তুমি যেহেতু এসেছে সেহেতু দায়িত্ব হলেও তোমার কাঁধে দিলাম। একটু সামলে নাও। এখানে কেউ তোমাকে দেখিয়ে দিতে আসবে না। তেমন কেউ নেই। তবে হ্যাঁ, আমার তিনটা বোন আছে। বড় আপা আমেরিকা আছে। তিনি আসবেন। তার সাথে একটু ভালোমতো থাকবে। সে আমার খুব প্রিয়। বাকি দুই বোন দেশে থাকে। তিয়াশাটা একটু পাঁজি। ছোট তো সবার। আর রইলো আমার দুই ভাই। মীরা ভাবী সবসময় আসবে না। চিন্তা করো না। রাতে একজন দেখা করতে আসবে তোমার সাথে। ভয় পেও না। আমি চলে আসব। এটা তোমার বাসা, আমি আবারও বলে দিলাম। ঠিক আছে?”

এতগুলো কথা পৌষ শুধু শুনলো। তৌসিফের বোনের কথা শুনতেই গা জ্বলে উঠলো যেন। আপাতত ঝগড়া করার নিয়ত নেই তবুও মুখ ফুটে বললো,
“আপনার বোন নিয়ে যথেষ্ট ধারণা আমার হয়েছে।”
তৌসিফের মুখটা সামান্য নিভলো। শুধালো,
“সবসময় মনে রাখবে কোন কিছুই এভাবে হয় না, হুটহাট। ঘটনা থাকে। অতীত থাকে। রহস্য থাকে।”
“আমাকে ওভাবে দেখার পেছনে কুরুচি বাদে কিছু ছিলো বলে মনে হচ্ছে না।”
“একদিনে এত উত্তর পাবে না পৌষরাত। অপেক্ষা করো। আসছি এখন। দেখা হবে, শিঘ্রই ফিরব।”
রুম থেকে মানিব্যাগ নিয়ে তৌসিফ বেরিয়ে গেলো। পেছনে রয়ে গেলো পৌষ যে কিনা ঘ্রাণ টেনে নিলো নিজের মাঝে। এই লোক কি লাগিয়ে গেলো? এত ঘ্রাণ?

তৌসিফ একদিক দিয়ে যেতেই পৌষ দ্রুত পা ফেলে রুমে গেলো। ভারী দরজাটা টেনে লাগিয়ে সেখানেই বসে পড়লো। দুই হাতে মুখ চেপে ধরে বসেই রইলো। কতক্ষণ বসে রইলো পৌষ জানে না। শরীরটা কাঁপলো কিছুক্ষণ। ঠিক যেভাবে কান্নার দাপটে কাঁপে ওভাবে অথচ পৌষ কাঁদছে না। বহু বছর কাঁদা হয় না। পৌষ কাঁদতে পারে না। এটা ওর ব্যর্থতা। নিজেকে গড়তে গড়তে কান্না নামক অনুভূতি সে বিলীন করে ফেলেছে। আজ পৌষ কাঁদতে চাইলো। বুক ফাটা আর্তনাদ করতে চাইলো। মানুষ বলে, কাঁদলে নাকি মন হালকা হয়৷ পৌষ মন হালকা করতে চায়। খুব করে চায়। ভেতরটা তার খুব ভারী হয়েছে। একটু হালকা হওয়া খুব দরকার অথচ হায় আফসোস, কান্না এলো না। বেইমানি করলো চোখের পানি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পৌষ বসে রইলো। সেই ছোট্ট কাল থেকে পৌষ একা একা বড় হলো। সারাটা জীবন শুনে ছিলো সে আগাছা।

তার ঘর নেই, মা নেই, বাবা নেই। এক উটকো ঝামেলা সে চাচাদের কাছে। হেমন্ত না থাকলে জীবনটা হয়তো আরেকটু কঠিন হতো অথবা ঐ বাসা থেকে বের করে দিতো। কতবার কথা উঠলো। সবাই বোধহয় চাইতো পৌষ হোস্টেলে থাক। রোজ রোজ মেঝ চাচি আর বড় চাচির ঝামেলা এরিয়ে যেতে কতবার সিদ্ধান্ত হলো। সিদ্ধান্ত এসেই আটকাতো ‘হোস্টেল’ নামক শব্দে। সেই ছোট্ট কাল থেকে পৌষ শুনে আসছে। বড় হতে হতে তা বাড়লো। কত মনে হতো হোস্টেলটাই বোধহয় ভালো কিন্তু বড় হতে হতে ভাই-বোন গুলোর মায়ায় এমন ভাবে জড়ালো যে হোস্টেল শুনলেই আতঙ্ক লাগতো। কত লড়াই টিকে থাকার জন্য। এক এতিমকে আজ কি না তৌসিফ তালুকদার বললো এই বিশাল বড় অট্টালিকা পৌষর। এই সংসার নাকি পৌষর। গোটা মানুষটাই নাকি পৌষর।

এক জীবনে পাওয়ার মতো কিই বা আছে তার? উপরওয়ালা সব একবারে দিয়ে দিলো। এতসব পৌষ সামলাতে পারবে না। কখনোই না। তৌসিফ তালুকদার মানুষটা কেমন তাও বুঝে আসছে না। এই বাড়ী নিয়ে সারাটা জীবন ঘটনাই শুনেছে পৌষ। এখানেই যে তার কপাল খোদাই করা তা কে জানতো? পৌষ এমন কিছু চায় নি। শুধু চেয়েছে ছোট্ট একটা বাড়ী, যেখানে সবগুলো ভাই-বোন মিলে একসাথে থাকবে। এমন একটা জীবন যেখানে হেমন্ত ওর মাথায় হাত রাখলে মেঝ চাচি পৌষকে নোংরা বলবে না। এমন একটা বাড়ী যেই বাড়ীতে চৈত্র আর জৈষ্ঠ্যকে মুখে তুলে খাওয়ালেই পৌষ খারাপ মেয়ে হয়ে যাবে না৷ এমন আর হবে না। এই বিশাল সংসার এক হাতে দিয়ে তৌসিফ তালুকদার সরাসরি বলেছে, অতীত ভুলে যেতে।

যেই অতীতে হেমন্ত আছে, যেই অতীতে পৌষর নাড়ি পুঁতে রাখা সেই অতীত কিভাবে ভুলবে পৌষ? তার যে নিজ হাতে পালিত দুটো ছোট বোন আছে, একটা পিহা আছে, এক জোড়া ভাই আছে তাদের ভুলবে কিভাবে পৌষ? অতীত ভুলে যাওয়া কি এতই সহজ? পৌষর কাছে তো খুব কঠিন লাগছে।
মুখ থেকে হাত সরিয়ে শব্দ করে হেসে ফেললো পৌষ। ও কাঁদতে না পারুক হাসতেতো পারে। হেসেই নাহয় মনটা হালকা করুক। হাসির দমকে পৌষর বুকে ব্যথা উঠলো যেন তবুও অপ্রকৃতস্থের ন্যায় ও হেসেই গেলো। সর্বহারা হয়ে সর্ব প্রাপ্তদের এভাবেই হাসতে হয় অতঃপর গলা ছেড়ে গান গাইতে হয়। এতেই মন হালকা হয়।

“ছায়াবাজী পুতুল রূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি
পুতুলের কী দোষ?
ছায়াবাজী পুতুল রূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি
পুতুলের কী দোষ?”

লাইন দুটো গাইতে গাইতে টলমল পায়ে এদিক ওদিক হাঁটলো পৌষ। এই ঘরটায় বারান্দা আছে একটা। পৌষ এগিয়ে এলো সেখানে। বারান্দা দিয়ে বরাবর পুকুর ঘাট। তার সামনে মূল সড়ক। এতদিন সড়ক থেকে বাড়ীটা দেখতো পৌষ। আজ বাড়ী থেকে সড়ক দেখছে। পুরো এলাকার বিলাসবহুল এক বাড়ী। এই বাড়ীর এত এত পুরুষ চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যান বাড়ীটা নজর কাড়া। সাদা ধবধবের মাঝে বর্ডার গুলো হালকা পুদিনা রঙের। পৌষ সেই রঙের নাম জানে না। ঘাটটা তার কাছে চমৎকার লাগে। পৌষর নজর ঘাট পেরিয়ে সড়কের ওখানে তুহিনের মিলটার দিকে যেতেই চমকে গেলো ও। হেমন্ত দাঁড়িয়ে সেখানে। তার দৃষ্টি পৌষর দিকে। দূরত্বটা নগন্য। পৌষ দেখলো ওর হেমু ভাই দাঁড়িয়ে। রাগটা কোথাও বুঝি ছুটে পালালো। পৌষ কি দৌড়ে যাবে? সে ছুটে গেলে কি খারাপ হবে? সিদ্ধান্ত বদলে নিলো পৌষ। পৌষ পারুল না। দৌড়ে গিয়ে হেমন্তকে ধরলে এই ভরা বাজারে আরেকদফা কাহিনি উঠবে। মিলটা তো বাজারের মাঝেই। হেমন্ত যেন চোখ পড়লো পৌষর। পৌষ আরেকটু এগিয়ে আসে। হেমন্ত কেন বিয়েটা আটকালো না? সে তো জানে তার বাচ্চাটা নির্দোষ। পৌষ দ্রুত পা ফেলে ভেতরে চলে এলো। ওর বুকের ভেতর অস্থির লাগছে। পানি পান করা দরকার।

খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায় লিখা এক শিরোনাম “নদীর ওপারে আব্বা”। তৌসিফ কাগজটা দেখেই সামান্য হাসলো। চেয়ারে গা এলিয়ে ইমুকে বললো,
” আব্বা বাহিনীর হাতে তুলে দেই তোমাকে?”
“বস।”
ইমু একটু ভয় পেলো বোধহয়। তৌসিফের এই অফিসের পিএ সে। সামান্য ভীতু অথচ দূর্দান্ত কাজ করে। তৌসিফ হাতের ফাইলটা সাইন করতে করতে বললো,
“ধরি মাছ না ছুঁই পানি, এই প্রবাদ শুনেছো ইমু?”
“জি, বস। কোনো কাজ করা কিন্তু একেবারেই ঝামেলা বা সমস্যায় না জড়িয়ে, সাবধানে, খুব কৌশলে করা।অর্থাৎ মূল জিনিস পাওয়া, কিন্তু পার্শ্ব অসুবিধা বা ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়া।”

“দ্যটস মাই বয়। তোমার এই জ্ঞান বারবার আমাকে মুগ্ধ করে ইমু। শোনো, সবাইকে মিষ্টি খায়িয়েছো?”
” জি বস।”
“তুমি খেয়েছো?”
“জি, বস।”
“তোমাকেও দেখেশুনে এবার বিয়ে দিয়ে দেই। বস বিবাহিত তার পিএ অবিবাহিত। মানায় না।”
ইমু মাথাটা নিচু করেই রইলো। তৌসিফ আড়মোড়া ভেঙে বললো,
“পল্লব যে সাফিনকে মা’রলো। তোমার কি মনে হয়, পুলিশ কতদিন আটকে রাখবে?”
ইমু খবরের কাগজের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলো,

“আজ সপ্তাহ খানিকের উপরে তো জেলেই আছে বস। শুধু খু’নের জন্য না, সাথে চাঁদাবাজি সহ বাকি সব কাজের খবরও এখন উঠে আসছে। সাফিন এখানে বড়শি ছিলো একটা, যেটা ফেলে পল্লবের পাপের নদী থেকে তার ছোট বড় পাপ গুলো উঠে আসছে। কেস লড়ছে, শেখ জুনায়েদ। ওর সাথে সাত আটজন আটকে ছিলো। অতিরিক্ত চারজন ছাড়া পাবে শিঘ্রই। ওরা উপস্থিত থাকলেও সাফিনের গায়ে হাত দেয় নি।”
“চাঞ্চল্যকর খবরটা টিভিতে প্রচার হলো না। এতদিনে খবরের কাগজে এলো মাত্র।”
“টাকা দিয়ে আটকে রেখেছে বস।”
“কতদিন?”

“যতদিন টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করা যাবে। আপনার সাথে পল্লবের বাপ-চাচার যোগাযোগ নেই বস?”
তৌসিফ কণ্ঠস্বর নামিয়ে বললো,
“যোগাযোগ রাখা উচিত হবে ইমু? তোমার বস ফেঁসে যাবে না?”
বলেই চোখে হাসে তৌসিফ। এটাই তার হাসির ধরণ। চোখ দুটো ছোট করে সামান্য ঠোঁট এলিয়ে হাসা। ইমু একটু বেকায়দায় পড়ে তবে নিজেকে সামলে বলে,
“ক্ষমতায় ওনারা তাই বলছিলাম বস।”
“ক্ষমতা খুব খারাপ জিনিস ইমু৷ ক্ষমতার একটা গরম আছে। হাত পুড়ে যাওয়ার মতো গরম। সেই গরম ধরে রেখে কাজ করে গেলে তুমি নেতা নাহয় তুমি দূর্নীতিবাজ।”

ইমু সায় জানালো তার বসকে। এদিকে তৌসিফ সাইন করা ফাইল এগিয়ে দিলো। নিজের জানা উত্তর গুলো ইমুর মুখে শুনলো ও। এর অন্যতম কারণ এটা বিশ্লেষণ করা যে সাধারণ মানুষ বিষয়টা কিভাবে দেখছে অথবা ইমুর মতো জটিল চিন্তা ছাড়া বুদ্ধিমানরাই বা কিভাবে দেখছে। তৌসিফ মনে মনে হাসলো। টিভি চ্যানেল কতদিন বন্ধ থাকবে আর? খবরে ছাপা হয়েছে, এলাকা গরম হয়েছে। এবার তো ছুটে আসবেই জয়নাল। উমায়ের শিকদারও নিশ্চিত বসে থাকবে না। তৌসিফ গুটির চাল দিয়েছে দুশমনের সামনে। আড়ালে শুধু সে খেলেছে একটা চাল। সেই চাল থেকে বাঁচার রাস্তাও নিজেই বলেছে। ভাবতে ভাবতে ফোনটা বেজে উঠলো ওর। তৌসিফের হঠাৎ মনে পরলো গতকাল তুহিন বলেছিলো পলক দেখা করতে চায় পৌষর সাথে। আজ দেখা করার কথা। তৌসিফ সামনে থাকাকালীনই আসতে বলেছে ওদের। ফোনটা ততক্ষণে কেটে আবারও বাজছে। তৌসিফ এবার রিসিভ করে। সালাম জানাতেই ওপাশ থেকে কিছুটা চিন্তিত কণ্ঠে শোনা যায়,

“তৌসিফ, পল্লবের কেসটার সম্পর্কে সংবাদ ছাপা হয়েছে। শেখ জুনায়েদ এখন লড়তে চাইছে না। তুমি কি একবার কথা বলে দেখবে? ও তো তোমাদের দলের হয়ে কাজ করতো আগে।”
“দল বলে তো সম্পর্ক নষ্ট করলেন চেয়ারম্যান সাহেব। জুনায়েদ এখন দল করে না।”
” তাহলে তুমি একটু কথা বলবে। আমার ছেলেটা… আমার ছেলেটা জেলে আজ নয়দিন তৌসিফ। তুমি একটু দেখো। ও গরম সহ্য করতে পারে না।”
“গোডাউনে গরমই থাকে। চিন্তার কিছু নেই। আমি জুনায়েদের সাথে কথা বলব।”
ফোন কেটে তৌসিফ উঠে দাঁড়ালো। ইমু নিজ থেকেই বললো,
“এডভোকেট জুনায়েদকে আসতে বলব স্যার?”
তৌসিফ চিরচেনা ভাবে হাসলো উত্তরে।

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১৮

বারান্দায় তখন পৌষ সেই ঘাটপাড় দেখছে। দুপুরে খাওয়া হয় নি। খেতে মন চায় নি। মিনু নামের মেয়েটা কয়েকবার বলেছে। অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে দেখেছে পৌষকে। পৌষ বিরক্তই হয়েছে। এসব ভালো লাগে না। সারাদিন আগেপিছে কেন ঘুরবে কেন? এতসব একবারে পেলে পৌষর বদহজম হবে। হঠাৎ তালুকদার বাড়ীর ঘাটের পাশের রাস্তা দিয়ে লাল রঙের গাড়ি ঢুকলো। সেই গাড়ি, লাল রঙের গাড়ি। গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে এলো বাঁশ রঙের শার্ট পরিহিত ক্লিন সেভ করা ঝাকড়া চুলের এক পুরুষ। পৌষর দম আটকে গেলো। বড় বড় পা ফেলো এগিয়ে আসছে সে। যাকে সবাই দেখে এক পলকেই বলতো নায়ক মান্না। সেই নায়কের মতোই এগিয়ে আসছে তালুকদার বাড়ীর ভেতরে। পৌষর বুকে চাপ অনুভূতি হলো। তার চোখের সামনে স্বয়ং সম্রাট চেয়ারম্যান।

প্রেমসুধা সিজন ২ পর্ব ১৯