তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ২২

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ২২
মুন্নি আক্তার প্রিয়া

স্নিগ্ধার সাথে নাইওরে ঐ বাড়িতে গিয়েছে জুঁই, মাহফুজা, আরিফা, কল্পনা, ইতি, সূর্য এবং সিয়াম। অনু যায়নি। স্নিগ্ধর এত বাড়াবাড়ি রকমের দুষ্টুমি ওর ভালো লাগে না। তাই অসুস্থতার অজুহাতে বাড়িতে রয়ে গেছে। এবং বাড়িতে রয়ে যাওয়াটাই যেন ওর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরচেয়ে হাজারগুণ ভালো ছিল ঐ বাড়িতে চলে যাওয়া।

রায়ান ভাইয়ের কলিগরা এখনো এই বাড়িতেই আছে। তারা বেশ ভালো রকমের একটা ছুটি নিয়েই এসেছেন। বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার পাশাপাশি তারা কিছুদিন বেড়িয়ে, গ্রাম ঘুরে দেখবেন। এটাকেই একটা মোক্ষম সুযোগ হিসেবে ধরে নিয়েছে রায়ান ভাই। সে দেখেছে, তার সঙ্গে হিয়াকে মিশতে দেখে অনু কীরকম ভেতরে ভেতরে জ্বলেছে! এটাই তো চাইছে এখন রায়ান। অনু তাকে কম জ্বা’লা’য়’নি, কম পো’ড়া’য়’নি। এখন যখন তারও সময় এসেছে তখন কেনই বা হাত ছাড়া করবে সে সেই সময়? অনুও একটু দেখুক, প্রিয় মানুষকে অন্য কারো সাথে ক্লোজ হতে দেখলে কী রকম লাগে!
সন্ধ্যার নাস্তা রায়ান ওর কলিগদের নিয়ে নিজের রুমেই করছিল। তখন সে হিয়ার উদ্দেশে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“একটা নাটক করতে পারবে?”
হিয়া তখন চায়ের কাপে মাত্র চুমুক দিচ্ছিল। বিষম খাওয়ার উপক্রম তার। কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“তুমি নাটক, সিনেমা শুরু করলে কবে থেকে? ডাইরেক্টর নাকি পরিচালক তুমি?”
“এসব কিছু না। রিয়েল ড্রামা করতে হবে।”
হিয়া চায়ের কাপটি ট্রে-এর ওপর রেখে বলল,
“কী বলছ কিছুই বুঝতে পারছি না।”
অন্তরও তখন বলল,
“কাহিনি কী ভাই?”

রায়ান ভাই নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে বলল,
“বুঝিয়ে বলছি সব।”
এরপর সে অনুর ব্যাপারে সবটাই তার কলিগদের খুলে বলল। সবাই বিস্ময় নিয়ে শুনে বলল,
“অনুকে ভালোবাসো!”
রায়ান ভাই ফিসফিস করে বলল,
“আস্তে!”
মাসুদ বলল,
“তোমার মতো এমন রগচটা, অল্পভাষী মানুষও যে কারো প্রেমে পড়তে পারে, জানতাম না, ভাই।”
শিলা বলল,
“টিটকারি মেরো না। তুমি যখন আমার প্রেমে পড়েছিলে তখন তোমাকেও আমি এমনই ভাবতাম। এখন বিয়ের পর জেনেছি তুমি কেমন গভীর জলের মাছ।”
পিংকি বলল,

“যে যাই বলো, অনু কিন্তু দেখতে ভীষণ মিষ্টি। দুজনকে দারুণ মানাবে।”
রায়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,
“আর মিষ্টি! ওর রণচণ্ডী রূপটা দেখলে বুঝতে। আগে তো ভয়ে আমার সামনে মুখ দিয়ে কথাই বের হতো না। একটা শব্দ বলতে গেলে দশবার তোতলাতো। আর এখন! এখন আমাকে একদম পরোয়াই করো না। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে। সেই চোখে যা তেজ!”
শিলা বলল,
“এটা খুবই স্বাভাবিক। মেয়েদের সত্যিকারের ভালোবাসা যেমন প্রখর, তারচেয়েও প্রকট তাদের আত্মসম্মানবোধ। তুমি ওকে অপমান করেছ এখনো এটা ও ভুলতে পারেনি। ছোটো মানুষ তো, জেদ এবং আত্মসম্মানবোধ দুটোই বেশ প্রখর।”

রায়ান ভাই জবাব দিল না। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চুপ করে রইল। হিয়া এতক্ষণ পর বলল,
“এখন তুমি চাইছ অনুকে দেখিয়ে দেখিয়ে আমার সাথে মিশতে?”
“হ্যাঁ। তোমার যদি সমস্যা না থাকে।”
হিয়া মলিন হেসে বলল,
“সমস্যা নেই। আমার এইটুকু অভিনয়ে যদি তোমার হেল্প হয়, তাহলে অবশ্যই করব।”
রায়ান আনন্দিত হয়ে বলল,
“থ্যাঙ্কিউ সো মাচ, হিয়া।”

রাতে খাওয়ার সময় রায়ান এবং হিয়া পাশাপাশি বসেছে। ওদের মুখোমুখি চেয়ারে বসা আছে অনু। না চাইতেও চোখ চলে যাচ্ছে ওদের দিকে। এজন্য মাথা নত করে চুপচাপ খাচ্ছিল অনু। ছোটো চাচি এটা, ওটা এগিয়ে দিচ্ছিল। হিয়া খুব সহজেই সবার সাথে মিশে গিয়েছে। যেচে অনেক কথা বলছে। মনে হচ্ছে সে কোনোভাবে এই বাড়ির সকলের সাথে এডজাস্ট হতে চাচ্ছে। রায়ান ভাইও হিয়ার খুব প্রশংসা করছে। সে কতটা হার্ডওয়ার্কিং করে, কীভাবে পরিবারের হাল ধরেছে, কতটা ইনটেলিজেন্ট এরকম আরো অনেক কিছুই। কেউ ভালো কিছু করলে, সফল হলে সেই গল্প শুনতেও ভালো লাগে। অনুপ্রেরণা কাজ করে নিজের মধ্যে। অনুর নিজেরও ভালো লাগছিল। কিন্তু রায়ানের কথা বলার টোন অন্যরকম। যেন সে অনুকে আঘাত করার উদ্দেশ্য নিয়েই কথাগুলো বলছে। অনুর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই এতে। সে নিজের মতো নির্বাক।

নাইওর শেষ করে আসার পর স্নিগ্ধাকে বেশ হতাশ লাগছিল। বাড়িতে এসেছে সে গতকাল। আসার পর থেকেই চুপচাপ এবং মনমরা হয়ে ছিল। বিকেলে রায়ান ভাই তার কলিগদের নিয়ে ঘুরতে যাবে। নৌকায় করে নদীতে ঘুরবে। রিয়াদ ভাইয়া অফিসের কাজে ব্যস্ত। তাই রায়ান ভাই স্নিগ্ধাকেও সাথে যাওয়ার জন্য বলল। স্নিগ্ধা প্রথমে রাজি না হলেও সকলের জোরাজোরির জন্য রাজি হয়ে গেছে। স্নিগ্ধার জন্য আবার অনুকেও রাজি হতে হয়েছে। নয়তো সে ম’রে গেলেও ওদের সাথে বের হতো না। যেই ভয়ে অনু বের হতে চায়নি, সেটাই হচ্ছে। হিয়া এবং রায়ান ভাই সর্বক্ষণ একসঙ্গে থাকছে। পাশাপাশি হাঁটছে। রায়ান ভাই খুব কেয়ার করছিল হিয়ার। অনু যতই ভাবলেশহীন থাকুক না কেন, ভেতরে ভেতরে তার ঠিকই পুড়’ছিল।

তিনটা নৌকা ঠিক করা হয়েছে। ওদের সবাইকে ভাগ করে দিয়েছে নৌকা। স্নিগ্ধার পানিতে ভয় আছে, তাই সে নৌকায় উঠবে না। ওর জন্য রায়ান ভাইও থেকে গেছে। স্নিগ্ধা তখন বলল,
“আপনি কিন্তু ওদের সঙ্গে গেলেই পারতেন, ভাইয়া।”
রায়ান ভাই হেসে বলল,
“সমস্যা নেই। আমি মূলত দুটো কারণে যাইনি। এক. আপনি একা থাকবেন এবং দুই. আপনার সাথে কথা আছে।”
স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“কী কথা?”
“আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত, ভাবি?”
স্নিগ্ধা ইতস্তত করে বলল,
“না তো। কেন?”

“বাবার বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই আপনি ভীষণ আপসেট হয়ে আছেন। ভাইয়ার সাথে কিছু হয়েছে?”
স্নিগ্ধা এবার দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
“বুঝতে পারছি না কী বলব!”
“আমাকে বলতে পারেন সব। যদি কোনো হেল্প করতে পারি?”
স্নিগ্ধা চুলগুলোকে হাতখোপা করে নদীর দিকে তাকাল। নদীর শান্ত টলমলে পানিতে দৃষ্টি রেখেই বলল,
“আমার মনে হচ্ছে আপনার ভাই তার ইচ্ছেতে এই বিয়ে করেনি।”
“এমনটা কেন মনে হয়েছে?”
“তার ব্যবহারে। আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক না। প্রথমে মনে হয়েছিল, এটা সিম্পল বিষয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আর তা মনে হচ্ছে না।”
রায়ান ভাইও দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
“ভাইয়াকে জোর করে বিয়ে করানো হয়নি। ওর ইচ্ছেতেই বিয়ে করেছে। কিন্তু…”

“কিন্তু?”
“ভাইয়ার একটা অতীত আছে।”
স্নিগ্ধার চোখে-মুখে আতঙ্ক ফুটে উঠল মুহূর্তেই। জিজ্ঞেস করল,
“কেমন অতীত?”
“ভাইয়ার একটা সম্পর্ক ছিল। তখন ভাইয়া ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। এবং মেয়েটা ছিল ফ্রেশার।”
“নাম কী ছিল?”

“মায়া। নামের মতো মেয়েটাও দেখতে মায়াবতী। চোখে-মুখে যেন মায়া লেপ্টে থাকতো সবসময়। শ্যামলা রঙের মেয়েরা যে কতটা সুন্দর হয় এটা বুঝেছিলাম মায়াকে দেখার পর। ওদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলাম আমি এবং আমার গ্রুপের বাকি সদস্যরা। কালচারাল গ্রুপের সদস্য ছিলাম। মায়া ছিল আমার ডিপার্টমেন্টের। ভাইয়ার ডিপার্টমেন্ট আলাদা। ঐদিন একটা দরকারি কাজে আমাকে ফোন দিয়ে না পেয়ে খুঁজতে চলে এসেছিল। তখন মায়া স্টেজে গান গাচ্ছিল। ঐখানেই ভাইয়া ওকে প্রথম দেখে। এরপর থেকেই দেখতাম ভাইয়া ঘনঘন আমাদের ডিপার্টমেন্টের ফ্লোরে আসতো। আমার সাথে কথা বলার অজুহাতে এলেও চোখ যেন চারদিকে কাকে খুঁজত। আমি বুঝতে পারতাম। একদিন জিজ্ঞেসও করেছিলাম কিন্তু ভাইয়া কিছু বলেনি। অন্য আরেকদিন ভাইয়ার মনের আশা পূরণ হয়েই গেল। মায়া ক্লাস শেষ করে ওর বান্ধবীদের সাথে বের হচ্ছিল। ওকে দেখা মাত্রই ভাইয়া এমন হা করে তাকিয়ে ছিল যে আমি যা বোঝার বুঝে ফেলেছিলাম। এরপর তো ধরলাম আমি ভাইয়াকে। ভাইয়াও সেদিন সব স্বীকার করল। আমার মাধ্যমে মায়ার সকল বায়োডাটা বের করে নিল। মজার বিষয় কি জানেন? ভাইয়ার লাভ লেটারও আমি নিয়ে গেছিলাম। মানে ভাবেন একবার, সিনিয়র হয়ে একজন জুনিয়রকে লাভ লেটার দিয়েছি তাও নিজের ভাইয়ের জন্য।”

এটুকু বলে হাসল রায়ান ভাই। স্নিগ্ধা উৎসাহিত হয়ে বলল,
“তারপর কী হলো?”
“আর কী হবে? সাতদিন পর মায়ার জবাব এলো। ঐ চিঠিতে ভাইয়ার ফোন নাম্বার ছিল। ডিরেক্ট কল-ই দিয়েছিল। এরপর থেকে ওদের কথা হতো প্রতিদিন। মায়াও ভাইয়াকে ভালোবাসতে শুরু করেছিল। ওদের সম্পর্কের কথা আমি ছাড়া কেউই জানতো না। আমাদের বাড়িতে কেউ সম্পর্ক পছন্দ করে না। ভাইয়ার ইচ্ছে ছিল মাস্টার্স শেষ করে তারপর মায়ার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে।”
“তাহলে মায়াকে কেন বিয়ে করল না?”
“ঐযে ভাগ্য বলতে একটা শব্দ আছে। পুরো দুনিয়া আপনার পক্ষে আছে কিন্তু ভাগ্য আপনার সহায় নেই, তাহলে কখনোই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত কিছু পাবেন না। ওরা আমার চোখে আইডিয়াল কাপল ছিল। এত ভালো ছিল ওদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং। দুজনই দুজনকে অনেক ভালোবাসতো এবং রেসপেক্ট করত। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় বিয়ে পর্যন্ত যেতে পারেনি।”

“ব্রেকাপ হয়েছিল? কে করেছিল? আর কেনই বা হয়েছিল ব্রেকাপ?”
রায়ান ভাই একটু সময় নিল। প্রলম্বিত শ্বাস নিয়ে বলল,
“ব্রেকাপ হয়নি। মায়া মা’রা গেছে।”
স্নিগ্ধা এই কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে হঠাৎ করেই কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেন। রায়ান ভাই এক পলক স্নিগ্ধার দিকে তাকাল। তাকিয়ে বুঝতে পারল ওর অবস্থা। এরপর নিজে থেকেই বলল,
“মায়া দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার পর ওর ক্যা’ন্সা’র ধরা পড়ে। এরপর থেকেই সব উলট-পালট হয়ে যায়। সাত মাস পরই মায়া মা’রা যায়। দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সাথে সাথে মায়া ভাইয়ার ভালোবাসাও নিয়ে গেছে। এরপর থেকেই ভাইয়ার মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। না কখনো কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছে আর না কাউকে কখনো ভালোবাসতে পেরেছে। এমনকি বিয়েও না। বাড়িতে অনেক আগে থেকেই ওর বিয়ের জন্য চেষ্টা করছিল। কিন্তু ভাইয়া রাজি হয়নি। এবার দাদুর কড়া চাপে পড়ে রাজি হয়েছে।”
একটু থেমে রায়ান ভাই ফের বলল,

“আমার ভাই বলে বলছি না ভাবি, রিয়াদ ভাইয়ার মতো মানুষ হয় না। নদীর পানির মতোই শান্ত, শীতল। আপনাকে যখন বিয়ে করেছে তখন ভালোওবাসবে একদিন। আপনাদের সম্পর্কটা পবিত্র সম্পর্ক। আপনাদের মধ্যে ভালোবাসাটাও আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসবে দেখবেন। হয়তো একটু সময় লাগবে। আপনি চাইলেই পারবেন ভাইয়ার মন জয় করতে, ভাইয়ার মনে আবারও ভালোবাসা তৈরি করতে। শুধু অনুরোধ করব, একটু সময় নিন এবং ভাইয়াকেও একটু সময় দিন। হুট করেই কোনো ডিসিশন নিয়ে নিয়েন না।”
স্নিগ্ধা কোনো জবাব দেওয়ার আগেই ওরা ঘুরে চলে এসেছে। হিয়া এসেই রায়ানের হাত ধরে বাচ্চাদের মতো লাফাতে লাগল। আনন্দিত কণ্ঠে বলতে লাগল,

“রায়ান! আমি খুব, খুব খুশি। খুব ভালো লেগেছে আমার। তুমি কেন এলে না আমাদের সাথে? তাহলে আমার আরো ভালো লাগত।”
রায়ান আড়দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“সমস্যা নেই। আমরা আবার ঘুরব অন্য কোনোদিন।”
“সত্যি তো?”
“হ্যাঁ। এখন চলো সবাই বাজারের বেস্ট হালিম খেতে যাই।”
“চলো।”
শাপলা এবং অনু পাশাপাশি হাঁটছিল। শাপলা বিরক্তিমাখা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,
“এই হিয়া মেয়েটা এমন কেন?”
অনু ভাবলেশহীনভাবে প্রশ্ন করল,
“কেমন?”

“কেমন যেন গায়ে পড়া স্বভাবের! সবসময় রায়ান ভাইয়ার সাথে লেপ্টে থাকে।”
“এটা গায়ে পড়া স্বভাব না, শাপলা। সে তো আর সব ছেলের গায়ে গিয়ে পড়ে না। শুধু রায়ান ভাইয়ের সাথেই এত ক্লোজ। আর যার গায়ে পড়ছে তার যখন সমস্যা নেই, তখন আমাদেরও সমস্যা থাকার কথা নয়। সে অধিকার দিচ্ছে বলেই অন্যজন অধিকার দেখাচ্ছে। আর অধিকার আছে মানে দুজনের মধ্যে কোনো সম্পর্কও আছে। তাই এসব নিয়ে আর ভেবো না।”

“কিন্তু…”
“কোনো কিন্তু নয়। আমরা আর এই টপিকে কোনো কথা বলব না।”
স্নিগ্ধা সুযোগ পেয়ে রায়ানকে জিজ্ঞেস করল,
“হিয়া কি আমার জা হতে যাচ্ছে?”
রায়ান ভাই হেসে বলল,
“আরে না! তেমন কিছুই না।”
“কিন্তু ভাবসাব তো অন্যরকম লাগছে।”
“অন্যরকম দেখাচ্ছি তাই।”
“মানে?”
রায়ান ভাই রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,
“আছে। সিক্রেট। একদিনেই সব সিক্রেট বলে দেওয়া যাবে না। আজ ভাইয়ার সিক্রেট বলেছি, অন্যদিন আমারটা বলব।”
স্নিগ্ধা হেসে বলল,

“ঠিক আছে।”
রায়ান ভাই এবং হিয়ার অভিনয়ে অনু অভ্যস্ত হতে পারছিল না কিছুতেই। উলটো মানসিক প্রেশার বাড়ছিল। মনের দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ছিল ও। রাতে ঘুম হচ্ছে না, ঠিকমতো খেতে পারছে না। সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখানে থাকলে এটা বাড়বে বৈ কমবে না। হিয়ারা হয়তো আর দুদিন পড়েই চলে যাবে। কিন্তু এই বাড়িতে থাকলে, রায়ান ভাইকে দেখলে সর্বদা এগুলো মনে পড়বে। এত কষ্ট করে নিজেকে স্ট্রং করে অনু আবারও ভেঙে পড়তে চায় না। এজন্য দূরত্বই ঠিক আছে। রাতে অনু ব্যাগ গুছাচ্ছিল। শাপলা জিজ্ঞেস করল,

“ব্যাগ গুছাচ্ছ কেন?”
“কালকে হোস্টেলে ফিরে যাব।”
“কিন্তু বাড়ির সবাই যে বলছিল তুমি আর যাবে না।”
“এটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু চলব তো আমি আমার সিদ্ধান্তেই।”
“সবাই রাজি হবে?”
“এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমি মানসিক অশান্তি নিয়ে এখানে থাকতে পারব না।”
লিলি খালা খাওয়ার জন্য ডাকছেন। শাপলাকে নিয়ে অনু নিচে নামল। সবাই আগে থেকেই এসে বসে পড়েছে। অনু এক পলক রায়ান ভাই এবং হিয়ার দিকে তাকাল। এরপর খেতে বসেই বলল,
“আব্বু আমি কালকে শাপলার সাথে হোস্টেলে যাচ্ছি।”
আলমগীর চৌধুরী বললেন,
“ওমা শাপলা কালই চলে যাবে?”
শাপলা বলল,

“জি আঙ্কেল। আরো আগেই যেতাম। কিন্তু অনু আপু যেতে দেয়নি। আবার আপনারা সবাই আমাকে এত আদর করেছেন যে, এই আদরের লোভে আমিও থেকে গেছি।”
তিনি হেসে বললেন,
“পাগলি মেয়ে একটা! তোমার যখন মন চাইবে তুমি চলে আসবে, মা। অনুর মতো তুমিও আমার মেয়ে। সংকোচ করবে না একদম। তুমি চাইলে কিন্তু হোস্টেলে না থেকে অনুর সাথে এই বাড়িতেই থাকতে পারো। এখান থেকে দুজনে একসাথে যাতায়াত করলে। যদি তোমার কোনো সমস্যা না হয়।”
অনু বলল,

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ২১

“আব্বু আমি হোস্টেলে একেবারেই ফিরে যাব।”
এবার সকলেই বিস্ময় নিয়ে তাকাল। সবাই ভেবেছিল অনু হয়তো ওর জিনিসপত্র আর বইখাতাগুলো আনতে যাবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ঘটনা ভিন্ন। রায়ান এবং হিয়া দুজনই দুজনের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। এরপর তাকাল অনুর দিকে। অনুও তখন একবার রায়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়েই দৃষ্টি সরিয়ে নিল। সেই এক পলকেই রায়ান ভাই বুঝে নিয়েছে অনুর আত্মাভিমান!

তুমি অজান্তেই বেঁধেছ হৃদয় পর্ব ২৩