নূরজাহানের সংসার শেষ পর্ব
শ্রীমতি প্রজ্ঞা মঞ্জরী
মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে আছে অর্ণব।দু’হাতে জাপটে ধরে রেখেছে নূরকে।চোখে-মুখে আতঙ্ক,ভয়,নূরকে হারিয়ে ফেলার শঙ্কায় পাগলপ্রায় অবস্থা অর্ণবের।ঝাপসা হয়ে আসা চোখজোড়া বারবার মুছে নিচ্ছে হাতের উলটো পিঠে।
অন্যদিকে অর্ণবের বাহু খামচে ধরে আছে নূর।পুরো শরীর থরথরিয়ে কাঁপচে তার।গলার কাছে খানিকটা যায়গা ধারালো ছুড়িতে লেগে কেটেও গেছে। সৌভাগ্যবশত বড় কোনো ক্ষতি হয়নি নূরের।কিন্তু আকর্ষাৎ এমন আক্রোশি আক্রমণে ভয়ে সিটিয়ে আছে মেয়েটা।একটু আগে যেন মৃত্যুর দুয়ার থেকেই ফিরে এসেছে নূর।
মেঝেতে শুয়ে মাথায় হাত দিয়ে কাতরাচ্ছে রাহেলা।মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে তার।তার ছটফটানিতে কারো এতটুকু ভ্রুক্ষেপ নেই।সবাই ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
কিছুক্ষণ আগে,
রাহেলা ধারালো ছুড়ি নিয়ে নূরের গলায় দাবিয়ে ধরলে, ফর্সা চামড়া ভেদ করে রক্তের দেখা দেয়। অর্ণব চিৎকার করে ওঠে নূরের নাম ধরে।
নূর চোখ বন্ধ করে আছে।মনে মনে আল্লাহর কাছে জীবনের সমস্ত অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করছে,চোখ দিয়ে পানি ঝরছে তার।এক মূহুর্তের জন্য বাঁচার সমস্ত আশার আলো যেন নিভে গিয়েছিলো।
রাহেলা ক্রোধের সহিত নূরের গলায় চাকু ধরে আছে।
“আমি যদি জেলেই যাই,আমার যদি ফাঁসি-ই হয় তাহলে এই মেয়েকে মেরেই আমি জেলে যাবো।আমার অন্তরের সমস্ত জ্বালা মিটিয়ে তবেই আমি মরবো।”
উপস্থিত সবাই হতভম্ভ রাহেলার এমন কাজে।সে যে এতটা হিংস্র হয়ে উঠবে কেউ বুঝতে পারেনি।
“দেখুন,আপনি যা চান আমরা দিব।নূরকে ছেড়ে দিন।ওর কিছু হলে কিন্তু ফলাফল ভয়ানক হবে বলে দিচ্ছি।”
অর্ণবের কথায় রাহেলা উচ্চহাসিতে ফেটে পড়ে।
“আমাকে এতো বোকা মনে হয়? জেলে এমনিও আমাকে পাঠাবে তোমরা।তাই এই অপয়াটাকে মেরেই আমি জেলে যাবো।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“অপয়া” শব্দটা যেন নূরের কানে বাজতে থাকলো।সে বারবার ভাবতে লাগলো আসলেই সে অপয়া?কই?সে তো কখনো কারো ক্ষতি করেনি।তাহলে সে কি করে অপয়া হয়?
রাহেলা ছুড়িটা নূরের গলায় চালিয়ে দিবে এমন কেউ ভারী কাঁচের ফ্লাওয়ার ভাস দিয়ে সজোরে আঘাত করে রাহেলার মাথায়।ফ্লাওয়ার ভাসের কাঁচগুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে সাদা টাইলস করা মেঝেতে।কিছু কাঁচ গেথে গেছে রাহেলার মাথার চামড়া ভেদ করে।
রাহেলার হাতটা আলগা হয়ে আসতেই অর্ণব দৌঁড়ে গিয়ে রাহেলার হাত থেকে ছুড়িটা ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে কোথাও ছুড়ে মারে।নূরকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
বর্তমান,
ফ্লাওয়ার ভাসের ভাঙ্গা অংশ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাবিলা।রাহেলার শরীর থেকে কিছুটা রক্ত ছিটকে তার শরীরে লেগেছে। সাবিলার চেহারায় নেই কোনো অস্থিরতা,নেই কোনো চাঞ্চল্য। অদ্ভুত শীতলতা ভরা দৃষ্টি নিয়ে সে তাকিয়ে আছে মেঝেতে পড়ে থাকা রাহেলার দিকে।
হাত থেকে ভাঙ্গা ফ্লাওয়ার ভাসের টুকরোটা সশব্দে ফেলে দিয়ে নূর আর অর্ণবের সামনে এসে দাঁড়ায় সাবিলা।
“আমি কখনোই তোমার মায়ের দায়িত্ব পালন করতে পারিনি নূর।তাই তোমার বাবা আমাকে একদিন অনেক কথা শুনায়।আমি বাচ্চার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।তোমার বাবা আমায় অনুরোধ করায় আমি তোমাকে জন্ম দিয়েছিলাম।রাহেলা যে তোমায় এতোবার মেরে ফেলার প্ল্যান করেছে তা আমি সত্যিই জানতাম না।তুমি ঠিকই বলেছো, আমি একাকিত্ব নামের অভিশাপে জ্বলছি।যখন তোমার বাবার সাথে আমার ডিভোর্স হয় তারপর আমার বাবা আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।তিনি ইকবালকে অনেক পছন্দ করতেন।এই ডিভোর্সটা আমার জন্যই হয়েছে তা তিনি আন্দাজ করতে পারেন। এরপর থেকেই আমি একা,ইকবাল তোমায় নিয়ে অনেক আনন্দে থাকে,তোমার সঙ্গ পেয়েছিলো ও।কিন্তু আমি একা হয়ে পড়ি।আমার ইগো আমায় আটকে দিয়েছিলো ইকবালের কাছে ফিরে যাওয়া থেকে।আমি দেখতাম আমার সিদ্ধান্তের কারণে আমি-ই কষ্ট পাচ্ছি কিন্তু ইকবাল তোমায় নিয়ে আনন্দে আছে,তখন আমার সহ্য হতো না। তাই আমি!”
“তাই আপনি আমার বাবাকে এমন একজন জঘন্য মানুষের সাথে জুড়ে দিলেন! আপনি জানেন? আপনি আমাদের ছেড়ে যাওয়ার পর বাবা এমন কোনো রাত নেই যে কাঁদতেন না।আপনার জন্য কতশত কথা তিনি তার পারসোনাল ডায়েরি তে লিখতেন।আমার বাবার প্রতিটা দীর্ঘশ্বাস আর নির্ঘুম রাতের স্বাক্ষী আমি।আপনি শুধুই আমার বাবার বাহিরটা দেখলেন।তার মনের ভিতরের যন্ত্রণা টা আপনি কখনই উপলব্ধি করতে পারেন নি।”
সাবিলা তাকালো নূরের দিকে।নিজের গর্ভজাত সন্তানের চোখে নিজের জন্য আকাশসম ঘৃণা দেখে চোখ নামিয়ে নিল সাবিলা।
অর্ণব নূরের হাত ধরে দাঁড় করালো।অত:পর তাসিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“তাসিন,পুলিশে খবর দে।আর ফাহিমকে স্কুল থেকে আমাদের বাড়ি আনার ব্যবস্থা কর।আশা করি তুই ওনার বয়ান পুরোটা রেকর্ড করে নিয়েছিস।”
“হ্যাঁ, সব রেকর্ড করা আছে। আমি থানায় খবর দিয়ে দিয়েছ।পুলিশ, এ্যাম্বুলেন্স আসছে।তুই বরং ভাবীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যা।বাইরে গাড়ি আছে।”
অর্ণব নূরকে পাঁজাকোলে করে তুলে নিয়ে হাঁটা দিলো বাড়ির বাইরে।মারজানা,তার স্বামী,সোহেলও পিছন পিছন গেলো। স্নেহা বাইরে যেতে পা বাড়াবে এমন সময় তাসিন বলে ওঠে, “স্নেহা দাঁড়াও।”
স্নেহা থেমে যায়।দৃষ্টি পতিত করে তাসিনের পানে। তাসিন কয়েক কদম এগিয়ে এসে বলে, “বয়স কতো তোমার?”
-“বাইশ।কেন?”
-“কিসে পড়ো?”
-“অনার্স থার্ড ইয়ারে।”
-“হুম… চলবে।যাও।”
-“কি?কি চলার কথা বলছেন আপনি?”
-“পরে বলবো।যাও।ভাবীর সাথে হসপিটালে যাও।”
তাসিনের সাথে আর তর্কে জড়ায় না স্নেহা।বেরিয়ে যায় ওখান থেকে।
নূর নিজের সংসারে ফিরেছে। নূরের শাশুড়ি নূরকে দেখে এগিয়ে এলেন।চোখ মুখের অবস্থা বেহাল নূরের।গলার কাছটায় ব্যান্ডেজ করা।দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোনো এক বড় ঝড়ের সম্মুখীন হতে হয়েছিলো নূরের।
“বৌমা?এ কি অবস্থা হয়েছে তোমার?কি হয়েছে মা?কোথায় ছিলে তুমি?” চিন্তিত কণ্ঠ মুমতাহিনার।
“আম্মা,আমি আপনাকে সব বলবো।ওকে রুমে নিয়ে যাই? বিশ্রাম দরকার ওর।”
মুমতাহিনা মাথা নেড়ে সম্মতি জানান অর্ণবের কথায়।
“আম্মা উনি নূরের ফুপ্পি, মারজানা ফুপ্পি।ইনি ওনার হাসবেন্ড খালিদ আংকেল।ওনার মেয়ে স্নেহা আর এটা স্নেহার ভাই সোহেল। ওনাদের একটু রুমে নিয়ে যান।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। তুই বৌমা কে নিয়ে যা।আমি ওনাদের সাথে আছি।”
অর্ণব মায়ের কথা মতো নূরকে নিয়ে নিজেদের ঘরে গেলো।টানা দেড়দিন পর সেই চেনা ঘর,চেনা পরিবেশ; #নূরজাহানের_সংসার।
অর্ণব কাবার্ড থেকে একটা সুতি সালোয়ার-কামিজ বের করে নূরের হাতে দিলো। ওয়াশরুম অবধি এগিয়ে দিয়ে এলো নূরকে।নূর ও বিনাবাক্যে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
“দরজা আটকাবে না।আমি হালকা ফাঁকা করে রেখে যাচ্ছি।গোসল শেষে কাপড় রেখে দিও, আমি ধুঁয়ে নিবো।”
বলেই অর্ণব ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।এক গ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ঘরে এলো। শরবতের গ্লাসটা ঢেকে রেখে বিছানা পত্র ঝেড়ে গুছিয়ে নিলো অর্ণব।
নূর এর মধ্যেই ওয়াশরুম থেকে বের হয়।অর্ণব নূরকে হাত ধরে এনে খাটের উপর বসায়। শরবতের গ্লাসটা নূরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নূরের চুলগুলো তোয়ালে খুলে আলগা করে দেয়। ড্রায়ারের বাতাসে আস্তে আস্তে চুলগুলো শুকাতে থাকে অর্ণব।
-“অর্ণব? ওদিকে কি অবস্থা?”
-“তাসিন সবটা সামলে নিয়েছে।রাহেলা জান্নাত পুলিশের হেফাজতে আছেন আর সাবিলা সুলতানাকে পুলিশ লকাপে রেখেছিলেন,আমি বলায় ছেড়ে দিয়েছে।”
-“আমি রাহেলার বিরুদ্ধে আমার বাবাকে হত্যার মামলা আর আমাকে হত্যাচেষ্টার মামলা করতে চাই।”
অর্ণব যেন এটাই চাইছিলো।সে ভেবেছিলো নূরকে সে নিজেই বলবে,আর নূর রাজি না হলে নিজেই মামলার বাদীপক্ষ হয়ে মামলা দায়ের করবে।
-“বেশ,তা-ই হবে।তুমি বসো,আমি খাবার নিয়ে আসি।”
বলেই নূরের হাত থেকে শরবতের খালি গ্লাসটা নিয়ে ঘর ছাড়লো অর্ণব। একটু পরেই প্লেটে খাবার নিয়ে ঘরে এলো।নূরকে নিজ খাবার হাতে খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে নিজে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
নূর শারীরিক এবং মানসিক ভাবে ভীষণ ক্লান্ত।গলার কাছে ক্ষতটায় ব্যাথাও করছে।ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম এসে ভর করলো নূরের চোখের পাতায়।
মুমতাহিনার ঘরে বসে আছে অর্ণব।একটু আগেই সব ঘটনা অর্ণব তাকে খুলে বলেছে।নূর প্রেগন্যান্ট জেনে তিনি অনেক খুশি।তবে অর্ণব নূরকে কষ্ট দিয়েছে শুনে রেগে অর্ণবের গালে একটা চড়ও মেরেছেন। রাহেলা আর সাবিলার কীর্তিকলাপ জানার পর ঘৃণায় মুখটা তেঁতো হয়ে আসছিলো তার।
“আমি বৌমার কাছে যাচ্ছি।” বলেই নূরের ঘরে গেলেন মুমতাহিনা।
নূর তখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।মুমতাহিনা গিয়ে নূরের পাশে বসে পরম স্নেহে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।এমন স্নেহের স্পর্শে নূরের ঘুম কিছুটা আলগা হয়ে আসে।পিটিপিটিয়ে চোখ তুলে তাকায় নূর।
-“শরীর কেমন লাগছে বৌমা?”
নূর শোয়া থেকে উঠে বসে।অত:পর বসে,
-“এখন একটু ভালো লাগছে মা।”
-“প্রেগন্যান্সির এই কয়েকটা দিন সাবধানে থাকবে।গাধা অর্ণবটা এই অবস্থায় তোমার খেয়াল রাখবে তা-না।কিসব বাজে কাণ্ড-কারখানা ঘটিয়েছে।”
নূর হালকা হাসে মুমতাহিনার কথায়।
“তোমার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি বৌমা।এ বিষয়ে আমি আর ঘাটবো না।তবে আমায় মা বলে ডাকো তো? এখন থেকে আমি-ই তোমার মা।খারাপ সমস্ত চিন্তা ভাবনা মন থেকে মুছে ফেলো।সংসার,স্বামী, সন্তান নিয়ে,নিজের জীবন নিয়ে সুখী হও মা।অপ্রত্যাশিত ঘটনা গুলো মনে দাগ কেটে গেলেও তাদের পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন।”
নূর মাথা নাড়ায় মুমতাহিনার কথায়।এমন সময় অর্ণবের আগমন ঘটে।
মুমতাহিনা নূরের কপালে চুমু খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। অর্ণব দরজা লক করে নূরের কাছে এসে বসে।
-“ঘুম কেমন হয়েছে?”
-“ভালো।আপনি কোথায় ছিলেন?”
-“মায়ের কাছে।”
-“ফাহিম কোথায় অর্ণব?”
-“আমাদের বাসায়-ই আছে।পাঁচটায় স্কুল ছুটি হলে তাসিন দিয়ে গেছে এখানে।”
-“ও কি সব জানে?”
-“যেটুকু জানানোর মতো,আমি জানিয়েছি।বাকিটা ও না জানলেও চলবে।ও বলেছে ও আর কখনো নিজের মায়ের মুখদর্শন করতে চায় না।”
নূর আর কোনো কথা না বলে অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে। নিজের মাথাটা অর্ণবের বুকের মাঝে রেখে আঁকড়ে ধরে অর্ণবের বাহু। অর্ণব মুচকি হেসে জড়িয়ে নেয় নূরকে।
সময় বহমান।নিজের মতো করে সে বয়ে চলে।কারো ভালো বা খারাপের ধার ধারেনা সে। ওই ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেছে।নূর নিজেকে সামলে নিয়েছে।অনেকটাই স্বাভাবিক এখন সে।নূরজাহানের সংসার এখন ভালোই চলছে। ফাহিম নূরদের সাথেই থাকে।স্কুলের পরে অভ্রর সাথে ভালোই সময় কাটে তার।মাঝে মাঝে অর্ণবের সাথে বসে ফুটবল খেলা দেখে, শালা- দুলাভাই মিলে বেশ আনন্দের সাথেই থাকে।
নূরের এখন চারমাস চলছে।টুইন প্রেগন্যান্সি হওয়ায় বেশ ভালোই উঁচু হয়ে উঠেছে তার পেট।প্রেগন্যান্সি তে খাবারে অনিহা বা অতিরিক্ত বমি হওয়া এগুলো না থাকলেও নূরের মুড সুইং হয় প্রচণ্ড। মাঝে মাঝে অর্ণবের সাথে ছোটোখাটো জিনিস নিয়ে তুমুল ঝগড়া করে সে।আবার নিজেই কেঁদেকেটে দুনিয়া মাথায় তুলে।অর্ণব অবশ্য তার এসব জিনিসে বিরক্ত হয়না।কারণ সে জানে এমন সময়ে নূরের মুডসুইং সম্পর্কে।
রাহেলার বিরুদ্ধে মামলা করেছে নূর। তার বিচারকার্য প্রক্রিয়াধীন। তবে রাহেলা আর আগের মত নেই।মানসিক ভারসাম্যহীনে পরিণত হয়েছে সে।নিজের পরিকল্পনায় সফল হতে না পারা,হতাশা,পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যাওয়া সব মিলিয়ে মানসিক ভারসাম্য খুইয়ে বসেছে রাহেলা।
সাবিলা নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত। বেশ কয়েকবার দেখা করতে এসেছিলো নূরের সাথে।তবে নূর রাজি হয়নি।অর্ণবও রাজি নয় সাবিলার সাথে নূরের দেখা করার বিষয়ে। তাই বারবার অপূর্ণতা নিয়েই ফিরে যায় সাবিলা।
স্নেহা আর তাসিন এখন চুটিয়ে প্রেম করছে।দুই মাস হলো তাদের প্রেমের।তাসিন প্রায়ই অফিসের ফাঁকেফাঁকে স্নেহার সাথে দেখা করে আসে। স্নেহার আর তাসিনের পরিবারও জানে তাদের সম্পর্কে;স্নেহার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হলেই বিয়ে হবে দু’জনের।
সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটা।অর্ণব আর আগে আগে ফিরেছে অফিস থেকে।ঘরে এসে দেখে পুরো ঘর অন্ধকার।নূরের নাম ধরে ডাকলেও সাড়া শব্দ পায়না অর্ণব।ব্যাগটা টেবলের উপর রেখে লাইট জ্বালাতেই নূর,অভ্র আর মুমতাহিনা এক যোগে বলে ওঠে,
“হ্যাপি বার্থডে”
আজ অর্ণবের জন্মদিন অর্ণবের মনে ছিলো।সকালে সবাই উইশ করলেও এই।সারপ্রাইজের কথা সে জানতো না। মা,স্ত্রী,সন্তানকে নিয়ে কেক কাটে অর্ণব।নূর বিরিয়ানি রান্না করেছে জেনে খুশি হলেও এমন শরীর নিয়ে রান্নাঘরে গেছে বলে নূরকে বিস্তর জ্ঞানের কথা শুনায় সে।
রাতের খাওয়া শেষে রুমে আসে নূর আর অর্ণব। অভ্রকে ঘুম পাড়িয়ে দাদির কাছে রেখে এসেছে নূর।
রুমে ঢুকেই কাবার্ড থেকে একটা প্যাকেট বের করে অর্ণবের হাতে দেয় নূর।
-“আপনার গিফট”
অর্ণব গিফটা টা হাতে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে নূরের কোমর ধরে টেনে নিজের কাছে আনে। নূরের কোমল ওষ্টে নিজের ওষ্ঠ ডোবায় অতি আদরের সাথে।আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় নূর।অর্ণবের শার্টের কলার শক্ত করে টেনে ধরে দু’হাতে। একটু পরে নূরকে ছেড়ে দেয় অর্ণব।
-“তুমিই আমার লাইফের বেস্ট গিফট জাহান।”
-“তা তো বুঝলাম।কিন্তু গিফটা খুলে দেখুন, পছন্দ হয় কিনা।”
-“এখন গিফট খোলার মুড নেই জান।অন্য কিছু খুলি?”
অর্ণবের এমন লাগামহীন কথায় কান গরম হয়ে ওঠে নূরের।লজ্জায় বেগতিক অবস্থা তার।অর্ণব আর কথা না বাড়িয়ে নূরকে কোলে তুলে খাটের কাছে যায়।সাবধানে শুইয়ে দেয় নূরকে।নিজের পড়নের শার্টটা খুলে খাটের একপাশে ফেলে রাখে।
অর্ণবের এহেন কাণ্ডে লজ্জায় মরি মরি অবস্থা নূরের। দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে নেয় নূর।অর্ণব এসব দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে। নূরের দিকে কিছুটা ঝুকে নূরের কানের কাছে বলে,
-“প্রথম দেখছো বউ?এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন?লজ্জা পেলে কিন্তু ডোজ বেড়ে যাবে।চোখ খুলো।”
নূর তাও হাত সরায় না।
-“তুমি তারমানে চাও যেন ডোজ বাড়িয়ে দেই? আচ্ছা! বউয়ের আবদার মানতেই হবে।”
নূর এবার হাত সরিয়ে অর্ণবের দিকে দৃষ্টিপাত করে।
-“আপনি ভারী অসভ্য।”
-“সভ্য হতে বলছো?”
-“নাহ!সভ্য দিয়ে কাজ নেই।আমার অসভ্য জামাই ই ভালো।”
নূরের কথায় অর্ণব হেসে ওঠে।অত:পর দখল করে নেয় তার কোমল ওষ্ঠপুট।নূরও তাল মেলায় অর্ণবের সাথে।অর্ণবের অবাধ্য হাতের বিচরণ আর পুরুষালী ওষ্ঠের ছোঁয়ায় অস্থির করে তোলে নূরের তনু-মন। গভীর মিলনের মূহুর্তে এক হাতে খামচে ধরে অর্ণবের মাথার পিছনের চুল। অন্যহাতের নখ দাবিয়ে দেয় অর্ণবের উন্মুক্ত পিঠে।অর্ণব মুচকি হেসে আরো গভীরভাবে কাছে টেনে নেয় নূরকে।
রাতের শেষভাগে অর্ণবের থেকে ছাড়া পায় নূর।অর্ণবের প্রশস্ত বুকে মাথা রেখে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে নূর।অর্ণব নূরের অনাবৃত শরীরটা চাদরে ঢেকে দিয়ে নূরের মাথায় বিলি কেটে দেয়।
-“জাহান?বেশি খারাপ লাগছে?”
অর্ণবের বুকের সাথে মিশে থেকেই না বোধক মাথা নাড়ায় নূর।অর্ণব আরেকটু আগলে নেয় নূরকে।অত:পর দু’জনই ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।
পাঁচ মাস পর,
আদালত চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব,নূর,তাসিন, স্নেহা, মারজানা,খালিদ। মুমতাহিনা চৌধুরী আসতে চাইলেও তার শরীর আসুস্থ থাকায় অর্ণব বারণ করেছে।অভ্রকে ফাহিম আর মুমতাহিনার কাছে রেখে এসেছে তারা। ফাহিমকে আসতে বললেও সে আসেনি।মায়ের উপর তীব্র ঘৃণা জন্মেছে তার মনে।
রাহেলার মামলার আজ শুনানি হয়েছে। দেশের আইন মোতাবেক হত্যা এবং হত্যাচেষ্টার অপরাধে ফাঁসির সাজা হয়েছে রাহেলার।তবে রাহেলা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাকে এখন মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাখা হয়েছে।সুস্থ হলেই ফাঁসির রায় কার্যকর হবে।
অর্ণবের হাতটা ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নূর। নয় মাসের ভারী পেটটা নিয়ে নড়াচড়ায় বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় নূরের।তবুও বাবার খুনির সাজার রায় হবে শুনে নিজের অসুস্থতা নিয়েও হাজির হয়েছে আদালতে।
গাড়ির কাছে আসতেই মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে নূরের।অর্ণবকে ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে নূর।
“নূরজাহান? খারাপ লাগছে? কি হয়েছে বলো?”
অর্ণবের কথার উত্তর দেয়না নূর।অর্ণব নূরের মুখটা উঁচিয়ে দেখে সে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে।তাসিনকে ডেকে গাড়ি ড্রাইভ করতে বলে নূরকে নিয়ে গাড়ির ব্যাকসিটে বসে পড়ে।গাড়িতে বসলে নূরের কাপড় ভিজে অনুভব হয় অর্ণবের।আসল ঘটনা বুঝতে আর বাকি থাকেনা তার।
কিছুক্ষণ বাদেই হসপিটালে পৌঁছে যায় তারা। তাসিন আগে আগে বের হয় স্ট্রেচার নিয়ে আসে। নূরকে স্ট্রেচারে শুইয়ে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যায় অর্ণব আর তাসিন। গাইনি বিভাগে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলেন অতিরিক্ত গরমে সেন্সলেস হয়ে পড়েছে,এটা চিন্তার বিষয় না হলেও নূরের ওয়াটার ব্রেক করেছে। ইমিডিয়েট ডেলিভারি না করালে বাচ্চাদের ক্ষতি হতে পারে। এমন কথা শুনে অর্ণব বললো,
-“ওর ডেলিভারি ডেট আরো দশ দিন পরে ছিলো ডক্টর।”
-“দেখুন এসব বিষয় আনপ্রেডিক্টেবল।কখন বাচ্চার পজিশন ঘুরে যায় বা ওয়াটার ব্রেক করে তা কেউ-ই বলতে পারবেনা।পেশেন্ট যদি নরমাল ডেলিভারির অবস্থায় থাকেন তাহলে আমরা তাকে পেইন ওঠার ইনজেকশন দিবো।নাহলে সিজারিয়ান ডেলিভারি করতে হবে।আপনি কথা বলুন আপনার ওইয়াফের সাথে।তবে সময় খুবই কম।”
ইতমধ্যেই নূরের জ্ঞান ফিরেছে। আশপাশ পর্যবেক্ষণে সে বুঝতে পারলো সে হাসপাতালে আছে। একটু পরেই অর্ণব প্রবেশ করে নূরের কেবিনে।
-“অর্ণব?বাচ্চারা ঠিক আছে?”
-“ওয়াটার ব্রেক করেছে নূর।ইমিডিয়েট ডেলিভারি করতে হবে।তোমার তো পেইন উঠেনি,ইনজেকশন দিয়ে পেইন উঠাতে হবে নরমাল ডেলিভারি চাইলে।তাহলে সিজার করাতে হবে।”
অর্ণবের কথা শুনে নূর কিছু একটা ভাবলো।অত:পর বললো, “আমি নরমাল ডেলিভারিতে রাজি।কি কি করাতে হবে করান।”
-“অনেক কষ্ট হবে নূর।তুমি এতো ধকল নিতে পারবে?”
-“পারবো আমি।” অর্ণবের হাত ধরে বলে ওঠে নূর।
অর্ণব আর কথা বাড়ায় না।ইনজেকশন দেওয়ার আগের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়ানো হয় নূরকে।অর্ণব পুরোটা সময় নূরের পাশে ছিলো।সাহস জুগিয়েছে নূরকে।ইনজেকশন পুশ করার কিছু সময়ের মধ্যেই নূরের পেইন শুরু হয়।অসহনীয় ব্যাথায় কাতরাতে থাকে মেয়েটা।স্ট্রেচারে করে ওটি তে নেওয়া হয় নূরকে।
ওটির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে নূরের বাড়ির সবাই।মুমতাহিনা ছেলের বৌয়ের অসুস্থতার খবরে ছোট্ট অভ্রকে নিয়ে তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে এসেছেন।
ওটিতে যাওয়ার আগ মূহুর্তে নূরের ব্যাথায় নীল হয়ে ওঠা মুখটা ভেসে উঠছে অর্ণবের সামনে।অর্ণব অস্থির চিত্তে পায়চারী করছে। তাসিন বার বার করে বলছে নূর সুস্থ হয়ে যাবে, সব ভালোভাবে সম্পন্ন হবে কিন্তু অর্ণব নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না।মনের মধ্যে ঝড় উঠছে তার।নূরকে হারানোর শঙ্কা মনের ভেতর উথালপাতাল করে ফেলছে।
প্রায় আধা ঘন্টা পর ওটি থেকে একজন ডাক্তার বের হয়ে এলেন। তার হাতে একটা বাচ্চা।তার পিছনেই নার্সের হাতে আরেকটা বাচ্চা।
-“আপনার স্ত্রী দু’জন কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন”
কথাটা বলেই ডাক্তার নবজাত শিশুটিকে অর্ণবের কোলে দিতে চাইলে;অর্ণব ভয়ে মুমতাহিনাকে কোলে নিতে বলে।তার ভাষ্যমতে এতো ছোট নরম তুলতুলে শরীর তার হাতের ফাঁকা দিয়ে পড়ে যেতে পারে।মুমতাহিনা আর মারজানা এগিয়ে আসলেন;দুজন দু’টো সদ্য পৃথিবীতে আসা বাচ্চাকে কোলে নিলেন। অর্ণব চেয়ে দেখলো তার ঔরসজাত সন্তানদের। অর্ণব আর নূর দু’জনের মতোই বাচ্চাদের গায়ের রং ও দুধে আলতা।
নাক কার মতো,চোখ কার মতো এসব নিয়ে চলতে লাগলো বিস্তর আলোচনা।কিন্তু অর্ণবের এসবে আর ধ্যান নেই।সে অস্থির কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-“আমার ওয়াইফ কেমন আছে ডক্টর?”
-“ভালো আছেন।কিছুক্ষণ অবজারভেশনে রাখার পর আমরা ওনাকে বেডে শিফট করবো।তখন দেখা করতে পারবেন আপনারা।বাট আই মাস্ট সে,আপনার ওয়াই অনেক স্ট্রং মেন্টালিটির ওমেন।পুরোটা সময় একটুও ভেঙ্গে পড়েননি।সাচ আ স্ট্রং লেডি শি ইজ।” বলেই ডাক্তার আর নার্স চলে গেলেন।
ঘন্টা দেড়েক পর নূরকে বেডে শিফট করা হলো।একে একে সবাই এসে দেখা করলো নূরের সাথে।নূরের শরীর এখনো অনেক দূর্বল। সে ক্লান্ত শরীরে বেডে শুয়ে আছে। মুমতাহিনা আর মারজানা এসে মেয়েদের দেখিয়ে গেছেন নূরকে। সবার শেষে নূরের কেবিনে প্রবেশ করলো অর্ণব।
-“আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে ডেলিভারি আমার না, আপনার হয়েছে।এ কি অবস্থা করেছেন চেহারার?”
অর্ণবের ভঙ্গুর চেহারা দেখে বলে ওঠে নূর।অর্ণব এগিয়ে আসে নূরের কাছে। হাত বোলায় নূরের কোমল অথচ মলিন মুখশ্রী তে।
-“টেনশনে ছিলাম নূরজাহান।তোমাকে ওভাবে ব্যাথায় চেঁচাতে দেখে আমার প্রাণ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়েছিলো।কেমন যে লাগছিলো বলে বোঝাতে পারবো না।”
-“আমি একদম ঠিক আছি।ফুপ্পি বললো আপনি নাকি মেয়েদের কোলে নিতে ভয় পাচ্ছিলেন?”
-“এতো ছোট্ট আর নরম শরীর!যদি ব্যাথা পায়?”
নূর ফিক করে হেসে দেয় অর্ণবের কথায়।
-“অভ্রর বোনদের পছন্দ হয়েছে? সে কই?
-“পছন্দ হয়েছে মানে!সে বোনেদের পাশ থেকে সরছিলো ই না।ঘুমিয়ে পড়েছিলো।ফাহিমের সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছ। আমরাও কাল চলে যাবো তোমায় কালই ডিসচার্জ করবে বলেছে।”
-“আগে যাওয়া যাবে না?এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না।”
-“আজকের রাতটাই নূরজাহান।কাল তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাব।”
নূর আর কথা বাড়ায় না।অর্ণব খাবার খাইয়ে শুইয়ে দেয় নূরকে।মেয়েদের কাছে গিয়ে প্রাণভরে দেখতে থাকে ছোট্ট দু’টো প্রাণকে।একদম নূরের মতোই চোখ দু’টো হয়েছে তাদের।একজনের তো নাকও নূরের মতো।যদিও মেয়ে দু’টোর বাকি সবই তাদের বাবার মতো হয়েছে।
আজ নূরের মেয়েদের জন্মানোর খবর হসপিটালে এসেছিলো নূরের মা সাবিলা।দেখতে চেয়েছিলো নাতনীদের।কিন্তু অর্ণব জানার পরে বারণ করে দিয়েছে।কারণ নূর তাকে আগেই বলে দিয়েছিলো সাবিলার ছাঁয়াও যেন তার সন্তানদের উপর না পড়ে।
অর্ণব নূরকে জানায়নি সাবিলার হাসপাতালে আসার কথা।সে চায়না নূর হাইপার হোক;নিজের বিষাক্ত অতীতকে ভেবে কষ্ট পাক।
-“ভীষণ ভালোবাসি তোমায় নূরজাহান।সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে চলো,তোমার সংসার; #নূরজাহানের_সংসার তার মালিকের অপেক্ষায় আছে।”
ঘুমন্ত নূরের হাতটা ধরে বলে ওঠে অর্ণব।
ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারোটা।আশেপাশে প্রায় সবার ঘরের আলো নিভে গেছে।ব্যস্ত নগরীর জনজীবনে একটু হলেও নীরবতা দৃশ্যমান।
নূর আর অর্ণবের মেয়েদের বয়স আজ সাতদিন।কআকিকা করে আজ তাদের নাম রাখা হয়েছে,
নূরানী চৌধুরী আর অরণী চৌধুরী।
মেয়েদের খাইয়ে সবে ঘুম পাড়িয়েছেন নূর।অভ্র বিছানায় ঘুমুচ্ছে;মেয়েরা দোলনায়। অভ্রর গায়ে চাদরটা টেনে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বেলকনিতে গেল নূর। অরণী আর অভ্র কে ঘুম পাড়িয়ে বেলকনি তে এসে দাঁড়িয়ে ছিল অভ্র।
আকাশে আজ চিকন কাঁচির ন্যায় চাঁদ উঠেছে।অমাবস্যার পরের প্রথম চাঁদ সম্ভবত।আকাশ ভরা তাঁরা ও দৃশ্যমান।অর্ণব নিজের ঘরের খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের অপূর্ব দৃশ্য দেখছিলো।
হঠাৎ, নিজের প্রশস্ত বুকে দু’টো কোমল হাতের অস্তিত্ব পেয়ে ধ্যান ভাঙ্গল অর্ণবের। হাত দু’টোর মালিককে চিনতে বিন্দুমাত্র অসুবিধে হলোনা তার। নূরের হাত দু’টো নিজের হাতে আঁকড়ে ধরে অর্ণব বলে ওঠে,
-“নূরানী ঘুমিয়ে গেছে?”
-“হ্যাঁ।অবশেষে ঘুমিয়েছে আপনার কন্যা।”
অর্ণব নূরের হাত দু’টো টেনে সামনে আনে।নূর অর্ণবের কাছে এসে ঘনিষ্ঠতা বাড়ালো।অর্ণবও কাছে টেনে নিলো নূরকে।অর্ণব হঠাৎ করে নূরের চুলের বাঁধন উন্মুক্ত করে দিলো।মৃদুমন্দ বাতাসে উড়তে লাগলো নূরের কেশরাশি। অর্ণব দু’হাতের আঁজলায় নূরের মুখটা নিয়ে আলতো করে নূরের ঠোঁটে চুমু খেলো।নূর খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে অর্ণবের কাজে।
অর্ণব নূরকে ঝট করে কোলে তুলে নিয়ে বেলকনিতে রাখা কাউচে বসে পড়ে।নূর অর্ণবের গলা জড়িয়ে ধরে আছে। অর্ণব নূরের গলায় মুখ গুঁজে নূরের চুলের ঘ্রাণ নিতে থাকে আর ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিতে থাকে নূরের গলা। এক পর্যায়ে অর্ণব থেমে যায়,নূরের গলায় মুখ গুঁজেই বলে ওঠে,
-“ধন্যবাদ জাহান।এতো সুন্দর একটা পরিবার আমায় উপহার দেওয়ার জন্য,আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করার জন্য ধন্যবাদ। সর্বোপরি,আমার জীবনে আসার জন্য ধন্যবাদ জাহান।”
অর্ণবের “জাহান” নামে ডাকার কারণ নূরের কাছে স্পষ্ট। অর্ণব শুধু ওদের ঘনিষ্ঠ মূহুর্তেই নূরকে “জাহান” নামে ডাকে।
-“আপনাকেও ধন্যবাদ।আমাকে এতো সুন্দর একটা সংসার উপহার দেওয়ার জন্য।এই সংসারটাকে #নূরজাহানের_সংসার করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জনাব।”
অর্ণব মুখ তুলে তাকায় নূরের দিকে।
-“আজ ছাড়া পেয়ে গেলে জাহান।সুস্থ হয়ে গেলে রোজ তোমায় শাস্তি পেতে হবে।”
নূর অর্ণবের গালে টুপ করে একটা চুমু খায়। অত:পর বলে ওঠে,
-“রাজি আছি জনাব।আপকে লিয়ে জান ভি হাজির।”
অর্ণব আরো গভীরভাবে আলিঙ্গন করে নূরকে।নূর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে গেয়ে ওঠে,
নূরজাহানের সংসার পর্ব ১০
জীবনের পথে পথে চলিত
যত আশা গিয়েছিলো ফুরায়ে
জীবনের পথে পথে চলিতে
যত আশা গিয়েছিলো ফুরায়ে
গজমতি হার যেন ধূলিতে
ভিখারীনি পেলো আজ কুড়ায়ে
এ জীবনে যতটুকু চেয়েছি
মন বলে তারও বেশি পেয়েছি, পেয়েছি
নিশি রাত, বাঁকা চাঁদ আকাশে
চুপিচুপি বাঁশি বাজে বাতাসে, বাতাসে
নিশি রাত, বাঁকা চাঁদ আকাশে
চুপিচুপি বাঁশি বাজে বাতাসে, বাতাসে
নিশি রাত ||