হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ৩
তোয়া নিধী দোয়েল
গাঢ় নীল রঙের জামদানী শাড়ি পরে বিছানায়, দুই-পা ভাঁজ করে বসে আছে তুর্কি। এক ভ্রু উঁচু করে রাগে ফোঁসতে- ফোঁসতে হাতে ফোন নিয়ে একের পর এক কল করে যাচ্ছে মা কে। কিন্তু, ওপাশ থেকে কোনো রেস্পন্স করছে না।
সকাল বেলা এক মধ্যবয়স্ক নারী এসে, এই শাড়ি হাতে দিয়ে ওকে ফ্রেশ হতে বলেছে। আর এ-ও বলেছেন সম্পর্কে সে চাচি শাশুড়ী হোন। সাত সকালে ঘুম থেকে উঠার ফলে, ওর মেজাজ এমনি -তেই বিগড়ে আছে। তার মধ্যে আবার তাঁর মা ফোন ধরছে না। কেনো তাঁর মা তাকে এই কুয়ার মধ্যে ফেলেছে সেই জবাব ওর চাই। কিন্তু, সে তো বিন্দাস চলছে! ফোন ধরার নাম গন্ধ নেই।
-আগামীকাল থেকে ফজরের সময় উঠবে৷ নামাজ আদায় করে তারপর পড়তে বসবে। আমাদের বাড়িতে যে নামাজ আদায় না করে তাকে খেতে দেওয়া হয় না।
গম্ভীর কণ্ঠে উচ্চারিত কিছু বাক্য শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় তুর্কি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছে আদনান। এই লোক এই খানে কখন এলো? এতক্ষণ তো রুমে ছিলো না৷ আর রুমে যে আসলো পায়ের শব্দ ও পেলো না। তুর্কি কিঞ্চিৎ রাগ নিয়ে ঘাড় অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলে,
-আমি ফজর বাদে বাকি সব নামাজ আদায় করি। যদি আমাকে বেশি খারাপ লাগে তাহলে যেখান থেকে নিয়ে এসেছেন সেখানে দিয়ে আসুন।
ওই দিক থেকে কোনো উত্তর আসে না। কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তুর্কি আবার ও বলে,
-কথা কি আপনার কানে পৌঁছিয়েছে? যদি পৌঁছে থাকে তাহলে দয়া করে আমাকে দিয়ে আসুন। আমি আপনার সাথে কোনো দিন ও থাকতে পারবো না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-নেক্সট টাইম সকাল বেলা যেনো ফোন হাতে না দেখি।
আদনান টেবিলের উপর একটা প্যাড থেকে এক পেজ ছিঁড়ে এনে তুর্কির মুখের সামনে ধরে। তুর্কি ঘাড় উঁচু করে আদনানের মুখ দেখে। শান্ত কণ্ঠে আদনান বলে,
-এইটা তোমার ডেইলি রুটিন। আই -হোপ এইটার বাইরে তুমি কোনো কাজ করবে না।
তুর্কি আদনানের মুখ বরাবর হয়ে উঠে দাঁড়ায়। আদনানের হাতের কাগজ টা দুই আঙুলের সাহায্যে নিয়ে ছেড়ে দেয়। কাগজটা বাতাসে উড়তে উড়তে মেঝেতে পড়ে যায়। আদনান শান্ত ভাবে ঘাড় বাঁকা করে তাকিয়ে আছে। তুর্কি বুকে দুই হাত ভাঁজ করে ঠোঁটের হাসি প্রসস্থ করে বলে,
-আমি আগে কখনো কোনো রুটিন ফলো করি নি। আর বিয়ের পর তো অবশ্যই করবো না। সিংগেল লাইফে প্যারা বেশি বলে বিয়েটা করেছি। যাতে কোনো পড়াশোনা বা কোনো রুটিন ফলো করতে না হয়। যেহেতু আপনার সাথে আমার বনে না তাই, আমাকে অনুগ্রহ করে দিয়ে আসুন।
আদনান ওর কথা উপেক্ষা করে বলে,
-কাগজ টা ওঠাও।
তুর্কি বুকে হাত ভাঁজ করে অন্য দিকে তাকায়। যার অর্থ সে কাগজ টা উঠাবে না। আদনান ধীর পায়ে হেটে ওয়্যাড্রোবের দিকে যায়। শান্ত কণ্ঠে আবারো বলে,
-পিক আপ দ্যা পেপার।
-পারবো না। আপনার জিনিস আপনি উঠান।
আদনান ড্রয়ার থেকে পোশাক বের করতে করতে কিছু বলতে যাবে ; তখনি দরজায় নক করে একটা মেয়েলি কণ্ঠ স্বর ভেসে আসে।
-ভাবি…ভাবি তোমাকে চাচিয়াম্মু নিচে যেতে বলছি এখনি আসো।
তুর্কি দরজার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে জবাব দেয় – হ্যাঁ আসছি। তুমি ভেতরে আসো।
মোহনা ভেতরে এসে বলে,
-তুমি বের হও। আমি চাচ্চুর রুম থেকে ফোন নিয়ে আসছি।
মোহোনা চলে যেতে তুর্কি আদনানের দিকে এক পা এগিয়ে বলে,
-টাটা স্যার। আপনার কাজ আপনি করুন। গুড বাই।
-ভাবি তাড়াতাড়ি আসো তোমাকে নিচে যেতে বলছে।
মোহনা নামে মেয়েটা আবার এসেছে। তুর্কি আদনানের দিকে মুখ ভেঙিয়ে মোহনার দিকে চলে যায়।
– হ্যাঁ হ্যাঁ, চলো। তোমার ফোন নেওয়া শেষ?
মোহনা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে কিসের ফোন?
তুর্কি ভ্রু কুঁচকে বলে,
-মাত্রই তো বললে, আমাকে দাঁড়াতে তুমি তোমার চাচ্চুর ফোন আনতে গেলা?
মোহনা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
-আমি কখন আসলাম তোমার রুমে? মাত্র নিচ থেকে আসলাম। চাচিয়াম্মু আমাকে বললো তোমাকে ডাকতে।
তুর্কির মাথা ঘুরে যায়। মাত্রই তো মেয়েটা বললো,
হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ২
‘ওকে দাঁড়াতে। তাহলে। ও ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায় ততক্ষণে আদনান ওয়াশরুমে চলে গেছে।’
ওদিকে মোহনা তাড়া দেয়,
-আসো আসো তাড়াতাড়ি আসো। অনেক মানুষ এসেছে তোমাকে দেখতে।