হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ৩১

হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ৩১
তোয়া নিধী দোয়েল

পরম শান্তিতে বইয়ের উপর নিদ্রাচ্ছন্ন তুর্কি। আদনান ঘরে এসে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। এই মেয়েকে দিয়ে কথা শোনানো বড় কঠিন কার্য! এত কঠিন বলেই, ওর শাশুড়ী এত তাড়াতাড়ি বিয়েতে রাজি হয়ে ঝামেলা দূর করেছে। আল্লাহ্ জানে, বাকি জীবন কী ভাবে কাটবে!
আদনান ধীর পায়ে হেঁটে তুর্কির কাছে আসে। গালে একটা টোকা দিয়ে জাগ্রত করার চেষ্টা করে। কিন্তু, ফলাফল শূন্য। তুর্কি রানী বেশ আরাম করে ঘুমাচ্ছে। আদনান কয়েকবার ডাকার পর ও যখন কোনো সাড়া পেলো না; তখন পাশ থেকে গ্লাস নিয়ে গ্লাসের সম্পূর্ণ পানি ওর উপর ঢেলে দেয়।
চোখে মুখে পানি পড়তে, ধড়ফড় করে বইয়ের উপর থেকে মাথা তুলে, তুর্কি। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে এই অকাজ কে করেছে। যদিও এই রকম অকাজ ওর স্বামী ছাড়া আর কে-ই বা করবে? আদানানের দিকে চোখ পড়তে, আদনান ভ্রু নাচিয়ে বলে,

-পড়তে দিয়ে গেছিলাম।
তুর্কি চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-মুখে পানি না ঠেলে, সুন্দর করে একটা হাম্পি দিয়ে ও উঠাতে পারতেন। অসভ্যলোক।
আদনান ওর কথা গ্রাহ্য করে চেয়ার টেনে বসে বলে,
-পড়া বাদ দিয়ে ঘুমাচ্ছিলে কেনো?
তুর্কি অন্যদিকে ফিরে বলে,
-কই ঘুমাচ্ছিলাম? এইটাকে ঘুম বলে না স্যার। এইটা এক ধরেনের আকর্ষণ বল!
তুর্কির কথা শুনে কপাল সহ ভ্রুতে বেশ বড় ভাঁজ পড়ে আদনানের। এই মেয়ে এখন কোন লজিক দাঁড় করাবে কে জানে! ও মনে বেশ কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
-আকর্ষণ বল মানে?
তুর্কি ভাবলেশহীন হয়ে আদানানের দিকে তাকায়। যার অর্থ, এখন বেশ বড় করে একটা যুক্তিহীন কিছু দাঁড় করাবে! যা আদনানের অভিধানে নেই! ও গলা ঝেরে বলতে আরম্ভ করে,
-ফিজিক্স এর স্যার হয়ে ও আকর্ষণ বল বুঝেন না? আপনাকে চাকরি দিছে কে? নাকি ঘুষ দিয়ে, নকল-টকল করে সব করেছেন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদনান কোনো উত্তর দেয় না। ঘাড় বাঁকা করে শুধু ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। তুর্কি আবার বলতে শুরু করে,
-আপনি দেখছেন আমি বইয়ের উপর ঘুমাচ্ছি। কিন্তু না। আমি ঘুমাচ্ছিলাম না। এইটা হচ্ছে এক ধরনের আকর্ষণ বল। যা, বই খুললে বই আপনাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করবে। আদর করে ঘুম পারাবে। কারণ, এরা দু’জন-দু’জনকে ভীষণ ভালোবাসে। সবাই তো আর আপনার মত নিরামিষাশী না!
শেষ কথাটি বলে মুখ ফিরিয়ে নেয় তুর্কি। আদনান ওর লজিক শুনে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। পরক্ষণেই বাহবা দিয়ে বলে,
-অসাধারণ! তোমার তো বিজ্ঞানী হওয়া দরকার ছিলো।
তুর্কি আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
-কী ভাবে হবো? বাড়িতে কোনো আপেল গাছ আছে ? আপেল গাছ থাকলে দেখিয়ে দিতাম। নিউটন আর কত বড় বিজ্ঞানী; আমি তাঁর থেকে আরও বড় বিজ্ঞানী। শুধু একটা আপেল গাছের অভাব!
আদনান ঘাড় কাত করে বলে,

-তো একটা আপেল গাছ এনে দেই?
তুর্কি চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-বাহ্! আমার এই কথা টা তো খুব সহজে বুঝে গেলেন। অথচ, কত বার যে বোঝানোর চেষ্টা করি আমার লেখা-পড়া ভালো লাগে না। আমার লেখা-পড়া বাদ দিয়ে দিন। কই সেটা তো আপনার কানে যায় না?
-তো লেখা-পড়া না করে কী করবে?
তুর্কি চেয়ার একটু টেনে বসে বলে,
-এইতো লাইনে এসেছেন। মানুষের বিয়ে হয়ে গেলে কী করে? ঘর- সংসার সামলায়। স্বামী সেবা করে। বাচ্চা-কাচ্চা লালন পালন করে। আমি ও তাই করতে চাই।
বাচ্চা-কাচ্চাকে লেখা-পড়া শেখানোর বয়সে; বউকে শিখাছেন? এইটা কোন ধরনে অবিচার, স্যার? নিজের বাচ্চা-কাচ্চার প্রতি একটু এডভান্স হোন। তাঁরা যে পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছে, সেই দিকে একটু খেয়াল করুন।
আদনান বরাবরের মত তুর্কির নাকে টোকা দিয়ে বলে,

-কারণ, আমার বউ নিজেই বাচ্চা! (হাতের ইশারায়) এই যে এই রকম ছোট বাচ্চা। যদি সেই-ই ভালো মত পড়া-লেখা না শিখে ; তাহলে আমার বাচ্চা-কাচ্চাদের কীভাবে শিখাবে?
আদনানের কথা তুর্কি চিকন ভ্রু যুগল কুঁচকে যায়। ও ছোট বাচ্চা! রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
-তো নিজে বুড়ো ষাঁড় হয়ে, বাছুর-কে কেনো বিয়ে করেছেন? লজ্জা লাগে না? অসভ্য লোক।
আদনান তুর্কির কথা উপেক্ষা করে বলে,
-সময় হলে ওরা চলে আসবে। তোমার এত চিন্তা করতে হবে না। পরীক্ষায় কী ভাবে পাশ করবে সেটা নিয়ে চিন্তা করো।

তুর্কি আদনানের দিকে মুখ এগিয়ে বলে,
-মুখ মুছে দেন। তারপর বসবো।
আদনান পাশ থেকে টাওয়েল নিয়ে ওর হাতে দেয়।
-নেও মুছো।
তুর্কি ফের আদনানের হাতে দিয়ে বলে,
-আপনি পানি দিয়েছেন। আপনি মুছে দিবেন। তা না হলে, আপনার কোনো কথা আমি শুনবো না।
আদনান পাশ ফিরে শ্বাস ছেড়ে, ওর দিকে তাকায়। তুর্কি বেশ আগ্রহ নিয়ে মুখ বাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ও ভালো ভাবেই জানে, এই মেয়ের কথা না শুনলে, এই মেয়ে ও-ওর কোনো কথা শুনবে না। তাই ও টাওয়েল নিয়ে তুর্কির চাঁদবদন খানি মুছে দেয়। মুছা শেষ হলে দু’জন দু’জনের দিকে তাকায়। দৃষ্টি সংযোগ হলে তুর্কি বাম চোখ মারে। ঠোঁটে শয়তানি হাসি নিয়ে বলে,
-আই লাভ ইউ, স্যার।

আদনান ওর চোখ মারা দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। ওর নাকে টোকা দিয়ে বলে,
– কাহিনী করা শেষ হলে; চুপ চাপ পড়তে বসো।
তুর্কি নাকে টোকা খেয়ে চোখ মুখ খিঁচে আদনানের দিকে তাকায়। কটমট করতে করতে বলে,
-যেটা বলেছি তার উত্তর দিন।
-আমার মুখ ব্যথা!
তুর্কি রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
-আমাদের একটা বাবু হলে নাম রাখবো ‘আই লাভ ইউ টু’। যা-তে সব সময় উঠতে- বসতে আমাকে ‘আই লাভ ইউ টু এর আম্মু ডাকতে পারেন। তখন দেখবো আপনার এত অজুহাত কই থাকে।
আদনান কিছু বলার আগেই; তুর্কি চেয়ার ছেড়ে মুখ বাঁকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। কোন পাপের জন্য যে এই নিরামিষাশী লোক কপালে জুটেছিলো আল্লাহ্ জানে!

বিরক্ত মুখে বিছানায় শুয়ে আছে রেজুয়ান। উপমা তখন মুখের উপর কল কেটে দেওয়ার পর আর কল ধরার নাম-ই নেই। কাঠগোলাপ কী মনে করছে; ও কল কেটে দিয়েছে বলে ও-ওর পিছু ছেড়ে দিবে? বোকা মেয়ে! শুধু পায়ে ব্যথা না থাকলে এক্ষুণি চলে যেতো বাড়িতে। ওর হৃদয়ে ব্যথা উপলব্ধি করা না পর্যন্ত ওর নিস্তার নেই।
দরজা ঢেলে ঘরে ঢুকে মুজাহিদ। হাতে চায়ের ট্রে। তাতে চার-টা কাপ। রেজুয়ানের দিকে আসতে আসতে বলে,
-কি-রে বাচ্চা। পায়ের অবস্থা কেমন?
ব্যথিতা স্বরে রেজুয়ান বলে,
-বাপের ভাই, কাঠগোলাপ কল ধরছে না।
মুজাহিদ ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে টেবিলের উপর দুইটা কাপ রাখতে রাখতে বলে,

-বাকি দুই কাপ আদনানের ঘরে দিয়ে আসছি।
-কী করবো সেটা বলো।
মুজাহিদ উল্টো ঘুরে বলে,
-কচু গাছের সাথে ফাঁসি দিয়ে মর। তা না হলে ছাদ থেকে লাফ দে।
-বাপের ভাই, এই জন্যই তোমার কপালে বউ জুটে না। ভালো একটা প্ল্যান দিতে বলি, ও আমারে মরার প্ল্যান দেয়।
মুজাহিদ দরজার কাছে গিয়ে বলে,
-আমার কপাল নিয়ে এখন ভাবা বাদ দে। তোর কপালে কী ভাবে জুটাবি সেটা ভাব!
-তো, তুমি একটু প্ল্যান দেও।
ওপাশ থেকে আর কোনো উত্তর আসে না। রেজুয়ান বিরক্তিতে অন্য দিকে মুখ ফেরায়। কেনো যে ও-কেউ বুঝে না!

তুর্কি বেসিন এর সামনে দাঁড়িয়ে একবার ট্যাপ চালু করছে তো; একবার বন্ধ করছে। ভীষণ মনোযোগ দিয়ে পানির খেলা দেখছে; আর ভাবছে কী করবে। পরীক্ষায় কী ভাবে পাশ করা যায়। আর তার চেয়ে ও বড় কথা, ওর নিরামিষাশী জামাই টাকে কী ভাবে আমিষে পরিণত করা যায়।
ও চোখ তুলে আয়নার দিকে তাকায়। মুখ ডানে বামে ঘুরিয়ে নিজেক পরখ করে। আপন মনে বিড়বিড় করে
-ও এত সুন্দর। তাহলে ওর জামাইটা ঐ রকম খাটাশ কেন! অসভ্য একটা লোক।
কই সব সময় বউ-য়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়াবে। তা-না। সব সময় গিরগিটির মত রং বদলায়। এক-এক সময় এক-এক ঢং করে। অসহ্য একটা লোক।

ও হাত বাড়িয়ে শ্যাম্পুর বোতল নেয়। হাতে ঢালতে গিয়ে কিছু পরিমাণ শ্যাম্পু মেঝেতে ও পড়ে। ও মুখ আটকিয়ে জায়গা মত রেখে, পানি দিয়ে ফেনা তৈরী করে। আয়নার দিকে তাকিয়ে ফুঁ দিয়ে ছিঁটিয়ে দেয়।
অনেকক্ষণ ভাবা-ভাবির পর ও যখন কোনো উপায় পেলো না৷ তাই ভণ্ডামি বাদ দিয়ে হাত ধুয়ে বাইরে বের হওয়ার জন্য অগ্রসর হয়। অনেকক্ষণ যাবৎ ওয়াশরুমে আসা হয়েছে। যখন কোনো উপায় বের করাই গেলো না তাহলে কী লাভ এখানে থেকে। এর থেকে ভালো ওই অসভ্য লোকটাকে দেখা।
তুর্কি ঘুরে দাঁড়ায় ওয়াশরুমের দরজা খোলার জন্য। দরজা খুলে যেই না বের হতে যাবে, সেই মূহুর্তে শ্যাম্পুতে পা পিছলে ধপাস্ করে ফ্লোরে পড়ে যায়! হাত বাড়িয়ে যে কিছু ধরবে তার ও সময় হয়নি। চোখের পলকে যেনো ঘটনাটা ঘটে গেলো! ও চোখ মুখ খিঁচে জোর গলায় ডাকে,

– স্যার…।
আদনান সেই জায়গাতে বসেই তুর্কির জন্য অপেক্ষা করছিলো। ওয়াশরুম থেকে তুর্কির শব্দ শুনে ছুটে যায় সেই দিকে।
তুর্কি কোমড়ে হাত দিয়ে মেঝেতে বসে আছে। পায়ে ও আঘাত লেগেছে। তবে, কোমড়ে বেশি জোরে লেগেছে। আদনান ছুটে এসে ওয়াশরুমে ঢুকে। তুর্কিকে ওই ভাবে পড়ে থাকতে দেখে অস্থির কণ্ঠে বলে,
-বেগম সাহেবা।
তুর্কি কিঞ্চিৎ ভেজা কণ্ঠে বলে,
– স্যার, আর বোধহয় বাঁচবো না। উঁহু…ভীষণ ব্যথা করছে কোমড়। আল্লাহ্! বাঁচাও!
আদনান ওর দিকে হাত বাড়িয়ে বাহু চেপে তুলতে যায়।
-পড়লে কী ভাবে? দেখি আমার হাত ধরে উঠার চেষ্টা করো।

তুর্কি চোখ খুলে এক ঝটকায় আদনানের হাত সরিয়ে দেয়। রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
-হাত ধরে উঠবো মানে? কোলে তুলতে পারেন না? সব কি শিখিয়ে দিতে হয়? বউ পড়ে গেছে। কোমড়ে, পায়ে আঘাত পেয়েছে। কই কোলে তুলে নিয়ে যাবেন। তা না করে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন! ফালতু লোক।
আদনান হতাশ দৃষ্টি মেলে ওর দিকে তাকায়। এই সময় এসে ও যে মেয়েটা এই ধরণের কথা বলতে পারে, তা ওর জানা ছিলো না। তুর্কি আগের স্বর বজায় রেখে আবার বলে,
-হাঁ করে তাকিয়ে আছেন কেনো? কোলে তুলে নিন। অসভ্য লোক।
আদনান দুই হাত বাড়িয়ে তুর্কিকে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। তুর্কি দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে আদনানের গলা। আদনান রুমের দিকে পা বাড়িয়ে বলে,

-এক্সিডেন্ট? নাকি ইচ্ছে করে পড়েছো?
তুর্কি কপালে ভাঁজ ফেলে বলে,
-ইচ্ছে করে কেউ নিজের কোমড়ে, পায়ে ব্যথা পেতে যাবে?
আদনান বিছানার দিকে যেতে যেতে বলে,
-তুমি পারো না এমন কোনো কাজ পৃথিবীতে নেই। কে জানে, হয়তো পরিক্ষা দেওয়ার ভয়ে নিজের পায়ে, কোমড়ে আঘাত বানালে।
তুর্কি মুখ বাঁকিয়ে বলে,
-ফিজিক্স পড়তে পড়তে আপনার মাথায় শর্ট সার্কিট হয়েছে স্যার। কয়েক দিন পর তো পাগল হয়ে যাবেন।
-যে পাগল কপালে জুটেছে। দু-দিন পর এমনিতেই পাবনায় সিট বুকিং করতে হবে।
আদনান ওকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। ও পা তুলে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আদনান আরেকটা বালিস এনে ওর পায়ের নিচে দেয়। পা ব্যথায় টনটন করছে। সাথে কোমড়ের ও।
আদনান কোমড়ে, পায়ে ধরার জন্য বরফ আনতে চলে যায়। যাওয়ার পথে মুজাহিদের সাথে দেখা হয়। মুজাহিদ চায়ের কাপ দিতে গেলে আদনান অস্থির কণ্ঠে বলে

-বাপের ভাই, দ্রুত বরফ নিয়ে আসো। ও পায়ে ব্যথা পেয়েছে। তাড়াতাড়ি যাও।
-হায় হায় কী ভাবে?
-উফ্ কথা বলো না তো। যাও আগে। পরে বলবো।
তুর্কি কে তুলতে গিয়ে হাতে কিঞ্চিৎ চাপ পড়েছে। সকালে তুর্কির জোরাজুরিতে ডাক্তার দেখাতে হয়েছে। ব্যান্ডেজ করা হাত কিঞ্চিৎ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। বোধহয় চাপ লেগে রক্ত বের হয়েছে। তবে, তাতে ওর কোনো খেয়াল নেই। ও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মুজাহিদ এর জন্য। বাপের ভাইটা আসছে না কেনো?
মুজাহিদ বরফ পায়নি। তাই, জমা দুধের বোতল নিয়ে এসেছে। আদনান সেটাকে টাওয়েল দিয়ে প্যাঁচিয়ে তুর্কির কাছে দেয়; কোমড়ে ধরার জন্য।
-নেও এটা কোমড়ে ধরো।
তুর্কি ভ্রু কুঁচকে গজগজ করতে করতে বলে,

-আপনি একটু ধরে দিতে পারেন না? দেখেন না আমি ব্যথায় নড়তে পারছি না?
-বকবক তো ঠিকই করতে পারছো। এইটা তো বন্ধ হয় না।
-মুখে তো আর ব্যথা পাই-নি।
আদনান আর কিছু না বলে; চেয়ার টেনে বসে। তুর্কি এক পাশ ফিরে শোয়। আদনান ওর কোমড়ে বোতল চেপে ধরে।
তুর্কি নিজের কাজের প্রতি ভীষণ রাগ হয়। কী দরকার ছিলো তখন শ্যাম্পু নিয়ে ওই রকম করার। তা না হলে তো আর ব্যথা পেতো না। ও ব্যথিত স্বরে বলে,
– স্যার, আর বোধহয় বাঁচবো না। ভীষণ ব্যথা করছে কোমড়। আমি মারা গেলে কিন্তু, খবরদার বিয়ে করবেন না। তাহলে আপনার খবর আছে।
আদনান ওর দিকে হতাশ দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। ব্যথা পেয়েছে সেই দিকে খেয়াল নেই। অথচ ও মারা গেলে কী হবে তাই ভাবছে। হায় আল্লাহ্!

-এই টুকু আঘাতে কেউ মরে?
-চুপ থাকুন। আমি যা বলছি তাই শুনুন। যদি আমার কিছু হয়। আপনি শোকে পাগল হয়ে যাবেন। বনবাসী হয়ে যাবেন। দেশান্তরী হয়ে যাবেন। কিন্তু, খবরদার বিয়ে করবেন না।
-করবো না মানে? অবশ্যই করবো! কিন্তু, এবার আর তোমার মত চঞ্চল কাউকে না। শান্ত-শিষ্ট ভদ্র কাউকে করবো। যে আমার কথা শুনবে।
আদনানের কথা শুনে তুর্কি রাগের মাত্রা আকাশ ছোঁয়। ও ঘাড় ঘুরিয়ে আদনানের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
-কী বললেন…?
পাশ ঘুরতে গিয়ে কোমড়ে সজোরে টান লাগে। ও ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে,
-আ আ আ আ। মা-গো মরে গেলাম।
আদনান ঠোঁটে চাপা হাসি রেখে বলে,

হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ৩০

-কথা না বলে চুপ চাপ শুয়ে থাকো। দেখেছো তো আমার কথা না শুনলে কি হয়? কি ভাবে ব্যথাটা পেলে?
তুর্কি, আদনানের মৃদু হাসি দেখতে পেয়ে আরও কয়েক দফা চেতে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-খুব ভালো লাগছে; আমাকে এই ভাবে দেখে? হাসি পাচ্ছে খুব? একবার ভালো হয়ে নেই। আপনার এক দিন কি আমার এক দিন। আমি মরে গেলে বিয়ে করবেন! খুব ভদ্র মেয়ে বিয়ে করবেন? করাচ্ছি বিয়ে। অসভ্য লোক।
-আপাতত আগে সুস্থ হও। পরে আমার ব্যবস্থা করো।

হৃদয়ের সঙ্গোপনে পর্ব ৩২