মহাপ্রয়াণ পর্ব ৪৭+৪৮

মহাপ্রয়াণ পর্ব ৪৭+৪৮
নাফিসা তাবাসসুম খান

ড্রাগোসের ক্রুর হাসির মাঝেই তাকে অবাক করে দিয়ে রিকার্ডো কক্ষ কাপিয়ে হেসে উঠে। রিকার্ডোর এমন প্রতিক্রিয়ায় ড্রাগোস চমকায়৷ এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না। তাহলে রিকার্ডো হাসছে কেন? রিকার্ডো হাসতে হাসতে স্বাভাবিক ভাবে উঠে দাঁড়ায়। ড্রাগোস এখনো ভ্রু কুচকে ক্রুশ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। রিকার্ডো রসিকতা করে বলে উঠে,

” ওই মূর্খ নির্বোধ জ্যাকসন আর ড্যানিয়েলের কথায় তুই আমাকে মারার সাহস করে বসলি? যাদের কিনা নিজেরই আমার সামনে আসার সাহস নেই? তুইও তো আরেক নির্বোধ। আমার সমাধি দিবি তুই? রিকার্ডোর? ”
ড্রাগোস বুঝতে পারছে না রিকার্ডো এতো স্বাভাবিক কিভাবে আছে। ক্রুশের কোনো প্রভাব কেন পড়ছে না তার উপর। রিকার্ডো নিজেই আবার বলে উঠে,
” আমাকে মারার জন্য এতো দূর্বল প্রস্তুতি? শত্রুর নাড়ি নক্ষত্র না মেপেই তাকে মারার পরিকল্পনা করা উচিত নয়। আর কি দিয়ে মারবি আমাকে? এই ক্রুশ দিয়ে? মূর্খ ড্রাগোস। এই বুদ্ধি নিয়ে তুই সাম্রাজ্য পরিচালনা করার স্বপ্ন দেখিস? তোর তো এক সামান্য লঙ্গরখানা পরিচালনা করার যোগ্যতাও নেই। ”
ড্রাগোস হিংস্র দৃষ্টিতে তাকায়। চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” এই ক্রুশের কোনো প্রভাব কাজ করছে না কেন তোর উপর? ”
রিকার্ডো হুংকার দিয়ে উঠে।
” জিভ কেটে নেড়ি কুকুরকে খাওয়াবো তোর। সম্মান দিয়ে কথা বলতে শিখ। তোর সামনে প্রিন্স রিকার্ডো আলবার্ট দাঁড়িয়ে আছে। কোনো দাস নয় তোর মতো। ”
ড্রাগোস হাত থেকে ক্রুশটা ছুড়ে ফেলে তলোয়ার হাতে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
” তোর এতো বড় স্পর্ধা তুই আমাকে দাস বলিস? ”
রিকার্ডো বাতাসের গতিতে সেখান থেকে সরে গিয়ে ড্রাগোসের হাত থেকে তলোয়ার নিয়ে নেয়। পিছন থেকে সেই তলোয়ার ড্রাগোসের গলার উপর ধরে বলে উঠে,

” হ্যাঁ। দাসই তুই৷ আলবার্টদের দাস ছিলি তোরা এখনও আছিস। খালি সুযোগ বুঝে সিংহাসন হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলি যার তোরা কোনো কালেই যোগ্য ছিলি না। কিন্তু এখন আমি এসে পড়েছি। আর এই সাম্রাজ্য দাসদের হাতে ছেড়ে দিবো না আমি। আর না তোকে এই কক্ষে মারবো। আমি চাইনা তোর নোংরা রক্তে আমার মা বাবার কক্ষ দূষিত হোক। ”
এই বলেই ড্রাগোসের গলায় তলোয়ার রেখেই তাকে নিয়ে কক্ষ ছেড়ে বের হয় রিকার্ডো। কিন্তু কক্ষ থেকে বের হতেই দেখে লম্বা করিডোর জুড়ে একশোর ও অধিক সেনা তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ড্রাগোসের মুখে হাসি ফুটে উঠে। সে আদেশের সুরে বলে উঠে,
” যে এই পিশাচের কল্লা কেটে আমার হাতে দিতে পারবে তাকে আমার তরফ থেকে দশ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা দেওয়া হবে। ”

ড্রাগোসের কথা শুনে রিকার্ডো অবজ্ঞার হাসি হাসে। সৈন্যরা দৌঁড়ে তলোয়ার হাতে রিকার্ডোর দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই রিকার্ডো সাথে সাথে ঘুরে এক দেয়ালের সাথে ড্রাগোসকে চেপে ধরে। নিজের কালো ক্লকের ভেতর হতে দুটি ধারালো লম্বা পেরেক বের করে ড্রাগোসের দুই হাতের তালু দেয়ালের সাথে পেরেক দ্বারা গেঁথে দেয়। বিষয়টা এতো দ্রুত ঘটে যে ড্রাগোস সড়ে যাওয়ার সুযোগটুকুও পায়না। পেরেক গাথার সাথে সাথেই ড্রাগোস প্রাসাদ কাপিয়ে আর্তনাদ করে উঠে। চেষ্টা করতে থাকে নিজের হাত পেরেক থেকে ছুটানোর কিন্তু উল্টো আরো বেশি ব্যথায় চিৎকার করে উঠে।

রিকার্ডো ড্রাগোসকে ওই অবস্থায় রেখেই সাথে সাথে হাতে তলোয়ার তুলে সামনের দিকে তাকায়। দু হাতে তলোয়ার শক্ত করে ধরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় সামনের দিকে। সৈন্যরা তার কাছাকাছি আসতেই রিকার্ডো তলোয়ার চালানো শুরু করে। মুহুর্তেই সুসজ্জিত করিডোর রক্তের বন্যায় ভেসে যায়। দেয়ালে লেপ্টে আছে তাজা রক্ত। রিকার্ডোকে মারতে আসা সকল সৈন্যের দেহ মেঝেতে পড়ে আছে। রিকার্ডোর চোখে মুখে লেপ্টে আছে রক্ত। সে মেঝেতে এক হাঁটুর উপর এবং তলোয়ারের হাতল ধরে ভর দিয়ে বসে মাথা ঝুকিয়ে ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। এইমাত্র সে ভ্যাম্পায়ারদের কাউন্ট হিসেবে নয় একজন আলবার্ট প্রিন্স হিসেবে লড়েছে। শত্রু নিধনের জন্য নিজের ভ্যাম্পায়ারের শক্তি নয় বরং তলোয়ার ব্যবহার করেছে।

রিকার্ডোর ভাবনার মাঝেই কারো আর্তনাদের শব্দে মাথা তুলে সামনে তাকায়। তার থেকে কিছু হাত দূরেই তার সামনে বেঞ্জামিনের নিথর দেহ মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। তার হাতে তীর ছিলো। কপালের মাঝ বরাবর একটা কুড়াল এখনো গেঁথে আছে। রিকার্ডো ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। অবাক নয়নে সে ম্যাথিউকে দেখতে থাকে। ম্যাথিউ রিকার্ডোর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে পথিমধ্যে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার পাশে দেয়ালে আর্তনাদরত ড্রাগোসের হাতে দুটি ছুড়ি শরীরের সমস্ত শক্তিতে গেঁথে দেয়। তারপর আবার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হেঁটে রিকার্ডোর দিকে এগিয়ে আসে। ড্রাগোস যন্ত্রণায় আহাজারি করতে থাকে। তার কাছে মনে হচ্ছে মৃত্যু যন্ত্রণাও এর চাইতে অধিক সহজ।
ম্যাথিউ কাছে আসতেই রিকার্ডো বলে উঠে,

” ম্যাথিউ তুই? ”
ম্যাথিউ ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বলে,
” আসার সময় আমাকে বললেই পারতে। আমার জন্য আর কোনো বিনোদন বাকি রইলো না। নিজে একাই সব মেরে শেষ করে দিলে। ”
রিকার্ডো এখনো অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে প্রশ্ন করে,
” তুই এখানে কিভাবে? ”
ম্যাথিউর মনে পড়ে যায় বিকাল বেলা জোসেফের হাতে আনাস্তাসিয়ার তাকে পাঠানো চিঠি। যেই চিঠিতে আনাস্তাসিয়া তাকে সব সত্যিটা জানিয়েছে। রিকার্ডো আসল পরিচয় হতে শুরু করে ড্যানিয়েলের উদ্দেশ্য সহ সব কিছুই। চিঠির শেষে আনাস্তাসিয়া লিখেছিলো,

” আমি জানি ম্যাথিউ তোমার সবার প্রতি অনেক অভিযোগ। কিন্তু যা হারিয়েছো তা নিয়ে পড়ে থাকলে যা আছে তা ও হারাবে তুমি। তুমি জানো তুমি কতটা ভাগ্যবান? তোমার কাছে ভাই আছে যে তোমাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে। হয়তো কখনো প্রকাশ করেনা তোমার সামনে কিন্তু সে বাসে। আর আমি বিশ্বাস করি কোথাও না কোথাও তুমিও তোমার ভাইকে ভালোবাসো। তাই ঈশ্বরের খাতিরে ড্যানিয়েলের এই উদ্দেশ্য সফল হতে দিও না। রিকার্ডোর তোমাকে প্রয়োজন। নিজের ভাইকে শত্রুদের কাছে একা ছেড়ে দিও না। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তোমাদের মাঝে আত্মার সম্পর্ক আছে। সেই সম্পর্কের দোহাই লাগে ম্যাথিউ তুমি তোমার ভাইয়ের কাছে যত দ্রুত সম্ভব গিয়ে পৌঁছাও৷ এই ক্ষমতার খেলায় তুমি যতটা নিষ্পাপ রিকার্ডোও ঠিক ততটা। তাই ওকে আর ভুল বুঝো না। আমার বিশ্বাসের দাম রেখো। ”

রিকার্ডোর ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে ম্যাথিউ। জবাব দেয়,
” আমি সব জেনে গিয়েছি। কিভাবে জেনেছি সেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ নয় এই মুহুর্তে। ভাইয়ের বিপদে ভাই এগিয়ে আসবে না তো কে আসবে? ”
রিকার্ডোর ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসির রেখা ফুটে উঠে। সে এগিয়ে এসে ম্যাথিউকে জড়িয়ে ধরে। এতো বছরে প্রথমবার দুই ভাই একে অপরকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে। ম্যাথিউর বুকে প্রশান্তিময় অনুভূতি হয়। এতো বছরের ঘৃণা তাকে এই শান্তি এনে দিতে পারে নি কখনো। ম্যাথিউ অস্পষ্ট স্বরে বলে,
” ভাই। ”

রিকার্ডো আবেগী হয়ে পড়ে। তার ঈশ্বরের কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই। ঈশ্বর তার থেকে যতটুকু কেড়ে নিয়েছিলো তা দ্বিগুন করে ফিরিয়ে দিচ্ছে যেন। ম্যাথিউ রিকার্ডোকে ছেড়ে ঢং করে বলে উঠে,
” ইশ! ছাড়ো আমাকে। মেয়েদের মতো এভাবে জড়িয়ে ধরেছো মনে হচ্ছিলো একটু পরে আমাকে চুমু খেয়ে বসবে। এসব করলে আমার কোনো ভাইয়ের প্রয়োজন নেই। ”
ম্যাথিউর কথা শুনে রিকার্ডো হেসে ফেলে। পিছন হতে এখনো ড্রাগোসের চিল্লাচিল্লির শব্দ ভেসে আসছে। ম্যাথিউ বিরক্তির সুরে বলে উঠে,
” এই ছাগল এরকম গরুর মতো চেঁচাচ্ছে কেন? ”
রিকার্ডো হেসে বলে,
” তুই এইমাত্র ওর হাতে ছুড়ি গেঁথে এসেছিস। ”
ম্যাথিউ বলে,

” ভুল করে ফেলেছি আমি। আমার উচিত ছিলো এই সাদা মহিষের মুখ সেলাই করে আসা। ”
তাদের কথার মাঝেই সিঁড়ি বেয়ে আরো অসংখ্য সৈন্য তলোয়ার হাতে তাদের দিকে দৌড়ে আসা শুরু করে। রিকার্ডো হেসে ম্যাথিউর দিকে তাকিয়ে বলে,
” বিনোদন তো কেবল শুরু। ”
এটা বলেই শক্ত করে রিকার্ডো নিজের হাতের তলোয়ার ধরে। ম্যাথিউও হেসে সাথে সাথে নিজের সূচালো দাঁত দুটি বের করে সামনের দিকে তাকায়।

বাসকোভ প্রাসাদে যখন আনাস্তাসিয়া পৌঁছায় তখন প্রায় মধ্য রাত। তাই সে আর ঘুমন্ত ক্যাথরিনকে বিরক্ত করে নি। চুপচাপ নিজের কক্ষে এসে শুয়ে পড়ে সে। মনে মনে ভাবছে কি এতো গুরুত্বপূর্ণ কথা যে ক্যাথরিন তাকে এভাবে ডেকে পাঠালো। সন্ধ্যায় যখন ফিটনসহ দুইজন প্রহরী আনাস্তাসিয়াকে নিতে আসে তখন প্রথমে আনাস্তাসিয়া ভয় পেয়ে যায় ক্যাথরিনের কিছু হলো নাকি ভেবে। কিন্তু পরে প্রহরীরা তাকে নিশ্চিত করে এরকম কিছুই না৷ ভাগ্যিস তখন জোসেফ দূর্গে ছিলো। নাহলে জোসেফ প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে বসতো। তাই আনাস্তাসিয়া তাড়াতাড়ি জোয়ান্দ্রাকে কিছু একটা বুঝ দিয়ে প্রহরীদের সাথে ফিটনে করে রওনা দেয়।

রাত যত গভীর হচ্ছে আনাস্তাসিয়ার ততই অস্থির লাগছে৷ উঠে বসে সে। ঘুম আসছে না। বাধ্য হয়ে কক্ষ ছেড়ে বের হয় সে। প্রাসাদের ভেতর দম বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কোনো সাপ তার সারা শরীর শক্ত করে পেচিয়ে ধরে রেখেছে। আনাস্তাসিয়া প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে আঙ্গিনায় আসে। প্রাণ খুলে কয়েকবার নিঃশ্বাস নেয়। হঠাৎ এমন হচ্ছে কেন বুঝতে পারছে না। রিকার্ডোর কথা মনে পড়ছে। ম্যাথিউ সেই চিঠি পড়ে পৌঁছেছে তো? রিকার্ডো ঠিক আছে তো?
এসব ভাবনার মাঝে তার পাশে এসে দাঁড়ানো আরোণকে এতক্ষণ খেয়াল করেনি আনাস্তাসিয়া। আরোণ গলা খাকড়ি দিয়ে উঠতেই আনাস্তাসিয়া হকচকিয়ে পাশে তাকায়। আরোণকে দেখে বলে উঠে,

” ভাই আপনি এখানে? ”
” তুমি এতো রাতে না ঘুমিয়ে এখানে কি করছো? ”
” ঘুম আসছিলো না। ”
” কোনো সমস্যা? রিকার্ডো জড়িত কিছু? ”
আনাস্তাসিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে আরোণের দিকে। আরোণ আবার প্রশ্ন করে,
” কি হয়েছে অ্যানা? ”
” রিকার্ডোও আমাকে ভালোবাসে। ও স্বীকার করেছে। ”
বেশ অবাক হয় আরোণ। তার বিশ্বাস হয়না রিকার্ডোও ভালোবাসতে পারে। কিন্তু এটা অসম্ভব কিছু নয়। সে নিজেও আজ ভালোবাসায় বিশ্বাসী। আরোণ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,

” এটা তো ভালো খবর। তোমার তো খুশি হওয়া উচিত। কিন্তু চিন্তিত কেন? ”
আনাস্তাসিয়া কোনো উত্তর দেয় না। সে বুঝে উঠতে পারছে না আরোণকে কতটুকু জানানো ঠিক হবে আর কি না বলা উচিত। আনাস্তাসিয়াকে চুপ থাকতে দেখে আরোণ বলে উঠে,
” যখন তোমার মনে হবে তুমি আমাকে জানাতে পারবে তখন জানিয়ে দিও। এখন কক্ষে ফিরে যাও। রাতে একা একা বাহিরে বের হবে না।”
আনাস্তাসিয়া মাথা নেড়ে প্রাসাদে চলে যায়। আরোণ বাহিরে দাঁড়িয়ে চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিজেও প্রাসাদের ভেতর চলে যায়।

করিডোর জুড়ে রক্তের বন্যা বয়ে আছে। দুইশোর অধিক লাশ পড়ে আছে মেঝেতে। যেন লাশের স্তুপ। ড্রাগোসের সামনে বরাবর দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে আছে রিকার্ডো আর ম্যাথিউ৷ ঠোঁটের কোণে তাদের ক্রুর হাসি। এতো মানুষ মারার পরও তাদের চেহারায় ক্লান্তির ছাপ নেই। ড্রাগোস এখনো চেঁচামেচি করেই যাচ্ছে। ম্যাথিউ বিরক্তির সুরে বলে উঠে,

” এই মহিষকে কি তুমি মারবে নাকি আমি? ”
” উহু ম্যাথিউ। এই মূর্খ আমার শিকার। একে আমিই মারবো। ”
” তাহলে অপেক্ষা কিসের? এক কামড়ে এর সব রক্ত শুষে গর্দান থেকে মাথা ফেলে দাও। ”
এতটুকু শুনে ড্রাগোস বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে। এই মুহুর্তে তার মধ্যে খুব ভয় কাজ করছে। সে আর যাই হোক রিকার্ডোর হাতে মরতে চায় না। রিকার্ডো নিশ্চয়ই তাকে কোনো সহজ মৃত্যু দিবে না। রিকার্ডোর কণ্ঠ শুনে ওর স্তম্ভিত ফিরে আসে। রিকার্ডো বলে উঠে,
” ওর আর্তনাদ শুনে শান্তি পাচ্ছি। আরেকটু শুনে নেই। ”
ম্যাথিউ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
” এই বিষয় তুমি আগে বলবে না? ”

এটুকু বলে ম্যাথিউ ড্রাগোসের দিকে এগিয়ে যায়। ড্রাগোসের অনুনয় অগ্রাহ্য করে তার গলায় ছুড়ি ধরে। সাথে সাথে ড্রাগোসের আত্মা উড়ে যাওয়ার উপক্রম। জোরে চিৎকার করে উঠে সে। রিকার্ডো তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। সে জানে ম্যাথিউ আপাতত ড্রাগোসকে কেবল ভয় দেখাবে কিছুক্ষণ। ম্যাথিউ ছুড়ি ধরে রেখেই ড্রাগোসকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” কেমন হয় যদি এখন তোর এই গলায় আমি ছুড়িটা চালিয়ে বসি? ”
ড্রাগোসের গলা শুকিয়ে আসে। মনে পড়ে যায় সে নিজেও কতো মেয়েকে এভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু তখন তার কখনোই মনে ভয় কাজ করে নি। কিন্তু আজ করছে। অসম্ভব ভয় করছে। ড্রাগোসের মুখে ভয়ের অভিব্যক্তি দেখতে পেয়ে ম্যাথিউ হাসা শুরু করে। হাসতে হাসতে সে সরে দাঁড়িয়ে রিকার্ডোকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” এই মূর্খ তোমাকে মারতে চেয়েছিল? ভয়ে এর নাজেহাল অবস্থা একদম। ”
রিকার্ডো এবার উঠে দাঁড়ায়। ড্রাগোসের দিকে এগিয়ে এসে ওর চুল মুঠি করে টেনে ধরে বলে উঠে,
” তোর গুরু দুজন কোথায়? ড্যানিয়েল আর জ্যাকসন? যাদের দিয়ে নিজের মা বাবাকে খুন করিয়েছিলি? কোথায় লুকিয়ে রেখেছিস তাদের? ”

ড্রাগোস সুযোগ বুঝে চুক্তি করতে চায়। সে রিকার্ডোকে প্রস্তাব দেয়,
” আমি জানাচ্ছি ওরা কোথায়। কিন্তু বিনিময়ে আমার জীবন ছেড়ে দিতে হবে। কথা দাও আমার জীবন মাফ করে দিবে তুমি। ”
রিকার্ডো বলে উঠে,
” কথা দিলাম। ”
ম্যাথিউ অবাক সুরে বলে উঠে,
” ভাই! এই অসভ্যের মুখ থেকে কথা বের করার জন্য তোমার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ”
রিকার্ডো ম্যাথিউর কথার জবাব না দিয়ে ড্রাগোসকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

” জ্যাকসন আর ড্যানিয়েল কোথায়? ”
” ওরা এখানে নেই। ”
” এখানে নেই তাহলে কোথায়? ”
ড্রাগোস মিনমিনিয়ে বলে,
” আমি আড়াল হতে ওদের কথা শুনেছিলাম। জ্যাকসন বাসকোভ প্রাসাদের উদ্দেশ্যে এবং ড্যানিয়েল তুষ দূর্গের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে। তুমি এখানে থাকা অবস্থায় ওরা ওখানে সব নেকড়ে এবং ভ্যাম্পায়ারদের মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। ”
রিকার্ডো এবং ম্যাথিউর চোখে মুখে হিংস্র রূপ ফুটে উঠে। রিকার্ডো রাগে সাথে সাথে হাতে থাকা তলোয়ার দিয়ে ড্রাগোসের মাথা ঘাড় থেকে আলাদা করে ফেলে। ড্রাগোসের গর্দানহীন দেহ দেয়ালের সাথে কিছুক্ষণ ছটফট করে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তার মাথার চুলের মুঠি ধরে রিকার্ডো মাথা হাতে সকল লাশের মধ্যে দিয়ে হাঁটা ধরে। ম্যাথিউও তার পিছু পিছু হাঁটা ধরে।

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে রিকার্ডো। কালো লম্বা ক্লক গায়ে। একহাতে তার তলোয়ার তো অন্য হাতে ড্রাগোসের মাথা। তীক্ষ্ণ চাহনি আর রাজকীয় হাঁটার ভঙ্গি। হলরুমে সদ্য প্রবেশ করা প্রধান সেনাপতি স্টেফেন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে রয়। এরকম দৃশ্য সে জীবনে প্রথম দেখছে। বাকহারা হয়ে আছে সে। রিকার্ডো তার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ড্রাগোসের মাথা ঢিল মেরে স্টেফেনের পায়ের কাছে ফেলে বলে উঠে,
” পিতামাতা হত্যাকারী এই বিশ্বাসঘাতকের গর্দান যেন কাল সকালে সকল প্রজারা প্রাসাদের চূড়ায় ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। আর সেই মুহুর্তে ঘোষণা করে দিবে সিংহাসনের আসল উত্তরাধিকারী কাউন্ট লিও আলবার্ট এবং কাউন্টেস ম্যারি আলবার্টের ছেলে প্রিন্স রিকার্ডো আলবার্ট ফিরে এসেছে। ”
এটুকু বলেই রিকার্ডো হাওয়ার বেগে প্রাসাদ হতে বেরিয়ে পড়ে ম্যাথিউসহ। স্টেফেন স্তম্ভিত হয়ে একবার নিজের পায়ের কাছে থাকা ড্রাগোসের গর্দান এবং আরেকবার রিকার্ডোর যাওয়ার পথে তাকায়। অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে,
” রিকার্ডো আলবার্ট? ”
স্টেফেনের মাথায় কিছুই কাজ করছে না। তবে তার মন বলছে এইমাত্র তার সামনে দিয়ে যাওয়া এই যুবকের দেহে রাজ বংশের রক্ত প্রবাহমান। তার কথার ঝংকার, তীক্ষ্ণ চাহনি এবং রাজকীয় হাঁটার ভঙ্গি এর সবথেকে বড় প্রমাণ।

রাতের শেষ প্রহর। রিকার্ডো আর ম্যাথিউ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে তীব্র গতিতে দূর্গের দিকে এগোচ্ছে। তারা তুষ দূর্গের কাছাকাছি প্রায় এসে পড়েছে। আচমকা ঘোড়ার ডাকে তারা থেমে যায়। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখতে পারে দূর হতে ফিটন আসছে। ফিটনের সামনে জোসেফ বসা। রিকার্ডো আর ম্যাথিউকে দেখতেই জোসেফ ফিটন থামিয়ে দৌঁড়ে তাদের কাছে আসে। রিকার্ডো বিচলিত স্বরে প্রশ্ন করে,
” তুমি এই মুহুর্তে এখানে কি করছো? বাসায় যাও তাড়াতাড়ি। আনাস্তাসিয়াকে একা ছাড়বে না। ”
জোসেফ হাঁপাতে হাঁপাতে জবাব দেয়,
” দূর্গে কোভেন ড্যানিয়েল আরো কিছু ভ্যাম্পায়ার সহ আক্রমণ করেছে। আমি কোনো মতে সেখান থেকে লুকিয়ে পালিয়েছি। আর আনাস্তাসিয়া তো বাসায় নেই। ”
রিকার্ডো আর ম্যাথিউ দুজনের ভ্রু কুচকে আসে। ম্যাথিউ প্রশ্ন করে,

” নেই মানে? ”
” আনাস্তাসিয়া সিবিউ গিয়েছে ওর বোনের কাছে। ”
রিকার্ডোর দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়। সিবিউ মানে বাসকোভ প্রাসাদে? যেখানে জ্যাকসন গিয়েছে? রিকার্ডো সংশয়ে পড়ে যায়। একদিকে তুষ দূর্গে তার মা অপরদিকে বাসকোভ প্রাসাদে তার প্রেয়সী। রিকার্ডো ম্যাথিউকে উদ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠে,
” আমাকে কোনো প্রশ্ন করবি না তুই। চুপচাপ যতদ্রুত সম্ভব বাসকোভ প্রাসাদে পৌঁছা। আনাস্তাসিয়া ওখানে আছে। যেকোনো মূল্যে ওকে রক্ষা করবি। আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি। ”
অবাক ম্যাথিউ প্রশ্ন করার সুযোগ পায় না। তার আগেই রিকার্ডো তুষ দূর্গের দিকে রওনা দেয় তড়িৎ গতিতে। ম্যাথিউও বিলম্ব না করে বাসকোভ প্রাসাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিস্মিত জোসেফ দু’দিকে একবার চোখ বুলিয়ে মনে মনে প্রার্থনা করে যেন সব ঠিক হয়ে যায়।

দূর্গে প্রবেশ করতেই রিকার্ডো দেখতে পায় তুষ দূর্গের হলরুমে অসংখ্য মাথা কাটা লাশে আগুন জ্বলছে। এই লাশগুলো সব কোভেন সদস্যদের। রিকার্ডোর মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে যায়। সে চারিদিকে তাকিয়ে ক্যামিলোকে খুঁজতে থাকে৷ কিন্তু এই অর্ধ জ্বলন্ত লাশের মাঝে ক্যামিলোকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রিকার্ডো চিৎকার দিয়ে ডেকে উঠে,
” মা! ”

কোনো প্রতিত্তুর আসে না। রিকার্ডোর নিজেকে অসহায় লাগছে। এতো সব কিছুর পর সে নিজের মা’কে হারাতে চায়না। রিকার্ডো আবার ক্যামিলোকে ডেকে উঠে। এবার উপরের কক্ষ হতে ক্যামিলোর কণ্ঠ শুনতে পায় সে। রিকার্ডো বাতাসের গতিতে সেই কক্ষে যায়। দরজা খুলেই দেখতে পায় ক্যামিলো জানালার সামনে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। রিকার্ডো এগিয়ে গিয়ে ক্যামিলোকে জড়িয়ে ধরে। বিচলিত কণ্ঠস্বরে প্রশ্ন করে,
” তুমি ঠিক আছো মা? ড্যানিয়েল কোথায়? ”
ক্যামিলো কাপা স্বরে উত্তর দেয়,
” ড্যানিয়েল বাসকোভ প্রাসাদের জন্য রওনা হয়েছে হয়তো। ওখানেই জ্যাকসন এবং বাকি ভ্যাম্পায়ার এবং নেকড়েরা আছে যারা ওদের পক্ষে কাজ করছে। ”
রিকার্ডো প্রশ্ন করে,

” তোমার কোনো ক্ষতি করে নি তো ও? ”
” না। আমাকে মারার চেষ্টা করছিলো তোর কণ্ঠ শুনে ও জানালা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। তুই একা কেন? ম্যাথিউ কোথায়? ”
রিকার্ডো চিন্তিত সুরে জবাব দেয়,
” তুমি চিন্তা করো না। আমি যাচ্ছি। ম্যাথিউকে সহ ফিরে আসবো। তুমি আমার সাথে চলো। পথিমধ্যে লোকালয়ে চলে যাবে তুমি। আমি ফিরে আসার আগ পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবে। ”
ক্যামিলো কোনো কথা না বলে রিকার্ডোর পিছু পিছু তাড়াতাড়ি দূর্গ থেকে বেরিয়ে আসে। তীব্র গতিতে দৌঁড়াচ্ছে তারা। রিকার্ডোর মনে এখন কেবল একটাই চিন্তা। তা হলো আনাস্তাসিয়া। সে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত যেন আনাস্তাসিয়া সুরক্ষিত থাকে কেবল এই প্রার্থনা তার।

ক্রিনার সাথে নিজের কক্ষে লুকিয়ে আছে আনাস্তাসিয়া। এখনো এদিকে কেউ আসেনি। হঠাৎ ঘুমের মাঝে কারো চেচামেচির শব্দে আনাস্তাসিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। তাড়াতাড়ি সে কক্ষ থেকে বেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে নিলেই ক্রিনা এসে তার হাত ধরে টেনে কক্ষের ভেতর নিয়ে আসে। আনাস্তাসিয়া বুঝতে পারে না কি হচ্ছে। সে ফিসফিসিয়ে ক্রিনাকে প্রশ্ন করে,
” কি হচ্ছে বাহিরে ক্রিনা? ”
ক্রিনা চিন্তিত সুরে বলে,
” জ্যাকসন এসেছে। সাথে আরো নেকড়ে এবং ভ্যাম্পায়ার নিয়ে এসেছে। আলফা প্রাসাদে না থাকার সুযোগ নিচ্ছে সে। ”

জ্যাকসনের নাম শুনতেই আনাস্তাসিয়া ভয়ে জমে যায়। তার মনে পড়ে যায় সেই বিভৎস রাতের স্মৃতি। জ্যাকসন এখানে কি করছে? আনাস্তাসিয়াকে নিয়ে যেতে আসে নি তো? আনাস্তাসিয়া বিচলিত স্বরে প্রশ্ন করে,
” জ্যাকসন এখানে কেন এসেছে? ”
” জানিনা। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তার উদ্দেশ্য সবাইকে মারা। সাথে করে রুপোর বুলেট নিয়ে এসেছে। ”
” রুপোর বুলেট? এটা ও কোথায় পাবে? এসব তো একমাত্র রাজ পরিবারদের কাছে থাকে। ”
ক্রিনা চিন্তিত সুরে জবাব দেয়,
” আমি জানিনা আনাস্তাসিয়া। আমার চিন্তা হচ্ছে ক্যাথরিনের জন্য। ওর বাচ্চার আবার না কিছু হয়ে যায়! ”
এতটুকু কথা শুনে আনাস্তাসিয়া বেশ অবাক হয়। বিস্মিত সুরে প্রশ্ন করে,
” বাচ্চা? ”
ক্রিনার খেয়াল হয় আনাস্তাসিয়া এই ব্যাপারে কিছুই জানেনা। সে আনাস্তাসিয়াকে বলে,
” হ্যাঁ। ক্যাথরিন মা হবে। এই খুশির সংবাদ ও তোমাকে নিজে জানাতে চাইছিলো। তাই তোমাকে এখানে নিয়ে আসা হয়। ”

এরকম এক পরিস্থিতিতে আনাস্তাসিয়া এসব জানতে পেরেছে যে সে না পারছে খুশি হতে মন খুলে আর না পারছে ক্যাথরিনের কাছে যেতে। আনাস্তাসিয়া প্রশ্ন করে,
” আরোণ ভাই? উনি কোথায়? ক্যাথরিন কি ওর কক্ষে একা? ”
” আলফা শিকারে গিয়েছেন বেশ অনেকক্ষণ আগে। আর ক্যাথরিন একা নয়। আমি বারুদের শব্দ পেতেই ক্রিয়াস, হান্নাহ, মিলোসকে তার কাছে পাঠিয়ে দেই৷ ”
আনাস্তাসিয়া চিন্তিত সুরে বলে,
” আমরা কি এভাবেই কক্ষে লুকিয়ে থাকবো? জ্যাকসন এখানে এসে পড়লে কি হবে? ”
” আমি কি করবো আনাস্তাসিয়া? জ্যাকসনের হাতে রুপোর বুলেট ওর সাথের ভ্যাম্পায়ারদের হাতে আগুন। আমরা চাইলেও ওদের কাছে যেতে পারবো না। ”
আনাস্তাসিয়া মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করে। জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে ক্রিনাকে প্রশ্ন করে,

” নেকড়েদের দূর্বলতা কিসে? ”
” ওমেগা জাতের নেকড়েদের আগুন এবং রুপোর বুলেট দিয়ে মারা যায়। ”
আনাস্তাসিয়া খেয়াল করে দেখে বুলেটের এবং চেঁচামেচির শব্দ এখনো নিচ থেকে পাওয়া যাচ্ছে। আনাস্তাসিয়া প্রশ্ন করে,
” এই প্রাসাদে কোথাও তীর আছে? ”
ক্রিনা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
” তুমি করতে কি চাইছো? ”
আনাস্তাসিয়া মনে সাহস এনে নির্ভীক স্বরে জবাব দেয়,
” নেকড়েরা ওদের কাছে যেতে পারবে না কারণ নেকড়েদের আগুন এবং রুপোর বুলেটের ভীতি আছে। কিন্তু আমি মানুষ। আমি চাইলে ওদের কাছে গিয়ে ওদের মারতে পারবো। ”
ক্রিনা রেগে বলে উঠে,

” অসম্ভব! কখনোই না। ”
” হাতে হাত বেধে বসে থাকলে আমরা সবাই মারা যাবো ক্রিনা। যেই একটা সুযোগ আছে আমাকে সেটা চেষ্টা করতে দাও আর আমার উপর ভরসা রাখো। তাড়াতাড়ি বলো কোনো তীর এবং ধনুক আছে? ”
ক্রিনা সাথে সাথেই দৌঁড়ে গিয়ে একপাশের দেয়ালের একটি পাথর ধরে টান দেয়। সাথে সাথেই দেয়াল ফাঁক হয়ে সেখানে কিছু তলোয়ার, তীর এবং ধনুক দেখতে পায় আনাস্তাসিয়া। সে এগিয়ে গিয়ে তীর এবং ধনুক নিজের হাতে তুলে নেয়। ক্রিনা প্রশ্ন করে,
” এই তীর আর ধনুক দিয়ে কি ই বা করবে তুমি? ”
” জ্যাকসন এবং ওর নেকড়েদের জীবন নিবো। ”
ক্রিনা বিচলিত স্বরে প্রশ্ন করে,
” কিভাবে সম্ভব? ”

আনাস্তাসিয়া মাথা নেড়ে তাড়াতাড়ি তার কক্ষের আগুনের মশালটা নিজের হাতে নিয়ে বলে,
” এখন এতো কথা বলার সময় নয় ক্রিনা। চুপচাপ আমার সাথে চলো। ”
এটুকু বলেই আনাস্তাসিয়া দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে। ক্রিনা বুঝতে পারছে না আনাস্তাসিয়া কি করার চেষ্টা করছে। সেও তার পিছু পিছু বেরিয়ে পড়ে। আনাস্তাসিয়া দোতলার সিঁড়ির কাছাকাছি এসে পিলারের পিছনে সাবধানে লুকিয়ে পড়ে। একটি তীর নিয়ে সে আগুনের মশাল হতে তীরের মাথায় আগুন ধরিয়ে নেয়৷ তারপর ধনুকে তীর রেখে জ্যাকসনের দলের এক নেকড়ে বরাবর সেই তীর ছুড়ে। সাথে সাথে সেই নেকড়ের সম্পূর্ণ শরীরে আগুন ধরে যায়। নেকড়েটা আর্তনাদ করতে করতে মেঝেতে পড়ে যায়। আচমকা এমন আক্রমণে নেকড়েদের মাঝে ভীতি সৃষ্টি হয়। আরোণের পালের নেকড়েরা যারা এতক্ষণ ধরে প্রতিরোধ করছিলো তারাও বেশ অবাক হয়। আনাস্তাসিয়া নিজের গলার ক্রুশের হারটিকে দেখে নেয় একবার। তারপর গলা থেকে টান দিয়ে সেটা খুলে ক্রিনার হাতে দিয়ে বলে,
” তুমি এখনই ক্যাথরিনের কাছে যাবে। ওর গলায় এটা পড়িয়ে দিবে এবং ও যেন কক্ষ থেকে বের হতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখবে। ”

ক্রিনা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রয়। তার বিশ্বাস হচ্ছে না যেখানে তারা নেকড়ে হয়েও নিজেদের ভীতির কারণে শত্রুর মোকাবেলা করতে পারছে না সেখানে এক সামান্য মানব কন্যা কিনা একা নেকড়েদের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। ক্রিনার ভাবনার মাঝেই আনাস্তাসিয়া তাড়া দেয়। ক্রিনা ক্রুশের হারটি হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি ক্যাথরিনের কক্ষের দিকে দৌঁড়ে চলে যায়। আনাস্তাসিয়া আবার আড়াল হতে তাকিয়ে দেখে। নিচে জ্যাকসনকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না সে। তবুও তীরে আগুন লাগিয়ে সে বাকি নেকড়েদের মারতে শুরু করে। কিছু বুঝে উঠার আগেই এরকম আক্রমণে নেকড়েরা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। চোখের পলকে আনাস্তাসিয়া জ্যাকসনের দলের নেকড়েদের মেরে ফেলে। কিন্তু ভ্যাম্পায়াররা এখনো জীবিত আছে। আনাস্তাসিয়া বুঝে উঠতে পারে না এখন কি করবে।
হঠাৎ কিছু একটা মনে করে সে দৌঁড়ে নিজের কক্ষে ফিরে আসে। সেখান থেকে একটা কাচের বোতল তুলে নেয় সে হাতে। এই বোতলে করে সে সাথে পবিত্র পানি নিয়ে এসেছিলো। এটা দিয়ে সে চাইলে ভ্যাম্পায়ারদের দূর করতে পারবে। ওরিয়নের দেওয়া সেই ডায়েরিতে আনাস্তাসিয়া পড়েছিলো ভ্যাম্পায়ারদের কিসে কিসে দূর্বলতা আছে সেই সম্পর্কে। আনাস্তাসিয়া বের হয়ে যেতে নিবে সাথে সাথে একটি হাত ওর মুখ চেপে ধরে। ও চেষ্টা করেও আর কিছু বলতে পারে না।

প্রাসাদের সামনে আসতেই ভিতর থেকে চেচামেচির শব্দ শুনে ভয় পেয়ে যায় আরোণ। এমন সময় সেখানে ম্যাথিউকে দেখতে পায় সে। ম্যাথিউ সবেমাত্র বাসকোভ প্রাসাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আরোণকে দেখতে পেয়ে সে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
” তুমি বাহিরে কি করছো? ”
” আমি শিকারে বেরিয়েছিলাম। ভিতরে কিসের শব্দ হচ্ছে। আর তুমি আমার প্রাসাদে কি করছো? ”
” জ্যাকসন আক্রমণ করেছে ভেতরে। আমি আনাস্তাসিয়ার জন্য এসেছি। ”

জ্যাকসন আক্রমণ করেছে এতটুকু শুনতেই আরোণ তড়িৎ গতিতে প্রাসাদে প্রবেশ করে। ম্যাথিউও সময় অপচয় না করে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রাসাদের ভেতর প্রবেশ করতেই তারা দেখে কিছুসংখ্যক নেকড়ের দেহ মাটিতে পড়ে আগুনে দগ্ধ হচ্ছে। আর বাকি ভ্যাম্পায়ারদের সাথে আরোণের নেকড়ে পালরা লড়াই করছে। আরোণ এবং ম্যাথিউ সাথে সাথে সেই ভ্যাম্পায়ারদের উপর আক্রমণ করে। চোখের পলকে আরোণ সবগুলো ভ্যাম্পায়ারের হৃদপিণ্ড বের করে ফেলে। সাথে সাথে সে বিচলিত স্বরে নেকড়েদের প্রশ্ন করে,

” ক্যাথরিন? সে কোথায়? ”
নেকড়েদের মাঝে হতে একজন উত্তর দিয়ে উঠে,
” আলফা ক্যাথরিন উপরে তার কক্ষে আছে। ”
ম্যাথিউ চিন্তিত সুরে প্রশ্ন করে,
” আনাস্তাসিয়া কোথায়? ”
” সেও নিজের কক্ষে আছে। ”
আরোণ দ্রুত গতিতে উপরে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়। ম্যাথিউ তার হাত ধরে বাধা দেয়। আরোণ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই ম্যাথিউ বলে উঠে,
” নিচে কোথাও জ্যাকসন নেই৷ ও উপরে থাকতে পারে। ”

আরোণ সচেতন হয়। সাবধানে উপরের দিকে অগ্রসর হয়। ম্যাথিউও সাথে সাথে উপরের দিকে অগ্রসর হয়। ক্যাথরিনের কক্ষের সামনে এসে আরোণ দেখে দরজার বাহিরে দুজন প্রহরীর লাশ পড়ে আছে। সাথে সাথে সে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। দরজা খুলতেই দেখে জ্যাকসন কক্ষের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে রুপোর বুলেট। যা তাক করে রেখেছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্যাথরিনের দিকে। কক্ষের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে ক্রিয়াস, মিলোস, হান্নাহ এবং ক্রিনা। ক্যাথরিন বন্দুকের মুখে থাকায় তারা সামনে এগুনোর সাহস করতে পারছে না। ক্যাথরিন ভীত দৃষ্টিতে নিজের পেটের উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। আরোণকে দেখতে পেয়েই জ্যাকসন বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলে উঠে,

” স্বাগতম আলফা আরোণ। শুনলাম আপনি নাকি বাবা হচ্ছেন। এতো বড় খুশির সংবাদ আপনি আমাকে জানালেন না আগে? ”
আরোণ হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠে,
” তোর মরার এতো শখ যে প্রতিবার নিজ থেকে এসে আমার কাছে ধরা দিস? ”
জ্যাকসন বিদ্রুপ করে বলে উঠে,
” মরতে নয় মারতে এসেছি। তাও তোর চোখের সামনে তোর স্ত্রী আর সন্তানকে। ”
এটুকু বলেই জ্যাকসন সাথে সাথে বন্দুক চালায়। আরোণ চিৎকার করে উঠে। কিন্তু বুলেট ক্যাথরিনের নয় মিলোসের বুকে লাগে। মিলোস দ্রুত গতিতে এসে ক্যাথরিনের সামনে এসে দাঁড়ানোতে ক্যাথরিন বেঁচে যায়। আরোণ হিংস্র হুংকার দিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে জ্যাকসনকে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। সাথে সাথে হুংকার দিয়ে বলে উঠে,

” তোর এতো বড় কলিজা তুই আমার প্রাসাদে এসে আমার স্ত্রী সন্তানকে মারার হুমকি দেস? ”
এতটুকু বলে আরোণ ক্যাথরিনের দিকে তাকায়। ক্রিনা আর হান্নাহ এসে ক্যাথরিনকে ধরে রেখেছে। ভীত সন্ত্রস্ত ক্যাথরিন এখনো কাপছে। আরোণ ক্যাথরিনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
” মনে আছে আমি তোমাকে ওয়াদা করেছিলাম যেই হাতজোড়া তোমাকে স্পর্শ এবং আঘাত করেছে সেই হাতজোড়া কেটে এনে তোমার পায়ের সামনে রাখবো? ”

এতটুকু বলেই আরোণ সাথে সাথে জ্যাকসনের দুই হাত টেনে ছিড়ে ফেলে কাধ থেকে। এমন বিভৎস্য দৃশ্য দেখে ক্যাথরিন সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। জ্যাকসন আর্তনাদ করে উঠে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে। আরোণ সেই হাতজোড়া এনে ক্যাথরিনের পায়ের সামনে রেখে সাথে সাথে আবার জ্যাকসনের সামনে এসে দাঁড়ায়। মুহুর্তের মধেই সে হাত দিয়ে টেনে হিচড়ে জ্যাকসনের দেহ হতে হৃৎপিণ্ড বের করে আনে। সেই হৃৎপিণ্ড হাতে নিয়ে তা দূরে ছুড়ে ফেলে সে। ক্যাথরিন সাথে সাথে দৌঁড়ে আসে আরোণের কাছে। আরোণকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে বলে উঠে,

” আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ”
আরোণ ক্যাথরিনকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,
” আমি আছি ক্যাথ। ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ”
ক্যাথরিন বিচলিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
” অ্যানা? অ্যানা কোথায়? ”
আরোণের মাত্র খেয়াল হয়৷ সে তড়িঘড়ি করে বের হতে নিলেই দরজার সামনে ম্যাথিউকে দেখতে পায়। ম্যাথিউ প্রশ্ন করে,

” আনাস্তাসিয়া কোথায়? ”
আরোণ পাল্টা প্রশ্ন করে,
” ওর কক্ষে নেই ও? ”
ম্যাথিউ বলে,
” ওর কক্ষ তন্নতন্ন করে খুঁজেছি ও সেখানে নেই। ”
আরোণ সাথে সাথে সবাইকে চিৎকার দিয়ে আদেশ দেয় সম্পূর্ণ প্রাসাদে আনাস্তাসিয়াকে খুঁজতে। সবাই আনাস্তাসিয়াকে খুঁজতে লেগে পড়ে। ক্রিনা আর হান্নাহ ক্যাথরিনকে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। ক্যাথরিন কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,
” আমি অ্যানার খেয়াল রাখতে পারলাম না। নিজের কাছে এনেও ওকে সুরক্ষিত রাখতে পারলাম না। সব দোষ আমার। ”

ক্রিনা ক্যাথরিনকে শান্তনা দিতে থাকে। হান্নাহ দৌঁড়ে গিয়ে ক্যাথরিনের খাওয়ার জন্য চেরির শরবত নিয়ে আসে সেটার সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে। এভাবে জেগে থেকে চিন্তিত হলে শরীরে আরো প্রভাব পড়বে তার। জোর করে ক্যাথরিনকে সেটা খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। ক্রিনা চিন্তিত সুরে প্রশ্ন করে,
” ওর জন্য ঘুমের ঔষধ নিরাপদ তো? ”
” এই মুহুর্তে ওর এভাবে কান্না এবং চিন্তা করার থেকে এটা বেশি নিরাপদ ছিলো। আমি শুধু প্রার্থনা করছি ও ঘুমিয়ে থাকতে থাকতে আনাস্তাসিয়াকে পাওয়া যায় যেন। ”
ক্রিনা বলতে থাকে,
” জ্যাকসনকে যদি আলফা মারে এবং নিচে জ্যাকসনের অধিন সকল ভ্যাম্পায়ার এবং নেকড়ে যদি মৃত হয় তাহলে আনাস্তাসিয়া কোথায় যেতে পারে? ”

সম্পূর্ণ প্রাসাদ খুঁজে ফেলেছে সবাই। কোথাও আনাস্তাসিয়া নেই। ম্যাথিউর রাগে জোরে প্রশ্ন করে,
” কেউ দেখেনি আনাস্তাসিয়া কোথায় গিয়েছে? ”
প্রাসাদের দরজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা রিকার্ডো থমথমে গলায় প্রশ্ন করে,
” কি হয়েছে এখানে? ”
আরোণ, ম্যাথিউসহ সকলে সামনে তাকিয়ে দেখে রিকার্ডো দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। আরোণ রিকার্ডোকে দেখে বলে উঠে,
” জ্যাকসন নিজের দলের ভ্যাম্পায়ার এবং নেকড়েদের সহ আক্রমণ করেছিলো। ওদের সবাইকে মারা হয়েছে। কিন্তু আনাস্তাসিয়াকে পাওয়া যাচ্ছে না। ”
রিকার্ডোর চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। সে অস্পষ্ট স্বরে আওড়ায়,

” ড্যানিয়েল! ”
ম্যাথিউ তা শুনতে পায়। ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে,
” ড্যানিয়েল এখানে কি করে সম্ভব? ও না তুষ দূর্গে ছিলো? ”
রিকার্ডো বলে উঠে,
” ও সকল কোভেনদের মেরে ফেলেছে। মাকেও মারতে নিয়েছিলো। আমার কণ্ঠস্বর শুনে সাথে সাথে সেখান থেকে পালিয়ে এদিকে আসে। ”
ম্যাথিউ বিচলিত স্বরে প্রশ্ন করে,
” মা? ”
রিকার্ডো আশ্বস্ত করে বলে,
” মা ঠিক আছে। নিরাপদে আছে। ”
আরোণ বলে উঠে,

” সম্পূর্ণ প্রাসাদ খুঁজে ফেলেছি। আমার মনে হয় আমাদের জঙ্গলে খোঁজা উচিত অ্যানাকে। ”
রিকার্ডো, আরোণ, ম্যাথিউসহ নেকড়ে পালের অনেকেই বেরিয়ে পড়ে জঙ্গলে আনাস্তাসিয়াকে খুঁজতে৷ জঙ্গলের অনেকটা গভীরে এসে পড়েছে তারা খুঁজতে খুঁজতে। জঙ্গল যত গভীর হচ্ছে রিকার্ডোর হৃৎস্পন্দনের উঠানামার গতি ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। রুদ্ধশ্বাস নিচ্ছে ঘনঘন। মনে অজানা ভয় হানা দিয়েছে। চারিদিকে সবাই আনাস্তাসিয়ার নাম নিচ্ছে চেঁচিয়ে। রিকার্ডো অস্পষ্ট স্বরে আওড়ায়,
” কোথায় তুমি নাসিয়া? একবার সাড়া দাও। আমি এসেছি। ”

কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায় না আনাস্তাসিয়ার। ম্যাথিউ বিচলিত হয়ে চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় আনাস্তাসিয়ার কোনো ক্ষতি হলে নিজ হাতে ড্যানিয়েলকে মারার। রাগে থরথর করে কাঁপছে তার শরীর। ফাঁকা মস্তিষ্ক কেবল আনাস্তাসিয়ার নাম জপছে।

এদিকটায় খুঁজে আনাস্তাসিয়াকে না পেয়ে তারা অন্যপ্রান্তে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। সাথে সাথে রিকার্ডোর পা দুটি আপনাআপনি থেমে যায়। পিছন হতে কারো দৌঁড়ে আসার শব্দ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। রিকার্ডো ঘুরে পিছনে ফিরে তাকায়। শব্দটা আরেকটু কাছাকাছি হতেই বাকিরাও সেই শব্দ শুনতে পায়। কাছাকাছি আসতেই হন্তদন্ত হয়ে দৌঁড়ে আসা আনাস্তাসিয়াকে দেখতে পায় তারা৷ সামনে রিকার্ডোকে দেখে আনাস্তাসিয়া পা জোড়া থেমে যায়। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। আনাস্তাসিয়াকে দেখে ম্যাথিউর মুখের কোণে হাসি ফুটে উঠে। সে পা বাড়িয়ে সামনে যেতে নিবে তার আগেই আনাস্তাসিয়া দৌঁড়ে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিকার্ডোর বুকে হামলে পড়ে। ম্যাথিউর ঠোঁটের কোণের হাসি মুহূর্তেই মিলিয়ে যায়। হৃদয় মুচড়ে উঠে।
আনাস্তাসিয়া রিকার্ডোর বুকে পড়েই অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে,

” রিক! ”
ভয়ে এখনো কাঁপছে সে। আনাস্তাসিয়া অগোছালো শব্দে বলে উঠে,
” ড্যানিয়েল। ও আমাকে নিয়ে যাচ্ছিলো জোর করে। আমি কোনোমতে ওর উপর পবিত্র পানি ছিটিয়ে পালিয়ে এসেছি। ”

মহাপ্রয়াণ পর্ব ৪৫+৪৬

ড্যানিয়েলের নাম শুনতেই রিকার্ডোর চোয়াল ও হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসে। সে আনাস্তাসিয়াকে জড়িয়ে ধরার জন্য হাত তার পিঠে রাখতে নিবে এমন মুহূর্তে দূর হতে একটি তীর এসে আনাস্তাসিয়ার পিঠ ভেদ করে ঢুকে পড়ে। আনাস্তাসিয়া আর্তনাদ করে উঠে। ঘটনার আকস্মিকতায় সকলেই হতভম্ব হয়ে পড়ে। ম্যাথিউর চোখে ব্যাথার ছাপ ফুটে উঠে। রিকার্ডো অনুভব করে তীর যেন আনাস্তাসিয়ার নয় বরং তার বুকে এসে বিধলো। আনাস্তাসিয়া শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে ঢলে পড়তে নেয়। রিকার্ডো সাথে সাথে তাকে দু’হাতে আকড়ে ধরে নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে চিৎকার করে উঠে,
” নাসিয়া! ”

মহাপ্রয়াণ পর্ব ৪৯+৫০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here