ঠিক যেনো love Story গল্পের লিংক || Esrat jahan Esha

ঠিক যেনো love Story পর্ব ১
Esrat jahan Esha

প্রাক্তন কে ৫ বছর পর হসপিটালের বেডে পা ভাঙ্গা অবস্থায় দেখে বড় রকমের একটা শকট খেলো রিমলি। রিমলি এবার মাস কয়েক হলো একটা বেসরকারি হসপিটালে জয়েন নিয়েছে। নতুন হলেও কয়েক দিনের মধ্যে সবার সাথে তার একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে৷ যেমন কাজে অবহেলা করেনা সব রোগীর প্রতি যত্নশীল তেমন ব্যবহার অনেক সুন্দর।
ডাক্তার সুনিল রিমলিকে ডেকে বলে মিস রিমলি আমাদের একজন পেশেন্ট এসেছে। উনার একজন ভালো নার্সের প্রয়োজন আমরা আপনাকেই সিলেক্ট করেছি। আপনি পার্সোনাল ভাবে শুধু তার সেবা করবেন সব সময় তার কথা মতো চলবেন।এই সময় তার অনেক যত্নের দরকার।

— কিন্তু স্যার,,,
— কোনো কিন্তু না। আপনার জন্যই লাভ মোটা অংকের টাকা পাবেন।
— ওকে স্যার কয় তলায় আছে পেশেন্ট?
— আপাতত তিন তলায় আছে ২২ নম্বর সিটে। তবে কালকেই তাকে কেবিন দেওয়া হবে।
— ওকে স্যার আমি তাহলে যাচ্ছি।
রিমলি ৩য় তলায় ২২ নম্বর সিটে ৩২ বছরের একজন লোক দেখতে পেলো পাশে ৫ বছরের একটা পুচকু বসে বসে গালে হাত দিয়ে আদর করছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রিমলি সামনে গিয়ে সালাম দিয়ে বলে। স্যার আমি রিমলি আপনার জন্য আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কালকে আপনাকে কেবিনে দেওয়া হবে এখন থেকে আপনার যা প্রয়োজন আমাকে বলবেন।
ওয়ালাইকুমুসসালাম।আমি রিশাত হাসান। আমেরিকায় থাকি এসে ছিলাম মেয়েকে নিয়ে দেশ ঘুরতে কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমার হাতটাই ভেংগে গেলো। এখন নিজের তো যত্ন নিতে পারছি না। মেয়েটার ভালোভাবে খেয়াল রাখতে পারছি না। আপনি আমার মেয়ের দিকে বেশি খেয়াল দিলেই এনাফ।
রিমলি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে স্যার এটা আপনার মেয়ে? খুব কিউট তো মাশাআল্লাহ নাম কি রেখেছেন?

— রুহামা ওর নাম।
— সুন্দর নাম। স্যার আপনি চিন্তা করবেন না। আমি দেখে রাখব।
রিমলি রুহামাকে কাছে ডাকলে রুহামা চুপচাপ করুন দৃষ্টিতে রিশাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। হয়ত রিমলিকে ওর ভয় লাগছে। রিশাত ব্যপারটা বুঝতে পেরে বলে মিসেস রিমলি ও আসলে আমি ছাড়া কারো কাছে যায় না। এর জন্যই তো আমার ভয় আমি না থাকলে ওকে কে দেখবে। একটু ম্যানেজ করার চেষ্টা করুন প্লিজ।
স্যার আমি মিসেস না মিস। আমি অবিবাহিত শুধু নাম ধরেই ডাকেন।

— আচ্ছা ঠিক আছে।
রিমলি বেডের পাশে একটা প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে রুহামার দিকে তাকিয়ে থাকে। রিমলি মনে মনে বলে তুই বাচ্চা মানুষ সবার কাছে যাবি তোকে সবাই আদর করবে ভালোবাসবে চকলেট দিবে তা না করে তুই তোর বাপের মুখের দিকে তাকিয়ে আছিস।
রিশাত— কি বিড়বিড় করছেন মিস রিমলি?
রিমলি রিশাতের ডাকে চমকে উঠে বলে না স্যার কিছু না। ( উফফ আমিও না এই একা একা কথা বলাটা ফিরাতেই পারছি না কবে যেনো মানুষ আমার মনের কথা যেনে যায় একা একা বিড়বিড় করার জন্য পাগল ভাবে)

রিমলি পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা মুখ যেটা তার খুব পরিচিত কোনো একসময় সে তাকে বলেছিল সে তাকে অনেক ভালোবাসে কখনো ছেড়ে যাবে না। তাকে ছাড়া বাঁচবে না। রিমলি কে ছাড়া সে জিবন্ত লাশ।
রিমলি নিজেকে চিমটি কাটে আসলেই সে সত্যি সাফওয়ান কে দেখতে পাচ্ছে নাকি। রিমলি নিজেকে চিমটি দিয়ে নিজেই ওমা গো বলে বসা থেকে উঠে পরে।
রিশাত— কোনো সমস্যা?

রিমলি— সরি স্যার কোনো সমস্যা নেই এমনি। আপনি ঘুমান আমি পাশে আছি।
রিশাত আর কিছু না বলে দুচোখ বন্ধ করে নেয়৷
রিমলি এবার আস্তে করে সাফওয়ানের বেডের সামনে গিয়ে দেখে সাফওয়ানের পা ভাংগা।পাশে ওর চাচাতো ভাই রিমন শুয়ে আছে।

রিমলি মনে মনে ভাবে আরে চান্দু সবে তো ঠ্যাং ভাংছে আরো কতকিছু ভাংবে তার ঠিক নেই। যাই ওর ভাইটাকে জিজ্ঞেস করে আসি কিভাবে এমন নিষ্পাপ ব্যক্তিটির ঠ্যাং ভেংগে খোঁড়া হয়ে গেলো। রিমলি মুখের উপর একটু ওরনা টেনে রিমন কে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দেয়। রিমন ঘুমের মধ্যে হটাৎ চর খেয়ে উঠে বসে খুব তারাহুরো করে বলে সিস্টার আপনি আমাকে এমনে চর দিলেন কেনো? ধাক্কা দিয়ে উঠালেই তো পারতেন এইটা কোন ধরনের অভদ্রতা?

(চুপ শয়তান তুই আসছো আমাকে ভদ্রতা শিখাতে তোরে এর থেকে জোড়ে থাপ্পড় মেরে দাঁত ফালাইনি এটা তোর কপাল) নাহ আসলে ভাই তোমার গালে একটা মশা বসছিল তাই তাকে মারার চেষ্টা করছিলাম। ব্যাথা বেশি পেয়েছো? সরি।
ঠিক আছে কিন্তু এইভাবে ঘুমের মধ্যে কারো সাথে এমন করবেন না। কাঁচা ঘুম নষ্ট হয় আর বিব্রত কর অবস্থায় পড়তে হয়।

— আচ্ছা এই লোকটার পা কিভাবে ভাংলো?
— আসলে সিস্টার কি বলব সবই লিলাখেলা। হাটার সময় উষ্টা খেয়ে পড়ে পা ভেংগে হসপিটালের বেডে।
— কেনো দেখেশুনে চলতে পারে না?কানা নাকি আপনার ভাই?
— আমার ভাই আপনি কিভাবে বুঝলেন?
—(এই মরেছে কি বলব এখন) নাহ আসলে মনে হলো।

— ওহহ! সারাদিন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে রাস্তার দিকে তাকাবে কখন। মনে করেন এক বাপের এক ছেলে তাই নিজ দায়িত্বে ১৫-২০ আইডি চালাতো মেয়েদের সাথে কথা বলত টাকা উড়াতো। ভাইয়ার জন্য সব সময় আমাকে প্যারায় পড়তে হয়।
(আরে শয়তান তুই কি খুব ভালো ছিলি তুই তো তোর ভাইকে পিন দিতি তুই আমাকে কম অপমান করো নাই)
রিমলি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিশাত ডাক দিয়ে বলে মিস রিমলি রুহামা ঘুমিয়ে গেছে আপনি ওকে নিরাপদ কোথাও নিয়ে যেতে পারেন এখানে মানুষ জনের কথায় ঘুম ভেংগে যাবে।
রিমলি রুহামাকে কোলে নিয়ে সরাসরি পরিচিত এক ডাক্তারের চেম্বারে চলে যায়।

রুহামা ঘুম থেকে উঠে ওর পাশে রিশাত কে না পেয়ে কান্না শুরু করে। রিমলি দ্রুত রুহামাকে কোলে নিয়ে রিশাতের কাছে আসে। স্যার আপনার মেয়ে উঠে গেছে আপনাকে না দেখে কান্না শুরু করে দিছে।
— ওকে আমার পাশে শুইয়ে দেন। আর ওর জন্য খাবারে ব্যবস্থা করেন।
— স্যার আপনি কিছু খাবেন না?
— খুদা আছে কিন্তু আমার কেমন যেনো হসপিটালের খাবার ভক্তি হচ্ছে না৷ পড়ে রেস্তোরাঁ থেকে খাবার অর্ডার দিবো।

— স্যার যদি অনুমতি দিতেন আমি বাসায় গিয়ে আপনাদের জন্য খাবার তৈরি করে আনতাম।
— এতো কষ্ট করার দরকার নেই।
— কোনো কষ্ট হবে না স্যার। এমনিতেও আজকে সারাক্ষণ হসপিটালে ছিলাম আমার একটু বাসায় যাওয়া দরকার।
— ওকে আপনি যা ভালো মনে করেন। তবে দেড় ঘন্টার মধ্যে চলে আসবেন।
— ওকে স্যার।

রিমলি যখন বের হয়ে যাবে তখন সাফওয়ানের চোখ পড়ে রিমলির উপর রিমলিকে দেখে সাফওয়ান চমকে উঠে ও এখানে?ও কি এখানে জয়েন করেছে? নাকি আমি চোখে ভুল দেখলাম।
যাই হোক ডাক দেই ও মনে হয় এখানের নার্স আমাকে দেখে হয়ত পাগল হয়ে যাবে। সেই আগের মত পাগলামী করবে। রিমলিকে ডাক দেওয়া জন্য মুখ খোলার আগেই রিমলি ওখান থেকে বেড়িয়ে আসে৷
রিমন — ভাইয়া তুমি কি কাউকে খুজতেছো? এভাবে ড্যাপ ড্যাপ করে ঐদিকে তাকিয়ে আছো কেনো?
সাফওয়ান— ঐ যে রিমলি।

রিমন— কই রিমলি আর কোন রিমলি তোমার তো আবার রিমলি টিমলির অভাব নেই ।
সাফওয়ান— তুই থামবি। রিমলিকে চিনতে পারো নাই? ঐ যে আমার নানু বাড়িতে মাঝে মাঝে আসত।
রিমন— কি বলো রিমলি আপু এখানে কিভাবে আসবে? হয়ত তোমার মনের ভুল পুরানো প্রেম জেগে উঠছে।
সাফওয়ান— আরে আমি সত্যি দেখেছি। ও এখানের নার্স খেয়াল রাখ আবার আসবে। ডাক দিবো তার আগেই চলে গেছে।

রিমন — তোমার মনে হয়কি সে তোমাকে দেখেনি? আর তুমি ডাকলেই তোমার কাছে আসবে?
সাফওয়ান— কেনো আসবে না?
রিমন — যে অপমান করছ। আর আমার মনে হয় সে তেমাকে দেখেছে।
সাফওয়ান— দেখেছে তুই কিভাবে বুঝলি?
রিমন মনে মনে ভাবে কালকে রাতের চর খাওয়ার কথাটা যদি বলি তাহলে এখানে ইজ্জত প্লাস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কথাটা এড়িয়ে যেতে হবে। না মানে সে এখানের নার্স হলে অবশ্যই তোমাকে খেয়াল করছে বা দেখেছে।

সাফওয়ান— আরে না দেখেনি। দেখলে ঠিকিই আসত। আমাকে পাওয়ার জন্য মেয়েটা কি না কি করছে। আমি তো ভেবেছিলাম মরে গেছে।
রিমন— ভাইয়া অন্যের মরার চিন্তা না করে নিজের চিন্তা করো পা মনে হয় কেটে ফেলতে হবে।
সাফওয়ান আর কথা বাড়ালো না চুপচাপ রিমলির আসার পথে তাকিয়ে আছে।

রিমলি বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে রিশাত আর রুহামার জন্য নাস্তা রেডি করে আবার হসপিটালে চলে আসে।
রুহামা কোনো ভাবেই রিমলির সাথে কথা বলে না। একদম চুপচাপ বাবার পাশে বসে থাকে।
রিমলি বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসে রিশাতের পাশে দাড়িয়ে বলে স্যার আমি এসে গেছি। কোনো সমস্যা হয়নি তো? দেখুন আমি কিন্তু দেড়ঘন্টা সময় নেইনি তার আগেই এসে গেছি।

— দেড়ি করে আসলেও কিছু বলতাম না। এখন আমি নিজেই অচল আপনার উপর চোটপাট করে লাভ আছে? আর আপনি যদি আমার মেয়েটার খেয়াল রেখে হেল্প করেন এতেই আমি কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি।
— আচ্ছা স্যার খেয়ে নেন। আর আমি চেষ্টা করব আমার দায়িত্ব পালন করার কিছু দিনের জন্য আমাকে মেয়ের মা হতে হবে তাই তো। থাক সমস্যা নেই অবিবাহিত হয়েও না হয় হোলাম মেয়ের মা। হি হি হি।
রিশাত রিমলির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কি মিশুক সব কিছু নিজের মতো ভেবে নিয়েছে। আসলে সবার কাছে যেমন শুনেছি আসলে ও তেমনি ভালো।

— কি ভাবছেন স্যার?
— কই কিছুনা।
রিশাত রুহামাকে রিমলির পাশে দিয়ে বলে মামুনি এটা তোমার আন্টি দেখোনা বাবাইয়ের হাতে ব্যাথা তোমার বাবাই নিজের কাজ নিজে করতে পারছে না। তুমি প্লিজ আন্টির হাতে খেয়ে নেও। আমি সুস্থ হলে তোমাকে আবার খাইয়ে দিবো।
রুহামা কিছু বলে না রিমলি খাবার দিলে মুখে নেয়। কিন্তু কোনো কথা বলে না।
রিশাত রিমলিকে উদ্দেশ্য করে বলে মিসেস রিমলি আপনার রান্নার হাত তো অনেক ভালো।
— ধন্যবাদ স্যার। কিন্তু স্যার আমি মিসেস না মিস।
— ওহহ! সরি সরি।
সাফওয়ান রিমলিকে দেখতে পেয়ে রিমন কে সাথে সাথে রিমলির কাছে পাঠায়। রিমন রিমলিকে রিমলি আপু বলে ডাক দিলো।

রিমলি পিছনে তাকিয়ে দেখে রিমন। কে আপনি?
— আরে আপু আমি রিমন তুমি চিনতে পারছ না? ঐ যে দেখো ভাইয়া তোমাকে ডাকছে।
— রিমলি এবার রাগ নিয়ে বলে উঠে এখানে ভাই টাই দেখার সময় নেই, আর আমি কারো কাছে যেতে পারব না আমাকে শুধু একজন রোগীর জন্য এখানে পাঠানো হয়েছে। আরো অনেক নার্স আছে আপনার ভাইয়ের জন্য তাদের ডাকেন৷

রিশাত রিমলির হটাৎ এমন রিয়াকশন টা বুঝে উঠতে পারেনি। রিমলির দিকে রিশাত তাকিয়ে দেখে রিমলি কেমন যেনো কাঁপছে চোখে পানি টলমল করছে। রিমলি প্রচন্ড রাগ হয় রিমনের উপর রিমন অপমান হয়ে রিমলির পাশ থেকে চলে যায়।
মিসেস রিমলি কাঁদছেন কেনো?
— কই নাতো স্যার এমনি কাল রাতে তো ভালো ঘুম হয়নি তাই আরকি চোখ জ্বালাপোড়া করছে। রিমলি নাক ডলতে ডলতে বলে উঠে স্যার আমি মিসেস না মিস।

—ওকে সরি।
—আচ্ছা স্যার এখান থেকে কেবিনে কখন যাবেন।আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
রিশাত রিমলির দিকে তাকিয়ে দেখে রিমলি এখনো কাঁপছে। রিশাত কিছু একটা আন্দাজ করে বলে উঠে কেনো আপনি কি কখনো এভাবে রোগীর পাশে ছিলেন না?

ঠিক যেনো love Story পর্ব ২