এক চিলতে রোদ পর্ব ১১ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ১১
Nondini Nila

গাড়িতে বসে আছি। আমার পাশে বসেছে ইমা আপু আর পাশে রিফাত ভাইয়ার গাড়ির সামনে বসেছে ইহান ভাইয়ার ও রিফাত ভাইয়ার এক ফ্রেন্ড মে ড্রাইভ করবে। আমাদের পেছনের সিটে বসেছে ইলা আপু ইমা আপুর ফ্রেন্ড ও রিফাত ভাইয়ার আরেক ফ্রেন্ড।
মোট আট জন নিয়ে আমরা গাড়ি ফুল করলাম। পেছনে দুই সিটের প্রাইভেট কার এটা ভাড়া করা হয়েছে। চাচীদের মাইক্রো গাড়ি আছে একটা সেটায় পাঁচ জন যাওয়া যেত সবার হতো না এজন্য এটা আনা হয়েছে। নিজেরাই ড্রাইভ করতে পারে তাই ড্রাইভার আনে নি।
আমি জানালার পাশে বসেছি না হলে আবার বমি হবে গাড়িতে বেশি থাকার অভ্যাস নাই।

আপুর কিনে দেওয়া সাদা কালো মিক্সড করা লং ফ্রক পরেছি জামাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ওরনা গলায় পেঁচিয়ে রেখেছি যেটা আপু করে দিয়েছে। নীল চুড়ি পরেছি দুই হাত ভর্তি করে চুড়ি পরতে আমি খুব ভালোবাসি। কোথাও কখনো অনুষ্ঠানে গেলে আমি ওতো সাজগোজ করি না চুড়ি পরলেই হয়।
নীল চুড়ি কিনেছিলাম অনেকদিন আগে পরে আপু লাল কিনে দিয়েছিলো আজকে ড্রেসের সাথে ম্যাচ হয়নি তবুও পরেছে। নাহলে আমার খালি খালি লাগতো‌।
চুল কপালের কাছে বিনির মতো করে পেছন টেনে নিয়েছি আর পেছনে খোলা।আমার চুল খুব বড় না আবার ছোটও না কোমর পর্যন্ত আছে। সাজগোজ বলতে পাউডার দিয়েছি আর হাল্কা লিপস্টিক ঠোটে।
ইমা আপুকে সুন্দর লাগছে শাড়ি পড়ে এসেছে আপু । লাল রঙ রিফাত ভাইয়ার নাকি পছন্দ।
গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।

অনেক কষ্টে চাচি কে রাজি করিয়েছে তার কেডিট হলো ইহান ভাই। কারো কথাই চাচী রাজি হচ্ছিল না আমি তো যাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন ইহান ভাইয়ার গিয়ে চাচী কে বলল,
“আম্মু তুমি যদি ঊষাকে যেতে না দাও আমিও যাব না।”
“ওই ফকিন্নির বাচ্চার জন্য তুই কেন যাবি না।”
“আম্মু প্লিজ বাজে ভাষা ইউজ করো না।আর ঊষা কিন্তু আমাদের রক্ত। আর কাকার অবস্থা কিন্তু আমাকে থেকে ও ভালো ছিলো। ওকে তুমি অনেক কিছু করাও তাতে কেউ তোমায় বাধা দেয়না আর না ঊষা না করে তাহলে একটু আনন্দ কেন তুমি ওকে দিতে চাও না।ও তো তোমার কোন কথায় না করে না।”
“তুই নিজের মার বিরুদ্ধে গিয়ে ওই মেয়ের হয়ে কথা বলছিস?
“আমি কারো হয়ে কথা বলছি না। আমার যেটা ঠিক মনে হচ্ছে আমি তাই বলছি।
“আমাকে ভুল।
“তুমি যেতে দিবে কিনা বলো।
“আচ্ছা! নিয়ে যা।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

চাচি ভাইয়ার কথা মানবে ভাবতেই পারিনি। তারপর বের হয়েছি।কথাটা ভাবতেই আমার সারা শরীর শিহরণ খেলে গেল।‌আমি চোখ জানালার বাইরে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ইহান ভাইয়ার দিকে তাকালাম।ভাইয়া রিহান ভাইয়ের সাথে কথা বলছে তিনি রিফাত ভাইয়ার ফ্রেন্ড। আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আজকে ভাইয়াকে ও খুব সুন্দর লাগছে। ভাইয়ার নীল শার্ট পরেছে ক্রিম প্যান্ট বুকের কাছে সানগ্লাস। ইশ কি সুন্দর হাসি ভাইয়ার ‌হাসলেই গালে টোল পড়ে। এক সাইট দেখা যাচ্ছে আমি ভাইয়ার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছি। তখনই ভাইয়ার আমার দিকে তাকালো আচমকা ভাইয়ার তাকানো দেখে আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি‌।
একটু পর আবার তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার সামনে তাকিয়ে আছে।

আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। ঠান্ডা বাতাস ব‌ইছে চোখ বন্ধ করে বাতাস অনুভব করছি। কতোদিন পর বেরাতে বের হলো মনটা খুশিতে নেচে উঠছে। আমরা সিলেট যাচ্ছি আরেকটা কথা শুনেই চমকালাম আমরা এক সপ্তাহের জন্য যাচ্ছি বাসায় তিন বলে এসেছে সব মিথ্যে না হলে নাকি কেউ আসতে দিতো না।
আমি বড় বড় চোখ করে সবার দিকে তাকিয়ে ছিলাম তখন।
ঊষা কেমন লাগছে তোর।
আমি হাসি মুখ করে বললাম, খুব ভালো আপু।
আমি কথা বলতে বলতে সামনে তাকাতেই দেখি ইহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
এক দৃষ্টিতে ভাইয়ার তাকানো দেখে আমি নড়েচড়ে বসলাম।

এক ঘন্টার মধ্যে রাত নেমে এলো। আমার পাঁচটার বের হয়েছিলাম। তো রাত নামতে সময় লাগলো না রাত বড় জানি করে যেতে হবে। দুইঘন্টা যেতেই রিহান গাড়ি থামিয়ে ফেলল সে আর ড্রাইভ করতে পারবে না তাই ইহান ভাই ড্রাইভ করতে লাগলো। এবার ভাইয়া আমার সামনে এখন সোজা সোজা।
রাত হ‌ওয়ায় এখন বাতাস বেশি হচ্ছে এজন্য জানালা অফ করে দিলো।
আপু জানালা খুলতে বলো না প্লিজ।
আমার কথা শুনেই সামনে থেকে ইহান ভাইয়া বলল,, না জানালা খুলা যাবে না এখন ঠান্ডা বাতাস আসছে অসুস্থ হবি।
কিন্তু আমার তো খারাপ লাগছে আমি জানালা না খুললে থাকতে পারবো না আমার কিছু হবে না খুলুন না।
ইম্পসিবল।

আমি গোমড়া মুখে বসে আছি ভাইয়া খুললো না দশ মিনিট যেতেই জানালা খুলে দিলো আমি অবাক হয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
ভাইয়ার ড্রাইভ করতে করতে বললো,, বেশিক্ষণের জন্য না কিছু ক্ষন থাকবে‌ খোলা।
আমি খুশি হয়ে বললাম, থ্যাংকু ভাইয়া।
ভাইয়া ও হাসলো আমি নিজের জায়গায় বসে পরলাম। মুখে আমার হাসি অন্ধকারের রাস্তায় দিকে তাকিয়ে আছি গাড়ি শো শো শব্দ করে চলে যাচ্ছে জায়গায় জায়গায় মৃদু আলোর রেখা পেছনে ইলা আপুর কথার আওয়াজ পাচ্ছি পাশে সবাই কথা বলছে আমি একাই বাইরে অন্ধকার রাস্তা দেখছি ঠান্ডা বাতাসে শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে। শীত লাগছে তবুও ভালো লাগছে।
আরো একঘন্টা পেরিয়ে গেল তখন গাড়ি থামিয়ে ফেলল ভাইয়া।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি সবাই নেমে যাচ্ছে আমরা কি এতো তারাতাড়ি চলে এসেছি সিলেট এতো কাছে।

আপু আমরা এতো তারাতাড়ি চলে এসেছি।
না তো।
তাহলে গাড়ি থামলো কেন?
আরে বোকা খাবি না। রেস্টুরেন্টে এ যাব এখন ওই যে চল।
সবাই নেমে গেল আমিও নামলাম।
খাবার টেবিলে আমি আর ভাইয়ার পাশা বসলাম। আমি একটু পর পর ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি।
খাবার চলে এলো সবাই খাবার খেয়ে আস্তে গেলে আমার বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলো ইমা আপুকে বলবো তার উপায় নেয় সে তো চলে গেছে।এখন আমি আর ইহান ভাইয়া আছি শুধু আমার খেতে লেট হয়েছে আর ভাইয়ার টাকা দিতে গেছে। আমি কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি ওয়াশরুম খুঁজছি বুঝতে পারছি না। তখন ভাইয়ার এসে আমাকে এমন করে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে জিগ্গেস করলো ভ্রু কুঁচকে,

এক চিলতে রোদ পর্ব ১০

কি হলো তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
আমি চমকে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
কি হলো সবাই চলে গেছে তুই এখানে কেন?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
কথা বলছিস না কেন? প্রবলেম কি?
আমি আমতা আমতা করে বললাম, ওয়াশরুমে যাওয়া লাগতো।
ভাইয়া আমার কথা শুনে বলল, এতো সময় নিলি কেন চল দেখাচ্ছি।
আমি ভাইয়ার পেছনে এলাম।
রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলাম গাড়ি একটু দূরে থামানো হয়েছে। তাই গাড়ি পর্যন্ত হাঁটতে লাগলাম।
তোর কি শীত করছে।
ভাইয়ার কথা শুনে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
না তো বাতাসে একটু একটু।
আচ্ছা চল।

আমরা রোডের ডান পাশে গাড়ি ওপরপাশে বাম পাশে। তাই রোড পার হতে হবে। গাড়ি আসছে আমরা দাড়িয়ে আছি হুট করে ভাইয়া আমার বাম হাত শক্ত করে ধরে নিলো নিজের হাতের মুঠোয়। ভাইয়ার স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে উঠলাম।
ভাইয়ার আমাকে নিয়ে গাড়ির মাঝেই পার ড়য়ে গেল আমি ভাইয়ার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম।
গাড়ির কাছে এসে হাত ছেড়ে দিলো।
গাড়ির কাছে এসেই শকড রিফাত ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে আর ইমা আপু তার পাশে পেছনের সিটে জানালায় পাশে রিহান ভাইয়া বসে আছে।
ইহান ভাইয়া বলল, এসব কি আমরা কোথায় বসবো?
এখানে ইমা আপু দুই সিট দেখিয়ে দিল।
তোরা ওখানে কেন?
আমার এখন এখানেই থাকবো তুই তারাতাড়ি উঠে বসে জানালার কাছে ঊষাকে বসতে দে।
হোয়াট আমি ওই ভেতরে বসবো না। তোরা পেছনে আয় আমাকে আর রিহানকে সামনে যেতে দে।
কিন্তু ইহান ভাইয়ের কথা যেন কানেই নিলো না রেগে ভাইয়া আমার দিকে তাকালো আমি ঢোক গিলে বললাম,

আমি কি করবো?
তুই ভেতরে বসো।
ভেতরে বসার কথা শুনে চমকালাম রিহান ভাইয়ার কাছ ঘেঁষে বসতে আমার আন‌ইজি ফিল হতে লাগলো।
কি হলো যা?
ভাইয়া আমার তো বমি হয়। ভেতরে বসলে তো গাড়ি নষ্ট হবে‌।
ভাইয়া রাগে গজগজ করতে করতে ভেতরে ঢুকে গেল।আমিও ঢুকলাম ভাইয়ার গায়ের সাথে লেগে গেলাম ইশ লজ্জা লাগছে আমার। ভাইয়ার শরীর থেকে একটা মিষ্টি সুগন্ধি কানে এলো। আমি জানালার সাথে লেপ্টে গেলাম আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।

এক চিলতে রোদ পর্ব ১২